বাংলা গল্প 💠 সেদিনের বৃষ্টি 💠
- ✔️গল্পের নামঃ 💛 সেদিনের বৃষ্টি 💛
- ✔️লেখকঃ সালমা চৌধুরী / Salma Chowdhury - সালমা চৌধুরী
- ✔️সংগৃহীতঃ ফেছবুক থেকে
আজ সকাল থেকেই প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাকালে বৃষ্টি হওয়াটায় স্বাভাবিক। কিন্তু বৃষ্টিরদিন বলে তো খিচুড়ি আর ডিম ভুনা খেয়ে ঘরে শুয়ে থাকা তো সম্ভব না। । কারণ কেয়ার ১০ম শ্রেণির প্রিটেস্ট পরীক্ষা চলছে।
কেয়ার পুরো নাম #মানহাতুল_মেহের_কেয়া।সে দশম শ্রেণিতে পড়ে বিজ্ঞান বিভাগে তাদের বাসার কাছেই একটা খ্যাতিনামা স্কুলে। কেয়ার দুইভাই। একজন নিয়ামুল কবির এবং আরেকজন পারভেজ কবির। কেয়ার বাবা প্রাইভেট জব করেন এবং মা বাসাতেই থাকেন। নিয়ামুল ভাইয়ার ডাক নাম নিয়ন। নিয়ন ভাইয়া অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে আর পারভেজ ভাইয়া HSC candidate এই হলো আমার পরিবার।
দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কোনো লাভ হলো না কারণ বৃষ্টি থামার কোনো নাম গন্ধ নেই। আজ আবার কেয়ার গণিত পরীক্ষা তাই বাধ্য হয়ে ছাতা নিয়ে স্কুলের দিকে রওনা দিলো কেয়া৷ কিছুক্ষণের মধ্যে কাক ভেজা হয়ে স্কুলে পৌছালো। ততক্ষণে পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে। স্যাররাও ক্লাসে চলে গেছে। তাই কেয়াও ভেজা শরীর নিয়ে দৌড়ে পরীক্ষার হলে চলে গেলো। পরীক্ষা শুরু হলো। একহাতে প্রশ্ন তারউপর কেয়ার সারা শরীর ভেজা। কেয়ার মনে হচ্ছিল এই বুঝি বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছে। তারপর আস্তে আস্তে লিখা শুরু করলো। কেয়ার ঠিক পিছনেই তার বেস্ট ফ্রেন্ড নীলার সিট। তাই দুজনে মিলে ভালোই দিলো পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বের হয়ে গেছে, বৃষ্টি কমে গেছে তবে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলো দুই বান্ধবী মিলে পার্কে যাবো। স্কুল থেকে কিছুটা দূরেই একটা ছোটখাটো পার্ক আছে। যদিও সেই পার্ক টা ছোট বাচ্চাদের জন্য। কেয়া আর নীলা দুইজন ই নিজেদের বাচ্চা মনে করে, তাই তারা প্রায় ই এই পার্কে আসে। মনোরম পরিবেশ, গাছের ছায়া দোলনা, অনেকরকমের খেলনা। কেয়া আর নীলা ২০ টাকার বাদাম হাতে নিয়ে একটা দোলনাতে বসে পরে। আপন মনে দুই বান্ধবী সুখ দুঃখের গল্প করছে৷
হঠাৎ একটা পিচ্চি এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। পিচ্চি কেয়াদের বলে,
"আপনাদের বয়স কত?"
কেয়ারা পিচ্চির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তারপর নীলা বলে উঠে,
" আমাদের বয়স দিয়ে তোমার কি কাজ?"
পিচ্চি বলে, "এত বড় বড় মেয়ে হয়ে,এই দোলনায় বসে আছেন কেন.? সরুন এখান থেকে আমি বসবো।"
নীলা আর কেয়া দুইজন ই খুব অবাক হয়। এটা কিভাবে সম্ভব এতটুকু একটা পিচ্চি ছেলে এমন ভাবে কথা বলছে। অথচ তার আশেপাশে কেউ নাই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করে,
" তুমি কার সাথে আসছো?"
পিচ্চি বলে,
" আমি একায় আসতে পারি। কিন্তু আজ আমি আমার চাচ্চুকে নিয়ে আসছি। কিন্তু আমায় কিছু বজ্জাত মেয়ে বিরক্ত করে তাই চাচ্চুকে নিয়ে আসছি, চাচ্চু যেনো এই মেয়েগুলোকে মেরে দেয়।"
কেয়া আর নীলা পুরাই থ মেরে আছে৷ কিসব বলছে এই পিচ্চি। বয়স ৬-৭ বছর হবে হয়তো এই বয়সেই এত পাকনা। তারা আর কিছু না বলে চুপচাপ দোলনা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলো।।
তাদের চলে যাওয়া দেখে পাশ থেকে কেউ একজন জোড়ে হাসি শুরু করেছে। পাশে তাকিয়ে দেখে তাদের ক্লাসমেট ফয়সাল। ক্লাসে ফয়সালের সাথে তেমন একটা কথা হয় না। কারণ কেয়া আর নীলা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের গল্পই শেষ করতে পারে না অন্যদের সাথে কিভাবে কথা বলবে ।
কেয়ারা পার্কে ফয়সালকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
"তুই এখানে কি করিস আর এভাবে হাসছিস ই বা কেনো?"
ফয়সাল কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলে,
"আমার এইটুকু ভাতিজার সাথে তোরা কথায় বলতে পারলি না। লেজ গুটিয়ে চলে যাচ্ছিস।"
তারপর নীলা বলে," ও কি তোর ভাতিজা..?"
ফয়সাল বলে, "হ্যা, আমার বড় ভাই এর একমাত্র ছেলে। আমি পরীক্ষা দিয়ে বের হয়েই দেখি ও আমার স্কুলের সামনে দাড়িয়ে আছে। ভাবিও সাথে ছিল৷ সে নাকি পার্কে আসবে। আর আমার সাথেই আসবে। তাই আমি ওকে নিয়ে পার্কে চলে আসছি আর ভাবি বাসায় চলে গেছে।"
কেয়া বলল," আচ্ছা ঠিক আছে তোরা থাক, আমরা বাসায় যায়। "
এই বলে হাঁটা শুরু করলো। কিছুদূর যাওয়ার পর আবার বৃষ্টি বাড়তে লাগলো। তারাও দ্রুত হাঁটা শুরু করলো। আশেপাশে তাকানোর সময় নেই। হঠাৎ একটা বাইক পাশ কাটিয়ে দ্রুত গতিতে চলে গেল৷ গেলো তো গেলো বৃষ্টির পানি জমে কাঁদায় পরিণত হওয়া পানিটা কেয়ার শরীরে ঢেলে দিয়ে গেলো।মেজাজ টা এত গরম হলো, কেয়ার মনে হচ্ছিলো এই বাইকার টা কে এই কাঁদা পানিতে চুবান দেয় । সাদা স্কুল ড্রেস টা পুরো নষ্ট করে দিলো।
পিছনে তাকিয়ে দেখতে দেখতে বাইকটা চলে যাচ্ছিলো। কোনোরকমে বাইকের পিছনের নাম্বার প্লেট এর নাম্বার টা দেখে নিলো কেয়া ।
বিড়বিড় করে বলল,
"এই বাইক টা আবার যদি পাই তো বাইকারের খবর আছে।"
রাগে দুঃখে বাসায় ফিরলো সে।
চলবে.................
বাংলা গল্প 💠 সেদিনের বৃষ্টি 💠 পর্ব - ০২
বাসায় ঢুকে কোনোদিকে না তাকিয়ে কেয়া নিজের রুমের দিকে দৌড় দিলো । কারণ কেয়ার মা দেখলে আস্ত রাখবে না তাকে । কিন্তু এতে তো কেয়ার কোনো দোষ ছিল না এটা কেয়ার মাকে বুঝাতেই পারবে না। ব্যাগ টা টেবিলে রেখে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। শাওয়ার শেষ করে বের হয়ে কাপড়গুলো মেলতে মেলতে ভাবছিলো এই বাইকার টাকে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করতে হবে। মনে পরে গেলো বাইকের পিছনের সিরিয়াল নাম্বার টা সঙ্গে সঙ্গে খাতায় লিখে নিলো সে। নাহয় ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
দুপুরের খাওয়া শেষ করে একটু রেস্ট নিয়ে পড়তে বসলো । আগামীকাল কাল আরেকটা পরীক্ষা আছে। পরীক্ষা পড়াশোনার চাপে ৩-৪ দিন চলে গেলো। বাইকারের কথা মোটামুটি ভুলেই গেলো।আজ বৃহস্পতিবার। পরীক্ষা শেষ করে কেয়া আর নীলা ফুচকা খেতে যাচ্ছে। আজকে সারাদিন আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার। রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে রাস্তায় আশেপাশে পানি জমে আছে। তাই কেয়া আর নীলা সাবধানে হাঁটছিল আর তাদের মতো গল্প করছিল। হঠাৎ একটা বাইক অনেক স্প্রীডে তাদের পাশ দিয়ে চলে গেলো। আর একটুর জন্য তাদের ধাক্কা মারতো... বাইকটা কিছুদূর গিয়ে থামলো। রাগে কটমট করে বাইকের দিকে তাকালো কেয়া। হেলমেট পরা কেউ একজন কেয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। তৎক্ষনাৎ কেয়ার চোখ পরলো বাইকের পিছনের সেই নেইম-প্লেটে। সেদিনের নোট করা সেই নাম্বার টা। কেয়া নীলা কে বলে দ্রুত হাঁটা দিলো যেনো বাইকারকে ধরতে পারে।
কিন্তু কোনো লাভ হলো না। বাইকার তাদের দ্রুত হাঁটা দেখে আবার বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। কিছুদূর যাওয়ার পর আবার ঘুরে কেয়াদের দিকে আসছে। কেয়া আর নীলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরেছে। কারণ এই ছেলেকে তারা আটকাবে। বাইকের সাথে কি আর আমরা পারবো। এই ছেলে এঁকেবেঁকে বাইক চালিয়ে আসছে। রাস্তার পাশ দিয়ে বাইক টেনে চলে গেছে। আবারও রাস্তার পাশের কাঁদাপানি কেয়ার উপর এসে পরছে। নীলার উপরও আজ কাঁদা পরছে তবে একটু কম৷ পার্কের ঘটনাটা অনিচ্ছায় হলেও আজ স্পষ্ট বুঝা গেলো সেই ছেলে ইচ্ছে করে কেয়াদের সাথে এমন টা করছে।
ফুচকা তো খাওয়া হলোই না রাগে দুঃখে একপ্রকার কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরলো কেয়া। আজ আর দৌড়ে রুমে যাওয়ার চেষ্টা করলো না। কারণ আজ কেয়ার মনটা অনেক বেশি খারাপ সাথে রাগও উঠছে। আম্মু কেয়াকে দেখে জিজ্ঞেস করছেন কিরে বৃষ্টি নাই কিছু নাই কাঁদাপানি ভরলো কিভাবে? রাস্তায় কি পরে গেছিলি নাকি?কেয়া কিছু না বলে করুন দৃষ্টিতে মায়ের দিয়ে তাকিয়ে আবার নিজের রুমে চলে এসেছে। শাওয়ার শেষ করে খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পরেছি। রাতে আবার পড়তে বসছে কারণ আরও ২ টা পরীক্ষা আছে। কোনোরকমে পরীক্ষা গুলো শেষ করলো। আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষা শেষ। ছোট হোক বড় হোক পরীক্ষা মানেই প্যারা।
যথারীতি ক্লাস চলছে। ২ টা পর্যন্ত ক্লাস চলে তারপর টিউশন পড়ে ২ টা। বাসায় যেতে যেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। কেয়া আর নীলা আজ ফুচকা খেতে এসেছে। ফুচকা খেতে খেতে হঠাৎ চোখ পরলো দূরে একটা ছেলে এক কাপ চা হাতে নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে আর মাঝে মাঝে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। কেয়ারা বিষয় টা তেমন পাত্তা দেয় নি। এই ছেলে তো মনে হচ্ছে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ছেলে মাশাআল্লাহ অনেক লম্বা ৫ ফিট ৯ হবে হয়তো দেখতেও নায়ক নায়ক। যদিও দূর থেকে এতটা স্পষ্ট না চোখে সানগ্লাস একহাত পকেটে আরেক হাতে চায়ের কাপ।
কেয়া আর নীলা ছেলেটাকে নিয়ে দু-এক মিনিট গবেষণা করে ফুচকা শেষ করে বাসায় দিকে হাঁটা দিলো। দুজনের বাসা একই রাস্তায় এবং কাছাকাছি হওয়ায় আমরা হেঁটে হেঁটে গল্প করতে করতে আসে তারা। নীলার বাসা আগে তারপর কিছুটা রাস্তা কেয়ার একায় যেতে হয়। তবে কোনো সমস্যা হয় না। আজও নীলা বাসায় ঢুকে গেছে। কেয়া রাস্তার সাইডে হাঁটছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন কেয়ার পিছনে আসছে। কিন্তু কেয়া তাকাতে সাহস পাচ্ছে না। দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ঢুকার রাস্তায় গিয়ে একবার পিছনে তাকিয়ে দেখি সেই চা খাওয়া ছেলেটা কেয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
কেয়া দ্রুত বাসায় ঢুকে গেলো আর ভাবতে লাগলো এই ছেলে কি আমায় ফলো করছে। যাক বাবা আজকের মতো বেঁচে গেলাম.........
চলবে........
বাংলা গল্প 💠 সেদিনের বৃষ্টি 💠 পর্ব - ০৩
কেয়া বাসায় ঢুকে মায়ের সাথে একটু কথা বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল। এমন সময় দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ হলো। কেয়া অর্ধেক সিঁড়ি উঠে দাঁড়িয়ে পরেছে। কেয়ার আম্মু গিয়ে দরজা টা খুললো। কেউ একজন কেয়ার আম্মুর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করছে। কেয়া একটু উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছি কে কিন্তু দেখতে পাই নি। আম্মু তাকে ভেতরে আসতে বলে ভেতরে দু-পা দিতেই কেয়ার চোখ কপালে উঠে গেছে। এ তো সেই ছেলে যে একটু আগে রাস্তায় চা খাচ্ছিলো আবার কেয়ার পিছুও নিয়েছিল। এই ছেলে এখানে কেনো..???আল্লাহ ই জানে গুন্ডা নাকি সন্ত্রাস। কেয়া একমনে দাড়িয়ে এসব ভেবে যাচ্ছিল কিভাবে তার হাত থেকে বাঁচাবে নিজেদের ।
হঠাৎ আম্মুর ডাকে হুঁশ ফিরেছে কেয়ার । আম্মু হাসি মুখে কেয়াকে বলছে কিরে কেয়া ঐখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো. নিচে আয় দেখ কে এসেছে।কেয়া তো পুরাই থ এই গুন্ডাকে কি আম্মু চিনে নাকি.....। কেয়া আস্তে আস্তে নিচে নামলো।
আম্মু পরিচয় করিয়ে দিলো এ হলো মাহির। তোর আব্বুর চাচাতো ভাই এর ছেলে। তুই ওকে দেখিস নি। ও যখন খুব ছোট তখন ই সপরিবারে ঢাকা চলে গেছিলো৷ তারপর আমরাও গ্রাম ছেড়ে এখানে চলে আসছি তাই তেমন যোগাযোগ ই ছিল না। কিছুদিন আগে তোর আব্বু গ্রামে গেছিলো। তো বাড়িতে গিয়ে দেখে ওরা বাড়িতে চলে আসছে সেখানেই আলাপ হয়। আমাদের বাসার ঠিকানা দিয়ে আসছিলো। আম্মুর কথা শেষ হতেই মাহির ভাইয়া কেয়ার দিকে তাকিয়ে সালাম দেয়। কেমন আছে জানতে চাইলো। কেয়া সালামের উত্তর দিয়ে শুধু বলেছে ভালো আছি।কেয়া আর একটা কথাও বলে নি।
তারপর কেয়ার আম্মু ঐ ছেলেকে মানে মাহির ভাইকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা করছে।
কেয়ার দাদা-দাদুর একমাত্র সন্তান ছিল কেয়ার আব্বু। কেয়ার আম্মু আব্বুর বিয়ের কয়েক বছর পরই দাদা মারা যান। দাদু ছিল শুধু। কেয়ার দুই ভাই গ্রামে থাকাকালীন ই জন্মেছিল তারা দাদুর আদর ভালোবাসাও পেয়েছে। তারপর দাদু মারা গেছেন৷ দাদু মারা যাওয়ার আগেই নাকি আব্বুর চাচা-চাচী আর আব্বুর চাচাতো ভাই তার পরিবার নিয়ে ঢাকা চলে গেছিলো। তখন কেয়ার আব্বু আম্মু গ্রামে একা হয়ে পরে। আব্বুর চাচা চাচীও কেউ গ্রামে ছিল না৷ তখন ই নাকি কেয়ার আব্বু গ্রাম ছেড়ে এই শহরে পারি জমায়। আব্বু আম্মু শহরে আসার ২ বছর পর কেয়া জন্মেছিল।তাই কেয়ার পক্ষে কাউরে চিনা সম্ভব না।
কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে কেয়া নিজের রুমে চলে গেলো৷ কেয়ার আম্মু মাহির ভাইয়ার থেকে সব তথ্য নিচ্ছে কি অবস্থা , সবাই কেমন আছে এসব ই। মাহির ভাইয়া ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত ঢাকা পড়াশোনা করেছে। চাচ্চুর রিটায়ার্ডের কারণে তারা আবার গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। মাহির ভাইয়ার আব্বু এই শহরেই ব্যবসা শুরু করেছেন। সেই সুবাদে মাহির ভাইয়া আমাদের শহরের একটা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছে।
কেয়া রুমে এসে শাওয়ার শেষ করে শুয়ে আছে। কারণ তার নিচে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।কেয়া ঐ ছেলেটার মুখোমুখি আর হতে চাই না। অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলতে একদম ই ভালো লাগে না। যদিও সে কেয়ার ভাই এবং পরিচিত। কিন্তু যেহেতু তাকে জীবনে প্রথম দেখেছে তাই কেয়ার কাছে তিনি অপরিচিত। তারউপর রাস্তার ঘটনাটা ভাবতেই আর যেতে ইচ্ছে করছে না।
আম্মু গল্প করলো কিছুক্ষণ তারপর নাস্তা দিলো ভাইয়াকে৷ মাহির ভাইয়া বাসায় আসছে বলে আব্বুর আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসছে। আব্বুও মাহির ভাইয়ার সাথে গল্প করলো। আব্বু জিজ্ঞেস করছে মাহির ভাইয়া কোথায় থাকে। মাহির ভাইয়া বলছে তিনি একটা মেসে কয়েকটা বন্ধুর সাথে থাকছে। কেয়ার আব্বু খুব করে বলছে মাহির ভাইয়া যেনো কেয়াদের বাসায় চলে আসে। কিন্তু মাহির ভাইয়া রাজি হয় না এবং বলে যদি কখনো আমার দরকার লাগে তাহলে অবশ্যই বাসায় আসবো। এসব কথা বলে মাহির ভাইয়া চলে যায়।
এতসময় ধরে কেয়া একবারের জন্যও নিচে নামে নি।
সে শুধু ভাবছিল এই ছেলে কি আমায় চিনে... নাকি এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল। চিনবেই বা কিভাবে তার সাথে তো কেয়ার আগে দেখায় হয় নি। হঠাৎ কেয়ার আম্মু ডাকছে.......
চলবে.......
বাংলা গল্প 💠 সেদিনের বৃষ্টি 💠 পর্ব - ০৪
হঠাৎ শুনতে পেলো নিচ থেকে আম্মু ডাকছে।কেয়া রুম থেকে বের হয়ে আগেই চেক করে নিলো মাহির ভাইয়া আছে কি না কিন্তু তাকে কোথাও দেখতে পেলো না বুঝতে পারলো তিনি চলে গেছেন। যাক বাবা বাঁচা গেলো। এই ভেবে নিচে গেলো কেয়া। আব্বু আম্মুর সাথে গল্প করে খেতে লাগলো সে।
কেয়ার আব্বু বলতেছে.... মাহির কে ঐদিন ও বাড়িতে কত করে বললাম আমাদের বাসায় এসে থাকতে। আমাদের এত বড় বাসা থাকতে ওর কষ্ট করে মেসে কেনো থাকতে হবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা তখনও আমায় না করে দিয়েছে বলছে দরকার পরলে এসে থাকবে।
কেয়া মনে মনে ভাবছে ভালোই হয়েছে এখানে থাকতে রাজি হয় নি।৷ রাস্তায় যেভাবে তাকিয়ে ছিল। বাসায় থাকলে যদি এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে তাহলে কেয়ার আর এই বাসায় থাকা হবে না। এসব ভেবে মনে মনে হাসছে সে।
তখন আব্বু কেয়াকে বললো শুন মা... মাহিরের কলেজ তোর স্কুলের কাছেই। রাস্তাঘাটে দেখা হলে একটু কথাবার্তা বলিস৷ তোর যে স্বভাব সে ডাকলেও হয়তো কথায় বলবি না। এসব করিস না মা। এত বছর পর বাড়িতে যাওয়ার সুবাদে তাদের সাথে যোগাযোগ হলো। সম্পর্কটা নষ্ট করতে চাই না আমি।
খাওয়া শেষ করে কেয়া নিজের রুমে চলে আসলো। যথারীতি পড়াশোনা করছে। কারণ সামনেই টেস্ট পরিক্ষা তারপর SSC পরীক্ষা, টিউশন, ক্লাস সব মিলিয়ে প্রচুর চাপে আছে মেয়েটা।
পরদিন স্কুলে গেলো। আজ নীলা স্কুলে আসে নি। নীলার নাকি জ্বর আসছে। যদিও ওকে দেখে আসতে পারে নি। দরজার বাহির থেকে ডেকেছে কেয়া । তারপর আন্টি বললো ওর জ্বর।কেয়া আর ভেতরে যেতে পারি নি কারণ ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছিলো। ক্লাস শেষ করে মন মরা হয়ে হাঁটছে কেয়া। নীলা না থাকলে স্কুলে নিজেকে অসহায় লাগে। কারো সাথে কথা হয় না। স্কুল গেইটের বাহিরে এসেই চোখ পরে রাস্তার অপর পাশে কেউ একজন নীল শার্ট পড়ে বাইকের উপর হাতে চায়ের কাপ নিয়ে বসে বসে চা খাচ্ছে।
কেয়া রাস্তায় এসে দেখে এ তো মাহির ভাইয়া। ওনার কলেজ তো আরও দূরে তিনি এখানে কি করেন। আবার কেয়াকে দেখে ওনি হাসছেন। কেয়া রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা শুরু করলো। পিছন থেকে মাহির ভাইয়া ডাকছে..
কেয়া.... এই কেয়া শুনো...
তৎক্ষনাৎ বাবার কথা মনে পড়ে গেলো। বাবা বলেছিলো ওনার সাথে যেনো ভালো ব্যবহার করে সে। তাই কেয়া দাঁড়ালো।
মাহির ভাইয়া দ্রুত হেঁটে কেয়ার ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন৷ তারপর বলছেন তোমার জন্য ১ টা ঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করছি। এতক্ষণে বের হলে তাও আবার চলে যাচ্ছো...
কেয়া তো পুরাই অবাক। তারপর বললো আপনি আমার জন্য কেনো অপেক্ষা করছেন... কোনো দরকার?
মাহির ভাইয়া হেসে উত্তর দিলো অনেক বেশি দরকার।
কেয়া বললো, কি দরকার বলুন....
মাহির ভাইয়া মুচকি হেসে বলে সব কথা চাইলেই এত সহজে বলা যায় না।
কেয়া কিছুটা অবাক হয়েছে তারপরও পাত্তা দেয় নি।
কেয়ার হঠাৎ গতকালের ঘটনার কথা মনে পরে গেলো।
ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো, 'আপনি কি গতকাল আমায় ফলো করেছিলেন ভাইয়া.??'
মাহির ভাইয়া উত্তর দিলো, "তোমাকে বলার মতো অনেক কথা আছে কিন্তু তুমি বুঝবে না। তুমি কি বাসায় যাবে?"
কেয়া বললো," হ্যাঁ বাসায় যাবো। আচ্ছা আসি তাহলে। আপনি ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
মাহির ভাইয়া বললো এই মেয়ে আমিও যাবো তোমার সাথে।
কেয়া বললো, কেনো?
ওনি বললেন আমার ঐদিকে কাজ আছে। তুমি যেহেতু একায় যাচ্ছো তাহলে আমিও যাই।
কেয়া আর কিছু বলে নি। কারণ ওনি কেয়ার কাজিন তারউপর নতুন পরিচয়। তাছাড়াও আব্বু সাবধান করে দিয়েছেন খারাপ ব্যবহার না করতে।
মাহির ভাইয়া বলছেন, কেয়া তুমি কি বাইকে যাবে?
কেয়া তৎক্ষনাৎ না করে দিলো । কারণ কেয়া নিয়ন ভাই ছাড়া কারো বাইকে আজ পর্যন্ত উঠে নি। তারউপর মাহির ভাইয়ার আচরণ কেমন জানি...
কেয়া বললো, " ঠিক আছে আপনি তাহলে বাইকে চলে যান আমি চলে যাচ্ছি। "
ওনি বললেন, "না, আমিও হেঁটে যাবো। তারপর ওনি কেয়াকে এটা সেটা প্রশ্ন করতে লাগলেন। আর কেয়া যথাসম্ভব হ্যাঁ আর না তে উত্তর করছে। তারপর জিজ্ঞেস করছেন তোমার কি মোবাইল আছে?
কেয়া বললো, "না। আব্বু বলছে SSC পরীক্ষার পর কিনে দিবে। "
মাহির ভাইয়া একটু যেনো হতাশ হলো, তারপর আবার বললো সমস্যা নাই পরীক্ষা তো চলেই আসছে।
কেয়া এতকিছু না ভেবে বাসা পর্যন্ত আসলো।। মাহির ভাইয়াকে বললো বাসায় আসতে। ওনি বললো অন্যদিন আসবে। এই বলে চলে গেলো। ওনার জন্য কেয়ার আর নীলাকে দেখে আসাও হলো না।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া শেষ করে শুয়ে আছে কেয়া আর মাহির ভাইয়ার কথা ভাবছে। ছেলেটা কেমন জানি, অদ্ভুত। যদিও দেখতে মাশাআল্লাহ। আর আজ নীল শার্ট কালো প্যান্টে অনেক সুন্দর লাগছিলো। যদি আর একটু তাকিয়ে থাকতো তাহলে হয়তো তার প্রেমেই পরে যেতো.. হঠাৎ আমার ঘোর কাটলো। নিজের মাথায় নিজে গাঁট্টা মারলো... ছিঃ কি সব ভাবছি আমি।........
চলবে........
বাংলা গল্প 💠 সেদিনের বৃষ্টি 💠 পর্ব - ০৫
আজ কেয়ার একদম ই স্কুলে যেতে ভালো লাগছে না। নীলাও অসুস্থ কি জানি সুস্থ হয়েছে কি না। বাসা থেকে বের হয়েই সোজা চলে গেলো নীলাদের বাড়িতে। নীলার জ্বর কিছুটা কমেছে তবে শরীর দূর্বল থাকায় সে আজও স্কুলে যাবে না তাই বাধ্য হয়ে কেয়া একায় হাঁটতে লাগলো স্কুলের দিকে। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ শুনলো পিছন থেকে কে যেন ডাকছে। তাকিয়ে দেখে ফয়সাল। তারপর ফয়সাল এসে হাই হ্যালো বলে দুজনই রাস্তার সাইড দিয়ে হাঁটছে আর অনেক ধরনের গল্প করছে।। গল্প করতে করতে তারা প্রায় স্কুলের কাছেই চলে আসছি। স্কুল গেটের সামনেই একটা বাইকার দাঁড়িয়ে আছে হেলমেট পরা। একটা লাল রঙের টিশার্ট পরা। কেয়ারা স্কুল গেটের সামনে যেতে যেতে সে বাইকার বাইক স্টার্ট দিয়ে প্রায় ফয়সালের উপরেই তুলে দিচ্ছিলো এভাবে পাশ কেটে চলে যাচ্ছে। একটুর জন্য বেঁচে গেছে ফয়সাল তারপর ও হালকা ধাক্কা খেয়েছে। কেয়ারা দুজনই পিছন ফিরে তাকালো। বাইকারকে দেখতে পাই নি তবে সেই নেমপ্লেটটা আবারও চোখে পরলো।
এ তো সেই বাইকটায় যেটা কিছুদিন আগে কেয়াদের উপর কাদাঁপানি ফেলছিলো তার বাইক দিয়ে। ভেবে পাচ্ছে না কেয়া, এই ছেলের সমস্যা কি। কেয়ারা তাদের মতো ক্লাসে চলে গেছে। ক্লাস শেষ করে আজ আর হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে নি। তাই রিক্সায় আসতেছে কেয়া৷ হঠাৎ চোখ পরে কিছুটা সামনে রাস্তার সাইডে মাহির ভাইয়া। কেয়া তেমন গুরুত্ব দেখায় নি। মাহির ভাইয়া হয়তো কেয়াকে খেয়াল করে নি। । কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে।কেয়াও নিজের মতো বাসায় চলে আসছে ।
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। টেস্ট পরীক্ষা চলছে কেয়াদের। পরীক্ষা আর পড়ার চাপে কোনো দিকে খেয়াল নেই কেয়ার। মাহির ভাইয়ার সাথে প্রায় ই দেখা হয়। কেমন জানি হাসে লোকটা রহস্যময় হাসি তারপরও হাসলে ওনাকে অপরূপ সুন্দর লাগে। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার ওনি বাসায় ও এসেছে। সবার সাথে অনেক গল্পও করে। অনেক মিশুক ছেলেটা। আজ বৃহস্পতিবার আবার রবিবারে পরীক্ষা। হাতে ২ দিন ছুটি আছে তাই কেয়া আর নীলা পরীক্ষা শেষ করে একটু ঘুরাঘুরির সিদ্ধান্ত নিলো। হাঁটতে হাঁটতে মাহির ভাইয়ার কলেজের সামনে চলে আসলো তারা। একবার ভাবছে ভেতরে ঢুকবো আবার ভাবছে তাদের তো ড্রেস পড়া সবাই চিনে ফেলবে তারা কোন স্কুলের তখন যদি স্যারদের কাছে বিচার দেয়। অনেককিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো একটু ভেতরে ঢুকবে স্যাররা কেউ দেখলে মাহির ভাইয়ার কথা বলবে। ভাই এর কাছে তো বোন আসতেই পারে।।
তারপর কেয়া আর নীলা কলেজের ভিতরে ঢুকল। আগেও অনেকবার এই রাস্তায় এসেছে কলেজটাকেও বাহির থেকে দেখেছে কিন্তু ভেতরে ঢুকা হয় নি কখনো। কলেজের এরিয়াটা অনেক সুন্দর। ফুলের গাছ ফলের গাছ আর অনেক ধরনের গাছগাছালি। যার বেশিরভাগ ই কেয়াদের অচেনা।
আশপাশ দেখতে দেখতে কেয়ারা কলেজ ক্যান্টিনের কাছে চলে গেলো। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন একটু কাশি দিয়ে বললো কি ব্যাপার মহারাণী এখানে কি মনে করছো? কেয়ারা দুজনই হতভম্ব হয়ে তাকালো।
মাহির ভাইয়া কেয়াদের দেখে হাসছেন । নীলা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো এমনেই ঘুরতে আসছি৷ মাহির ভাইয়া কেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো পরীক্ষা কেমন হলো? কেয়া মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো ভালো।
মাহির ভাইয়াকে দেখে আরও ২ টা ছেলে এসে মাহির ভাইয়া র পাশে দাঁড়িয়েছে। একজন বলছে কিরে মাহির বললি না তো আজ যে কলেজে ভাব...... এটা বলা মাত্রই মাহির ভাইয়া ঐ ছেলের মুখটা চেপে ধরলো।
কেয়ারা কিছুই বুঝলো না। মাহির ভাইয়া তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো আরে দোস্ত তোদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়৷ ও হলো কেয়া আমার কাজিন। আর সে কেয়ার ফ্রেন্ড।।
ছেলে দুইটা এ কথা শুনামাত্রই বলে উঠলো,
ও আচ্ছা.... কাজিন না,??
মাহির ভাইয়া ওদের চোখ দিয়ে ইশারা করবো। তারপর তারা কথা ঘুরিয়ে বলছে আচ্ছা আপুরা চলেন ক্যান্টিনে বসি। কি খাবেন বলুন। কেয়ারা মাথা নেড়ে না করলো কিছু খাবো না।
তারপর তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসবো এমন সময় মাহির ভাইয়া বললো ২ মিনিট দাঁড়াও আমি আসছি। ১ মিনিটের মধ্যেই চলে আসলেন৷ হাতে ২ টা ফুল। একটা লাল গোলাপ আরেকটা গাঁদা ফুল।
গোলাপ টা কেয়ার দিকে বাড়িয়ে বললেন আমাদের কলেজে প্রথমবার এলে কিছুই দিতে পারলাম না তোমায়। এটা তোমার জন্য। কেয়াও হাসি মুখে ফুলটা হাতে নিলোম। ফুলটা অনেক বড় দেখতে গাঢ় লাল গন্ধটাও অসম্ভব সুন্দর। কেয়ার বরাবর ই গোলাপ প্রিয় তবে দোকান থেকে কিনলেও এত ভাল ফুল পাওয়া যায় না। মাহির ভাইয়ার হাতের গাঁদা ফুলটা নীলাকে দিয়ে বললো আপু এটা তোমার জন্য৷ গোলাপ আর ছিল না৷ নীলাও হাসি মুখে ফুলটা নিলো। কেয়ারা দুজনই থ্যাংক ইউ বলে চলে আসছে৷
হঠাৎ নজরে পরলো সেই নাম্বারপ্লেটের বাইকটা৷ ভেবেছিলো মাহির ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবে। পিছনে তাকিয়ে তারা কাউকে দেখতে পেলো না। কেয়ারা গেইটের কাছে আসতে আসতে আবারও অনেক ফুল ফলের গাছ চোখে পরলো। অনেক ধরনের গোলাপে ভরা সাঁদা,গোলাপি,লাল,কমলা অনেক রঙের গোলাপ।
হঠাৎ নীলা কেয়াকে ডেকে বললো শুন কেয়া এই মাহির ভাইয়া নিশ্চয় তোকে পছন্দ করে তা না হলে এতগুলো গোলাপ থাকার পরও আমায় কেন ওনি গাঁদা ফুল দিলো।
কেয়া মুচকি হেসে নীলার দিকে তাকিয়ে বললো, এসব আজগুবি কথা বাদ দিয়ে চল।
চলবে.......
বাংলা গল্প 💠 সেদিনের বৃষ্টি 💠 পর্ব - ০৬
এভাবে বেশকিছু দিন কেটে গেলো। কেয়াদের টেস্ট পরীক্ষাও শেষ হয়েছে এক সপ্তাহ হলো৷ সামনে SSC পরীক্ষা তাই পুরোপুরি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। স্কুলে যাওয়ার দিন শেষ। এখন কোচিং প্রাইভেট নিয়ে প্রচুর ব্যস্ততায় দিন কাটছে।। এখন আর মাহির ভাইয়ার সাথেও তেমন দেখা হয় না।
সপ্তাহে একদিন কি দুদিন দেখা হয়। তবে সেদিনের মতো একসাথে হেঁটে বাসা পর্যন্ত আর আসা হয় না। দেখা হলে মাহির ভাইয়া কেয়াকে আর নীলাকে সবসময় চা খাওয়ায়। মাঝে মাঝে ফুচকা বা স্ট্রিট ফুড খাওয়ালেও চা টা তার স্পেশাল থাকবেই। কেয়ারও এখন চা খাওয়াটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। মাহির ভাইয়া না থাকলেও তারা চা খায় সবসময়।
আজ শুক্রবার। প্রাইভেট সব বন্ধ। সকালে কোচিং এ পরীক্ষা ছিল কেয়ার৷ গণিত পরীক্ষা প্রিপারেশন ভালোই ছিল কিন্তু পরীক্ষা এতটা ভালো হয় নি। এজন্য বিকেল বেলা গণিত বই নিয়ে প্রবলেম সলভ করছিল আর টিভি দেখছিল।৷ কলিং বেলের শব্দে কেয়া গিয়ে দরজা খুললো, দরজা খুলে একপ্রকার টাসকি খেলো৷ মাহির ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে হাতে কিছু খাবার আর একটা কার্ড। কেয়াকে দেখেই মুচকি হাসি দিলেন সাথে একবার চোখ ও মারলেন।কেয়া হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
সত্যি ই কি মাহির ভাইয়া চোখ মারলেন কিন্তু কেনো??
মাহির ভাইয়া কেয়াকে সাইড করে ভিতরে ঢুকলেন, কেয়ার আম্মু রান্নাঘর থেকে বের হয়ে মাহির ভইয়ার সাথে কথা বলছেন। কেয়া এখনও দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের ডাকে ভেতরে গেলো কেয়া। মাহির ভাইয়া কেয়ার হাতে খাবারের প্যাকেট গুলো দিলেন। কেয়া রান্নাঘরে গিয়ে আগ্রহ নিয়ে দেখছে কি কি এনেছেন। যদিও সবার বেলা কেয়া এসব চেক করে না। শুধু কেয়ার ভাইদের বেলায় চেক করে। আজ প্রথমবার মাহির ভাইয়ার আনা জিনিস চেক করছে।
এক প্যাকেট ফুচকা, একটায় চটপটি, এক বক্স হালিম, ঝালমুড়ি, চিপস এর প্যাকেট, একটা কফির বক্স আর একটা হরলিক্স আরেকটা প্যাকেটে কিছু ফল।
ফলের দিকে কেয়ার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। কেয়া ফুচকা হালিম এসব খাওয়ার ব্যস্ত।।
ঐদিকে আব্বু উপর থেকে নেচে আসছেন মাহির ভাইয়াকে দেখে। মাহির ভাইয়ার বড় ভাই আছেন একজন। ওনার নাম সাকিব। সাকিব ভাইয়ার নাকি বিয়ে আগামী শুক্রবার। এজন্য ওনি দাওয়াত দিতে আসছে৷ জোর করে বলছে অন্ততপক্ষে যেনো ৩ দিন আগে কেয়ারা চলে যায়। ওদের বাড়ির প্রথম বিয়ে বলে কথা। আর বলে গেছেন রবিবারে ওনারা শপিং এ যাবেন কেয়া আর তার আম্মু যেনো যাই। ওনি এসে আমাদের নিয়ে যাবেন। কেয়ার আব্বু বার বার না করার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো লাভ হয় নি। কেয়ার সামনে পরীক্ষা, কেয়ার ছোট ভাইয়ারও সামনে HSC পরীক্ষা। এখন বিয়ে খাওয়ার সময় নেই। তারপর ও আব্বু বিয়েতে যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছে । কিন্তু শপিং এ যেতে না করছে। মাহির ভাইয়া অনেক করে বলছে চাচ্চু আমি ওদের নিয়ে যাবো। শপিং শেষে আমিই ওকে প্রাইভেটে নিয়ে যাবো। কয়েক ঘন্টার ব্যাপার প্লিজ প্লিজ করে আব্বুকে মানিয়ে ফেলছে।
কিছুক্ষণ ভাইয়া গল্পগুজব করলো। হালকা নাস্তা করলো কিন্তু কেয়ার সেদিকে কোনো হুঁশ নেই৷কেয়া নিজের খাওয়ায় ব্যস্ত। এতক্ষণে সব খেয়ে শেষ করলো হঠাৎ মনে হলো ভাইয়াকে Thanks দেয়া দরকার। কিন্তু আব্বু আম্মু বসা কিভাবে বলবে সে ।
কিছুক্ষণ পর আব্বু রুমে চলে গেছেন। আর আম্মু কি জানি নিতে রান্না ঘরে গেলেন এই ফাঁকে কেয়া দৌড়ে এসে মাহির ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললো , "অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।"
ভাইয়া মুচকি হাসি দিয়ে বললেন হরলিক্স আর কফি রেগুলার খাবে। সামনে পরীক্ষা পড়াশোনা করো মনোযোগ দিয়ে। কেয়া শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি দিলো
আজ রবিবার। কোচিং শেষ করে বাসায় এসে গোসল করে রেডি হয়ে বসে আছে কেয়া। মাহির ভাইয়া নিতে আসবে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই মাহির ভাইয়া চলে আসছে। আজ ওনি নেভিব্লু শার্ট পরেছেন একটা। শার্ট এর হাতা টা কনুই পর্যন্ত ভাজ করা,চোখে সানগ্লাস, কালো প্যান্ট যেকেউ দেখলে ক্রাশ খাবে। যথারীতি কেয়াও ছোটখাটো ক্রাশ খেয়েছে যেহেতু ওনি কেয়ার ভাই তাই কেয়া নিজের মনের আবেগ নিজের মধ্যে চাপা দিয়ে নিচে চলে আসলো।। আজ ভাইয়া বাইক নিয়ে আসছে। কেয়া আর তার আম্মু চলে গেলেন ভাইয়ার সাথে শপিং এ।
এখানে সবার সাথে দেখা।৷ চাচ্চু, কাকিয়া, সাকিব ভাইয়া, মাহির ভাইয়ার ছোট বোন সাথী, তাদের আরও ২-১ জন কাজিন। আমরা কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করে শপিং শুরু করলো তারা।..........
চলবে........
বাংলা গল্প 💠 সেদিনের বৃষ্টি 💠 পর্ব - ০৭
বউ এর জন্য শাড়ি কিনা হলো। অন্যান্য সরঞ্জাম কিনা হচ্ছে। কেয়া আর মাহির ভাইয়ার বোন সাথী কিছু সময়ের মধ্যে ই ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। সে ইন্টারে পড়ে। কেয়ারাও এক ফাঁকে তাদের জন্য জামা পছন্দ করছে। একটা লেহেঙ্গা আর একটা ড্রেস কেয়ার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু কোন টা নিবে বুঝতে পারছে না। একবার লেহেঙ্গা আরেকবার ড্রেস হাতে নিচ্ছে।
তখনই মাহির ভাইয়া কেয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ড্রেস টা কেয়ার হাতে দিয়ে আবার চলে গেলো দূরে।
কেয়ার বুঝতে বাকি রইলো না কেয়া পছন্দ করতে পারছে না বলেই ওনি কেয়াকে হেল্প করলো। কিন্তু একটা কথাও বলে নি। হয়তো বাড়ির মানুষের নজরে পরে যাবে তাই। তারপর ওনি ওনার জন্য শার্ট দেখছেন। একটা শার্ট কেয়ার ড্রেসটার সাথে খুব মিলে যাচ্ছে। মনে মনে কেয়ার খুব খুশি লাগছে তারপর আবার নিজের মনকে শান্ত করে ফেলছে। হাজার হোক ওনি কেয়ার ভাই। ওনি নিশ্চয় কেয়াকে বোনের নজরেই দেখেন। কেয়ার মোটামুটি কেনাকাটা শেষ। তারপর মাহির ভাইয়া কেয়াকে ডাক দিলেন।
চলো তোমার টিউশনের সময় হয়ে গেছে। ততক্ষণে কেয়ার খেয়াল হলো। সবার সাথে আড্ডা আর শপিং এর চাপে ভুলেই গেছে তার টিউশন আছে।৷ সবার থেকে বিদায় নিয়ে মাহির ভাইয়ার পিছু পিছু চলে গেলো সে।
ভাইয়ার সাথে বাইকে করে টিউশনে চলে গেলো। ২ টা টিউশন ছিলো তাই ২ ঘন্টা+ সময় লেগেছে। সন্ধ্যার পর হয়ে গেছে। কেয়া বের হতেই দেখে মাহির ভাইয়া বাইকের উপর বসে আছে হাতে একটা কোন আইসক্রিম।
কেয়াকে দেখে বাইক থেকে নেমে সাইডে দাঁড়ালেন। কেয়া ওনার পাশে এসে দাঁড়াতেই কেয়ার দিকে আইসক্রিম টা বাড়িয়ে দিলেন৷ কেয়াও কোনোকিছু না ভেবে আইসক্রিম খাচ্ছে। ফিজিক্স ক্যামেস্ট্রি টিউশন পড়লে মাথা এমনেই গরম হয়ে যায়। আইসক্রিম খেলে যদি একটু ঠান্ডা হয়।
মাহির ভাইয়া বাইক নিয়ে রেডি। বলছেন যদি একটু লেইটে বাসায় যাও তাহলে কি খুব সমস্যা হবে.? কেয়া মাথা নেড়ে না বললো। কারণ কেয়ারও মাহির ভাইয়ার সাথে থাকতে ভালোই লাগে। কেয়ার কথায় মাহির ভাইয়া বোধহয় অনেক খুশি হয়েছেন।
বাইকে উঠলো বাসায় দিকে না গিয়ে অন্য রাস্তায় যাচ্ছেন।
কেয়া জিজ্ঞেস করলো, এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?
ওনি বললেন একটা স্পেশাল জায়গায়।
কেয়া আর কিছুই বললো না। রাতের রাস্তা আসলেই সুন্দর। ল্যামপোস্টের আলো একটু পর পর ব্রীজ, দুপাশে কেবল শূন্যতা ঠান্ডা বাতাসে শরীর মন শীতল হয়ে যাচ্ছে। অনেকটা পথ যাওয়ার পর রাস্তার পাশে বাইক থামালো মাহির৷ সামনেই ছোটোখাটো একটা বাজার মনে হচ্ছে। এখানে ঝাড়বাতিতে সাজানো ছোট একটা কফিশপ৷ ওনি ভেতরে ঢুকলেন ওনার পিছন পিছন কেয়াও ঢুকলো৷ ওনি দুই কাপ স্পেশাল চা অর্ডার করলেন।
চা এখনও আসে নি কেয়া বার বার এদিক সেদিন তাকাচ্ছে। কেনো জানি ওনার চোখের দিকে তাকাতেই পারছে না মেয়েটা। ওনি কেয়ার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। এটা বুঝতে পেরেই কেয়া আর মুখ তুলতে পারছে না।
মাহির ভাইয়া হঠাৎ ই বলে উঠলেন,
"আচ্ছা কেয়া, তুমি কি আমায় এর আগে কখনো দেখো নি?"
কেয়া হতভম্ব হয়ে তাকালো ওনার দিকে তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো,
আসলে আমি রাস্তাঘাটে চলার ক্ষেত্রে কোনো দিকে তাকাই না। তাই আপনাকেও কখনো দেখি নি।
মাহির ভাইয়া হয়তো কেয়ার কথাশ হতাশ হলেন,
তৎক্ষনাৎ মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, " এখন তো তাকাবে আমায় দেখলে?"
কেয়া কিছুই বললো না।
ততক্ষণে চা চলে আসছে। চায়ে চুমুক দিয়ে মনে হলো কেয়া মনে হয় চায়ের রাজ্যে ঢুকে গেছে। এত মজার চা কেয়া কখনও খায় নি।
চা খাওয়ার ফাঁকে মাহির ভাইয়া বলছেন,
আমরা ৪-৫ জন বন্ধু প্রায় ই এখানে আসি চা খেতে৷
তোমাকে নিয়ে এখানে চা খাওয়ার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের।
কেয়াঃ মানে?
মাহির ভাইয়াঃ না কিছু না। আর কিছুই বললেন না। চা খাওয়া শেষে বিল দিয়ে বের হয়ে গেলেন।
কেয়াও কিছু বলতে পারছে না। ওনি বাইক স্টার্ট দিলেন কেয়াও চুপচাপ বাইকের পিছনে বসে ভাবতে লাগলো, মাহির ভাইয়ার আচরণ মাঝে মাঝে আমায় খুব ভাবায়....
চলবে......
বাংলা গল্প 💠 সেদিনের বৃষ্টি 💠 পর্ব - ০৮
মাহির ভাইয়া কেয়াকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ বসে তারপর চলে গেলেন।। কেয়াও ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া শেষ করে শুয়ে শুয়ে মাহির ভাইয়ার কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরলো জানে না।
*****
আজ বুধবার। কেয়ারা সবাই মিলে মাহির ভাইয়াদের বাড়ি যাবে। মানে কেয়াদের গ্রামের বাড়িতে যাবে। কেয়া, ছোট ভাইয়া, তার আব্বু আর আম্মু। বড় ভাইয়ার পরীক্ষা চলছে তাই সে যেতে পারবে না। সে বিয়ের দিন সকালে আসবে বলেছে৷
কয়েকঘন্টার মধ্যে কেয়ারা গ্রামে পৌঁছে গেলো।
গ্রামে একটা ছোট বাজার আছে। এখানেই কেয়ারা গাড়ি থেকে নামলো।৷ এরপর মাটির রাস্তা হেঁটে যেতে হবে। কিছুদূর হাঁটার পরই বাড়ি। বিয়ের গেইট করা হয়েছে অনেক বড় করে। বাড়িতে এটায় প্রথম বিয়ে।কেয়ারা গেইটের সামনে যেতেই সাথী বরণ ঢালা নিয়ে দৌড়ে আসলো। কেয়াদের বরণ করলো। ঐখানে নিয়ম আছে বরণ করলে টাকা দিতে হয় তাই আব্বু একহাজার টাকা দিলো। সাথীও খুশি মনে চলে গেলো।
তখনই মাহির ভাইয়া একহাতে কতগুলো ফুল নিয়ে আসছে। কেয়ার আব্বু আম্মুকে গোলাপ দিলো। ছোট ভাইয়াকেও দিলো। ওরা বাড়িত ভেতরে ঢুকে পরলো।
কেয়া মাহির ভাইয়াকে বললো, " আমার গোলাপ কোথায়?"
মাহির ভাইয়া মুচকি হেসে পেছন থেকে আরেকটা হাত বের করলো অনেকগুলো কাঠগোলাপ একসাথে বাঁধানো। দেখে কেয়ার মন খুশিতে ভরে গেলো।
কিন্তু মাহির ভাইয়া কিভাবে জানলো কাঠগোলাপ কেয়ার এত প্রিয়৷ গোলাপ যেমন কেয়ার অনেক পছন্দের ফুল, তেমনি কাঠগোলাপ আরও বেশি পছন্দের।
কেয়ার ইচ্ছে করছিলো মাহির ভাইয়াকে জরিয়ে ধরতে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা পারলো না। কেয়াও হাসিমুখে ধন্যবাদ দিয়ে মাহির ভাইয়ার হাত থেকে ফুলগুলো নিলো।
মাহির ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি কি জানেন কাঠগোলাপ আমার অনেক প্রিয়?"
ভাইয়া একটু জোরে হেসে উঠলো, "মহারাণী, আমি তোমার সম্পর্কে কতটা জানি তা তুমি নিজেও জানো না। সময় হলে সব জানতে পারবে। তুমি মনে মনে যা চাইবে তাই তোমার সামনে হাজির হবে। আসো ভিতরে আসো"
কেয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পরিস্থিতি সামলে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো কেয়া। সবার সাথে কথা বার্তা শেষ করলো। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলো। নাস্তাটাও মাহির ভাইয়াই এনে দিলো নকশিপিঠা,পোয়া পিঠা,শামুক পিঠা, আরও কত প্রকারের ঝাল পিঠা। প্রায় সবগুলোই কেয়ার পছন্দের। কেয়া শুধু প্রতিনিয়ত অবাকই হচ্ছে। যার সাথে কেয়ার জন্মের পর থেকে এত বছরে দেখাসাক্ষাৎ নেই। সে কেয়ার সম্পর্কে এতকিছু কিভাবে জানে। খাওয়াদাওয়া শেষ করার পর সাথী কেয়াকে ওর রুমে নিয়ে যায়। কেয়া আর সাথী একসাথেই থাকবে। সে ক্লাসে কেয়ার থেকে একক্লাস বড় হলেও বয়সের তেমন পার্থক্য নেই। কারণ কেয়া প্লে, নার্সারি এসব পড়তে পড়তে এখন মাত্র ক্লাস ১০ এ। আর সাথী গ্রামের স্কুলে পড়ে কেয়ার আগে SSC দিয়ে ফেলছে৷ তাই কেয়া ওকে নাম ধরেই ডাকে।
সন্ধ্যায় সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ সাথী কেয়াকে ডাকলো, "আমি বাহিরে গেলাম।"
সাথী বললো," চলো ঘুরতে যাই।"
কেশা বললো, " কোথায় যাব।"
সে বললো, "আরে চলো...."
কেয়া আর সাথী হাঁটতে লাগলো। সন্ধ্যার পর হয়ে গেছে কিন্তু এখনো আলো আছে আকাশে। হাটঁতে হাঁটতে একটা ছোট নদীর পাড়ে আসলো তারা। এসে দেখে এখানে আরও ২ জন আছে। কেয়ারা আসতেই তারা উঠে কথা বললো, একজন মাহির ভাইয়া আরেকজন তার কাজিন নাম সৈকত। তারা সবাই বসে আড্ডা দিতে ব্যস্ত।
সৈকত ভাইয়া বলে উঠলো, " বাড়িতে বড়দের সাথে গল্প করে আর কেমন লাগবে তাই তোমাদের এখানে আসতে বললাম"
একটু পর এখানে অনেক জেলে আসবে মাছ ধরতে। দেখবে অনেক ভালো লাগবে। এটা সেটা অনেক গল্প করতে লাগলো।।
রাত ৮ টার উপরে বাজে। গ্রামের বাড়িতে ৮ টা মানেই অনেক রাত। বাড়ি থেকে মাহির ভাইয়াকে কল দিচ্ছে। কেয়া সাথীকে পাওয়া যাচ্ছে না।
মাহির ভাইয়া বলছে, "আমরা কাছেই আছি।"
তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে বলছে।
বাড়ির দিকে রওনা দিলো সবাই।। কেয়া আর সাথী সামনে। পিছনে মাহির ভাইয়া আর সৈকত ভাইয়া।
হঠাৎ সৈকত ভাইয়া সাথীকে ডেকে বললো শুন সাথী কালকে কিভাবে কি করবি।
কথাটা বলতে বলতে দ্রুত হেঁটে সাথীর কাছে গেলো।
এই সুযোগে মাহির ভাইয়া কেয়ার হাতটা ধরলেন
কেয়ার হাঁটার গতি কমে গেলো, সাথী আর সৈকত ভাইয়া কথা বলতে বলতে চলে যাচ্ছে।।
আর কেয়া তাকিয়ে আছে মাহির ভাইয়ার দিকে। মাহির ভাইয়া একটু রেগে বললেন,
" ওরা সামনে যাক , আমরা একটু পরে যায়।
তোমার সাথে কথা বলার জন্য সাথীকে বলে তোমাদের এখানে আনলাম আর তুমি সাথীর সাথেই কথা বলছো ওর সাথেই চলে যাচ্ছো। কেনো তোমার কি আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। নাকি তুমি আমায় চিনো না। তোমার জন্য এতকিছু করি আর তোমার তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ ই নেই। কি সমস্যা তোমার বলো......."
চলবে.......
বাংলা গল্প 💠 সেদিনের বৃষ্টি 💠 পর্ব - ০৯
মাহির ভাইয়ার এসব কথায় কেয়া পুরাই Shocked কিন্তু নিজেকে সামলে শুধু বললো,
"আমি বাড়ি যাবো। "
একপ্রকার রাগেই কেয়ার হাত টা ছেড়ে দিলেন মাহির ভাই। কেয়াও চুপচাপ নির্জন পথে হাঁটছে। সাথীদের ও আর দেখা যাচ্ছে না।
মাহির ভাইয়া আবার ডাকলেন...
কেয়া শুনো...
কেয়া দাঁড়ালো।
"আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকলে সত্যি দুঃখিত। তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না। প্লিজ।"
কেয়ার মনে কোনো কষ্ট নেই।
কারণ কেয়ারও মাহির ভাইয়াকে ভালো লাগে। ওনি কেয়ার কাছাকাছি থাকলে কেয়া নিজের কথা হারিয়ে ফেলে। কেয়ার খুব অস্বস্তি হয়, বুক ধুকপুক করে। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে৷
কিন্তু কেয়া তো এর কিছুই মাহির ভাইয়াকে বলতে পারবে না। কারণ ওনি কেয়ার ভাই তাই নিজে থেকেই দূরে দূরে থাকতে চাই, কথা কম বলে। কিন্তু কেয়া পারছে কোথায়।
কেয়ার সব পছন্দ অপছন্দ সব এই মানুষ টা জানে। এসব মনে মনে ভাবছে কেয়া,
মাহির ভাইয়াঃ কি হলো কেয়া? কি ভাবছো সরি বললাম তো৷ চলো বাড়ি যাই।
কেয়াও চুপচাপ ওনার সাথে বাড়ি চলে আসলো। রাতে খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পরলো।
সকাল থেকে মনে হচ্ছে বাড়ির হৈচৈ ৩ গুণ বেড়ে গেছে। বাড়িতে আত্মীয়রা এসে ভরে যাচ্ছে। আজ ভাইয়ার গায়ে হলুদ। বড় করে অনুষ্ঠান করবে না। ছেলেকে হলুদ লাগিয়ে গোসল করাবে এই আর কি।
কেয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো৷ আজও নাস্তায় কেয়ার প্রিয় খাবার খিচুড়ি, মাংস, আচার। দেখেই মনটা খুশিতে ভরে গেলো কেয়ার। খাওয়া শেষ করে সবার সাথে একটু গল্পগুজব করলো।
হঠাৎ কেয়ার মনে হলো সকাল থেকে মাহির ভাইয়াকে দেখছে না। মনটা খুব করে তাকে দেখতে চাচ্ছে।
বাহিরে বের হলো কেয়া। কিন্তু মাহির ভাইয়ার পাত্তা নেই। ওদের বাড়ির পাশেই বড় পুকুর আছে।। উঠানের চারপাশে ঘর থাকায় পুকুর দেখা যায় না। কিন্তু পুকুরের এখান থেকে মানুষের কথা আসছে৷ তাই কেয়াও কৌতুহল নিয়ে গেলো।
৪-৫ জন পুকুরে নেমেছে মাছ তুলার জন্য মাহির ভাইয়াও তাদের মধ্যে একজন৷ সেন্টু গেঞ্জি পরে মাথায় গামছা বেঁধে মাছ ধরছে। কেয়ার কেনো জানি আজ মাহির ভাইয়ার প্রতি অন্যরকম টান অনুভব করছে। ভালো লাগাটা একটু বেশিই কাজ করছে। কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে পুকুরের পাড়ে। গ্রামের বাড়ির এটায় সৌন্দর্য পুকুর ভরা মাছ, খেতে সবজি, বাড়ি ভরা মেহমান, আড্ডা এসবের আমেজে ভরপুর পরিবেশ। শহরে এর কিছুই হয় না। বিয়ে মানেই সেজেগুজে কোনো কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে বর বউ কে দেখে ২-১ টা ছবি তুলে খেয়ে বাসায় চলে আসা।
মাহির ভাইয়া মনে হয় কেয়ালে দেখে কিছুটা লজ্জা পাচ্ছেন। তারপর ও তার মুখে লজ্জামাখা হাসি লেগেই আছে। এই হাসিটায় কেয়াকে বারবার ঘায়েল করে। প্রতিনিয়ত নিজেকে কন্ট্রোল করতে হচ্ছে কেয়াকে। জাল টেনে পুকুরের পাড়ে এসে মাছ তুলছে। একটা অনেক বড় কাতলা মাছ উঠেছে।
মাহির ভাইয়াঃ এই কেয়া এদিকে আসো। এখানে আসছোই যখন এই মাছ তুমি নিয়ে যাও।
কেয়াঃ এত বড় মাছ আমি কিভাবে নিবো?
মাহির ভাইয়াঃ ধরো বললাম।
কেয়াঃ মনে মনে ভাবছে," মাছ তো ধরতেই পারবো কিন্তু মাছের নাড়াচাড়ায় আমি সহ না পানিতে পরে যায়"
মাহির ভাইয়া হয়তো কেয়ার অবস্থা বুঝতে পেরেছেন।
তাই বললেন," তুমি কাছে আসো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে মাছ ধরলে মাছ আর তুমি দুজনেই ঠিক মতো বাড়িতে যেতে পারবে।"
কেয়া রীতিমতো অবাক। ওনি কিভাবে জানলো কেয়া এসব ভাবছে। কেয়া ভয়ে ভয়ে ওনার কাছে গেলো।
ওনি কেয়াকে মাছ টা ধরিয়ে দিলেন ঠিক মতো।
সাবধান ও করে দিলেন যেনো না ছাড়ে । ওনিও কেয়ার পিছন পিছন বাকি মাছ গুলো নিয়ে আসলেন। কেয়ার হাতে মাছ দেখে বাড়ির মানুষ হাসাহাসি শুরু করলেন।
এই কাজ যে মাহির ভাইয়ার এটা বুঝতে আর বাকি নেই কারোর।কেয়া মাছ টা অন্য মাছ গুলোর সাথে রেখে দিলো।। ভাগ্য ভালো কেয়া আর মাছ ঠিকঠাক ভাবে বাড়ি আসতে পেরেছে।
মাহির ভাইয়ার আম্মু মানে আমার কাকিয়া ধমক দিয়ে বললেন,
কেয়া শহরের মেয়ে। মাছ ধরে অভ্যস্ত না যদি মাছের কাটায় হাত কাটে তখন তো সবাই রিয়েক্ট করবে। বাপ মায়ের একমাত্র মেয়ে।
মাহির ভাইয়ার এসব কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কিছু একটা বলতে গিয়েও মুচকি হেসে চলে গেলো। এই মানুষ টা অনেক রহস্যময় কখন কি করে বুঝা মুসকিল।
কেয়া গোসল শেষ করে বসে আছে। ভাইয়া এখন বাসায় নেই৷ হয়তো বিকালে গোসল করাবে ভাইয়াকে। মাছটাকে একপ্রকার কোলে করে নিয়ে আসছিলো কেয়া৷ তাই সারা শরীরে মাছের গন্ধ করছে। এজন্য গোসল করে নিয়েছে
বেলা বাজে ২ টা খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবাই সুন্দর সুন্দর শাড়ি পরছে। কিন্তু কেয়া তো কোনো শাড়ি নিয়ে আসে নি। এই জীবনে শাড়ি কখনো পরেও নি।
সবার শাড়ি পড়া দেখে নিজেরও খুব শাড়ি পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিছু করার নেই৷ সাথীর রুমে গিয়ে কেয়ার ব্যাগ বের করে জামা খুঁজতেছিল, আর ভাবছিল কোনটা পরা যায়।
সাথীর রুমে একটা জানালা আছে," ঐ জানালা দিয়ে মাহির ভাইয়ার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মাহির ভাইয়াই হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।"
মাহির ভাইয়াঃ কেয়া এটায় একটা শাড়ি আছে। আর যা যা দরকার সাথীকে বলো ও তোমায় দিবে। আর সাথী শাড়ি পড়াতে পারে ওকে বলো শাড়িটা তোমায় পরিয়ে দিতে। যদি শাড়ি না পরে জামা পরে বের হয়েছো তাহলে তোমার খবর আছে। আসছি আমি।
শাড়ি কেয়ার হাতে দিয়ে চলে গেলেন
কেয়া রীতিমতো টাশকি খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিসব বলে গেলেন ওনি!
তবে কেয়ার মনটা খুব ভালো হয়ে গেছে। এই মাত্র ভাবছিলো, "আমার শাড়ি থাকলে আমিও পড়তাম।"
এত তাড়াতাড়ি ইচ্ছে পূরণ হয়ে যাবে ভাবে নি।
এসব ভাবতে ভাবতে সাথী রুমে আসলো,
কেয়াকে বলছে, কেয়া চলো শাড়ি পরি।
আমার কাছে শাড়ি আছে তোমায় দিচ্ছি।
কেয়ার হাতে ব্যাগ দেখে জিজ্ঞেস করছে, "এটা কি?"
কেয়া নিজেই তো খুলে দেখে নি।
সাথী ব্যাগ টা নিয়ে খুলে দেখছে। একটা কমলা রঙের গোলাপি পাড়ের শাড়ি। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে কমলার সঙ্গে গোলাপি রঙ খুব মানিয়েছে।
সাথীঃ তুমি শাড়ি নিয়ে আসছো। চলো পরিয়ে দেয়।
দুজনেই শাড়ি পরে সেজেগুজে বের হলো। সবাই তাদের প্রশংসা করছেন। কেয়ার আম্মু, কাকিয়া ওদের সামনে যেতে লজ্জা লাগছিলো। জীবনে প্রথম শাড়ি পরেছে কেয়া, কেমন জানি আনইজি লাগছিলো৷
কেয়ার আম্মু দেখে বললেন," মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। জীবনে প্রথমবার আমার মেয়েটা শাড়ি পরলো।"
বাহিরে গাছের নিচে কেয়ার আব্বু চাচ্চু আরও কয়েকজন বসে গল্প করছেন। আব্বু চাচ্চুরাও কেয়াকে দেখে মাশাআল্লাহ বলে দাঁড়িয়ে পরলেন।
কেয়ার মন শুধু মাহির ভাইয়াকে খুঁজছেন। কেয়া আর সাথী গেইটের কাছে গিয়ে ছবি তুলছে। মাহির ভাইয়ার ফোনেই ছবি তুলছে। সাথীর ফোন নেই। সাথীকে ফোন কিনে দিবে বলেছে৷ তখন তো আর এই মুহূর্ত থাকবে না তাই সাথী মাহির ভাইয়ার ফোন এনে কেয়া আর সাথীর ছবি তুলছে।
হঠাৎ মাহির ভাইয়া একটা কমলা রঙের পাঞ্জাবি আর একটা সাদা প্যান্ট পরে বের হলেন। চোখে আবার সানগ্লাসও পরলেন। পুরাই নায়ক লাগছিলো। কেয়াদের কাছে আসছেন।
মাহির ভাইয়াঃ কিরে ছবি তুলা হলো তোদের । আমায় কয়েকটা ছবি তুলে দে তো।
সাথী মাহির ভাইয়ার কয়েকটা ছবি তুলে দিলো৷ পরে মাহির ভাইয়া ফোনটা কেয়ার হাতে দিয়ে বললেন, "আমাদের দুই ভাই বোনের ছবি তুলে দাও তো।
কেয়াও যথারীতি তুলে দিলো৷
তারপর ছবিগুলো দেখে মাহির ভাইয়া সাথীকে ফোনটা দিলো,
কেয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বললো, আমা আর কেয়ার ছবি তুলে দে।
কথাটা শুনা মাত্রই হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে কেয়ার। মাহির ভাইয়া কেয়ার সাথে ছবি তুলবেন। কিছু ভাবতে পারছে না কেয়া।
সাথী ডেকে বললো, "এই কেয়া ঠিকমতো দাঁড়াও।"
কেয়াও ভদ্র মেয়ের মতো ওনার পাশে দাঁড়ালো । ওনার পাশে দাঁড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু কেয়ার হৃৎস্পন্দন বেড়ে শরীর ঘামতে শুরু করেছে।এর মধ্যে ছবি তুলা শেষ। ৩ জনে কয়েকটা সেলফি তুললেন।
তারপর কেয়া আর সাথী বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। কেয়া সোজা সাথীর রুমে গিয়ে ফ্যান ছেড়ে বসে পড়লো। এখনো শরীর ঘামতেছে কেয়ার ।
কেয়া অনুভব করতে পারছে সে মাহির ভাইয়ার প্রতি অসম্ভব দূর্বল হয়ে গেছে। ওনি কেয়ার কাছাকাছি আসলে কেয়ার মনের ভিতরে কি যেনো ছুটোছুটি করতে থাকে।
বোনের সাথে ভাই ছবি তুলতেই পারে এটা কোনোভাবেই মনকে বুঝাতে পারছে না কেয়া।
চলবে.........
বাংলা গল্প 💠 সেদিনের বৃষ্টি 💠 পর্ব - ১০
প্রায় ৩ টা বেজে গেছে। কেয়া এখনো সাথীর রুমেই বসে আছে। সাথী আশেপাশে কোথাও নেই৷ না থাকার ই কথা। বাড়িতে এত মেহমান নিজের ভাইয়ের বিয়ে ব্যস্ত থাকাটায় স্বাভাবিক।
কেয়া নিজের মনকে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছে না।
হঠাৎ বাহিরে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। সাথী এসে ডেকে গেছে সাকিব ভাইয়ার গায়ে হলুদ শুরু হবে এখন ই। কেয়াও আস্তে আস্তে গেলো উঠানে।
এত মানুষের ভিড়ে মাহির ভাইয়াকেও দেখতে পায় নি। একে একে সবাই গালে বা হাতে হলুদ লাগাচ্ছে ভাইয়ার। সবার কথায় কেয়াও হলুদ লাগালো। যদিও সাকিব ভাইয়ার সাথে কেয়ার তেমন কথায় হয় নি। আসার পর শুধু সালাম দিয়ে হাই হ্যালো কথা হয়েছিলো৷ আর হঠাৎ সামনে পরলে খেয়েছে কি না জিজ্ঞেস করে। ওনার বিয়েতে কেউ যেনো, না খেয়ে না থাকে এটা ভেবেই জিজ্ঞেস করেন
যাই হোক কেয়া হলুদ লাগিয়ে ভিড় থেকে পিছনে সরে আসছে। কেয়ার আম্মু,কাকিয়া, মাহির ভাইয়ার খালামনিরা, মামীরা ওনারা এখন হলুদ লাগাচ্ছে তাই কেয়া সরে এসেছে।
হঠাৎ কেয়ার গালে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলো।
কিছু বুঝে উঠার আগেই হাতগুলো সরে গেলো।
তাকিয়ে আশেপাশে কাউরে পেলো না, একটু দূরে মাহির ভাইয়া দু হাতে হলুদ নিয়ে দেয়ালে ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
ভাব দেখে মনে হচ্ছে, মাহির ভাইয়াই কেয়ার গালে হলুদ লাগিয়েছে। কেয়া গালে হাত দিয়ে দেখে, সত্যি সত্যি গালে হলুদ । তারমানে মাহির ভাইয়াই এই কাজ করেছেন৷
কেয়া আবার সাকিব ভাইয়াকে হলুদ লাগানো দেখাতে মনোযোগ দিলো। এবার মাহির ভাইয়া কেয়ার পাশে এসে দাঁড়ালেন, কেয়ার সেদিকে নজর নেই।
হঠাৎ কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলো, "রেডি থেকো মহারানী, তোমায় একটু পর চুবাবো।"
কেয়া তাকাতেই ওনি কেয়ার নাকে একটু হলুদ লাগিয়ে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে ওনি সাকিব ভাইয়াকে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছেন৷
দুই ভাই অনেক মজা করছেন। আস্তে আস্তে পানি ছিটাছিটি শুরু হয়ে গেছে। ভাই বোন, শালি দুলাভাই, মজা করে নাকি পানি ছিটাছিটি করে যদিও কেয়া এসব আগে দেখে না।
সবার ছুটোছুটি তে কেয়াও রুমে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে এর মধ্যে মাহির ভাইয়া কেয়ার মাথায় ১ মগ পানি ঢেলে দিলেন। কেয়া স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। রাগবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
ওনি আবার কানের কাছে বলে গেলের, "সরি মহারাণী রাগ করো না৷ তোমায় ভিজাতে খুব ইচ্ছে করছিলো, সরি। "
কেয়া মনে মনে ভাবছে, "এই মানুষটাকে বুঝার সাধ্য কারো নেই৷ এই মজা করছে এই সরি বলছে এই সারপ্রাইজ দিচ্ছে। রাগ ও করতে পারি না। সবাই বলে প্রিয় মানুষের সাথে নাকি রাগ করে থাকা যায় না। আমিও ওনার প্রতি রাগ করে থাকতে পারি না।"
কেয়া ওয়াশরুমে চলে গেলো৷ বাসা থেকে নিয়ে আসা একটা হলুদ রঙের ড্রেস পড়লো। চুলগুলো ছেড়ে হালকা সাজ দিয়ে বের হয়েছে৷ এতক্ষণে সব পরিবেশ নিরব৷ সাকিব ভাইয়ার ও গোসল শেষ। সবাই সবার মতো আড্ডায় ব্যস্ত৷ মাহির ভাইয়াও কাজে ব্যস্ত। হলুদ সন্ধ্যার জন্য স্টেজ করছেন। ওনার আরও কয়েকজন কাজিন ও আছেন। সাথী বাহিরে বসে বসে ছোট বাচ্চাদের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।
কেয়াকে দেখে সাথী বসতে বললো, মেহেদী দেওয়ার প্রস্তাব ও দিলো।
কিন্তু কেয়ার ইচ্ছে করছে না মেহেদী দিতে।
তাই না করে দিলো
আমি না বসে ভাবলো পুকুরের দিকে যাবে৷ তাই মাহির ভাইয়াদের পাশ কাটিয়ে কেয়া পুকুরের পাড়ে হাঁটছে৷
হঠাৎ মাহির ভাইয়া পিছন থেকে বলে উঠলেন,
"এই মেয়ে এখানে ঘুরাঘুরি না করে ২ হাত ভরে মেহেদী দাও। যেনো বউ এর থেকেও তোমার হাত ভরা থাকে মেহেদীতে। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে এখানে ঘুরাঘুরি করো না যাও বাড়িতে৷"
এসব বলে ওনি একটা বাঁশ নিয়ে আবার স্টেজে কাজ করতে চলে গেলেন।
কেয়াও আর কিছু না ভেবে বাড়ি চলে আসলো৷ সাথীর পাশে একটা চেয়ার নিয়ে বসেছে। সাথীকে বলতেও পারছে না মেহেদী দেওয়ার কথা কারণ একটু আগেই না করে গেলো।
মাহির ভাইয়া আবার ও এখানে আসছে। এসে বললেন, " এই সাথী এখনও তোর হাতে মেহেদী দেস নি কেনো। পিচ্চি দের তো পরেও দিতে পারবি৷ তুই মেহেদী দে। কেয়াকেও মেহেদী দিয়ে দে৷ "
সাথী বললো, "কেয়া নাকি দিবে না মেহেদী।"
মাহির ভাইয়া আবার বললেন, "ও না করলেই কি তুই দিয়ে দিবি না। জীবনে প্রথম আমাদের বাড়িতে আসছে তারউপর বিয়ে উপলক্ষে, হাত ভরে মেহেদী দিয়ে দে।"
সাথী, "আচ্ছা বললো।"
কেয়া মাহির ভাইয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
এই মানুষটা কেয়াকে এত বুঝে।
কেয়া বলতে পারছিলো না বলে, নিজেই বলে দিয়ে গেলেন। কি করা উচিত কি উচিত না সব বুঝেন।
মাহির ভাইয়া চলে গেলেন ওনার মতো৷
সাথী বাধ্য মেয়ের মতো ভাইয়ের কথায় কেয়ার হাত ভরে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে আর এটা সেটা গল্প করছে।
সাথীঃ জানো কেয়া মাহির ভাইয়ার অনেক রাগ। ও যা বলে তাই করে৷ আমাদের ও তাই করতে হয়৷ আব্বু আম্মুও ওর রাগের জন্য চিন্তায় থাকে কখন না কি অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।
ছোট বেলায় ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ঝগড়া লেগে এক ছেলের হাত ভেঙে ফেলছিলো। এরপর আর কখনো ভাইয়া খেলতে যায় না৷ এমনকি সাকিব ভাইয়ার জন্য বউ ও সে পছন্দ করছে৷ আগে একটা মেয়ে দেখছিলো ঐটা মাহির ভাইয়ার পছন্দ হয় নি। মেয়ে নাকি মুডি তাই ঐ বিয়ে হতে দেয় নি। তারপর আবার বউ দেখে ওনাকে পছন্দ করছেন। তাই বিয়ে হচ্ছে। বিয়ের আগে আমায় ৪ সেট ব্লাউজ আর পেটিকোট বানিয়ে দিয়েছেন। আমি বলেছি গায়ে হলুদের জন্য ১ সেট হলেই হবে। সে ধমক দিয়প বলেছে বেশি বানালে তোর কোনো সমস্যা? বিয়ে বাড়িতে যদি মেয়েরা আসে কিছু লাগলে তো তোকেই বলবে নাকি৷ তখন তুই কি বলবি আমার কিছু নাই। তাই আমি আর কিছুই বলি নি। ওখান থেকেই এক সেট তোমায় দিলাম আজ৷ এইযে বলে গেলো তোমায় হাত ভরে মেহেদী দিয়ে দিতে যদি না দেয় তাহলে এটা নিয়াও বকবে আমায়।
কেয়া মনে মনে ভাবছে, " একটা মানুষের সম্পূর্ণ ২ টা রূপ। এই মাহির ভাইয়া আমার সাথে এখন পর্যন্ত ধমক দিয়ে কথা বলে নি৷ সেদিন রাতে যাও একটু ধমক দিয়েছিলো তার থেকে বেশি সরি বলেছিলো৷ যাই করে সাথে সাথে সরি বলে নেয়৷
তারমানে ওনি ইচ্ছে করেই সাথীকে ব্লাউজ আর পেটিকোট বানিয়ে দিয়েছিলো৷ ওনার সবকিছু প্ল্যান করা থাকে মনে হয়।
এসব ভাবতে ভাবতে কেয়ার দুহাত ভরা মেহেদী দেয়া শেষ হয়ে গেছে। সাথী অনেক সুন্দর করে মেহেদী দিতে পারে আর খুব দ্রুত দিয়ে দেয়।
সাথী মাহির ভাইয়াকে ডেকে বললো, " ভাইয়া দেখ তো মেহেদী দেয়া হয়েছে কি না। "
মাহির ভাইয়া একপলক দেখে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ২-৩ টা ছবি তুললেন কেয়ার হাতের৷
তারপর সাথীকে উদ্দেশ্য করে বললেন," এই ছবি ফেসবুকে দিয়ে বলবো আমার বোন অনেক ভালো মেহেদী ডিজাইনার। আপনারা চাইলে তার কাছে মেহেদী দিতে পারেন তবে টাকা এডভান্স আমায় দিতে হবে৷ "
এই বলে হাসতে শুরু করলেন।
সাথী একটু রাগ করেই বললো, "যত টাকা পারিস নিতে থাক তোর বিয়ের সময় সব টাকা আমি উসুল করে ছাড়বো দেখিস।"
কেয়া চুপচাপ ওদের দুই ভাই বোনের খুনসুটি দেখছে।
***
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে। সাকিব ভাইয়া সেজেগুজে স্টেজে বসে আছেন। সবাই সবার মতো ছবি তুলছেন। সবাই কে নিয়ে মাহির ভাইয়া কয়েকটা ছবি তুললেন। গান বাজনা হচ্ছে। সব শেষে নাচের প্রোগ্রাম শুরু হলো.. মাহির ভাইয়ার একটা কাজিন নাম তানভির। সে খুব সুন্দর একটা ডান্স করলো। এরপর মাহির ভাইয়াও একটা ডান্স করলেন। মাহির ভাইয়ার ডান্স দেখে কেয়া পুরাই ক্রাশড। বাকিরাও কয়েকজন ডান্স করলো৷
কেয়ারও খুব ইচ্ছে করছিলে নাচতে কিন্তু সাহস পাচ্ছিলো না। মাহির ভাইয়া যদি রাগ করে। সবার নাচগানের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ রাত ১১ টার উপরে বাজে। স্টেজে তেমন কেউ নেই।
কেয়া, সাথী,মাহির ভাইয়া,সাকিব ভাইয়া আর ২-১ জন কাজিন । সাথী মেহেদী দিচ্ছে হাতে। সাথী হঠাৎ বলে উঠলো এই ভাইয়া গান গা..
মাহির ভাইয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো," এখন কি আর এত ভালো গান পারি নাকি৷"
তারপরও সাথীর জোরাজোরিতে রাজি হলো।
নিজের রুম থেকে গিটার নিয়ে পাশে একটায় সোফায় বসেছে.....
চলবে....
আমার বাংলা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url