amarbangla

বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০২ Bangla Islamic Story 🌺 Alo 🌺 No- 02

বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০২
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০২


বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০২

মসজিদ থেকে বের হয়ে ভোর জুতা পড়ছিলো আর আলো ঠায় দাঁড়িয়ে ভোরকে দেখছে। ভোরের জুতা পড়া শেষ হলে ভোর গাড়িতে গিয়ে বসে।  এবার আলোর খারাপ লাগলো এই ভেবে... কেন ভোর বললো না জুতা পড়তে?? তবে কি সত্যি  উনি দয়া করলেন?? ভাবতে ভাবতে আলোও জুতা পড়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।  এবার ভোরের দৃষ্টি আলোর দিকে যাচ্ছে  না। আর আলোতো আবার এক ভাবনা জগৎ এ পারি দিলো। আলো বার বার ভাবছে... কি হবে এর শেষ পরিণতি??  উনি তো মন থেকে মেনে আমাকে বিয়ে করেননি... করেছে চাপে পড়ে। একটা মেয়ের জীবন বাঁচানোর জন্য।  একটা বাবার কাছে তার সতেজ ফুলটাকে ফিরিয়ে দেবার জন্য । যেন সতেজ ফুলটার বাবা কষ্ট না পায়। একটা মেয়ের দিকে কেউ যেন পস্টিটিউটের আঙুলটা না তুলতে পারে।  এসব তো সবটাই দয়া। হুম বড়লোকরা সবাইকে তো দয়াই করে। উনিও তার ব্যতিক্রম কিছু করেনি।

|

ভোর গাড়ি ব্রেক করলো আর আলো ওর ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো। ভোর গাড়ি থেকে বের হয়ে সামনের একটা লেকের পাড়ে একটা বেঞ্চ রাখা সেখানে গিয়ে বসলো। জায়গাটা বেশ নির্জন। মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। আলোও আর গাড়িতে বসলো না। কারন আলোর মনে যে অনেক প্রশ্নেরা ভীড় জমিয়েছে। তাদের যে শান্তি দিতে হবে। তাই আলো গিয়ে বেঞ্চের এক কোণায় বসলো। দুজনই নিরব। দুজনেরই দৃষ্টি সামনের লেকের পানিতে। এই নিরবতা ভেঙ্গে  আলো বললো.....

আলোঃঃ আপনি আমাকে কি দয়া করলেন??

|

ভোরঃঃ না।

|

আলোঃঃ তাহলে??

|

ভোরঃঃ একটু একা থাকতে চাচ্ছিলাম।

|

আলো ব্যাপারটা বুঝতে পারে তাই আর বসে থাকে না ঐ বেঞ্চটাতে। উঠে হাঁটছে আর ভাবছে.... আমি যদি রাতে ওনাকে রুমে না নিয়ে আসতাম তাহলে এইসব কিছুই হতো না। উনি ধুম করে বিয়ের ডিসেশনটা নিলেন। এখন হয়তো মানতে পারছে না..কি করলো উনি?? আমিই বা কি করব এখন?? আমার কি বা করার আছে?? ওনার চেহারা দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে উনি বেশ চিন্তিত। এত রাগী একটা মানুষ সে যদি এমন নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এত নরম হয়ে যায়। তাহলে এটাই বোঝা উচিৎ  তার ভিতরটা কত চিন্তার বাসা বেঁধেছে। 😖 এর থেকে বরং আমি মরে যাই তবে সব সমস্যার সমাধান হবে। 😭

বাবা সরি বলেই.... আলো লেকের পানিতে ঝাঁপ দেয়।😞

|

ভোর পানিতে কিছু পড়ার শব্দ শুনে চারপাশে তাঁকিয়ে দেখে আলো নেই। তারপর দৌড়ে সেখানে যায়... গিয়ে দেখে আলো পানিতে ঝটফট করছে। ভোরও পানিতে ঝাঁপিয়ে পরে। এরপর আলোকে লেকের পাড়ে তুলে। তারপর আলোর পেটে দুই বার হাত দিয়ে প্রেসার দিতেই আলো কাঁশি দিতে দিতে উঠে বসে। আর সাথে সাথে ভোর আলোর গালে সজোরে এক চড় বসিয়ে দেয়। আলো গালে হাত দিয়ে কান্না করতে করতে বলে....

আলোঃঃ স্যার আমি তো আপনার ভালওওও......

(( আলো পুরো কথাটা বলতে পারে না। তার আগেই ভোর ওর দিকে দুটো অগ্নিময় দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।))

|

এরপর ভোর আলোর হাত ধরে ওকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে ড্রাইভ করে সোজা হোটেলে চলে আসে। তারপর যে যার রুমে চলে যায়। 

|

আজ ভোর লং টাইম একটা শাওয়ার নেয়। যেন চাইছে মস্তিষ্কোকে ঠান্ডা করতে কিন্তু এটা কি সহজ? না সহজ না।

|

দুপুরে হোটেলবয় দুজনের রুমেই লাঞ্চ দিয়ে যায়।  ভোর খেয়ে শুয়ে পড়ে। ওর খুব ঘুমের দরকার। কারন আজ রাতেই ওদের ফ্লাইট। তাই ভোর ঘুমানোর চেষ্টা করে আর ঘুময়ি পড়ে।

|

মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলো ভোর রাত আটটার। এলার্ম বাজতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে আলোর  রুমে যাচ্ছে বলতে..আলো যেন রেডি হয়। ওদের ফ্লাইট ১১ টায়।  আলোর দরজা লক করা ছিলো না। তাই ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। ভিতরে ঢুকে দেখে আলো রুমে নেই। তারপর ওয়াশরুমের কাছে গেলো.. দেখলো ওয়াশরুমের দরজাটা খোলা তার মানে আলো ওয়াশরুমে নেই। এবার ভোর বেলকনিতে গেলো... গিয়ে দেখে আলো রকিং চেয়ারটাতে বসে ঘুময়ি পড়েছে। আলোর দিকে ভোর একটু ভালো করে তাঁকিয়ে দেখে আলো শুধু বাথ টাওয়াল পড়ে আছে। যা আলোর হাঁটু অবধী। আর চুলের টাওয়ালটা নিচে পড়ে আছে। 

ভোর কোনদিন ভাবেনি আলোকে এভাবে দেখবে। তাই ভোর ওখান থেকে সরে এলো রুমে। রুমে বসে জোরে জোরে ডাকছে.....

ভোরঃঃ  আলো আলো... কই আপনি??

|

ভোরের ডাক আলোর কানে যাওয়া মাত্র আলো ধড়ফড় করে উঠল আর এক দৌড়ে রুমে গেলো। আলোর একটুও হুশ নেই যে আলো বাথটাওয়াল পড়ে আছে। এসেই....

আলোঃঃ কি....কি...কি হয়েছে স্যার। এএএএএভাবে ডাকছেন যে??

|

ভোর আলোর দিকে তাকিয়ে পিছন দিকে ঘুরে ফিরলো। এমন একটা ভাব করলো যেন আলোকে এভাবে দেখে সে খুব লজ্জা পেয়েছে।  আর সেই লজ্জায় পড়ে পিছনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। (( আসলে পুরুষরা প্রচুর ভং ধরতে জানে আর কি!😏))

আলো ভোরের ওভাবে ঘুরে দাঁড়ানো দেখে....কি ভেবে নিজের দিকে তাকালো। তাঁকিয়ে সেও বেশ লজ্জায় পড়ে গেলো। তার ইচ্ছা করছে মাটির নিচে ঢুকে পড়তে। এরমধ্যে ভোর বলল...

ভোরঃঃ রেডি হন। আমাদের ফ্লাইট ১১ টায়। আর আপনার লাঞ্চ এখনো রাখা কেন?? খাননি কেন?? খেয়ে বের হবেন। ((সবটা আলোর বিপরীতে ঘুরে দাঁড়িয়েই বলছিলো। বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।)) 

|

আর আলো তো এদিকে লজ্জায় শেষ। তারপর খেয়ে নিলো কোনমতে। এরপর রেডি হয়ে বসে রইল ভোরের জন্য। 

|

একটুপর ভোর এলো। এসে আলোকে নিয়ে বের হলো। প্রায়  ১ ঘণ্টা পর ওরা পৌঁছালো এয়ারপোর্টে। এখন ১০:১০ বাজে। ফ্লাইটের এখনো অনেক দেড়ি তাই ভোর আলোকে বসিয়ে রেখে একটু সামনে গেলো ফোনে কথা বলতে বলতে।  এদিকে আলোও ওর বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিলো আগামীকাল দেশে আসবে।  

|

প্রায় ১০ মিনিট পর ভোর এলো হাতে কিছু খাবার নিয়ে।

|

ভোরঃঃ আলো এগুলো খেয়ে নিন।

|

আলোঃঃ আমি তো খেয়ে বের হয়েছিলাম। আমি আর খাবো না।

|

ভোরঃঃ  হুমম দেখেছি প্লেটের চারভাগের এক ভাগও শেষ হয়নি। নিন খেয়ে নিন তাড়াতাড়ি আর কোনো কথা নয়।

|

আলোও আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো। পাশে বসে ভোরও হাল্কা কিছু খেলো।

কিছুক্ষণ পর announcement হলো তারপর ওদের চেকিং হলো। ওরা পাশাপাশি সিটেই বসছে। আলো উইন্ড সিটে আর ভোর ওর পাশেই বসছে।

|

প্রায় এক ঘণ্টা পর আলোর চোখে একটু ঘুম ঘুম ভাব এলো। তারপর আলো ঘুমিয়ে পড়লো।  কিন্তু ভোরের চোখে ঘুম নেই। আলো ঘুমের ঘোরে ভোরের কাঁধে মাথা রাখলো। ভোর কিছু মনে করলো না। আলো পুরো ঘুমে বিবর।

|

সারাটা ফ্লাইটে আলো ভোরের কাঁধেই ঘুমালো। যখন প্লেন ল্যান্ড করলো তখনো আলো ঘুম ছিলো। ভোরের ডাকে আলো মিটিমিটি চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করে তাড়াতাড়ি ভোরের কাঁধ থেকে মাথা তুলে বলল....

আলোঃঃ সরি স্যার। 😖

|

ভোরঃঃ It's ok... আমরা এসে গেছি চলুন।

|

তারপর ওরা বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় যাবার জন্য গাড়ীতে উঠলো। আলো অবশ্য ভোরকে বলেছিলো... সে একা বাসায় যেতে পারবে। কিন্তু ভোর বলল.... তার কিছু জরুরী কথা আছে যেতে যেতে বলবে তাই যেন ভোরের গাড়ীতে ওঠে। অবশেষে বাধ্য হয়ে উঠলো আলো।

|

এবার আর ভোর ড্রাইভ করছে না। ড্রাইভার আছে। আলো আর ভোর পিছনের সিটে বসা।  

একটুপর আলো বলল....

|

আলোঃঃ স্যার আপনার জরুরী  কথা কি এখন বলা সম্ভব??

|

ভোরঃঃ আসলে আমি বলতে চাচ্ছি... সিঙ্গাপুরে যা কিছু হয়েছে এখন এগুলা কাউকে বলার দরকার নেই। যখন সময় হবে আমি বলব তখন।

|

আলোঃঃ হুম আপনার মান-সম্মানের ব্যাপার স্যাপার বলে কথা। কাউকে বলা যাবে না।😊

|

ভোরঃঃ আলো সব কিছু একটা ঘোরের ভিতর ঘটে গেছে। আমি সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিলাম। আমার মাইন্ড ও। কি দিয়ে কি করলাম আমি তখন ভাবি নি। কিন্তু করার পর বুঝলাম...

|

আলোঃঃ কি বুঝলেন? ভুল করেছেন এটাই তো? আচ্ছা স্যার আমি তো বলিনি আমাকে বিয়ে করেন? বলেছি আমি? আমি মরলে আপনার তো ছিঁটেফোঁটাও ক্ষতি হতো না।  যা হবার আমার পরিবারের হতো। তবে কেন করলেন ভুল?? 

|

ভোরঃঃ এই নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না। আমি যখন চাই না কেউ জানবে এই বিষয়ে। so কেউ জানবে না। That's final...

|

আলো আর কিছু বলতে পারলো না শুধু অঝড়ে কেঁদে গেলো। 😭 😭

|

প্রায় ঘণ্টা খানিক পর আলোর বাড়ির সামনে এসে গাড়ী থামলো। আলো আস্তে করে নেমে পড়লো গাড়ী থেকে। নিজের ব্যাগটা নিয়ে বাড়ির মেইন গেটে ঢুকে গেলো। একবারও পিছনে ফিরে তাকায়নি। তাকালে হয়তো আবার অঝড়ে ঝড়বে নোনাজল। ভোরও ওর গাড়ী নিয়ে চলে গেল।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমার বাংলা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
amarbangla
amarbangla
Our Telegram Group / Channel Join Now
Our Facebook Page Follow Now
amarbangla
daraz