বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব -১৭ Bangla Islamic Story 🌺 Alo 🌺 No- 17
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব -১৭ |
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব -১৭
ভোর এখন অনেকটাই সুস্থ। এখন একা একা ভালোই হাটতে পারে। কিন্তু পুরোপুরিভাবে না। কপালের দাগটা তো একদম ভ্যানিশ। এত দ্রুত সুস্থ আলোর জন্যই হয়েছে। ওহ আপনাদের তো বলাই হয়নি ভোর আলোকে এখন *তুমি* করে ডাকে। অবশ্য আলোর জন্যই তুমি করে ডাকা।
এই তো কিছুদিন আগে.... ভোর বেডে বসে বসে টিভি দেখছিলো রাত তখন ১১টা প্রায়। আলো ফ্রেশ হয়ে এসে ভোরের কোলে উঠে বসে পড়ে...ভোরও কোমড়া জড়িয়ে ধরে রেখেছে তা না হলে আলোর কত কথা যে শুনতে হবে তার ঠিক নাই তার থেকে কোমড় জড়িয়ে ধরে শ্রেয়।
তো কোলে বসে আলো মুখটা কালো করে রেখেছে তাই দেখে ভোর বললো.....
ভোরঃঃ কি ব্যাপার আপনার আবার কি হলো? যার মুখ দিয়ে খই ফুঁটে তার মুখ কালো কেন?
আলোঃঃ আমার মন খারাপ।(( ভোরের বুকে আঙুল দিয়ে স্লাইড করছে))
ভোরঃঃ কেন?((অবাক হয়ে))
আলোঃঃ আপনি আমাকে আপনি করে ডাকেন তাই।
ভোরঃঃ তো কি ডাকব?
আলোঃঃ তুমি করে ডাকতে পারেন না?
ভোরঃঃ না।
আলোঃঃ হ্যাঁ তা পারবে কেন? তুমি করে তো মিরাকে ডাকবেন। মিরাকে দেখলেই তো তুমি আসে আমাকে দেখলে তুই আসে কিন্তু ফর্মালিটি করে আপনি ডাকেন। বুঝি না আমি বুঝি। সব বুঝি।
ভোরঃঃ আবার মিরা? ((রাগ নিয়ে))
আলোঃঃ হ্যাঁ আবার মিরা। আপনি আমার বর অথচ আমাকে তুমি করে বলেন না। আপনি মিরাকে তুমি করে ডাকেন। তো বিয়েটা মিরাকেই করতেন?
ভোরঃঃ হ্যাঁ তাই ভাবছি...
আলোঃঃ কি বল্লেন?((রাগি চোখে))
ভোরঃঃ কই? কিছু না।
আলোঃঃ মিরাকে বিয়ে কারবেন এটা বলছেন আপনি!
ভোরঃঃ না। আমার মাথা খারাপ? বিয়ের সাধ মিটে গিয়েছে আপনার অত্যাচারে।
আলোঃঃ কি আমি অত্যাচার করি? হ্যাঁ এখন তো তাই বলবেন আমি অত্যাচারী আরও কত কি যে এখন শুনবো। আমি যে ভালোবাসি তার তো কোন মূল্যই নেই। মিরাই আপনার সব। আপনার মিরা কি আপনাকে আজ অবধী একটা বারও দেখতে আসছে। আর আপনি তার নাম জপ করেন ((কান্নার ভাব ধরে))
ভোরঃঃ আমি কি একবারো ওর নাম উচ্চারণ করেছি?
আলোঃঃ হুম করেছেন..
ভোরঃঃ কখন?? ((অবাক হয়ে))
আলোঃঃ মনে মনে...
ভোরঃঃ What the....((রেগে))
আলোঃঃ হ্যাঁ এখন তো আমি what the... আর কত কি যে হবো? ((জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে))
ভোরঃঃ মাফ চাই। আমি এই কান ধরেছি(কান ধরে) আর কখনো আপনাকে আপনি করে ডাকবো না। তুমি করেই ডাকবো। তবুও শান্তি চাই আমি। আর এই কান্না অফ করুন প্লীজ।
আলোঃঃ সত্যি তো?
ভোরঃঃ হুম সত্যি সত্যি সত্যি(( বিরক্তি নিয়ে))
আলো সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে বললো.... আমার লক্ষী বর।
আর ভোর হেসে দিলো এইভেবে... একটু আগেও কি কান্নাটাই না কাদলো আর এখন সব উধাও। মেয়েটা আসলেই নাটকবাজ।
আলো রুমে ঢুকে দেখে ভোর আলোর ফোন ধরেছে আর কিছু দেখছে। আলো সাথে সাথে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিলো। এটা দেখে ভোর অবাক হলো....
ভোরঃঃ ফোনটা ওভাবে নিলা কেন?
আলোঃঃ আপনি আমার ফোন ধরেছেন কেন আমার পারমিশন ছাড়া?
ভোরঃঃ কেন? তুমিও তো আমার ফোন ধরো। আমি কিছু বলি কখনো? দাও ফোনটা দাও কি আছে ওর মধ্যে আমি দেখব।
আলোঃঃ দেখতে হবে না।
বলেই আলো ফোনটা নিয়ে ছাদে চলে গেলো। ছাদে যাবার একটাই কারন ভোর ছাদে আসতে পারবে না। আলো ছাদে এসে কিছু জিনিস তাড়াতাড়ি ডিলেট করে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কেঁদে দিলো আর বলল... সরি স্যার সরি। আপনাকে সত্যটা বলার সময় এখনো আসেনি। প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। ((আলো কাঁদতে লাগলো))
এদিকে ভোরের ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগেনি। মনের ভিতর একটা সন্দেহ ঢুকে গেলো।
আধা ঘণ্টা পর আলো রুমে এসে চুপটি করে শুয়ে পড়ল। আলো রুমে যখন রুমে ঢুকছিল তখন আলোর দিকে ভোর তাঁকিয়ে দেখে আলোর চোখ ফোলা...
ভোরঃঃ কান্না করছ কেন?
আলোঃঃ কোথায়? না তো!(( অন্যপাশে ঘুরে শুয়ে))
ভোরঃঃ মিথ্যা বলে লাভ নেই। বলো কেন কান্না করেছ?
আলোঃঃ বাবাকে মনে পড়ছিলো। অনেকদিন তো দেখিনা তাই।
ভোরঃঃ কাল গিয়ে দেখে আসবে। আমার দিকে ফিরো এখন।
আলোঃঃ আমার ঘুম পাচ্ছে।
ভোরঃঃ আমার টি-শার্ট না জড়ালে আর বুক ছাড়া তোমার ঘুম আসবে না তা তোমার থেকে আমি ভালো জানি। ফিরো আমার দিকে।
আলোঃঃ ভালো লাগছে না। ঘুমিয়ে পড়ুন।
ভোর এবার রেগে আলোকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে...
ভোরঃঃ বলতে বলছি কি হয়েছে? মা কিছু বলছে?
আলোঃঃ না। মা আমাকে আপনার থেকে বেশি ভালোবাসে।
ভোরঃঃ তাহলে আমি কিছু বলেছি?
আলোঃঃ না। এমনি বাবার কথা মনে পড়ছিলো।
ভোরঃঃ ফোনটা তখন ওভাবে নিলে কেন?
আলোঃঃ সন্দেহ হচ্ছে আমার উপর? কি সন্দেহ হচ্ছে আমার লাইফে অন্য কেউ ছিলো বা আছে? তাহলে বলবো সন্দেহটা মন থেকে মুছে ফেলুন। কেন নিয়েছি সময় হলে বলবো। ঘুমিয়ে পড়ুন।
বলেই আলো অন্যপাশ ঘুরতে যাবে আর ভোর ঘুরতে না দিয়ে আলোকে জড়িয়ে ধরে আলোর ঘাড়ে মুখ গুঁজে....
আলোঃঃ কি হলো? ((অবাক হয়ে))
ভোরঃঃ কিছু না। আজ আমার টি-শার্ট পড়বে না?((ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে))
আলোঃঃ না। সরুন।
ভোরঃঃ কেন? পড়তেই হবে তোমার। দাড়াও।
বলেই ভোর উঠে বসলো আর আলোকে উঠে বসালো। তারপর টি-শার্টটা খুলে...
ভোরঃঃ নাও পড়...
আলোঃঃ উফফফফ আজ কি হলো আপনার?
ভোরঃঃ জানি না পড়তে বলছি পড়ো।
আলোঃঃ অসহ্য দিন।
আলো টি-শার্ট নিয়ে বেড থেকে উঠতে যাচ্ছিলো তখন ভোর আলোর হাত ধরে...
ভোরঃঃ কোথায় যাচ্ছো??
আলোঃঃ ওয়াশরুমে চেন্জ করতে।
ভোরঃঃ আমার সামনে করো।
আলোঃঃ কি? আমি এই কাজ কোনদিন করেছি?
ভোরঃঃ করনি। এখন করবে।
আলোঃঃ বেশি হচ্ছে কিন্তু??
ভোরঃঃ তোমার থেকে শিখেছি। বুঝছি তুমি চেন্জ করবে না আমাকেই করিয়ে দিতে হবে।
ভোর সাথে সাথে আলোর জামা ধরে খুলতে যায় আর আলো একটু দূরে সরে....
আলোঃঃ আআআমি চেন্জ করছি। আপনি ছাড়ুন।
ভোরঃঃ ওকে।((নিজের গালে দুই হাত দিয়ে আলোর দিকে চেয়ে রইল))
আলোঃঃ এভাবে তাকালে আমার লজ্জা করবে না? একটু চোখ বন্ধ করুন।
ভোরঃঃ উহুম। পারব না।
আলোঃঃ লুইচ্চা বেটা।
আলো জামাটা একটু তুললো আর তা দেখে ভোর হা হয়ে গেলো। ঠিক তখনই আলো টি-শার্ট টা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে এক দৌড়। আর তখন ভোর বলতে শুরু করল...
ভোরঃঃ আলো কাজটা কিন্তু তুমি ভালো করলা না বলে দিলাম। তুমি ভোর চৌধুরীকে ধোঁকা দিলা এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।
একটুপর আলো টি-শার্টটা পড়ে বের হলো। বের হয়ে দেখে ভোর মুখ ফুলিয়ে বসে আছে তাই দেখে আলো গিয়ে ভোরের কোলে বসে....
আলোঃঃ আমার বরটা কি রাগ করেছে?
ভোরঃঃ -------------
আলোঃঃ অনেক রাগ করেছে?
ভোরঃঃ আজ পা টা ভাঙ্গা তাই মানুষ আমাকে ধোকা দিতে পারল।((অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে))
আলোঃঃ ওহ..অভিমান করছে। দাড়ান এখনি ভেঙ্গে দিচ্ছি।
আলো ভোরকে কাতুকুতু দিতে শুরু করল। কিন্তু একটুও নড়ছে দেখে...
আলোঃঃ কি ব্যাপার? আপনি হাসছেন না কেন?
ভোরঃঃ ভোর চৌধুরীর এসব ফালতু জিনিস থাকেনা।(( অন্যদিকে তাঁকিয়েই))
আলোঃঃ আমার আছে তার মানে আমি ফালতু? ওকে।
আলো ভোরের কোল থেকে উঠে গেলো। আর ভোরও শুয়ে পড়ল।
আলো এদিক ওদিক উল্টেপাল্টে শুচ্ছে কিন্তু ঘুম আসছে না। তাই উঠে বসে রইল। ভোর হাল্কা চোখ খুলে দেখলো।ভোর মুচকি একটা হাসি দিয়ে আলোকে একটা হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে জড়িয়ে নিলো। আলোও মনে মনে খুশি হয়ে ভোরকে জড়িয়ে ধরে বললো..... বদ বর। তারপর ঘুমিয়ে পড়ল।
চলবে.............
((ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।পরবর্তী পর্ব পেতে সাথে থাকুন। ধন্যবাদ🙂))
আমার বাংলা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url