amarbangla

বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০৩ Bangla Islamic Story 🌺 Alo 🌺 No- 03

বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০৩
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০৩


 বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০৩

আলোর বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখে ওর বাবা দাঁড়িয়ে আছে। বাবাকে দেখে আলো দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। বাবার বুকে এসে মেয়েটা কেঁদে দিলো। হাউমাউ করে কাঁদলো। শাহেদ সাহেব মানে আলোর বাবার কাছে আলোর কান্নাটা একটু অদ্ভর লাগলো। তাই জিজ্ঞেস করল....

আলোর বাবাঃঃ কিরে মা তোর কি হয়েছে আমাকে বল?

|

আলোঃঃ কিছু না বাবা।  (( হেঁচকি তুলতে তুলতে))

|

আলোর বাবাঃঃ বাবার কাছে লুকাচ্ছিস? 

|

আলো ওর বাবার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালো।

|

আলোর বাবাঃঃ আচ্ছা যা পরে বলিস এখন ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে আগে।

|

আলোঃঃ হুম।

|

আলো নিজের রুমে চলো গেলো। 

|

এদিকে ভোরও বাড়ি পৌঁছে গেছে।  ভোরের মা শায়লা চৌধুরী ভোরকে দেখে তো সেই খুশি। ভোরও মা বলে মাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর সোফাতে মায়ের কোলে শুয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা গল্প জুড়ে তারপর রুমে আসলো। ভোরের বাবা নেই। ২ বছর আগে ব্রেনস্টক করে মারা গেলেন মাহাতাব চৌধুরী। সেই থেকে ভোরই সব দেখাশোনা করে। 

|

আলো রাতে শুয়ে ছিলো এমন সময় ওর বাবা এলো রুমে। এসে মেয়ের মাথার কাছে বসে মেয়েকে ডাকলো....

আলোর বাবাঃঃ কি রে মা ঘুমাসনি?

|

আলো পাশ ঘুরে দেখে তার বাবা বসে আছে। আলো কিছু না বলে আস্তে মাথাটা তার বাবার কোলে রাখে। আলোর বাবাও মেয়ের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।

আলোর বাবাঃঃ কি হয়েছে আমার মেয়ের? এত বিষণ্ণ দেখাচ্ছে কেন??

|

আলোঃঃ  বাবা তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।

|

আলোর বাবাঃঃ হ্যাঁ  তো বল... আমিও শুনতে চাই।

|

এরপর আলো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সব বলতে শুরু করল বাবার কোলে শুয়ে শুয়ে।

|

মাত্রই ভোর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাবে। তাই ওর ব্যাগ থেকে ওর জিনিসপত্র বের করছে এমন সময় ভোরের চোখ আটকে গেলো ব্যাগের ভিতরে। কারন সেখানে রয়েছে আলোর সেই ওড়নাটা যেটা আলো সেদিন পার্টিতে পড়েছিলো। ওড়নাটা ভোর হাতে নিলো এরপর খুলল... দেখে একটা জায়গায় ওড়না ছিঁড়ে গেছে। ভোর ওড়নাটা ভাঁজ করে আলমারিতে রেখে দিলো এইভেবে কাল ফেরত দিবে। এরমধ্যে ভোরের মা ওর রুমে এসে দেখে ফেলে তার ছেলে একটা ছেঁড়া ওড়না ভাঁজ করে আলমারিতে রাখছে। তখন শায়লা চৌধুরী বলল...

ভোরের মাঃঃ কি ব্যাপার আমার ছেলের কাছে একটা ওড়না তাও ছেঁড়া। সেটা আবার যত্নসহকারে আলমারিতে রাখা হচ্ছে।  কাহিনী কি??কে মেয়েটা??🤔

|

ভোরঃঃ কোনো কাহিনী না মা। ওটা আমার একজন অফিসের স্টাফের। কাল দিয়ে দিবো। ভুলে আমার ব্যাগে চলে আসছে। বুঝলে?😏

|

ভোরের মাঃঃ হুম বুঝলাম। আমার যা বোঝার বুঝলাম ডিয়ার সন। 🤭

|

ভোরঃঃ মা এবার কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি। 😡

|

ভোরের মাঃঃ রাগতে হবে না। এখন ঘুৃমিয়ে পড়। কাল অফিস আছে। গুড নাইট। 😘

|

ভোরের কপালে একটা চুমু দিয়ে ভোরের মা চলে গেলো। আর ভোরও ঘুমিয়ে পড়ল।

|

আলোর সব কথা শুনে আলোর বাবা বলল...

আলোর বাবাঃঃ কাঁদিস না মা।  জন্ম;মৃত্যু;বিয়ে;রিজিক সবই আল্লাহর হাতে। তোর কপালে হয়তো এভাবে লেখা ছিলো বিয়েটা।  এখন তোর ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। মনে রাখিস মা... স্বামীর অধিকার আদায় করে নিতে হয় যেকোনভাবে। তুই আমার মেয়ে তুইও পারবি ঐ ভোর চৌধুরীর মনে জায়গা করে নিতে। তোকে পারতেই হবে। এখন ঘুমিয়ে পড় আমি যাচ্ছি।

|

আলো চোখ মুছে...ওর বাবার শেষ কথাটা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।

|

আজ আলো হাল্কা পিংক কালারের একটা থ্রি-পিস পড়েছে। কালোদের হাল্কা পিংকে খারাপ লাগে না। ভালোই লাগে। আর আলোর চেহারাতে তো একটা মায়া আছেই।  কখনো কোনো অরনামেন্টস মেয়েটি পড়ে না। ঐ যে একটা গান আছে না... নাকে নেই ফুল... কানে নেই দুল... গলাতে নেই কোনো হার....((পরের লাইটা ভুলে গেছি পাঠক/পাঠিকারা😞))

|

 এমনই ব্যাপারটা আলোরও নাকে কানে গলায় কোনো অরনামেন্টস নেই। তবুও মেয়েটাকে একেবারে খারাপ দেখায় না। 

বাবার সাথে নাস্তা করে আলো অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়।

এতদিন অফিসে যেতে আসতো কোনো অনুভূতি ছিলো না। আজ এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে আলোর ভিতরে। কেমন একটা চাপা কষ্টও আজ আলোর ভিতরটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।  এতসব মাথায় নিয়ে অবশেষে আলো পৌঁছালো অফিসে। অফিসে গিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের ডেস্কে এসে বসলো।  তারপর নিজের ব্যাগটা রেখে ভোরের কেবিনে ঢুকলো।

|

ভোর এখনো অফিসে আসেনি। প্রতিদিনই ভোরের আগে আলো অফিসে আসে আর এসে দেখে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না? ভোর যে পান থেকে চুন খষলে অফিস মাথায় তুলে চিল্লিয়ে। আর আলোতো সেইরকম গোছালো একটা মেয়ে। এই পর্যন্ত আলোর কোনো কাজে ভুল খুঁজে পায়নি ভোর।  

|

আলো ভোরের কেবিনটা গুছিয়ে প্রয়োজনীয় সব ফাইলপত্র রেখে নিজের ডেস্কে চলে গেলো।

২০মিনিট পরই ভোর অফিসে ঢুকলো। সবাই ভোরকে কংগ্রেস করলো ডিলটা সাকসেস হওয়ার জন্য। আর মিরা এসে তো জড়িয়েই ধরলো ভোরকে।

|

 মিরা ভোরের অফিসের স্টাফ। আবার ভোরের ক্লাসমেটও ছিলো। ভোরকে মিরা পছন্দ করে। দুজন দুজনকে তুমি করেই বলে যেহেতু তারা ক্লাসমেট ছিলো। 

|

ভোরের সাথে মিরাও ভোরের ডেস্কে যায়।

|

মিরাঃঃ ভোর তুমি কিন্তু সিঙ্গাপুর যেয়ে একটু শুকিয়ে গেছ।

|

ভোরঃঃ  কি বলো মা তো কিছু বলল না। তবে তুমি কিন্তু যেতে পারতে আমাদের সাথে।

|

মিরাঃঃ যেতে তো চেয়েছিলাম বাট হঠাৎ ই অসুস্থ হয়ে পড়লাম। 

|

ভোরঃঃ ওকে মন খারাপ করে না। পরের বার যাবে।

|

মিরাঃঃ আচ্ছা।  ওহ তুমি তো আজ আমাকে দেখলেই না।

আমি যে নিউ ড্রেস পড়েছি।

|

ভোরঃঃ ওহ খেয়াল করিনি। Nice.. তোমাকে কিন্তু এই থ্রি-কোয়াটার স্কার্টে ভালোই লাগে। আর সব থেকে বড় কথা তুমি অনেক স্মার্ট এই অফিসের সব মেয়ের থেকে।

|

মিরাঃঃ হ্যাঁ। সব মেয়েগুলো আমার কাছ থেকে  advise নেয়।  শুধু একজন ছাড়া।

|

ভোরঃঃ কে?

|

মিরাঃঃ কে আবার? তোমার পি.এ. আলো। তুমি আমাকে তোমার পি.এ.- র পোস্টটা দিলেই পারতা।

|

ভোরঃঃ হুম বুঝলাম। ওকে অনেক গল্প করেছি এখন তবে কাজ শুরু করি?

|

মিরাঃঃ ok. see you later...bye .

|

ভোরঃঃ bye

|

মিরা ভোরের কেবিন থেকে বের হলো। ভোর খেয়াল করল ওর টেবিলের উপর কফি নাই। এই প্রথম আলো ওর টেবিলে কফি রাখেনি। ভোরের প্রচন্ড রাগ হলো। ভোর আলোকে কল করে নিজের ডেস্কে আসতে বলল। আলো একটুপরই এলো। আলো কখনো ভোরের রুমে নক করে আসে না। এটা ভোরই পারমিশন দিয়েছিলো।

কিন্তু আজ.....

আলোঃঃ স্যার আসবো?

|

ভোর একটু অবাকই হলো পারমিশন চাচ্ছে এটা ভেবে....

|

ভোরঃঃ হুম আসুন।

|

আলোঃঃ স্যার কোনো কিছু দরকার?

|

ভোরঃঃ আমার কফি?((রাগি মুডে))

|

আলোঃঃ ওহ সরি স্যার।  আমি ভুলে গেছিলাম।

|

ভোরঃঃ আগে তো এই ভুল কখনো হয়নি আপনার তবে আজ কেন?

|

আলোঃঃ আগে তো অনেক কিছুই হয়নি কিন্তু এখন  হয়েছে।

|

ভোরঃঃ কিছু বললেন?

|

আলোঃঃ না। আমি কফি দিচ্ছি।

|

আলো কফি বানাতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর কফি নিয়ে এসে ভোরকে দিলো। ভোর কফিতে মুখ দিয়েই সাথে সাথে কফির মগটা আলোর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল...

ভোরঃঃ test it.. 

|

আলো কফির মগটা নিয়ে চুমুক দিলো আর সাথে সাথে বলল...

আলোঃঃ ইয়াক.. কি তিঁতা..

|

ভোরঃঃ কফি খাওয়ার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো।(( রাগী মুডে))

|

আলোঃঃ সরি...

|

ভোরঃঃ ফাইলগুলো চেক করুন।

|

আলো ফাইল নিয়ে চলে যাচ্ছিলো। এমন সময়..

ভোরঃঃ কি ব্যাপার ফাইল নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?? 

|

আলোঃঃ আমার ডেস্কে..

|

ভোরঃঃ এর আগে তো কোনদিন আপনার ডেস্কে বসে ফাইল চেক করেননি। তবে আজ কেন? কি হয়েছে আপনার?

|

আলোঃঃ এর আগে তো কোনদিন আপনাকে দেখে এমন চাপা কষ্টের অনুভূতি কখনো হয়নি তাই। ((আস্তে করে))

|

ভোরঃঃ  বলুন কি হয়েছে আপনার?

|

আলোঃঃ কিছু না।

|

বলেই আলো ফাইলগুলো নিয়ে ভোরের সামনে বসলো। |

|

আলো একমনে ফাইলগুলো চেক করছে। 

ওর কোনো হুস নেই কিন্তু হঠাৎ মনে হলো ভোর ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে তাই আলো চোখ একটু উপরে করলো আর দেখলো ভোর সত্যিই ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। একটু লজ্জা পেলো।  তাই চোখ নামিয়ে ফেললো।

ভোরঃঃ আপনার ওড়নাটা পড়ে যাচ্ছে।(( নিজের ফাইলের দিকে তাঁকিয়ে বলছে))

|

আলো চোখ বড় বড় করে নিজের দিকে খেয়াল করল...

হুম সত্যিই ওড়নাটা পড়ে যাচ্ছে ঘাড় থেকে। তাড়াতাড়ি ওড়না ঠিক করে মনে মনে বললো..... *** অসভ্য*** 

|

ভোরঃঃ আজ আপনাকে পিংকে খারাপ লাগছে না। ((নিচের দিকে তাঁকিয়ে))

|

এবার আলোর একটু বেশিই লজ্জা লাগলো। তাই আর মাথা উঁচু করতে পারলো না। আলোও ভাবছে.... ** কি হয়েছে ওনার? আগে তো কোনদিন আমার কথা এভাবে বলেনি? অবশ্য আগে তো কখনো উনি আমাকে বিয়েও করেনি। হুহহহহহ....

|

ওরা সব ফাইল চেক করতে করতে দুপুর বাজিয়ে দিলো। এবার আলো উঠতে গেলো তখন...

ভোরঃঃ  কোথায় যাচ্ছেন? ফাইল কম্পিলিট?

|

আলোঃঃ না দুটো আছে। রতন ভাইয়া আসছে আপনার লাঞ্চ নিয়ে। লাঞ্চের পর চেক করবো।

|

ভোরঃঃ ওহ।

|

আলোঃঃ হুম। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি লাঞ্চ রেডি করছি।

|

আলো বাহিরে চলে এলো লাঞ্চটা নেবার জন্য। 

|

লাঞ্চ নিয়ে রেডি করল। ভোরও এলো ফ্রেশ হয়ে। সবসময় ভোরের লাঞ্চ শেষ হয় তারপর আলো লাঞ্চ করতে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম কিছু হলো না। ভোরের লাঞ্চ শেষে সব গুছিয়ে আলো চলে যাচ্ছিলো। তখন...

ভোরঃঃ কিছু ভুলে যাচ্ছেন..

|

আলোঃঃ কি?

|

ভোরঃঃ আমার মেডিসিন!

|

আলোঃঃ ওহ সরি। একটু দাঁড়ান আনছি। 

|

আলো ভোরের মেডিসিন দিয়ে চলে এলো নিজের ডেস্কে আর বলছে.... কি হয়েছে আমার?? এতো কেন সব ভুল হচ্ছে?? উফফফফ.....

|

আলো আজ ঠিক মতো লাঞ্চও করলো না। খেতে একদমই ইচ্ছা করছে না। তাই বসে না থেকে হাত ধুয়ে ভোরের কেবিনে গেলো ফাইল দুটো চেক করতে। আবারও পারমিশন নিলো ভোরের কেবিনে আসার জন্য।

|

ফাইলগুলো চেক করে সব ফাইল নিয়ে যাচ্ছিলো আলো। তখন...

ভোরঃঃ ওয়েট ফাইলগুলো দিন তো একবার।

|

আলোঃঃ কেন?

|

ভোরঃঃ আজ আপনি অনেক কিছু ভুলে যাচ্ছেন..গড়মিল করছেন তাই আমি একবার দেখে দিচ্ছি। যদি কোনো ভুল থাকে। যদিও এর আগে কখনো আমার চেক করতে হয়নি। কিন্তু  আজ আর ভরসা করতে পারছি না।

|

আলোঃঃ বেয়াদব... কৌশলে অপমান করে।((মনে মনে))

|

ভোর ফাইলগুলো চেক করে দেখে ঠিক আছে। তারপর আলোকে দিয়ে দিলো। আলো ফাইলগুলো নিয়ে বের হয়ে আসলো।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমার বাংলা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
amarbangla
amarbangla
Our Telegram Group / Channel Join Now
Our Facebook Page Follow Now
amarbangla
daraz