দোয়া মাসুরা - Duya Masura
দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
শেষ নামাজের বৈঠকে দোয়া মাসুরা পাঠ করতে হবে। তাশাহহুদের পর দরূদ পাঠ করে দুয়া মাসুরা পাঠ করা সুন্নত। নামাযের পর সালাম ফিরাতে হবে। এখানে পড়ার নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। বরং একটি মাসনুন নামায পড়তে হবে। এমনকি আপনি বেশ কয়েকটি নামাজ পড়তে পারেন। হাদিস শরিফে আছে, ‘অতঃপর (দরূদ পাঠের পর) যে কোনো দোয়া পাঠ কর। (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৪০২ )
দুয়া মাসুরা এক্ষেত্রে বেশি প্রসিদ্ধ: 'আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি...' এই দুয়া। ফলে অনেকেই মনে করেন এটাই একমাত্র দোয়া মাসুরা বলার উপায়। এটি ছাড়া অন্য কোন দুআ পড়া উচিত নয়। বর্তমানে, এটি এমন নয়; বরং এক্ষেত্রে কুরআন-হাদিসে বর্ণিত যে কোনো দোয়া পড়া যাবে। এতে সুন্নাহ আদায় হয়।
প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ দোয়া মাসুরাঃ
তবে আমরা সাধারণত যে দোয়াটি পড়ি তা সবচেয়ে বিখ্যাত। আবু বকর (রা.)-এর অনুরোধে সাড়া দিয়ে রাসূল (সা.) তাকে শিক্ষা দেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, আবু বকর (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আবেদন করেছিলেন- আমাকে একটি দুআ শেখান- যা আমি নামাজে পাঠ করব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই দোয়া কর-
দোয়া মাসুরা আরবিঃ
اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা । ওয়ালা ইয়াগ ফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লি, মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা; ওয়ার হামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। আপনি নিজ অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই ক্ষমাকারী, করুণাময়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৩৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭০৫)
উল্লেখ্য, দোয়া মাসুরাকে বলা হয়- (বহুবচন আদায়ে মাসুরা) শব্দের অর্থ ঘোষিত দোয়া। অর্থাৎ আল-কুরআনুল কারীম ও হাদীস শরীফে যে দোয়া শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। হাদিস শরিফে এ বিষয়ে আরও দোয়া বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে একটি হল-
اللهم إني أعوذ بك من عذاب القبر وأعوذ بك من فتنة المسيح الدجال وأعوذ بك من فتنة المحيا والممات، اللهم إني أعوذ بك من المأثم والمغرم
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মা‘ছামি ওয়াল মাগরামি।
অর্থ ঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে, দাজ্জালের ফিৎনা থেকে। আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবন ও মৃত্যুর ফিৎন থেকে। হে আল্লাহ ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি গুনাহ ও ঋণ থেকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৩২; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৮৯)
দোয়া মাসুরা কখন পড়তে হয়?
দোয়া মাসুরা সাধারণত নামাজের শেষ আসরে আত্তাহিয়্যাতু দরূদে ইব্রাহিম পড়ার পর পাঠ করা হয়। নামাজে হাতের বাধা বা নিয়তের পর সানা (সুবাহা কাল্লাহুম্মা) পাঠ করতে হবে। অতঃপর অন্য একটি সূরা সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করে রুকুতে প্রবেশ করতে হবে।
তারপর রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াও। তারপর রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে। তারপর সাজদায় ফিরে যেতে হবে। সাজদায় সুবহা-না রব্বিয়াল আ'লা পাঠ করতে হবে। এভাবে দুই সিজদা করে হাত ধরে দাঁড়াতে হবে। এভাবে দুই রাকাত নামায দুই রাকাত, তারপর দুই রাকাত সিজদার পর উঠে হাত গুটিয়ে আত্তাহিয়্যাতু ও দরূদে ইব্রাহিম, তারপর সালাম ফিরানোর আগে দুআ মাসুরা পড়তে হবে।
দোয়া মাসুরা হিসেবে আরও যেসব দোয়া পড়া যায়
দোয়া মাসুরা হিসেবে পড়ার জন্য আরও দোয়া বর্ণিত হয়েছে হাদিস শরিফে। তার মধ্যে কয়েকটি হলো-
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মা‘ছামি ওয়াল মাগরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে, দাজ্জালের ফিৎনা থেকে। আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবন ও মৃত্যুর ফিৎন থেকে। হে আল্লাহ ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি গুনাহ ও ঋণ থেকে।’ (সহিহ বুখারি: ৮৩২; সহিহ মুসলিম: ৫৮৯)
উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লান্তু ওয়া মা আসরাফ্তু ওয়া মা আনতা আল’লামু বিহী মিন্নী। আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা ইলাহা ইল্লা আনতা।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! ক্ষমা করে দিন আমার গুনাহসমূহ— যা পূর্বে করেছি, যা পরে করেছি, যা আমি গোপনে করেছি, যা করেছি প্রকাশ্যে, যা সীমালঙ্ঘন করেছি, আর যা আপনি আমার চেয়ে বেশি জানেন। আপনিই (কাউকে) করেন অগ্রগামী, আর আপনিই (কাউকে) করেন পশ্চাদগামী, আপনি ব্যতীত আর কোনো সত্য ইলাহ নেই।’ (মুসলিম: ১/৫৩৪, নং ৭৭১)
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ও শুকরিকা ওয়াহুসনি ইবা-দাতিকা।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনার জিকির করতে, আপনার শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন।’ (আবু দাউদ: ২/৮৬, নং ১৫২২; নাসায়ি: ৩/৫৩, নং ২৩০২)
উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াআউযু বিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল উমুরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া ও আজা-বিল ক্বাবরি)।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ ! আমি আপনার আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে, আপনার আশ্রয় চাই কাপুরুষতা থেকে, আপনার আশ্রয় চাই চরম বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে, আর আপনার আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে।’ (বুখারি, (ফাতহুল বারিসহ) ৬/৩৫, নং ২৮২২, ৬৩৯০)
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আউজু বিকা মিনান্না-র।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ: ৭৯২; ইবনে মাজাহ: ৯১০)
দোয়া মাসুরা পড়ার ফজিলত
দোয়া মাসুরা পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। এ দোয়াটি মোনাজাতের সময়ও পাঠ করা যায়। এ দোয়াটি একই সঙ্গে আল্লাহর কাছে তওবা ও সাহায্য কামনায় অত্যন্ত ফজিলতময় একটি দোয়া। তাই এ দোয়াটি নামাজের মধ্যে পাঠ করা হয়।
নিজের ভাষায় দোয়া মাসুরা পড়া যাবে?
মনে রাখতে হবে, নামাজের মধ্যে আপন আপন ভাষায় দোয়া করা যাবে না। এমনকি আরবিতেও নিজের বা কারো বানানো দোয়া পড়া যাবে না। শুধুমাত্র কোরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত দোয়া পড়তে হবে। কেননা রাসুল (স.) মানুষের ভাষাকে নামাজে ব্যবহার করাকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এ নামাজে মানুষের কথাবার্তার মতো কথা বলা উচিত নয়। নিশ্চয়ই এটি তাসবিহ, তাকবির এবং কোরআন তেলাওয়াতের স্থান। (সহিহ মুসলিম: ৫৩৭)
সুতরাং কোরআন-হাদিসে বর্ণিত যেকোনো কল্যাণ বা ক্ষমা প্রার্থনামূলক দোয়া পড়লেই হবে। তবে আল্লাহুম্মা ইন্নী জলামতু নাফসী.. এই দোয়াটি অধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তাই এটি পড়াও উত্তম। (শরহু মুখতাসারিত তাহাবি: ১/৬৩৬; ফাতহুল কাদির: ১/২৭৭; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/৫৬; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৭৬)
আমার বাংলা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url