amarbangla

যশোর জেলা - পরিচিতি ও ইতিহাস - JESSORE DISTRICT - INTRODUCTION

যশোর জেলা by Alamin Hossain


JESSORE DISTRICT - INTRODUCTION

যশোর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে যশোর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। এর অন্য একটি প্রচলিত বানান যশোহর। ব্রিটিশ আমলে এটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জেলা। এটি প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা। ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত এই যশোরকে ফুলের রাজধানীও বলা হয়।

নামের উৎপত্তি

যশোর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত মেলে। ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই জেলার নামকরণ সম্পর্কে মতবিরোধ দেখা যায়। আরবি ‘জসর’ থেকে যশোর শব্দের উৎপত্তি বলে মনে করেন অনেকে। এর অর্থ সাঁকো। এককালে যশোরের সর্বত্র নদীনালায় পরিপূর্ণ ছিল। নদী বা খালের ওপর সাঁকো বানানো হতো। পীর খানজাহান আলী বাঁশের সাকো নির্মাণ করে ভৈরব নদী পেরিয়ে মুড়লীতে আসেন বলে জানা যায়। এই আরবি শব্দ 'জসর' (বাংলায় যার অর্থ বাঁশের সাঁকো) থেকে যশোর নামের উৎপত্তি। অনুমান করা হয় কসবা নামটি পীর খানজাহান আলীরই দেওয়া (১৩৯৮ খৃঃ)। তবে অনেকের অভিমত, খানজাহান আলী আসার আগে থেকেই ‘যশোর’ নামটি ছিল।

আবার অন্য একটি সূত্র হতে জানা যায় যে- মহারাজ প্রতাপাদিত্যের পিতা বিক্রমাদিত্য ও তার এক সহযোগি বসন্ত রায় গৌড়ের এক চরম অরাজকতার সময় সুলতানের অপরিমিত ধনরত্ন নৌকা বোঝাই করে গোপনে এই এলাকায় প্রেরণ করেন। গৌড়ের ধনরত্ন বোঝাই অসংখ্য নৌকা এখানে পৌঁছানোর পর ধীরে ধীরে বন জঙ্গলে আবৃত্ত এলাকাটির খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। প্রতিষ্ঠিত হলো একটি সমৃদ্ধ রাজ্য। নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের নামকরণ হল যশোহর। প্রবাদ আছে, গৌড়ের যশ হরণ করে এই এলাকার শ্রীবৃদ্ধি হওয়ায় নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের নাম যশোহর রাখা হয়। স্থানীয় পুরাতন নাম যশোর পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নামকরণ হয় যশোহর। 'যশোর' শব্দটি 'যশোহর' শব্দের অপভ্রংশ।




ইতিহাস


যশোর একটি অতি প্রাচীন জনপদ। আনুমানিক ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে পীর খান জাহান আলীসহ বারজন আউলিয়া যশোরের মুড়লীতে ইসলাম ধর্ম প্রচারের প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করেন। ক্রমে এ স্থানে মুড়লী কসবা নামে একটি নতুন শহর গড়ে উঠে । ১৫৫৫ খ্রীস্টাব্দের দিকে যশোর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যশোর-খুলনা-বনগাঁ এবং কুষ্টিয়াফরিদপুরের অংশ বিশেষ যশোর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে যশোর নাটোরের রানী ভবানীর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । ১৮৬৪ সালে ঘোষিত হয় যশোর পৌরসভা। ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে যশোর জিলা স্কুল, ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে যশোর পাবলিক লাইব্রেরি, বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় ও চতুর্থ দশকে যশোর বিমান বন্দর এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কলকাতার সাথে যশোরের রেল-যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন হওয়া জেলাটি যশোর।


ভৌগোলিক সীমানা


উত্তরে ঝিনাইদহ জেলামাগুরা জেলা, দক্ষিণ পূর্বে সাতক্ষীরা জেলা, দক্ষিণে খুলনা জেলা, পশ্চিমে ভারত, পূর্বে নড়াইল জেলা


প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

এ জেলায় ৮টি উপজেলা রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি পুলিশ থানা রয়েছে এবং একটি বন্দর থানা রয়েছে।


শিক্ষা

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সময় হতেই যশোর শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠান আছে এ জেলায়। যশোরে নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ বঙ্গের সর্ববৃহৎ আইটি প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। এছাড়া উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা নিচে দেয়া হলোঃ



যোগাযোগ ব্যবস্থা

যশোরের সাথে এর কাছাকাছি জেলাগুলির শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। পশ্চিম ও পূর্ব বাংলায় পরিবহনের জন্য এখানে সংযোজক আন্তর্জাতিক মহাসড়ক আছে।

যশোর বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় ব্রডগেজ-ভিত্তিক নেটওয়ার্কের একটি জংশন। নেটওয়ার্কটি ভারত পর্যন্ত প্রসারিত। রাজধানী ঢাকা এবং ভারতের কলকাতাকে সংযুক্ত করে পরিষেবাটি ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে চালু করা হয়েছিল। যশোর জংশন রুটটির মাঝখানে পড়েছে।

নগরীর কাছাকাছি যশোর বিমানবন্দরটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিমানঘাঁটি। এটিই দেশের একমাত্র বিমানবন্দর যেখানে বিমান বাহিনীর সকল বৈমানিকদের বিমান উড্ডয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটির রানওয়ে দিয়ে সামরিক বিমানসহ অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল করে। দৈনিক চলাচল করা অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক বিমানের মধ্যে রয়েছে ইউএস-বাংলা, রিজেন্ট , নভো এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।


চিংড়ি চাষঃ

যশোরের অথনীতিকে বেগবান করেছে মাছ চাষ। যশোরের অর্থনীতির সিংহভাগই আসে মাছ চাষ তথা চিংড়ি রফতানি করে।

বেনাপোল স্থল বন্দর

যশোরের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান নিয়ামক দেশের প্রধান এবং সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থল বন্দর যা শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী বেনাপোল পৌরশহরে অবস্থিত। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের সিংহভাগ এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়। ওপারে আছে পেট্রাপোল। সরকারি আমদানী শুল্ক আহরণে বেনাপোল স্থল বন্দরটির ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। এখানকার মানুষের জীবিকার অন্যতম সূত্র বেনাপোল স্থল বন্দরের কাস্টমস্‌ ক্লিয়ারিং এজেন্টের কাজ।

নওয়াপাড়া

যশোরের ব্যবসা বাণিজ্যর প্রাণ কেন্দ্র বলা যায় নওয়াপাড়াকে। এখানকার এবং আশেপাশের উদ্যোক্তাদের কারণে এখানে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠেছে। এছাড়া নৌপথে আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে। যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।

গদখালি

বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী যশোর। বাংলাদেশের অধিকাংশ ফুল মূলত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে চাষ হয়। এখানে উৎপাদিত ফুল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।


চিত্তাকর্ষক স্থান ও স্থাপনা

  • চাঁচড়া জমিদার বাড়ি
  • বাবা বৈদ্যনাথ ধাম মন্দির, খেদাপাড়া
  • যশোর ইনস্টিটিউট
  • যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরী
  • ফুলের হাট গদখালি
  • যশোর পৌর পার্ক
  • সাগরদাড়ী, মাইকেল মধুসূদন দত্ত-এর বাড়ি
  • তাপস কুটির (কাস্টমস অফিস)
  • বেনাপোল স্থল বন্দর
  • যশোর বিমানবন্দর
  • যশোর সেনানিবাস
  • শ্রীধরপুর জমিদার বাড়ি
  • এগারো শীব মন্দির
  • আকিজ সিটি
  • বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের সমাধি
  • মনিহার সিনেমা হল
  • কালেক্টরেট পার্ক
  • লালদীঘির পাড়
  • বিনোদিয়া পার্ক
  • যশোর বোট ক্লাব
  • ভরত রাজার দেউল (ভরত ভায়না)
  • জেস গার্ডেন পার্ক
  • যশোর আইটি পার্ক
  • মীর্জা নগর নবাব বাড়ি
  • ঝাঁপা ভাসমান সেতু
  • বৈদ্যনথ তলা মন্দির, পাঁচবাড়িয়া, সদর, যশোর
  • জগদীশপুর তুলার ফার্ম
  • নির্বাক যুগের টালিগঞ্জ চলচিত্রকর ধীরাজ ভট্টাচার্য্যের বাড়ী-পাজিয়া, কেশবপুর
  • চিত্র পরিচালক নওরেশ মিত্রের বাড়ি
  • বাংলা উপন্যাসিক নিমায় ভট্টাচার্য্যের বাড়ি
  • তালখড়ি জমিদার বাড়ি
  • মাইকেল বংশভ্রাতৃদুহিতা মানকুমারী বসুর বাড়ি
  • বিপ্লবী অরবিন্দ ও বারিণ ঘোষ সহোদারের মামা বাড়ি, সাগরদাড়ি যশোর




নদী

  • ভৈরব নদ
  • ভৈরব ব্রীজ
  • কপোতাক্ষ নদ
  • বেতনা নদী
  • চিত্রা নদী
  • হরিহর নদ
  • মযুদখালী নদী
  • ঝাঁপা বাওড়
  • ভবদহ বিল
  • শার্শা কন্যাদাহের আশ্চর্য বাওড়
  • কুটিবাড়ি বিল, মাটিপুকুর
  • পদ্ম বিল চাকলা
  • কালিয়ানীর বিল বা বাহাদুরপুর বাওড়
  • বুকভরা বাওড়
  • বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু

বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

  • ব্যারিস্টার ব্যোমকেশ চক্রবর্তী





আরও দেখুন

খুলনা বিভাগ
বাংলাদেশের জেলাসমূহ
এশিয়া মহাদেশ


----------- 

তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উপরিউক্ত সকল তথ্য গুলো উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে নেয়া হয়েছে।






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমার বাংলা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
amarbangla
amarbangla
Our Telegram Group / Channel Join Now
Our Facebook Page Follow Now
amarbangla
daraz