amarbangla

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥ - Bangla Valobasar Golpo Valobasar Rong

Bangla Valobasar Golpo Valobasar Rong
Bangla Valobasar Golpo Valobasar Rong 

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং

  • ✔️গল্পের নামঃ   ভালোবাসার রং
  • ✔️লেখকঃ           ইশিতা রহমান সানজিদা 
  • ✔️সংগৃহীতঃ       ফেছবুক থেকে 
ভালোবাসার রং গল্পের সকল পর্ব সমূহের তালিকা নিচে দেখানো হচ্ছে । গল্পটি কারো যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার প্রিয় জনের কাছে শেয়ার করে তাকেও এই ভালোবাসার রঙ গল্পটি পড়ার সুযোগ করে দিবেন । 


বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ০১

বিয়ের আসরে বসে থাকা অবস্থায় যদি কোন মেয়ে খবর পায় তার হবু বর পালিয়েছে তখন তার মন খারাপ হয়ে যায়,,,,, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে উরাধুরা ড্যান্স করি,,,,,
একটু আগে ফুপি এসে বলল আমার হবু বর নাকি পালিয়েছে,,,,, বাড়ির সবার মন খারাপ শুধু আমার বাদে,,,, আমার তো ইচ্ছে করছে ল্যাহেঙ্গা খুলে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে,,,, বাড়ির সব মিউজিক বক্স বন্ধ,,,,ব্যান্ড পার্টি সবাই হাত পা গুটিয়ে বসে আছে,,,, কিন্তু আমার মনের মধ্যে মিউজিক বক্স আর ব্যান্ড বাজতেছে,,,,,, 
আর আমার এতো খুশির কারণ হলো আমার বয়ফ্রেন্ড আছে,,,, একবছরের সম্পর্ক আমাদের,,,,, বাবাকে ওর কথা বলতে পারিনি কারণ ও বেকার,,,, কিছুই করে না,,,, আর প্রেম ভালোবাসা বাবা একটু ও পছন্দ করে না,,,, বাবাকে আমি খুব ভালোবাসি আর ভয়ও করি,,,,তাই তার কথামতোই পছন্দ করা পাত্র কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাই,,,,,সব বাবারাই চায় তার মেয়ে বড় ঘরে যাক,,, সুখে শান্তিতে থাকুক,,,, আর যে ছেলেকে আমার বাবা পছন্দ করেছেন সে দেখতে ভালো,,,, বাবার বিজনেস চালাচ্ছে মোটামুটি ভালো পজিশনে আছে তাই বাবা ওই ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিল,,,, কিন্তু কে জানত যে বর বিয়ের দিন পালাবে,,,,,,
যাই হোক এখন আমি মুখটা একটু কালো করে বসে আছি কারণ এখন আমাকে এই নাটকই করতে হবে,,,, আমি যে খুশি সেটা কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না,,,,, কিন্তু মনে মনে তো আমি খুব খুশি,,,,কাজিনরা আমার পাশে বসে শান্তনা দিচ্ছে,,,, ওদের শান্তনায় আমার কি হবে,,,,😁😁😁😁 আমি আমার খুশি কিছুতেই ধরে রাখতে পারছি না,,,, ইচ্ছে করছে এখনই সোহানকে কল করে সব বলে দেই তাহলে খুশিটা একটু দমে যাবে,,,,,
কিন্তু আমার এই খুশি ছিল ক্ষণস্থায়ীর জন্য,,,,, ঠিক তখনই আমার হবু শ্বশুর মশাই আর আমার বাবা এসে আমার খুশিতে গরম পানি ঢেলে আমার সব খুশি সেদ্ধ করে তারপর খুশিগুলো ভর্তা বানিয়ে দিল,,,,,
আমি যখন কাজিন দের সাথে বসেছিলাম তখন আমার বাবা আর আমার হবু শ্বশুর মশাই এসে সবাইকে বের করে দিল,,,,তার পর আমার হবু শ্বশুর আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে কেঁদে দিল,,,, আমার খুব মায়া হচ্ছে তার কান্নাভরা মুখটা দেখে,,,,, অসহায় ভাবে তিনি আমাকে বললেন,,,,,
শ্বশুর: দেখ মা তুমি তো সব জানো,,,,যে রাকিব পালিয়েছে,,,, এর জন্য আমি খুব লজ্জিত,,,, তোমার জীবনটা আমার জন্য নষ্ট হতে চলেছে,,,,,( আমি মনে মনে ভাবলাম এও বুঝি আমাকে শান্তনা দিতে এসেছে) কিন্তু আমি সেটা হতে দিব না,,,, তাই আমরা দুই পরিবার মিলে ঠিক করেছি তোমার সাথে আকিবের বিয়ে দিব,,,,,
কথাটা শোনার পর আমার মাথায় সাত আসমান ভেঙে পড়ল,,,, আমি কিছুই বলতে পারছি না,,,, কি বলব মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না,,,,
শ্বশুর: দেখো মা,,,,আমাদের দুই পরিবারের সম্মান বাঁচানোর জন্য এটা করতে হবে,,,, আর তুমি তো আকিব কে খুব ভালো করেই চেনো,,,,ও খুব ভালো ছেলে,,,,সেটা তুমি জানো,,, এখন আমি তোমার মতামত জানতে চাই,,,, তুমি যদি রাজি না হও তাহলে বিয়েটা হবে না,,,,
আমার তো রিতিমত শরীর কাঁপছে,,,, তার পর ও নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বাবাকে বললাম,,,
__ আব্বু তুমি কি চাও আমি এই বিয়েটা করি,,
বাবা: এই সব কিছু তোর উপরে ডিপেন্ড করছে,,,, তুই যদি আমার সম্মান বাঁচাতে চাস তবে রাজি হয়ে যা,,,,,
এর পর আমার রাজি না হয়ে উপায় নেই,,, আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম ওনারা দুজনে চলে গেল,,,,
এতো কিছুর মধ্যে পরিচয় দিতে ভুলে গেছি,,
আমি আহিয়া তাসনিম আনহা,,,, এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী,,,,,, আর যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার নাম,,,হলো,, রাফসান আদনান রাকিব,,,,,ওনি এবার নিজের বাবার বিজনেস দেখছেন,,,, আর ওনার ছোট ভাইয়ের নাম হলো,,,, আরিয়ান আদনান আকিব,,,,,ও এবার অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র,,,,,পড়ালেখা শেষের পথে,,,,
হ্যা আপনারা ঠিকই ধরেছেন,,,,, আমার বর পালিয়েছে তাই আমাকে হবু দেবরকে বিয়ে করতে হবে,,,, কিন্তু আমি চিন্তা করছি আকিব এই বিয়ে করতে রাজি হলো কেন,,,,মানে আকিবের তো গার্লফ্রেন্ড আছে,,,,রিধি,,,,, তার পর ও আকিব রাজি হলো কিভাবে,,, এভারেস্টের পাহাড় পরিমান চিন্তা আমার মাথায় চাপছে,,,,,,
আমার বিয়ে ঠিক হয় আজ থেকে দুই মাস আগে,,,,,রাকিবের বাবা মা আমাকে পছন্দ করে,,,, তারপর আমাকে আংটি পরিয়ে রাখে কারণ সেই সময় রাকিব বিদেশে ছিল একটা কাজের জন্য,,,,তাই,,,,  আংটি পরানোর দিন আকিব এসেছিল,,,, আকিবের সাথে আমার সেদিন পরিচয় হয়,,,,, খুব ভালো একটা ছেলে ও,,,, আমাকে যথেষ্ট সম্মান করত,,,,, কখনো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি,,,বড় কথা হলো আকিব আর আমি একই ভার্সিটি তে পড়ি,,,,তাই ও প্রতিদিন আমাকে ওর বাইকে করে নিয়ে যেত আর দিয়ে যেত,,,,, এতে আমাদের সম্পর্ক টা আরো ভালো হয়,,,,,আকিব আমাকে ওর বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়,,, এমনকি ওর গার্লফ্রেন্ড রিধির সাথে ও পরিচয় করিয়ে দেয়,,,,,
আমার কাজিনরা আকিবকে দেখে পুরাই ফিদা,,, ওরা আমাকে বলত আনহা তুই যেমন সুন্দর বর পেয়েছিস তেমন সুন্দর দেবর পেয়েছিস,,,,, কিন্তু তখন কে জানত এই দেবরই আমার বর হবে,,,,
হাতের মেহেদির দিকে তাকিয়ে আছি,,,,, আকিবের নামটা আমার হাতে চকচক করছে তাহলে কি আকিব ই ছিল আমার ভাগ্যে,,,, মেহেদির অনুষ্ঠান এর দিন আকিব এসে আমার এক হাতে ওর নাম লিখে দিয়ে বলেছিল শুধু ভাইয়ার নাম লিখলে হবে না ওর নামটাও লিখতে হবে,,,, আমি ওর কথায় শুধু মুচকি হেসে ছিলাম,,,,যদিও অপর হাতে রাকিবের নামটা লেখা হয়েছিল,,,,, কিন্তু ওই হাতে মেহেদির রঙ ওঠে নি,,,,কেমন যেন ফ্যাকাসে একটা রঙ হয়েছে,,,,, কিন্তু যে হাতে আকিবের নাম লেখা আছে সেই হাতে মেহেদির রঙটা অনেক গাঢ় হয়েছিল,,,,, এটা দেখে সব কাজিনরা বলেছিল,,,একি আনহা,,তোর দেবরের নামটা চকচক করছে,,, তুই কি দেবরকে বিয়ে করবি নাকি,,,, আরেকজন বলল,,,, হুম তাই হলে ভালো হয় কারণ আনহার নামটাও ওর বরের সাথে ম্যাচ করেনি,,,,আকিবের সাথে ম্যাচ করেছে,,,,, বলেই সবাই হেসে উঠলো,,,, আমি কিছুই বলিনি ওদের,,,,কারণ ওরা মজা করছিল,,,, আমি শুধু বলেছিলাম মেহেদি টা বোধ হয় ডেট ফেল তাই এইরকম রং হয়েছে,,,
হঠাৎ ফুপির ঠেলায় আমি অতিত থেকে বাস্তবে ফিরে আসি,,,,,
ফুপি: কি রে আনহা কবুল বল,,,,,
আমি: হা,,,,😱😱😱😱 তার মানে অর্ধেক বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে,,, এখন শুধু আমার কবুল বলার পালা,,,, আর আমি এসবের কিছুই শুনিনি এতক্ষণ ধরে ঘোরের মধ্যে ছিলাম,,,,,, (মনে মনে)
ফুপি: আনহা কি হয়েছে,,,, কবুল বল,,, (আবার ঠেলা মেরে)
কি আর করার,,,, দিলাম কবুল বলে,,,,, সবাই চলে গেলে আমি পাথর হয়ে বসে আছি,,,, কাঁদতে ও পারছি না,,, কথায় আছে না অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর,,,,, আমি পাথর হয়ে গেছি,,,, কাজিনরা এসে আমার পাশে বসে বকবক করতেছে,,,,এটা কি হলো কিভাবে হলো হ্যান ত্যান ভাতের ফ্যান ইত্যাদি ইত্যাদি,,,,, কিন্তু আমার কানে কোন কথাই যাচ্ছে না,,,,এক প্রকার ধান্দা লেগে আছে আমার,,,,,,
একটু পরে আমাকে বাইরে নিয়ে আসে,,,, কারণ এখন আমার বিদায়ের পালা,,, আমাকে আকিবের কাছে নিয়ে যাওয়া হল,,, আমি আকিবের মুখের দিকে তাকালাম ওর মুখটা কালো করে বসে আছে,,,, মন হচ্ছে পারলে এখনই কেঁদে দিবে,,,, বেচারা,,,,
আমি একটু কান্না করলাম বাবাকে জড়িয়ে ধরি যদিও আমি কান্না করা ভুলে গেছি,,,, তারপরও  কান্না করলাম না হলে লোকে কি ভাববে,,,,
আমি আর আকিব গাড়িতে পাশাপাশি বসে আছি,,,, আকিব মাথায় হাত দিয়ে সামনের দিকে ঝুকে বসে আছে,,,,, আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি,,, কিছু কি ওকে বলব না থাক এমনিতেই ওর আর আমার দুজনের মন খারাপ,,,,পরে না হয় ওকে জিজ্ঞাসা করব যে ও কেন বিয়েতে রাজি হয়েছে,,,,,,
গাড়ি এসে আকিবের বাড়ির সামনে থামে,,,,আকিবের মা আর বড় বোন এসে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল,,,,, ওনারা ও সবটা জানে,,,, কিন্তু তারপরও ওনারা সবটা মেনে নিয়েছে,,,,,,
রাকিব পালিয়েছে আর আকিবের সাথে আমার বিয়ে এটা নিয়ে সব আত্মিয়রা অনেক কথাই বলছে তাই আমাকে সবার সামনে না নিয়ে সোজা রিমি (আকিবের বড় বোন) আপুর রুমে নিয়ে গেল,,,, ফ্রেশ হয়ে আমাকে সুন্দর একটা শাড়ি পরিয়ে আবার সাজিয়ে দিল,,,, তারপর বাসর ঘরে বসিয়ে দিল,,,,
আমি সারা ঘরে চোখ বুলালাম অনেক সুন্দর করে রুমটা সাজানো,,,গোলাপের পাপড়ি খাটের উপর বিছানো,,,,,ক্যান্ডেল জ্বালানো,,,,
বাসর ঘরটা অসম্ভব সুন্দর,,,,,,
রাত প্রায় বারোটা বাজে,,,,এমন সময় দরজার বাইরে কথার শব্দ শোনা যাচ্ছে,,,,, উকি দিয়ে দেখি আকিব কে রিমি আপু আর উনার হাজবেন্ড মিলে ঠেলাঠেলি করতেছে বাসর ঘরে আসতে কিন্তু আকিব তো আসতেই চাচ্ছে না,,,,, কোন মুখ নিয়ে ও আসবে,,,,যাকে ভাবি বানাতে চেয়েছিলো সেই আজকে ওর বউ,,,,, যাই হোক আকিবকে জোরে একটা ধাক্কা মেরে রুমে পাঠিয়ে দরজা ওনারা বাইরে থেকে আটকিয়ে দিল,,,,,
ওনাদের ধাক্কা খেয়ে আকিব মাটিতে পড়ে যায়,,,, আমি তা দেখে খাট থেকে নেমে আকিবের সামনে গিয়ে ওকে উঠানোর জন্য ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেই,,,,, আকিব হাত ধরতে গিয়ে ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাতটা ধরলো না,,,, নিজেই উঠে দাঁড়ালো,,,,
আকিব আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
আকিব: এটা কি হলো ভাবি,,,, তুমি আমার সাথে এমনটা কেন করলে,,,,, তুমি কি জানো না যে আমি রিধিকে ভালোবাসি,,,, এখন আমি কি করবো,,,,,রিধিকে আমি কি বলবো
(অসহায় হয়ে বলল)
আকিবের কথা শুনে আমি তো পুরাই থ,,,একি বলছে ও,,,,বাসর রাতে বউকে ভাবি বলে ডাকছে,,,,, পৃথিবীতে মনে হয় আমি সেই মেয়ে যাকে তার বর বাসর রাতে ভাবি বলে ডাকতেছে,,,, আর তাছাড়া সেটাই তো স্বাভাবিক কারণ  দুইমাস ধরে আকিব আমাকে ভাবি বলেই ডাকতেছে,,,, যেহেতু আমি ওর বড় ভাইয়ের বউ হতে চলেছিলাম তাই আমাকে আকিবের নাম ধরে ডাকার পারমিশন দিয়েছিলেন ওর মা বাবা,,,, কিন্তু
আকিবের কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে যায়,,,
আমি: কি বললে তুমি,,,, আমি ইচ্ছে করে এই বিয়েটা করেছি,,,,,তা তুমি রাজি হয়েছিলে কেন???হুম বলো,,,,
আকিব: তুমি তো জানো যে আব্বু কে আমি কতটা ভয় পাই,,,, আর তাছাড়া আমার পরিবারের সম্মান আমার হাতে আমি যদি রাজি না হতাম তাহলে আব্বুর সম্মান নষ্ট হয়ে যেত,,,
আমি: আর আমার পরিবারের সম্মান বুঝি অন্য কারো হাতে,,,,,
আকিব: না মানে,,,,,
আমি: মানে,,,,, আমি ও আমার আব্বুর কথা ফেলতে পারি নি আর তাছাড়া আমার ও বয়ফ্রেন্ড আছে,,,, আমি ও তাকে খুব ভালোবাসি,,,, খুব চাপে পড়ে তোমার ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম কিন্তু কে জানত তোমার ভাইয়া পালাবে আর তোমার সাথে আমার বিয়েটা হবে,,,,
আকিব: কি,,,,,,,


বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ০২

আকিব: কি,,,,,,,,, তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে,,, তুমি আমাকে আগে বলো নি কেন,,,, তাহলে ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়েটা তো আমি আটকে দিতে পারতাম,,,,,
আনহা: কি,,,, তুমি বিয়ে আটকাতে,,,, সেই সাহস তোমার আছে,,,,
আকিব: ক কেন থাকবে না,,,,
আনহা: তাহলে আজকে কেন আটকাতে পারলে না,,,,,,
আকিব: না,,,,, মানে,,,
আনহা: এখন মানে মানে  করছো কেন,,,, দেখ আকিব আমি খুব ভালো করেই জানি যে তুমি কেমন ছেলে,,,, গার্লফ্রেন্ড এর হাত ধরতে যার হাত কাঁপে,,,,,,বাবাকে যে যমের মতো ভয় পায়,,,,সে আবার বিয়ে আটকাবে,,,
আকিব: দেখ ভাবি তুমি আমাকে ইনসাল্ট করতেছ কিন্তু,,,,,
আনহা: উফফ আবার ভাবি বলতেছে,,,,,, আমার এখন রাগ উঠতেছে,,,,, আমার সামনে ভাবি বললে কোন সমস্যা নেই কিন্তু যদি অন্য কেউ শুনতে পায় তাহলে আর রক্ষা নেই (মনে মনে) আকিব একটু শান্ত হও,,,, এখন এসব না বলে ভাবো এখন কি করা যায়,,,,
আকিব: এখন আর কি করা যাবে সব তো শেষ হয়ে গেছে,,,, 
আকিব খাটের উপর বসে পড়ল,,,,,
আনহা: আচ্ছা একটা কথা বল তো,,,, তোমার ভাইয়া হঠাৎ পালালো কেন,,,,, বিয়ে করতে চায় না সেটা বললেই পারত,,,,
আকিব: সেটা আমি কি করে জানবো,,,,, ভাইয়া আমার লাইফ টা শেষ করে দিলো,,,,
আনহা: হুম,,,, শুধু তোমার না,,,, সাথে সাথে আমার লাইফ ও,,,, যখন শুনেছিলাম তোমার ভাইয়া পালিয়েছে তখন যে কি খুশি লাগছিল ভেবেছিলাম সোহানকে পাওয়ার একটা আশার আলো বুঝি ফুটে উঠেছে,,,, কিন্তু হয়ে গেল তার উল্টো,,,,যত নষ্টের গোড়া তোমার ভাইয়া,,,,, কিন্তু আকিব তোমার ভাইয়া পালালো কিভাবে,,,, তোমার ভাইয়ার কি আমাকে পছন্দ হয় নি,,, নাকি অন্য কাউকে লাভ করে,,, হুম,,,
আকিব: আমি কিছু জানি না ভাবী,,,,, তোমার সাথে যে ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তা ভাইয়া জানত না,,,,, আমরা ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দিব ভাইয়াকে,,,,, আর ভাইয়া দেশে ফিরেছিল গায়ে হলুদ এর দিন,,,, আর সেদিনই নিজের বিয়ের কথা জানতে পারে,,,
তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার সময় ভাইয়া রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নেমে যায়,,,, বলে তার নাকি একটা বন্ধু আসবে,,,,তাই ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে কোথায় যেন চলে গেল আর আসল না,,,,
আনহা:  হুম বুঝলাম,,,কিন্তু পরে যদি তোমার ভাইয়া ফিরে আসে তাহলে কি হবে,,,,
আকিব: মা বাবা ভাইয়াকে এই বাড়িতে কখনোই আসতে দেবে না,,,
আনহা: কেন,,,,
আকিব: তুমি আমার বাবাকে চেন না,,,, আমি ভাইয়া আপু সবচেয়ে বেশি ভয় পাই আমার বাবাকে,,,,,তার কথার একটু ও নড়চড় হয় না আর ভাইয়া তো বাবার সম্মান নষ্ট করে দিয়েছে,,,,যার কারণে ভাইয়াকে এই বাড়িতে আর আসতে দিবে না,,,,
আনহা: কি বল এসব,,,, আমি এখন কি করি
সবসময় নাটক আর গল্পে পড়ে এসেছি বড় বোন পালিয়েছে আর তার ছোটা বোনের সাথে বিয়ে হয়েছে,,,, কিন্তু সেটা যে বাস্তবে আর আমার লাইফে ঘটবে তা আমার জানা ছিল না,,,,
আমি ও খাটের একপাশে বসে পড়লাম,,,,
আকিব: হুহ,,,, বৌভাতের অনুষ্ঠানে আমার সব ফ্রেন্ডসরা আসবে ওরা যদি জানতে পারে তাহলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে,,,
আনহা: কেলেঙ্কারির আর বাকি রইলো কোথায়,,,, তুমি আমি কি কখনো ভেবেছি যে দুজন কে একসাথে এই বাসর ঘরে বসে থাকব,,,,,
আকিব কিছু বলছে না চুপ করে আছে,,,, মাথা একটু ঝুঁকে হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো আস্তে আস্তে টানছে,,,,আনহা খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে,,,, দুজনের মুড খারাপ,,,, ওরা কেউ ভাবেনি এমনটা হয়ে যাবে,,,রাত বাড়ছে ওরা এখনো ওভাবেই বসে আছে ঘুমে আনহার চোখ লেগে আসছে,,,,
বসে বসে ঝিমাচ্ছে,,,,,আকিব সেটা খেয়াল করল,,,,,
আকিব: আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ভাবি,,,, আমি ঘুমাই,,,,
আনহা: আমার ও খুব ঘুম পাচ্ছে,,,, আমিও ঘুমাবো,,,,
আকিব: তুমি ঘুমাবে,,,, কোথায়,,,
আনহা: আজব তো,,,, এই বিছানায়,,,,
আকিব: কি তুমি আমি এক বিছানায় ঘুমাবো
তুমি কি ভুলে যাচ্ছ তুমি আমার ভা,,,,
আকিব আর বলতে পারল না,,,,
আনহা: আমি তোমার কি,,,,
আকিব: ন না,,, কিছু না,,, কিন্তু তোমার সাথে এক বিছানায় কিভাবে ঘুমাবো,,,,
আনহা: এটা ছাড়া উপায় ও নেই,,,,কারণ তোমার রুমে সোফা সেট নেই,,,,, তাহলে তুমি সোফায় ঘুমাতে পারতে,,,, আচ্ছা এক কাজ কর,,,, তোমার আর আমার মাঝে বালিশ দাও তাহলে হবে,,,, আপাতত আজকের রাতটা কোনমতে কাটাই তারপর কালকে দেখা যাবে,,,,
আকিব: মাঝে বালিশ দিলে কোন কাজ হবে না,,,
আনহা: কাজ হবে না মানে,,,
আকিব: মানে এটা আমার আর ভাইয়ার রুম
ভাইয়া আর আমি একসাথে ঘুমাই,,,,, ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে আমার ঘুম আসে না,,,, এখন যদি ঘুমের মধ্যে বালিশ সরিয়ে তোমাকে,,,,,
আনহা: উফফফ ভারি মুশকিল তো,,,, (একটু ভেবে) ওকে,,,, তুমি দক্ষিণে মাথা আর উওরে পা দিয়ে ঘুমাও আর আমি উওরে মাথা আর দক্ষিণে পা দিয়ে ঘুমাবো,,,,, আর মাঝে বালিশ,,,যদি তুমি ঘুমের ঘোরে একটু নড়চড় কর তাহলে কোন সমস্যা হবে না কেমন,,,, এই মুহূর্তে এর থেকে ভালো কোন আইডিয়া আমার মাথায় আসছে না,,,, ওকে,,,
আকিব: ওকে,,,,, (মুখ গোমড়া করে)
আকিব আর আনহা ঘুমিয়ে পড়ল,,,,
সকালে ঘুম থেকে আনহা উঠে দেখে আকিব  বালিশ সরিয়ে আনহার পা দুটো জড়িয়ে ধরেছে,,,,আনহা আস্তে আস্তে আকিবের থেকে ওর পা দুটো ছাড়িয়ে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা জাম কালারের শাড়ি পড়ল,,,,, রুমে এসে খাটের উপর বসে আছে আনহা,,,, কিছু ভালো লাগছে না ওর,,,, আকিব এখনো মরার মত ঘুমাচ্ছে,,,,,আনহা খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে,,,এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো,,,,,আনহা গিয়ে দরজা খুলে দেখল রিমি এসেছে,,,,,আনহা রিমিকে ভিতরে আসতে বলল,,,,,
রিমি: আরে আকিব এখনও ঘুমাচ্ছে,,,আনহা তুমি ওকে ডাকনি কেন,,,,
আনহা: না মানে,,,,আকিব কালকে একটু দেরিতে ঘুমিয়েছে তো তাই,,,,,
রিমি: কি,,,,, (মুচকি হেসে) ওকে আমি ওকে ডাকছি,,,,, আকিব এই আকিব,,,(ধাক্কা মেরে)
রিমির ডাকে আকিব লাফ দিয়ে উঠলো,,,,
আকিব: কি হয়েছে আপু,,,, এত সকাল সকাল ডাকছো কেন,,,,,
রিমি: সকাল না,,,, নয়টা বাজতে চললো,,,ওঠ তাড়াতাড়ি,,,,
আকিব: তো কি হয়েছে আজকে তো আর ভার্সিটিতে যাব না,,, যে সকাল সকাল উঠতে হবে,,,,,
রিমি: বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি ওঠ,,,, আজকে তোদের বৌভাতের অনুষ্ঠান,,, আর হ্যা রুমে থেকে তোরা বের হবি না,,, আমি খাবার রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি,,,, খেয়ে এখানেই বসে থাকবি,,, আমি আর তানভীর (রিমির হাজবেন্ড) আসব তোদের সাথে কিছু কথা আছে,,,, ওকে,,,,
আনহা আর আকিব দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি দিল,,,,,আকিব ফ্রেশ হয়ে নেয়,,,, তারপর আনহা আর আকিব খেয়ে রিমির কথা মতো রুমে বসে থাকে,,,
কিছুক্ষণ পর রিমি আর তানভীর আসলো,,,,
আকিব: বল আপু কি বলবে,,,,
তানভীর: দেখো আকিব,,,, আর আনহাকেও বলছি,,,,, বিয়েটা তোমাদের এক্সিডেন্টলি হলেও এটা সত্য যে তোমরা এখন হাজবেন্ড ওয়াইফ,,, আর তোমাদের এটা মেনে নিতে হবে,,,, এখন তোমাদের এই বিয়েটা ও মেনে নিতে হবে,,,,
আনহা চুপ করে সব শুনছে,,,, কিন্তু আকিব তা পারল না,,,,
আকিব: ওয়াট,,,, এটা আমি পারবো না,,,,
রিমি: তুই পারবি না মানে,,,,, তোর ঘাড় পারবে,,,, বদমাইশ একটা,,,,রাকিব ভাইয়া আমাদের ঠকালো আর এখন তুই ও ঠকাবি,,,
আকিব: আমি এটা কিভাবে মেনে নিব আপু,,যাকে কি না ভাবি বানাতে চাইলাম সে হয়ে গেল আমার বউ,,, আর আমার ফ্রেন্ডসদেরকে কি বলবো,,, কালকে ওরা আসতে পারেনি,,,, কিন্তু আজকে এসে যখন জানতে পারবে তখন আমার কি হবে,,,,
রিমি: এই তুই থাম,,,তোর মতামত শুনতে আমরা আসিনি,,,, এসেছি তোকে আমাদের সিন্ধান্ত জানাতে,,,,
তানভীর: দেখ আকিব,,,, তোমার বাবা রাকিব
ভাইয়াকে ত্যাজ্য পুত্র করেছে,,,, ওকে আর এই বাড়িতে আসতে দিবে না,,,তাই এখন তুমি ওনার একমাত্র ছেলে,,, একটু বোঝার চেষ্টা কর,,,, এখন তুমি যদি তেরিবেরি কর তাহলে তোমার বাবা মায়ের কি হবে,,,,, একটু ভেবে দেখো তোমরা
আকিব তানভীরের কথা শুনে চুপ করে যায়,,
তানভীর আর রিমি চলে গেল,,,,,আকিব খাটের উপর বসে পড়ল,,,,আনহা থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,,
আনহা: এখন কি হবে আকিব,,, সব গেল রসাতলে,,,,
আকিব: জানি না,,,,, আমি কিছু জানি না,,,, আমি শুধু ভাবছি আমার বন্ধুরা সব জেনে গেলে রিধির কানে যেতে এক সেকেন্ড সময় নেবে না ওরা,,,,,
আনহা: সত্যি আমরা ফেসে গেলাম আকিব
(কান্না করে)
আকিব: এখন আর কান্না করে কি লাভ,,, ভেবেছিলাম কিছুদিন পর ডিভোর্সের কথা বলব,,,, কিন্তু এরা দেখি অন্য চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরছে,,,, আমরা কিভাবে একসাথে থাকব ভাবি,,,, তুমি বলো,,,,
আনহা: আবার ভাবি বলছে,,,, ইচ্ছে করছে একটা গাট্টা মেরে উগান্ডায় পাঠিয়ে দেই,,, এই কথা যদি অন্য কেউ শোনে তাহলে যে কি হবে,,,,(মনে মনে) এখন আর কি হবে,,,,
আকিব আর আনহা ঘন্টা খানেক ধরে বসে আছে,,,, এমন সময় রিমি আসলো দুজন মেয়েকে সাথে নিয়ে,,,,
রিমি: এই আকিব,,, তুই আমার রুমে যা,,, ওখানে তোর জন্য ড্রেস রাখা আছে পড়ে নে,,, এখন এরা আনহাকে সাজাবে,,,, অনুষ্ঠানে যেতে হবে না,,,,,
আকিব চলে যায়,,,, পার্লারের মেয়েরা আনহাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিল,,,,, তারপর রিসেপশনে নিয়ে বসিয়ে দিল,,,, কিছুক্ষণ পর তানভীর আকিব কে টানতে টানতে আনহার পাশে বসিয়ে দিল,,, আর বলল এখান থেকে যেন না ওঠে,,,,
রিমি: কি রে আকিব এমন করছিস কেন,,,,
আকিব: সেটা যদি তুমি জানতে তাহলে তো হয়ে যেত,,,,( বিড়বিড় করে)
রিমি আকিবের কথায় কান না দিয়ে ওর কাজিনদের ডাকল,,,,,
রিমি: কি রে,,,, তোরা তো পারিশ ভাবির কাছে এসে বসতে,,,,খালি তো ঘোরাঘুরি করতেছস,,,,,
__ পারব না,,,, তোমার ভাইয়ের বউ এর কাছে তুমি বস আমাদের বয়েই গেছে,,,,
ভিশন রাগি ভাব নিয়ে ওরা চলে যায়,,,রিমি ও ওদের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়,,,
রিমি: আকিব তুই এখান থেকে নড়বি না আমি আসতাছি,,,,রিমি চলে গেল,,,
আনহা আকিবের কাজিন দের ব্যবহারে ভড়কে যায়,,,, এই তো গায়ে হলুদের দিন কি সুন্দর করে কথা বলেছিল ওরা আনহার সাথে
আর এখন এরকম করছে কেন,,,,আনহা কিছু না ভেবে আকিবকে জিজ্ঞেস করে
আনহা: আচ্ছা আকিব,,,, তোমার কাজিন রা এরকম বিহেভ করল কেন,,,, এর আগে তো ভালোই আমার সাথে কথা বলত,,, কিন্তু আজকে এরকম করল কেন???
আকিব: এর আগে তুমি ভাইয়ার বউ হতে যাচ্ছিলে,,,,বাট এখন তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে,,,,তাই এরা এরকম করছে,,,
আনহা: মানে তোমার কথা বুঝলাম না,,,,
আকিব: মানে,,,,, ওরা হলুদের দিন আমাকে প্রোপোজ করেছিল,,, আর আমি বলেছিলাম ভাইয়ার বিয়ের পর ওদের এ্যানসার দিব,,, কিন্তু সেটা আর হবে না,,,,তাই ওরা সবাই রাগ করেছে,,,,
আনহা: বাবা,,,, এতগুলো মেয়ে একসাথে প্রোপোজ করেছে,,, কিন্তু সব গুলোকে কিভাবে এ্যানসার দিতে,,,,
আকিব: কিভাবে আবার,,,, বলতাম আমার গার্লফ্রেন্ড আছে,,,
আনহা: ওহহহ,,,
ওদের কথা বলার মধ্যে আকিবের বন্ধুরা চলে আসে,,,, ওদের দেখে আনহা আর আকিব শুকনো ঢোক গিললো,,,,
রিসাদ: কি রে আকিব,,,, আজকে ও ভাবির পাশে বসে আছিস,,,,, হায়রে কপাল,,,  তোর ভাইয়া কোথায়,,,, ভাইয়া রাগ করবে না তুই তোর ভাবির পাশে বসে আছিস,,,,, ভার্সিটিতে ও ভাবির পিছু ছাড়তি না আর এখনও পিছু ছাড়স নাই,,,,
সবাই অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল,,,,
লতা: তাই তো দেখছি রে,,,, আকিব রিধি যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছিস একবার,,,হি হি হি হি,,,দেখ আকিব অনেক কষ্টে রিধিকে রাজি করিয়েছি এখন যদি কিছু হয় তাহলে আমরা কিন্তু দায়ী নই,,,,
সবাই আবার হেসে উঠলো,,,,
আকিব: এ এই তোরা থামবি,,,, এখন চল এখান থেকে,,,,
আকিব ওর বন্ধুদের নিয়ে চলে গেল,,,,
আনহা চুপচাপ বসে আছে,,,,ও ভাবছে আকিবের বন্ধুরা যদি জেনে যায়,,,, 
এমন সময় আনহার বাবা ,,,ভাই,,,,ফুপি আর আনহার আত্মিয়রা আসে,,,,
আনহা গিয়ে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে,,,
চলবে,,,,,,,,,,,
সবাই একটু নিচের লেখাগুলো পড়বেন,,,,,
বর কিভাবে পালিয়েছে সেটা,,,, সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু সেটা এখন বলা যাবে না,,,,সময়ের সাথে সাথে সবাই জানতে পারবেন,,,,,, তাই সবাই ধৈর্য ধরে গল্পটা পড়বেন,,,
সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি দুই নিরামিষ কে নিয়ে গল্প লিখছি,,,, আর এই দুই নিরামিষ কে আমিষ বানিয়ে ওদের মনে ভালোবাসার রং ছাড়ানোর জন্য আমাকে হারিকেন আর বাশ নিয়ে দৌড়াতে হবে তাই সবার কাছে অনুরোধ নাইস নেক্সট না লিখে একটু গঠন মূলক কমেন্ট করুন যাতে আমি লিখতে একটু জোর পাই,,,,,


বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ০৩

আনহা ওর পরিবারের সাথে তেমন কোন কথা বলে না,,,,এটা ওর পরিবারের লোকেরা ও বুঝতে পারল,,,, কিন্তু কেউ এজন্য আনহাকে কিছু বলে না,,, কারণ এটা সত্য যে আনহার সাথে অন্যায় হয়েছে,,,,
যাই হোক অনুষ্ঠান শেষে সবাই যার যার বাড়ি চলে গেল,,,, অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত হয়ে গেছে,,,,,আনহা রুমে এসে ওর সব গয়না খুলছে,,,, তখনই আকিব রুমে আসে,,, দরজা
খোলার শব্দে আনহা পিছনে ঘুরে তাকায়,,,,,
আকিব কে বিষন্ন দেখাচ্ছে,,,,
আনহা: এনি প্রবলেম আকিব,,,,
আকিব: মাথা ভর্তি প্রবলেম আর তুমি বলছো এনি প্রবলেম,,,,
আনহা: সেটা তো বুঝতে পারছি,,,, কিন্তু এখন তোমার কি হয়েছে সেটা বলো,,, তোমার ফ্রেন্ডস রা সব কিছু জেনে গেছে,,,,
আকিব: না,,, আমি ওদের খাইয়ে বিদায় করে দিয়েছি না হলে একবার যদি বাবার সামনে পড়ত তাহলে সব জেনে যেত তাই তাড়াতাড়ি বিদায় করে দিয়েছি,,,,
আনহা: কিন্তু আকিব এভাবে আর কতদিন চলবে,,,, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে,,,, জানি না কখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করি,,,,
আকিব: আমার মাথার মধ্যে কোন বুদ্ধি আসতেছে না,,,,
আনহা: বুঝেছি,,,,, আমাকেই সব প্ল্যান করতে হবে,,,,
আকিব: কি প্ল্যান তাড়াতাড়ি বলো,,,,
আনহা গিয়ে আকিবের পাশে বসে,,,
আনহা: দেখো আকিব,,,, আমরা যদি এখন আমাদের ফ্যামিলিকে বলি যে আমরা ডিভোর্স চাই তাহলে ওনারা সেটা কখনোই হতে দেবে না,,,,তাই আমরা সবার থেকে লুকিয়ে ডিভোর্সের এ্যারেন্জ করব,,,, একবার ডিভোর্স হয়ে গেলে কেউ আর কিছু করতে পারবে না,,,, তুমি রিধিকে বিয়ে করবে আর আমি সোহান কে,,,, বুদ্ধি টা কেমন,,,,
আকিব: বাহ ভাবি,,,, তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে থাকা যায় না,,, কিন্তু আমার বাবা যে আমাকে ঘর ছাড়া করবে ভাইয়ার মতো,,,,
আনহা: কিছু হবে না,,,, তুমি তোমার বাবাকে বলবে,,, তুমি ডিভোর্স দিতে চাওনি,,, আমি জোর করেছি তোমায়,,, আর কাউকে কিছু বলতে বারন করেছি,,,, সুইসাইড করার হুমকি দিয়েছি,,,,
আকিবের এবার মাথায় হাত গেল,,, বলে কি এইসব,,,,
আকিব: এতো বুদ্ধি যে তোমার মাথায় আছে তা আগে আমি জানতাম না,,,তা তুমি খাও কি যে মাথায় এতো বুদ্ধি হইছে,,,,
আনহা: ওসব তোমার জানার দরকার নেই এখন ঘুম পাচ্ছে,,, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,,
আকিব কিছু বলার আগেই আনহা বাথরুমে চলে গেল,,, বেরিয়ে এসে দেখে আকিব একই ভাবে বসে আছে,,,,
আনহা: কি হলো আকিব তুমি ঘুমাবে না,,,
আকিব: হুম কিন্তু কোথায়,,,
আনহা: তুমি বিছানায় ঘুমাও আমি ফ্লোরে ঘুমাবো,,,
আকিব: ওয়াট পিঠে ব্যাথা করবে তো,,,,
আনহা: না,,,, আমি তোমার কাজিনদের দিয়ে মোটা তোষক আনিয়ে রেখেছি,,, ওটা বিছিয়ে ঘুমাবো,,,
আকিব: না,,,, আমি নিচে ঘুমাবো,,, তুমি উপরে ঘুমাও,,,,
আনহা কিছুতেই আকিবের সাথে পেরে উঠল না শেষে বাধ্য হয়েই বিছানায় ঘুমায় আর আকিব মাটিতে ঘুমায়,,,,
সকাল বেলা দরজার কড়া নড়তেই আনহা ধড়ফড়িয়ে ওঠে,,,,
আনহা: এই রে এখন আবার কে এলো,,,, আকিবকে যদি নিচে ঘুমাতে দেখে তাহলে তো সর্বনাশ,,,,
আনহা আকিবের কাছে গিয়ে ওকে ডাকতে লাগল,,,,
আনহা: আকিব,,,,,, আকিব,,,, ওঠ,,,, কে যেন দরজা ধাক্কা দিচ্ছে,,,,
আকিব: তো কি হয়েছে,,,, দরজা খোল যাও,,
আমাকে আর একটু ঘুমাতে দাও প্লিজ,,,,
আনহা: আরে গাধা কোথাকার,,,, মাথা মধ্যে গোবর পোড়া,,, (মনে মনে) আকিব তুমি বিছানায় গিয়ে ঘুমাও,,,, নাহলে,,,,, তোমাকে এইভাবে যদি কেউ দেখে ফেলে,,,,,
আনহার কথায় আকিব লাফ মেরে উঠল,,, ওরা দুজনে তাড়াতাড়ি ফ্লোর থেকে বিছানা গুছিয়ে লুকিয়ে ফেলল,,,,,,, তারপর আকিব খাটের উপর শুয়ে ঘুমানোর ভান করল,,, আনহা নিজেকে একটু ঠিক করে আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা খুলল,,,,, সাথে সাথে রিমি রুমের ভিতরে ঢুকল,,,,
রিমি: আনহা এতো দেরি হল কেন দরজা খুলতে,,, হুম,,,
আনহা: আ,, আসলে আপু,,,, কালকে অনেক টায়ার্ড হয়ে পড়েছিলাম তো,,, ঘুমটা একটু বেশি ধরেছে,,,তাই ঠিক মতো শুনতে পাইনি,,,,
রিমি: ও আচ্ছা,,,,আকিবকে নিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আসো,,,, 
আনহা মাথা নাড়ল,,,,রিমি চলে যায়,,, তার পর আকিব আর আনহা ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে,,,,রিমি ওদের টেবিলে বসাল খাওয়ার জন্য,,আকিব আর আনহা পাশাপাশি বসেছে
তানভীর আর রিমি পাশাপাশি বসেছে,,,, আকিবের বাবা ও আছে,,,,আকিবের মা আর
একজন কাজের মেয়ে সবাইকে খাবার দিচ্ছে
রিমি: আনহা আর আকিব তাড়াতাড়ি খেয়ে রেডি হয়ে নাও,,,, 
আকিব: কেন??
তানভীর: শালা বাবু দেখছি কিছুই জানে না
আজকে তুমি আনহাকে নিয়ে ওর বাড়িতে যাবে বুঝলে,,,,, (একটু হেসে)
আকিব: কি,,,,, আমি যাবো না,,,  ভাবি গেলে যাক,,,, আমি যাব না,,,,
আকিবের কথা শুনে সবাই অবাক,,,, আকিবের মা পাউরুটি তে জেলি মাখছিল,, আকিবের কথা শুনে হাত থেকে ছুরি টা পড়ে গেল,,,, তানভীর গ্লাস মুখে নিয়ে পানি খাচ্ছিল,,,, আকিব এর কথায় ওর মুখ থেকে পানি সব বেরিয়ে গেল,,, রিমি ডিম খাচ্ছিল,, বেচারির গলায় ডিম আটকে যায়,,, জোরে জোরে কাশতে লাগলো রিমি,,, তানভীর ওকে পানি দিল,,,,পানি খেয়ে রিমি হাঁপাতে লাগলো
আকিবের বাবা আকিবের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,,,আনহা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে,,,,ও যা ভেবেছিল তাই হয়েছে,,,,
আনহা ভাবতেছে কেন যে তখন আকিবকে সাবধান করল না,,,,
রিমি: আকিব,,,,, (রাগি ফেইসে)এটা কেমন কথা তুই আনহাকে ভাবি বলছিস কেন??
আকিব: ম মানে,,, এতো দিন তো তাই বলে এসেছি,,,, (নিচু গলায় বলল)
বাবা: আকিব,,,, তুমি এখন আর ছোট নও,,, যথেষ্ট বড় হয়েছো,,,, সব কিছু এখন তোমাকে বোঝাতে হবে কেন,,,, তোমার কি কোন জ্ঞান বুদ্ধি নেই,,,,, লেখাপড়া তো শেষ হতে চলেছে এরপরও তোমার কোন জ্ঞান হলো না,,,, কাকে কি বলতে হয় সেটা জানো না,,,দেখ তুমি বাচ্চা নও যে তোমাকে সব কিছু শেখাতে হবে,,,, আর তুমি এখন আনহাকে নিয়ে ওর বাড়িতে যাবে ব্যস,,,, আশা করি তুমি সব বুঝতে পেরেছো,,,,
আকিব মাথা নাড়ল,,,,, আকিবের বাবা চলে গেল,,,,
মা: আকিব,,,,এসব কি বলছিস তুই,,,, মাথার ঘিলু কি সব উড়ে গেছে তোর,,,,
আকিব: মা,,,, তুমিও আমাকে বকছো,,, 
রিমি: মা ঠিকই তো বলেছে,,,গাধা একটা,,, শোন আনহা এখন তোর বউ,,,, নাম ধরে ডাকবি বুঝেছিস,,,,
আকিব: কিন্তু,,,,
রিমি: আব্বুকে ডাকব,,,
আকিব: না থাক,,,, আমি চেষ্টা করবো,,,,
তানভীর: শুধু চেষ্টা করলে হবে না শালা বাবু 
তোমাকে কাজে সফল হতে হবে,, ওকে,,
আকিব: ওকে,,,,
সবার খাওয়া দাওয়া শেষ,,,,, আকিব আর আনহা রুমে যায়,,,,,, আনহা ব্যাগ গুছিয়ে নিজে নেভি ব্লু কালারের শাড়ি পরে আর আকিব ব্লাকরেড কালারের টিশার্টের সাথে ব্লাক কালারের একটা জিন্স পরে,,,,, দুজনকে একসাথে মানিয়েছে বেশ,,, পারফেক্ট কাপল তারপর নিচে এসে সবার কাছে বিদায় নিতে যায়,,,,
মা: শোন আকিব,,,,, ওখানে গিয়ে যদি উল্টাপাল্টা কিছু করিস তাহলে কিন্তু তোর বাবা তোর কি হাল যে করবে সেটা তুই ভালো করে জানিস,,,,,,
রিমি: মা তুমি দেখ এই হাদারামটা ঠিকই একটা গন্ডগোল করবে,,,,
তানভীর: এভাবে বলো না রিমি,,,, আনহা তুমি একটু আকিবকে সামলে নিও,,,, কেমন,,
আনহা: ঠিক আছে ভাইয়া,,,,
ওরা দুজন বেরিয়ে পড়ল,,,,, আকিব তো রাগে ফুঁসছে,,,,বের হওয়ার সময় অপমানিত হলো,,,,সারা রাস্তা আকিব মুখ গোমড়া করে বসে ছিল,,,,, বাড়ির মেইন ডোরে এসে আনহা কলিং বেল চাপল,,,,, একটু পরে আনহার মা দরজা খুলল সাথে ওর বাবা ও আছে,,,,,
আনহা আর আকিব ওনাদের সালাম করল,,,,
আনহা: কেমন আছো মা,,,,বাবা তুমি ভালো আছো তো,,,,
মা: আমরা সবাই ভালো আছি,,,, তুই কেমন আছিস,,,,
আনহা: ভালো,,,,,
মা: বাবা আকিব,,,, তুমি কেমন আছো??
আকিব: জ্বী ভালো আছি,,,, আপনি ভালো আছেন মাওইমা,,,
আকিবের কথায় আনহার বাবা মা থতমত খেয়ে গেল,,,, কি বলছে এসব আকিব,,, শ্বাশুড়ি কে মা বলে না ডেকে,,,,আনহা তো ফের লজ্জায় পড়ে গেল,,,,সবটা সামলাতে ও বলে উঠল,,,
আনহা: আচ্ছা মা,,,, বাইরে দাড় করিয়ে কি সব বলবে,,,, ভিতরে ঢুকতে দিবে না,,, (বিরক্ত হয়ে)
মা: হ্যা হ্যা,,,, ভিতরে আয়,,,,
দুজনে ভিতরে ঢুকলো,,,, আনহা আকিব কে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়,,,, কারণ বসার রুমে থাকলে আবার কিছু উল্টাপাল্টা বলবে,,,
রুমে গিয়ে আনহা আকিবকে ছেকে ধরে,,,
আনহা: আচ্ছা আকিব তুমি কি কিছু বুঝো না,,, আসার সময় তোমার মা কি বলেছিল মনে আছে,,,
আকিব: আশ্চর্য,,,, আমি কি করলাম,,,
আনহা: কি করলে মানে,,,, আমার মাকে এই মুহূর্তে কি বললে হুম,,,, মাওইমা বললে কেন
আকিব: এতদিন তো এটাই বলে এসেছি,,, এখন কিভাবে মা বলব,,,, একটু টাইম তো লাগবেই,,,,,
আনহা: দেখ তুমি যদি এখন থেকেই উল্টাপাল্টা কথা বলো তাহলে কিন্তু আমাদের
পরে প্রবলেম হবে,,,,
আকিব: কেন,,,,
আনহা: উফফফ আকিব তুমি কি কিছু বুঝো না,,,, আরে সবাই আমাদের সন্দেহ করবে,,,
তারপর যদি আমাদের ডিভোর্স এ বাঁধা আসে
আকিব: কিন্তু,,,,
ওদের কথার মাঝে,,,, তামিম,,,(আনহার ভাই)
আরিফা,,, (আনহার বড় বোন) চলে আসে,,,আনহা ওদের সাথে বসার রুমে যায়,,,,আকিবকে চোখের ইশারায় রুমে থাকতে বলল,,,,কারণ ওকে নিয়ে বাইরে এলেই ঝামেলা বাড়বে,,,
আনহা ওর মাকে দিয়ে আকিবের জন্য নাস্তা রুমে পাঠিয়ে দেয়,,,,সবাই মিলে বসার রুমে গল্প করছে,,,, এমন সময় আনহার ফুপি আসে,,,, সাথে ওর কাজিনরা,,,, আনহার বাড়ির আশেপাশের কিছু মেয়েরাও আসে,,, আনহা সবাইকে চেনে,,,, খুব ভালো সম্পর্ক সবার সাথে ওর,,,,তাই সবাই আকিবকে দেখতে এসেছে,,,, সবাইকে দেখে আনহা খুব খুশি হয়,,,,
__ আরে আনহা কেমন আছিস,,,,তা তোর বর কোথায়,,,, দেখতে এলাম,,,
আনহা কিছু বলার আগে আরিফা ওদের বলল আকিব রুমে আছে,,,, সাথে সাথে সবাই আনহার রুমের দিকে যায়,,,আনহা না পারছে ওদের সাথে যেতে না পারছে ওদের আটকাতে
আনহার ভয় হচ্ছে না জানি এদের আকিব কি বলে,,,,, এদিকে আনহাকে ওর ফুপি চেপে ধরে বকবক করছে যার কারণে আনহা উঠতে পারছে না,,,,,
সব মেয়ে গুলো আকিবের কাছে যায়,,,, ওরা আকিবকে দেখে অবাক,,,, আকিবের ফর্সা মুখ,,,,সিল্কি চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে,,,, গায়ের টিশার্টে অসম্ভব সুন্দর লাগছে,,,, খাটের উপর বসে ফোন টিপছে আর বিস্কুট খাচ্ছে,,,, খাওয়ার স্টাইল দেখে আরও ফিদা হয়ে যায় সবাই,,,,,হা হয়ে সবাই আকিবকে দেখছে,,,, তখনই আকিবের চোখ যায় ওদের দিকে,,,, সবাইকে না চিনলেও আনহার কাজিন দেরকে আকিব চেনে,,,, একটু আধটু ফাজলামো করেছিল,,,, ওদের দেখে আকিব বলে উঠল,,,
আকিব: আরে,,,, বিয়াইনসাবরা যে,,,,, তা ভালো আছেন বিয়াইন সাব,,,,
আকিবের কথা শুনে সবাই এক মিনিটের জন্য থমকে যায়,,,,, তারপর অট্ট হাসিতে সবাই ঘর কাঁপিয়ে দেয়,,,, ওদের হাসিতে আকিব হা হয়ে গেল,,,,,
আকিব: এই রে,,,, আবার উল্টো কিছু বলে ফেললাম,,,, ভাবি যদি জানতে পারে তাহলে আমার রক্ষা নাই,,,,, (মনে মনে)
আনহা হাসির শব্দ শুনে বুঝতে পারে যে কিছু একটা হয়েছে,,,,ও তাড়াতাড়ি রুমে আসলো
দেখল সবাই হেসে প্রায় গড়াগড়ি খাচ্ছে,,,
আনহা: কি হয়েছে,,,, এত হাসি কেন,,,
__ কি রে আনহা তোর বর কি তোকে ভাবি বলে ডাকে নাকি,,,, হুম,,,,
বলে আবার সবাই হেসে উঠল,,আনহা চমকে উঠে ওরা কিভাবে জানলো,,,
আনহা: কেন,,,,
__ না মানে,,, আমাদের বিয়াইনসাব বলছে তো তাই ভাবলাম,,,,,
আনহা যায় রেগে,,,, সবাইকে ধমকে বের করে দেয়,,,,,আকিবের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,, আকিব আনহার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলল,,,


বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ০৪

আনহা: আকিব,,,,,দিলে তো আমার প্রেস্টিজ পাংচার করে,,,,, এখন ওরা কি করবে জানো,,
বাইরে গিয়ে সবাইকে সবটা বলে দিবে,, আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না,,,,উফফফ যত জ্বালা আমার ঘাড়ে এসে পড়ল,,,,, শোন আকিব এখান থেকে বাড়িতে গিয়েই আমরা ডিভোর্সের এ্যারেন্জ করব ওকে,,,, আমার এসব আর ভালো লাগে না,,,,
আকিব: ওকে ওকে,,,,
আনহা: আর একটা কথা,,,,এবাড়ির কারো সাথে কোন কথা বলবে না,,,, ঠিক আছে,,,
আকিব: ঠিক আছে,,,, (নিচু স্বরে)
আনহা রুম থেকে বের হয়ে যায়,,,,আকিব যেন হাফ ছেড়ে বাচল,,,,
আকিব: আল্লাহ বাঁচা গেল,,,নাইলে যে রণচণ্ডীর রূপ ধারণ করেছিল মনে হচ্ছে এখনই আমার গলাটা কেটে নিবে,,,উফফফ
বিকেল বেলা আনহার কাজিনরা আনহা আর আকিবকে জোর করে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যায়
তারপর একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল,,, আকিব খাবার অর্ডার দিতে গেল,,,,
__ আনহা,,,, ভেবেছিলাম আমরা তোর দেবরের সাথে একটু লাইন মারবো,,, কিন্তু এখন তো সবকিছু লাইন ছেড়ে বেলাইনে চলে গেল,,,,রে,,,, (হেসে)
আনহা: বকর বকর করে আমার মাথা খাইস না,,, এমনিতেই মাথাটা ভারি হয়ে আছে,,, যতসব আবর্জনা,,,
__ শোন,,, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এরকম হ্যান্ডসাম ছেলেকে হাজবেন্ড হিসেবে মেনে নে
তাহলে তোরই ভালো,,,,
আনহা: ওয়াট কি বলছিস এসব,,,,
__ হুম মামা মামী তো সেটাই বলা বলি করছে
তুই উল্টা পাল্টা কিছু করবি তো ঘর ছাড়া হবি,,,,
আনহা আর কিছু বলতে পারলো না,,, কারণ তখনই আকিব চলে আসে,,,, খাওয়া দাওয়া শেষে ওরা সবাই বাড়িতে ফেরে,,,,আনহা ওর কাজিনের কথায় চিন্তায় পড়ে যায়,,, কারণ এখন যদি ও আকিবকে ডিভোর্স দেয় তাহলে তো ওকে ওর বাবা বাড়িতে আসতে দেবে না তাহলে ও যাবে কোথায়,,,, এব্যাপারে ও আকিবের সাথে কথা বলবে,,, ভাবলো আনহা
পরেরদিন আনহা আর আকিব বাড়ি ফিরে যায়,,,, রাতে আনহা চুপচাপ বসে ভাবছে,,, তখন আকিব রুমে আসলো,,,,,
আকিব: কি ব্যাপার ভাবি,,,, থুড়ি,,আ আ আ আনহা,,,,(অনেক কষ্টে বলল) কি হয়েছে,,,
আকিবের এমন কথায় আনহা হেসে উঠলো,,, ওর হাসি যেন থামছেই না,,, আকিব বোকার মত আনহার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,আনহা হাসি থামিয়ে দিল,,,
আকিব: আমি কি এমন হাসির কথা বললাম যে এতো হাসছো,,,,
আনহা: না কিছু না,,, বল কি বলবে,,,,
আকিব: না মানে তোমাকে আপসেট দেখাচ্ছে তাই বললাম কিছু হয়েছে কি,,,,
আনহা: হুম হয়েছে তো অনেক কিছু,,,,
আকিব: কি হয়েছে,,,,
আনহা: আকিব তোমার সাথে আমার ডিভোর্স হলে আমার পরিবার ও আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেবে না,,,আমাকেও ঘরছাড়া করবে,,,,
আকিব: কি,,,,
আনহা: হুম,,, এখন কি করব,,, (মুখ গোমড়া করে)
আকিব: আচ্ছা তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলো,,,,, ওর সাথে সবকিছু ঠিকঠাক করে নাও,,,, আর তাছাড়া ডিভোর্সের পর তুমি তো ওকেই বিয়ে করবে,,,,
আনহা: কথাটা মন্দ বলো নি,,,,চলো আজকেই দেখা করি ওর সাথে,,,,
আকিব: আমি কেন যাব,,,,
আনহা: তুমিই তো সোহানকে সবটা বললে ও বিশ্বাস করবে,,,,
আকিব: আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাব,,,,
আনহা: আচ্ছা সোহানকে একটা কল করি,,,
আনহা সোহানকে কল করছে কিন্তু ওর ফোন সুইচ অফ বলছে,,,,, কমপক্ষে পনের বিশ বার কল করা হয়ে গেছে ওর,,,আকিব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনহার কান্ড দেখতাছে,,,,
আকিব: ভাবি তুমি এখন থামো,,,,, হয়তো কোন কারণে ফোন বন্ধ,,, আমরা পরে দেখা করে নিব,,,ও তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না,,,
আনহা থেমে গেল,,,,
দুদিন পর শ্বশুর বাড়ির সবার অনুমতি নিয়ে আনহা আর আকিব একসাথে ভার্সিটিতে যায়
ভার্সিটিতে গিয়ে আনহা বাইক থেকে নামতেই আকিবের সব ফ্রেন্ডসরা এসে ওকে ধরে,,,,,
রিসাদ: আরে আকিব যে,,,
নয়ন: কি রে আকিব,,, এতো দিন পরে এলি,,, মনে হচ্ছে তোর ভাইয়ের না,,, বিয়েটা তোরই ছিল,,,,
আকিব চোখের ইশারায় আনহাকে চলে যেতে বলল,,,আনহা ও চলে গেল,,,
আকিব: বাজে বকিস না তো,,,, চল আড্ডা দেই,,,,,
ওরা সবাই মিলে আড্ডা দিতে চলে যায়,,,
ক্লাসে যাওয়ার পথে মারিয়া (আনহার বেস্টু)
আনহার পথ আটকায়,,,,,আনহা মারিয়া কে কে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে,,,,
আনহা : কি রে মারিয়া,,,, এতদিন কোথায় ছিলি,,,, একটা কলও করলি না,,,,
মারিয়া: সরি ইয়ার,,,, আসলে তোর বিয়েতে গিয়ে তোর সাথে দেখা করতে পারিনি,,তখনই
সবাই বলাবলি করছিল যে বর নাকি পালিয়েছে,,,, আর সেসময় বাড়ি থেকে ফোন আসলো বাবা নাকি স্ট্রোক করেছে তাই চলে এসেছিলাম,,,
আনহা: সরি রে আমার উচিৎ ছিল তোকে কল করার,,,,
মারিয়া: ওসব কথা বাদ দে,,,, শুনলাম তোর বিয়ে নাকি তোর দেবরের সাথে হয়েছে,,,
একথা বলতেই আনহা ওর মুখ চেপে ধরে,,,, 
আনহা: চুপ,,,, একথা একদম মুখে আনবি না
আনহা মারিয়াকে ক্লাস রুমের এক কর্ণারে নিয়ে গিয়ে সব বলল,,,
মারিয়া: বাহ,,, তোর গল্পটা একদম সিনেমার মতো,,, আচ্ছা চল এখন ক্লাসে যাই,,,
দুজনে ক্লাসে চলে যায়,,,, ক্লাস শেষে আনহা আকিবকে খুঁজতে চারুকলা ভবনের দিকে যায়,,,আকিবের ক্লাস আগেই শেষ হয় আর আকিব ওখানেই আনহার জন্য অপেক্ষা করে
আর আনহা ও খুব ভালো করেই জানে যে এখন আকিবকে চারুকলা ভবনেই পাওয়া যাবে কারণ,,, ওখানে বসে আকিব ছবি আঁকে 
আকিবের হাতে আঁকা ছবি খুব সুন্দর হয়,,,
বাড়িতেও ছবি আঁকার সব সরঞ্জাম আছে আকিবের,,,,, বাড়িতে বসেও আকিব অনেক ছবি আঁকে,,,,আকিব চেয়েছিল চারুকলা নিয়ে পড়তে,,,,, কিন্তু পারেনি ওর বাবার কারণে,,,, ওর বাবার জন্যই ব্যবসায় শাখা নিয়ে পড়তেছে,,,,, কারণ ওর বাবার ইচ্ছা আকিব তার ব্যবসা সামলাক,,,, যাই হোক এখন আনহা আকিবকে খুঁজতে সেখানে যাচ্ছে,,,
আনহা দূর থেকে দেখল আকিব ছবি আঁকছে ও গিয়ে আকিবের পিছনে দাঁড়িয়ে ওর ছবি আঁকা দেখছিল,,,
আকিব: তুমি এসে গেছো,,,, আমার পেইন্টিং ও শেষ,,, আর দু মিনিট লাগবে,,, (পিছনে না ঘুরে)
আকিবের কথায় আনহা বেশ অবাক হয়,,,
আনহা: না দেখে বুঝলে কিভাবে যে আমি এসেছি,,,
আকিব: তোমার ইউস করা পারফিউম টা আমি চয়েজ করেছিলাম,,,,তাই চিনতে কষ্ট হয়নি,,,,,
আনহা আর কিছু বলল না,,,, সত্যিই পারফিউম টা ও আকিবের বাড়ি থেকে দেওয়া,,,ছবি আঁকা শেষে আকিব হাত ধুয়ে নিল,,,, তখনই আকিবের বন্ধুরা এসে হাজির,,,,,
নয়ন: কি রে আকিব,,,,তোর ভাবির সাথে বাকি সবার পরিচয় করিয়ে দিবি না,,, হুম,,
আকিব: আর কি পরিচিত হবি তোরা,,,,
সামান্তা: অনেক ভাবে,,,, এখন চল তোদের জন্য অপেক্ষা করছে সবাই,,,,
আকিব আনহা দুজনেই ঘাবড়ে গেল,,,,আনহা চোখের ইশারায় আকিবকে কিছু করতে বলল আকিব ও মাথা নাড়ায়,,,,আকিব সবাইকে ধমকে,,,,আনহাকে ওখান থেকে চলে আসে
আকিবের বন্ধুরা সবাই হা হয়ে যায়,,,,
নয়ন: কি এমন বললাম যে আকিব রেগে বম হয়ে গেল,,,
রিসাদ: সেটা তো আমিও ভাবছি,,,,
সামান্তা: এমন রিয়েক্ট করলো যেন ওর ভাবি না বউ হয়,,,,হুহ,,,,এই তোরা আর ওর ভাবিকে নিয়ে কিছু বলবি না,,, বেশি শেয়ানা
নয়ন: ঠিক বলছোস তুই,,,, এখন চল তো,,,,
আকিব বাইক চালাচ্ছে,,,,আনহা পিছনে বসে আছে,,,,,
আনহা: আকিব তোমার বন্ধুরা আমাদের পিছনে এভাবে পড়ে আছে কেন,,,,
আকিব: ওরা এরকমই,,,,
আনহা: আচ্ছা রিধি কোথায়,,, অনেক দিন হলো দেখি না,,,,
আকিব: রিধি ওর কাজিন দের সাথে ট্যুরে গেছে,,,,তাই বিয়েতে ও আসতে পারে নি,,,, ভাগ্য ভালো আমার বুঝেছো,,,, না হলে আমি শেষ হয়ে যেতাম ওইদিন,,,
আনহা: রিধি আসবে কবে,,,,
আকিব: জানি না,,, শুধু এটুকু জানি ওর আসতে দেরি হবে,,, ফোনেও যোগাযোগ নেই ওর সাথে,,,, ও যেখানে গিয়েছে ওখানকার নেটওয়ার্ক সমস্যা আছে,,,,
আনহা: কিন্তু রিধি এসে যদি জানতে পারে সবকিছু তাহলে,,,,
আকিব: তার আগেই ডিভোর্স কর্নফার্ম করতে হবে,,,,
আনহা: হুম ঠিকই বলেছ,,,,,
কথা বলতে বলতে ওরা বাড়িতে চলে আসে
দুজনে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে নেয়,,,,,
রাতের বেলা,,,,,
আনহা টেবিলের উপর খাবার সাজাচ্ছে,,, এমন সময় তানভীর আর রিমি এলো,,, আকিবের মাও এলো,,,,,
আনহা: আপু আকিবকে আর বাবাকে একটু ডাকো,,,,,
রিমি: বাবাকে ডাকি,,,,বাট আকিব আসবে কি না জানি না,,,,
আনহা: কেন??
রিমি: কেন আবার,,,,ওনি তো রাজপুত্র,,,, ডিনার ওনাকে খাইয়ে দিতে হয়,,, না হলে উনি খায়না,,,,যতসব ঢংয়ের গাছগাছালি,,,
আনহা: ওহহহ এই কারণেই আমাদের বাড়িতে আকিব ডিনার করেনি,,,,সবাই অনেক জোর করেও ওকে খাওয়াতে পারেনি
রিমি: দেখলে মা তোমার ছেলের কান্ড,,,,
তানভীর: আহ রিমি থামো,,, সবসময় শালা বাবুর পিছনে লেগে থাকো,,,
মা: রিমি যা তো আকিবকে ডেকে আন আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি,,,
রিমি আকিবকে ডেকে আনে আকিবের মা আকিবকে খাইয়ে দেয়,,,,, 
এই হলো আকিবের বদ অভ্যাস এর মধ্যে একটা,,,, ছোট বেলা থেকেই ওর অভ্যাস রাতের বেলায় ও নিজের হাতে খায় না,,,, এমনিতে খেতেও ইচ্ছে করে না আকিবের,,, শুধু কফি হলেই হয়ে যায় ওর,,, কিন্তু এভাবে রাতে না খেয়ে খেয়ে একবার অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল আর ডক্টর ওকে টাইম টু টাইম খেতে বলেছিল তাই ওকে খাইয়ে দিতে হয়,,, সে যেই হোক আকিবের মা,,, বা,,,, রিমি,,,,,
সবাই খাওয়া দাওয়া শেষে যার যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো,,,,,
সকালে ঘুম থেকে উঠে আনহা বাড়ির কাজে যায়,,,, কিন্তু এতে আকিবের মা বাঁধা দেয়,,,,
মা: তোমার এসব করতে হবে না আনহা,, তুমি বরং ভার্সিটিতে যাও,,,
আনহা: না মা আজকে যাব না,,,
মা: সেকি কেন,,,
আনহা: আজকে ইম্পর্টান্ট কোন ক্লাস নেই,,, আজকে আকিব যাক,,,,
আনহার শ্বাশুড়ি কিছু বলল না,,,,
আকিব একাই ভার্সিটিতে চলে গেল,,, ও আনহার ব্যাপারটা বুঝতে পারলো,,,, যে আকিবের বন্ধুদের কারণেই আজকে আনহা আসলো না,,,,
একসপ্তাহ কেটে গেল,,,,,, 
আকিব রুমে গিয়ে দেখল আনহা বিছানা ঝাড়ছে,,,,আনহা আকিবের দিকে তাকায়
আনহা: কি ব্যাপার আকিব আজকে এতো খুশি লাগছে কেন,,,,
আকিব: তুমি শুনলে তুমি ও খুশি হবে,,,,
আনহা: তাই,,,, তাহলে বলো কি এমন সুখবর
আকিব: ডিভোর্সের এ্যারেন্জ করে ফেলেছি
আনহা: সত্যি,,,, খুশিতে আনহার চোখ দুটো চকচক করছে,,, কিন্তু মুহূর্তে ওর খুশি গায়েব হয়ে যায়,,,
আকিব: কি হলো,,,
আনহা: কিন্তু,,,সোহান তো এখনো ফোন অন করেনি,,,
আকিব: আরে ওটা নিয়ে ভেবো না,,, আগে ডিভোর্স হোক তারপর দেখা যাবে,,,, ডিভোর্সের পরও না হয় এখানে তুমি কিছুদিনের জন্য থাকলে,,, কেউ তো আর জানবে না,,,, ততদিনে তুমি সোহানকে ঠিক পেয়ে যাবে,,, আমি ও হেল্প করবো তোমাকে,,
আনহা: ঠিক আছে,,,, খুশি হয়ে,,,,তা কবে হবে ডিভোর্স,,,,
আকিব: আরে সবে তো শুরু,,,, কালকে আমরা দুজনে যাব উকিলের সাথে কথা বলতে,,,, আমাদের দুজনের মতামত নিয়ে তারপর উকিল পেপার রেডি করবে,,, কালকে
বিকালে রেডি হয়ে থেকো,,,,,
আনহা: ওকে,,,,,
পরের দিন বিকালে আনহা আর আকিব উকিলের কাছে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ল
বিশাল একটা ভবনের গেইটের সামনে এসে দুজনে নামলো,,,,আস্তে আস্তে গেইট পেরিয়ে দুজনে ভিতরে যেতে লাগলো,,,,,,,


বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ০৫

দুজনে আস্তে আস্তে যেতে লাগল,,,,
আনহা: আকিব এই এতো বড় ভবন ওই উকিলের একার,,,
আকিব: আরে না,,,,এটা এখানকার সব উকিলদের অফিস,,,,, এই ভবনের একেকটা কক্ষ একেকজন উকিলের,,,, যার যেমন ইচ্ছে সে তেমন উকিলের কাছে যায়,,,, এখন কথা না বাড়িয়ে ভিতরে চল,,,,
ওরা ভিতরে যাওয়ার আগেই একটা লোক পিছনে থেকে আকিবকে ডাকলো,,,,,
__ আকিব,,,,,,
আকিব আর আনহা দুজনেই পিছনে তাকায়
আনহা লোকটাকে চেনে না,,, কিন্তু আকিব চেনে,,,, লোকটাকে দেখে আকিব ভয়ে চুপসে যায়,,,, আমতা আমতা করতে থাকলো,,,,, আকিব ঘামতে শুরু করে,,,আনহা আকিবের ভয়ের কারণটা বুঝতে পারলো না,,,, লোকটা ওদের কাছে এলো,,,,
__ আকিব,,,, তুমি,,,,,তা এখানে কেন এসেছ কোন সমস্যা,,,,, তুমি তো আকিবের ওয়াইফ তাই না,,, (আনহার দিকে তাকিয়ে)
আনহা: জ্বী,,,
__ তা এখানে কেন এসেছ???
আনহা কিছু না ভেবেই বলতে গেলো
আনহা: আমরা এখানে ডি,,,,,
সাথে সাথে আকিব ওকে থামিয়ে দিল,,,,
আকিব: আংকেল,,,, আমি আর আ আনহা এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম,,,,, ভাবলাম আপনার সাথে দেখা করে যাই,,,,, আসলে বিয়ের দিন আপনাকে ঠিকমতো সময় দিতে পারিনি,,, তাই ভাবলাম একবার আপনার সাথে দেখা করে যাই,,,,
__ না না,,,এসব কি বলছো,,,, আসলে ওইদিন যা ঘটে গেল,,,, এজন্য আমি তোমার সাথে দেখা করিনি,,, সত্যি রাকিব এটা একদম ভালো কাজ করনি,,,,,,
আনহা চুপ করে আছে,,,, ওদের দুজনের কথা গুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গিলছে,,,, এছাড়া ওর কোন কাজ নেই,,,,আনহার কাছে আকিব আর ওই লোকটার কথা গুলো কেমন পেঁচিয়ে যাচ্ছে,,,,ও কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,
হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন একটা মেয়ে এসে অচেনা লোকটাকে আব্বু বলে জড়িয়ে ধরল,,,,,মেয়েটাকে দেখে আকিব ও আনহা ভূত দেখার মতো চেয়ে আছে,,,,, মেয়েটা এতোক্ষণ ওদের দেখেনি,,,,যখন ওদের দেখল তখনই বলে উঠল,,,,
__ আকিব তুমি এখানে,,,,(মেয়েটা,,,,)
আকিব: রি রিধি তুমি,,,, (শুকনো ঢোক গিলে)
ওদিকে আনহা তো ভয়ে জ্ঞান হারানোর দশা এসেছিল ডিভোর্স কর্ণফার্ম করতে আর হয়ে গেল কি,,,, আজকে মনে হয় হাটে হাঁড়ি ভেঙে যাবে,,,,,😬😬😬
রিধি: আরে ভাবি তুমিও আছো,,,, কি ব্যাপার আকিব,,, তুমি তোমার ভাবিকে নিয়ে এখানে এসেছো কেন???
__  রিধি মামনি তোমার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে,,,,,আনহা আকিবের ভাবি নয়,,,
রিধি: কি বলছো আব্বু,,,,এতো আকিবের ভাবি,,,কদিন আগেই তো রাকিব ভাইয়ার সাথে ভাবির বিয়ে হলো,,,, ট্যুরে যাওয়ার কারণে আমি আসতে পারিনি,,,,,সেটা তো আকিবকে বলেছিলাম,,,,,
__ আসলে রিধি মামনি,,,, তুমি তো ট্যুরে ছিলে আর ওখানকার নেটওয়ার্ক ও ভালো ছিল না বলে তোমাকে কিছুই জানাতে পারিনি,,,, আসলে বিয়ের দিন রাকিব পালিয়ে গিয়েছিল আর বাড়ির সম্মান বাঁচাতে আকিবের সাথেই আনহার বিয়ে হয়,,,,,,
আনহা নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলল,,,, ওনার শেষ কথাগুলো শুনে,,,,, রিধি ওর বাবার কথা শুনে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে,, একবার আকিবের মুখের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আনহার,,,, চোখে পানি জমে এসেছে রিধির,,,, চোখের পানি ওর বাবা দেখার আগেই রিধি ওখান থেকে দৌড়ে চলে আসে,,,,আকিব ওকে আটকাতে চেয়েও পারলো না,,,,,কারণ রিধির বাবা সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,,,,,
__ কি হলো রিধি ওভাবে চলে গেল কেন,,,,
আকিব আর আনহা কিছু না বলে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে,,,,, বাইকে করে দুজনে বাড়িতে আসছে,,,,আকিবের মুখটা পুরো লাল হয়ে গেছে,,,, চোখের পানি পড়তে চেয়েও পড়ছে না,,,, আকিব হঠাৎ বাইক থামিয়ে দিল
হঠাৎ ব্রেক করায় আনহা কিছু টা ঝুকে পড়ে আকিবের উপর,,,,আনহা বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায়,,,,
আনহা: কি হলো আকিব থামলে কেন,,,??
আকিব: জানি না,,, কি হয়েছে,,,
আকিব ভালো করে তাকিয়ে দেখল বাইকের তেল শেষ হয়ে গেছে,,,,,
আকিব: ওহ শেট,,, (বাইকে লাথি মেরে,,,) এখনই তেল শেষ হতে হলো,,,, কথায় আছে না বিপদ যখন আসে তখন চারিদিক দিয়েই আসে,,,,,
আনহা: আচ্ছা আকিব আমি কিন্তু কিছু বুঝতে পারছি না,,,, ওইলোকটা কে,,,, আর রিধি,,,,
আকিব: ওই লোকটা হলো এই শহরের নামকরা উকিল,,,, আমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ড আর রিধির বাবা,,,,
আনহা: ওহহহ এবার বুঝলাম,,,, কিন্তু তুমি জানতে না উনি ওখানে থাকবেন,,,,ইশশ সব শেষ হয়ে গেল,,,,রিধি তো সবকিছু জেনে গেল এখন কি হবে,,,,,
আকিব: কি আর হবে,,,,ওর বাবা উকিল তো,,
এখন আমার নামে কেস করবে,,,, কেন যে মরতে ওখানে গিয়েছিলাম,,,, কেন আমার একবারের জন্যও আংকেলের কথা মনে আসেনি,,,,,
আনহা: কপাল,,, বুঝেছো,,,,
আকিব: হুম,,, আমার কপালে তো এখন ঘন্টা বাজছে,,,,রিধি একটু পরে মরহুমের খাতায় আমার নাম লিখবে,,,, আল্লাহ মরার আগে তোমার নাম নিয়ে যেন মরতে পারি,,,,,
আনহা: কিসব আজেবাজে বকছো আকিব,,,
এখন ভাবো কিভাবে রিধিকে বোঝানো যায়
আকিব: ও কিছুতেই বুঝবে না,,,, ঘাড়ত্যাড়া প্রকৃতির মেয়ে ও,,,,
আনহা: আমি ওকে বোঝাব,,,,
আকিব: তুমি বোঝাবে রিধিকে,,,,, কিভাবে
আনহা: ওভাবেই,,,, আমি বললে রিধি বুঝবে
আর রিধি যেহেতু একজন উকিলের মেয়ে ওই পারবে আমাদের ডিভোর্স করাতে,,,, বুঝলে
আকিব: ওয়াও কথাটা তো খারাপ না,,, আচ্ছা এতো বুদ্ধি তোমার মাথায় আসে কিভাবে বলবে একটু,,,,
আনহা: সেটা তোমার না জানলেও চলবে,,, নিজের ঘটে তো কোন বুদ্ধি নেই,,,,, খালি তো পারো উল্টাপাল্টা কাজ করতে,,,, এখন যাও যেখান থেকে পারো তেল নিয়ে আসো বাড়িতে যেতে হবে,,, সন্ধ্যা হয়ে আসতেছে,,,,,
রাস্তার একটু পাশেই তেলের দোকান ছিলো,,,,
আকিব বাইকে তেল ভরে আবার রওনা দিলো বাড়ির দিকে,,,,,
রাতের বেলা আকিবকে জোর করেও কেউ খাওয়াতে পারলো না,,,কারণ ওর মাথায় চিন্তা ঘুরঘুর করছে,,,,সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে শুধু আকিব আর আনহা বাদে,,,,আকিব রুমে পায়চারি করছে,,, আর আনহা বসে বসে দেখছে,,,,
আনহা: এভাবে পায়চারি না করে রিধিকে কল করে সব বলো,,,
আকিব: হাজার বার কল করেছি,,, আমার ফোন ও তুলছে না,,,,
আনহা: আমার ফোন দিয়ে কল দাও,,,,
আনহা ওর ফোন এগিয়ে দিল,,,, আকিব রিধিকে কল করে,,,,
রিধি: হ্যালো,,, (ভেজা ভেজা কন্ঠে)
আকিব: রিধি,,, আমি আকিব,,, প্লিজ ফোনটা কেটে দিও না,,,, তোমার সাথে আমার কথা আছে,,,,
রিধি: কি কথা বলবে তুমি হা,,,, কি বলার আছে তোমার,,,,, আমার জীবনটা তো ছারখার করে দিয়েছো আর কি বলবে এখন,,
একবার ও আমার কথা ভাবলে না তুমি আকিব,,,যে আমার কি হবে তোমাকে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে,,,, যাই হোক বিয়ে যখন করেই ফেলেছো এখন আর কি করার আমাকে আর কখনো ফোন করবে না তুমি,,,,
আকিব: তুমি আমাকে ভুল বুঝছো,,, রিধি,,,
আনহা আকিবের হাত থেকে ফোন নিয়ে ও কথা বলল,,,
আনহা: হ্যালো রিধি,,,, প্লিজ তুমি আকিবকে ভুল বুঝো না,,, আমার কথাটা যদি তুমি একবার শোনো তাহলে তোমার কাছে সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে,,,,
রিধি: কি কথা,,,বলো,,,
আনহা: এভাবে বলা যাবে না,,, কালকে আমাদের সাথে দেখা করো তখনই সব বলবো তবে শুধু এটুকুই বলতে পারি,,, আমি সোহান নামের একটা ছেলেকে ভালোবাসি আর আকিবকে ডিভোর্স দিতে চাই,,,,,
রিধি: কি,,,,বলছো এসব তুমি,,,
আনহা: হুম ঠিকই বলছি,,এখন রাখি কালকে সবটা বলবো ওকে,,,,
আনহা ফোন রেখে দিল,,,,
আনহা: নাও আকিব তোমার প্রবলেম সলভ
আকিব খুশিতে আনহাকে জড়িয়ে ধরে,,,,
আকিব: থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ,,,,,
আহনা তো পুরাই হ্যাঙ্গ হয়ে যায়,,, আকিব আনহাকে ছেড়ে দিল,,,,
আকিব: সরি,,,, খুশির ঠেলায় কিছু দিশা পাচ্ছিলাম না,,,
আনহা: হয়েছে,,,, এখন তোমার জন্য খাবার আনছি চুপ করে খেয়ে নিবে ওকে,,,,
আকিব: এতোক্ষণ কষ্টের ঠেলায় খিদে পায়নি আর এখন খুশির ঠেলায় খিদে উড়ে গেছে,,,
আনহা: না খেলে আমি কিন্তু কালকে রিধির সাথে দেখা করবো না,,,
আকিব: না না,,, আমি খাবো,,,
আনহা: গুড বয়,,,,
আনহা খাবার এনে আকিবকে খাইয়ে দিল আকিব ও গুড বয়ের মতো খেয়ে নিল,,,, তারপর ওরা ঘুমিয়ে পড়লো,,,,
পরের দিন সকালে আনহার চিৎকারে আকিব এর ঘুম ভেঙ্গে যায়,,,,
আকিব: কি হয়েছে সকাল বেলা এতো চেঁচামেচি করতেছো কেন,,,,
আনহা: আরে আকিব,,,সোহান মেসেজ করেছে,,,,
আকিব: ওয়াট,,,,, সত্যি,,,
আনহা: হুম,,,, আমি তো ওর ফোন সুইচ অফ দেখে অনেকগুলো মেসেজ করে দিয়েছি তাই এখন ও রিপ্লাই দিয়েছে,,,,
আকিব: বেশ তো সোহানকেও আজকে আমাদের সাথে দেখা করতে বলো,,,,,
আনহা: আচ্ছা ঠিক আছে,,,, আনহা গান গাইতে গাইতে চলে গেল,,,,মন যে করে উড়ু উড়ু,,,,,🎶🎶🎶
আকিব আনহার কান্ড দেখে হেসে দিল,,,
বিকেল বেলা আনহা আকিব রিধি আর সোহান একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করলো,,,,,
সোহানকে দেখে আনহা ওর দিকে প্রশ্নের তীর ছুড়ে মারে,,,,
আনহা: আচ্ছা সোহান এতদিন তুমি কোথায় ছিলে,,,, আর তোমার ফোন সুইচ অফ করে রেখেছিলে কেন,,,,
সোহান: আসলে আনহা তোমার বিয়েটা আমি মেনে নিতে পারেনি,,,,তাই এতো দিন ঘরবন্দি করে রেখেছিলাম নিজেকে তাই ফোনটাও বন্ধ ছিল,,,,
আনহা: ওহহ আচ্ছা,,,,,
রিধি: আচ্ছা আমাকে এখানে কেন ডেকেছো আকিব,,,, তাড়াতাড়ি বলো আমার কাজ আছে,,,, আমাকে যেতে হবে,,,
আকিব কিছু বলতে গেলে আনহা ওকে থামিয়ে দিল,,,
আনহা: আজকে আমি বলবো আকিব তুমি থামো,,,,,, আসলে রিধি,, আর সোহানকেও বলছি,,,, তোমরা তো জানো আমাদের বিয়েটা ঠিক কিভাবে হয়েছে,,,, কিন্তু আমরা কেউ এই বিয়েটা মানি না,,,,তাই কালকে ডিভোর্সের ব্যাপারে উকিলের সাথে দেখা করতে যাই,,, কিন্তু ওখানে রিধির বাবার সাথে দেখা হয়ে সব নষ্ট হয়ে যায়,,,, কিন্তু বিশ্বাস কর আমি শুধু সোহানকেই ভালোবাসি,,,, আর আকিব ও তোমাকে ভালোবাসে,,,,রিধি,,, প্লিজ তুমি আকিবকে ভুল বুঝো না,,,,
রিধি: বুঝলাম,,,, কিন্তু তোমরা ডিভোর্স একটু তাড়াতাড়ি দাও,,, আমি আর এসব মেনে নিতে পারছি না
আনহা: এ ব্যাপারে তোমাকে আমাদের হেল্প করতে হবে,,,,
রিধি: কিভাবে,,,
আনহা: তোমার বাবা তো উকিল,,, তাই তুমি এসব সম্পর্কে ভালো জানো,,, যেভাবেই হোক তুমি ডিভোর্স পেপার রেডি করো,,, কিন্তু তোমার বাবা যেন না জানে তাহলে উনি সব কিছু আকিবের বাবাকে বলে দিবে,,,,
রিধি: ওহ এই ব্যাপার,,, এটা করতে আমার জাস্ট দুদিন সময় লাগবে,,,,
আনহা: থ্যাঙ্কস রিধি,,,, একবার ডিভোর্স হয়ে গেলে আমি আর সোহান বিয়ে করব তুমি আর আকিব বিয়ে করবে,,,
সোহান: কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না আনহা,,,
আনহা: কেন,,,,,
সোহান: দেখো আনহা তুমি আমাকে ভুল বুঝো না,,, আমার ভালো কোন চাকরি নেই,,,, ছোট একটা জব পেয়েছি সেটা দিয়ে,,, বাবা মাকে নিয়ে কোনরকম চলে যায়,,,, তাই বলছি আর দু এক মাস পর বিয়ে টা করলে কেমন হয়,,, ততদিনে আমি একটা ভালো জব খুঁজে নেব,,,,
আনহার মুখটা গোমড়া করে ফেলল,,,
আকিব: ডোন্ট ওয়ারি,,, (আনহার দিকে তাকিয়ে) আমি সোহানকে ভালো চাকরি পেতে হেল্প করব,,,, কিন্তু তাতেও একমাসের মতো টাইম লাগবে,,,,
সোহান: নো প্রবলেম,,,, (খুশি হয়ে) তাহলে একমাস পর না হয় ডিভোর্স আর বিয়ে একসাথে হবে,,, কি বলো সবাই,,,
সবাই সম্মতি দিলো,,, রিধি মন থেকে নারাজ থাকলেও মুখে সম্মতি দিয়ে দিলো,,,,
আকিব: আচ্ছা আমারা তাহলে আসি,,, হুম,,,
সরি রিধি,,, তোমার বাড়ি তো উল্টো দিকে তাই তোমাকে একাই যেতে হবে,,,, দেরি হলে বাবা আবার বকবে,,,,
সোহান: আরে আমি তো ওখান দিয়েই যাবো আমি বরং ওনাকে বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আসি কেমন,,,,
আকিব: ওকে,,, এন্ড থ্যাঙ্কস,,,
রিধি সোহানের বাইকে করে চলে গেল আর আকিব আনহা বাড়িতে চলে আসে,,,,
বাড়িতে এসে আনহা ভাবছে,,,,আরও একমাস আকিবের সাথে একই রুমে থাকতে হবে,,,, কিভাবে যে থাকবে,,,যাক গে একমাস ই তো দেখতে দেখতে পার হয়ে যাবে,,


বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ০৬

আজকের সকালটা খুব স্নিগ্ধ মনে হচ্ছে আনহার কাছে,,,,সব চিন্তা কালকে দূর হয়ে গেছে ওর,,, এতো দিনে ওর স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে,,,,সোহানকে ফিরে পাওয়ার আশার আলো নতুন করে দেখা দিয়েছে,,, আকিব ও এখন একটু শান্তি পাবে,,,,, এতদিন আনহা নিজেকে দোষী মনে করছে,,, শুধু মাত্র ওর কারণেই আজ আকিবের এই অবস্থা,,, নিজের ভালোবাসাকে আনহার কারণেই হারাতে বসেছিল আকিব,,, কিন্তু রিধিকে আকিবের জীবনে ফিরিয়ে দিতে পেরে আনহা অনেক খুশি আজকে,,,, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিল আনহা,,,,, আজকে আবার ভার্সিটিতে যাবে,,,,আকিবকেও টেনে তুলল,,,
তারপর দুজনে খেয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়,,,
ভার্সিটিতে গিয়ে দুজনে যে যার ক্লাসে চলে গেল,,,,,ক্লাস শেষে আনহা আকিবকে ফুসকা খেতে নিয়ে গেল,,,আকিব যেতে চাইছিল না কিন্তু আনহা নাছোড়বান্দা,,,, টেনে নিয়ে যায় আকিবকে,,,,, রাস্তার পাশের দোকানে ফুসকার অর্ডার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওরা,,,
আকিব: আচ্ছা,,,,ভা,,,ধ্যাত,,,আনহা,,,, এখানে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়ার মানে কি আমরা কোন রেস্টুরেন্টে যেতে পারি,,,
আনহা: এখানে দাঁড়িয়ে খাওয়া আর রেস্টুরেন্টে খাওয়া এক নয়,,, আকাশ পাতাল তফাৎ,,,বুঝেছো,,,,ওহ তোমাকে তো বোঝালেও বুঝবে না,,
আকিব: কি আমি বুঝি না,,,
আনহা: হুম,,,, এখন কথা বলো না তো,,, এই তো ফুচকা এসে গেছে,,,,, 
আনহা এক প্লেট আকিবের হাতে ধরিয়ে দিল
আকিব: আমি এসব অখাদ্য খাবো না,,,
আনহা: না খেলে প্লেটটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো,,,, আমার প্লেট শেষ করে তারপর ওই প্লেট ও খাবো,,,
আকিব: আয় হায়,,,,,, কার পাল্লায় পড়লাম রে বাবা,,,, (গালে হাত দিয়ে)
আকিব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনহার ফুচকা খাওয়া দেখতেছে,,, টক পানিতে ফুচকা ডুবিয়ে মুখে দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে আবার চোখ খুলে,,,, খাওয়ার স্টাইল টা ও অবাক করা,,,, গালে হালকা টোল পড়ে যখন আনহা ফুচকা খায়,,, আকিব অবাক দৃষ্টিতে আনহার ফুচকা খাওয়া দেখতেছে,, ফুচকা খেতে খেতে আনহার চোখ দিয়ে পানি পড়তাছে,,,,ঝালে,,,তবুও আনহা খেয়েই যাচ্ছে,,, এটাই হলো ফুচকা খাওয়ার মজা,,,,,
আকিব: এসব তুমি খাচ্ছো কিভাবে,,,
আনহা: তুমি একটা খেয়ে দেখো মজা পাবা,,,
আকিব: নো,,,,
আনহা: আরে একটা খাও,,,
বলতে বলতে আনহা জোর করে একটা ফুচকা আকিবের গালে পুরে দিল,,, একটা ফুচকা খেয়েই আকিবের অবস্থা নাজেহাল,, ঝালে ওর ঠোট দুটো লাল হয়ে গেছে,,,আনহা আকিবের অবস্থা দেখে হাসতে লাগল,,,
আকিব: আমি ঝালে মরছি আর তুমি হাসতেছো,,,, হুম,,, প্লিজ কিছু একটা করো আমি মরে গেলাম ঝালে,,,,,
আনহা আশেপাশে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেল না,,,, হঠাৎ ওর চোখ গেল রাস্তার পাশে একটা লোক মিস্টি পান বিক্রি করতেছে,,, ওখান থেকে একটা পান এনে আকিবের মুখে দেয়,,,
আকিব মিস্টি পেয়ে চিবোতে থাকে,,,,,
আনহা: ঝাল কমেছে,,,,
আকিব মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল,,, ইশারায় আনহাকে জিজ্ঞেস করল কি খাওয়ালো,,,
আনহা: মিস্টি পান,,,,,
আকিব: ওয়াট,,,,,, ওয়াক থু,,,, 
মুখের ভিতরের থাকা পান ফেলে দিল,,,,
আনহি: আহা,,,, ফেললে কেন,,,,
আকিব: আমার ঝাল লেগেছিল তাই বলে তুমি পান খাওয়াবে আমাকে,,,, তুমি কি জানো না যে পান খেলে জীব্বাহ,,, ঠোঁট লাল হয়ে যায়,,,, ধুর,,,,
আকিব ফোন বের করে ক্যমেরা অন করে নিজের ঠোঁট দেখতাছে,,,,
আকিব: দেখেছো,,,, লাল হয়ে গেল আমার ঠোঁট,,,,
আনহা: ঝালে লাল হয়েছে,,,, আর এটুকু পান খেলে,,,,ঠোট লাল হয়ে যায় না,,,,, বুঝলে,,,,
(হেসে,,,,) এখন চলো বাড়িতে যাই,,,,
!
!
!
!
!
!
!
!
!
রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিধি রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে,,,,,মাঝ রাস্তায় এসেই ওর গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে,,,, এখন বাড়ি ফিরতে রিকশার অপেক্ষা করছে,,,,,এমন সময় একটা বাইক এসে ওর সামনে দাঁড়ায়,,,,
রিধি: আপনি,,,,,,
সোহান: না মানে,,,, আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন,,,,, ভাবলাম হয়তো কোন বিপদে পড়েছেন,,,,তাই একটু দেখতে এলাম,,,,
রিধি: আসলে গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে,,, তাই রিকশার খোঁজ করছি,,,
সোহান: যদি কিছু মনে না করেন আপনাকে আমি বাড়িতে ছেড়ে দেই,,,,
রিধি: নো প্রবলেম,,,,,
রিধি সোহানের বাইকে উঠে বসে,,,,সোহান বাইক স্টার্ট দিলো,,,,,
রিধি: আচ্ছা,,,ভাবি,,,,ওপস সরি,,,, আনহার সাথে আপনার কতদিনের রিলেশন,,,,
সোহান: একবছরের,,, আর আপনার,,,,
রিধি: পাঁচ মাসের,,,
সোহান: কি,,,,, আর ইউ সিরিয়াসলি,,,,, পাঁচ মাসের প্রেম,,,,,হা হা হা,,,
রিধি: হাসছেন কেন,,,,
সোহান: না এমনি,,,,তো কিভাবে শুরু হলো প্রেমটা,,,,
রিধি: ওর ফ্রেন্ডসরা বলেছিল,,,, আকিব তো আমাকে দেখলেই দৌড়ে পালাতো,,,,, এই আকিবটা না,,,, একটা নিরামিষ,,,, এখন পর্যন্ত আমার হাতটা পর্যন্ত ধরেনি,,, বলে কি না,,,, তোমার হাত ধরলে আমার ভুমিকম্প উঠে যায় ভয়ে,,,,,একদম আনরোমান্টিক,,,,
সোহান: এসব কি বলছেন,,,,,প্রেমের মধ্যে হাগ কিস এসব না করলে প্রেম তো জমেই না আর আমিই বা এসব কেন বলছি,,,, আমি তো আনহার সাথে এসব কিছুই করতে পারিনি,,, আনহা আজ পর্যন্ত ওকে ছুঁতে দেয়নি,,,,বলেছে বিয়ের আগে এসব কিছু করবে না,,, কি আর করা,,,ওর কথাই মেনে নিতে হয়েছে,,,,
রিধি: ওহহ,,, তাহলে আমরা দুজনেই দুই নিরামিষ এর পাল্লায় পড়লাম কি বলেন,,,
ওরা দুজনে হেসে দিল,,,,
সোহান: বাই দা ওয়ে,,,,আমি কিন্তু রোমান্টিক আছি,,,,আনহাকে কতবার বলেছি একটা কিস করি,,, কিন্তু ও কিছুতেই দিল না
রিধি: আমি একটু কম রোমান্টিক,,,, তবে আপনি যদি শিখিয়ে দেন তাহলে একটু ভালো হয়,,,,
রিধি শব্দ করে হেসে উঠলো সোহান ও ওর কথায় হেসে দিল,,,,কথা বলতে বলতে রিধির বাড়ির সামনে এসে সোহান বাইক থামায়,,,,
রিধি বাইক থেকে নেমে গেল,,,, চলে যাওয়া ধরলে সোহানের ডাকে পিছনে তাকায়,,,
সোহান: Excuse me,,, আপনার ফোন নাম্বার টা দিলে ভালো হতো,,,,,,
রিধি: কেন???
সোহান: আপনি কি যেন শিখতে চান ওটাই শেখাবো,,,,( মুচকি হেসে)তবে আপনি যদি চান তাহলে দরকার নেই নাম্বার দেওয়ার,,,,,
রিধি: নো প্রবলেম,,,, আমি নাম্বার দিচ্ছি,,,
রিধি সোহানকে ওর ফোন নাম্বার দিলো,,,,
তারপর বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল,,,,সোহান ও চলে গেল,,,,,
রাতে আনহা বিছানায় বসে বসে পড়তাছে,,, সরি পড়তাছে বললে ভুল হবে,,,,বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে,,,,মুখটা গোমড়া করে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,বইয়ের আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,
আনহা: ধ্যাত তেরিকি,,,,খুশির ঠেলায় ক্লাসে আজকে মন দিতে পারলাম না,,,তাই কিছুই বুঝতে পারছি না,,,, আর ওই বুড়োটার ক্লাসে আমি কেন কেউই মন দিতে পারবে না,,,,, কি পড়ায় উনি নিজেই তো শুনতে পায়না আবার স্টুডেন্টসরা শুনবে কেমনে,,,, 
আকিব এতোক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিধির সাথে ফোনে কথা বলছিলো,,,,, ফোন কেটে রুমে ঢুকতে ঢুকতে আনহার কথাগুলো শুনতে পায়,,,,
আকিব: ওয়াট হ্যাপেন্ড,,,,স্যারের নামে এসব কি বলতেছো,,,,পড়া না বুঝলে স্যারকে প্রশ্ন করলেই তো স্যার ক্লিয়ার করে সব বুঝিয়ে দেয়,,,,
আনহা:  এক গাদা ছাই দেয়,,,,, বুড়ো কোথাকার,,,,ক্লাসে এতো আস্তে কথা বলে যে উনার কথা উনার কান পর্যন্ত পৌঁছায় কিনা সন্দেহ হয়,,,, উনার ক্লাসে সবাই ইয়ার ফোন কানে গুজে বসে থাকে,,,,
আনহার কথায় আকিব হেসে উঠলো,,,,
আকিব: তা,,,, আজকে তুমি কি ইয়ার ফোন কানে গুজে বসেছিলে নাকি,,,,, (পকেটে দুইহাত দিয়ে,,,)
আনহা: আরে না,,,, আজকে তো আমি খুব খুশি সেই কারণে ক্লাসে আর মন দিতে পারিনি তাই এখন কিছুই বুঝতে পারছি না,,,
আকিব: ওকে আমি হেল্প করছি,,,,
আকিব আনহার পাশে বসে ওর কাছে থেকে বইটা নিয়ে আনহাকে পড়া বোঝাতে লাগলো
প্রায় আধ ঘন্টা ধরে আকিব আনহাকে বুঝিয়ে যাচ্ছে,,,, আনহাও হা করে পড়া গিলছে,,,আরও কিছুক্ষণ পর আকিবের বোঝানো শেষ হয়,,,,,আকিব বই থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে আনহা ঘুমিয়ে গেছে,,,
আকিব এতে অবাক হয়ে যায়,,,
আকিব: আরে এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে ঘুমিয়ে গেল,,,,পড়ায় ফাঁকি দেয়ার ফন্দি খালি,,,
আকিব অত্যান্ত ভালো স্টুডেন্ট,,,,ওর কাছে আনহা কিছুই না,,,, পড়াশোনা করতে আনহার একটু ও ভালো লাগে না,,, পড়াশোনা না করলে বাড়ি থেকে আরও তাড়াতাড়ি ওকে বিয়ে দিয়ে দিত,,, সেই ভয়েই আনহা এতোদিন পড়াশোনা চালিয়ে এসেছে,,
আর এখন বিয়ে হয়েছে,,,, কিন্তু তাও ওকে পড়াশোনা করতে হচ্ছে,,,,,,না হলে যে শ্বশুরবাড়িতে ওর মান থাকবে না,,,,
যাই হোক,,,,এখন আনহা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে,,,,, হাতে একটা খাতা আর কলম আঁকড়ে ধরে আছে,,,, মুখের উপর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে,,,,আকিব আনহার হাত থেকে খাতা কলম নিয়ে আনহার সব বই পত্র গুছিয়ে রাখে,,,, হঠাৎ করেই আকিবের চোখ যায় আনহার দিকে,,, চুলগুলো এলোমেলো ভাবে মুখের উপর এসে পড়েছে,,,
চুলের ফাঁকে আনহার মুখটা পুরোপুরি ভাবে বোঝা যাচ্ছে না,,,, নিজের অজান্তেই আকিবের হাত আনহার দিকে এগিয়ে যায়,,,
মুখের উপর থেকে চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিল,,,,একধ্যানে তাকিয়ে আছে,,, আনহার দিকে,,,,, আনহার চোখের পাপড়ি গুলো ঘনো,,,,চোখ বন্ধ করার ফলে সেগুলোর সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে,,,,, ঠোঁট জোড়া গোলাপি বর্ণের,,,,ঘুমন্ত মুখটায় আনহাকে অপ্সরির মতো লাগছে,,,,, হঠাৎ কোন একটা কারণে আকিবের ধ্যান ভাঙল,,,
আকিব: ওয়াট এসব কি করছি আমি,,,, হঠাৎ করে আমার সাথে এমন কেন হলো,,,, আর আমি কেনই বা আনহার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছি,,,,,আমি তো রিধিকে ভালোবাসি,,,,,
আকিব আর কিছু না ভেবে,,,, আনহার মাথার নিচে বালিশ দিয়ে গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো,,,,,
সকালে ঘুম থেকে উঠে আনহা একটু অবাক হয়,,,, কারণ আকিব ছবি আঁকছে,,,,,এই সাত সকালে ছবি আঁকার কোন মানেই হয় না,,,,
আনহা গিয়ে আকিবের পাশে দাঁড়ায়,,,,,
আনহা: আকিব,,,,এটা কি করছো তুমি,,, সকালে মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয় নাস্তা করে আর তুমি ছবি আঁকছো,,,, কাহিনী টা কি একটু বলবে,,,,, আর এটা কিসের ছবি আকছো,,,,
আকিব: আসলে আজকে রিধির জন্মদিন তাই ওর ছবি এঁকে রিধিকে সারপ্রাইজ দিবো
কালকে আমার একটু ও মনে ছিল না,,, সকালে উঠে তারিখ দেখে মনে পড়ে গেল তাই এখন ছবি আঁকছি,,,,
আনহা: ওকে তাহলে আজকে বিকালে রিধি আমাদের ট্রিট দিবে তাইতো,,,,
আকিব: না আমি দিবো,,,,
আনহা: ওহ,,,, সেটাই তো,,,, গার্লফ্রেন্ড বলে কথা,,,,,কদিন বাদে,,,, আবার বিয়ে ভালো ভালো,,,, তাহলে আমরা বিকালে মিট করছি রাইট,,,
আকিব: হুম,,,,
আনহা: তাহলে আজকে আর ভার্সিটিতে যাবো না,,,,
আকিব: বার্থডের সাথে ভার্সিটিতে না যাওয়ার কারণ কি হলো,,,,
আনহা: ও তুমি বুঝবে না,,,,
আনহা ওখান থেকে কেটে পড়ে,,,,ওয়াসরুমে গিয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠে যাক ভার্সিটিতে না যাওয়ার একটা বাহানা পেয়ে গেল,,,,
বিকালে আনহা আর আকিব রিধি আসার আগেই রেস্টুরেন্টে চলে যায়,,,, তারপর কেক আর ক্যান্ডেল সাজায়,,,, আকিব রিধির জন্য এক তোড়া লাল গোলাপ এনেছে,,,, সবকিছু ঠিকঠাক করে আকিব রিধিকে কল করে,,, রিধি বলে ও নাকি এসে গেছে,,,,,আকিব ও ফোন কেটে দিল,,,,,
রিধিকে আসতে দেখে আকিব আর আনহা অবাক হয়ে যায়,,,, কারণ রিধি একা না ওর সাথে সোহান ও আছে,,,,,দুজনে হেসে হসে কথা বলতে বলতে ওদের কাছে আসে,,,
আনহার কাছে একটা খটকা লাগে,,, রিধি কেন সোহানের সাথে,,,,ছোট খাট একটা গিট্টু লেগে যায় আনহার মাথায়,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ০৭

আনহা: সোহান তুমি,,,,
রিধি: আসলে আমি ওনাকে ইনভাইট করেছি
তোমরা আসবে আর উনি না এলে তো খারাপ দেখায়,,,,যতো হোক আনহার বয়ফ্রেন্ড বলে কথা,,,,,,
রিধি গিয়ে আকিবের পাশে দাঁড়ায়,,,, আকিবের একপাশে রিধি আর ওপর পাশে আনহা দাঁড়ানো,,,,রিধির আরেক পাশে সোহান দাঁড়ানো,,,,আনহা ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে দেয়,,,,রিধিও কেক কাটল,,,,সবাই ওকে উইশ করে,,,রিধি কেক কেটে প্রথমে আকিব ও আনহাকে খাইয়ে দিল,,,, তারপর সোহানকে খাইয়ে দেয়,,, সাথে সাথে সোনহানের গালে ও কেক মাখিয়ে দিল,,,, তারপর ওরা দুজনে হেসে দিল,,,,এই ঘটনা আকিব আর আনহা মেনে নিতে পারলো না,,,,, কিন্তু মুখে কিছু বলল না,,,,আকিব রিধিকে ওর আঁকা ছবি আর গোলাপের তোড়া দিলো,,,,
রিধি: আকিব,,,,, তোমাকে কতবার বলেছি আমি এসব ছবি আঁকা পছন্দ করি না,,, তারপরও তুমি,,,,
আকিব: রিধি তুমি খুলে দেখই না,,, তোমার ছবি এঁকেছি আমি,,,,
আনহা: হুম রিধি,,,, খুব সুন্দর হয়েছে ছবিটা আর আকিব সত্যি খুব ভালো ছবি আঁকে,,,,
রিধি: তবুও,,, আমার সত্যি এসব কাঠ পেন্সিলের আকা ছবি ভালো লাগে না,,, আর তুমি লাল গোলাপ এনেছো কেন,,,
আকিব: কেন আবার,,,, তোমাকে দেওয়ার জন্য,,,,
রিধি: তুমি তো জানো আকিব লাল গোলাপ আমার পছন্দ না,,,, আমি হলুদ গোলাপ পছন্দ করি,,,,,
রিধির কথায় আকিবের মুখটা কালো হয়ে গেল,,,আনহার আকিবের জন্য খুব খারাপ লাগছে এতো কষ্ট করে ছেলেটা সবকিছু এ্যারেন্জ করলো আর রিধি কি না ওকে অপমান করে দিলো,,,আনহার ইচ্ছে করছে রিধিকে হলুদ গোলাপ ভর্তা করে ওকে খাইয়ে দিতে,,,এতই যখন হলুদ গোলাপের শখ নিজে কিনে আনলেই পারতো যতসব,,,আনহা তারপরও আকিবকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বলল,,,
আনহা: আকিব ছাড়ো এসব,,,, বিয়ের পর না হয় রিধিকে তুমি অনেক হলুদ গোলাপ দিও দেখবে রিধি খুব খুশি হবে,,,
রিধি: তুমি জানো না,,,আনহা আকিব কিরকম,,, কিছুই বুঝে না,,,,আল্লাহ কবে যে বুঝবে তুমি আকিব,,,,,
রিধির কথায় আকিব প্রচন্ড রেগে যায়,,, ও রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়,,,,আনহা ও ওর পিছু পিছু যায়,,,আকিব গিয়ে বাইকে বসে
আনহা: দেখ আকিব রাগ করো না প্লিজ চলো
আকিব: তুমি কি যাবে,,, না আমি একাই চলে যাবো,,,,,
আনহা: এমা না আমি যাবো,,, এক মিনিট দাঁড়াও আমার ফোনটা ফেলে এসেছি,,,
আকিব: ওকে তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো,,,
আনহা ভেতরে যাওয়ার সময় রিধি আর সোহান ও বেরিয়ে আসে,,,রিধি গিয়ে আকিবের সাথে কথা বলতে থাকে আর আনহা নিজের ফোন আনতে যায়,,, টেবিলের উপর আনহার ফোন ছিল,,,, ফোনটা হাতে নিয়ে আসার সময় পায়ে কিছুর সাথে ধাক্কা খায়,,,আনহা তাকিয়ে দেখে গোলাপের তোড়াটা মাটিতে পড়ে আছে,,,,
আনহা: রিধি তোড়াটা এভাবে মাটিতে ফেলে দিলো,,,, আর ওর হাতেও তো আকিবের আঁকা ছবিটা দেখলাম না,,,,
আনহা কিছু একটা ভেবে ময়লার ঝুড়িতে গিয়ে উঁকি দিলো,,,, ও যা সন্দেহ করেছিল ঠিক তাই,,,, ময়লার ঝুড়িতে আকিবের আঁকা ছবিটা রিধি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে,,,, এটা দেখে রিধির উপর এক প্রকার ক্ষোভ জন্মায় আনহার,,,,রিধি তো আকিবকে ভালোবাসে তাহলে ওর সাথে এরকম ব্যবহার করছে কেন এরকম একটা মেয়ের সাথে আকিব সারাজীবন কাটাবেই বা কিভাবে,,,,,,আনহা এসব কিছু ভাবতে ভাবতে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে,,, এসে দেখে রিধি আকিবের মন গলিয়ে ফেলেছে,,,দুজনে সুন্দর ভাবে কথা বলতেছে,,,এটাই হচ্ছে রিধির ক্ষমতা,,, যে কাউকে মিনিটের মধ্যেই পটিয়ে ফেলতে পারে আর সেখানে আকিব তো কিছুই না,,,
আনহা: এর জন্যই রিমি আপু আকিবকে গাধা বলে,,, মানুষ কে খুব সহজেই বিশ্বাস করে নেয়,,,,,,,, একটু কি কিছু বোঝে না ও,,
একা একা কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতে আনহা আকিবের কাছে যায়,,,,
আনহা: আকিব বাড়ি যাবে না,,, সন্ধ্যা তো হয়ে এলো,,,,
রিধি: ওকে আকিব তুমি যাও আমি সোহানের
সাথে চলে যাবো,,,,সোহান চলো যাওয়া যাক
আনহা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আকিবের বাইকে বসে,,, আজকে বাড়িতে গিয়ে সোহানকে কল করে আচ্ছা করে রামধোলাই দিবে আনহা,,,
রাতে আনহা সোহানকে কল করে,,, কিন্তু সোহানের ফোন ওয়েটিং এতে আনহা আরও রেগে যায়,,,,যেভাবেই হোক আজকে সোহানকে ও ছাড়বে না,,,,,প্রায় ঘন্টাখানেক পর আনহা সোহানকে ফোনে পেল,,,ফোন ধরেই আনহা সোহানকে বকতে শুরু করল,,,,,
আনহা: কি ব্যাপার সোহান ফোন ওয়েটিং কেন,,,কোন মেয়ের সাথে কথা বলেছো,,, ওহ বুঝেছি এখন আর আমাকে ভালো লাগে না তাই না,,,,যাও যাও অন্য রমনির সাথে কথা বলো গিয়ে হুহ,,,,তা রমনিটা কে রিধি বুঝি,,, খুব তো গলাগলি ধরাধরি দুজনের মধ্যে,,, ভালো খুব ভালো,,,
সোহান: আরে আনহা তুমি আমাকে ভুল বুঝছো,,,
আনহা: ভুল তো এতো দিন বুঝেছি,,,, এখন তোমার আসল চেহারা দেখতে পেলাম,,, আর কোন মেয়ে পেলে না শেষমেশ রিধি,,, ছিঃ ছিঃ ছিঃ তোমার লজ্জা করছে না,,,
সোহান: আনহা এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে,,,,রিধি আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে,,,যা আকিব দিতে পারেনি,,, বুঝেছো,,, তোমাকে আমি যাতে বিয়ে করতে পারি সেজন্য রিধি একটা চাকরি আমাকে পাইয়ে দিয়েছে,,, আর তুমি রিধির নামে উল্টাপাল্টা কথা বলছো,,,,
আনহা: কি,,, তুমি চাকরি পেয়েছো,,,, (খুশি হয়ে) সরি,,, আসলে আমি ভেবেছিলাম তুমি
সোহান: তুমি তো সবসময় উল্টো কথা ভাবো
আনহা: সরি বললাম তো,,, আচ্ছা বাই,,, আকিবকে সব বলতে হবে তো,,,,
আনহা ফোন কেটে দিল,,, দৌড়ে গেল আকিবের কাছে,,,
আকিব: এতো খুশি কেন,,,
আনহা: সোহান চাকরি পেয়েছে,,,, এখন রিধিকে বলো ও যেন তাড়াতাড়ি ডিভোর্স পেপার রেডি করে,,,,
বলেই আনহা চলে গেল,,,,আনহার কথা শুনে আকিব খুশি হতে পারলো না,,,,, কিন্তু কেন আকিব খুশি হতে পারছে না সেটার কারণ ও খুঁজে পেল না,,,, একথা ‌শুনে আকিবের তো খুশি হওয়ার কথা,,, কিন্তু আকিব নিজেকে কিছুতেই খুশি করতে পারছে না,,,, ভাবনার অতল সাগরে ডুবে যায় ও,,,, ভাবতে ভাবতে রুমে চলে আসল,,,,, রুমে আসতেই আনহা ওর সামনে দাঁড়ায়,,,,
আনহা: আকিব,,, তোমার রিধিকে কিছু বলতে হবে না,,,,, আমি ওকে ফোন করে সব বলে দিয়েছি,,,,,
আকিব: ঠিক আছে,,,,
আনহা: আর একটা কথা,,,, আজকে তুমি বিছানায় ঘুমাও,,, আমি নিচে ঘুমাবো,,, কোন কথা নয়,,, ওকে,,,,
আকিব বিছানায় শুয়ে পড়ল,,, আর আনহা মাটিতে,,,,আনহা শোয়ার সাথে সাথে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল,,,, কিন্তু আকিব সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারেনি,,, কিন্তু কেন তার কারণ আকিবের অজানা,,,,ভোর ভোর আকিবের একটু ঘুম আসে,,, তখনই আকিব একটু ঘুমায়,,,,,
সকালে কে যেন আকিবের রুমের দরজা নক করছে,,, কিন্তু আনহা মরার মতো ঘুমিয়ে যাচ্ছে,,,শব্দে আকিবের ঘুম ভেঙ্গে যায়,,,
ঘুমের ঘোরে আকিব আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে দরজা খুলল,,,, ওদিকে আনহা যে নিচে ঘুমিয়ে আছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই,,,,, দরজা খুলে আকিব ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে দেখে রিমিকে,,,
আকিব: আপু তুমি এতো সকালে,,, তুমি তো শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলে,,,,
রিমি: হুম,,, একটু আগে আসলাম,,,বাবা মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল,,,তাই তানভীর কে নিয়ে চলে এলাম,,,,,
বলতে বলতে রিমি রুমে ঢুকলো,,,, আনহাকে মাটিতে ঘুমাতে দেখে রিমি একটা চিৎকার দিলো,,,,,
রিমি: আকিব,,,,,, বলতে বলতেই আকিবের গালে কষে একটা চড় মারলো,,,,
চড় খেয়ে আকিব হাবলার মতো গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,,রিমির চিৎকারে আনহা ধড়ফড়িয়ে ওঠে,,,,রিমি জোরে জোরে ওর মাকে ডাকতে লাগলো,,,,আকিব আর আনহা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়,,,,আকিবের মায়ের সাথে তানভীর ও চলে আসে,,,,
মা: কি হয়েছে রিমি এভাবে চেঁচামেচি করছিস কেন,,,,
রিমি সবকিছু বলে দেয়,,, সাথে সাথে আকিবের মা এসে আকিবের অন্য গালে চড় বসিয়ে দিল,,,,আকিব এবার বোকা বনে গেলো,,,,
রিমি: আকিব,,,, তোর সাহস তো কম নয় তুই আনহাকে মাটিতে ঘুমাতে দেস,,,,, না জানি এই রুমের মধ্যে কতরকম টর্চার করিস ওর ওপর,,,
রিমির কথা শুনে আকিব ও আনহা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়,,,,আকিব ভাবছে ও কেন আনহার উপর টর্চার করবে,,, শুধু তো মাটিতেই ঘুমিয়েছে আনহা তাও আবার আজকেই,,,বাকিদিন তো আকিবই মাটিতে ঘুমিয়েছে,,,,
মা: ছিঃ আকিব আমার ভাবতেও ঘৃণা করছে তুই এসব করিস,,,,তোর বাবা যদি এসব জানতে পারে তাহলে কি হবে জানিস,,,,
রিমি: মা তুমি বাবাকে বলেই দাও তাহলেই ওর উচিৎ শিক্ষা হবে,,,,
তানভীর: না রিমি,,,এসব বাবাকে বললে ঝামেলা বাড়বে,,,,
রিমি: ঝামেলা আর কমলো কোথায়,,, সব ঝামেলার ঘরদুয়ার হলো এই আকিব,,, তাই ওর একটা শিক্ষা হওয়া উচিত,,,,তলে তলে কতোকিছুই করে ফেলেছে,,,,এক মিনিট,, আকিব তলে তলে ডিভোর্সের ব্যবস্থা করিসনি তো,,,,,
একথা শুনে আনহা আর আকিব আরো ভয় পেয়ে যায়,,,,, দুজনের গলা শুকিয়ে গেল,,,, সামান্য কারণেই আকিবের গালে দুইটা থাপ্পড় পড়েছে আর ডিভোর্সের কথা জানতে পারলে ওকে ক্রস ফায়ার করে দিবে,,,,
রিমি: আকিবকে দিয়ে বিশ্বাস নেই,,, ও এটা করতেই পারে,,, সত্যি করে বল আকিব,,,
আকিব কিছু বলছে না,,, গালে হাত দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,,,,
তানভীর: রিমি মা এখান থেকে চলুন,,, ওদের একটা ব্যবস্থা আমি করতাছি,,,, আর রিমি কাজের লোক দিয়ে মাটিতে করা বিছানা তুলে নিয়ে যাও,,,,রিমি তাই করলো,,,
সবাই চলে গেলে আনহা ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো,,,,আকিব দুগালে হাত দিয়ে এখনও দাড়িয়ে আছে,,,, এখন কি হবে ওরা কেউ জানে না,,,,আকিবের বোকামোর কারণেই আজকে ধরা পড়তে হলো,,,,আনহা একটু রেগে গিয়ে উঠে দাঁড়ালো,,,
আনহা: আকিব এটা তুমি কি করলে হুম,,, দরজা খোলার আগে আমাকে ডাকতে পারতে সব শেষ হয়ে গেল,,,, এবার সবাই যদি জানতে পারে যে আমরা ডিভোর্সের কথা ভাবছি তাহলে,,,, কি হবে,,,
আকিব: 😞😞😞😞 আমি বুঝতে পারিনি যে আপু আসবে,,,,
আনহা: আচ্ছা তুমি বোঝটা কি শুনি,,, সবসময় একটা না একটা গন্ডগোল পাকিয়েই ছাড়ো,,,,রিধি ঠিকই বলেছে,,,
আকিব চুপ করে আছে বলার মতো কোন ভাষা ওর কাছে নেই,,,কিই বা বলবে,,,, ওর কারণেই তো আজ সবকিছু ধরা পড়ে গেল,,,
আকিব আর আনহাকে আজ ভার্সিটিতে যেতে দিল না রিমি আর তানভীর,,,,,
বিকেলে রিমি আর তানভীর আকিবের রুমে যায়,,,,
রিমি: আকিব,,,,এই নে,,,, (একটা খাম এগিয়ে দিয়ে,,,,)
আকিব: কি আছে এতে,,,,
রিমি: প্লেনের টিকিট,,,,
আকিব: তো এটা দিয়ে আমি কি করবো,,,
রিমি: কি করবি মানে,,,গাধা,,,বুঝোস না,,
তানভীর: রিমি আবার শুরু করলে,,,আকিব আমি বলছি,,,,এতে প্লেনের টিকিট আছে,,,
তুমি আর আনহা প্লেনে করে চট্টগ্রাম যাবে ওখান থেকে সোজা নীলাচল,,,, মানে সাজেক ভ্যালি,,,,বুঝেছো,,,,
আকিব+আনহা: কি,,,😱😱😱😱
রিমি: আগ্যে হ্যা,,, আর ওখানে গিয়ে যদি দুজনে উল্টাপাল্টা কিছু করেছো তাহলে কিন্তু
তানভীর: আরে ওরা কিছু করতে পারবে না
রিমি: মানে,,,
তানভীর: ওরা যেই হোটেলে থাকবে সেই হোটেলের ম্যানেজার আমার খুব ভালো বন্ধু,,, আমি ওকে বলে দিয়েছি ওদের উপর যেন কড়া নজর রাখে,,,,,
রিমি: গুড,,,,এই জন্যই তোমাকে আমি এতো ভালোবাসি,,,,লাভ ইউ,,,,
তানভীর: লাভ ইউ টু,,,,,
রিমি: দেখছিস কিভাবে ভালোবাসতে হয়,,,
(আকিবের দিকে তাকিয়ে) কালকে বিকেলে ফ্লাইট সবকিছু গুছিয়ে নে,,,, তোরা,,,,,
রিমি আর তানভীর চলে যায়,,,,আকিব আর আনহা বাড়িতে থাকলে দুজনের প্রতি কোন ফিলিংস হবে না এটা তানভীর বুঝতে পারে তাই ওদের দুজনকে বেড়াতে পাঠানোর প্ল্যান করেছে,,, আর দেশের বাইরে পাঠালে ওদের ওপর নজর রাখতে পারবে না তাই সাজেক ভ্যালি ও সিলেক্ট করেছে,,,,
আর কোন উপায় না পেয়ে দুজনে সবকিছু গুছিয়ে নেয় সাজেক ভ্যালি যাওয়ার জন্য,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ০৮

পরেরদিন সকালে,,,,
আনহা আর আকিব আবার আগের মতো উল্টো ভাবে বিছানায় শুয়ে আছে,,,, এবারও আকিব আনহার পা জড়িয়ে ধরেছে ঘুমের ঘোরে,,,,
আনহা: দেখো কান্ড,,, আবার আমার পা ধরে ঘুমিয়েছে,,,,, ইচ্ছে করছে লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দেই,,,, শালা উগান্ডার বাসিন্দা,,,
সব কিছু রসাতলে পাঠিয়ে এখন মরার মত ঘুমাচ্ছে,,,,,,মুখটা তো মাসআল্লাহ,,,, ইনোসেন্ট মার্কা,,,,এতো বড় হয়েছে বুদ্ধি এখনো হাঁটুর উপর ওঠেনি,,,,
আনহা এক ঝটকায় আকিবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল
ফ্রেশ হয়ে এসেই সোহানকে কল করে সব বলে দেয়,,,, আর রিধিকেও সব জানায়,,,,
ওদিকে আকিব তো ঘুমিয়েই যাচ্ছে আনহা গিয়ে আকিবকে ধাক্কা মারে,,,,
আনহা: আকিব,,,, তোমার ঘুম ভাঙবে না নাকি,,, ঘুমাতে ঘুমাতে কি শহীদ হয়ে যাবে,,,
ঘুমানোর জন্য তো তোমাকে নোবেল দেওয়া উচিত,,,,
অনেক ডাকাডাকির পর আকিব মোচড়াতে মোচড়াতে ওঠে,,,,
আকিব:উফফহ দিলে তো আমার স্বপ্নের চৌদ্দটা বাজিয়ে,,, কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম,,,,
আনহা: তা স্বপ্নে কি দেখেছিলে,,,সাজেক ভ্যালি,,, তুমি আর রিধি হানিমুনে গিয়েছিলে
আকিব: এমা তা না,,,
আনহা: আমার স্বপ্নের ব্যান্ড বাজিয়ে এখন স্বপ্ন দেখা হচ্ছে,,,, শোন আমি সোহান আর রিধিকে সবটা বলেছি,,,,রিধি প্ল্যান করেছে ওরাও আমাদের সাথে যাবে,,,, তবে আজকে যেতে পারবে না আজকে নাকি সব টিকিট বুক হয়ে গেছে,,, ওদের যেতে কাল রাত হবে
আকিব: ওরা গেলে যদি আবার কোন ঝামেলা হয়,,,,
আনহা: তোমার মতো বড় ঝামেলা ঘাড়ে থাকতে ওসব ছোট ঝামেলায় কিছু হবে না বুঝলে,,, এখন যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও,,,,,
আনহা রুমে থেকে বের হয়ে যায়,,,, আনহার কথায় আকিব কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে ওয়াশরুমে চলে গেল,,,,
দুপুরে খেয়েই আকিব আর আনহা রেডি হয়ে নিচে আসে,,,সবার থেকে বিদায় নিতে,,,
রিমি: শোন আকিব এবার একটু ভালো হ না হলে তোর কপালে দুঃখ আছে,,,,,,
তানভীর: আকিব,,,, পৌঁছে একটা কল করে দিও,,,, আর ওখানে তোমাদের কোন সমস্যা হবে না,,, কটেজের ম্যানেজার আমার খুব ভালো বন্ধু,,, আমি ওকে সব বুঝিয়ে দিয়েছি,,,
বাবা মায়ের সাথে কথা বলে আকিব আর আনহা বেরিয়ে পড়ল,,,, 
তানভীর: রোমান্টিক জায়গায় গিয়ে এবার যদি শালা বাবু একটু রোমান্টিক হয়,,,,
রিমি: ছাই হবে,,,,, দেখবে ওই গাধা মানুষ হতে পারবে না,,,,,,
তানভীর: আমার তা মনে হচ্ছে না,,,,
রিমি: হুম,,,, এখন চলো রুমে,,,,,
চট্টগ্রামে ফ্লাইট থেকে নেমে দুজনে বাসে উঠে,,,রাতের রাস্তাটা কেমন থমথমে,,,, বাইরের কিছুই ভালোভাবে দেখা যায় না,,,, অনেক ক্ষণ পর পর রাস্তার পাশে দু একটা দোকান দেখা যায়,,,, আনহা জানালা দিয়ে মাথা বের করে দিয়ে বাতাস অনুভব করছে,,,,,বাতাস আনহার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে,,,, আনহা মাথার কাটা খুলে চুলগুলো ছেড়ে দিল,,,,,আকিব বাসের সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে আনহার খোলা চুল ঘুমন্ত আকিবের মুখের উপর পড়ছে,,, আর আকিব সেই কারণে বারবার নড়ে উঠছে,,,, আনহা সেটা খেয়াল করলো,,,, হাত দিয়ে চুলগুলো একপাশে টেনে আনলো,,,,
সাজেক ভ্যালি পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যায় ওদের,,,,সাজেকের বেস্ট রিসোর্টে ওদের জন্য আগে থেকেই তানভীর রুম বুক করে রেখেছে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে ওরা রুমে যায়,,, দুজনেই খুব টায়ার্ড,,,, ফ্রেশ হয়ে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ল,,,,
আজকে আকিব ও আনহা একসাথে ঘুমিয়েছে,,,, তবে উল্টোভাবে না,,,,😁😁😁 অনেক ক্লান্ত থাকার কারণে ওরা এভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে,,,,,
সকালে মিষ্টি আলো চোখের উপর পড়তেই আনহার ঘুম ভাঙ্গে,,,,আনহা আস্তে আস্তে গিয়ে বারান্দার কাচের দরজাটা খুলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো,,,,,চোখ মেলে চারিদিকে তাকিয়ে আনহা পুরো অবাক অসম্ভব সুন্দর লাগছে চারিদিক,,,,, কটেজটাও অসম্ভব সুন্দর রাতের বেলায় আনহা এসব কিছুই খেয়াল করনি খুব ক্লান্ত ছিল তাই আশেপাশে ভালো করে তাকায়নি,,,,হালকা কুয়াশার মাঝে আকাশে সূর্য উঁকি দিয়েছে,,,,
পাখির কিচিরমিচির শব্দ হচ্ছে,,,,ভোরের এই সময়টাতেই পাখির ডাক স্পষ্ট শোনা যায়,,,,, কারণ এসময় সব কিছু স্তব্ধ থাকে,,,সবাই ঘুমিয়ে থাকার কারণে কোলাহল থাকে না,,, তাই এই সময় টাতে পাখির কিচিরমিচির ডাক গুলো শোনা যায়,,,,আনহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছে,,,, সাজেকের সূর্যদ্বয়ের কোন তুলনা হয় না,,,
আনহার হঠাৎ করেই আকিবের কথা মনে পড়ল,,,,,,, দৌড়ে রুমে গিয়ে আকিবকে টেনে তুলল,,,,, টানতে টানতে আকিবকে বারান্দায় নিয়ে গেল,,,,,,
আকিব: উফফফ সাত সকালে হলো টাকি,,, একটু ঘুমাতে দেবে না,,,,(হাত দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে) এমনিতেই অনেক রাতে ঘুমিয়েছি,,,,,
আনহা: আরে বুদ্ধু,,,, তোমাকে সূর্যদ্বয় দেখাতে নিয়ে এলাম,,,,,দেখো কি সুন্দর দেখা যাচ্ছে,,,,,,
আকিব তাকিয়ে দেখে,,,,, সত্যি অসম্ভব সুন্দর লাগছে,,,,
আকিব: ওয়াও,,,,, Mind blowing,,,,,,
আনহা: একটা থ্যাঙ্কস তো দিতে পারো আমাকে,,,, তোমাকে এখানে আনার জন্য,,,,,
আকিব: ওহহ থ্যাঙ্কস,,,,,
আনহা: না,,, আমার তোমাকে থ্যাঙ্কস জানানো উচিত,,,,
আকিব: কেন,,,,
আনহা: কারণ তোমার একটা ভুলের জন্য আমি এখানে আসতে পারলাম,,,, কখনোই সাজেক আসিনি,,,,,, তবে মানুষের মুখে বর্ণনা শুনেছি,,,, তার থেকে আরও সুন্দর এই সাজেক,,,,তাই তোমাকে থ্যাঙ্কস জানাতে চাই,,,,,থ্যাঙ্ক ইউ সোনামনি কাউয়া,,,, (আকিবের গাল দুই হাত দিয়ে হালকা টেনে)
আকিব: 😳😳😳😳 সোনামনি কাউয়া,,,,
এই ডায়লগ কই থেকে শিখছো,,,,
আনহা: আমার ফুপির থেকে,,,,ফুপি সবসময় এই ডায়লগ দেয় সেই থেকেই শিখেছি,,,,
আকিব: যেমন তোমার ফুপি তেমন তুমি,,,, বাপরে আমাকে পাগল করে ছাড়বে,,,,
আকিবের কথায় আনহা হেসে দিল,,,, তারপর দুজনে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিল,,,,
একটু পরেই ম্যানেজার আসলো,,,, কারণ তানভীর সব দায়িত্ব ওর বন্ধুর হাতে দিয়েছে পালন তো করতেই হবে,,,,
ম্যানেজার: আপনি তো আকিব তানভীরের শালা,,,তাই তো,,,
আকিব: জ্বি হ্যা,,,,,
ম্যানেজার: আপনাদের খাবার আমার লোকেরা রুমেই দিয়ে যাবে টাইম মতো,,, আর আপনাদের জন্য একা গাড়ি আছে,,,ওটা দিয়ে পুরো সাজেক ভ্যালি আপনারা ঘুরতে পারবেন,,,, আমার কাজ এটুকুই,,,, এখন আসি,,,কোন সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন,,,,,
ম্যানেজার চলে যায়,,,,আনহা আর আকিব সকালের নাস্তা সেরে একটু রেস্ট নেয়,,, তার পর পুরো কটেজ ঘুরে দেখে,,,,
দুপুরে,,,, ওরা জুমের ভাত পাহাড়ি মুরগির মাংস আর দুই তিন রকমের ভর্তা দিয়ে লাঞ্চ করে,,,,,রেস্ট নিয়ে বিকেলে ঘুরতে বের হয়,,, কারণ রিমি ওদের ফোন করে ওদের ঘোরাঘুরির ছবি পাঠাতে বলেছে,,, না পাঠালে না জানি এখানে এসেই আকিবের গাল দুটো আবার লাল নীল সবুজ করে দেয়,,,,
বিকেলে আনহা আর আকিব হ্যালিপ্যাড ঘুরতে যায়,,,, ওখান থেকে স্টোন গার্ডেন যায়,,,,আনহা তো ভিশন খুশি,,,এতো সুন্দর জায়গাউফফফ খুশিটা যেন আটকাতেই পারছে না,,,আনহা আকিবের হাতে নিজের ফোন ধরিয়ে দেয়,,,আর ছবি তুলতে বলল,,,,আকিব বাধ্য হয়ে ছবি তুলছে,,,,আনহা একটা নীল রঙের শাড়ি ম্যাচিং ব্লাউজ,,, হাতে নীল চুড়ি,,,,,, ম্যাচিং জুয়েলারি,,,, মাথায় খোপা করেছে,,,,,
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে আনহার সৌন্দর্য ও মিলে গেছে,,,,আনহা একেক পোজ নিয়ে ছবি তুলছে,,, আর আকিব সেটা মানতে বাধ্য হচ্ছে,,,,
আনহা: দেখি আকিব কি ছবি তুলেছ,,,,, ছবি যদি ভালো না হয় তাহলে তোমার খবর আছে
বলতে বলতে আকিবের হাত থেকে আনহা ফোনটা নিয়ে ছবি দেখতে থাকে,,,,
আকিব: এখন এই ছবি গুলো আপুকে পাঠাও
আনহা: কিন্তু তোমার ছবি তো নেই এতে তোমার আপু আরও রেগে যাবে,,, আসো দু'জনে কয়েকটা সেলফি নেই,,,,
আকিব: ওকে,,,,
কয়েকটা সেলফির নাম করে,,,, অন্তত একশটার বেশি ছবি তুলে ফেলেছে আনহা,,, আকিব বেচারা হয়রান হয়ে গেছে,,, মেয়েরা যে এতো ছবি তুলতে পারে সেটা ওর জানা ছিলোনা,,,,,
হ্যালিপ্যাড স্টোন গার্ডেন আর আশেপাশের জায়গা ঘুরতে ঘুরতে  রাত সাতটা বেজে গেল
আকিব: আনহা,,,রাত হয়ে গেছে এবার চলো কটেজে ফিরে যাই,,,,
আনহা: না যাব না আজ সারা রাত ঘুরবো,,,
আকিব: What???Are you crazy??? 
আনহা: হুম,,,, হ্যালিপ্যাডে ঘোরার সময় কতগুলো ছেলে মেয়ে বলাবলি করছিল,,,,,
ওরা নাকি রুলুইপাড়া যাবে,,,
আকিব: তো,,,, ওরা গেলে যে আমাদের যেতে হবে এটার তো কোন মানেই হয় না,,,,,
আনহা: আরে শোন না,,,,, ওরা এটাও বলছিল আজকে নাকি পূর্ণিমা,,,, চাঁদ উঠেছে দেখছো না,,,, আর এই চাঁদের আলোয় রুলুইপাড়ার রাস্তায় ঘুরতে নাকি ভালো লাগবে,,,,, আর অনেক সুন্দর নাকি জায়গাটা
তাই আমরা আজকে যাবো,,,,
আকিব: ইম্পসিবল,,,,, আমি যাব না,,, তুমি গেলে যেতে পার,,,,
আনহা: ওকে,,,,,আমি তাহলে রিমি আপুকে কল করে বলে দিচ্ছি,,,,
আকিব: ক কি বলবে,,,,
আনহা: তেমন কিছু না,,,,বলব আমি রুলুইপাড়া একাই যাবো,,,,
আকিব: আল্লাহ মাটি ফাক করে দাও আমি ঢুকে যাই,,,,, নয়তো আমারে আকাশে উঠাইয়া নাও,,,,,
আনহা: আপাতত আমার সাথে রুলুইপাড়া গেলেই হবে,,,,
আকিবের আর কিছু করার নেই,,,, শেষমেষ আনহাকে নিয়ে চান্দের গাড়িতে করে রওনা হয়,,,,ম্যানেজারের দেওয়া গাড়ি আকিব আনেনি,,, কারণ হ্যালিপ্যাড,স্টোন গার্ডেন কটেজের কাছাকাছি,,,, কিন্তু আনহা যে রুইলুইপাড়ায় যাওয়ার বায়না করবে সেটা ও ভাবেনি,,,, চান্দের গাড়ি ছুটে চলছে,,,,ওই গাড়িতে কিছু অন্য ছেলে মেয়েরাও আছে,,, ওদের মুখেই আনহা রুইলুইপাড়ার কথা শুনেছে,,, ওরা সম্ভবত কলেজের স্টুডেন্ট,,,,,,,
ওদের কারো হাতে গিটার,,, ডিএসএলআর,,,
ওরা গাড়িতে গান শুরু করে দিলো,,,
এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলোতো,,,,যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলোতো,,, 
🎶🎶🎶🎶🎶🎶🎶🎶🎶🎶🎶
আনহা আর আকিব ওদের গান শুনছে,,,,,
গাড়িতে থাকা সবার চোখই আকিব আর আনহার দিকে আকিব নেভি ব্লু কালারের একটা শার্ট পরা,,,,,শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাজ করা,,,, বুকের উপর সানগ্লাস টা ঝুলানো,,,,
একটা ছেলে বলে উঠলো,,,,
__ হে ব্রো,,,, আপনারা হাজবেন্ড ওয়াইফ,,,,
__ আরে গাধা দেখে বুঝিস না,,,,এতো বড়ো হয়েছিস এখনো সব কিছু বোঝার ক্ষমতা হয়নি,,, (একটা মেয়ে বলল) দেখছিস না কেমন ম্যাচিং করে পোশাক পড়া,,,, দেখতেই তো বোঝা যাচ্ছে যে ওনারা হানিমুনে এসেছে
মেয়েটার কথায় আনহা আর আকিব একটু হেসে উঠলো,,,,
__ আরে থাম তো আমি বুঝেছি যে ওনারা হাজবেন্ড ওয়াইফ,,, কিন্তু তাও সিওর হয়ে নিলাম,,,,(ছেলেটা,,,)
__ হয়েছে তোকে আর বুঝতে হবে না,,, বাই দা ওয়ে,,,, আপু আপনাদের জুটিটা কিন্তু বেশ
এরকম জুটি খুঁজে পাওয়া কিন্তু খুব মুশকিল
একটা ছবি তুলতে পারি আপনাদের,,,,(অন্য একটা ছেলে)
আনহা আর আকিব একে অপরের দিকে তাকালো,,,,
__ আরে এখন না,,,,রুলুইপাড়া গিয়ে তারপর ওকে,,,,
সবাই আবার গান শুরু করল,,,আনহা একমনে বাইরে তাকিয়ে আছে,,,, ঘন্টাখানেকের মধ্যে ওরা রুলুইপাড়ায় পৌঁছে গেল,,,, গাড়ির ছেলেমেয়ে গুলো আকিব আর আনহাকে নিয়ে গেল ওরা এখানে বার বি কিউ করবে,,,, আর এখানেই ডিনার করবে,,,,আনহাও রাজি হয়ে যায়,,,,
সবাই মিলে আড্ডা দেয় আনহাও খুব ইনজয় করছে,,,,,আকিব শুধু আনহার কান্ড দেখছে
রাত এগারোটায় সবাই ডিনার করে,,, আকিব চেয়েছিল কটেজে ফিরতে কিন্তু ওই ছেলেমেয়ে গুলো আসতে দিল না,,,, ওরা নাকি এখানের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে রুইলুইপাড়া
ঘুরবে,,,,, চাঁদনী রাতে এই রাস্তায় হাঁটার মজাই নাকি আলাদা,,,, কি আর করা,,,,,, আনহাও ওদের সাথে মতবিনিময় করে,,,,
রাত দুটো বাজে,,,,আনহা আর আকিব পাশাপাশি রুলুইপাড়ার রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে,,,,,
কলেজের ছেলেমেয়ে গুলো ওদের থেকে একটু পিছনে,,,,আনহা আকিব যাতে একটু আলাদা সময় কাটাতে পারে সেজন্যই ওরা পিছনে হাঁটতেছে,,,,,
চাঁদের আলো সারা রাস্তাটা আলোকিত করেছে,,,,আনহার মুখটা পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে,,,,,আনহা বকবক করে যাচ্ছে আর আকিব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আনহার দিকে,,,,, কেমন জানি অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে আকিবের মধ্যে,,,,কোন শীতল বাতাস আকিবের মনে দোলা দিচ্ছে,,,, নিজের অজান্তেই আকিব আনহার হাত ধরে,,,,, কিন্তু
আনহার সেদিকে খেয়াল নেই,,,,ও বকবক করতেই আছে,,,, আজকে অনেক মজা হলো
স্টোন গার্ডেনটা অনেক সুন্দর ছিল,,,,,
হ্যান ত্যান ভাতের ফ্যান ঢেলে উল্টাইয়া দেন
ইত্যাদি ইত্যাদি,,,, কথা বলতে বলতে আনহাও আকিবের হাত মুঠিবদ্ধ করে ধরে,,,,,
ওই ছেলেমেয়েদের সাথে ছবি তুলে আড্ডা দিয়ে,,,, কটেজে ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে তিনটা বেজে গেছে,,,,,, কটেজে ফিরে রুমে এসেই দুজনে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো,,,
সকালবেলা,,,,,,,,,,,,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ০৯

সকালবেলা,,,,,,,,,,,,,,
দরজায় কে যেন নক করছে,,,,, আনহা আর আকিব ঘুমাচ্ছে তো ঘুমাচ্ছে,,,,কাল অনেক রাতে ঘুমানোর কারণেই দুজনের একজনের ও ঘুম ভাঙছে না,,,,,,, হঠাৎ করেই আরো জোরে দরজাটা ধাক্কা দিতে লাগল,,,,,,
আনহা: উফফফ এখন আবার কে এলো,,,, আকিব,,,, একটু উঠে দেখ না কে এলো,,,,
আকিব ও উঠছে না,,,,,আনহা আকিব কে ধাক্কা দিল,,,,,
আকিব: ওয়াট,,,,,, সারারাত লাটিমের মতো ঘুরিয়ে এখন ঘুমের বারোটা বাজাবে নাকি,,,,
আনহা: উফফ আকিব,,, কথা না বলে গিয়ে দেখো কে এসেছে,,,,
আকিব গিয়ে দরজা খুলে দেখে রিধি আর সোহান এসেছে,,,,,,,
আকিব: রিধি তুমি,,,,,,
রিধির নাম শুনে আনহা ও লাফ মেরে ওঠে ওদের কাছে যায়,,,,,
আনহা: রিধি সোহান,,,, তোমরা এসে গেছো,,,
ভেতরে আসো তোমরা,,,,,এই আকিব সরো,,,
পুরো দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,,
আনহা আকিবকে ঠেলা মেরে সরিয়ে ওদের ভিতরে আনে,,,,
আনহা: তোমাদের তো কাল আসার কথা ছিল,,,,,এতো দেরি করলে কেন,,,
সোহান: আসলে আনহা আমার একটা কাজ ছিল,,,,তাই,,,
আনহা: ওহ,,,,আকিব ওদের জন্য রুম বুক করোনি,,,,
আকিব: হুম,,,
আনহা: তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেন,,,,, দেখছো না,,, ওরা ক্লান্ত,,,, চাবি নিয়ে আসো গো,,,,
আনহার কথায় আকিব মুখ গোমড়া করে চলে গেল,,,,, কিছুক্ষণ পর আকিব ফিরে আসে,,,,,
আকিব: একটা প্রবলেম হয়েছে,,,,
আনহা: কি প্রবলেম,,,,
আকিব: সোহান আর রিধির জন্য যে দুটো রুম বুক করেছিলাম তার একটা অন্যজন বুক করে নিয়েছে,,,,
রিধি: এসব কি বলছো আকিব,,,, এখন কি হবে,,, আবার একটা ভুল করে ফেললে তুমি,,,
আকিব: মোটেও আমার ভুল না,,,,,, ভুল তোমরা করেছো,,,, তোমরা যদি কালকে আসতে তাহলে দুটো রুমই পেতে,,,
সোহান: ওসব কথা বাদ দিয়ে এখন কি হবে সেটা বলো,,,,
আনহা: একটা কাজ করলে কেমন হয়,,,,যে,,,
আমি আর রিধি এক রুমে আকিব আর সোহান এক রুমে থাকবে,,,,,
আকিব: হুম ভালো বুদ্ধি,,,, আর ওই ম্যানেজার তানভীর ভাইয়াকে সব বলে দিক তারপর আপু এখানে এসে আমাকে পাঠাবলি করুক,,,,, তোমার জন্য আমি আর মার খেতে পারব না,,,,
আনহা: সেটাও তো ঠিক,,,, তাহলে এখন কি হবে,,,,,
রিধি: তোমরা যদি কিছু মনে না কর তাহলে আমি আর সোহান রুম শেয়ার করে থাকতে পারবো,,,,
রিধির এমন কথায় আকিব ও আনহা অবাক হয়ে যায়,,,,
রিধি: দেখ আকিব ব্যাপারটা ওভাবে নিও না এছাড়া আর তো কোন উপায় নেই,,,, আমি না হয় নিচে কোন ভাবে ঘুমাবো আর সোহান,,,,
সোহান: ছিঃ ছিঃ এসব কি বলছেন আপনি
মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান দিতে আমি জানি,,,,,
আপনি খাটে ঘুমিয়েন আমি নিচে ঘুমাব,,,,
আকিব আর আনহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছে,,,,, কিছুই বলছে না,,,,,
রিধি: আচ্ছা সে দেখা যাবে,,,,,আকিব,,, তুমি রাজি তো,,,,দেখো এছাড়া তো কোন উপায় দেখছি না,,,,
অগাত্যা মন রাজি না হলেও মুখে ওরা রাজি হয়ে গেল,,,,,সোহান আর রিধি চাবি নিয়ে রুমে চলে যায়,,,,,
এগারোটার দিকে চারজন মিলে গাড়িতে করে রওনা হলো হাজাছড়া ঝর্ণার উদ্দেশ্যে,,,,,,
ম্যানেজারের দেওয়া গাড়িতে করেই ওরা যাচ্ছে,,,,,নানা রকম গাছগাছালি পাহাড় দেখতে দেখতে ওরা হাজাছাড়া ঝর্ণায় পৌঁছে গেল,,,,,ঝর্ণা দেখেই আনহা গোসল করতে নেমে যায়,,,,,ঝর্ণায় অনেকেই গোসল করছে
আনহা কতগুলো বাচ্চাদের সাথে দুষ্টুমি করছে আর গোসল করছে,,,,,সোহান আর রিধি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেছে,,,,, এক ঘন্টা যাবত গোসল করে আনহা উঠে আসে,,,,
সোহান: তোমার কি কোন কান্ডজ্ঞান নেই আনহা,,,,, কতোক্ষণ ধরে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খাচ্ছি,,,,
আনহা কিছু বলার আগেই আকিব এসে আনহাকে তোয়ালে এগিয়ে দেয়,,,,,, আর গিয়ে চেঞ্জ করতে বলে,,,,,, আনহা চেঞ্জ করতে চলে গেল,,,,,,
রিধি: বাব্বাহ আকিব,,,,,আনহার প্রতি এতো কেয়ার,,,,,
সোহান: হুম,,,,,, বাট কেন???
আকিব: বাট এই কেয়ার টা তো তোমার করা উচিৎ ছিল সোহান,,,,, আর সেটা আমার করতে হচ্ছে,,,, কেন,,,,,এই যে সকাল থেকে দেখছি তুমি রিধির কেয়ার করছো,,,, গাড়ি থেকে হাত ধরে নামাও ওঠাও,,,, এখানে হাত ধরে আস্তে আস্তে নিয়ে এলে যেন পাথরে পিছলে রিধি পড়ে না যায়,,,, কিন্তু এটা তো আমার করার কথা ছিল,,,, তুমি করলে কেন,,,
আকিবের কথায় সোহান আর রিধির মুখে ভয়ের ছাপ দেখা যায়,,,,তা দেখে আকিব আরও কিছু বলতে যাবে,,,, তখনই আনহা চলে আসে,,,,
আনহা: আমার হয়ে গেছে,,,,চল সবাই,,,, সরি সোহান আমার জন্য তোমাকে মশার কামড় খেতে হলো,,,,,
আকিব: হুম চলো,,,,,
ওরা গাড়িতে উঠলো,,,,, আকিব আনহা পাশাপাশি বসে,,,,কারণ ড্রাইভারটা ওই ম্যানাজারের চামচা,,,,, কি হচ্ছে না হচ্ছে সব গিয়ে বলে দেবে,,,, রিধি আর সোহান ও পাশাপাশি বসেছে,,,,আনহা বাইরে তাকিয়ে বন জঙ্গল পাহাড় দেখছে আর আকিবকে দেখাচ্ছে,,,,রিধি আর সোহান ও গল্প করছে,,,
আনহা পিংক কালারের একটা কারচুপি পরেছে,,, চুলগুলো খোলা,,,, ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে আকিবের ঘাড়ে হাতের উপর,,,,,একটা সুঘ্রাণ বের হচ্ছে আনহার চুল থেকে,,,,, পাগল করা সেই ঘ্রাণ,,,
আকিবের সবকিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছে,,,,, আনহার দিকে তাকাতে না চাইলেও বেহায়া চোখগুলো সেদিকেই যাচ্ছে বারবার,,,,,  আকিব চোখে সানগ্লাস পরে নেয়,,,,গাড়ি ছুটছে আপন মনে,,,,,, গন্তব্য স্থল ঝুলন্ত ব্রিজ
অবশেষে ওরা খাগড়াছড়ি পৌঁছে যায়,,,,,তার পর লাঞ্চ করে রওনা হয় ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে
ঝুলন্ত ব্রিজ,,,,রিসাং ঝর্ণা দেখে ওরা যায় আলুটিলা গুহা দেখতে,,,,,আকিব আর আনহা গুহার ভেতরে যায় কিন্তু রিধি আর সোহান বাইরে থাকে,,,,, ঝুলন্ত ব্রিজ,,, রিসাং ঝর্ণা আর আলুটিলা গুহা ঘুরতে ঘুরতে ওদের রাত বারোটা বেজে যায়,,,,তারপর ওরা গাড়ি করে আবার রওনা হয় এবারের গন্তব্য স্থল হলো কলাঙ্ক পাহাড়,,,,যেটা নীলাচলের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা,,,, মেঘের রাজ্যে সেখানেই,,,, সকাল বেলা মেঘ ভেসে বেড়ায় কলাঙ্ক পাহাড়ে,,,,,এটা কেউ মিস করতে চায় না,,,,তাই ঘুম ক্লান্তি সব বাদ দিয়ে কলাঙ্ক পাহাড়েই যাবে সবাই,,,,,
সরারাত গাড়িতেই কেটে যায়,,গাড়িতেই সবাই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটায়,,,,,,
কলাঙ্ক পাহাড়ে পৌঁছে সবাই ব্রেকফাস্ট করে,,
তারপর কলাঙ্ক পাহাড়ের উপরে যায়,,,ওখানে বসার সুন্দর জায়গা আছে সবাই ওখানে বসে পড়ল,,,, অনেক ক্লান্ত সবাই,,,, কিন্তু মেঘ এতো কাছে দেখে আনহার ক্লান্তি সব উড়ে যায়,,,, পাহাড়ের উপর চারদিকে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছে,,,, আর আকিব রিধি সোহান ওর কান্ড দেখতাছে,,,,আনহা ওদের কাছে গেল,,,
আনহা: সোহান রিধি আকিব চলো ছবি তুলি
দেখছো না মেঘ গুলো কত সুন্দর দেখাচ্ছে,,,,
ছবি না তুললেই মিস করবে,,,,
সোহান: আর ইউ ক্রেজি আনহা,,,,, কাল থেকে তোমার পাগলামি সহ্য করছি,,,, আর কতোকাল বাচ্চা থাকবে,,,দেখছো না,,, আমি খুব ক্লান্ত,,,,যতসব,,, (রেগে)
আনহা মুখটা কালো করে ফেলল সোহান ওকে এভাবে অপমান করবে ও ভাবতে পারেনি,,,,আকিব ও কিছু বললো না ওদের ব্যাপার ওদের হাতেই ছেড়ে দিল,,,,
রিধি: সত্যি আনহা,,, তুমি এমন কেন,,,লোকে কি বলবে,,,,, আসলে প্রথম এসেছো তো,,,, জীবনে তো কখনো সাজেক আসোনি,,,,প্রথম বার এলে এরকমই হয় (শয়তানি হাসি দিয়ে)
আকিব এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না,,,,,
আকিব: স্টপ ইট,,,,রিধি,,,কারো ব্যাপারে বাজে মন্তব্য করার অধিকার তোমার নেই,,,,
আনহাকে তুমি ইনসাল্ট করতে পারো না,,,,
রিধি: আমি কোথায় ইনসাল্ট করলাম,,,, যা সত্যি তাই তো বললাম,,,, আর আনহাকে আমি এসব বলছি এতে তোমার বাধছে কোথায়,,,,
সোহান: আকিব,,,, আনহার প্রতি তুমি এতো সিরিয়াস কেন,,,,,
আকিব: আনহার প্রতি সিরিয়াস তো তোমার
হওয়া উচিৎ ছিল,,,, কিন্তু তুমি সেটা না করে উল্টো আনহাকে ইনসাল্ট করছো,,, এখন আমি কি করব বলো,,,,আনহা চলো আমি তোমার সাথে ফটো তুলবো,,,,,
আকিবের কথায় রিধি আর সোহান থম মেরে বসে রইল,,,,,,
আকিব আনহার হাত ধরে নিয়ে যায়,,,, কেন জানি আকিবের কথায় আনহা খুশি হয়,,,, সোহানের বলা কথাগুলোয় ওর কিছুই যায় আসে না,,,, কিন্তু কেন সেটাও আনহার অজানা,,,,,আকিবের সাথেই কলাঙ্ক পাহাড় ঘুরে আনহা,,,, তারপর সবাই কটেজে ফিরে আসে,,,,,আসার পথে রিধি আর সোহানের সাথে তেমন কোন কথা বলে না আনহা আর আকিব,,,,,, কারণ আজকে বড্ড বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে ওরা,,,,
অনেক জার্নি করেছে ওরা,,,, কটেজে এসে সবাই বিশ্রাম নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,,,, যেহেতু লাঞ্চ কলাঙ্ক থেকেই করে এসেছে,,,,,,তাই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয় সবাই,,,, সন্ধ্যার পরে আনহার  ঘুম ভাঙল,,,,ঘুম থেকে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় আকিবকে ও ফ্রেশ হতে পাঠায়,,,, তখনই দরজায় কে যেন নক করল আকিব গিয়ে দরজা খুলল,,,,
আকিব: আপনি,,,,,
ম্যানেজার: জ্বী,,,,,আপনাদের জন্য কটেজের বাইরে ক্যান্ডেলাইট ডিনারের এ্যারেন্জ করা হয়েছে,,,, আপনারা রেডি হয়ে চলে আসুন,,,,
একথা শুনে আনহা আর আকিব চোখ বড় বড় করে তাকায়,,,,
আনহা: আকিব তুমি এসব করেছো,,,,,
আকিব: না তো,,,, আমি তো,,,
ম্যানেজার: আরে না,,,,,,এসব তানভীর আমাকে করতে বলেছে,,,,,
আনহা: কিন্তু,,,,, আমাদের সাথে আরো দুজন বন্ধু আছে ওদের যদি,,,,,
ম্যানেজার: সরি,,, আপনারা দুজন ছাড়া ওখানে আর কাউকে এ্যালাও করা হবে না,,,,
আপনারা চাইলে ওনাদের জন্য আমি অন্য ব্যবস্থা করতে পারি,,,,, এখন আমি আসি,,,,,
আকিব একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়লো,,,,,,
আকিব: গেলো,,,, সবকিছু,,,,রিধিকে এখন কি বলবো,,,,
আনহা: আপু আর ভাইয়া আমাদের পিছু ছাড়বে না,,,,,ধ্যাত,,,,
কি আর করার রেডি হয়ে দুজনে কটেজের বাইরে চলে আসে,,,,,,বাইরে সোহান আর রিধি বসে বসে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছিল,,,,,
রিধি: আকিব আনহা তোমরা,,,বসো,,,,
আকিব: আর বসা হয়েছে,,,,,,,আপু ডিনার এ্যারেন্জ করেছে আমার আর আনহার জন্য
সোহান: ওয়াট,,,,আকিব এবার মনে হচ্ছে সবকিছু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে,,,,,,,
আনহা: বেশি হলেও কিছু করার নেই সোহান তুমি রিমি আপুকে চেনো না,,,, একবার যদি কিছু জানতে পারে তাহলে আমাদের ডিভোর্স কিছুতেই হতে দেবে না,,,,
সোহান: আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা যাও,,,, আমি আর রিধি ডিনার করে নিব,,,,
সোহানের কথায় আনহা তো অবাক,,,, কেন সোহান সব কিছু এতো সহজে মেনে নিচ্ছে,,, যে সোহান আনহা ছাড়া কিছু বুঝতো না,,,,
আনহা বলার সাথে সাথে হাজির হতো ওর সামনে,,,,কোন ছেলের সাথে কথা বললে রাগে ফায়ার হয়ে যেতো,,,,সে সোহান আকিবের সাথে এক রুমে থাকা এখন আবার
ডিনার এসব কিভাবে মেনে নিচ্ছে,,,,, কিছু তো একটা গন্ডগোল আছে,,,,,,,আনহা এসব ভাবতে ভাবতে আকিবের সাথে ডিনারে চলে গেল,,,,,
যেখানে ডিনার এ্যারেন্জ করা হয়েছে জায়গাটা অনেক সুন্দর,,,,,আনহা তো দেখেই অবাক,,,,,,, টেবিল টা গোলাপের পাপড়ি আর ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো,,,,আশে পাশেও ক্যান্ডেল ফুলের তোড়া দিয়ে সাজানো,,,, অপলক দৃষ্টিতে সবকিছু দেখছে,,,,
আনহা: ওয়াও,,,,,, বিউটিফুল,,,, এরকম ভাবে কখনোই আমি ডিনার তো দূরের কথা ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ কিছুই করিনি,,,,,,
আনহার কথায় আকিব শব্দ করে হেসে উঠলো,,,,,
আকিব: তবে এখন করো,,,,,,, ওহ এখন আবার ফটো তুলবে,,,,ওয়েট তোমার একটা ফটো তুলি,,,,
আনহা: আচ্ছা তোল,,,, রিমি আপুকে সেন্ড করে দিও,,,,,আপু তো কেডি পাঠকের মতো গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছে,,,,, প্রত্যেক কাজের প্রমান চাই তার,,,,,
আকিব আনহার সাথে কয়েকটা ফটো তুলে রিমিকে সেন্ড করে দেয়,,,,,তারপর দুজনে খেতে বসে,,,,,
আনহা খেয়েই যাচ্ছে আকিব গালে হাত দিয়ে বসে বসে আনহার খাওয়া দেখছে,,,
আনহা: আকিব তুমি খাচ্ছ না কেন আমার খাওয়া দেখলে কি তোমার পেট ভরবে,,,, ওহহ তোমার তো রাতের বেলা ব্যারাম ওঠে,,, না খাওয়ার ব্যারাম,,,,,প্লিজ আকিব আজকে ডিনার করো,,,, আমার জন্য,,,,রিমি আপুর কষ্টটা এভাবে বিফলে যেতে দিও না,,, প্লিজ,,,
কেন জানি আকিব আনহার অনুরোধ ফেলতে পারলো না,,,দুজনে একসাথে ডিনার করলো,,,
তারপর একসাথে রুমে যেতে লাগলো যাওয়ার পথে ম্যানেজারের সাথে দেখা হলো,,,
ম্যানেজার: আপনাদের সবকিছু পছন্দ হয়েছে তো,,,,
আকিব: হুম থ্যাঙ্কস ফর দিস,,,,,,
ম্যানেজার: ওয়েলকাম,,,,, আপনারা এবার রুমে গিয়ে রেস্ট করুন,,,,
আনহা: আকিব চলো না রিধি আর সোহানের রুমে গিয়ে একটু দেখা করে আসি,,,
আকিব: ওকে চলো,,,,
ম্যানেজার: এক মিনিট,,,, আসলে ওনারা তো রুমে নেই,,,,
আনহা: নেই মানে কোথায়,,,,
ম্যানেজার: ওনাদের তো কটেজের পেছনে যেতে দেখলাম,,,, ওখানে সুন্দর বসার জায়গা আছে,,,,,, আজকে তো পূর্ণিমা হয়তো চাঁদ দেখতে গিয়েছে ওখানে থেকে চাঁদটা খুব ভালোভাবে দেখা যায়,,,,, আপনারা চাইলে ও যেতে পারেন,,,,
ম্যানেজার চলে গেল,,,,
আনহা: কি,,,,,, আমাদের রেখে চাঁদ দেখা না,,, দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা,,,,চল তো আকিব,,,,
আজকে সবাই আড্ডা দেব অনেক রাত পর্যন্ত
আনহা আকিবের হাত ধরে টানতে টানতে কটেজের পিছনে নিয়ে গেলো,,,,,
ওখানে গিয়ে আনহা আর আকিব যা দেখল সেটা দেখার জন্য দুজনের কেউই প্রস্তুত ছিল না,,,,,,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ১০

সোহান আর রিধি দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে গভীর চুম্বনে মগ্ন হয়ে আছে,,,,, কটেজের চারপাশে কালারিং লাইট জ্বালানো,,,, সেই আলোতে ওদের দুজনকে স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে,,,,,সোহান দুই হাতে রিধির কোমড় আঁকড়ে ধরেছে আর রিধি সোহানের শার্টের কলার ধরে আছে,,,,,
এটা দেখা মাত্রই আনহা আর আকিবের পা থেকে মাটি সরে যায়,,,,, ওরা দুজনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখতেছে,,,,,,সোহান আর রিধি ওদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে,,,,
 আনহা আর সহ্য করতে না পেরে জোর একটা চিৎকার দিলো,,,,
আনহা: সোহা,,,,,,,,,,,,,,,,,,ন,,,,,,,,,,,,,,,, 
আনহার চিৎকারে সোহান রিধিকে ছেড়ে দেয়
সোহান আর রিধি ভয় পেয়ে যায় আকিব আর আনহাকে দেখে,,,,, ওরা ভাবতেও পারেনি যে এসময় আকিব আর আনহা এসে পড়বে,,,,,, আর ওদের হাতেনাতে ধরে ফেলবে,,,,,,,আনহা সোহানের দিকে এগিয়ে গেল,,,,,,
সোহান: আ আনহা,,,,
কিছু বলার আগেই আনহা সোহানের গালে কষে একটা চড় মারল,,,,,সোহান চড় খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে একটু পিছিয়ে যায়,,,,
আনহা: ছিঃ সোহান,,,, তোমাকে আমি কতোটা বিশ্বাস করেছি,,,,, ভালোবেসেছি,,,,,,
আর তুমি তার এই প্রতিদান দিলে,,,, তুমি রিধির সাথে,,,, ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে,,,,,, তুমি এতটা নিচ হতে পারলে কিভাবে,,,,,
সোহান: দ দেখ আনহা তুমি যা ভাবছো সেটা না,,,,,
আনহা: জাস্ট শাট আপ,,,,, কি করছিলে তোমরা হুম,,,, সিনেমার শুটিং,,, তুমি নায়ক আর রিধি নায়িকা,,,, এজন্য কি একে অপরকে কিস করছিলে,,,,, আর রিধি তুমি এটা কিভাবে করতে পারলে আকিব তোমাকে কতটা ভালবাসে সেটা তুমি জানতে না তারপরও তুমি,,,,, আর সোহান তুমি কেন করলে এটা বলো,,,,,,
আনহা সোহানের কলার ধরে ঝাকাতে শুরু করে,,,,সোহান বিরক্ত হয়ে আনহাকে জোরে ধাক্কা মারে,,,,আনহা পিছনে সরে পড়তে নিলে আকিব ওকে ধরে ফেলল,,,,,, 
সোহান: হ্যা আমি এখন খারাপ তাই না আর তুমি কি??? অনেকদিন হলো তো আকিবের সাথে এক রুমে রাত কাটাচ্ছো,,,, কি ভেবেছ আমি কিছু বুঝিনা,,,,, আর আকিব কি ধোয়া তুলসী পাতা যে তোমাকে এতো দিন কিছু করেনি,,,,,হুহ,,,,,
আনহা: খবরদার সোহান,,,, আমার সম্পর্কে যা বলার বলতে পারো কিন্তু আকিবের সম্পর্কে একটা কথাও তুমি বলবে না,,,, তোমার ওই নোংরা মুখে আকিবের কথা মানায় না,,,,, আর কি যেন বললে আকিব ধোঁয়া তুলসী পাতা,,,,,,হ্যা,,,,,,, সত্যি আকিব খুবই ভালো,,,, এতো দিন আমরা স্বামী-স্ত্রী আছি ঠিকই কিন্তু আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর কোন সম্পর্ক নেই,,, আর তোমার মতো নিচ নোংরা মানুষ সেসব বুঝবে না,,,,,,কারণ তোমার মানসিকতাই নোংরা,,,,,
সোহান: থামো তো অনেক জ্ঞান দিয়েছো,,,, নিজের চরিত্র ঠিক নেই আবার অন্যকে বোঝাতে এসেছে,,,,,
একথা শুনে আকিব ভয়ংকর রেগে যায় সোহানকে গিয়ে একটা ঘুষি মেরে নিচে ফেলে দেয়,,,,, আবার টেনে উঠিয়ে কলার ধরে বললো,,,,,
আকিব: তোর সাহস কি করে হলো আনহার সম্পর্কে বাজে কথা বলার,,,অনেক সহ্য করেছি তোর কথা আর না,,,, আসলে তোর মতো একটা ছেলের সাথে আনহাকে মানায় না,,,,,তাই হয়তো আজকে সবটা ধরা পড়ে গেছে,,,,,
আকিব খুব জোরে সোহানের কলার চেপে ধরেছে,,,,,রিধি গিয়ে আকিবের থেকে সোহানকে ছাড়িয়ে নেয়,,,,,
আকিব: বাহ খুব ভালো রিধি,,,,, আমাকে ছেড়ে যে তুমি অন্য কারো পালকিতে চড়বে সেটা আমার জানা ছিল না,,,,, আর কেনই বা চড়েছ সেটাও আমার জানা,,,,,রিধি আমি আমার ভালোবাসাকে পবিত্র রাখতে চেয়েছিলাম,,,,, আর পাঁচ জনের মতো তোমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করিনি,,,,কারণ ভালোবাসার মানুষকে আমি কখনোই অপবিত্র করতে চাই নি,,,,, কিন্তু এটা যে তোমার পছন্দ ছিল না এটা আমি জানতাম না,,,, আমি তোমার কাছে থেকে এটা আশা করিনি,,,,, আসলে এতো দিন তোমার মুখের উপরের মুখোশ টা দেখেছি,,,, কিন্তু আজ তোমার আসল রুপ দেখলাম,,,,, মুখোশের আড়ালে তুমি দেখতে খুবই সুন্দর কিন্তু তোমার আসল রুপটা ভয়ংকর,,,,,
আনহা: আকিব অনেক হয়েছে,,,,এই আপদ দুটোকে এখন এখান থেকে বিদায় করো,,,,,
এদের দুজনকে আমার সহ্য হচ্ছে না,,,,,
আনহা এসে আকিবকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল,,,,ম্যানেজারের থেকে রিধি আর সোহানের রুমের চাবি নিয়ে ওদের রুমে যায়,,,,,, আকিব বুঝতে পারছে না আনহা ঠিক কি করতে চাইছে,,,,,
আকিব: এসব কি করছো,,,,
আনহা: কথা বলো না,,,,
আনহা শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে,,,,,রিধি আর সোহানের ব্যাগ দুটো নিয়ে বাইরে আসে ততক্ষণে সোহান আর রিধিও চলে এসেছে,,,,,আনহা ওদের দিকে ব্যাগ দুটো ছুড়ে মারে,,,,,,,
রিধি: আনহা এসব কি করছো,,,,,,
আনহা: দেখতে পাস নাই কি করলাম,,,, তোদের বের করে দিলাম যা ভাগ,,,,,
রিধি: ভাগবো মানে এতো রাতে আমরা কোথায় যাবো,,,,
আনহা: জাহান্নামের চৌরাস্তায় যা তাতে আমার কিছু যায় আসেনা,,,, কিন্তু তোরা এখানে থাকতে পারবিনা,,,,নাগর নিয়ে হানিমুন করবি আর সব খরচ দিবে আকিব এটা কখনোই হবে না,,,,
রিধি: না এই রুম আমরা আমাদের টাকায় বুক করে নিব,,,,,
ওদের চেঁচামেচিতে ম্যানেজার আর অন্যান্য লোকজন চলে আসে,,,,,
আনহা: ওই তো ম্যানেজার চলে এসেছে,,,,
আচ্ছা ম্যানেজার সাহেব এই রুমটা কে বুক করেছে,,,,,
ম্যানেজার: আকিব,,,,
আনহা: তাহলে আকিবের ওয়াইফ হিসেবে আমার সিন্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে,,,,, আর আমি চাই এই রুমে ওরা থাকবে না,,, আমার হাজব্যান্ড রুম বুক করেছে সেটাতে আদৌ কেউ থাকবে না রুমটা খালি থাকবে সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যপার,,,,,এখন এদের এখান থেকে বিদায় করুন,,,, আমি আর কিছু বলতে চাই না,,,,,,,
ম্যানেজার আর কিছুই বলতে পারলাম না আনহাকে,,,, কারণ আনহা ভয়ংকর রেগে আছে,,,, আর আকিব এতক্ষণ আনহার কথা শুনছিল,,,,, এতো কিছুর পরও আনহা নিজেকে শক্ত রাখছে কিভাবে,,,,
ম্যানেজার: সরি ফর দিস (সোহানের দিকে তাকিয়ে) আপনারা এখানে থাকতে পারবেন না,,,,ওনারা রুম বুক করেছে,,,,, এখন সবটা ওনাদের হাতে,,, ওনারা যদি পারমিশন দেয় তবেই আপনারা থাকতে পারেন,,,,,
সোহান: দেখ আনহা তুমি এটা করতে পারো না
আনহা: আমি কি করতে পারি আর না পারি সেটা তুমি খুব ভালো করে জানো,,,বিড়ালের মত চৌদ্দ বাড়িতে মুখ দেওয়া না,,,, এখন যাও এখান থেকে,,,,,
আনহা আকিবকে নিয়ে রুমে চলে আসে
রিধি আর সোহান কোন উপায় না পেয়ে চলে যায়,,,,, রুমে এসে আনহা খাটের উপর বসে পড়ল আকিব ও পাশে বসে আছে,,,,, নিচের দিকে হালকা ঝুঁকে হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো আস্তে আস্তে টানছে,,,,,,  অনেক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আনহা রুম থেকে হনহনিয়ে বের হয়ে গেল,,,,,আকিব বুঝতে পারল না যে আনহা কোথায় গেল,,,,,
কিছুক্ষণের মধ্যেই আনহা ফিরে এলো হাতে দুটো মদের বোতল আর দুটো গ্লাস,,,,,,আকিব এসব দেখে অবাক হয়ে যায়,,,,,
আকিব: এসব কি,,,,,
আনহা: দেখছো না কি,,,,, এগুলো আমাদের ডিনার টেবিলে সাজানো ছিল,,,,,,
আকিব: হ্যা ছিল,,, কিন্তু,,,,,
আনহা: তখন তো খাইনি এখন খাবো,,,,,
আকিব: আমি এসব খাইনা,,,,
আনহা: আমি ও তো খাই না,,,, তবে আজকে খাবো তুমি ও খাবে,,,, শুনেছি এসব খেলে নাকি মনের কষ্ট কমে,,,,,দেখি আজকে ট্রাই করে,,,,,নাও এবার বসো,,,,,
আকিব আর আনহা খাটের পাশে ফ্লোরে বসে পড়লো,,,,,,আনহা গ্লাসে মদ ঢেলে নিজে এক গ্লাস নিয়ে আকিবকে এক গ্লাস দিলো তারপর দুজন দুজনের গ্লাসে টোকা মেরে বললো চিয়ার্স,,,,চোখ বন্ধ করে দুজন দুগ্লাস শেষ করে দিলো,,,,, তারপর আবার গ্লাসে মদ ঢেলে দুগ্লাস দুজনে শেষ করে ফেলে,,,,এতেই ওদের নেশা ধরে যায়,,,,,, প্রথমবার এসব খাওয়ায় আরও বেশি নেশা ধরে ওদের,,,,,,
আনহা: আচ্ছা আকিব,,,বলতে পারো সোহান কেন আমার সাথে এরকম করলো,,,,,(ঠোঁট উল্টিয়ে) আমি তো ওকে এতো,,,,, ভালোবেসেছি,,,,, (হাত দুটো প্রসারিত করে)
তাহলে ও কেন আমাকে ভালোবাসলো না,,,,,
আকিব: সেটা আমি কি করে বলবো,,,,, দেখছো না রিধিও আমাকে কেমন ছ্যাকা দিল
আনহা: হুম,,,এতে তোমার দোষ,,,,, তোমার দোষেই রিধি তোমাকে ছ্যাকা দিয়েছে,,,,
আকিব: এখানে আমার দোষ কোথায় হলো,,,
আনহা এবার পুরো বোতল হাতে নিয়ে এক চুমুক দিলো,,,,, তারপর বলল,,,,
আনহা: তুমি অনেক আনরোমান্টিক আকিব
রিধিকে তো একটা কিস করতে পারতে তাহলে তো এসব হতো না,,,, তাহলে সোহান ও এভাবে আমাকে ঠকাতো না,,,, (কান্নাস্বরে)
আকিব: কি বলছো তুমি এসব,,,,, ওকে আমি কেন কিস করতে যাব ও কি আমার বউ নাকি
আর তুমি জানো না যে ইসলাম ধর্মে চুমু খাওয়া হারাম,,,,,
আনহা: ওমা 😱😱😱😱 (গালে হাত দিয়ে) আমি তো এসব একদমই জানতাম না,,,, কিন্তু হারাম জেনেও সোহান আর রিধি কেন কিস করলো,,,,
আকিব: আরে ওদের মধ্যে বেশি রোমান্স ভাব এসে গেছে,,,,
আনহা: ধ্যাত,,,,,( হাসি দিয়ে) মাত্র তিন চারদিন ধরে একে অপরকে চেনে এর মধ্যেই প্রেম ভালোবাসা ইত্যাদী হয়ে গেল,,, আর তারপর রোমান্স,,,,,
আকিব: আরে ওরা হয়তো একটু বেশি রোমান্টিক,,,,,(নেশাযুক্ত কন্ঠে)
আনহা: হি হি হি,,,,😁😁😁 বাজে কথা সব,,,, তুমি আর আমি তো কতদিন ধরে একরুমে থাকছি,,,,কই আমাদের তো কোন রোমান্স রোমান্স ফিল হলো না,,,,,
আকিব: তোমার সাথে রোমান্স ফিল হবে কেন তুমি তো আমার ভাবি হও
আনহা: কি 🤨🤨🤨
আকিব: থুড়ি,,,,, তুমি তো আমার ভাবি না,,,,
বউভাবি,,,,, থুক্কু,,,,,,বউ,,,,
আনহা: আসলে আকিব তুমি সত্যি আনরোমান্টিক,,,,, না হলে রিধি তোমাকে ছেড়ে যেত না,,,,,(বলেই আবার বোতলে চুমুক দিল,,,)
আকিব: কি আমি আনরোমান্টিক,,,,(বোতলে এক চুমুক দিয়ে) আমি কিস করতে পারি না
আসো তোমাকে একটা কিস করে দেখাই,,,,,
আকিব আনহার দিকে এগিয়ে যেতেই আনহা আকিবকে হালকা ধাক্কা মারে আকিব নেশায় ঢুলছিল,,,,আনহার ধাক্কায় আকিব আগের জায়গায় বসে পড়ে,,,,,
আনহা: সরো,,,, এমনিতেই আমার কষ্ট হচ্ছে ওনি আবার এসেছে চুমু খেতে,,,সোহান এটা কি করলো আকিব,,,,,এ্যা এ্যা,,,, (কেঁদে উঠলো)
আকিব: প্লিস আনহা তুমি কেঁদো না,,,,, তুমি কাঁদলে আমিও কেঁদে দিব,,,, আমি একটা বাচ্চা ছেলে,,, আমি কাঁদলে কি তোমার ভালো লাগবে,,,, একটা বাচ্চার প্রতি তোমার কি কোন দয়া মায়া নেই,,,,, (মুখ গোমড়া করে)
আনহা: ওলে আমার বাবু সোনামনি কাউয়া,,,
থাক তোকে কাঁদতে হবে না,,,,আয় আমার কাছে আয়,,,, তোকে আমি ঘুম পাড়িয়ে দেই
বলতে বলতে আনহা আকিবকে কাছে টেনে নেয়,,,,,আনহা ওর হাত দিয়ে আকিবের মাথা টেনে ওর ঘাড়ে রেখে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,,,,,,নেশার ঘোরে দুজনে কি করছে কেউ জানে না,,,,আনহা আকিবের সিল্কি চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,,,,,, আর আকিব তা চোখ বুজে অনুভব করছে,,,,,,
আনহা: এই আকিব এভাবে ঘুমাস না,,,,
আকিব: তুমি তো এভাবে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছ,,,
আনহা: ওহহহ,,,,,,এখন ওঠ বিছানায় গিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই তোকে,,,,,
দুজনে টলতে টলতে উঠে,,,, ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না,,,, কোনরকমে ওরা খাটের উপর শুয়ে পড়ল,,,, মদের বোতল গ্লাস ওভাবেই মাটিতে পড়ে আছে,,,,,,আনহা শুয়ে শুয়ে আকিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ল,,,,, আকিব তো আরো আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে,,,,, মদটা বেশি খেয়ে ফেলেছে ওরা,,,,,
পরেরদিন বারোটায় আনহার ঘুম ভাঙল,,,,, নেশার কারণেই দুজনের ঘুম বেশি হয়েছে,,,,,
ঘুম ভেঙ্গে আনহা দেখতে পেল ও আকিবের বুকের মধ্যে,,,,আকিব ও দুহাতে আনহাকে জড়িয়ে ধরেছে,,,,,এটা দেখে আনহা নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়,,,,, কিন্তু নেশার ডোজটা এতোই বেশি ছিল যে আনহা দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে মাটিতে ধপ করে পড়ে যায়,,,, মাথাটা ওর ঘুরছে,,,,, অনেকক্ষণ বসে থেকে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়,,,,, আর কালকে রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করে,,,,,,
আনহা: মাথাটা কেমনে ঝিমঝিম করছে,,,, কালকে রাতে কি হয়েছিল,,,,,,, (মাথায় হাত দিয়ে,,,,,চোখ বারবার পিটপিট করে) ওহ হ্যা মনে পরেছে,,,, কালকে সোহান আর রিধিকে বের করে দেওয়ার পর আমরা মদ খেয়েছিলাম,,,,হা,,,,,😱😱😱😱😱মদ খেয়ে কি করেছিলাম,,,,,, ইশ,,,কেন যে মদ খেতে গেলাম,,,, আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না,,,,আকিব আমার সাথে কিছু,,,,,,
এটা বলে আনহা নিজেকে ভালোকরে দেখতে লাগল,,,,,
আনহা: নাহ শাড়িটা তো ঠিকই আছে,,,, খুব একটা এলোমেলো না ঘুমানোর জন্য একটু এলোমেলো হয়ে গেছে,,,,আকিব কে ভালো করে দেখতে হবে,,,,,
আনহা গিয়ে আকিবের গায়ের চাদর টেনে সরায়,,,,, এতে আকিবের ঘুম ভেঙ্গে যায়,,,,,
আনহা আকিবের প্যান্ট শার্ট ভালো করে হাত দিয়ে টেনে উল্টে পাল্টে দেখতেছে,,,,,
আকিব: ওয়াট কি হয়েছে,,,,, আর আমার টিশার্ট এ হাত দিচ্ছ কেন,,,,,
আনহা:  উফফফ বাবা বাঁচা গেল,,,,,, কিছুই হয়নি,,,, আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,,,,
আকিব: কিছু হয়নি মানে,,,,, কি হয়েছিল,,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ১১

আকিব: কিছু হয়নি মানে,,,, কি হয়েছিল,,,,
(উঠতে উঠতে মাথায় হাত দিল,,,)উফফফ মাথাটা ঘুরছে খুব,,,,,,
তখনই আকিবের চোখ গেল মাটিতে পড়ে থাকা মদ আর গ্লাসের দিকে,,,,আকিব আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়,,,,,,
আকিব: কালকে রাতে,,,,,, এতো ড্রিংকস করেছিলাম,,,,,আনহা তুমি একবার আমাকে বারোন করলে না,,,,
আনহা:আ আমি মানে,,,,
আকিব: আমি মানে কি,,,,,
আনহা: ত তুমি তো মদ খেয়েই গেলে আমি অনেক বারন করেছি কিন্তু আমার কোন কথাই শুনলে না,,,,,,,ইশ আমি যদি এখন বলে দেই যে অতিরিক্ত মদ খাওয়ার কারণে কাল রাতের ঘটনা আমার ও কিছু মনে নেই তাহলে তো আকিব রেগে যাবে তার চেয়ে বরং মিথ্যে বলেই কাটিয়ে দেই,,,, (মনে মনে)
আকিব: ওহ শেট,,,,,
আনহা: আরে আকিব কিছু হবে না,,,, একদিন মদ খেলে কিছু হয় না,,,,,
আকিব: কিছু হয় না কে বলেছে এসব,,,, ভাগ্যিস কিছু হয়নি,,,,
আনহা: কিছু হয়নি মানে,,,,(চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে)
আকিব: তুমি কি জানো নেশার ঘোরে মানুষ কত কিছু করে বসে,,,,
আনহা: কি করে,,,,
আকিব: নেশার ঘোরে মানুষ,,,,,,,,,, ক কিছু না,,,, আমি যাই ফ্রেশ হয়ে নেই,,,,
আনহা: না বলে যাও,,,,,, আকিব,,,,,,
আনহার কোন কথা না শুনে আকিব চলে যায়,,,
আনহা: নেশার ঘোরে মানুষ কি করে 🤔🤔🤔🤔 হুম আনহা এসব ভাবা তোর কাজ না,,
আর শত ভেবেও তুই বের করতে পারবি না,,,
আকিব ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলে আনহা যায় ফ্রেশ হতে,,,,, শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে আনহা,,,,,,পানি ছিটকে এসে আনহার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ভিজিয়ে দিচ্ছে,,,,আনহা
চোখ বন্ধ করে পানির পরশ অনুভব করছে,,,,
আনহা নিজের সব কষ্টকে এই পানির সাথে মিশিয়ে বের করে দিচ্ছে,,,,, অনেক হয়েছে আর ও কষ্ট পাবে না,,,,কেন জানি সোহানের এরকম করায় কষ্ট ওর হচ্ছেও না,,,, তার কারণটাও খুঁজে পাচ্ছে না,,,,, খোঁজার চেষ্টা ও করছে না,,,, লম্বা শাওয়ার নিয়ে আনহা বের হয়,,,, কিন্তু রুমে আকিব কে দেখতে পায় না,,,,,,আনহা রুমের বাইরে চলে আসে,,,,, কটেজের চারপাশে আকিবকে খুঁজতে থাকে
অবশেষে কটেজের পিছনে গিয়ে আকিবের দেখা পায়,,,, বেঞ্চিতে আকিব মনমরা হয়ে বসে আছে,,,,,আনহা গিয়ে আকিবের পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখে,,,,,,
আনহা: কি হয়েছে,,,,মন খারাপ,,,,
আকিব: সেটা তো তুমি ভালো করেই জানো,,,
(নিচের দিকে তাকিয়ে)
আনহা: দেখ আকিব এখন এসব নিয়ে ভাবার সময় না,,,,জাস্ট রিল্যাক্স,,,,,
আকিব: আচ্ছা আমি বুঝতে পারছি না তুমি এতো কিছুর পরেও এতোটা স্বাভাবিক থাকছো কিভাবে,,,, তুমি তো সোহানকে ভালোবাসতে,,,,, ও তোমাকে ধোকা দিল,,,, এরপরও তোমার একটু ও কষ্ট হচ্ছে না,,,,,,How is this possible,,,,,,,???
আনহা: আমার কষ্ট তখন হয়েছিল যখন আমি সোহানকে রিধির সাথে ওইভাবে দেখেছিলাম,,,, আমার ভালোবাসার মানুষ আমাকে এভাবে ঠকালো সেটা ভেবে তখন আমার খুব কষ্ট হয়েছিল,,,,, কিন্তু পরে যখন সোহান আমার সম্পর্কে বাজে কথাগুলো বলল তখন ওর প্রতি আমার সব ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে,,,,,,,ও কিভাবে বলতে পারল আমার চরিত্র খারাপ,,,,, একবছর আমি ওর সাথে সময় কাটিয়েছি,,,, আর তোমার সাথে একমাস,,,, আর দেখ এই একমাসে তুমি আমাকে যতোটা চিনেছো সোহান তার এক ইঞ্চি ও চিনতে পারেনি,,,, আর তার প্রমাণ ওর কালকের ব্যবহার,,,,, কালকের পরে ওর প্রতি আমার ঘৃণা হচ্ছে,,,,,
আকিব একধ্যানে আনহার দিকে তাকিয়ে ওর কথাগুলো শুনছিল,,,,আনহার কথাগুলো আকিবের কাছে খুব ভালো লাগছে,,,,আকিব মুগ্ধ হয়ে আনহার কথা শুনতে লাগলো,,,,,
আনহা: তাই আমি ঠিক করেছি সোহান নামের কালো ঝড়টাকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দেব,,,, দিয়েছি ও,,,, আর ওকে নিয়ে আমি কখনো ভাববো না,,,,,তাই ওই আপদটাকে কাল রাতেই বিদায় করে দিলাম,,,
দেখ আকিব,,,, আমার মতো করে তোমার ও ভাবা উচিৎ,,,, তোমার লাইফে এখনো কিছুই শুরু হয়নি,,,, লেখাপড়া শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তোমাকে,,,,লাইফে তোমার এখন অনেক কিছু করা বাকি,,,,, আর তুমি যদি এখন ছোট একটা ঝড়ে পড়ে যাও তাহলে তুমি আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না,,,,,
রিধি আর সোহান অন্যায় করেছে,,,, ওদের অন্যায়ের প্রতিদান তো আমরা দেব না,,,,চলো  আজ থেকে তুমি নতুন জীবন শুরু কর,,,
নতুন ভাবে নিজেকে তৈরি করো,,,,,দেখো যে থাকে সে হাজার কষ্ট হলেও থাকে,,,, আর যে চলে যায় তাকে হাজার চেষ্টা করেও আটকানো যায় না,,,,,,সো ভূলে যাও সব
আকিব অপলক দৃষ্টিতে আনহার দিকে তাকিয়ে ছিল আনহা আকিবের হাত ধরে পাহাড়ের কিনারায় নিয়ে যায়,,,,, নিজের হাত দুটো প্রসারিত করে চোখ বন্ধ করে ফেলল,,,,
আকিব চেয়ে চেয়ে আনহাকে দেখছে,,,,
আনহা: আকিব আমার মতো হাত দুটো প্রসারিত করে চোখ বন্ধ করে বাতাস অনুভব করো,,,,, দেখবে সব কষ্ট অসহ্যকর যন্ত্রনা গ্লানি এই বাতাস তোমার থেকে শুষে নেবে,,,,
আর তোমাকে ভালোলাগা ভালোবাসা দিয়ে ভরে দেবে,,,,, ঠিক যেমন গাছ আমাদের থেকে ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইড নিয়ে অক্সিজেন ফেরত দেয় ঠিক তেমনি,,,,,,
আনহার কথাবলার মধ্যেই আকিব নিজের হাত দুটো প্রসারিত করে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শান্ত বাতাস অনুভব করতে করতে আনহার কথাগুলো শুনছিল,,,,,আকিব ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে বাতাসের সাথে ওর সব অতীত গুলো মিশিয়ে দূর দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে,,,,বাতাস থেকে শান্তির গ্লানি গুলো টেনে নিচ্ছে,,,,,,এভাবে ওরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে,,,,,আনহা হাত নামিয়ে আকিবকে ডাকলো,,,,,,
আনহা: কি হলো আকিব,,,, কমেছে তোমার,,,,
আনহা আর কিছু বলতে পারল না,,, তার আগেই আকিব আনহাকে জড়িয়ে ধরল,,,,
আনহা তো পুরাই অবাকের গোডাউন হয়ে গেছে,,,, হঠাৎ করে আকিবের কি হলো যে খুশিতে আটখানা হয়ে আনহাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলো,,,,আনহা কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,,,
আকিব: থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ আনহা,,,, আমার লাইফটাকে তুমি আবার আগের মতো করে দিলে,,,,, বিশ্বাস করো এখন আমার রিধির কথা মনে পড়ছে না,,,,,,, ওর জন্য কষ্ট ও হচ্ছে না,,,, আমার লাইফটাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য থ্যাঙ্কস,,,,,,
আনহা: আরে এটা আবার কেমন কথা,,,, থ্যাঙ্কস বলার জন্য জড়িয়ে ধরা লাগে নাকি,,,
শুনেছি বিদেশে নাকি থ্যাঙ্কস বলার সময় জড়িয়ে ধরে,,,, দুঃখ পেলেও জড়িয়ে ধরে,,,,
এই নিয়ম কি বাংলাদেশে চালু হলো,,, নাকি
আকিবই প্রথম চালু করলো,,,, বুঝলাম না কিছু,,,,,আরে কেউ কি আমাকে A to Z পর্যন্ত
সব বোঝাবে,,,,,, (মনে মনে)
হঠাৎ করেই আকিব আনহাকে ছেড়ে দেয়,,,,
একটু লজ্জা পেল আকিব,,,, আনহাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য,,,,,
আকিব: আ,,,ব,,, সরি,,,, আবেগের বশে এটা করেছি,,,, সরি,,,,, (মাথা চুলকাতে চুলকাতে নিচের দিকে তাকিয়ে)
আনহা: ইটস্ ওকে,,,,, এখন চল লাঞ্চ করি,,,
মনটা তো হালকা হয়েছে,,,, এখন চলো,,,
আকিব: ওকে,,,,
আকিব আর আনহা লাঞ্চ করে রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়,,,,, তারপর আনহা আকিবকে জোর করে বাইরে নিয়ে যায়,,,,, 
রাস্তা দিয়ে আনহা আকিব হেঁটে যাচ্ছে যাতে মনটা একটু ভালো হয়,,,
আনহা: আচ্ছা আকিব বাড়ি ফিরব কবে সবাইকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে,,,,,,
আকিব: কাল সকালে রওনা হবো,,,,
আনহা: ওহ আচ্ছা,,,,,,আকিব ওই দোকান থেকে বাদাম কিনে নিয়ে আসো,,,,,, হাঁটতে হাঁটতে বাদাম খাওয়ার মজাই আলাদা,,,,,
আকিব: ঠিক আছে,,,, তুমি এখানে দাঁড়াও,,,,
আকিব গিয়ে বাদাম নিয়ে আসে,,,,,
আনহা: এতো বড় প্যাকেট আর এতো বাদাম খাওয়া অসম্ভব,,,,
আকিব: কি করবো দোকানদার দিলো,,,,
আনহা: আচ্ছা প্যাকেট তোমার হাতে রাখো আমি নিয়ে নিয়ে খাবো,,,,,
আকিব: আমি খাব না,,,,,,
আনহা: আমি ছিলে দিচ্ছি তুমি খেও,,,, ওকে,,,
আকিব: ওকে (মাথা ঝাঁকিয়ে)
আনহা হাঁটতে হাঁটতে বাদাম খাচ্ছে আর আকিবকেও খাওয়াচ্ছে,,,,, হঠাৎ করেই আনহার চোখ পড়ল রাস্তার পাশের একটা নদের উপর,,,,আনহা আকিবকে নিয়ে নদের তীরে গিয়ে বসে,,,,,, পা দুটো নদের পানিতে ডুবিয়ে দিলো,,,,,,সেটা দেখে আকিব নিজের প্যান্ট হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ভাজ করে পা ডুবিয়ে দিলো,,,,, দুজনের মাঝে বাদামের প্যাকেট রেখে দুজনেই খেতে লাগল,,,,,আনহা এবার বাদাম ছিলে ছিলে পানিতে ফেলতে লাগলো,,,
আকিব : এটা কি করছো,,,,,
আনহা: মাছেদের বাদাম খাওয়াচ্ছি,,,,
আকিব: মাছেরা বুঝি বাদাম খায়,,,,( বলেই আকিব হেসে উঠলো) এই প্রথম শুনলাম,,,,
তাও তোমার থেকে,,,,,
আনহা: হুম,,, জুনিয়র দের থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে বুঝলে,,,,,
আনহা আর আকিব বসে বসে গল্প করছে আর একেকটা করে ঢিল ছুড়ছে পানিতে,,,,, সাজেকের সুন্দর বিকেল আর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছেসন্ধ্যায় ওরা কটেজে ফিরে আসে,,,,,, রাতে আনহা সব ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নেয়,,,,,,
পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে দুজনে বাড়ির দিকে রওনা হলো,,,,,,ম্যানেজারের গাড়িতে করে ওরা বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত আসে তারপর বাসে করে চট্টগ্রাম আসে,,,,,, তারপর ওখান থেকে ট্রেন ধরল,,,,, রিমি ওদের বলেছিল ফ্লাইটে আসার কথা কিন্তু আনহা বারন করেছে,,,,ট্রেনে আসবে বলে,,,,, ট্রেন জার্নি ওর খুব ভালো লাগে,,,,,ট্রেনে করে আসার কারণে ওদের ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়,,,,, ক্লান্ত থাকার কারণে আকিবের মা ওদের রুমে পাঠিয়ে দেয়,,,,ফ্রেশ হয়ে দুজনে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়,,,,,
সকাল বেলা ফোনের আওয়াজে আনহার ঘুম ভেঙ্গে যায়,,,,ফোন হাতে নিয়ে দেখল সোহানের ফোন,,,,এটা দেখেই আনহার মেজাজ গরম হয়ে যায়,,,,,, সকাল সকাল মুডের বারোটা বাজিয়ে দিল ফোন রিসিভ করে,,,,,বলল,,,,
আনহা: তোর সাহস তো কম না তুই আমাকে ফোন করেছিস,,,,,
সোহান: দেখ আনহা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,,,,,
আনহা: বাট তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই,,,,,
সোহান: প্লিজ আনহা একবার আমার কথা শোন,,,,
আনহা: না তোমা,,,,,,
আকিব আনহার হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয়
আকিব: মিস্টার সোহান,,,,,অন্যের ওয়াইফকে বিরক্ত করার ফল কি হতে পারে সেটা আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে,,,,সো এরপর যদি দেখি আপনি আনহাকে কল করেন তাহলে কিন্তু ভালো হবে না,,,,,আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন,,,, ওকে বাই,,,
আকিব ফোন কেটে দিল,,,,,,আনহা আকিবের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল এতোক্ষণ,,,,,আকিব ফোন কেটে দেওয়ার পর ওর দিকে ছোট ছোট চোখে তাকায়,,,,
আনহা: তুমি কখন ঘুম থেকে উঠলে,,,,,
আকিব: তুমি যেভাবে চেঁচিয়ে কথা বলছিলে আমি কেন বাড়ির সবার ঘুম ভেঙ্গে গেছে,,,,
আনহা: সোহানকে এসব কি বললে,,,,
আকিব: তোমাকে হেল্প করলাম,,,, সোহান আর তোমাকে বিরক্ত করবে না,,,,
আনহা আকিবের হাতে একটা চিমটি কেটে চলে গেল ফ্রেশ হতে,,,,,
আকিব: আউচচ বাবা,,,, কি রামচিমটি দিলো রে,,, ওকে আমার ও সময় আসবে,,,,,, (ব্যথা স্থানে হাত বুলাতে বুলাতে)
আনহা তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে দেখে দেখে আকিব বিছানায় বসে আছে,,,,,, আর হাত ডলছে,,,,,,
আনহা: হোয়াট হ্যাপেন্ড আকি,,,,,,ব,,,,,
আকিব: নট হ্যাপেন্ড,,,,, শুধু একটা রামচিমটি খেয়েছি,,,,,তাও আবার এক শাকচুন্নীর হাতে
আনহা: কি আমি শাকচুন্নী,,,,, (কটমট করে তাকিয়ে)
আকিব: আমি কি সেটা বলেছি,,,,
আনহা: তুমি তো সেটাই বললে,,,,,
আকিব: না,,, আমি বলিনি,,,,,
আনহা: তুমি বলেছ,,,,, চেঁচিয়ে,,,,
আকিব: এইতো শাকচুন্নীর রুপ ধারণ করে দিয়েছে,,,, আমি এখন কোথায় লুকাই,,,,,,
আনহা: আকি,,,,,ব,,,,
হাতের তোয়ালেটা আকিব মুখের উপর ছুড়ে মেরে রুম থেকে বেরিয়ে যায়,,,,,,আকিব হাসতে হাসতে তোয়ালে টা সরিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়,,,,,,তারপর নিচে আসে ব্রেকফাস্ট করতে,,,,আনহা সবাইকে খেতে দিচ্ছে,,,,,,
রিমি আর ওর মা বসে বসে খাচ্ছে,,,,, আকিবকে দেখে রিমি বলে উঠলো,,,,,,
রিমি: কি রে আকিব কেমন কাটলো,,,,, তোদের হানিমুন,,,,,
রিমির কথায় আনহা আর আকিব দুজনের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো,,,,
রিমি: এই কথা কানে যাচ্ছে না তোর,,,,
আকিব: আপু ছাড়ো তো এইসব,,,, তানভীর ভাইয়া কোথায়,,,,,,
রিমি: বাবার সাথে অফিসে গেছে,,,রাকিব ভাইয়া তো নেই,,,,বাবা একা সামলাবে কিভাবে আর তুই তো তুইই,,,,,
আকিব: আমি মানে,,,, এখন আমার দোষ কোথা থেকে আসল,,,,,পড়ালেখা শেষ হাওয়ার আগেই তো বিয়ে করিয়ে দিলে,,,,, আর এখন দোষ আমার হলো,,,,,
রিমি: এই গাধা আমি তোকে কিছু বলেছি নাকি,,,
আকিব: তোমার কথাতেই বোঝা যায় তুমি কি বলতে চেয়েছ,,,,,
রিমি: দেখ আকিব,,,,
মা: আহ হচ্ছে কি এসব,,,,তোরা চুপ করবি,,,,
খাওয়ার সময় এতো কথা বলে না,,,,
তিনদিন পর আকিব ভার্সিটিতে যায় কিন্তু আনহা যায় না,,,, শুধু নতুন নতুন অজুহাত দেখায়,,,,আকিব তাই একাই চলে যায়,,,,,
আনহা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে,,,,, হঠাৎ করে প্লাজুতে পা পেঁচিয়ে নিচে পড়ে যায় মাথায় হালকা আঘাত পাওয়ায় অজ্ঞান হয়ে যায়,,,,,
রিমি সোফায় বসে টিভি দেখছিল,,,,ও দৌড়ে আসে,,,,আকিবের মা ও এসে আনহাকে নিয়ে
সোফায় শুইয়ে দেয়,,,, মুখের উপর পানির ছিটা কয়েকবার দেওয়ার পর আনহার জ্ঞান ফেরে,,,,,,,
মা: আনহা কি হয়েছিল তোমার,,,, পড়ে গেলে কিভাবে,,,,
আনহা: এখন কি বলি,,,,,যদি বলি প্লাজোতে আটকে পড়ে গিয়েছি তাহলে এতো গুলো বকা দিবে,,,, (মনে মনে) আ আসলে হঠাৎ মাথা ঘুরে গিয়েছিল,,,,,,
রিমি: ওহ,,,,,, মাথা ঘুরালে তেঁতুল খেলে মাথা ঘোরানো কমে,,,,,ওয়েট আমি নিয়ে আসছি,,,
রিমি আনহাকে তেঁতুল এনে দিল,,,,,আনহা তেঁতুল একটু মুখে দিয়েই ওয়াক ওয়াক করতে করতে বাথরুমে গিয়ে বমি করে দিল অন্যসব মেয়েদের মতো ও তেঁতুল একদম খেতে পারে না তাই বমি করে দিলো,,,,,
আনহার এহেম কান্ডে আকিবের মা রিমি কিছু একটা সন্দেহ করলো,,,,,রিমি ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলো,,,,,
!
!
!
!
!
‍!
!
!
দুপুরে আকিব ভার্সিটি থেকে বাড়ি আসতেই আনহা গিয়ে চেপে ধরে,,,,
আনহা: আকিব তোমার বাড়ির লোকেদের মাথায় গন্ডগোল আছে সেটা আগে বলোনি কেন,,,,,
আকিব: মানে,,,, কি বলছো কিছুই বুঝতে পারছি না তোমার কথা,,,,
আনহা: সকালে একটু মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম,,,, আর ওনারা উল্টাপাল্টা ভেবে
ডক্টরের কাছে নিয়ে গেল,,,,
আকিব: ঠিকই তো করেছে,,,, অসুস্থ হলে তো ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবে,,,,, এতে মাথা খারাপের কি হলো,,,,
আনহা: আরে আমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করিয়েছে,,,,
আকিব: কি,,,,,,,,,,,,,
আনহা: আজ্ঞে হ্যাঁ,,,,,, এখন কি করব,,,, বিকেলে রিপোর্ট আনতে ডক্টরের কাছে যেতে হবে,,,, এখন কি করব,,,,
আকিব: কি করবে মানে,,,,,চাপ নিও না,,,,
নেগেটিভই তো আসবে,,,,,
আনহা: কিন্তু যদি,,,,,
আকিব: যদি কি,,,,, তোমার কি কোন সন্দেহ আছে নাকি,,,,,
আনহা: আকিব তুমিও,,,,,
আকিব: ওকে রিল্যাক্স,,,, কিছু হবে না দেখো
আকিব ফ্রেশ হতে চলে যায়,,,,,
বিকেল বেলা,,,,,
ডক্টরের চেম্বারে আনহা আকিব রিমি তানভীর
বসে আছে,,,,,
রিমি: ডক্টর রিপোর্ট এ কি এসেছে,,,,,
ডক্টর একজনকে কল করে বলল আনহার রিপোর্ট দিয়ে যেতে,,,, আনহার রিতিমত অস্বস্তি লাগছে না জানি কি আসে রিপোর্টে,,,,
এমন সময় একজন এসে রিপোর্ট দিয়ে যায় ডক্টর সেটা নিয়ে চেক করছে,,,
আকিব আর আনহা ডক্টরের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,দুজনেই অস্থির হয়ে গেছে,,,,,
রিমি: ডক্টর কি আছে রিপোর্টে,,,,,
ডক্টর: Congratulations মিস্টার আকিব,,,,
আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট,,,,, আপনি বাবা হতে চলেছেন,,,,,,
ডক্টরের কথায় আনহা আর আকিব বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়,,,,,এটা কি করে সম্ভব আনহা প্রেগন্যান্ট,,,, How is this possible???

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ১২

আকিব আর আনহা থতমত খেয়ে যায়,,,,এটা কিভাবে সম্ভব আনহা প্রেগন্যান্ট,,,,, আকিব আর আনহা বোকার মত ডক্টরের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,রিমি আর তানভীর ও বুঝতে পারল না ওদের দুজনের কি হয়েছে,,,,
আকিব: ওয়াট,,,,,এটা কিভাবে সম্ভব,,,, আনহা,,,,,, (আনহার দিকে তাকিয়ে)
আনহা: I don't know আকিব,,,,,এটা হতেই পারে না,,,,,
তানভীর: আকিব আনহা তোমাদের কি হয়েছে,,,,এত খুশির একটা সংবাদ আর তোমাদের মুখগুলো এরকম কালো হলো কেন
রিমি: সত্যি তো,,,,,এই আকিব কি হলো তোর
এরকম কেন করছিস,,,,,এই ছাগল,,,কথা বলছিস না কেন,,,,,
আনহা আকিবের হাত ধরে টেনে চেম্বারের বাইরে নিয়ে এলো,,,,,
আনহা: What is this আকিব সত্যি করে বলো এসব কিভাবে হলো,,,,
আকিব: আশ্চর্য তো,,,, আমি কিভাবে জানবো,,,,, তুমি বলো তুমি কিভাবে প্রেগন্যান্ট হলে,,,,,
আনহা: আমি কিভাবে জানবো,,,, সত্যি করে বলো মদ খেয়ে তুমি কি করেছিলে,,,,,
আকিব: হা😳😳😳 আমি কি করে জানবো ওই রাতে কি হয়েছিল,,,, আমি তো অতিরিক্ত ড্রিংকস করার কারণে কিছুই মনে করতে পারছি না,,,, কিন্তু তুমি তো কম মদ খেয়েছিলে,,,,,
আনহা: না আমি ও অনেক মদ খেয়েছিলাম,,, আমারও কিছু মনে নেই,,,,,
আকিব: ওয়াট,,,, তাহলে তুমি সেদিন মিথ্যে বলেছিলে,,,,,
আনহা: হুম,,,,,(কান্নাস্বরে)
আকিব: ওহ শেট,,,, এখন কি করি,,,,,
ওদের কথার মধ্যেই পাশের কেবিন থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসতে লাগলো,,, কিন্তু আনহা আকিব সেদিকে খেয়াল করল না দুজনেই চিন্তায় মগ্ন,,,,, চেঁচামেচির আওয়াজ টা বেড়ে গেল,,,,, একারণে তানভীর রিমি ডক্টর বেরিয়ে আসে,,,,,,এবং ওই কেবিনে যায় আনহা ও আকিবও সাথে সাথে যায়,,,,,
ওই কেবিনে একটা লোক ডক্টরের সাথে ঝামেলা শুরু করেছে,,,আর ওনার স্ত্রী চেয়ারে
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,,,,,
ডক্টর: কি ব্যাপার হয়েছে কি এতো চেঁচামেচি করছেন কেন,,,,,
অন্য ডক্টর কিছু বলতে যাবে তার আগেই লোকটা বলে উঠলো,,,,,
__ আরে ডক্টর সাহেব,,,, আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট
পাঁচ মাস চলতেছে,,,, সকালে এসে টেস্ট করিয়েছিলাম যে বাচ্চা সুস্থ আছে কি না তা জানার জন্য,,,,, কিন্তু এখন রিপোর্টে লেখা
নেগেটিভ,,,,, আমার বউ কি প্রেগন্যান্ট নয়
তাহলে কি আমার বউয়ের পেটে কি আছে,,,,
এতো বড় টিউমার,,,,, (হাত দিয়ে দেখিয়ে)
ডক্টর: ওকে আমি ওনার রিপোর্ট দেখছি,,,,
বলে ডক্টর রিপোর্টটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ভালো করে দেখলো,,,,,
ডক্টর: এই স্পষ্ট লেখা,,, মিসেস আনহা আদনান,,,, রিপোর্ট নেগেটিভ,,,,,
ডক্টরের কথায় উপস্থিত সবাই অবাক,,,,,
__ আরে কি বলছেন আমার বউ এর নাম আনহা খানম,,,,,
আনহা: ওয়েট ওয়েট,,,, আমি মিসেস আনহা আদনান,,,,, তার মানে ওনার রিপোর্টের সাথে আমার রিপোর্ট বদলে গেছে,,,,,,, এটাই আমার রিপোর্ট,,,, নেগেটিভ এসেছে,,,
রিমি: ডক্টর এমন হলো কেন,,,,
ডক্টর: আই থিংক,,,, দুজনের নাম এক থাকার কারণে গন্ডগোল টা হয়েছে,,,, আর আমি তখন মিসেস আদনানের রিপোর্ট টা ঠিক করে দেখেনি,,,,শুধু পজেটিভ টাই দেখেছিলাম,,,,,
তানভীর: আমার খুশিটাই মাটি হয়ে গেল,,,,,
রিমি: আমি তো এখনই মাকে ফোন করতে যাচ্ছিলাম,,,,ধুর,,,,,
রিমি আর তানভীরের মন খারাপ হয়ে যায়
আনহা আর আকিব এতোক্ষণে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো,,,, এতোক্ষণ বড়সড় একটা সাইক্লোন ঝড় হচ্ছিলো ওদের মনে,,,,দুজনেই দুজনকে উল্টাপাল্টা কথা বলছিল,,,, এখন সবটা পরিষ্কার হয়ে গেছে সবার কাছে,,,,,
চারজনে মিলে বাড়িতে আসে,,,,, আকিব আর আনহা সোজা রুমে চলে গেল,,,,, আর রিমি ওর মায়ের কাছে সবকিছু বলে,,,,,
আনহা আর আকিব খাটের উপর পাশাপাশি বসে আছে,,,, দুজনেরই বারবার একটু আগের ঘটনা চোখের সামনে ভাসছে,,,ভুলতে পারছে না,,,,আকিব আনহা চুপ করে বসে আছে কেউ কারো সাথে কথা বলছে না,,,,
এমন সময় আকিবের ফোন আসে,,,,আকিব তাকিয়ে দেখে রিধির ফোন,,,,,আনহাও উঁকি দিল আকিবের ফোনে,,,,রিধির নামটা দেখেই ছো মেরে আকিবের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে যায়,,,,,
আকিব: এটা কি করলে,,,,,,
আনহা: আমি কথা বলব,,,, তুমি আমাকে হেল্প করেছিলে এবার আমার পালা,,,, আমি আবার ঋণ রাখি না,,,,,
আকিব কিছু বলল না,,,,আনহা ফোন রিসিভ করেতেই রিধি বলতে শুরু করল,,,,,
রিধি: আকিব,,,,,,,, সরি,,,,দেখো আমার একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ড হয়ে গেছে,,,,প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও,,,, তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে,,,, কালকে আমার সাথে দেখা করো প্লিজ,,,,,
আনহা: এই মিস বারোভাতারি Max pro তোমার এই মিষ্টি কথায় আকিব আর ভুলছে না,,,,ওকে,,,, তুমি তোমার ওই নতুন নাগর নিয়েই দোল খাও ঠিক আছে,,,,,
রিধি: আনহা তুমি,,,,ফোনটা আকিবকে দাও ওর সাথে আমার কথা আছে,,, আর সেটা তোমাকে বলা যাবেনা,,,,
আনহা: বলা যাবেনা মানে তুমি তো অলরেডি বলেই দিয়েছো,,,,, শোন মিস রিধি অন্যের হাজবেন্ডকে বিরক্ত করার ফল কি হতে পারে সেটা তোমার নিশ্চয়ই জানা আছে,,,,সো এরপর যদি দেখি তুমি আকিবকে কল করো তাহলে কিন্তু ভালো হবে না,,,,,আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছ,,,, ওকে বাই,,,
আনহা ফোন কেটে দিল,,,,আকিব হা হয়ে এতক্ষণ আনহার কথাগুলো শুনছিল,,,,, আর ওর সব অদ্ভুত গালি গুলো শুনে আকিব আরো অবাক হয়,,,,,,
আনহা: নাও তোমার ফোন,,,,,
আকিব: এসব কি বললে তুমি,,,, বারোভা,,,,
ছিঃ ছিঃ আমি এসব বলছি কেন,,,,, আর শেষে আমার দেওয়া ডায়লগটাই দিলে তুমি,,,
আনহা: বলেছিলাম না আমি ঋণ রাখি না,,,,,
তোমার ডায়লগ দিয়েই শোধ করলাম,,,,
আকিব: আই হ্যাভ এ কোয়েশ্চেন,,,,, বারোভাতারি মানে কি,,,,,,,
আনহা: হা,,,,,,,এটা জানো না,,,,,
আকিব: উহু,,,,,
আনহা: বলো কি সারা দুনিয়ার মানুষ জানে
ফিটার খাওয়া বাচ্চা ও জানে আর তুমি জানো না,,,,,
আকিব: এতো কথা বাদ দিয়ে বলো না এর মানে কি,,,,,
আনহা: এই রে এখন একে কি বলি,,,,, (মনে মনে) আ,,,, কি,,,,ব বারোভাতারি মানে হচ্ছে যে সকালের ভাত বারোটার পরে খায় তাকে বলে বারোভাতারি,,,,,,
আকিব: ওহ,,,,, কিন্তু,,,,,রিধি তো ব্রেকফাস্ট সকাল আটটার মধ্যে সেরে ফেলে,,,,, আর,,,
আকিবের কথা না শোনার ভান করে আনহা দ্রুত পায়ে নিচে চলে আসে,,,,,
আনহা: উফফফ বাবা বাঁচা গেল,,, না হলে এই আকিব প্রশ্ন করে করে আমার মাথা খেয়ে দিতো,,,,,,
কিন্তু আনহা নিচে আসতেই রিমি ওকে জাপটে ধরে,,,,,
রিমি: দাঁড়াও আনহা,,,,ডক্টরের কথায় তখন তুমি অমন করছিলে কেন,,,,,
আনহা: ক কেমন,,,,
রিমি: তোমার মুখ দেখে তখন মনে হচ্ছিল তুমি চাও না তোমার বেবি হোক,,,, আচ্ছা একটা কথা বলোতো তুমি কি আকিবের সাথে সংসার করতে চাও না,,,,যদি তাই হয় তাহলে বিয়েতে রাজি হয়েছিলে কেন,,,, তখনই না করে দিতে,,,,,
আনহা: এমা না,,,,, এসব কি বলছেন আপু আপনি,,,,,
রিমি: তাহলে রিপোর্টে পজেটিভ কথাটি শুনে তোমার মুখটা এমন হয়ে গেল কেন,,,,,
আনহা: আপু আবার গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিয়েছে এখন কী বলি,,,,( মনে মনে)
রিমি: কি হলো,,,,বলো,,,,
আনহা: আসলে আপু আমি আর আকিব চাইনা এতো তাড়াতাড়ি বেবি নিতে আসলে আকিবের তো এখনও পড়াশোনা শেষ হয়নি
আরও পাঁচ মাস পরে আকিবের পরীক্ষা,,,,
তাই এখন বেবির কথা আমরা ভাবছি না,,,,
সেকারণেই,,,, ডক্টরের মুখে পজেটিভ কথা শুনে আমি আর আকিব একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম,,,,,ওই আরকি,,,,,
রিমি: ওহ তাহলে এই কথা,,,, আগে বলবে তো
ঠিক আছে,,,, তোমরা না হয় একবছর পর বেবি নিলে,,,,যাক বাবা তোমাদের দুজনকে একসাথে করা গেছে শেষমেশ,,,, আমি যাই,,,
রিমি চলে যায়,,,,আনহা বুকে হাত দিয়ে বড় একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো,,,,
আনহা: উফফফ বাবা বুলবুল ঝড়ের থেকে রক্ষা পেলাম,,,,এই বাড়ির সবারই এক প্রবলেম,,,, রুমে আকিব বাইরে রিমি আপু ও আল্লাহ আমি এখন কোথায় যাই,,,,, আপাতত রান্না ঘরে যাই,,,,,,,
আনহা রান্নাঘরে গিয়ে খাবার এনে টেবিলে সাজিয়ে রাখে,,,,সব ঠিকঠাক করতে করতে সবাই খেতে চলে আসে,,,,,শুধু আকিব বাদে,,,
রিমি: ওই দেখ আকিব এখনও আসেনি কালকে আমি চলে যাব আজকে একটু সবার সাথে একসাথে ডিনার করব,,,,,
আনহা: ওকে আপু আমি আকিবকে ডেকে আনছি,,,,,
আনহা রুমে গিয়ে দেখে আকিব রুমের মধ্যে পায়চারী করতাছে,,,,,
আনহা: আকিব খেতে চলো,,,,,
আকিব: না আমি খাবো না,,,,, আমাকে এক কাপ কফি দিলেই হবে,,,,
আনহা: খেতে চলো না হলে রিমি আপু এসে গরম কফি মুখের মধ্যে ঢেলে দিবে,,,,,
আকিব: উফফ,,,,, জ্বালা যন্ত্রনার শেষ নাই,,,
চলো আমি আসছি,,,,
আনহার সাথে আকিব ডিনার করতে আসে এসেই ওর মায়ের পাশে বসে পড়ল,,,, আর ওর মা ওকে খাইয়ে দিল,,,,
আনহা বিছানা গুছিয়ে ঘুমানোর জন্য তৈরি হচ্ছে,,,,, ওদের দুজনের মাঝে একটা বালিশ দিলো,,,,
আকিব: বালিশ দেওয়ার কোন দরকার নেই
আমি আগের মত গড়াগড়ি করি না,,,,
আনহা: ওহ সত্যি,,,,,
আকিব: হুম,,,,এই আরিয়ান আদনান আকিব এখন আর আগের মত নেই পুরোটাই তুমি বদলে দিয়েছো,,,,,
আনহা: 🤨🤨🤨🤨
আকিব: আমি কি কিছু ভুল বলেছি,,,,,
আনহা: না তো আন্নে সবসময় হক কথা কন
এনহ ঘুমাই,,,,
আকিব: ওকে,,,,, (হেসে)
পরের দিন আনহা আকিবের সাথে ভার্সিটিতে যায়,,,, অনেক দিন পর আনহা ভার্সিটিতে আসলো,,,,,বাইক থেকে নেমে আনহা দ্রুত পায়ে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যায়,,,,,
আকিব: হলো টা কি,,,,, এভাবে যাচ্ছে কেন আনহা,,,,
আকিব বাইক পার্ক করে নিজের ক্লাসে চলে যায়,,,,,
আনহা আজকে ক্লাস করে না,,,,, মারিয়াকে নিয়ে ক্যান্টিনে বসে থাকে,,,,ওর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো শেয়ার করে,,,,
মারিয়া: দেখ আনহা,,,, আমার কথাগুলো তুই কিভাবে নিবি সেটা আমি জানি না,,,, তবুও বলছি,,,, তুই আকিবকে মেনে নে,,,,,আকিব সত্যি ভালো একটা ছেলে,,,,ওর সাথে থাকলে তুই সারাজীবন ভালো থাকবি,,,,, এখন তুই ভেবে দেখ যে তুই কি করবি,,,,,
আনহা চুপ করে আছে,,,, কিছু বলছে ও না,,,
মারিয়া: কি হলো কিছু তো বল,,,,
আনহা: বাদ দে এসব,,চল বাইরে কোন রেস্টুরেন্টে যাই এই ক্যান্টিনের খাবার ভালো লাগে না,,,,,
মারিয়া: কিন্তু আকিব,,,,,
আনহা: আরে ধুর,,,,আকিবের ক্লাস শেষ হতে অনেক দেরি,,,, আর ওকে পরে কল করে দিব
এখন চল,,,,,
আনহা মারিয়াকে নিয়ে ভার্সিটির পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে গেল,,,,,দুজনে খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আছে,,,, হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন সোহান এসে একটা চেয়ার টেনে ওদের পাশে বসে,,,,,সোহানকে দেখে আনহা চমকে যায়,,,,
আনহা: তুমি এখানে,,,,
সোহান: তোমার সাথে আমার কথা আছে,,,,
আনহা: কিন্তু আমার কোন কথা নেই তুমি এখান থেকে যাও,,,,
সোহান: প্লিজ আনহা,,,,
মারিয়া: এই আপনি এতো ছেসরা কেন,,,, আনহা আপনার সাথে কথা বলবে না,,,,
সোহান: জাস্ট শাট আপ,,,, তুমি এখান থেকে যাও,,,,
আনহা: মারিয়া তুই চুপ কর,,,বলো কি বলবে
মারিয়া: আনহা তুই কিন্তু খুব ভুল করছিস,,,,,
আনহা: তুই যা,,,
মারিয়া ওখান থেকে একটু দূরে সরে বসে,,,,
সোহান: আনহা,,, সরি,,,, তোমার সাথে আমি অন্যায় করেছি,,,, তুমি ঠিকই বলেছ রিধি ভালো না,,,,ও আমার সাথে ও ছলনা করেছে
আনহা: ওহ তাই,,, কি করেছে,,,ও,,,
সোহান: রিধি চেয়েছিল আমার সাথে টাইম পাস করতে,,,,,,আকিবকে বিয়ে করতে চায় কারণ আকিব বড় ঘরের ছেলে,,, আর আমি সামান্য একটা ঘরের ছেলে,,,, আমাকে রিধি ঠকিয়েছে,,,, আমি কিভাবে যে ওর ফাঁদে পা দিলাম আমি নিজেও জানি না,,,,
আনহা: এখন বুঝতে পারছো তো,,,, তুমি যখন আমাকে ঠকিয়েছিলে তখন আমার ও এরকম লেগেছিল,,,, কিন্তু এখন আমি হ্যাপি কারণ তোমার মতো একটা ছেলেকে আমার লাইফ থেকে আউট করতে পেরেছি,,,,,
সোহান: প্লিজ আনহা,,,,, আমি মোহে পড়ে এসব করেছি,,,,আই লাভ ইউ,,,,, আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই,,,,,
আনহা: কিন্তু আমি চাইনা,,,,ফেলনা জিনিস মানুষ ময়লার ঝুড়ি থেকে তুলে এনে কখনোই ব্যবহার করে না,,,,তাই তোমাকে ও আমি আমার লাইফে আর আসতে দেব না,,,,
সোহান: কিন্তু তুমি তো আকিবকে ভালোবাস না,,,,ওর সাথে সারাজীবন কাটাবে কিভাবে,,,
আনহা: হ্যা,,,, এটা সত্য যে আমি আকিবকে ভালোবাসি না,,, কিন্তু,,,,
আনহার চোখ ঘোরাতেই সামনে আকিবকে দেখতে পেল,,,, ওদের শেষ কথাগুলো আকিব শুনে ফেলল,,,,,,, কিন্তু ওই কথাগুলো আকিব ঠিক মেনে নিতে পারেনি,,,,ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,,,,আনহা উঠে গিয়ে আকিবের কাছে যায়,,,,
আনহা: আকিব তুমি এখানে,,,,
আকিব: আমার ক্লাস শেষ,,,,,, তুমি কি আমার সাথে বাড়িতে যাবে নাকি সোহান তোমাকে পৌঁছে দেবে,,,,
আকিবের এরকম কথায় আনহা হতভম্ব হয়ে যায়,,,,
আকিব: আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করছি
(জোরে বলল)
আনহা: আমি তোমার সাথে যাবো,,,,,
আকিব গিয়ে বাইকে ওঠে আনহাও পিছু পিছু বাইকে ওঠে,,,,,আকিব বাইক চালাচ্ছে,,,,
আজকে বাইকের স্প্রিড দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে,,,,আনহা ভয়ে আকিবকে শক্ত করে ধরে,,,,, আকিবের এমনটা করার কারণ আনহা খুঁজে পাচ্ছে না,,, তাহলে কি আকিব আনহার উপর রাগ করলো সোহানের সাথে দেখে,,,,, নাকি অন্য কিছু,,,,এসব ভাবতে ভাবতেই আকিব জোরে ব্রেক করে,,,,আনহা
একটু ঝুঁকে পড়ে আকিবের,,,,,আনহা বাইক থেকে নেমে যায়,,,,,
আনহা: কি হয়েছে আকিব এভাবে কেউ বাইক চালায়,,,,জানো আমার ভয় লাগছিল
উঠবো না তোমার বাইকে,,,,হুহ,,,,
আনহা বাড়ির ভেতরে চলে,,,,,,
আকিব: এটা কি হলো রাগ করলাম আমি কোথায় আমার রাগ ভাঙাবে তা না করে উল্টে আমার উপর রাগ দেখিয়ে চলে গেল
আজব তো,,,, আর আমার রাগে ওর কি আসে যায়,,,, আমি কে ওর,,,, হাজব্যান্ড,,,, সেটা নাম মাত্র,,,,
আকিব বাইক রেখে বাড়ির ভিতরে যায়,,,, রুমে না গিয়ে সোফায় বসে টিভি অন করে দেয়,,,,,,
মা: কি রে আকিব,,,,ফ্রেশ না হয়ে এখানে বসে পড়লি কেন,,,,,
আকিব: না মানে টায়ার্ড লাগছে খুব,,,,,
মা: রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে দেখবি ভালো লাগবে,,,,যা,,,,
আকিব মায়ের কথায় রুমে চলে আসে,,,,
রাতে,,,,,,,
আকিব টেবিলে বসে বসে পড়তাছে,,, এমন সময় আনহা আসল,,,,,,,
আনহা: আকিব খেতে চলো,,,,
আকিব:,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আনহা: কি হলো আকিব,,,,,,
আকিব:,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আনহা আকিবের হাত থেকে বইটা টান দিয়ে নিয়ে যায়,,,,, তারপরও আকিব চুপ করেই আছে,,,,
আনহা: আচ্ছা আকিব তোমার হয়েছে কি একটু বলবে কথা বলছ না কেন,,,,,
আকিব: আমার বইটা দাও
আনহা: না দেব না,,, আগে বলো কি হয়েছে তোমার,,,,হুম

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ১৩

আকিব: আমার কিছু হয়নি,,,,,
আনহা: কিছু তো একটা হয়েছে,,,, ভার্সিটি থেকে ফেরার পর থেকে দেখছি তুমি আমাকে ইগনোর করছো,,,,কারণটা কি হুম,,,,
আকিব: ইগনোর তোমাকে,,,,তাও আমি,,,,
হুহ (একটু হেসে) তোমাকে ইগনোর করতে যাব কোন সুখে,,,, আর তুমি তো আমার কে হও যে তোমাকে ইগনোর করব,,,, ওপস সরি
তুমি তো আমার বউ নামমাত্র,,,,যাক গে এত কথা বলার সময় নয় এখন,,,, সামনে আমার পরীক্ষা এটা নিশ্চয়ই জানো তাই আমাকে পড়তে হবে,,,,সো ডোন্ট ডিস্টাব মি ওকে,,,,
আকিব আনহার হাত থেকে বইটা নিয়ে আবার পড়তে বসে,,,,আনহা আকিবের কথায় থ হয়ে যায়,,,,এ কোন আকিবকে দেখছে ও,,,, এরকম ব্যবহার করছে কেন আকিব,,,,, তার কারণটা কি সোহান,,,,, না তা কেন হতে যাবে,,,, আর তাছাড়া সোহানকে তো আনহা দেখতে পারে না সেটা আকিব ভালো করে জানে,,,, তাহলে কেন আকিব এমন করছে,,,,,,যদি কারণটা সোহান হয় তাহলে একবার আনহাকে জিজ্ঞেস করতে পারত,,,,,,আনহা এসব ভাবতে ভাবতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে,,,,,,
আকিব টেবিলে বই সামনে নিয়ে বসে আছে
সোহানকে বলা কথাগুলো ওর কানে বাজতেছে,,,,আনহা আকিবকে ভালোবাসে না এই কথাটা ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না
কিন্তু কেন,,,,কেন ও আনহার কথাগুলো ওর কাছে খারাপ লাগছে,,,,,আনহা ওকে ভালো না বাসলে তাতে আকিবের কি আসে যায়,,,,
কিন্তু তারপরও আকিবের কেমন যেন অস্থির লাগছে আনহার কথায়,,,, খুব রাগ হচ্ছে,,,,
এসব ভাবতে ভাবতে আকিবের অনেক রাত হয়ে যায় অথচ বই এর এক অক্ষর ও পড়েনি
পড়তে মন চাইছে না,,,, শুধু বই খুলে হাতে একটা কলম নিয়ে বসে আছে,,,, একটু পর পর বইয়ে দাগ দিচ্ছে আর বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে,,,,,আকিব টেবিলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে,,,,,
সকালে আনহার আগেই আকিবের ঘুম ভেঙ্গে যায়,,,,,ফ্রেশ হয়ে আকিব বাইরে হাঁটতে বের হয়ে যায়,,,,আনহা ঘুম থেকে উঠে আকিবকে দেখতে পায় না,,,,আনহা ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে খাবার রেডি করতে করেতেই আকিব চলে আসল,,,,আনহা আকিবের দিকে তাকালো কিন্তু আকিব আনহাকে না দেখার ভান করে উপরে চলে গেল,,,,যেটা আনহার ইগোতে লাগলো,,,,,আনহার এখন আকিবের উপর ভিশন রাগ হচ্ছে,,,, ইচ্ছে করছে গিয়ে ওকে আস্ত চিবিয়ে খেতে,,,,স্টুপিড একটা,,,, খাবার রেডি করে আনহা উপরে রুমের দিকে যেতে লাগলো,,,,আকিব ও তখন নিচে আসছিলো
আনহাকে এমনভাবে ক্রস করল মনে হয় ওকে চেনেই না,,,,আনহার এবার ইচ্ছে করছে লাথি মেরে আকিবকে ফেলে দিতে,,, কিন্তু সেটা ও পারবে না,,,,,আনহা রাগে গজরাতে
গজরাতে রেডি হতে চলে যায়,,,, রেডি হয়ে এসে দেখে আকিব টেবিলে বসে খাচ্ছে,,, আর ওর শাশুড়ি খাবার সার্ভ করছে,,,,,আনহাকে
ডেকে খেতে বসাল,,,, খাওয়া শেষ করে আকিব ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল
আনহা ও ছুটল পিছু পিছু,,,,,
ভার্সিটির সামনে এসে বাইক থামায় আকিব,,,
আনহা নেমে পড়ে,,,, একটু এগোতেই আকিব আনহাকে ডাকল,,,,,
আকিব: Excuse me 
আনহা ভ্রু কুঁচকে আকিবের দিকে তাকায়
আকিব: আপনার কি আজকে এক্সট্রা ক্লাস আছে,,,,
আনহা: মানে,,,,,
আকিব: তাহলে আমি ওয়েট করবো,,, আপনাকে ছাড়া বাড়ি ফিরলে আমাকে তো উওম মাধ্যম খেতে হবে,,,, আর মা তো জানে না আপনি ভার্সিটির ক্লাস ছেড়ে রেস্টুরেন্টে এক্সট্রা ক্লাস করতে যান,,,,,
আনহা: দেখ আকিব তুমি কিন্তু,,,,
আনহা কিছু বলার আগেই আকিব হাত দিয়ে শার্ট টানতে টানতে চলে গেল,,,,
আনহা তো রাগে অগ্নেগিরির লাভার মতো টগবগ করে ফুটছে,,,,ক্লাসের দিকে হনহন করে এগিয়ে যাচ্ছে,,,, তখনই মারিয়ার সাথে ধাক্কা খায়,,,,,
মারিয়া: উফফ বাবা,,, এভাবে কেউ হাটে আনহা,,,, কি ব্যথা পেলাম,,,,
আনহা মারিয়াকে কিছু না বলে ক্লাসে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ল,,,,, মারিয়া ভাব খারাপ দেখে আনহার কাছে যায়,,,,,আনহার পাশে বসে,,,,,
মারিয়া: কি রে আনহা এতো গরম কেন,,,,
আনহা: কিছু না,,,,,
মারিয়া: আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোর গা থেকে আগুনের আঁচ আসছে,,,,,
আনহা: বাজে বকিস না তো যা এখান থেকে
মারিয়া: না আমাকে সব বল কি হয়েছে,,, আর চল বাইরে গিয়ে কথা বলি,,,,,
আনহা: কেন ক্লাস করবি না,,,,,
মারিয়া: আরে টাকলু আজকে আসেনি,,, ওনার নাতনির অন্নপ্রাশন আজকে সেখানে গিয়েছে সো আজকের ক্লাস অফ চল,,,,
মারিয়া আনহাকে টেনে নিয়ে মাঠের এক কোনায় গিয়ে ঘাসের উপর বসে,,,,
মারিয়া: এবার বল কি হয়েছে,,, আমাকে বল হালকা লাগবে,,,,বাই দা ওয়ে কালকের ঘটনার জন্য আকিব তোকে কিছু বলেছে,,,,
আনহা সব খুলে বললো,,,,,
মারিয়া: ওহ এই ব্যপার,,,,,এতে তোর বাঁধছে কোথায়,,,, তুই তো আকিবকে ভালোবাসিস না,,,, তাহলে খারাপ লাগছে কেন,,,,
আনহা: জানি না কিন্তু,,,, আমার ভালো লাগছে না,,,,কাল থেকে আকিব আমার সাথে ঠিকমতো কথাও বলছে না আগে কত কথা বলত মজা করত,,,,ধ্যাত,,,,
মারিয়া: আকিবের সাথে কথা না বললে তোর খারাপ লাগে,,,,
আনহা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বলে,,,,
মারিয়া: শোন আনহা,,,, তুই নিজের অজান্তেই আকিবকে ভালোবেসে ফেলেছিস,,,,
আনহা: কি 😳😳😳
মারিয়া: হুম,,, না হলে ওর ইগনোর গুলো তোর সহ্য হতো,,,, কিন্তু তুই আকিবের ইগনোর তো সহ্য করতে পারছিস না,,,, তাহলে ভেবে দেখ তুই আকিবকে কতটা ভালোবাসিস,,,,,,
আনহা মারিয়ার কথা গুলো চুপ করে শুনছে
এখন আনহার মারিয়ার কথাগুলো সত্যি মনে হচ্ছে,,,,
মারিয়া: কালকে হয়তো আকিব সোহানের সাথে তোকে দেখে সহ্য করতে পারনি,, তার কারণ হলো আকিব ও তোকে ভালোবাসে,,,
বুঝলি,,,,,
আনহা: কিন্তু এখন আমি কি করবো সেটা বল,,,,,
মারিয়া: বোকা,,,,কি করবি মানে,,,,আকিবকে
সব বলবি,,, আর নিজের মনের কথা গুলো বলবি,,,,,
আনহা: কি বলব,,,,
মারিয়া: হায় আল্লাহ,,,,,বুদ্ধু আকিবকে বলবি তুই ওকে ভালোবাসিস,,,,, শোন একটু রোম্যান্টিক ভাবে বলবি,,,,আস্তে আস্তে ওর কাছে গিয়ে আস্তে করে বলবি,,,,,,আকিব আই লাভ ইউ,,,, (এ্যাকটিন করে) বলবি আমার সাদাকালো মনটাকে তুমি #ভালোবাসার_রং দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছো,,,,
আই লাভ ইউ সো মাচ আকিব,,,,, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি,,,,, 
আনহা এতক্ষণ ধরে মারিয়ার কান্ড দেখতাছে মনে হচ্ছে ও কোন সিনেমার শুটিং করতেছে
নায়ক ওর সামনে আর ও নায়ককে প্রপোজ করতেছে,,,,, মারিয়া এবার থেমে গেল,,,,
মারিয়া: কি রে বুঝলি,,,,
আনহা: কিন্তু আকিব যদি না করে দেয়,,,,,
মারিয়া: তুই দেখতে কোন অংশে কম আছিস হ্যা,,,,, তুই যদি এখন অন্য কোন ছেলেকে প্রপোজ করিস তাহলে সে রাজি হতে এক সেকেন্ড ও সময় নেবে না,,,, আর আকিব তো তোর হাজবেন্ড,,,,বলে দে চাপ নিস না,,,,,,
আনহা: আমার ভয় করছে আমি পারবো না
মারিয়া: পারতে তোকে হবেই,,,, মনে রাখিস তুই আমার বেস্টু,,,,,
আনহা: সেই জন্যই তো ভয় হচ্ছে,,,,,
মারিয়া: কি বললি তুই,,,, আমি তোকে ভালো আইডিয়া দিচ্ছি আর তুই উল্টো ভাবছিস,,,,, থাক দেব না তোকে বুদ্ধি,,,,পরে দেখবি পাখি খাঁচা ছেড়ে অন্য খাঁচায় বাসা বেঁধেছে,,,,
আনহা: অন্য খাঁচায় বাস বাঁধবে মানে,,,,
মারিয়া: বাঁধবেই তো,,,, একটা ছেলে কতদিন সিংগেল থাকতে পারে,,,, তুই বল ওরাও তো চায় একটা বউ পেতে বউকে ভালোবাসতে,,,
কিন্তু তুই তো সেরকম না,,,
আনহা: তুই বলতে চাইছিস আকিব অন্য কারো সাথে,,,,
মারিয়া: এবার লাইনে আসেন,,,,, আকিব অন্যের আঁচলে বাঁধা পড়ার আগে তুই নিজের আঁচলে বেঁধে ফেল,,,,
আনহা: তোর কথাই শুনতে হবে দেখছি,,,,,,
দোস্ত দোয়া রাখিস,,,,,,
মারিয়া: দিলাম দোয়া কইরা,,,,,মরলে খাবি ভিক্ষা কইরা,,,,,,
আনহা মারিয়ার কথায় একটু মুচকি হাসে ও জানে যে মারিয়া এরকমই সবসময় মজা করে
মারিয়া: এই যে মহারানী,,,চলেন আপনাকে বুদ্ধি দিতে দিতে ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে,,,,
ক্লাস শেষে মারিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে আনহা আকিবের সাথে বাড়িতে আসে,,,,,,,
আনহা আজকে ক্লাসে একটু ও মন দিতে পারেনি,,,,, শুধু ভেবে যাচ্ছে কিভাবে আকিবকে ভালোবাসার কথা বলবে,,,,,ওর বুকটা ধড়ফড় করতে লাগলো,,,, হাত পা কাঁপতে লাগলো,,,,,যে করেই হোক আজকে আকিবকে ও ভালোবাসার কথা বলবেই,,,,,
আনহা রুমে গিয়ে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকলো,,,,,,,,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আনহা মারিয়ার কথাগুলো প্রাকটিস করছে আর আয়না দেখে দেখে হাত নাড়িয়ে নানা ভঙ্গিমা করছে,,,,,
আনহা: মারিয়া কি যেন বললো,,,,কি যেন,,,
(একটু ভেবে) হুম,,,, মনে পড়েছে,,,,, প্রথমে গিয়ে বলব,,,, (একটু কেসে) আকিব আমার সাদাকালো মনটাকে তুমি #ভালোবাসার_রং দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছ,,,,, আ,,,,, আ,,,,, ধুর এটাইতো মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না,,,,, এখন কি করি,,,,, আবার চেষ্টা করি,,,,, আ,,,,, আই লাভ,,,,, ইইইই,,,,, ইউ,,,, আ,,,কি,,,,
আর কিছু বলার আগেই আকিবের ডাক পড়ল,,,,,,
আকিব: এই যে মিস আনহা ম্যাম আপনি জেগে আছেন নাকি গোসল করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছেন,,,,,বালিশ আর চাদর কি দেব ঘুমাতে,,,,,,,(দরজায় টোকা দিয়ে,,,,,)
আকিবের কথায় আনহা হকচকিয়ে গেল,,,,
তাড়াতাড়ি বের হতে নিলে খেয়াল করল ও তোয়ালে পড়েই বের হচ্ছে,,,,,
আনহা: এমা আমি তো তোয়ালে পরা এভাবে বের হচ্ছি কেন,,,,,
আনহা তাড়াতাড়ি করে চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসে সাথে সাথেই আকিব বাথরুমে ঢুকে আনহার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়,,,,
আনহা: ইসসস,,,,, বাদর একটা,,, এটিটিউড দেখায় আমার সাথে,,,,হুহ,,,,
আনহা নিচে চলে আসে,,,, শাশুড়ির সাথে খাবার রেডি করে,,,,,বার বার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আকিব আসতেছে কি না,,,,,
একটু পরেই আকিব আসল সবাই একসাথে খেয়ে নিলো,,,,আনহা ভাবলো এখন আকিব রুমে গেলেই আনহা ওকে সব বলবে,,, কিন্তু হয়ে গেল তার উল্টো,,,,আকিব সোফায় গিয়ে বসে টিভি অন করে,,,,,আনহা মুখটা গোমড়া করে ফেলে,,,, এখন আকিবকের সাথে কথা বলবে কিভাবে,,,,,, এখানে তো ওর শাশুড়ি ও আছে,,,,,উনি বসে বসে কিসের যেন একটা বই পড়ছেন,,,,,,আকিবকে রুমে পাঠানোর একটা ফন্দি আটল আনহা,,,,,,,আনহা গিয়ে সোফায় বসলো,,,,,
আনহা: আকিব তুমি একটু চেপে বসো তো আমি পা তুলে বসবো,,,,, 
আকিব একটু বিরক্ত হয়ে সরে বসে আনহা দুপা তুলে আধশোয়া হয়ে আছে,,,,, একটু পরে আনহা আবার বলে উঠলো,,,,
আনহা: এসব কি ছাই ভস্ব দেখতেছ তুমি,,,,,
কি খেলা না খেলা,,,,,এখানে কি বাংলাদেশের খেলা হচ্ছে যে দেখবে,,,,, রিমোট আমাকে দাও,,,,,
আকিব: তোমার দেখতে ইচ্ছে না করলে রুমে যাও,,,,,
আনহা: না আমি টিভি দেখব তোমার প্রবলেম হলে তুমি রুমে যাও হুম,,,,, এখন রিমোট দাও
আকিব: না আমি দেবো না,,,,
আনহা আকিবের হাতে থেকে রিমোট টানতে লাগলো,,,,,আকিবও সমান তালে রিমোট টানছে,,,,,
মা: কি হচ্ছে আকিব আনহাকে রিমোট দাও
আকিব: কিন্তু মা,,,,
মা: কোন কথা নয়,,,যা বলছি তাই কর,,,,
আনহা একটু খুশি হয় কারণ আকিব এখন রুমে যাবে আর একটু পরে আনহাও যেতে পারবে,,,, কিন্তু এবারও আনহার ভাবনায় এক গ্লাস পানি ঢেলে আকিব বাড়ির বাইরে চলে যায়,,,,,আনহা এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল
বেচারি করতে চাইল কি আর হয়ে গেল কি
আকিব বাইরে চলে যায়,,,,এখন আনহা কি করবে এখান থেকে যেতেও পারবে না,,, তাহলে শাশুড়িকে কি জবাব দেবে ওর জন্যই তো আকিবকে বকে বের করে দিল,,,,,,
আনহা সোফায় চিত হয়ে শুয়ে রিমোট দিয়ে চ্যানেল বদলাচ্ছে,,,,,, কিছু ভালো লাগছে না ওর,,,, টিভি দেখতে দেখতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে,,,,,,
সন্ধ্যায় আনহার ঘুম ভাঙল,,,,, আনহা ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ওল শ্বশুর শাশুড়ির জন্য চা বানাতে লাগলো,,,,, তখনই আকিব বাড়ি ফিরল আনহার তো ইচ্ছে করছে এখনই চা বানানো ফেলে আকিবের কাছে যেতে,,,, কিন্তু পারবে না চা বানিয়ে ও নিয়ে ওর শ্বশুর শাশুড়িকে দিয়ে আসতে নিলেই ওর শাশুড়ি ওকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে গল্প শুরু করে দিল,,,,,আনহা এবার পড়লো মহা বিপদে
কি করবে এখন,,,,ওর ইচ্ছে করছে এক গ্লাস পানিতে ডুবে মরতে,,,,,,প্রায় ঘন্টাখানেক কথা বলা শেষ,,,, তার পর আনহা চলে আসে এখন আবার রাতের খাবার বানাতে হবে আনহার আর আকিবের কাছে যাওয়া হলো না,,,,,
শ্বশুর শাশুড়িকে খাইয়ে আনহা এক কাপ কফি হাতে আস্তে আস্তে রুমে যায়,,,, গিয়ে দেখে আকিব টেবিলে বসে পড়তাছে,,,,, কাঁপা কাঁপা হাতে টেবিলে কফির কাপ রাখলো,,,,
আকিব এক নজর আনহার দিকে তাকিয়ে আবার পড়ায় মন দিলো,,,,যদিও আনহাকে দেখে ওর পড়ায় মন বসছে না,,, তবুও বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,,,আনহা এখনও আকিবের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আকিব বুঝলো যে আনহা ওকে কিছু বলতে চাচ্ছে
কিন্তু আকিব কিছু বলল না,,,,আকিব কিছু বলছে না দেখে আনহা বলে উঠলো,,,,,
আনহা: আ,,,কি,,ব,,,,I wanna say something to you,,,,
আকিব: হুম বলো (বইয়ের দিকে তাকিয়ে)
আনহা: আল্লাহ,,,সহায় হও (মনে মনে) ম মানে কিভাবে যে বলি,,,,,
আকিব: আমাকে কি নতুন দেখছো নাকি,,,
আনহা: না,,,,
আকিব: তাহলে আমতা আমতা না করে বলো soon,,,, আমার পড়া আছে,,,,
আনহা: আসলে আকিব,,,,, (হাত দিয়ে নিজের নখ কামড়াতে লাগলো)
আকিব: উফফ ভারি জ্বালা তো,,,, নেইল কাটার লাগবে তোমার,,,,
আনহা: না না,,,,,
আকিব: তাহলে,,,, কি বলবে,,,
আনহা: আসলে,,,,আকিব,,,ত তুমি,,,,
আকিব: হুম আমি,,,,,
আনহা: ত তুমি,,,, স সাদাকালো মন,,,,
আকিব: ওয়াট সাদাকালো মন,,,,,
আনহা: বলতে দাও,,,
আকিব: হুম বলো,,,
আনহা: ত তুমি,,, সাদাকালো,,,, ম মন,,, তারপর যেন কি,,,,হুম মনে পড়েছে,,, সাদাকালো মন র রঙিন,,,,,এই যা ভুলে গেছি
আকিব: হোয়াট সাদাকালো মন রঙিন,,, এসব কি গাঁজা খেয়েছ নাকি,,, ঠিকমতো বললে বলো না হলে বিদায় হও,,,,
আনহা মুখ গোমড়া করে চলে আসলো,,,,,
নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মারতে লাগলো,,,
কিছুই বলতে পারলো না আকিবকে,,,
আনহা: ধ্যাত কিছুই বলতে পারলাম না কালকে মারিয়া তো আমাকে রামধোলাই দিবে এখন কি করি,,,,,,
আনহা ওড়নার আঁচল হাতে নিয়ে মোচড়াতে মোচড়াতে নিচে চলে আসলো,,,,,,
পরেরদিন ভার্সিটিতে,,,,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ১৪

পরেরদিন ভার্সিটিতে,,,,,,,,
আনহা আর মারিয়া মাঠের কোনায় বসে আছে,,,,,,আনহা চুপ করে আছে,,,,,
মারিয়া: কি রে তখন থেকে চুপ করে আছিস হয়েছে কি তোর,,,, আর কালকে আকিবকে সব বলেছিলি,,,,,
আনহা মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দেয়
মারিয়া: কি,,,,,, এই গাধি একটা বললি না কেন হুম,,,,,,
আনহা: আরে ডায়লগ গুলোই তো ভুলে গেছি,,,,, বলতে গিয়ে সব ভুলে গেছি,,,,,,
মারিয়া: হায়রে পোড়া কপাল,,,,, তুই আর বলতেও পারবি না পরে দেখবি আকিব ফুড়ুত করে উড়ে গেছে,,,,,
আনহা: প্লিজ মারিয়া আমাকে ভয় দেখাস না দেখছিস এমনিতেই টেনশনে আছি,,,,,,
মারিয়া: ওকে ওকে,,,,, আমি তোকে লিখে দিচ্ছি,,,,, বাড়িতে গিয়ে মুখস্থ করে নিবি ওকে
আনহা: ওকে,,,,,
মারিয়া আনহাকে ওর বলা ডায়লগ গুলো একটা কাগজে লিখে দিল আনহাও খুশি মনে
নিয়ে নিল,,,,,ক্লাস শেষে আনহা আকিবের সাথে বাড়িতে ফেরে,,,,,
বিকেল বেলা,,,,,,,,আনহা ওর রুমের বেলকনিতে এপাশ ওপাশ পায়চারী করতাছে আর মারিয়ার দেওয়া কাগজটা মন দিয়ে পড়তাছে,,,,,, তখনই আকিব রুমে আসলো আনহাকে না দেখে বেলকনিতে ঢুকল,,,,, আকিবকে দেখে আনহার হাত থেকে কাগজটা পড়ে গেল,,,,,,আকিব গিয়ে কাগজটা ওঠালো এবং পড়তে শুরু করে,,,,,
আকিব: তুমি আমার সাদাকালো মনটাকে #ভালোবাসার_রং দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছো 
আমি তোমাকে ভালবাসি খুব ভালোবাসি
আই লাভ,,,,,,
আকিব আর পড়তে পারলো না তার আগেই আনহা আকিবের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলল,,,,,,
আকিব: এটা কি করলে,,,, আমি তো পুরো পড়তে পারলাম না,,,,,
আনহা: অন্যের জিনিস পড়াও উচিৎ না তুমি কেন পড়ছিলে,,,,,
আকিব: ওয়েট,,,,, কালকে তুমি এসব বলতে চাইছিলে,,,,
আনহা: কি সব,,,,
আকিব: ওই যে সাদাকালো মন তারপর কি যেন বললে রঙিন,,,,,
আনহা: এই রে এখন কি বলি গেলাম তো ফেসে,,,,, (মনে মনে)
আকিব: তুমি আমাকে এসব বলছিলে কেন,,,,
আনহা: আ আমি তোমাকে কখন,,,,
আকিব: এর মধ্যেই সব ভুলে গেলে,,,,,কেসটা কি বলো,,,,,,
আনহা: আসলে এটা একটা কবিতা মারিয়ার লেখা,,,,,
আকিব: তো অন্যের লেখা কবিতা আমাকে কেন শোনাচ্ছিলে,,,,
আনহা: আমি আর কিছু বলতে পারব না,,,, বাই দা ওয়ে তুমি আমার সাথে এতো কথা বলছো কেন,,,,
আকিব: মানে,,,,
আনহা: মানে,,,, দুদিন ধরে তো আমার সাথে কথাই বলছো না গোম মেরে আছো,,, আজকে কথা বলতে কেন এসেছো,,,, আরে যাও যাও তোমার সাথে কথা না বললে আমার ঘোড়ার ডিম হবে,,,হুম এই আনহা আদনান কাউকে পরোয়া করে না হুহ,,,,,,
আনহা মুখ ঘুরিয়ে চলে আসে,,,,,এসেই বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে,,,,,,
আনহা: উফফ বাবা বাঁচা গেল,,,, না হলে এক্ষুনি ধরা পড়ে যেতাম,,,,সরি আকিব আমি তোমার সাথে ওভাবে কথা বলতে চাইনি,,,, কিন্তু যদি ওভাবে কথা না বলতাম তাহলে তুমি সব জেনে যেতে,,,,,
আকিব তো এখনো থ হয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে,,,,,,আনহার কথায় ওর আরও রাগ হচ্ছে,,,,,ওর সাথে কথা না বললে আনহার কিছুই যায় আসে না,,,,আনহা কি ওকে একটু ও ভালোবাসে না,,,, কিন্তু আকিব খুব ভালো ভাবেই জেনে গেছে যে এতদিনে ও আনহাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু আনহা কেন আকিবকে ভালোবাসতে পারল না,,,, কেন পারল না,,,,,এটা ভাবতে ভাবতে আকিব আরও রেগে গেল,,,,
আকিব: আমি আর তোমার সাথে কখনোই কথা বলব না আনহা,,,,কখনোই না,,,, আমার শত কষ্ট হলেও না,,,,,,,
আকিব রাগে দেওয়ালে একটা ঘুসি মেরে চলে আসে,,,,,,
রাতে আকিব টেবিলে বসে পড়তাছে আর আনহা বেলকনিতে গিয়ে মারিয়াকে কল করে
মারিয়া: হ্যা বল বলেছিস,,,,
আনহা: না,,,,, তারপর আনহা মারিয়াকে সব খুলে বলল,,,,
মারিয়া: আরে বোকারাম তখনই বলে ফেলতি কি একটা কাজ করলি তুই,,,,আকিব যখন কাগজ টা পড়তেছিল ওখানে তো ওর নাম লেখা ছিলো,,,ওটা পড়তে দিলি না কেন তাহলেই তো হয়ে যেত,,, আর তুই বলতি ওটা তোর মনের কথা,,,,
আনহা: আকিব কি ভাবতো,,,,যে আমি ডায়লগ কাগজে লিখে মুখস্থ করি,,,,
মারিয়া: আমি এখন কেমনে বুঝাই তরে,,,, 
তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত এতে আকিবকে তো তোর মনের কথা জানাতে পারতি,,,, এখন বোঝো ঠেলা পাশা খেলার চাল তুমি ঘুরিয়ে ফেলছো এখন জেতাটা আরও মুসকিল,,,,,
আনহা: এখন আমি কি করবো সেটা বল,,,
মারিয়া: কিলিবিলি ড্যান্স দে হারামি মাইয়া,,
আনহা: প্লিজ মারিয়া একটা বুদ্ধি দে,,,
মারিয়া: কালকে ভার্সিটিতে আয় তারপর,,,
আনহা ফোন কেটে রুমে এসে দেখে আকিব লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়েছে,,,,,আনহা ও শুয়ে পড়ল কিন্তু ওর ঘুম চান্দের দেশে চলে গেছে,,,, সারারাত এপাশ ওপাশ করে করে শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়ে,,,,,,
সকালে তাড়াতাড়ি ওঠে রেডি হয়ে আকিবের পিছু পিছু ছোটে,,,,,আকিব একবার ও আনহার সাথে কথা বলেনি,,,,আনহা অবশ্য কথা বলেছে আকিব শুধু শুনেছে কোন উওর দেয়নি,,,, ভার্সিটিতে গিয়েই আনহা মারিয়ার সাথে দেখা করে,,,,,
আনহা: ওরে আমার মারি বু রে একখান বুদ্ধি দেও রে,,,,,
মারিয়া: তোমার বুদ্ধির গুষ্টি কিলাই রে,,,,
আনহা: এমন কইরো না বু রে,,,,মোর কলিজা
হাডি যায় রে,,,,
মারিয়া: এটা তখন মনে হচ্ছিল না এখন সব কিছু উগান্ডায় পাঠিয়ে এসেছে হেতের কলিজা হাডি যায়,,,,, আচ্ছা শোন আমি খুব ভালো করেই বুঝে গেছি তুই কিছু বলতে পারবি না,,,আকিবের মুখ দিয়েই কথা বের করতে হবে,,,,,
আনহা: কিন্তু কিভাবে,,,,,
মারিয়া: তুই বলাবি ওর মুখ দিয়ে,,,,,
আনহা: আকিব কোনদিন ও বলবে না এসব ক্ষেত্রে ও বরাবর একটু লাজুক টাইপের রিধিকে প্রপোজ করার ঘটনা শুনলে তুই হাসবি,,,,
মারিয়া: আমি ওসব জানতেও চাইনা,,,, আর তুই নিজেকে আর রিধিকে এক করিস না তুই আকিবের ওয়াইফ আর রিধি গার্লফ্রেন্ড ছিল
যাক গে বাদ দে ক্লাসে যাই এসব ব্যাপারে পরে প্ল্যান করা যাবে,,,সময় তো আর পেরিয়ে যাচ্ছে না,,,,,
দুজনে মিলে ক্লাসে যায়,,,, কিন্তু আজকে তেমন ভাবে ক্লাস হয় না,,, কয়েকজন সিনিয়র স্টুডেন্টরা এসে প্রতি ক্লাসে গিয়ে ওদের বিদায় অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলে আনহার ক্লাসে ও যায়,,,আকিব ও যায়,,,,স্যার বলল
স্যার: শোন স্টুডেন্টস,,,, তোমাদের সিনিয়রদের বিদায় অনুষ্ঠান দুদিন পর ওরা শেষ বর্ষের ছাত্র ছাত্রী,,,, কিছুদিন পর ওদের পরীক্ষা,,,,, তার পর ওরা ভার্সিটি থেকে চলে যাবে,,,তাই বিদায় অনুষ্ঠানে সবাই অংশ গ্রহন করবে,,,, মেয়েরা শাড়ি পড়বে,,,, যে যেরকম পারো সেই রংয়ের শাড়ি পড়তে পারো,,,, আর ছেলেরা পাঞ্জাবি,,,,ঠিক আছে,,,,
এতোক্ষণ স্যার ৭ই মার্চের ভাষণ দেওয়ার পর চলে গেল,,,,,,, মারিয়া তো খুব খুশি,,,,শাড়ি পরতে ও ভিশন ভালোবাসে,,,,,,
মারিয়া: আনহা তোর একটা চান্স আসছে সামনে,,,
আনহা: কি,,
মারিয়া: শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজে গুজে আকিবকে একটু ইমশোনাল করবি তোর প্রতি
দেখবি বরফ গলে পানি,,,,,
আনহা: তুই সবসময় বেশি বুঝিস,,,
মারিয়া: তুই দেখিস এতেই কাজ হবে,,
আনহ: ওকে দেখি কি হয়,,,,
আজকে ভার্সিটিতে আকিবদের বিদায় অনুষ্ঠান,,,,আনহা গাঢ় গোলাপি রঙের একটা শাড়ি পড়েছে,,, শাড়ির পাড়ে মোটা করে চুমকির কাজ করা,,,, চোখে মোটা কাজল ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক
চুলগুলো খোপা করে তাতে সাদা ফুলের মধ্যে একপাশে তিনটা গোলাপ ফুল লাগিয়েছে,,,,,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শাড়ি ঠিক করতেছে,,,আকিব শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আনহাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে চোখ ফেরাতেই পারছে না,,,,আকিব যে আনহাকে অনেকক্ষন ধরে দেখতাছে সেটা আনহা খেয়ালই করেনি,,,,ও শাড়ি ঠিক করতে ব্যস্ত,,,, আকিব চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আয়নার সামনে এসে আনহার পাশে দাঁড়ায়,,,,আকিবকে দেখে আনহা একটু অবাক হয়ে আবার নিজের শাড়ি ঠিক করাতে মন দিল,,,,, একটু পর পর আকিবের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে,,,,আকিব গাঢ় খয়েরী রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে জিন্সের সাথে
পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত ভাজ করা,,, চুলগুলো স্পাইক করা,,,,আনহা এসব দেখতে দেখতে পাগল হয়ে যাবে,,,,উফফফ কি মানিয়েছে আকিবকে,,,,,আনহা আয়নার দিকে তাকিয়ে আকিব আর ওর প্রতিবিম্ব দেখতেছে,,,,,,
আনহা: আচ্ছা,,,,আকিবকে কি আমার পাশে মানিয়েছে,,,, নাকি রিধিকে,,,, না ওই বারোভাতারি Max pro কে কখনোই আকিবের সাথে মানাবে না,,,,হুহ,,,আনহা তোকেই আকিবের পাশে মানায়,, (মনে মনে)
ততক্ষণে আকিব রেডি হয়ে গেছে,,,, ছেলের রেডি হতে মাত্র পাঁচ মিনিট লাগে,,, মেয়েদের মতো চুল বাঁধা মেকআপ করা লাগে না ওদের
যাই হোক আকিব রেডি হয়েই বেরিয়ে পড়ল
আনহার তখনও চুড়ি পড়া বাকি,,,,চুড়ি গুলো হাতে নিয়ে পড়তে পড়তে আকিবের পিছু পিছু ছুটল,,,,,আকিব বাইক চালাচ্ছে আনহা পিছনে মুখ গোমড়া করে বসে আছে,,,,এতো সুন্দর করে সেজেছে সেটা তো আকিবের জন্য কিন্তু আকিব ওকে একবার ও দেখল না,,,,,, ধুর ওর ভালো লাগছে না ইচ্ছে করছে এখনই সব খুলে ফেলতে,,,,, কিন্তু আনহার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল,,,,,আকিব বাইকের লুকিং গ্লাস এ আনহাকে সারা রাস্তা দেখতে দেখতে আসে ওর চোখে সানগ্লাস থাকার জন্য আনহা দেখেনি,,,,,
ভার্সিটিতে আজকে সব মেয়েরা রং বেরঙের শাড়ি পরে এসেছে ছেলেরা ও পাঞ্জাবি পরে এসেছে,,,, সিনিয়ররা এক কালারের পাঞ্জাবি পরেছে,,,,,আকিব ভার্সিটির সামনে বাইক থামায়,,,,আনহা নেমেই হনহনিয়ে ভেতরে আসতে লাগলো,,,, একটু খানি আসতেই আনহা আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলো ভেবছিল আকিব ওকে পিছু ডাকবে কিন্তু ডাকল না
এতে আনহা আরো রেগে যায়,,,, তাড়াতাড়ি চলে আসলো,,,,,, ভিতরে আসতেই মারিয়ার সাথে দেখা হয়,,,,মারিয়া জাম কালারের শাড়ি পরেছে,,,, খুব সুন্দর লাগছে ওকে,,,,
মারিয়া: ওয়াও আনহা তোকে তো আজকে হ্যাব্বি লাগছে,,,,,,,
আনহা: যার বলার কথা সে বলল না এখন তুই বল আমি এতেই খুশি হবো,,,,,
মারিয়া: বলিস কি আকিব তোর প্রশংসা করেনি,,,,
আনহা: প্রশংসা দূরের কথা আমার দিকে তাকায়নি পর্যন্ত,,,,,,,
মারিয়া: ইম্পসিবল,,,,,
আনহা: এটাই সত্যি,,,,,
মারিয়া: আড়ালে ঠিকই তোকে দেখেছে তুই দেখিস নি,,,,চল আজকে আমি দেখব আকিব কিভাবে তোর দিকে না তাকিয়ে থাকে চল অনুষ্ঠানের প্যান্ডেলে যাই,,,,,
মারিয়া আনহাকে নিয়ে প্যান্ডেলের কাছে যায় তেমন মানুষ আসেনি ওরাই তাড়াতাড়ি এসেছে আকিব আর ওর বন্ধুরা মিলে সব ফুল দিয়ে প্যান্ডেল সাজাচ্ছে,,,,আনহা মারিয়া আর একটা মেয়ে প্যান্ডেল থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর মারিয়া গোয়েন্দাগিরি করছে,,,, একটু পর পর আকিবের দিকে তাকাচ্ছে,,,,,,
এমন সময় আনহার ক্লাসের কতগুলো দুষ্টু ছেলেরা আসল,,,,,আনহা আর মারিয়াকে দেখে ওখানেই থমকে দাঁড়ায় ওদের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছে আর মিটিমিটি হাসছে
আনহা সেটা লক্ষ্য করে,,,,,
আনহা: মারিয়া চল এখান থেকে চলে যাই
ওই ছেলেগুলো বেশি সুবিধার না,,,,
মারিয়া: এখান থেকে গেলে আরও সমস্যা হবে,,, এই বদ গুলো মেয়েদের একা পেলেই বিরক্ত করে,,,, আমাদের ক্লাসের অনেক মেয়েকেই বিরক্ত করে,,,,,বড় লোকের ছেলে বলে কেউ কিছু বলতেও পারে না,,,,যাই হোক এখানেই থাকি,,,,দেখছিস না এখানে সব সিনিয়ররা আছে ওদের সামনে কিছু বলতে পারবে না,,,,,,
আনহা: ঠিক আছে,,,,,,
ছেলেগুলো ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর হাসছে,,,,, হঠাৎ করে একটা ছেলে এসে আনহার পিঠে হালকা চাপড় মেরে বলল,,,,,
__ কি রে আনহা কেমন আছিস,,,(১ম ছেলে)
 আনহা: ভালো আছি,,,,,
বলেই ছেলেটা চলে যায় একটু পরে আরেকটা ছেলে এসে আগের মতো আনহার ঘাড়ে চাপড় মেরে বলল,,,,,
__ আনহা তোকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে
তা তোর হাজবেন্ড কেমন আছে আর তুই ভালো আছিস তো,,,,,,(২য় ছেলে)
আনহা একটু বিরক্ত ফিল করে,,, তবুও হ্যা ভালো আছি বলল,,,, মারিয়া ও বিরক্ত হয়ে যায়,,,,,ওদের কর্মকান্ডে,,,, কিন্তু কিছু বলে না
এরকম একটু পর পর একেকজন এসে আনহাকে ছোঁয়ার বাহানায় একেকটা প্রশ্ন করতে লাগলো,,,,আনহাও বিরক্ত হয়ে উওর দিচ্ছে,,,,, ছেলে গুলো একজায়গায় দাঁড়িয়ে হাসছে,,,,, একজন বলল তোরা তো পিঠে হাত দিলি আমি এবার কোমড়ে হাত দিব দেখবি সবাই হেসে ছেলেটার সাথে তাল মেলালো,,,,
আনহা মারিয়ার সাথে কথা বলছিল,,, আর ওই ছেলেটা আস্তে আস্তে আনহার দিকে এগোচ্ছে,,,,যেই না আনহার কোমড়ে হাত দেবে অমনি একটা হাত ছেলেটার হাত ধরে ফেলল,,,,,আনহা পিছনে তাকিয়ে দেখে আকিব,,,,,চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে রাগের কারণে,,,,,মুখেও লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে আনহা আকিবকে এতোটা রাগতে কখনোই দেখেনি,,,, আনহা ভাবতে লাগলো এটা কি আগের সেই সহজ সরল আকিব নাকি অন্য কেউ,,,,,,
আকিব একহাতে ছেলেটার হাত ধরে আছে অন্য হাত দিয়ে আনহাকে সরিয়ে দিল,,,,
এতোক্ষণ ধরে আকিব ছেলেগুলোর কান্ড দেখে রাগে লাল হয়ে গিয়েছে,,, আর এখন ওদের রক্ষা নেই,,,,,আকিব ছেলেটার হাতটা মুচড়ে ধরে,,,ছেলেটা ব্যাথায় কোকড়াচ্ছে,,,,,
আকিব: কেমন আছিস হাজবেন্ড কেমন আছে তোকে খুব সুন্দর লাগছে,,,,এসব বলার জন্য গায়ে হাত লাগানো জরুরি কি,,,,হ্যা,,, জরুরি,,,,,
অন্য ছেলেগুলো এগিয়ে এলে আকিব ওর কাছে থাকা ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে ওদের উপর ফেলে দিলো,,, সাথে সাথে সাবাই ব্যালেন্স রাখতে না পেরে পড়ে যায়,,,,আকিব কোমড় থেকে বেল্ট খুলে ওদের মারতে লাগলো,,,,এটা দেখে আনহা আকিবকে বাঁধা দিতে নিলে মারিয়া ওকে টেনে ধরে,,,,,,
মারিয়া: তুই কোথায় যাচ্ছিস,,,,বেশ হয়েছে চুপ করে দাঁড়া এখানে,,,,,
আনহা: কিন্তু ওরা যে মরে যাবে,,,
মারিয়া: মরুক,,,, জাহান্নামে যাক,,,, তুই এখানেই দাঁড়া,,,,,
আকিব অনেকক্ষণ ধরে ওদের মেরে যাচ্ছে ছেলেগুলো চেঁচাচ্ছে,,,,,,, পরিস্থিতি খারাপ এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেখে রিসাদ আর নয়ন এসে ওকে আটকায়,,,,,,
আকিব: তোরা ছাড় আমাকে,,,,আনহার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস হলো কি করে,,,, ওদের তো আমি মেরেই ফেলবো,,,,
রিসাদ: শান্ত হ আকিব,,,,প্লিজ এমন করিস না পরে প্রব্লেম হতে পারে,,,,,
নয়ন: আকিব প্লিজ জাস্ট রিল্যাক্স,,,,
আকিব একটু শান্ত হয়,,,, কিন্তু ছেলেগুলোর উপর এখনো রেগে আছে,,,, ছেলেগুলো ব্যাথায় কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালো,,,,,
একজন বললো,,,,,
__ ভাইয়া আপনি সামান্য একটা মেয়ের জন্য আমাদের মারলেন,,,,এটা ঠিক করলেন না,,, কি হয় মেয়েটা আপনার বউ নাকি,,,,,
রিসাদ: আরে না,,,আনহা তো আকিবের ভা,,,,
আকিব: Yes she is my wife,,,, (রাগি কন্ঠে)
আকিবের কথায় উপস্থিত সবাই চমকে যায়,,,
ইনফ্যাক্ট আকিবের বন্ধুরা বেশি চমকায়,,,,, কারণ এই প্রথম সবাই সত্যি জানলো আনহা তো রোবট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,,, আর মারিয়া খুশিতে টলটল করছে,,,,
রিসাদ: কি বলছিস তুই,,,,আনহা তোর,,,,
আকিব: ঠিক শুনেছিস আনহা ইজ মাই ওয়াইফ,,,,,এটাই সত্যি,,,, আর তোদের যদি আরেকবার আনহার আশেপাশে দেখেছি তো খুব খারাপ হয়ে যাবে মাইন্ড ইট,,,, (ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে)
নয়ন: কিন্তু,,,,,
আকিব কিছু না বলে আনহার হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে গেটের কাছে নিয়ে এলো,,,
বাইকে গিয়ে বসে আনহার হাত ধরে টেনে বসালো,,,,আনহা তো ভয়ে কিছু বলতে পারছে না চুপচাপ বাইকে বসে পড়ল আকিবের বন্ধুরা সব হা হয়ে দেখছে মারিয়া তখন ওদের সব ঘটনা বলল যে কিভাবে ওদের বিয়ে হয়েছে,,,,,,,
আকিব ফুল স্পীডে বাইক চালাচ্ছে,,,,আনহা আকিবে শক্ত করে ধরে আছে,,,,বাড়ির সামনে গিয়ে আকিব বাইক থামায়,,,,আনহার হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলো,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ১৫

আকিব আনহার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যাচ্ছে,,,,আকিব আনহার হাত শক্ত করে ধরায় আনহার হাতের কাঁচের চুড়ি গুলো মটমট করে ভেঙে পড়তাছে আকিবের সেদিকে কোন খেয়াল নেই,,,,আনহাকে টেনে নিয়ে রুমে গেল,,,,এক ঝটকায় আনহার হাতটা ছেড়ে দেয়,,,আনহা পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয়,,,,,আকিব গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়,,,, তারপর আনহার সামনে এসে দাড়ালো,,,, রাগের লাল আভা এখনো আকিবের মুখে দেখা যাচ্ছে,,,,আনহা ভয়ে বারবার ঢোক গিলছে,,,,,,
আকিব: কে বলেছিল তোমাকে এসব শাড়ি পরতে কে বলেছিল সাজতে,,,হ্যা,,,বলো
(ধমক দিয়ে,,,,)
আকিবের ধমকে আনহা কেঁপে উঠল আকিব কখনোই আনহার সাথে এরকম ভাবে কথা বলে নি,,,আজই প্রথম বলতাছে,,,,,
আকিব: কি হলো বলো,,,,,এইসব সাজ কাকে দেখাতে চাও,,,,সোহানকে,,,তাই তো,,,,তাহলে ভার্সিটিতে কেন গিয়েছিলে,,,,, রেস্টুরেন্টে যেতে,,,,, তাহলে তো আজকে আমাকে ঝামেলায় পড়তে হতো না,,,,
আনহা কিছু বলছে না শুধু চোখের পানি ফেলছে আর বারবার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে পানি মুছছে,,,,আনহা ভাবছে আকিব এতো কঠোর হলো কিভাবে,,,,আকিব তো এমন ছিল না,,,,এই কদিনে কি এমন হলো যে এতটা বদলে গেল,,,,,আনহার যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে সেটা বলতে পারত কেন ওর সাথে এরকম করছে,,,,,,
আকিব: লিসেন মিস আনহা আদনান,,,,,, এরপর থেকে আপনার ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ
ওকে,,,, আর আমি না আসা পর্যন্ত এই রুম থেকে বের হতে পারবেন না,,,,,
আকিব দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে বেরিয়ে যায়,,,,আকিব বের হাওয়ার সময় ওর মাকে বলে যায় আনহাকে যাতে রুমে থেকে বের হতে না দেয়,,, এটুকু বলেই বেরিয়ে যায় আকিব,,ওর মাও অবাক চোখে আকিবকে দেখছিল কেননা আজকে আকিব কে উনি প্রথম এতটা রাগতে দেখলেন,,,,তাই উনি আনহার কাছে যায়না,,,,
আনহা কাঁদতে কাঁদতে ওখানেই বসে পড়ে,,,,
আনহা ভেবে পাচ্ছে না আজকে ওর দোষটা কোথায় ছিল,,,,সাজের কথা বলতে গেলে আজকে তো সবাই সেজেছে,,,, আর আনহা আজকে শুধু আকিবের জন্যই সেজেছে,,,
আর সেকারনে আকিব এতটা বকল আনহাকে,,,,,আনহা ফ্লোরে বসে খাটের উপর মাথা রেখে কাঁদতে থাকে,,,,,
আকিব ভার্সিটিতে চলে যায়,,,,, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে,,,,,
ঘুমের মধ্যে হাতে জ্বালাপোড়া অনুভব করতেই আনহা চোখ মেলে তাকায়,,, কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সেটা ও নিজেও জানে না,,,,চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে
আকিব ওর হাতে ঔষধ লাগাচ্ছে,,, আনহা উঠে দাঁড়ায়,,,,,
আনহা: তুমি,,,,,
আকিব: কেন সোহানকে আশা করেছিলে বুঝি,,,,,
আনহা এবার রেগে যায়,,,,
আনহা: দেখ আকিব অনেকক্ষণ ধরে তোমার কথা সহ্য করছি কিন্তু আর না আমি কি সবসময় তোমার কানের গোড়ায় গিয়ে রিধি রিধি করি,,,, তুমি আমাকে সোহানের কথা শোনাচ্ছ কেন,,,
আকিব: ওমা,,,, তোমার খারাপ লাগছে,,,, কিন্তু সোহানের কথা শুনে তোমার খারাপ লাগার কথা তো না,,,,,
আনহা: দেখ আকিব,,,,,, (হাত উঁচু করে)
আকিব সাথে সাথে আনহার হাত ধরে নিয়ে খাটে বসিয়ে হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিল,,, চুড়িতে আনহার হাত কেটে গিয়েছে আকিব এসে সেটা দেখে ঔষধ লাগাচ্ছিল তখনই আনহার ঘুম ভাঙ্গে,,,,,আনহা উঠে যাওয়ার কারণে পুরো ঔষধ লাগাতে পারেনি,,,,,,
আকিব: মিস আনহা তোমাকে যদি সোহান এভাবে দেখে তাহলে বলবে আমি তোমার প্রতি কেয়ারফুল না,,,,,
আনহা: আবার সোহান,,,,হাত ছাড়ো তোমার ঔষধ লাগাতে হবে না,,,,
আনহা আকিবের থেকে হাত ছাড়িয়ে কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে যায় চেঞ্জ করতে,,,,
আকিব ফাস্ট এইড বক্স গুছিয়ে রেখে নিজেও চলে যায়,,,,,
আনহা ফ্রেশ হয়ে এসে খাটের উপর বসে আছে,,,,, আর ভাবছে আকিব তো ওকে ভার্সিটিতে যেতে বারণ করেছে,,,, কিন্তু এই বাড়িতে একা থাকা অসম্ভব,,,, শ্বাশুড়ি আর আনহা একা বাড়িতে,,,,, এভাবে থাকলে আনহার দম বন্ধ হয়ে আসবে,,,,,
আনহা: ধুর কিছু ভালো লাগছে না ভার্সিটিতে যেতেও ভালো লাগে না আর বাড়িতে থাকতেও ভালো লাগে না এখন কি করি,,,,
এমন সময় কাজের লোক এসে বলল আনহাকে আকিব নিচে যেতে বলেছে আনহা নিচে এসে দেখে আকিব দাঁড়িয়ে আছে আর সোফায় একজন লোক বসা ওনার সামনে চা বিস্কুট দেওয়া,,,আনহা ভাবলো এ আবার কে কি জন্য এসেছে,,,,আকিবের বাবা মাও বসা লোকটার সাথে কি যেন কথা বলতেছে,,,,,,
আনহা আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে দাঁড়ালো,,,,,,,
বাবা: ওই তো আনহা এসে গেছে,,,, শোন আনহা এই হলো তোমার টিচার আজ থেকে প্রতিদিন উনি এসে তোমাকে পড়াবেন,,,,,,
আনহা: কিন্তু কেন,,,,,,,
আকিব: আপনার ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ বলে পড়ালেখা কি আকাশে উঠেছে নাকি,,,, পড়াশোনা তো চালিয়ে যেতে হবে,,,, শুধু পরীক্ষার সময় গিয়ে পরীক্ষা দিবেন আর বাড়িতে বসে পড়াশোনা করবেন,,,,,
মা: আহা ওকে এভাবে বলছিস কেন,,,, আমি বলছি,,,, তোমাকে আর ভার্সিটিতে যেতে হবে না তুমি বাড়িতে বসে পড়বে আর পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিবে,,,,ঠিক আছে,,,,,
আনহা: ঠিক আছে,,,,,
আকিব: এখন গিয়ে বই খাতা সব নিয়ে আসো,,,,,
আনহা: কেন,,,,,
আকিব: স্যার কি তোমাকে রুমে গিয়ে পড়াবে নাকি,,,,,, আর তাছাড়া রুমে বসে আমি পড়বো আমার সামনে পরীক্ষা তুমি থাকলে আমার ডিস্টাব হবে,,,, মাথায় ঢুকেছে নাউ গো,,,,,
আনহা রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে আসে,,,,বই খাতা গোছাতে থাকে,,,, আর বিড়বিড় করতে থাকে,,,,,
আনহা: ইসসস,,,, এসেছে কি ভেবেছে ও যা বলবে আমি তাই করব,,,,উনি বলবে ভার্সিটিতে যাবে না তো আমি যেতে পারব না এখন আবার বাড়িতে টিচার রেখেছে,,,,, ধুর
পড়াশোনা আর ভালো লাগে না ভেবেছিলাম
বিয়ের পর আরাম আয়েশে থাকব পড়াশোনা লাইফ থেকে আউট করে দিব কিছুই হলো না
এখন তাড়াতাড়ি যাই না হলে রক্ষা নাই,,,, কি জানি আমার ভার্সিটিতে না যাওয়ার কারণ হিসেবে কোন ভুগোল বুঝিয়েছে বাবা মাকে
আনহা তাড়াতাড়ি নিচে যায়,,,,আনহা নিচে যাওয়ার সাথে সাথেই আকিব চলে আসে,,,
আনহা এক দৃষ্টিতে আকিবের যাওয়া দেখে
আনহা স্যারের কাছে পড়তে বসে,,,,,রাত দশটায় পড়ানো শেষ করে স্যার চলে যায় আনহা বই খাতা টি টেবিলে রেখে কাজের লোকের সাথে ডিনার সাজায়,,, তারপর শ্বশুর শাশুড়িকে খাইয়ে এক কাপ কফি হাতে রুমে যায়,,,,কারণ এসময় আকিব কফি খায়,,,, না হলে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়বে কফি খেলে ঘুমটা কম আসবে,,,,,,,কফি নিয়ে আকিবের সামনে রাখতেই আকিব কফি খেতে লাগল
আনহার দিকে একবারও তাকালো না,,,,
আনহা ঠাস ঠুস করে বিছানা গুছিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল,,,,,আকিব সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না
নিজের পড়ায় মন দিলো,,,,,,
আস্তে আস্তে সময় পেরিয়ে যায়,,,,আকিবের পরীক্ষা ও শুরু হয়ে গেছে,,,,এর মধ্যে আকিবের সাথে আনহার তেমন কোন কথাই হয়নি,,,,আকিব পরীক্ষার কারণে সারাদিন ভার্সিটিতে ক্লাস আর করেই কাটিয়ে দেয় আর রাতে আনহা পড়তে পড়তেই সময় কেটে যায়
আকিবকে সময় দিতে পারে না,,,,, আর আকিব সবাইকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে পরীক্ষার চলাকালীন ওকে কেউ যেন বিরক্ত না করে সেটাই সবাই শুনতে বাধ্য,,,,,,
দেখতে দেখতে আকিবের পরীক্ষা শেষ,,, তার সাথে সাথে আনহার পরীক্ষা শুরু,,,,এখন আকিব ও আনহার কাছে যায় না কারণ আনহা এমনিতেই ফাঁকিবাজ,,,, পড়তেই চায় না,,,,,, পরীক্ষা শেষে আনহা এখন ফ্রি,,,,
আর আকিব বাবার সাথে অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,,,,,,
আনহা সবার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করতেছে আকিব ও ওর বাবা মা খেতে আসে,,,, আকিব রেডি হয়ে আসে অফিসে যাওয়ার জন্য,,,,,,,,
আনহা: বাবা মা,,,, আমার একটা কথা বলার ছিলো,,,,,,
বাবা: বলো,,,,,
আনহা: বলছিলাম কি আমার পরীক্ষা তো শেষ রেজাল্ট দিতে সময় লাগবে আমি যদি বাড়িতে থেকে একটু ঘুরে আসি,,,,
এটা শুনে আকিবের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল,,,,,কারণ এমনিতেই আনহাকে বেশি সময় দেখতে পায়না আর যদি বাপের বাড়ি যায় তাহলে তো দশ পনেরো দিন ছাড়া আসবে না,,,, এতদিন আকিব আনহাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে,,,,,,আকিবের বাবা আনহাকে যেতে বলল,,,,আকিব ওর বাবার মুখের উপর কোন কথা বলতে পারল না,,,,
আনহা তো খুব খুশি,,,,, সবাইকে খাইয়ে আনহা রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো,,,,,
কালকে সকালে যাবে,,,,,,খুশির ঠেলায় আগেই ব্যাগ পত্র গুছিয়ে ফেলেছে
রাতে আকিব বাড়িতে ফেরে,,,,,,,আনহা সোফায় বসে টিভি দেখছিল,,,,,আকিবকে রুমে আসতে দেখে,,,,,আকিবের জন্য কফি নিয়ে যায়,,,,আকিব তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো ঠিক করছিল,,,,,, আনহা গিয়ে কফির কাপ এগিয়ে ধরল আকিব ও নিয়ে খেতে লাগল,,,,,,
আকিব: তা,,,,, কদিন থাকবে,,,, (কফির কাপে চুমুক দিয়ে)
আকিবের মুখ দেখে ও বুঝতে পারল আকিবের কষ্ট হবে ওকে ছাড়া থাকতে,, কিন্তু এটাই সুযোগ আকিবের পেট থেকে কথা বের করার,,,,,,
আনহা: একমাস তো থাকবোই,,,,,
আনহার কথা শুনে আকিব কিছু বলল না কফির কাপ শক্ত করে ধরল,,,,
আনহা: কেন,,,, তোমার কি থাকতে সমস্যা হবে,,,,,
আকিব: না,,,, খুব আরাম লাগবে,,,বাই দা ওয়ে এক মাসের জায়গায় দুই মাস থেকে এসো আরো ভালো হবে,,,,,,
বলতে বলতে আকিব বারান্দায় চলে যায়,,,,,
আনহা: ভাব দেখ,,,, ভাঙবে তবু মচকাবে না
হুহ আমিও দেখে নেব মিস্টার আরিয়ান আদনান আকিব,,,,এই আনহাকে ছাড়া তুমি কিভাবে থাকো,,,, আমি বলছি কাকে আমার ও তো থাকতে কষ্ট হবে,,,,,,,,, কিন্তু এটা যে আমাকে করতেই হবে
আনহা ঘুমিয়ে পড়ে,,,,,আকিব বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,,,,হাতের কফির কাপে কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে আকিব সেদিকে খেয়াল করে না,,,, গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছে,,,,কফির কাপ ওভাবেই টেবিলে রেখে ঘুমিয়ে পড়ল,,,,
সকালে আনহা উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিল,,,,রেডি হওয়ার সময় ওর চোখ গেল টেবিলের উপর রাখা কফির কাপে,,,আকিব কফি খায়নি,,,,,,আনহা একটু মুচকি হেসে কফির কাপ নিয়ে নিচে চলে আসে,,, ব্রেকফাস্ট করে আনহা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়,,,,আকিব ওকে ড্রপ করে দেবে,,,, 
আকিব নিরবে গাড়ি চালাচ্ছে,,,,কোন কথা বলছে না,, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে,,,,,গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফোঁটা এসে গাড়ির উপর পড়তেছে,,,,,
আনহা জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি হাতে নিচ্ছে,,,,, বৃষ্টি ওর খুব ভালো লাগে,,,,
বৃষ্টিতে ভিজতেও,,,,, কিন্তু বাড়িতে গেলে ওর মা কিছুতেই বৃষ্টিতে ভিজতে দেবে না,,,,,এটা ভেবেই ওর মন খারাপ হয়ে গেল,,,,, কিছু একটা ভেবে আনহা গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে দিল,,,,বৃষ্টিটা ভালোভাবে অনুভব করার জন্য,,,,,, তখনই আকিব গাড়ির কাচ লাগিয়ে দিল,,,,,আনহা তাড়াতাড়ি মুখটা গাড়ির ভিতরে নিয়ে আসে,,,, মুখটা গোমড়া করে ফেলে,,,, মুখটা আঁচল দিয়ে মুছে নিল,,,,
গাড়ি আনহার বাড়ির সামনে এসে থামলো,,,,
তামিম ওখানেই দাঁড়িয়ে আনহার জন্য অপেক্ষা করছিল,,,,,আনহা গাড়ি থেকে নামল সাথে সাথে তামিম আনহার দিকে ছাতা এগিয়ে দেয়,,,গাড়ি থেকে ওর ব্যাগ ও নিয়ে নেয়,,,,, তামিম আকিবকে ভিতরে আসতে বললে ও যায়না বলে অফিসে কাজ আছে,,,
তামিম ভিতরে চলে যায়,,,,,আনহা ও আস্তে আস্তে ভিতরে চলে আসে,,,,,আকিব শুধু চেয়ে চেয়ে আনহার যাওয়া দেখে,,,,,ও ভেবেছিল
আনহা একবার পিছু ফিরে তাকাবে কিন্তু আনহা তাকালো না,,,,,,আকিব চলে যায়,,,,
আনহা বাড়িতে গিয়ে মা বাবার সাথে কথা বলে রুমে যায়,,,,,শাড়িটা চেঞ্জ করে খাটের উপর হেলান দিয়ে বসে আছে,,,,,, আর অতিতে ডুব দিলো,,,,,, সেদিন আকিবের ব্যবহারে আনহা খুব কষ্ট পেয়েছিল কিন্তু সেদিন বিকেলে মারিয়া ফোন করে যা বলল তাতে আনহার রাগ উধাও হয়ে গিয়েছিল,,,, সেদিন আনহাকে রুমে আটকে ভার্সিটিতে গিয়ে ওর বন্ধুদের কাছে নিজের মনের কথা শেয়ার করেছিল,,,,,ও বলেছিল আনহাকে ও কতটা ভালোবাসে,,,,,,,,,,সেখানে মারিয়া ও উপস্থিত ছিল,,,,,, তাই ও আনহাকে ফোন করে সবটা বলে,,,,, কিন্তু এখন একটা সমস্যা আনহা আকিবের মুখ থেকে কিভাবে ভালোবাসার কথা বের করবে,,,,,সেটাই ভেবে পাচ্ছে না,,,,,,,,
তিনদিন পার হয়ে গেছে,,,,,আনহা আর থাকতে পারছেনা,,,,,আকিবকে না দেখে থাকতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে,,,,,এই তিনদিনে আকিবকে ফোন করার জন্য অনেক বার ফোন হাতে নিয়েছে কিন্তু পরক্ষণে মারিয়ার কথা মনে পড়ল,,,, মারিয়া ওকে বারণ করেছে
আকিবকে কল করতে,,,,,,, কিন্তু আকিব তো ওকে একবার কল করতে পারত নাকি অভিমান করেছে,,,,,,,আনহা ভাবতে লাগলো আকিব কি ওকে ছাড়া থাকতে পারছে নাকি আনহার মতোই ছটফট করছে,,,,,,আনহা ভাবছে আর রুমের মধ্যে পায়চারি করতেছে
এমন সময় আনহার মায়ের ডাক পড়লো,,,,,
আনহা বিরক্ত হয়ে বসার রুমের দিকে পা বাড়ালো,,,,,,,,
আনহা: কি হলো মা এভাবে ডাকছো,,,,
আনহা আর বলতে পারল না সোফায় বসা মানুষটাকে দেখে চমকে গেল,,,,আকিব,,,,,, কিন্তু আকিব এখানে কেন,,,,
আনহাকে দেখে আকিব উঠে দাঁড়ালো আনহা আকিবের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে 
মা: আকিব তোকে নিয়ে যেতে এসেছে,,,,
আনহা এবার অবকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে,,,,আকিব ওকে নিতে এসেছে এটা হতেই পারে না,,,,আনহা নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখতাছে হুম,,,,,
মা: কি হলো,,,,যা রেডি হয়ে নে,,,,,
আনহা: কিন্তু মা আমি তো আরও কিছুদিন থাকব,,, আর তা তো বলেই এসেছিলাম,,,,,
আকিব: কেন তোমাকে নিতে এসেছি সেটা বাড়িতে গিয়েই জানতে পারবে,,,,এখন রেডি হয়ে এসো গো,,,,,
আনহা রেডি হতে চলে যায় কেন আকিব ওকে নিতে এসেছে ভেবেই পাচ্ছে না,,,,রেডি হয়ে বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ে,,,,,, গাড়িতে বসে আনহা ভাবনার জগতে ডুবে আছে,,,,কখন যে বাড়িতে এসে পড়ল সেটা খেয়াল করল না
আকিব: Excuse me আপনাকে কি কোলে করে নামাতে হবে নাকি,,,,,,
আনহার ধ্যান ভাঙে,,,,,
আনহা: হুম,,,,,, না,,,,, আমি যেতে পারব,,,,
বাড়িতে এসে আনহা ওর শ্বাশুড়ির থেকে জানতে পারল রিমি প্রেগন্যান্ট আজ দুপুরে সংবাদ রিমির শ্বশুরবাড়ি যাবে তাই আকিব গিয়েছিল আনহাকে আনতে,,,,,,
আনহা: ওহ তাহলে এই ব্যপার,,,,আকিব তাহলে মায়ের কথায় আমাকে আনতে গিয়েছে নিজের জন্য না,,,,,হুহ শয়তান একটা আমাকে একটুও মিস করেনি,,,,,
দুপুরে সবাই রিমির শ্বশুর বাড়িতে যায়,,,,,, আনহা রিম আর তানভীর কে congratulations জানায়,,,,
রিমি: আনহা সেদিনের রিপোর্ট টা তো ভুল ছিলো,,,,, তা সঠিক রিপোর্ট কবে পাবো,,,
আনহা কিছু বলল না শুধু দূরে বসে থাকা আকিবের দিকে একনজর দেখলো সবার সাথে বসে গল্প করছে আকিব,,,,,,
আনহা: এই নিরামিষ টা যে কবে বুঝবে আল্লাহ ই জানে,,,,, (মনে মনে)
বিকেল বেলা আকিব আর আনহা বাড়িতে চলে আসে,,,, আর ওর শ্বশুর শাশুড়ি থেকে যায়,,,,রিমি জোর করে রেখে দেয়,,,,,
আজকে সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে এই বৃষ্টির কোন থামাথামি নেই,,,,, সামনে শীত আসছে,,,, আর এখন বৃষ্টি,,,, নভেম্বরের এই সময়টাতে বৃষ্টি হয়,,,,, বৃষ্টির কারণে আকিব আজকে অফিসে যায়নি,,,, আর তার চেয়ে বড় কারন হলো আনহাকে একা বাড়িতে রেখে ও যাবে না,,,,,তাই সকাল থেকে রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে,,,,, বারোটার পর বৃষ্টি একটু থামে,,,,,,আনহা খাবার রেডি করে
গোসল করার জন্য রুমে যেতেই বাইরে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে,,,,,,,
আনহা দৌড়ে গিয়ে বাথরুমে কাপড় রেখে ঝড়ের গতিতে রুমে থেকে বেরিয়ে যায় পথেই আকিবের সাথে জোরে ধাক্কা,,,,,,
আকিব: উফফফ,,,,, ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে কোথায় যাচ্ছো,,,, দেখতে পাওনা নাকি এভাবে কেউ ধাক্কা দেয়,,,,,,
আনহা: এখন কথা বলার সময় নেই আমি যাই,,,,,
আকিব: যাই মানে কোথায়,,,,,
আনহা আকিবের কোন কথা না শুনেই দৌড় দিল,,,,,,,,,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ১৬

আকিব বুঝতে পারল না যে আনহা এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছে,,,,,,আকিব আনহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,আনহা সিঁড়ি বেয়ে সোজা ছাদে চলে গেল,,,,,,,
আকিব: আনহা এসময় ছাদে গেল কেন??
হুম গিয়ে দেখতে হচ্ছে,,,,,
আকিব ছাদে গিয়ে দেখে আনহা বৃষ্টিতে ভিজছে আর লাফালাফি করতেছে,,,, বৃষ্টির পানি আনহার পুরো শরীর ভিজিয়ে দিয়েছে
আনহার পড়া সুতি শাড়ি ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে,,,,,ভেজা শরীরের প্রিতিটি ভাজ স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে,,,,, খোলা চুলগুলো ভিজে পিঠ ও গলার সাথে লেপ্টে আছে,,,,,,
আনহা তো ভিজেই যাচ্ছে আর আকিব ছাদের রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনহাকে দেখতেছে,,,, এতে যে আকিব নিজেও ভিজে গেছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই,,,,ও আনহাকে
দেখতে ব্যস্ত,,,,,,, বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা আনহার মুখ ঠোঁট চোখ ভিজিয়ে দিচ্ছে,,,,,আকিবের এখন এই বৃষ্টির পানিকে হিংসা করছে যাকে এতো দিন ও ছুঁতে পারেনি তাকে এই বৃষ্টি অনায়েসেই ছুঁয়ে দিচ্ছে,,,,,,আকিব নেশাকাতুর চোখে আনহার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,আকিব যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনহাকে দেখতেছে সেটা আনহা খেয়াল করেনি,,,,, হঠাৎ পিছনে ঘুরতেই আকিব কে দেখে ওর কাছে যায়,,,,,,,,
আনহা: আরে আকিব তুমি এখানে,,,,,কখন এলে আর বৃষ্টিতে ভিজছো কেন একটু আগেই তো গোসল করলে,,,,,,,,ব্লা ব্লা ব্লা,,,,
আনহা বকবক করতেছে আকিব ওর কথায় কান দিল না,,,,আনহার দিকে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির পানি আনহার কপাল থেকে বেয়ে ঠোঁটের উপর দিয়ে গড়িয়ে গলা দিয়ে যাচ্ছে সেটাই পর্যবেক্ষণ করছে আকিব,,,,আনহা ওর সামনে হাত দিয়ে তুড়ি বাজাতেই আকিব ওর হাত ধরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল আনহা তো পুরাই হ্যাং,,,,আকিব একহাতে আনহার কোমড় চেপে ধরে আরেক হাত আনহার মাথার পিছনের চুল ধরে টেনে কাছে এনে আনহার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল,,,,আনহা নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলল,,,,আকিব আনহাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,,,,,
আকিবের এরকম কাজের জন্য আনহা মোটেও প্রস্তুত ছিল না,,,,,, কিছুক্ষণ পর আকিবের হুস আসে এতক্ষণ ধরে ও কি করছিল ও নিজেই জানে না,,,,এখন নিজের কাজের জন্য লজ্জা বোধ করছে আকিব আনহাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে নিলেই আনহা আকিবের হাত টেনে ধরে,,,,,এক টানে নিজের কাছে আনলো,,,,আকিবের দুপায়ের উপর আনহা নিজের পা রেখে আকিবের শার্টের কলার ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল,,,,,,,আনহার এহেম কান্ডে আকিব রোবট
তাকিয়ে দেখে আনহা নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে আছে,,,, বৃষ্টির পানি আনহার চোখের পাপড়ি বেয়ে পড়ছে,,,,,,আকিব ও নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে,,,,,
একটু বাদেই আনহা আকিবকে আস্তে করে ছেড়ে দিল,,,,, ঠোঁটের কোনায় একটা মশৃন হাসি দিয়ে বলল,,,,,
আনহা: তুমি তো খুব ভালো করেই জানো আমি কারো ঋণ রাখি না,,,,
আকিব মাথা নিচু করে চলে আসতে নিলে ওর সামনে আনহা বাঁধ সাধে,,,,ওর কলার টেনে ধরে
আনহা: আর কতদিন এভাবে চুপ করে থাকবে আকিব,,,,হুম,,,,, একবার ও নিজের মনের কথা বলতে পারলে না,,,,, নিজের ভালোবাসার কথাটা বলতে এত সময় নিচ্ছো
আমাকে দেখে তুমি কি কখনোই বুঝতে পারোনি যে আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি
বলো আকিব,,,,(বলো কলার ধরে ঝাঁকিয়ে)
আকিব কোন কথা বলছে না আনহার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,,
আনহা: Why are you silent,,,,,,আকিব,,,,
আজকে তোমাকে বলতে হবে,,,,যদি তুমি আমাকে ভালো না বাসো তাহলে আমি চলে যাব,,,,,, তোমাকে ছেড়ে,,,, তোমার লাইফ ছেড়ে,,,,,,
এবার আকিব মুখ খুলল,,,,,,,
আকিব: ওহ আচ্ছা,,,, (পকেটে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে) আমাকে ছেড়ে চলে যাবে,,,,, কিন্তু থাকতে পারবে তো,,,,,, আর এই আরিয়ান আদনান আকিব তোমাকে যেতে দিবে এটা ভাবলে কি করে,,,,,,, এরপরও তুমি যদি ভাবো যে তুমি চলে যাবে তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পার,,,যাওয়ার কোন পথ খুঁজে পাও কিনা,,,,,,
আনহা আকিবের কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল,,,,,এসব আকিব কি বলছে,,,,
আনহা: তুমি কি আমাকে ভালোবাসার কথা বলছ নাকি থ্রেড দিচ্ছ কোনটা হুম,,,,
আকিব: তুমি যেটা মনে কর,,,,,,,
আনহা: আর ইউ সিরিয়াস আকিব,,,, আমার চোখে কি কখনোই তুমি ভালোবাস দেখতে পাওনি,,,,,,
আকিব: না,,,,,
আনহা: আ,,,কি,,,,ব,,,,
আকিব আনহার কোমড়ে হাত দিয়ে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,,,,,
আকিব: আমি লেটারের দেখেছিলাম,,, তোমার চোখে না,,, (বাঁকা হেসে)
আনহা: মানে,,,,
আকিব: ওইদিন তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে পড়ছিলে,,,,,
আনহা: মানে তুমি পুরো লেখাটা পড়েছিলে
আকিব: হুম,,,, তুমি কি ভেবেছিলে,,,,, আমি পড়াতে মোটেই স্লো না ওকে,,,,
আনহা এবার রেগে যায়,,,,আকিবকে একটা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়,,,,,
আনহা: স্টুপিড,,,, বদমাইশ সয়তান,,,, বদের হাড্ডি,,,,, তাহলে এতো দিন আমাকে ঘুরালে কেন,,,,
আকিব: লেটারে আমার পোষাবে না,,,, বলতে হবে,,,,
আনহা: হুম বলতে হবে,,,,তাই না,,বলব না আর,,,,আই হেট ইউ,,, হেট ইউ,,,,,বদমাশের ঘরদুয়ার,,,,
বলতে বলতে আনহা চলে যেতে নিল,,,
আকিব: মিস আহিয়া আদনান আনহা,,,এই আরিয়ান আদনান আকিবের #ভালোবাসার_রং দিয়ে নিজেকে রাঙাতে চেয়েছিলেন না,,,,আর সেই #ভালোবাসার_রং
না নিয়েই চলে যাচ্ছেন,,,,
আকিবের কথায় আনহা পিছনে ঘুরে তাকালো,,,আকিবের ঠোঁটের কোণে মায়াবী হাসি,,,,,আনহা আকিবের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে আকিবের দিকে এগিয়ে আসছে আকিব পকেটে দুহাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
আনহা এসেই আকিবকে জড়িয়ে ধরল,,,,
আকিব ও পকেট থেকে হাত বের করে আনহাকে দুহাতে আগলে রাখে,,,, বৃষ্টিটা এখনো থামেনি,,, হয়তো ওদের সীমাহীন ভালোবাসার সাক্ষী হতে চায়,,,,তাই অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তেছে,,,,,,
আনহা: আই হেট ইউ,,(জড়িয়ে ধরা অবস্থায়)
আকিব: হেট ইউ টু,,,,(আনহাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে)
কিঞ্চিত হাসি দিল আকিব,,,,আনহাও মুচকি হাসি দেয়,,,,,,
❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️
আনহা শাড়ি চেঞ্জ করে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতেছে,,,,, আজকে বেশি ভিজে ফেলেছে
না জানি আবার ঠান্ডা লেগে যায়,,,,আকিব কোথা থেকে এসে আনহার হাতে হেয়ারড্রায়ার ধরিয়ে দিল,,,,
আকিব: নাও এবার তাড়াতাড়ি চুল শুকিয়ে ফেল,,,,,
আনহা: ইচ্ছে করে আমাকে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে এখন এসেছে হেল্প করতে,,,,,
আকিব: আমি কি করলাম তুমিই তো ভিজলে আমি তো পরে গেলাম,,,,,
আনহা: ওহ আচ্ছা,,,,, তোমার সাথে বকবক করতে করতে যে আমি কতটা ভিজে গেছি
এখন যদি ঠান্ডা লাগে,,,,,
আকিব: ওহ এখন সব দোষ আমার,,, তোমার জন্য তো আমি দুবার গোসল করলাম এখন যদি ঠান্ডা লাগে,,,,
আনহা: তোমার সাথে কথায় পারা যাবে না
যতসব,,,,
হেয়ার ড্রায়ার ঠাস করে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে চলে যেতে নিলে আকিব আনহাকে টেনে ধরে,,,,আয়নার সামনে দাড় করিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে আনহার চুলগুলো শুকিয়ে দিল,,,,,
আনহা আয়নায় তাকিয়ে আছে আর আকিবের কাজ দেখতেছে,,,,চুল শুকানো শেষে,,,,,
আকিব: নাও এবার আর ঠান্ডা লাগবে না হ্যাপি,,,, এবার গিয়ে কফি নিয়ে আসো দুকাপ
বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখা আর কফি খাওয়ার মজাই আলাদা,,,,,
আনহা: ওকে,,,,
আনহা গিয়ে দুকাপ চা বানিয়ে নিয়ে বারান্দায় যায়,,,, গিয়ে দেখে আকিব একটা সিঙেল কম্বল গায়ে জড়িয়ে বসে আছে,,,,
আনহা: একি,,,, এভাবে বসে আছো কেন,,,
আকিব: প্রচুর শীত করতেছে,,,,
আনহা: ওহ,,,,এই নাও চা,,,,
আকিব: আমি তো কফি আনতে বললাম
আনহা: খেয়ে দেখ ভাল লাগবে,,,চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা,,,,
আনহা পাশের টেবিলে চায়ের ট্রে রাখলো আকিব আনহার হাত ধরে নিজের সামনে বসিয়ে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে ধরে,,,,
আনহা: এটা কি হলো,,,,
আকিব: এই কম্বলে শীত মানছে না,,, তবে এখন গরম হয়ে গেছি,,,,,,
আকিবের কথায় আনহা একটু না অনেকটাই লজ্জা পায়,,,, লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল
আকিব: এই যে লজ্জাবতী লতা,,চা দিন ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে তো,,,,,
আনহা: ওহ হ্যা,,,,এই নাও,,,,,
আকিব: কিন্তু খাবো কিভাবে,,,,,হাত বের করতে পারব না,,,, তবে কেউ যদি খাইয়ে দেয় তবে খেতে পারি,,,,
আনহা: ওহ আচ্ছা,,,কেউ খাইয়ে দেবে,,,, ওকে তাহলে রিধিকে একটা কল করি ও এসে তোমাকে খাইয়ে দেবে,,,,,
আকিব: ওকে নো প্রবলেম,,,,
আনহা: কি বললে তুমি 😡😡😡
আকিব: তুমি যদি ডাকতে পারো তাহলে আমি ও খেতে পারব ওর হাতে,,,,
আনহা: খাওয়াচ্ছি তোমাকে রিধির হাতে চা
বলেই আনহা আকিবের গাল চেপে ধরে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ায়,,,,,জোর করে পুরো চা খাইয়ে দেয়,,,,
আকিব: উফফফ,,,দিলে তো আমার মুখ পুরিয়ে,,,,
আনহা: বেশ হয়েছে এখন আর রিধির নাম মুখে আনতে পারবে না,,,,
আনহা উঠে যেতে নিলে আকিব একটানে আবার নিজের কাছে নিয়ে এলো,,,, শক্ত করে আনহাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবালো,,,,
আকিবের পরশে আনহা কেঁপে উঠল,,,,
আকিব আনহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,,,,
আকিব: আমার কাছে থেকে তুমি কখনো দূরে যেতে চাইলে ও পারবে না,,,, কারণ একটা অদৃশ্য বিনি সুতায় আমরা দুজনে বাঁধা শত চেষ্টা করলেও সেটা ছেঁড়া যাবে না,,,,,
আনহা কিছু বললো না শুধু আকিবের পরশ গুলো অনুভব করতে লাগলো,,,,
দুজনে একসাথে বসে বৃষ্টি দেখতেছে এভাবেই  সারাজীবন একসাথে থাকতে চায় দুজনে জীবনে আর কোন ঝড় দেখতে চায় না,,,,,
❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️
রাতে হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে যায়,,,,আনহা তখন রুমে একা ছিল,,,,আনহা জোরে জোরে আকিব কে ডাকতে লাগল,,,আকিব রুমে চলে আসে,,,,, ফোনের ফ্লাস অন করে,,,,
আনহা: কোথায় ছিলে,,,, তুমি জানো আমার খুব ভয় লাগছিল,,,,, এখন কি করব 
আকিব: ওয়েট আমি ক্যান্ডেল জ্বালাচ্ছি,,,,
আকিব আলমারির ড্রয়ার থেকে অনেকগুলো রং বেরঙের ক্যান্ডেল বের করলো,,,,,, রুমের একেক জায়গায় একেক টা রেখে জ্বালিয়ে দিলো,,,,
আনহা: ওয়াও খুব সুন্দর তো ক্যান্ডেল গুলো কিন্তু এতো দিন তো দেখিনি,,, তুমি বুঝি লুকিয়ে রেখেছিলে কিন্তু কেন,,,,,
আকিব: হুম,,,,(হাত দিয়ে মাথা চুলকে) তুমি হয়তো ভুলে গেছ এই ক্যান্ডেল গুলো আমাদের বাসর ঘরে জ্বালানো ছিল আর আমি সেগুলো নিভিয়ে দিয়েছিলাম,,,,
আনহা: হুম,,,,,(ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে)
আকিব: কিন্তু দেখ সেই ক্যান্ডেল গুলো আমি আবার জ্বালালাম,,,,(আনহার কাছে এসে)
কি অদ্ভুত না,,,, সেদিনের ক্যান্ডেল আর আজকের ক্যান্ডেলগুলোর মধ্যে অনেক তফাৎ,,,,
আনহা: কি রকম,,,
আকিব: সেদিন ক্যান্ডেল গুলো ভালোবাসার কোন আলো জ্বালাতে পারেনি আর আজকে ভালোবাসার আলো জ্বালিয়েছে,,,,
মোমবাতির আলোয় দুজন দুজনকে দেখতেছেদুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে এক অদম্য ইচ্ছা ভালোবাসা দুজনের চোখে ফুটে উঠেছে,,,,, হঠাৎ আকিব আনহাকে জড়িয় ধরে,,,,, হঠাৎ জড়িয়ে ধরাতে আনহা একটু অবাক হয়,,,,,,তারপর ও নিজেও আকিবকে জড়িয়ে ধরে,,,,,,
আকিব: প্লিজ আনহা আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যেও না,,,,, আমি থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া,,,,আই লাভ ইউ সো মাচ,,,,
প্লিজ,,,,,
আনহা: এভাবে বলছো কেন,,,, আর আমি ই বা কোথায় যাব,,,,এটা কেমন প্রশ্ন,,,
(আকিবকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে)
আকিব: আমি জানি না,,,,,, তবে আমার কেমন যেন ভয় হচ্ছে,,, তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়,,,,
আনহা: মেয়েদের মতো এতো ভয় পাচ্ছ কেন আমাকে দেখনা,,, আমি কি ভয় পাচ্ছি,,,, তুমি যতটা ভয় পাচ্ছ একটা মেয়েও ততটা ভয় পায় না,,,,,
আকিব: কি বললে আমি মেয়েদের মতো ভয় পাই,,,,
আনহা: হুম পাও তো,,,, শুধু ভয় না মেয়েদের মতো লজ্জা ও পাও,,,,,
আকিব: তাই বুঝি,,,,, তাহলে দেখা যাক আজকে কে লজ্জা পায়,,,,,
আনহা: হুম,,, কিভাবে,,,আ,,,,আনহা কিছু বলার আগেই আকিব আনহাকে কোলে তুলে নিল,,,,,,
আনহা: আকিব কি করছো ছাড়ো,,,পরে যাব পড়ে গেলে আমার কোমড়ের সব হাড় গুড়ো গুড়ো হয়ে যাবে,,,,
আকিব: ভয় পাচ্ছ কেন আমি তো আছি একদম জায়গামতো গিয়ে নামাব,,,, (হেসে)
আনহার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না লজ্জায় ও লাল নীল সবুজ হয়ে গেছে,,,,,
আকিব আনহাকে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে দিল আনহার মুখটা দেখার মতো ছিল,,,,আকিব তা দেখে হেসে বলল,,,,,,
আকিব: হুম ভিতু আর লজ্জাবতী কে এখনই প্রমাণ হয়ে গেল,,,,
আনহা: দেখ আকি,,,,,
আকিব আনহার ওষ্ঠদ্বয় নিজের দখলে নিয়ে নিল,,,,,আনহা দুহাতে আকিবের শার্ট খামচে ধরে,,,,আস্তে আস্তে গভীর ভাবে,,,, গভীর ভালোবাসায় দুজনে ডুব দিলো,,,,,,
❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️
রাত দুটো বাজে,,,,আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে
মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে,,,, বৃষ্টি ও হচ্ছে খুব
আকিব ঘুমিয়ে আছে,,,,,, আর আনহা আকিবের পাশেই শুয়ে আছে,,,,, কিন্তু ওর ঘুম আসছে না,,,,আকিবের দিকে চেয়ে আছে
আকিব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ১৭

আনহা আকিবের গালে হাত দিয়ে স্লাইড করতেছে,,,,আকিবের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে আনহা,,,, অসম্ভব সুন্দর লাগছে আকিবকে চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে,,,,যার কারণে আকিবের সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে,,,,আনহা আকিবের চুলগুলো আরও এলোমেলো করে দিল,,,, তারপর আস্তে আস্তে আকিবকে ডাকতে লাগল,,,,,,
আনহা: আকিব,,,,,আকিব,,,,
আকিব: উমমমম,,,,(ঘুমের ঘোরে)
একটু নড়ে চড়ে আবার ঘুম,,,,,
আনহা: উফফফ,,,আকিব,,,(একটু জোরে) আমার ঘুম মাটি করে এখন নিজে মরার মত ঘুমাচ্ছে,,,,
আকিব চোখ মেলে তাকায়,,,,,
আকিব: হোয়াট হ্যাপেন্ড,,,,,ঘুম পাচ্ছে তো,,,,
আনহা: কিন্তু আমার ঘুম আসছে না,,,,সো তুমিও ঘুমাতে পারবে না ওকে,,,,,,
আকিব আনহাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ওর বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল,,,,
আনহা: এটা কি হচ্ছে,,,,, আমার ঘুম আসছে না আর তুমি এভাবে ঘুমাচ্ছ ওঠো,,,,
আকিব আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আনহাকে,,,,,যার কারণে আনহা ওকে ঠেলে সরাতে পারছে না,,,,,, অবশেষে ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিল,,,,আকিব আনহার হাত টেনে নিয়ে ওর মাথার উপর রাখল,,,,আনহা মুচকি হেসে আকিবের সিল্কি চুলগুলো আস্তে আস্তে টানতে লাগলো,,,,, এভাবে আনহাও একসময় ঘুমিয়ে পড়ল,,,,,,
সকালে রৌদ্রের মৃদু আলো চোখে পড়তেই আনহার ঘুম ভাঙ্গে,,,,, তাকিয়ে দেখে রোদের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে দেখে বোঝাই যায় না যে কালকে অনেক বৃষ্টি হয়েছিল,,,,,আকিব এখনো আনহার বুকের উপর ঘুমানো আনহা আস্তে করে আকিবকে সরিয়ে বাথরুমে চলে যায়,,,,,গোসল সেরে শাড়ি পরে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে দেখে আনহা গিয়ে আকিবকে ডাকতে লাগলো,,,,,
আনহা: আকি,,,,,ব ওঠো তাড়াতাড়ি,,,,কয়টা বাজে খেয়াল আছে,,,,,
আনহার ডাকে আকিব লাফ মেরে উঠল,,,,,
আকিব: উফফফ দিলে তো আমার সুন্দর স্বপ্ন টাকে নষ্ট করে,,,,
আনহা: ওহ তাই,,,,এতো স্বপ্ন কেন দেখ চুপচাপ ঘুমাবে স্বপ্ন দেখার দরকার কি,,,
আনহার কথায় আকিব একদফা অবাক হয়,,
আকিব: ওয়াট,,,,স্বপ্ন দেখার পিছনে আমার হাত কোথায়,,,,,ঘুমালে তো যে কেউ স্বপ্ন দেখে,,,, তুমি ও তো দেখ,,,, আর আমি কি ইচ্ছে করে স্বপ্ন দেখি,,,,,
আনহা: তুমি ইচ্ছে করেই উল্টা পাল্টা স্বপ্ন দেখ,,,,এখন কথা না বলে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো আমি নাস্তা রেডি করছি,,,,
আকিব: আরেকটু ঘুমিয়ে নেই,,,,
আনহা: তাহলে অফিসে কি আমি যাব,,,,
আকিব: না না আমি যাব কিন্তু আজকে না কালকে,,,,,
আনহা: কি,,,,, আমি এক্ষুনি বাবাকে ফোন করে বলছি,,,,,
আকিব: আচ্ছা জ্বালায় পড়লাম তো,,, আল্লাহ আমার মতো শাকচুন্নী বউ যাতে আর কারও কপালে না পরে,,,,,
আনহা: কি আমি শাকচুন্নী,,,, ওকে থাক তুমি এখানে আমি যাই,,,,একদম আমার কাছে আসবে না,,,,রিধির কাছে যাও,,, গো,,,,
হাতের তোয়ালে আকিবের মুখের উপর ছুড়ে মেরে চলে যায়,,,,,আকিব ও হাসতে হাসতে ওয়াসরুমে চলে যায় আনহাকে রাগাতে আকিবের বেশ ভালো লাগে,,,তাইতো বারবার
রাগিয়ে দেয়,,,,,
ফ্রেশ হয়ে আকিব নিচে যায়,,,,আনহা খাবার রেডি করতেছে আকিব গিয়ে বসে,,,,,আনহা এখনো রেগে আছে,,,,ঠাসঠুস প্লেট গ্লাস আকিবের সামনে রাখে পারলে ওর মাথায় ছুঁড়ে মারে,,,,, কিন্তু মারে না,,,,,আকিবকে খাবার দিয়ে চলে যেতে নিলে আকিব আনহার হাত ধরে টেনে নিয়ে ওর পাশের চেয়ারে বসায়
তারপর নিজের হাতে খাইয়ে দেয়,,,,আনহা প্রথমে খেতে চায়না,,,, কিন্তু আকিবের ইনোসেন্ট ফেস আর চোখের দিকে তাকিয়ে না খেয়ে থাকতে পারেনা,,,,আনহাকে খাইয়ে আকিব নিজেও খেয়ে নিল,,,,,তারপর অফিসে যাওয়ার জন্য দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসে,,,,,আনহা তখন টেবিল গোছাচ্ছিল,,,,আকিবকে আসতে দেখে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে,,,,
আকিব এসেই আনহার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল,,, মুচকি হেসে চলে গেল,,,,,
আনহা আকিবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিল,,,,,,,
আকিব চলে যাওয়ার পরে ওর শ্বশুর শাশুড়ি আসে,,,,, সাথে রিমি কেও নিয়ে আসে,,,,, কয়েকদিন রিমি এখানেই থাকবে,,,,আনহা ও খুব খুশি কারণ এতদিন একা থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছে এবার রিমির সাথে থাকলে সময় তাড়াতাড়ি কাটবে,,,,
আনহা: উফফ আকিব আর কতক্ষন লাগবে
এক ঘন্টা যাবত বসিয়ে রেখেছ,,,,ছবি আঁকতে আর কতো সময় লাগবে,,,,
আকিব: ব্যাস আর পাঁচ মিনিট,,,,,
আনহা: পাঁচ মিনিট করতে করতে ঘন্টা পার করে দিলে,,,, এখনো তোমার পাঁচ মিনিট শেষ হলো না,,,,,উফফ
আকিব:নাও,,,,,, পেইন্টিং কম্পিলিট,,,,
আকিব গিয়ে আনহাকে এনে পেইন্টিং এর সামনে দাঁড় করালো,,,,
আনহা: বিউটিফুল,,,,ওয়াও,,,,
আকিব: হুম,,,,কার পেইন্টিং দেখতে হবে না
আনহা: আমি সেটা বলিনি,,,,বলেছি আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে,,,,,
আকিব: 😳😳😳 (বড় একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো) হুম,,,কার বউ দেখতে হবে না,,,,
আনহা: হুমমম,,, কিন্তু ছবি আঁকতে গিয়ে হাতে আর শার্টে রঙ লাগিয়ে কি করেছ,,,,,
আকিব পিছন থেকে আনহার কোমড় ধরে ফলে আনহার পেটে অনেকটা রঙ লেগে যায়
আকিব: নো প্রবলেম,,,,,এটা তো ভালোবাসার রং,,, আর সে রং দিয়ে তোমার ছবি এঁকেছি
আমার গায়ে লাগলে সমস্যা কোথায়,,,,,
আনহা: এসবের কি দরকার ছিলো নিজের ও কষ্ট হলো,,,,কত টাইম লাগলো,,,,
আকিব: লিসেন এটুকু সময় কিছুই না আমি তো তোমার জন্য সারাজীবন ধরে এভাবে পেইন্টিং করতে চাই Because you are my love,,, life,,,,and #You_are_my_lifeline
আনহা: ওকে তাহলে আমি তোমার ছবি আঁকবো,,,,
আকিব: রিয়েলি,,,,, তুমি পারবে,,,
আনহা: কেন পারব না,,,, তুমি পেইজটা চেঞ্জ করে আমার জায়গায় গিয়ে বসো দেখবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোমার ছবি এঁকে দিব,,,,
আকিব: ওকে,,,,
আকিব পেইজ চেঞ্জ করে গিয়ে চেয়ারে বসে
আনহা পাঁচ মিনিট ধরে আঁকিবুঁকি করে,,,,
আনহা: কম্পিলিট,,,,আকিব এসে দেখে যাও
আকিব পুরোই অবাক,,,,এতো তাড়াতাড়ি ছবি আঁকা ইম্পসিবল তবুও আকিব এগিয়ে যায় দেখার জন্য,,,,পেইন্টিন এর সামনে গিয়ে আরেকদফা অবাক হয়,,,,,আনহা আকিবের ছবির জায়গায় একটা কাকতাড়ুয়ার ছবি এঁকেছে,,,,,আকিব রাগি চোখে পেছনে তাকায় কিন্তু আনহা নেই অনেক আগেই পালিয়েছে,,,,,আনহা দরজার পাশেই দাঁড়ানো ছিল,,,,আকিব কে ডেকে একটা ভেংচি কেটে দৌড়ে চলে গেল,,,,,,,
আকিব: এখন পালাও,,,, একবার তোমাকে বাগে পাই,,,,,,
রাতে আকিব বিছানায় শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিল,,,,আনহা কফি হাতে রুমে যায়
আকিবের দিকে কফি এগিয়ে দেয়,,,,,আকিব কফি নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে আনহাকে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়,,,, হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে,,,,,
আকিব: আমাকে দেখে কি তোমার কাকতাড়ুয়া মনে হয়,,,,হুম,,,,
আনহা: না,,,,,,
আকিব: তাহলে কাকতাড়ুয়ার ছবি এঁকেছিলে
কেন,,,,,
আনহা: এ এমনি,,,,
আকিব: এমনি,,,,,
আনহা: রিমি আপু,,,,(দরজার দিকে তাকিয়ে)
আকিব ঘাবড়ে গিয়ে দরজার দিকে তাকায়
আনহা আকিব কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠেই দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল পিছনে ঘুরে দেখল আকিব বোকার মতো তাকিয়ে আছে,,,,আনহা আকিবকে আবার ভেংচি কেটে দৌড়ে চলে গেল,,,,আকিব তো রাগে ফুলে ঢোল হয়ে গেছে,,,,,
ডিনার সেরে আকিব আগেই রুমে চলে গেল আনহা সবকিছু গুছিয়ে তার পর রুমে যায়,,,,,
রুমের দরজাটা ভেজানো ছিল,,,,আনহা আস্তে আস্তে দরজাটা একটু ফাঁক করে রুমে উঁকি দিল সারা রুমে চোখ বুলিয়ে দেখল আকিব নেই,,,,,,
আনহা: মনে হচ্ছে বাথরুমে না হয় বারান্দায়
আমি এখন তাড়াতাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়ি,,,না হলে এযাত্রায় রক্ষা নেই,,,,,
আনহা কোন দিকে না তাকিয়ে রুমে ঢুকে একটু এগোতেই ঠাস করে দরজা লাগানোর শব্দে পিছনে ঘুরে তাকায়,,,,, আর কেউ নয় আকিব এতোক্ষণ দরজার পিছনে লুকিয়ে ছিল তাই আনহা দেখতে পায়নি,,,আকিবকে দেখে আনহা শুকনো ঢোক গিলল আকিব আনহার দিকে এগিয়ে আসছে আনহা দৌড় দিতে নিলেই আকিব ওর হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে আনহার পিঠ মিশিয়ে নেয়,,,আনহার এক হাত পিছমোড়া করে ধরে আছে,,, আর অন্যহাতে আনহার কোমড় আর হাত সহ ধরে আছে,,,,আনহা ছোটার শত চেষ্টা করেও পারল না শেষে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,,,,,,
আকিব: আমাকে কাকতাড়ুয়া বানানো তাইনা
এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে,,,,
আনহা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেল,,,,,
আনহা: কি শাস্তি,,,,, বিশ্বাস করো আমি মজা করে এঁকেছিলাম আর আমি কি তোমার মতো
ভালো ছবি আঁকতে পারি,,,,
আকিব: সেটা আমার জানার দরকার নেই আমি তোমাকে এখন শাস্তি দেব,,,,,
বলতে বলতে আকিব আনহার ঘাড়ে নিজের
ঠোঁট বুলাতে লাগল,,,,আনহা আকিবের পরশে বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে,,,,আকিব নিজের কাজে ব্যস্ত,,,,, এতদিন পর ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেল,,,,আকিব চায়না আনহাকে এক মুহূর্তের জন্য দূরে রাখতে চায় না এভাবেই সারাজীবন আনহাকে নিজের পাশে পেতে চায়,,,,
❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️❣️
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আনহা নিজেকে আকিবের বুকের উপর আবিস্কার করে,,,,,,
আকিব আনহাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ঘুমিয়ে আছে,,,,,আনহা আকিবের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আকিব আরও জোরে নিজের সাথে ওকে চেপে ধরে,,,,,
আনহা: উফফফ আকিব ছাড়ো,,,,, আমাকে যেতে হবে,,,,
আকিব: আমি না ছাড়া পর্যন্ত তুমি কোথাও যেতে পারবে না কথা না বলে চুপচাপ ঘুমাও আর আমাকে ও ঘুমাতে দাও,,,,
আনহা আর কি করবে আকিবের কথাই মানতে হবে,,,,,ও আকিবের বুকের মধ্যেই শুয়ে আছে যদিও ঘুম আসছে না তবুও শুয়ে আছে,,,,,
আজকে আকিব অফিসে যায়নি কারণ আজকে আনহা আর রিমিকে নিয়ে ঘুরতে যাবে,,,,,
বিকেলে সবাই রেস্টুরেন্টে যায় খেতে,,,,,
রিমি শুধু খেয়েই যাচ্ছে,,,,, আর আকিব চেয়ে চেয়ে দেখতাছে,,,,,
আকিব: আপু আস্তে খা,,, খাবার তো পালিয়ে যাচ্ছে না,,,,
রিমি: তুই চুপ কর,,,,, তুই কিছু বুঝবি না,,,,
আকিব: এখানে বোঝাবুঝির কি আছে,,,
আনহা: আকিব চুপ থাকো,,,,,, আপুর সাথে ঝগড়া না করলে ভালো লাগে না তোমার,,,,
রিমি: এখন বুঝবি না যখন সময় আসবে তখন ঠিকই বুঝবি এখন আমাকে খেতে দে,,,,
আনহা একটু লজ্জা পেল কিন্তু আকিব কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,,, খাওয়া শেষে ওরা পার্কে গেল ঘুরতে,,,,,,, ওখানে গিয়ে সোহানের সাথে দেখা,,,,আকিব সোহানকে দেখে ওর কাছে গিয়ে সোহানের সাথে হ্যান্ডসেক করে,,,,,
আকিব: হে ব্রো কেমন আছো,,,,,,
সোহান: ভ ভালো,,,,,
আকিব: সাথে কে ভাবি নাকি,,,,, (সোহানের পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে)
সোহান মাথা নাড়ায়,,,,সোহান বুঝতে পারে না যে আকিব সোহানের ওপর ক্ষেপা সেই আকিব সোহানের সাথে ভালো ব্যবহার করতেছে,,,,,আনহাও অবাক,,,,,
রিমি: আকিব তুই ওকে চিনিস,,,,,
আকিব: হুম,,,,,ফ্রেন্ড,,,,,
রিমি: ওহ,,,,,শোন (সোহানের দিকে তাকিয়ে) আমাদের বাসায় তোমার বউকে নিয়ে আসবে কিন্তু,,,,,
সোহান মাথা নাড়ল,,,,আকিবের তো ভিশন হাসি পাচ্ছে কোনরকম হাসি থামালো,,,,,
আকিব: আচ্ছা আসি আমরা চলো,,,,,,
সোহান হাবলার মতো তাকিয়ে ওদের যাওয়া দেখতেছে,,,,আকিব কিছু দূর গিয়ে আবার সোহানের কাছে ফিরে এসে বলল,,,,,
আকিব: থ্যাঙ্কস,,,,আনহাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য,,,,
বলেই আকিব চলে গেল,,,,,সোহান তো পুরাই শোকড,,,,,,
রাতে,,,,,,,,,,
আনহা: সোহানের সাথে এতো ভালো ব্যবহার
কি ব্যপার,,,,,
আকিব গিয়ে পেছন থেকে আনহাকে জড়িয়ে ধরে,,,,
আকিব: কারণ ও না থাকলে আমি তোমাকে পেতাম না,,,,তাই ওকে আজকে ধন্যবাদ দিয়ে আসলাম,,,,,(আনহা ঘাড়ে নিজের নাক ঘষে)
আনহা: তাহলে আমাকে তো রিধিকেও থ্যাঙ্কস দিতে হবে,,,,,
আকিব: কেন,,,,,
আনহা: তুমি তো জানো আমি কারো ঋণ রাখি না,,,,,, তুমি আমার এক্সকে থ্যাঙ্কস জানিয়েছ আর আমি তোমার এক্সকে জানাব
সিম্পল,,,,,,
আকিব: ওকে পরের বার যখন রিধির সাথে দেখা হবে তখন জানিয়ে দিও,,,,,
দু'জন একসাথে হেসে ওঠে,,,,,আকিব আনহাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল,,,,,,
এমন সময় দরজায় টোকা পড়তেই আকিব আনহাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলল,,,,,দেখল
রিমি এসেছে,,,,,
আকিব: আপু তুমি,,,,,
রিমি: আনহাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আয় বাবা ডাকছে,,,,,
এটা বলেই রিমি চলে যায়,,,,আকিব একটু অবাক হয়,,,, তার পর আনহ আর আকিব একসাথে নিচে আসে,,,, নিচে এসে ওরা আরও অবাক হয়,,,,আকিব একটু খুশি হয় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে,,,,,,,
আকিব: ভাইয়া,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আকিব দৌড়ে গিয়ে রাকিবকে জড়িয়ে ধরে,,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ১৮

আকিব: ভাইয়া,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আকিব দৌড়ে গিয়ে রাকিবকে জড়িয়ে ধরে,,,,,আনহা রাকিবকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে,,,,
আকিব: ভাইয়া তুমি,,,,(রাকিবকে ছেড়ে)আই এম সো হ্যাপি,,,,,,,বাবা প্লিজ ভাইয়াকে ক্ষমা করে দাও,,,,,,প্লিজ,,,
রাকিব: বাহ ভেরি নাইস আকিব,,,,(হেসে) আর কত নাটক করবি এবার তো থাম,,,,,
সাথে সাথে আকিবের মুখটা মলিন হয়ে গেল রাকিব কি বলছে আকিব কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,,,,বাড়ির সবাই অবাক,,,,
আকিব: মানে ভাইয়া তুমি কি বলতে চাইছ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,,,,,নাটক মানে
রাকিব: বুঝতে পারছিস না নাকি বুঝতে চাইছিস না,,,,,
মা: কি হচ্ছে রাকিব,,,,,একে তো আমাদের সম্মান ডুবিয়ে দিয়েছিস এখন আবার কি শুরু করেছিস,,,,,
বাবা: আমরা তোমার কোন কথা শুনতে চাই না,,,,আকিবের সাথে তোমার কথা শেষ এখন তুমি আসতে পারো,,,,,
আনহা আর রিমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কি হচ্ছে আগাগোড়া কিছুই বুঝতেছে না ওরা
রাকিব: বাবা সবে তো কথা শুরু আজকে সব কিছুর হিসেব আমি বুঝাব,,,,,
আকিব: ভাইয়া তুমি একটু ক্লিয়ার করে বলবে
রাকিব: তুই জেনেও সবকিছু  না জানার ভান করছিস ওকে তাহলে আমি ই বলি,,,,, বিয়েটা তো তোর প্ল্যান মাফিক হয়েছে
আকিব: বিয়ে,,,,
রাকিব: হুম,,,,,, প্ল্যান করেই তো আমাকে সরিয়ে তুই আনহাকে বিয়ে করলি,,,, আর আমাকে সবার সামনে খারাপ করে নিজে ভালো মানুষ হয়ে গেলি,,,,তোর তারিফ না করে থাকা যায় না,,,,,
বাবা: এসব কি বলছ তুমি,,,,,,
রাকিব: ঠিকই বলছি বাবা,,,,,,জানো সেদিন কি হয়েছিল,,, তাহলে শোন,,,, আমি গাড়ি থেকে নেমে আমার বন্ধুর জন্য ওয়েট করছিলাম আর তখন আকিবের লোকেরা এসে আমাকে তুলে নিয়ে যায়,,,আর তোমরা আকিবের সাথে আনহার বিয়ে দিলে আর আমি খারাপ হয়ে গেলাম,,,, কি ঠিক বলছি তো আকিব (আকিবের দিকে তাকিয়ে)
আকিবের পা থেকে মাটি সরে যায়,,,,,রাকিব মিথ্যে কেন বলতেছে ও কিছু ভেবে পাচ্ছে না
বাবা: মিথ্যা বলো না,,,, কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে,,,,
রাকিব: আমি জানি বাবা,,, আমাকে প্রমাণ দিতে হবে,,,,, আর প্রমাণ সঙ্গে করে নিয়ে
এসেছি,,,, অফিসার প্লিজ কাম,,,,,
তিনজন পুলিশ দুজন লোককে নিয়ে বাড়িতে ঢুকল,,,,,,,
রাকিব: এই হলো আকিবের ভাড়া করা লোক ওরাই আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল,,,,, আমি এতদিন প্রমাণের কারণে সবাইকে সত্যিটা বলতে পারিনি,,,, কিন্তু আজকে আমি প্রমাণসহ এসেছি,,,,, অফিসার (পুলিশের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো)
অফিসার: এই বল সব সত্যি,,,,,,
__ হ্যা আকিব স্যার আমাদের টাকা দিয়ে বলেছিল ওনার ভাইকে কিডন্যাপ করতে,,,,
আমরা টাকার জন্য তাই করেছিলাম,,,,,
একথা শুনে আকিব দুকদম পিছিয়ে যায় আকিব আর নিজের মধ্যে নেই কোন এক অজানা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেছে ও,,,,,বাড়ির সবাই কেমন যেন হয়ে গেছে রাকিবের কথা শুনে আনহা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল,,,,,আনহা এসব কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না,,,,,,,,সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে ওর কাছে,,,,আনহা আস্তে আস্তে আকিবের সামনে যায়,,,, কাঁপা কাঁপা হাতে আকিবের শার্ট ধরে টানতে টানতে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,,,
আনহা: আ,,কিব,,,,এসব কি সত্যি,,,, হুম বল
তুমি সত্যি এসব করেছ বলো,,,(একটু জোরে)
আকিব: আনহা,,,, ট্রাস্ট মি,,, আমি এসব কিছুই করিনি,,,, আমি এসবের কিছুই জানি না,,,,
রিমি: এক্সজাটলি,,,,আকিব এরকম ছেলে না আমি বিশ্বাস করি না,,,,,
রাকিব: আমি জানি এসব কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না তাই আমি সব প্রমাণ নিয়েই এসেছি
আমার সত্যি ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে আকিব আমার সাথে এমনটা কিভাবে করতে পারল ও যদি একবার আমাকে বলত যে ও আনহাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে আমি ওর কথাই মেনে নিতাম,,,,,, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আনহার সাথে ওর বিয়ে দিতাম,,,,,
মা: ছিঃ আকিব তুই এতটা নিচে কিভাবে নামতে পারলি,,,,, আমার তোকে নিজের ছেলে ভাবতে লজ্জা করছে,,,,,
বলতে বলতে তিনি সোফায় বসে পড়ে আকিবের বাবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,,,
আকিব ওর বাবাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে তিনি আকিবকে থামিয়ে দিল,,,,
বাবা: আকিব তুমি এমনটা করতে পারবে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি,,,, কেন করলে
এখন তো তোমাকে পুলিশে দেওয়া উচিৎ,,,
রাকিব: না বাবা আমি এসব চাই না এতে আকিবের লাইফটা নষ্ট হয়ে যাবে,,, আমি এটা চাই না,,,, অফিসার আপনি ওদেরকে নিয়ে চলে যান,,,,,
পুলিশ চলে যায়,,,,,,
আকিব ফ্যালফ্যাল চোখে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,কেউ ওর কথা বিশ্বাস করছে না,,,,,আকিব আনহার কাছে যায়,,,,
আকিব: বিশ্বাস করো আনহা,,,,,এটা সত্য না
আনহা এবার মুখ খুলল,,,,,
আনহা: তাহলে সত্যিটা কি,,,,,
আকিব: আনহা,,,,,
আনহা: বলো তাহলে সত্যিটা কি,,,, তুমি এতটা নিচ মনের মানুষ সেটা আমি আজ বুঝলাম,,,, ছিঃ তুমি কেন করলে এটা কেন
(কলার ধরে ঝাঁকিয়ে)
আকিব: আনহা প্লিজ ট্রাস্ট মি এসব মিথ্যে
আনহা: তাহলে ওই লোক গুলো কেন তোমার নামে মিথ্যা কথা বলবে,,,,,বলো কেন আমার লাইফ নিয়ে খেলা করলে,,,,,কেন এতো নাটক করলে,,,,,
আকিব: আনহা আমার কথাটা একবার শোন
(আনহার বাহু ধরে)
আনহা আকিবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল,,,, চোখের পানি ওর বাধ মানছে না যে আকিবকে এতো বিশ্বাস করল,,ভালোবাসলো
সেই আকিব ওকে ঠকালো এটা আনহা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না,,,,
আনহা: অনেক হয়েছে,,, আর না তোমার মতো একটা জঘন্য মানুষের সাথে এক ছাদের নিচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না,,,,,,
আনহা উপরে চলে যায়,,,,,আকিব ও পিছু পিছু যায়,,,,,,আকিবের বাবা মা সোফায় বসে পড়ল,,,রিমি ওর মাকে সামলাচ্ছে আনহা এক দৌড়ে রুমে চলে আসে ওর ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে,,,,আকিবকের কাজে ওর ঘৃণা হচ্ছে,,এই আকিবকে ও কিনা ভালোবেসেছিল
ছিঃ,,,,,আনহা নিজের ব্যাগ গোছাচ্ছে,,,,,, আকিব আনহাকে বাঁধা দিচ্ছে আকিব আনহার হাত টেনে ধরে,,,,,,
আকিব: প্লিজ আনহা রাগের মাথায় কোন সিদ্ধান্ত নিয়ো না,,,,, আমাকে ছেড়ে চলে যেও না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্লিজ,,,,,,,
আনহা: আমি ঠান্ডা মাথায় সব কিছু ভেবছি
তোমাকে আমি নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছিলাম আর তুমি আমাকে এভাবে ঠকালে,,,,
আকিব: তুমি আমাকে ভুল বুঝছো,,,,,,
আনহা: এতদিন তোমাকে আমি ভুল বুঝে এসেছি,,,,,আজ ঠিক বুঝলাম,,,,,,তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি তোমার সাথে আর থাকতে পারব না,,,,,,,প্লিজ আমাকে আটকিও না,,,,,,
আকিবের শত বাঁধা আনহা মানলো না,,,,,, নিজের ব্যাগ গুছিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল আকিব নিচের ফ্লোরে বসে পড়লো চোখের পানি টলমল করছে,,,,, শেষমেশ আনহা ওকে ভুল বুঝলো,,,,আনহা তো ওকে ভালোবেসেছে
তাহলে আজকে কেন আনহা ওকে বিশ্বাস করতে পারল না আর আকিব ভেবে পাচ্ছে না ওর ভাইয়া কেন এমন মিথ্যা অপবাদ দিল ওর নামে,,,,,,,
আনহা নিচে নেমে আসে,,,,,
আনহা: মা বাবা আমাকে ক্ষমা করবেন আমি এখানে থাকতে পারবনা (কান্না ভেজা কন্ঠে)
আকিবের বাবা মা কিছুই বলল না,,,,আনহা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে,,,,,,রাকিব আনহার যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে এক টুকরো হাসি দিল যা কারো চোখে পড়ল না,,,,,,
রাকিব: সরি,,,,,,আকিব এন্ড আনহা,,,,, আমার লাইফটা সেটেল করার জন্য তোমাদের লাইফে গন্ডগোল লাগিয়ে দিলাম রাকিব কখনো নিজের ভাগ ছাড়ে না,,,,,, এজন্য যদি আকিবকে বাড়ি ছাড়া হতে হয় তাতেও আমি রাজি আছি,,,,,,, (মনে মনে)
বলেই একটা ডেভিল হাসি দিল,,,,,তারপর বাবা মায়ের কাছে গিয়ে ভালো মানুষির অভিনয় করতে লাগলো,,,,,,
আনহা অটোতে করে বাড়ি ফিরছে,,,,, চোখের পানি বারবার মুছছে তবুও পানি পড়ছেই খুব কষ্ট হচ্ছে,,,,,আকিব কেন ওর সাথে এমনটা করল,,,,কেন,,,,,এতটা খারাপ আকিব,,,,তা এতো দিন কেন বুঝতে পারল না,,,,,রিধিকে কি সাজিয়ে এনেছিল,,,, আর সোহানকে,,,,,
সোহানকে কি টাকার লোভ দেখিয়ে সরিয়েছে হুম তাই হবে হয়তো,,,,,,,আকিবের মতো ছেলে সব কিছু করতে পারে,,, সবকিছু,,,,,
আনহা এসব ভাবছে আর চোখের পানি মুছতেছে,,,,,এসব ভাবতে ভাবতে ও বাড়ি চলে আসে,,,,,, দরজার সামনে এসে কলিং বেল বাজায়,,,,, একটু পরে আনহার মা এসে দরজা খুলল,,,,,আনহা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো,,,,,আনহার মা কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,এত রাতে আনহা কেন এল আর কাদছেই বা কেন,,,,,,আনহার মা ওকে কোনরকমে শান্ত করে সোফায় বসাল
আনহার বাবা ও এসেছে,,,,,তিনি ও আনহাকে দেখে অবাক,,,,, ওনারা আনহাকে শান্ত করার চেষ্টা করতেছে কিন্তু পারছে না শেষে আনহার শ্বশুর কে ফোন করে সব জেনে নিল আনহার বাবা,,,,,,ওনারাও মেনে নিতে পারছে না যে সত্যি আকিব এটা করতে পারে,,,,,আনহার মা অনেকেই কষ্টে আনহাকে রুমে নিয়ে যায়
আনহা কাঁদতে কাঁদতে ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়,,,,,,,আনহার মা আঁচলে চোখ মুছে চলে আসে,,,,,সব বাবা মা চায় সন্তান এর সুখ দেখতে,,,,,কষ্ট না সন্তানের কষ্টে বাবা মা দ্বিগুণ কষ্ট পায়,,,,,,,
আকিব নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে বসে আছে,,,,, বারান্দার ফাঁক দিয়ে বাইরের একটু খানি আলো এসে পড়ছে ওর রুমে,,,,,, এতেই রুমটা একটু আলোকিত হয়েছে,,,,,আকিব একটু আগের ঘটনা বার বার চোখে ভাসছে,,,,যদি এটা কোন দুঃস্বপ্ন হতো তাহলে আকিবের চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না,,,,, এমন যদি হতো আকিব এখনো স্বপ্ন দেখছে ঘুম ভাঙলে দেখবে সবকিছু আগের মতোই আছে তাহলে খুব ভালো হতো
কিন্তু তা হবে না একটু আগেই সব শেষ হয়ে গেছে,,,,আনহা ওকে ছেড়ে চলে গেছে আনহাকে ছাড়া আকিব বাঁচবে কি করে,,,, ওকে ছাড়া আকিব কিছুতেই থাকতে পারবে না,,,,, আচ্ছা আনহা কি আকিবকে ছাড়া থাকতে পারবে যতই মুখে বলুক সে আকিবকে ঘৃণা করে কিন্তু একদিনের জন্য হলেও ও আকিবকে ভালোবেসেছিল তাহলে
আকিব এসব ভাবছে আর ওর চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা বইছে,,,,,মা বাবা আপু ওকে অবিশ্বাস করল,,,,, কিন্তু আনহার তো উচিত ছিল আকিবকে বিশ্বাস করা,,,,,আনহা কেন আকিবকে বিশ্বাস করল না,,,,,,কেন করল না
আকিব আর কিছু ভাবতে পারছে না মাথাটা ধরে গেছে ওর,,,,,আকিব বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল,,,,, কিন্তু ঘুম আসছে না ওর
সবকিছু আবছা হয়ে আসছে,,,, জীবনের সাথে লড়াই করে ও ক্লান্ত,,,,, ভালোবাসার মানুষ গুলো এভাবে যদি পেছন থেকে ছুরি মারে তাহলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না,,,,,,,
ভাইয়াকে তো আকিব কত ভালোবেসেছিল একসাথে চলাফেরা করেছে,,,,,এতবছর একসাথে ঘুমিয়েছে,,,,,খেলেছে,,,,আরও কত স্রৃতি ওর ভাইয়ার সাথে,,,,, আর সেই ভাইয়া যখন ওর সাথে বেইমানি করতে কিভাবে পারল,,,,, কিভাবে নিজের রক্তের সম্পর্ক কে ছিন্ন করতে পারল,,,,, আর এর পিছনে ওর ভাইয়ের কোন উদ্দেশ্যে আছে,,,, এভাবে অন্যকে কষ্ট দিয়ে না,,,,অন্যকে না,,,, নিজের ভাইকে কষ্ট দিয়ে কি লাভই বা হবে,,,,,,
এবার সত্যি সত্যিই আকিবের মাথা ঘোরাচ্ছে আর কিছু ভাবতে পারছে না,,,, দুচোখ বন্ধ করে আছে,,,,বন্ধ চোখের কোণে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পরতেছে,,,, চোখের পানিতে বালিশ ভিজে গেছে,,,,, এভাবেই আকিব একসময় ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়,,,,,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ১৯

দেড় মাস পার হয়ে গেছে,,,,,,,,,,,
এই দেড় মাস আনহা কিভাবে যে থেকেছে  ও নিজেই জানে,,,,,, সেদিন রাগের মাথায় চলে এসেছিল ঠিকই কিন্তু,,,,আকিবকে ছাড়া ওর দিনগুলো যেভাবে কাটিয়েছে তার থেকে ওর মরে যাওয়া অনেক ভালো ছিল,,,,
রাগের মাথায় ফোনটাও ভেঙে ফেলছে যাতে আকিব ওকে কল করতে না পারে,,,, কিন্তু এখন আনহা হাঁপিয়ে গেছে আর থাকতে পারছে না,,,,, রাতে প্রতিদিন দুটো করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমায়,,,,, কিন্তু দিনের বেলা যে কিভাবে কাটায়,,,,,দিনটা ওর যেতেই চায় না নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখতে চায় কাজের মধ্যে কিন্তু প্রতিটা কাজের মধ্যেই আকিবকে খুঁজে পায়,,,,,,এখন আনহার মনে হচ্ছে ও কোন ভুল করছে না তো,,,,,আকিবের কথাগুলো আনহার মনে পড়ছে আকিব বলেছিল রাগের মাথায় কোন সিদ্ধান্ত না নিতে তাহলে কি আনহা ভুল সিদ্ধান্ত নিল,,,,আনহা চুপচাপ রুমে বসে আছে আর ভাবছে,,,,,,
এমন সময় তামিম আসল,,,,, এতদিন তামিম একটা কাজের জন্য শহরের বাইরে ছিল,,,,
আজই আসল,,,, আর ওর মায়ের থেকে সব শুনেছে,,,,, সেদিন আনহা তামিম কে কিছু বলতে দেয়নি,,,,কারণ বললে তামিম সাথে সাথে চলে আসত আর ওর কাজের ক্ষতি হতো,,,,, তামিম এসেই আনহার কাঁধে হাত রাখে,,,,,আনহা পিছনে ঘুরে তাকালো,,,,,
আনহা: ভাইয়া,,,,(জোর পূর্বক হাসি দিয়ে) কখন এসেছো,,,,,
তামিম: এই মাত্র এলাম,,,, আর আমি এসব কি শুনছি তুই চলে এসেছিস আর আকিব,,,,
আনহা: তুমি ঠিকই শুনেছ,,,,,
তামিম: কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আকিব এটা করতে পারে,,,,
আনহা: বিশ্বাস না হলেও এটাই সত্যি,,,,
তামিম: তারপরও,,,, তুই সব সত্যতা যাচাই না করে চলে এলি এটা ঠিক করিসনি,,,,,,
আনহা ওর ভাইয়ের কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়,,,,,,
আনহা: তুমি আকিবের এতো সাপোর্ট নিচ্ছো কেন বলতো,,,,
তামিম: কারণ আমি খুব ভালো করেই জানি তোর সাথে আকিবের বিয়েটা কিভাবে হয়েছিল,,,,, সেদিন আকিব বিয়েটা করতে কিছুতেই বিয়েটা করতে চাইছিল না,,,,,, তাই ও ঘন্টাখানেক গাড়ি নিয়ে রাকিবকে খুঁজেও ছিল কিন্তু পায়নি,,,,, তারপরও আকিব হাল ছাড়েনি অনেক চেষ্টা করেছিল বিয়েটা আটকাতে,,, তারপর শেষমেশ তোর শ্বশুরের জোড়াজুড়িতে রাজি হয়,,,এতে আমি আকিবের মধ্যে কোন নাটক দেখিনি,,,,,, আর তুই আমাকে সবকিছু না জানিয়ে খুব বড় ভুল করেছিস,,,,,
আনহা অশ্রু ভরা চোখে তামিমের কথাগুলো
শুনছিল,,,,,
তামিম: দেখ আমি খুব ভালো করেই জানি তুই আকিবকে ভালোবাসিস তাহলে ওকে ছাড়া থাকছিস কেন,,,, আর এটা ভাবলি না আকিব কিভাবে থাকবে,,,,,শোন আমি তোকে কাল আকিবের কাছে দিয়ে আসবো,,,, আর গন্ডগোল কিছু তো একটা আছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে,,,,,
আনহা কাদতে কাদতে ওর ভাইকে জড়িয়ে ধরে,,,,,ওর প্রতিটা চোখের পানি বুঝিয়ে দিচ্ছে আকিবকে ও কতটা ভালোবাসে,,,,,
তামিম আনহাকে রেখে বাইরে চলে আসে আর ভাবতে থাকে সত্যিটা কি হতে পারে,,,,,,
রাতের বেলা,,,,,,,,,
কলিং বেলের শব্দে আনহার মা গিয়ে দরজা খুলে,, মারিয়া এসেছে,,,,আনহার মায়ের সাথে কথা বলে আনহার রুমে যায়,,,এর আগে অনেক বার মারিয়া এসেছিল কিন্তু আনহা দেখা করেনি কিন্তু আজকে আনহাই ওকে ডেকে পাঠিয়েছে,,,, মারিয়া আনহার রুমে গিয়ে দেখে আনহা ব্যাগ গোছাচ্ছে,,,, ওকে একটু খুশী খুশী লাগছে,,,,,
মারিয়া: কি রে আনহা,,,, তুই নাকি আবার ফিরে যাচ্ছিস,,,,
আনহা: হুম,,,,,
মারিয়া: একথাটাই তো এতদিন তোকে বোঝাতে আসতাম কিন্তু তুই তো আমার সাথে দেখাই করতি না,,,,,দেখ আমি জানি তোরা দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারবি না তাই সবকিছু ভুলে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে নে,,, আর সবচেয়ে বড় কথা কালকে তো নিউ ইয়ার,,,, বছরের প্রথম দিন নতুন করে লাইফটা শুরু করবি,,,, আর আকিবের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিস,,,,,
আনহা: আমি জানি না আকিব সত্যি নির্দোষ কি না,,,,, কিন্তু আমি ওকে ভালোবাসি এটাই সবচেয়ে বড় কথা,,,আমি ওকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না,,,,,, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে,,, আমি আর পারছি না,,,,
বলেই কেঁদে দিল,,,,, মারিয়া ওকে সামলাচ্ছে
মারিয়া: প্লিজ শান্ত হ দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে,,,,,
আনহা: আমি জানি না আকিব আমাকে মেনে নেবে কি না,,,,
মারিয়া: এসব কি বলছিস,,,,আকিব তোকে ঠিক মেনে নেবে,,,,ও তো তোকে ভালোবাসে
আর এসব বাদ দে এখন দশটা বাজে আর দুই ঘন্টা পরেই নিউ ইয়ার,,,, টিভিতে একটা অনুষ্ঠান হবে চল দেখি আজকে তোদের বাড়িতে থাকব,,,, মাকে বলেই এসছি,,,, আর কাদিস না চল,,,,,
আনহা: তুই যা আমি আসছি আর শোন তোর ফোনটা একটু দিয়ে যা,,,,
মারিয়া: নিজের ফোনটা তো গুঁড়া গুঁড়া করে ফেলেছিস,,,,, এখন আমার ফোন নিয়ে টানাটানি করছিস,,,,আকিবকে কল করবি
আনহা মাথা নাড়ল,,, মারিয়া হেসে ফোনটা দিল,,,,তারপর চলে গেল,,,,,আনহা কাঁপা কাঁপা হাতে আকিবের নাম্বারে কল করল কিন্তু ফোন সুইচ অফ বলছে,,,,,অনেকবার ফোন করে কিন্তু ফোন অফ পেল,,,আনহ রাগে বসে বসে আকিবকে গালি দিচ্ছে,,,,,এমন সময় মারিয়া আনহাকে চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগল আনহা দৌড়ে বসার রুমে যায়,,,, মারিয়া সোফায় বসে টিভির দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে,,,,আনহা টিভির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়,,,,,
টিভিতে লাইভ এ নিউ ইয়ারের পার্টি দেখাচ্ছে
একটা পার্কে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড রা একসাথে মজা করছে,,,,,, আর একজন রিপোর্টার ক্যামেরা নিয়ে ঘুরছে আর একেকজন কে প্রশ্ন করছে,,,,নিউ ইয়ার সম্পর্কে,,,,,মাঠের এক কোনায় একটা ছেলে বসে আছে,,,,তাই দেখে
রিপোর্টার তার কাছে যায় ছেলেটাকে দেখেই মারিয়া আনহাকে ডাকে আনহা এসেই অবাক হয়ে যায়,,,,,,, কারণ ছেলেটা আর কেউ না আকিব,,,,,,
আনহা: আকিব,,,,, কিন্তু ও ওখানে কি করছে
মারিয়া:চুপ থাক দেখ কি হয়,,,,,
রিপোর্টার আকিবকে জিজ্ঞেস করল,,,,,
__ হে ব্রো,,,, সবাই ওখানে আনন্দ করছে আর তুমি এখানে কি করছো,,,, তোমার কেউ নেই,,,,,
আকিব: আছে,,,,,
__ তাহলে কোথায়,,,,
আকিব: সবাই বাড়িতে,,,,,
__আমি সেটা বলিনি,,,,সবাই তো যার যার লাইফ পার্টনার এর সাথে এনজয় করছে তুমি এখানে একা বসে আছো,,,,,মন খারাপ,,,,
আকিব: নো,,,,,
__ আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না,,,, ভালোবাসার মানুষটির সাথে মান অভিমান হয়েছে,,,,,
আকিব: না,,,,,,
__ হোয়াট ব্রো বলতে পারো তোমার মনের কথা,,,,লাইভে দেখানো হচ্ছে তোমার মনের মানুষ যদি দেখে থাকে তাহলে সে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে তোমার কাছে ফিরে আসবে,,,,,,
আকিব: সে আর কখনো ফিরে আসবে না,,,,
না হলে এতদিনে ঠিকই ফিরে আসত,,,,, আমাকে ছাড়া থাকতে পারত না,,,,,
__ হয়তো সে একটু বেশি অভিমান করে ফেলেছে,,,,
আকিব: অভিমান না,,,,,সে আমাকে ঘৃণা করে,,,,,, আমাকে অবিশ্বাস করে,,,, তার কথা বাদ দেই,,,,, নিজের আপন মানুষই যখন পিছন থেকে ছুরি মারে,,,, সেই জায়গায় সে তো কিছুই না,,,,,,
__ তাকে তুমি কিছু বলতে চাও,,,,,
আকিব: শুধু এটুকুই বলতে চাই সে যেন ভাল থাকে,,,,, আমি কেমন আছি সেটা না হয় নাই জানল সে যেন ভাল থাকে,,,,কারণ তাকে যে খুব ভালোবাসি,,,,সে আমাকে ঘৃণা করলেও আমি তাকে ভালোবেসেই যাব,,,,
__ আর একটা কথা,,,,,
লোকটা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আকিব চলে যায়,,,,,,
__ ভালোবাসা সত্যি অদ্ভুত কাউকে হাসায় আবার কাউকে কাদায়,,,,,,
আনহা আর মারিয়া থ হয়ে এতক্ষণ সব দেখছিল,,,,,আনহার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তেছে,,,,, এতক্ষণ ধরে ও আকিবকে দেখছিল,,,, কি হাল করেছে চেহারার নিশ্চয়ই এতদিন নিজের খেয়াল রাখেনি,,,,, মুখটা শুকিয়ে গেছে,,,,, বেহাল অবস্থা,,,,,,
মারিয়া: আনহা আকিব এটা কি বলে গেল,,,,,
আনহা: মারিয়া,,,, জায়গাটা তুই চিনিস
মারিয়া: হুম,,,,,
আনহা: আমাকে নিয়ে চল,,,,প্লিজ,,,, ওখানে গেলে আকিবের দেখা পাব
মারিয়া: কিন্তু আকিব যদি চলে যায়,,,,
আনহা: তুই চল না,,,,,
মারিয়া আর আনহা বেরিয়ে পড়ে,,,, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই পার্কে চলে যায়,,,,,
আনহা আর মারিয়া আকিব কে খুঁজতে থাকে
অনেক মানুষ ওখানে ভিড় ঠেলে দুজনে আকিবকে খুঁজতে থাকে,,,,, কিন্তু পেল না শেষে ফিরে আসার জন্য বাইরে আসতেই রিপোর্টার কে দেখতে পায়,,,ওনি ক্যামেরা গুছিয়ে চলো যাচ্ছিলেন আনহা গিয়ে ওনাকে আটকায়,,,,,,
আনহা: শুনুন,,,, একটু আগে মাঠের কোনায় বসে একটা ছেলের সাথে কথা বলছিলেন ওই ছেলেটা কোথায়,,,,,,
__ কেন বলুন তো,,,, আর আপনি কে,,,,,
মারিয়া: ও ওই ছেলেটার ওয়াইফ এখন তাড়াতাড়ি বলুন আকিব কোথায়,,,,
__ ওহ রিয়েলি,,,, ওনার কথা শুনে আপনাকে দেখার খুব ইচ্ছে করছিল,,,, কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি আপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে,,,,
মারিয়া: হাসের মতো প্যাকপ্যাক না করে বলুন আকিব কোথায়,,,,
__ কুল কুল,,,, এতো চটে যাচ্ছেন কেন,,,,,
ওনি তো একটু আগেই চলে গেছে,,,, আর আপনাকে একটা কথা বলি (আনহার দিকে তাকিয়ে) আপনার হাজবেন্ড আপনাকে খুব ভালোবাসে,,,,তা আমি ওনার চোখে স্পষ্ট দেখেছি,,,,ওনি যদি কোন ভুল করে থাকে তাহলে প্লিজ ক্ষমা করে ওনার কাছে ফিরে যান ওনি খুব কষ্টে আছে,,,,, ওনার চোখে আমি সত্যিকারের ভালবাসা দেখেছি সেই ভালোবাসায় কোন খাদ নেই,,,,প্লিজ আমার কথাটা রাখার চেষ্টা করুন,,,,,
লোকটি চলে গেল,,,,,,আনহা এতক্ষণ ধরে লোকটার কথা শুনছিল আর চোখের পানি ফেলছিলো,,,, আজকে ওর মনে হচ্ছে ও সত্যি আকিবকে ছেড়ে এসে ভুল করেছে,,,,,
মারিয়া: আনহা প্লিজ কাদিস না,,,,, বাড়িতে চল কালকে তো তুই ফিরে যাচ্ছিস,,,,চল,,
মারিয়া আনহাকে সামলিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে সারারাত আনহার নির্ঘুমে কেটে যায়,,,
ও সারারাত ছটফট করে কখন সকাল হবে,,,
সকাল হতেই তামিম কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে,,,, তামিমের সাথে আকিবের বাড়িতে গেল,,,,,,
আকিবের বাবা তখন সোফায় বসে পেপার পড়ছিল রিমি টেবিলে বসে খাচ্ছিল আর ওর মা খাবার সার্ভ করছে,,,,,আনহা আর তামিমকে দেখে সবাই একটু অবাক হয়,,, আনহা উপরে যেতে নিলে রিমির ডাকে থেমে যায়,,,
রিমি: দাঁড়াও আনহা,,,,, কোথায় যাচ্ছ
আনহা: আপু আকিব কোথায় নিশ্চয়ই রুমে আছে আমি ওর সাথে কথা বলব,,,,,,,
রিমি কিছু বলতে যাবে সেই সময় রাকিব সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে,,,,আনহাকে দেখে রাকিব বলে উঠলো,,,,,,
রাকিব: আনহা তুমি,,,,, আর তামিম ও এসেছে,,,,
রাকিবকে দেখে আনহার মেজাজ বিগড়ে যায়
তাও কিছু বলল না,,,,,
রাকিব: এখানে আসার কারণ,,,,,,
আনহা: আপনি বোধ হয় ভুলে গেছেন আমি এবাড়ির বউ,,,, এখানে আসতে আমার কোন কারণ লাগে না,,,,,,
রাকিব: হা হা হা,,,,,,হাসালে,,,,কার বউ,,,,যে কিনা এখানে থাকে না তার বউ,,,,,
আনহা: মানে,,,,,,
রিমি: মানে,,, তুমি চলে যাওয়ার পরেরদিন আকিবও চলে গেছে কোথায় গেছে আমরা কিছু জানি না,,,,,ফোনটাও অফ করে রেখেছে
আনহার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো এজন্যই আকিবের ফোনটা অফ পেয়েছিল ও
আনহা: আপনারা কেউ আটকালেন না,,,
বাবা: দেখ আমরা কেউ ওকে যেতে বলিনি আকিব নিজের ইচ্ছায় চলে গিয়েছে এতে আমরা কি করতে পারি,,,,,
আনহা: কি করবেন মানে,,,,আকিব আপনার ছেলে বাবা ওকে কেন আটকালেন,,,না,,,
রাকিব: আর আমি বুঝি ওনাদের ছেলে না আমাকে যখন বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল তখন তুমি কোথায় ছিলে,,,,হুম,,,,
আনহা: তখন যদি আমি সেখানে থাকতাম তাহলে ঠিকই আটকাতাম,,,,,এখন সেকথা বলার সময় না,,,আকিবকে খুঁজে বের করতে হবে,,,,,
রাকিব: ওহ রিয়েলি,,,, তুমি আকিবের মতো একটা ছেলের সাথে সংসার করবে,,,,,, কি বুঝিয়েছে তোমাকে,,,,হুম,,,,,যে কিনা নিজের ভাইয়ের সাথে বেঈমানি করেছে,,,,, ওকে তো আমার নিজের ভাই ভাবতেও ঘৃণা করছে,,,,
আনহা: আপনি কি ভাবছেন তা আমার জানার দরকার নেই,,,,, আমার শুধু আকিবকে চাই ব্যস,,,,,
রাকিব: এক মিনিট তুমি আকিবের ব্যাপারে এত সিরিয়াস কেন,,,,, শুনেছি বিয়ের আগের দুমাস তুমি আকিবের সাথে ছিলে ওর সাথেই ভার্সিটিতে যেতে,,,,, তাহলে কি তুমি আর আকিব দুজনে প্ল্যান করে আমাকে সরিয়ে,,,
হুম,,,, আবার এখন নাটক করে ফিরে এসেছ
বাহ খুব ভালো এখন আমি সব বুঝে গেছি
আনহা আর সহ্য করতে পারল না ঠাস করে আকিবের গালে চড় বসিয়ে দিল
বাবা: আনহা,,,,,,
আনহা: ব্যাস বাবা,, আমি আর কিছু শুনতে চাই না,,,, এবার আমি বলি আপনারা শুনুন
রাকিব তো গালে হাত দিয়ে রাগে ফুঁসছে,,,,,
আনহা: কি যেন বলছিলেন (রাকিবের দিকে তাকিয়ে) আকিব খারাপ ছেলে,,,হ্যা তাই তো আপনি পালিয়ে যাওয়ার পরও বাড়ির সম্মান বাঁচাতে আমাকে বিয়ে করেছিল,,,,আর আপনি পালিয়ে গিয়েছিলেন,,,, সেদিন কিন্তু আকিব আপনার নামে একটা বাজে কথাও বলেনি,,, বরং আপনাকে মিস করেছিল,,,, সবার আড়ালে আপনার নামে আমার কানে বিষ ঢালতে পারত কিন্তু ও তা করেনি উল্টো বলেছিল ও আপনাকে খুব ভালোবাসে,,,,,,,
আর আপনি একটা মিথ্যে গল্প সাজিয়ে সবার থেকে আকিবকে আলাদা করে দিলেন,,,,,, নিজের রক্তের সম্পর্কের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন,,,, আপনার তারিফ না করে থাকা যায় না,,,,, আর এখন আবার আমাকে এর সাথে জড়িয়ে সত্যি আপনি প্রমাণ করে দিলেন যে এসবের পিছনে আপনি আছেন,,,,,মেইন কালপিট আপনি,,,,,
(একটু থেমে,,,,,আনহা এবার কেঁদে ওঠে) সব দোষ আমার,,,,সেদিন কেন আমি চলে গেলাম
আমার উচিত ছিল আকিবের পাশে সেদিন আমার থাকাটা খুব দরকার ছিল,,,, আমার প্রয়োজন ছিল,,,,,এখন আমি কোথায় খুজব আকিবকে,,,,,,,
রিমি আনহার কাছে এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে কেঁদে উঠলো,,,,,,আকিবের মা চেয়ারে বসে কাঁদতে লাগলো,,,,,,
রিমি: প্লিজ আনহা আকিবকে খুঁজে আনো ওকে ছাড়া আমি ভালো নেই,,,,
আনহা: আপু আপনি তো আকিবকে আটকাতে পারতেন,,,,,যে ছেলেটা একা এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতে পারে না রাতে যাকে খাইয়ে না দিলে খায় না,,,,সেই ছেলেটা এখন কোথায় আছে কি খাচ্ছে কিভাবে থাকছে সেটা ভেবে দেখেছেন একবার,,,,,, আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না,,,,
রিমি: ক্ষমা করে দাও,,,, আমরা সত্যি ভুল করেছি,,,,,
আনহা: এখন এসব কথা বলার সময় নয় আমি আসি,,,,,আকিবকে খুঁজতে হবে,,, চলো
ভাইয়া,,,,,,
আনহা দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে রাকিবের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,,,,,
আনহা: মিস্টার রাফসান আদনান রাকিব,,,,
এরপর আমি এসে আপনার এই ভালো মানুষির মুখোশ টা টেনে খুলে ফেলব মাইন্ড ইট,,,,রেডি থাকবেন,,,,, আমাদের আবার দেখা হবে,,,,,,,(কড়া চোখে)
আনহা বেরিয়ে আসে,,,,, আজকে আনহার কথায় ওর শ্বশুর বাড়ির সবাই একটু অনুতপ্ত হলো,,, শুধু রাকিব বাদে,,,,ও আনহার উপর ভিশন রেগে আছে,,,,,আনহা ওকে চড় মেরেছে বলে,,,,,,রাকিব রাগে ফুঁসছে,,,, হনহনিয়ে উপরে চলে যায়,,,,,,

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥  পর্বঃ ২০

আনহা বাড়িতে এসে চিন্তায় পড়ে যায় আকিব কোথায় যেতে পারে,,,,,কোথায় তখন তামিম বলে আকিবের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে,,,,আনহা রিসাদ লতা আর সামান্তার সাথে যোগাযোগ করে,,,,, কিন্তু ওরা কেউ জানে না আকিব কোথায় আছে,,,,, শুধু এখন নয়ন এর কাছে যাওয়া বাকি,,,, কিন্তু নয়নের হদিস নেই বাড়িতে তালা দেওয়া,,,,,
আনহা এতে খুবই চিন্তিত,,,,,এখন ওর কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না,,,,,,,
আনহা আর মারিয়া রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে এমন সময় আনহার চোখ পড়লো রাস্তার পাশে টংয়ের দোকানে দুটো লোক দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে লোক দুটোকে দেখে চেনা চেনা লাগছে
কিন্তু মনে পড়ছে না,,, কিছুক্ষণ ভাবার পর আনহার মনে পড়লো এরা তো সেই লোক যারা আকিবের বিরুদ্ধে সাক্ষি দিয়েছিল,,,,,,
আনহা তখনই মারিয়াকে সব বলল,,, মারিয়া ওই লোক দুটির কাছে গেল,,,, আর আনহা রাস্তার অপর দিকে লুকিয়ে পড়ল,,,,,
মারিয়া: এই যে শুনুন,,,,,আপনারা নাকি টাকার বিনিময়ে কাজ করেন,,,, আমার কিছু কাজ করে দিতে হবে,,,,
__ কে বলেছে,,,,এসব মিথ্যা কথা,,,,
মারিয়া: ওকে তাহলে আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু আমার কাজ করে দিলে মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন,,,, ভালো সুযোগটা যখন হাতছাড়া করতে চাইছেন তাহলে আমার কি করার আছে,,,,,,
মারিয়া চলে যেতে নিলে লোকটা ডাকল,,,,
__ শুনুন,,,, কি করতে হবে আমাদের,,,,
মারিয়া: আপাতত ফোন নাম্বার টা দিন,,, পরে সব বলব,,,,,
মারিয়া ওদের ফোন নাম্বার নিয়ে আনহার কাছে ফিরে আসে,,,,,,
মারিয়া: আনহা কাজ হয়ে গেছে,,,,,
আনহা: এখন আমি সিওর যে এদের রাকিব ভাড়া করেই এনেছে,,,,,
মারিয়া: এখন কি করবি,,,,,
আনহা: ভাইয়ার হেল্প লাগবে,,,,,,চল
মারিয়া আর আনহা তামিম কে সব খুলে বলল,,,,
তামিম: তোদের আর কিছু করতে হবে না এখন যা করার আমিই করব,,,,তার আগে নাম্বারটা দে,,,,,,
তামিম নাম্বার নিয়ে চলে যায়,,,,আনহা আর মারিয়া অপেক্ষা করতে থাকে,,,,, রাতে তামিম আনহাকে কল করে,,,, একটা ঠিকানায় যেতে
আনহা আর মারিয়া সেখানে চলে যায়,,,,,
তামিম আর ওর বন্ধুরা ওই লোকদুটোকে চেয়ারের বেঁধে রেখেছে,,,,, দেখে মনে হচ্ছে অনেক মেরেছে ওদের,,,,,,
আনহা: ভাইয়া ওরা কিছু বলেছে,,,,,
তামিম: হুম
আনহা: কি বলেছে,,,,
তামিম: ওরা রাকিবের ভাড়া করা,,,,,ওরাই আকিবের নামে মিথ্যা কথা বলেছে,,,,,
আনহা: কিন্তু রাকিব কেন এটা করেছে সেটা বলেছে,,,,,
তামিম: হুম,,,,রাকিবের বউ বাচ্চা আছে,,,,,
যাদের দেখাশোনা করার জন্য এই ছাগোল দুটোকে পুষছে,,,,,
আনহা: এবার বুঝতে পারছি সেদিন এজন্য রাকিব পালিয়ে গিয়েছিল,,,,, কিন্তু এখন রাকিবের ফিরে আসার কারণ কি,,,,,
মারিয়া: গাধি একটা,,,,, মাথায় কি তোর ঘিলু নাই,,,,,কেউ কি তার বাবার সম্পত্তির ভাগ ছাড়ে,,,,,দেখ রাকিব চলে যাওয়াতে আকিব সব সম্পত্তি পাবে,,,,,সেটা রাকিব মানতে না পেরে এখন এসব নতুন নাটক সাজিয়েছে,,,,
তামিম: এক্সাটলি,,,,, আমার মনে হয় রাকিবের বউ এসব কিছুই জানে না,,,,তাই আমাদের এখন উচিত রাকিবের বউকে সব জানানো,,,,,,
মারিয়া: রাইট ভাইয়া,,,,তো চলুন যাওয়া যাক
তামিম লোক দুটোর থেকে বাড়ির ঠিকানা নিয়ে নিল,,,,,তারপর ওর বন্ধুদের ওখানে রেখে মারিয়া আর আনহাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল,,,,রাকিবের বউয়ের ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সবাই তামিম বেল বাজাতেই একটা মেয়ে দরজা খুলল কোলে একটা বাচ্চা সম্ভবত এক বছর হবে,,,,,,
__ কাকে চাই,,,,কারা আপনারা,,,,
আনহা: আমরা আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি,,,,
__ হুম,,,,বলুন কি বলবেন,,,,,
আনহা: কিছু মনে করবেন না আমরা কি ভিতরে এসে কথা বলতে পারি,,,,,
__ ওকে নো প্রবলেম,,,, ভিতরে আসুন,,,,
সবাই ভিতরে ঢুকল,,,,
আনহা: আপনার নামটা জানতে পারি,,,,,
__ আমার নাম নদী,,,,,
আনহা: আমি আনহা,,,, আপনি আমাকে চিনবেন না কিন্তু আমি আপনাকে চিনি,,,
নদী: কিভাবে,,,,
আনহা: সেসব কথা বলার সময় এখন না,,,
বড় কথা হলো আপনার হাজবেন্ড রাকিব তার একটু পরেই বিয়ে,,,,,
নদী: কি বলছেন আপনি,,,,রাকিব বিয়ে করছে,,,, কিন্তু,,,,
আনহা: হুম,,,,এখন আপনি ভাবুন কি করবেন,,,,,নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিবেন নাকি নিজের সবকিছু হারাবেন,,,,
নদী: কিন্তু রাকিব তো এর আগে বিয়ে করবে না বলে পালিয়ে এসেছিল,,,,, তবে এখন কেন বিয়ে করছে,,,
আনহা: হুম,,,, কিন্তু এখন সে বুঝেছে যে আপনার সাথে থাকলে ওনি বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন,,,,,,তাই তিনি এখন বাবার কথামতো বিয়ে করছেন নিজের স্বার্থে ছাড়া ওনি কিছুই বুঝেন না,,,,,এখন আপনি গিয়ে যদি বিয়েটা না আটকান তাহলে আপনার বাচ্চা তার বাবার পরিচয় ছাড়া থাকবে লোকে বলবে এটা আপনার অবৈধ সন্তান,,,,
নদী: না এটা হতে পারে না,,,, আমি এখনই রাকিবকে ফোন করছি,,,,
আনহা: পাবেন না,,,,ওনি ফোনটা সুইচ অফ করে রেখেছে,,,, আমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার ভাঙতে চাই না বলে আপনাকে সবটা বলতে এলাম,,,,,
নদী: না,,,, আমার সন্তান নিজের বাবার পরিচয়ে বাঁচবে,,, আমি এই বিয়ে হতে দিব না
প্লিজ আমাকে নিয়ে চলুন,,,,,,
আনহা তামিম আর মারিয়া কে চলে যেতে বলল আর নদী আর বাচ্চা কে নিয়ে রাকিবের কাছে গেল,,,,,,
সবাই টেবিলে বসে আছে ডিনারের জন্য,,,,
এমন সময় নদী হনহনিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে
রাকিবকে ডাকতে থাকে,,,,,রাকিব নদীকে দেখে হকচকিয়ে গেল,,,,, দৌড়ে নদীর কাছে আসে,,,,,
নদী: রাকিব তুমি নাকি বিয়ে করছো,,,,, কেন
আমাকে ছেড়ে তুমি কিভাবে,,,,
রাকিব: নদী এসব কি বলতেছ,,,, (আস্তে করে বলল)
নদী: আমি কিছু জানতে চাই না,,,, তুমি কিভাবে এটা করতে পার,,,, একবারও আমাদের সন্তানের কথা ভাবলে না,,,,,
নদী এতক্ষণ আশেপাশে ভালো করে না দেখেই এসব বলছিল,,,, হঠাৎ করে ওর খেয়াল হলো বিয়ে বাড়ি তো এরকম হতে পারে না,,,,, মানুষ জন নেই কোন সাজানো গোছানো নেই,,,,এসব দেখেই ও চুপ করে যায়,,,,
রাকিব কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর বাবা বলল,,,,,
বাবা: রাকিব,,,কে ও আর এসব কি বলছে,,,
রাকিব: বাবা,,,, আমি ওকে চিনি না বোধ হয়
ওনি ভুল বাড়িতে এসেছে,,,,,
আনহা: আমি ঠিক বাড়িতে এসেছি তো,,,,
দরজায় দাঁড়িয়ে আনহা বলল,,,,সবাই আনহার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,আনহার কোলে একটা বাচ্চা,,,,আনহা ভিতরে আসে,,,,
আনহা: কি হলো বলুন,,,,, আমি ঠিক বাড়িতে এসেছি তো,,,,,,
বাবা: আনহা তুমি,,,,,
রিমি: আনহা,,,,আকিবের খোজ পেয়েছ,,,,,
আনহা: না,,,, তবে আকিবকে খুঁজতে গিয়ে আরেক জনের মুখোশ খুলতে পেরেছি,,,,, এখন শুধু সবার জানার পালা,,,,,,
মা: মানে,,,,,,
রাকিব: কিছু না,,,, মা,,,,আনহা হয়তো আমাকে মিথ্যা বলে ফাসাতে চাইছে তোমরা ওকে বের করে দাও,,,,,
আনহা: আরে দাঁড়ান,,,,সত্যটা সবাই জানুক
আর আপনি এতো ঘামছেন কেন,,,,
রাকিব কোন কথা বলছে না,,,,কাপতেছে,,,,
বাবা: কি সত্যি বলবে তুমি,,,,,
আনহা: এই মেয়েটা আর বাচ্চা টা হলো আপনার বড় ছেলের বউ আর বাচ্চা,,,,, এজন্য আপনার ছেলে বিয়ের দিন পালিয়ে গিয়েছিল,,,,তাই না মিস্টার রাকিব,,,,,
সবাই অবাক আনহার কথায়,,,,,আনহা তখন সব খুলে বলল,,,,নদী ও সব বলল,,,, একথা শুনে রাকিবের গালে ঠাস করে এক থাপ্পর মেরে দিল ওর বাবা,,,,,
বাবা: ছিঃ,,,,, তোকে আমার নিজের ছেলে ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে,,,,এই জন্য তুই আকিববের নামে মিথ্যা কথা বললি,,,, ছিঃ,,,,নিজের ছোট ভাইকে কষ্ট দিতে তুই একবার ও ভাবলি না
তুই আজই আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা,,,,,
আনহা: না বাবা,,,, একবার ভাবী আর ওনার বাচ্চার কথা ভাবুন,,,,,ওদের কি হবে,,,এই বাচ্চাটা যদি বড় হয় কোন পরিচয়ে বড় হবে
ওর তো অধিকার আছে বাবার কাছে থাকার
আপনি একাজ করবেন না,,,,,,
বাবা: কিন্তু ওর মতো ছেলেকে এবাড়িতে রাখব কিভাবে,,,,যে কিনা নিজের ভাইয়ের সাথে,,,,,,
আনহা: তারপরও,,,,, আপনাকে এটা করতে হবে,,,,,আর ভাবী (নদীর দিকে তাকিয়ে) আই এম সরি,,,, আপনাকে মিথ্যা বলেছি না হলে সবকিছু আমি প্রমাণ করতে পারতাম না,,,,
নদী: তুমি ঠিকই করেছ,,,, না হলে আমি রাকিবের আসল চেহারাটা দেখতে পারতাম না,,,,, ছিঃ রাকিব তুমি এতটা খারাপ হলে কি করে,,,,,
আনহা রাকিবের সামনে যায়,,,,,,
আনহা: বলেছিলাম না আমাদের আবার দেখা হবে আপনার মুখোশ টেনে খুলব,,,,,,
আমি আমার কথা রেখেছি,,,,,
আকিবের মা এসে আনহার হাত ধরে কেঁদে দিল,,,,,
মা: আনহা,,,, আমার আকিবকে খুঁজে এনে দাও,,,ছেলেটা কোথায় আছে কি করছে কে জানে,,,,
আনহা: আমি ওকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পায়নি,,,,
রিমি:আকিবের বন্ধুদের জিজ্ঞেস করছিলে,,,,,
আনহা: হুম,,,,, কিন্তু ওরাও জানে না যে আকিব কোথায়,,,,,আমি এখন আসি আকিবকে খুঁজে বের করতে হবে,,,,,,,
আনহা চলে আসে,,,,রিমি আর ওর মা আনহাকে যেতে বারণ করে ছিল কিন্তু আনহা শোনে নি,,,,,কারণ এখানে থাকলে আকিবকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব,,,,,তাই ও চলে আসে,,,,
অনেকদিন পার হয়ে গেছে,,,,,এতদিনে আনহা আকিবকে পাগলের মতো খুঁজেছে,,,,
কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়নি,,,,,আকিব যেসব জায়গায় যেতে পছন্দ করত রোজ সেখানে গিয়ে খুঁজেছে কিন্তু আকিবকে খুঁজে পায়নি
প্রতিদিন ই হতাশ হয়ে ফিরে এসেছে আকিবের প্রতি ওর অবহেলা গুলো প্রতিনিয়ত আনহাকে কুঁড়ে খাচ্ছে,,,, আর পারছে না,,,আনহা,,,,,,
একদিন সকাল বেলা,,,,,,,,,,,,,
কে যেন কলিং বেল বাজাচ্ছে,,,,আনহার মা রান্নাঘরে ছিল বলে আনহাই,,,,দরজা খুলল,,,
আনহা: আপনি,,,,,
নয়ন: হুম,,,, ভিতরে আসতে পারি,,,,,
আনহা: আসুন,,,,,
আনহা নয়নকে বসতে দিল,,,,,
নয়ন: আসলে আমাকে আকিব পাঠিয়েছে,,,,
আকিবের কথা শুনে আনহার চোখদুটো খুশিতে চকচক করে উঠলো,,,,,
আনহা: আকিব,,,,,কোথায় ও আকিবকে কত খুঁজেছি কিন্তু পায়নি চলুন আমাকে আকিবের কাছে নিয়ে চলুন,,,,,প্লিজ,,,, আমি আকিবের কাছে ক্ষমা চাইব,,,, জানি আমি ক্ষমার অযোগ্য তাও আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে,,,,,
আনহা কথাগুলো জোরে বলায় ওর মা বাবা আর তামিম এসে সবটা শুনলো,,,,
নয়ন: আসলে আমি তোমাকে আকিবের কাছে নিয়ে যেতে পারব না,,,,
আনহা: কেন,,,,,
নয়ন: আকিব বারণ করেছে,,,,,
আনহা: কিন্তু কেন,,,,,
নয়ন ব্যাগে থেকে একটা কাগজ বের করে আনহাকে দিল,,,আনহা কাগজ হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো,,,,ওটা ডিভোর্স পেপার যাতে আকিবের সাইন করা,,,,,
আনহা: আ,,,,কিব,,,ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে,,,,
বাড়ির সবাই অবাক হয়ে যায়,,,,,
নয়ন: হুম,,,,আকিব চায় ডিভোর্সটা হোক,,,,
আনহা: আমি আকিবের সাথে কথা বলতে চাই,,,, ওকে ফোন করুন,,,,,
নয়ন: কিন্তু,,,,,
আনহা: কোন কিন্তু নয়,,,,আপনি ফোন করুন আমার কথা বলবেন না,,,,,
নয়ন আকিবকে ফোন করে আকিব ফোন রিসিভ করে,,,
নয়ন: হ্যালো আকিব,,,,,
নয়ন আর কিছু বলার আগেই আনহা ফোনটা নিয়ে নেয়,,,,,,
আনহা: আকিব,,,,,তুমি কোথায়,,, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই,,,,আকিব প্লিজ আমাকে ক্ষমা চাওয়ার একটা সুযোগ দাও,,,,সত্যি আমি ভুল করেছি,,,,আকিব তুমি এরকম করো না,,,, আমার সাথে একটি বার দেখা কর,,,, আমি থাকতে পারব না তোমাকে ছাড়া,,,,,
একদমে আনহা কথাগুলো বলছিল আর আকিব শুনছিল,,,,,,
আকিব: দেখ আনহা,,,, তোমার সাথে আমি দেখা করতে পারব না,,,, আর তোমার ক্ষমা চাওয়ার কোন দরকার নেই,,,,কারণ আমি তোমার উপর রাগ করে নেই,,,
আনহা: তাহলে এই পেপার,,,,,
আকিব: সাইন করে দাও,,,,,,
আনহা: কি,,,,,
আকিব: হুম,,,, আমি তো সাইন করে দিয়েছি এবার তুমি দাও,,,,
আনহা: আকিব,,,,প্লিজ এমন করো না আমি থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া,,,,
আকিব: এতো দিন যেভাবে ছিলে বাকি দিনগুলো সেভাবেই থেকো,,,আর হ্যা আমি আমার লাইফের সাথে তোমার লাইফ জড়াতে চাই না,,,,কারণ এতে তোমার লাইফটা নষ্ট হয়ে যাবে,,,, এখন না আছে আমার বাড়ি না আছে টাকা-পয়সা আমার কাছে থাকলে তুমি সুখী হবে না,,,,, সো সাইনটা করে দাও,,,,,
আনহা: তুমি ভালো থাকতে পারবে তো,,,,,,,
আকিব: ভালো থাকার চেষ্টা আমাকে করতেই হবে,,,,
আকিব ফোন কেটে দেয়,,,,,আনহা সোফার উপর বসে পড়ল,,,,,ডিভোর্স পেপারের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,,চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে,,,,আর কিছু বলতে পারছে না বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে ও,,,,,আনহা কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে রইল
নয়ন: তো আনহা সাইনটা করে দাও আমি চলে যাই,,,,,,
নয়নের কথায় মুহূর্তেই আনহা অগ্নিরূপ ধারণ করে,,,,, এমনিতেই আকিবের কথায় খারাপ লাগছে ও আবার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে,,,,আনহা নয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়াল

বাংলা ভালোবাসার গল্প ♥ ভালোবাসার রং♥ শেষ পর্বঃ ২১ 

আনহা ঠাস করে নয়নের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল,,,,,নয়ন গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে আনহার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,নয়ন বুঝতে পারছে না,,,আনহা ওকে কেন মারল,,,, বেচারার ফর্সা গালটা লাল হয়ে গেছে,,,,,,
আনহার: তোর সাহস তো কম না,,,তুই এসেছিস আমাকে দিয়ে পেপারে সাইন করতে
হুম,,,করছি সাইন,,,,,
আনহা ডিভোর্স পেপার টা ছিঁড়ে ফেলল,,,,,
নয়ন: এটা কি করলে,,,,, ছিঁড়ে ফেললে এখন আমি আকিবকে কি বলব,,,,, আবার পেপার রেডি করতে হবে,,,,,
একথা শুনে আনহা নয়নের অন্য গালে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল,,,,,,নয়ন এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল,,,,,,সবার সামনে এভাবে আনহা মারল কেন,,,,নয়ন দুই গালে দুই হাত দিয়ে বলল,,,,,
নয়ন: মারলে কেন,,,,,
আনহা: শয়তান ছেলে,,,, কোথায় বন্ধুকে বোঝাবে তা না করে বন্ধুর ঘর ভাঙতে এসেছিস,,,,, থাপ্পর তো তুই আরো খাবি,,,,,
তামিম: দেখ নয়ন,,,, তোমার উচিত আকিবকে বোঝানো,,,,,যাতে ও এরকম না করে,,,,,
নয়ন: আমি ওকে বলেছিলাম,,,,, কিন্তু ও বলল,,,,, এখন নাকি ওর কাছে কিছু নেই যা দিয়ে ও আনহাকে সুখি রাখতে পারবে,,,,
আনহা: আকিব ভেবছে কি আমি লোভী হুম
ওর একদিন কি আমার কয়দিন,,,,,আপনি আকিবকে এখানে আসতে বলুন,,তারপর ওর হচ্ছে,,,,
নয়ন: আকিব এখানে কিছুতেই আসবে না
আনহা: হুম,,,,, (কিছুক্ষণ ভেবে) আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে,,,,
নয়ন: কি,,,,,,,
আনহা: ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
নয়ন: অসম্ভব আমি এটা কিছুতেই করতে পারব না,,,,,,,,
আনহা: কি,,,,, আরেকটা থাপ্পড় খাওয়ার শখ হইছে,,,,,,
নয়ন: এই না,,,,,একদম গায়ে হাত দেবে না
এমনিতেই দুটো দেওয়া হয়ে গেছে,,,,
আনহা: তিন নাম্বার টা খেতে না চাইলে আকিবকে কল কর তাড়াতাড়ি,,,,,,
নয়ন ইস্তদিস্ত করতে করতে আকিবকে কল করল,,,,,আকিব প্রথম কয়েকবার ফোন ধরল না,,,,অনেক বার দেওয়ার পর ফোন রিসিভ করে,,,,,,
নয়ন: কি রে ফোন ধরতে এত সময় লাগে কেন,,,,,
আকিব: আমি ভেবেছিলাম আনহা হয়তো দিয়েছে,,,,,,
নয়ন: আনহা আর তোকে কল করবে না,,,,
আকিব: না করলেই ভালো,,,,ও নিজের মতো করে বাঁচুক,,,,,,
নয়ন: আনহা আর বেঁচে নেই,,,,,
আকিব: কি,,,,,,,,,,,
নয়ন: হুম,,,, আমি আনহার বাড়ি থেকে ঘন্টাখানেক আগেই চলে এসেছি,,,,পেপার টাও ওখানেই আছে,,,,,আনহা নাকি সুইসাইড করেছে,,,,,ফ্যানের সাথে এখনো ওর লাশ ঝুলছে,,,,, আমি এই মাত্র আনহার বাসায় এসেছি,,,, তুই ও চলে আয়,,,,,আনহা সুইসাইড নোটে লিখে গেছে তুই না এলে যেন ওর লাশ না নামানো হয়,,,,,তাই এখনও ফ্যানের সাথে ওর লাশ ঝুলছে,,,,, তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়,,,,,,,,
নয়ন ফোন কেটে দেয়,,,,,
আনহা: ওহহো,,,, দারুন এ্যাকটিন করেছেন
এখন শুধু আকিব আসার পালা সবাই রেডি তো,,,, আমি রুমে যাই,,,,,
আনহা রুমে চলে গেল,,,,,,সবাই বসার রুমে বসে আছে,,,,,,আকিব নয়নের কথা শুনে তাড়াতাড়ি আনহার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে,,,আকিব ভাবতে পারছে না আনহা সুইসাইড করল,,,,আকিবের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে,,,,গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে আসে,,,,দরজা খোলাই ছিল
আকিব ভিতরে ঢুকল,,,,, কাঁপা কাঁপা পায়ে এগোচ্ছে,,,, হাঁটতে এখন ওর প্রচুর কষ্ট হচ্ছে
আকিবকে দেখে তামিম ইশারায় আকিবকে আনহার রুমে যেতে বলল,,,,আকিব আস্তে আস্তে আনহার রুমের ভিতরে ঢুকল,,,, রুমে ঢুকেই আকিবের চক্ষু চড়কগাছ,,,,আনহা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আয়নার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাচ্ছে,,,,আকিব কে দেখেই উঠে দাঁড়ালো,,,,
আকিব: আনহা,,,, তুমি,,,, কিন্তু তুমি তো,,,
আনহা: সুইসাইড করেছি তাইতো,,,,
আকিব: নয়ন তো,,,,,
আনহা: আমি ওনাকে এসব বলতে বলেছি,,,,,
আকিব: এসব করার মানে কি আনহা,,,,
আমাকে মিথ্যা বলে এখানে আনার কারণ কি,,,,
আনহা: তাহলে সত্যি আমি মরে গেলে তুমি খুশি হতে,,,,,,,, তাহলে আমি এখনই সুইসাইড করি,,,, তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখ,,,,,
আনহা একটা শাড়ি নিয়ে ফ্যানের দিকে ছুড়তেছে,,,,,
আনহা: পারছি না তো,,,,ওয়েট একটা টুল নিয়ে আসি,,,,,,
আনহা টুল আনার জন্য বাইরে যেতে নিলে আকিব ওর হাত ধরে টান মেরে সামনে এনে আনহার গালে ঠাস করে চড় মেরে দিল,,,,চড় খেয়ে আনহা গালে হাত দিয়ে বড় বড় চোখে আকিবের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,এই প্রথম আকিব ওর গায়ে হাত তুলল,,,,আকিব চড় মারার সাথে সাথেই আনহাকে জড়িয়ে ধরে,,,
পর পর দুইবার আনহা অবাক,,,, মারলো আবার জড়িয়ে ধরল,,,,,এটা কেমন হলো,,,,
আকিব শক্ত করে আনহাকে জড়িয়ে ধরে আছে,,, মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই পাখির মতো উড়ে যাবে,,,,আনহা একটু মুচকি হেসে আকিবকে দুহাতে আকড়ে ধরে,,,,,
আকিব আনহাকে ছেড়ে দিয়ে দুহাতে আনহার গাল স্পর্শ করে,,,,,
আকিব: You don't know how can I love you,,,,,হুমম,,,জানো নয়নের কাছে যখন আমি শুনলাম তুমি আর নেই আমার তখন কেমন ফিল হচ্ছিল,,,, তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহুর্ত থাকতে পারব না,,,,,,
আনহা: এতো যখন বুঝো তাহলে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছ কেন,,,,,তুমি তো খুব ভালো করেই জানো তোমাকে ছাড়া আমি ভালো থাকতেই পারি না,,,,,তারপরও,,,,,হ্যা আমি ভুল করেছি তোমাকে ভুল বুঝে,,,,তাই বলে তুমি আমাকে এত বড় শাস্তি দেবে,,,, এর থেকে সত্যি আমার মরে যাওয়া ভালো,,,,,
আকিব আনহার মুখ চেপে ধরে,,,, আবার জড়িয়ে ধরল,,,,,আনহা ও আকিবকে জড়িয়ে ধরে,,,,,ওর চোখের পানি বাধ মানছে না আকিবের শার্ট ভিজে গেছে,,,,,আনহা আকিবকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে,,,,,
আনহা: মনে আছে তোমার,,,,একদিন বলেছিলাম না,,,,,যে থাকে সে হাজার কষ্ট হলেও থাকে আর যে চলে যায় তাকে হাজার চেষ্টা করেও আটকানো যায় না,,,, সুখের সময় তোমার সাথে ছিলাম তাই বলে দুঃখের সময় থাকব না এটা কি করে হয়,,,,, সারাজীবন তোমার সাথে থেকে তোমার সুখ দুঃখের ভাগিদার হয়ে থাকতে চাই,,,,,,,
আকিব অপলক দৃষ্টিতে আনহার কথাগুলো শুনছিল,,,,,,
আনহা: ভালো কথা,,,, আমি তোমার নামের সব মিথ্যা অপবাদ ঘুচিয়ে দিয়েছি,,, রাকিবের মুখোশ সবার সামনে টেনে খুলেছি,,,, এখন আর তোমার উপর কেউ রেগে নেই সবাই অনুতপ্ত,,, এবার চলো আমরা বাড়ি ফিরে যাই নতুন করে সবকিছু শুরু করি,,,,,,,
আকিব: আমি সবকিছু জানি,,, কিন্তু ওই বাড়িতে আমি ফিরে যেতে পারব না,,,,
আনহা: কিন্তু কেন,,,,,
আকিব: বাড়িতে গেলে আমাকে ভাইয়ার মুখোমুখি হতে হবে,,,, তখন আমার পিছনের কথাগুলো মনে পড়ে যাবে,, আর আমি তা সহ্য করতে পারব না,,,,,, আমি পারব না নিজেকে কন্ট্রোল করতে,,,,
আনহা: তোমাকে যেতেই হবে,,,ওই বাজে লোকটাকে তুমি নিজের হাতে শাস্তি দিবে,,
আকিব: যে ভাইয়াকে এত বছর ধরে ভালোবেসেছি শ্রদ্ধা করেছি তাকে কিভাবে কষ্ট দেই,,,,
আনহা: তোমার ভাইয়া তোমার সাথে এত বড় বেঈমানি করল আর তুমি তাকে কিছু বলবে না,,,,,
আকিব: দেখ আনহা,, কুকুর যদি কামড়ায়
প্রতিশোধ নিতে আমি ও যদি পাল্টা কামড় দেই তাহলে কুকুর আর আমার মধ্যে পার্থক্য রইল কোথায়,,, আর তাছাড়া আমার নিজের ভাইয়া তাকে কষ্ট দিতে গেলে আমার কষ্ট হবে আর তার সামনে গেলেও কষ্ট হবে,,তাই আমি বাড়িতে ফিরব না,,,,, তুমি যদি আমার সাথে থাকতে চাও তাহলে আমি যেখানে নিয়ে যাব সেখানে যেতে হবে আমি যেভাবে থাকব সেভাবে থাকতে হবে,,,,পারবে,,,,
আনহা: আমি সব পরিস্থিতিতে তোমার সাথে থাকতে প্রস্তুত,,,, তুমি যেখানে নিয়ে যাবে আমি সেখানে যাব,,,,
আকিব: তোমার পরিবার মানবে তো,,,,,,
আনহা: তারা অবশ্যই মানবে,,,, যেখানে থাকতে আমার প্রবলেম নেই সেখানে আমার পরিবারের কোন প্রবলেম থাকার কথা না চলো,,,,যাওয়া যাক,,,,,
আনহা ব্যাগ গুছিয়ে আকিবের হাত ধরে বাইরে আসে,,,,, সবাইকে জানিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়,,, হঠাৎ আকিবের চোখ যায়
নয়নের দিকে এখনও গালে হাত দিয়ে বসে আছে,,,,আনহার চড় এখনো হজম হয়নি,,,
আকিব: কি রে এখানে এভাবে বসে আছিস কেন চল,,,,
সবাই মিটিমিটি হাসছে কারণ আকিব জানে না যে আনহা নয়নকে চড় মেরেছে,,,,
আনহা: হুম ভাইয়া চলুন,,,, আমি আর আকিব যাই,,, আপনি বরং আমার ব্যাগটা নিয়ে আসুন,,,,,
আনহা মুখ টিপে হাসছে,,,,আকিব তো কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,আনহা আকিব আর বাকি সবার সাথে বাইরে আসে বাড়ির সবাইকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ল,,,,, নয়ন ও ব্যাগ নিয়ে ওদের পিছু পিছু গেল,,,,,,,
After 3 years
আকিব: আনহা আর কতক্ষন লাগবে ঘন্টাখানেক ধরে ওয়েট করতেছি,,,,,
আনহা: তুমি আয়ান কে রেডি কর আমি আসতেছি,,,,
আকিব: আয়ানকে রেডি করেছি আধঘন্টা হয়ে গেছে,,,, আর তুমি,,,,,
আনহা: আমার হয়ে গেছে চলো,,,, (শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে)
আকিব: একটু ঘুরতে যাব আর তুমি এতো সেজেছো,,,,
আনহা: তো,,,,,
আকিব: তো মানে,,,শোন তোমাকে যে কেউ দেখলে বুঝবে যে তুমি এক বাচ্চার মা,,,,,,
আনহা: ওহ আচ্ছা (হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে) আর তোমাকে দেখলে কি বলবে,,,,
আকিব: আমাকে দেখলে কেউ বুঝবেই না যে আমি বাচ্চার বাবা হয়ে গেছি,,,,দেখছো না দিন দিন কেমন হ্যান্ডসাম হচ্ছি,,,, প্রতিদিন লাভ লেটার পাই,,,,,
আনহা: ওহ তাই,,,, দাঁড়াও আসছি,,,,,
আনহা রুমে গেল একটু পরে বেরিয়ে আসে হাতে একটা কাগজ,,,,
আকিব: তোমার হাতে কি,,,,,
আনহা: এই কাগজে ম্যারিড লেখা,,,, তোমার পিঠে লাগিয়ে দিব তাহলে কেউ লাভ লেটার দেবে না,,,,,,
আকিব: আরে লাভ লেটার ই দিচ্ছে আমি তো আর পাত্তা দিচ্ছি না,,,,,
আনহা: তবুও,,,,, আমার হাজবেন্ডের দিকে তাকাতেও দেব না,,,, আমাকে কি শ্রীময়ি পেয়েছ নাকি শ্যামা পেয়েছ,,,,,হুম,,,,,
আকিব: আল্লাহ আমাকে উঠাইয়া নেও,,,,,
আনহা: কথা না বলে পিছন ঘুরো,,,,
আকিব: লোকে দেখলে কি বলবে,,,,
আনহা: লোকে কি বলবে সেটা দিয়ে আমি কি করব,,,,
আকিব: আচ্ছা ঠিক আছে আমি আয়ান কে কোলে নিব,,,,, আর তুমি আমার পাশে পাশে হাঁটবে,,,,, তাহলে সবাই ভাববে আমি ম্যারিড আর আমার একটা ছেলে আছে ওকে,,,,
আনহা: ওকে,,,,,
আকিব: তাহলে যাওয়া যাক,,,,,
আনহা: হুম (মাথা নাড়িয়ে)
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
সেদিন আনহা আকিবের হাত ধরে একটা ফ্ল্যাটে আসে আর আকিব একটা অফিসে জয়েন করে,,,,,আকিবের মা বাবা বোন এসে ওদের বাড়িতে যেতে  অনেক অনুরোধ করে কিন্তু আকিব যায়নি,,,,ও কিছুতেই রাকিবের মুখোমুখি হতে চায় না,,,, আর ওর বাবার কোন সম্পত্তি ও ওর চাই না আকিব ওর বাবাকে সাফ মানা করে দিয়েছে,,,,,সব সম্পত্তি যেন রাকিবকে দেওয়া হয়,,,,আকিবের বাবা এসব মানতে চায় না কিন্তু আকিব ও নিজের জেদ ধরে থাকে,,,,,
ওর এক কথা,,,,ওর কাছে ওর ভালোবাসার মানুষ গুলোই যথেষ্ট আর কিছু নয়,,,,, আনহাকে নিয়ে বাকি জীবন এখানে এভাবে কাটাতে চায়,,,,সেদিন আনহাও কিছু বলেনি
বলার কোন ভাষা ছিল না ওর,,,আকিবের ভালোবাসার কাছে এভাবেই ও হার মেনে আসছে,,,,,, সেদিন আনহার চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল এই ভেবে যে আকিব ওকে এতো ভালো বাসে আর ও কিনা আকিবকে ভুল বুঝেছিল,,,,,আয়ান হচ্ছে আকিব আর আনহার ছেলে বয়স দুই বছর,,,
এক সপ্তাহ আগে আয়ানের জন্মদিন ছিল আর সেদিন আকিবের বাবা নিজের নাতিকে একটা ফ্ল্যাট গিফট করে,,,,,আকিব এর কোন কথাই ওর বাবা শোনেনি,,,, কারণ ওনি ছেলেকে নয় নাতিকে দিয়েছে,,,, এজন্য আকিব ও কিছু বললো না,,,, দুদিন হলো ওরা নতুন ফ্ল্যাটে এসেছে,,,,, আর আজকে তিনজনে ঘুরতে বেরিয়েছে,,,,,,
রাতের ডিনার করেই ওরা বাড়ি ফেরে,,,,, আনহা বাড়ির সব কাজ সামলে রুমে এসে দেখে,,,,আকিবের বুকের উপর আয়ান ঘুমিয়ে পড়েছে আকিব ও ঘুমে,,,,, ওদের এভাবে দেখে আনহার ঠোঁটের কোণে এক চিলতি হাসি ফুটে উঠল,,,,,আনহা আয়ানের কপালে চুমু দিয়ে চলে যেতে নিলে আকিব ওর হাত টেনে ধরে,,,,,
আনহা: তুমি ঘুমাও নি,,,,,
আকিব: ছেলেকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছো নাকি,,,, আমার টা দেবে কে,,,,
আনহা: কি দেব,,,,,
আকিব ভ্রু কুঁচকে আনহার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
আকিব: বুঝতে পারছ না,,,,
আনহা: উহু,,,,,,
আকিব: ওকে বোঝাচ্ছি,,,,,
আকিব আস্তে করে আয়ান কে পাশে শুইয়ে দিয়ে চাদর টেনে দিল,,,, তারপর দাঁড়িয়ে আনহার কাছে এসে ওর কোমড়ে হাত দিয়ে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল,,,,,
আকিব: তুমি সত্যি বুঝতে পারছ না,,,
আনহা ঠোট উল্টিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বলল,,,
আকিব: ওকে আমাকে বোঝাতে হবে,,,,, তবে এখানে না চলো ছাদে,,,,
আনহা: এখন,,,আয়ান উঠে যাবে তো,,,,
আকিব: উঠবে না আয়ান পুরো পুরি ওর মায়ের মতো হয়েছে একবার ঘুমালে সকাল ছাড়া ওঠে না,,,,
আনহা ছোট ছোট চোখে আকিবের দিকে তাকায়,,,,,
আনহা: আমি যাব না,,,,
আকিব আনহাকে কোলে তুলে নিয়ে ছাদের সিঁড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো,,,,,,আনহার কোন কথাই শুনলো না,,,,ছাদে একটা দোলনা আছে,,,,আকিব আনহাকে দোলনায় বসিয়ে দিল,,,,, আকাশে বড় একটা চাঁদ উঠেছে,,,,,
আনহা আকিবের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখতেছে,,,,,,আকিবের হাতে হাত রেখে,,,,,
 _____________🌹সমাপ্ত🌹_____________
সবাই শুধু টাকার লোভ করে না কিছু কিছু মানুষের ভালোবাসার লোভটাই বেশি থাকে
আর আকিব তার প্রমাণ  আর এভাবেই ওদের জীবন ভালোবাসার রং এ রাঙিয়ে যাক আর যারা যারা আমার গল্পটা পড়েছেন I wish তাদের জীবন ও যেন ভালোবাসার রং এ রাঙুক❤️❤️❤️
গল্পটা কেমন হয়েছে জানি না,,,,, আদৌ ভালো করে গল্পটা সাজিয়ে ঠিকমতো লিখতে পেরেছি কিনা কি সেটাও জানি না
এটা আমার লেখা তৃতীয় গল্প,,,, তবে এর পরে সম্পূর্ণ ভিন্ন থিমের একটা গল্প ভেবেছি,,,, গল্পটা দিতে দুদিন দেরি হবে এমনকি তিনদিন ও লাগতে পারে,,,, কারণ ১৫ তারিখের মধ্যে এসাইনমেন্ট কম্পিলিট করে দিতে হবে,,,,
তাই একটু দেরি হবে গল্প দিতে,,,, গল্পটা কেমন লাগলো সবাই কমেন্টে জানাবেন
_____________❤️ধন্যবাদ❤️____________


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমার বাংলা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
amarbangla
amarbangla
Our Telegram Group / Channel Join Now
Our Facebook Page Follow Now
amarbangla
daraz