একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - বাংলা ভালোবাসার গল্প

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - বাংলা ভালোবাসার গল্প

🏵️একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - বাংলা ভালোবাসার গল্প 🏵️

🏵️সকল পর্বএকসাথে দেওয়া হলো🏵️

🏵️লেখিকা নীলাশা চৌধুরী 🏵️

🏵️ফেছবুক থেকে সংগ্রহীত 🏵️

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ১ ম পর্ব 

৭ বছর পর দেশে ফিরলো রোহান। কিন্তু বাড়ির কাউকে জানায়নি। সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে তাই আর কাউকে কিছু বলেনি। চোখ ভর্তি স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়ে পারি দিয়েছিলো সুদূর দেশে। এখন সে একজন সাফল্য ব্যক্তি। বিদেশে ভালো জব ও আছে। বড় ভাই এর বিয়ের উপলক্ষে দেশে আসছে। রোহানের বাবা একজন বিজনেস ম্যান তবে আগে ওর দাদারা জমিদার ছিলো। গ্রামে বাড়িতে সেই জমিদার ভবন টি আজো রয়েছে। হাজার ও স্মৃতি আছে সবগুলো আফছা আফছা। রোহানের বড় ভাই রওনক তার বাবার সাথে বিজনেস দেখাশুনা করে। আর রোহানের ছোট বোন ও আছে নাম স্মৃতি। কতদিন পর সে তার মা বাবা ভাই বোন কে দেখতে পারবে সেই খুশি যেনো ধরছে না। রোহানের গাড়ি টি তাদের গেইট  পেরিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। গাড়ির জানালা দিয়ে বাড়ি টির দিকে তাকালো বাড়ি টি অনেক সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমে লাগেজ হাতে নিয়ে বাড়ির মেইন ডোর এর সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর কলিং বেল এ চাপ দিলো। 
কলিং বেল এর শব্দ পেয়ে বসা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এক কন্যা। মুখে তার মিষ্টি হাসি। দরজার কাছে এসে দরজার নব টা ঘুরিয়ে দরজা টা খুলে দিতে রোহন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমণীর দিকে। কি সুন্দর তার গা এর রং দুধে আলতা। লম্বা কেশ। গালে একটা ছোট তিল। কি সুন্দর মুখের হাসি। হাসলে গালে টোল পড়ে। সামনে একটা গজ দাঁত। মেয়েটির পরনে সাদা নীল কম্বিনেশনে একটা জামা। রিনিরিনি কন্ঠে মেয়েটি সুধালো কে আপনি? 
মেয়েটির কন্ঠ এতো মধূর যে রোহানের কানে তা বার বার বাজতে থাকে। 
রোহান একটা বড়সড় ঢোঁক গিলে কিঞ্চিৎ পরিমান জিহ্বা বের করে শুকিয়ে আসা ঠোঁট গুলো ভিজিয়ে বললো,, আমি রোহান আহাম্মেদ। এই বাড়ির ছোট ছেলে। 
মেয়েটি নিজের মাথায় নিজেই একটা গাট্টা মেরে বললো,, ওহ্ ভাইয়া আসুন। 
রোহান ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো তুমি কে তোমাকে তো চিনলাম না?? 
আমি আমি কুহু। 
কুহু নাম টা শুনতেই রোহানের বুকের ভিতর টা ধক্ করে উঠলো। স্মৃতির পেক্ষাপটে ভেসে উঠলো কিছু স্মৃতি। রোহান বিস্ময় নিয়ে বললো তুই সুলতানা খালার মেয়ে। 
কুহু উপর নিচ মাথা নাড়ালো। রোহান হেসে কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আজ বাড়ির সবাই কই? 
বাড়ির সবাই শপিং মলে গেছে। 
তুই যাসনি?? 
না আমি যাইনি। আমার এতো হৈচৈ ভালো লাগে না আর শপিং মলে যা ভিড় আমার বিরক্ত লাগে। আপনি আসবেন কাউকে জানাননি?? 
না সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলাম কিন্তু এখন নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম। 
কিছু খাবেন?? 
না কিছু খাবো না। আমি রুমে যাচ্ছি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দিবো। 
কুহু মাথা নেড়ে আচ্ছা বুঝালো। 
রোহান লাগেজ টা নিয়ে উপরে তার রুমে গেলো। রুমে ঢুকে সে তো পুরো অবাক। কি সুন্দর ক্লিন করা দেখে মনে হচ্ছে প্রতিদিন ক্লিন করা হয়। রোহান লাগেজ থেকে এক সেট জামা বের করে সেই জামা আর কাঁধে টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশরুমে যায় বেশ কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হয় রোহান। বের হয়ে ভেজা জামা কাপড় বেলকনিতে মেলে দেয়। 
তারপর কিছু একটা ভেবে ডাক দেয় কুহুকে। 
কুহু রোহানের ডাক শুনে ওর রুমে এসে জিজ্ঞেস করে,, কিছু বলবেন ভাইয়া? 
হুম,, 
আমার জামা কাপড় গুলো একটু গুঁছিয়ে দেও তো। কুহু বাধ্য মেয়ের মতো রোহানের জামাকাপড় গুলো সুন্দর করে বের করে একটা পর একটা আলমারিতে গুঁছিয়ে রাখছে। 
গালে হাত দিয়ে কুহুকে দেখে চলেছে রোহান। কুহুর কাজ শেষ হলে বললো,,, ভাইয়া আর কিছু লাগবে? 
না আর কিছু লাগবে না। তুই কিসে পড়িস? 
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।
কোন বিভাগ?? 
মানবিক। 
ওহ্ যা। 
কুহু আর কাজ নেই তাই কুহু তার নিজের রুমে এসে বিছানা টা গুঁছিয়ে। বেলকনিতে চলে যায় তার এই ঠান্ডা টা বেশ ভালো লাগে সন্ধ্যার ঠান্ডা টা মন টা ছুঁয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে অতীতে হারিয়ে যায়,, কুহু। 
কুহুর পুরো নাম তাবাসসুম কুহু। আর একটা এক্সিডেন্ট এ তার বাবা মা-রা যায়। তারপর তার চাচারা তাদের কে জোড় করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মা আর মেয়ের আশ্রয় হয় নানার বাড়ি। বেশ কিছুদিন ভালো ই ছিলো কিন্তু হঠাৎ করে ওদের জীবনের সুর টা পাল্টে যায়। ওর মার অন্য জায়গায় বিয়ে দেয়ে। ছোট কুহু টা পরে থাকে মামার বাড়ি। মামা বাড়ি থেকে বড় হওয়া সব। মামীর লাঠি-সোঁটা খেয়ে ম্যাট্রিক পর্যন্ত লেখাপড়া করে। তারপর ওর বড় খালা সালমা আহাম্মেদ ওকে নিয়ে আসেন ওনার কাছে। এইখানে যে তাকে সবাই খুব পছন্দ করে তাও না তবে গাল মন্দ করে না । এইসব ভাবতে ই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। ওর ভাবনার মাঝে একটা গাড়ি ওদের বাড়ির ভিতরে ঢুকে কুহু বুঝতে পারে বাড়ির সকলে এসেছে। 
কুহু ওদের দেখে নিচে নেমে মেইন দরজা টা খুলে দিতে ওরা ভিতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়লো। ওদের সবাইকে বসতে দেখে কুহু পানি গ্লাস গুলো তে পানি ভরে সবাই কে দিলো। সবাই পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি খেয়ে গ্লাস গুলো রেখে দিতে কুহু এই গ্লাস গুলো রেখে দিলো টেবিলের উপর। কুহু খালু নয়ন আহাম্মেদ বললো,, কুহু এক কাপ চা বানাতো। 
কুহু বললো,, ঠিক আছে। তারপর বললো,, ছোট ভাইয়া এসেছে। 
সালমা আহাম্মেদ বললো,,, কে এসেছে আমার রোহান এসেছে? 
হুম রোহান ভাইয়া এসেছে। 
কোথায় ও? 
ওনি ঘুমাচ্ছেন।  
আমি আমার ছেলের জন্য রান্না করবো বলেই তিনি ওনার রুমে গেলো ফ্রেশ হতে। একটু পর ফ্রেশ হয়ে আসতেই তিনি কুহুকে নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। 
ওনি রোহানের পছন্দের সব রান্না বসাছেন। আর হাতে হাতে সব এগিয়ে দিচ্ছে কুহু।

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ২ ম পর্ব

রাত ১০ টা রোহান গা এ জ্যাকেট জড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে সিঁড়ি বেয়ে নেমে লিভিং রুমে এসে বসলো। সবাই তখন আড্ডা দিচ্ছিলো এমন সময় রোহান কে দেখে তো সবাই খুব খুশি হয়। আর স্মৃতি স্মৃতি তো দৌড়ে গিয়ে রোহান কে জড়িয়ে ধরে বললো,,, ভাইয়া তুমি এসেছো? 
হুম এসেছি। 
কেমন আছো তুমি?? 
আলহামদুলিল্লাহ তুই কেমন আছিস?? 
আলহামদুলিল্লাহ। 
রওনকের পাশে বসতে বসতে বললো,,, তা ভাইয়া অবশেষে তোমার ব্যাচেলার লাইফের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। 
রোহানের বাবা শরীফ আহাম্মেদ বললো,,, তা কত দিন ছুটি পেলে?? 
রোহান ভ্রুঁ কুঁচকে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো কেনো মিস্টার আহাম্মেদ আমি এসে কি আপনার ক্ষতি করলাম না কি আমার আসা টা আপনার পছন্দ না? 
রোহান ভুলে যেওনা আমি তোমার বাবা বিদেশ থেকে এই শিক্ষা নিয়ে এসেছো। বাবার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় জানোনা?? 
আপনি কি আদোও বাবা হওয়ার যোগ্য মিস্টার আহাম্মেদ? আপনার করা একটি ভুল আমার জীবন টা বরবাদ করে দিয়েছে। সেই কৈফিয়ত কি আমি চেয়েছি না চাইনি। তবে এইবার আমার টা আমি বুঝে নিবো কাউকে আর নাক গলাতে দিবো না। 
রওনক বুঝতে পারলো এই বাপ ব্যাডার যুদ্ধ এতো তাড়াতাড়ি শেষ হবে তাই তো সে বললো,,, হয়েছে হয়েছে থাম। এখন বলতো বিদেশে এতো কি কি করেছিস না কি বিদেশে আদোও কোন সংসার পেতে বসেছিস যে এতো দিন দেশে আসতে চাসনি। 
রোহন রওনক এর দিকে তাকিয়ে বললো,,, বউ টা আমার এখনো বড় হয়নি বড় হোক তারপর সংসার বাঁধবো। 
রান্না ঘরে থেকে কুহু আর রোহানের মা সালমা আহম্মেদ সব টা শুনতে পারছে। বসার ঘর থেকে রোহানের চাচা রাকিব আহম্মেদ কুহু কে ডেকে উঠলো,, এই কুহু কোথায় তুই এই দিকে আয় তো? 
রান্না ঘর থেকে কুহু জবাব নিয়ে বললো,,, আসতেছি কাক্কু। ওড়নাতে হাতটা মুছতে মুছতে রান্না ঘর থেকে বের হলো কুহু। রোহান তাকে গভীর চোখে দেখছে। এই ঠান্ডা তেও তার শরীরে কোন গরম জামা নেই। চুলগুলো বাঁধা। দু পাশ থেকে ছুট ছুট কাট চুল বের হয়ে আছে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে। 
কুহু রাকিব আহম্মেদ এর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,, কাক্কু কিছু কি লাগবে? 
রান্না কত দূর? 
এতো প্রায় হয়ে গেছে। 
এক কাজ কয়েটা বিস্কুট আর সবার জন্য কফি নিয়ে তাড়াতাড়ি। 
আচ্ছা। 
কুহুর সাথে কথা বলার ধরন টা ওর ভালো লাগেনি। রোহান উঠে চলে যেতে নিলে রোহানের বাবা শরীফ আহাম্মেদ বললো,, কোথায় যাচ্ছো? 
মার কাছে বলে ধুপধাপ পা ফেলে সে তার মা এর কাছে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো মা তুমি কি এখনো রেগে আছো? 
আমি কে?? আমার কথার কি কোন দাম আছে? 
মা আমি তো এসেছি তাহলে এমন করছো কেনো? 
কোথায় আর এলি তুই সে তো আবার চলে যাবি। 
আচ্ছা ওটা পরে দেখা যাবে। এখন একটু হাসো তো। 
তিনি ছেলের দিকে ফিরে মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললেন পা"গ"ল ছেলে আমার। 
কুহু চুপচাপ শুনছে আর কফি বানাছে। কফি বানানো হলে কফির মগ এ ঢেলে দিয়ে বিস্কুট এর বৈয়াম খুলে একটা পিরিচ এ কয়টা বিস্কুট দিয়ে তারপর সেইগুলো নিয়ে যেতে যাচ্ছিলো এর মধ্যে রোহান বলে উঠলো,, দাঁড়া আমি নিয়ে যাচ্ছি তুই এইখানে থাক কথা টা বলে কুহুর হাত থেকে ঈগল পাখির মতো ছোঁ মেরে ট্রে টা নিয়ে চলে গেলো। 
খালামনি..?  
হুম বল শুনছি। 
কাল একটু কলেজ যেতে হবে এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। এক ঘন্টা লাগবে। 
ঠিক আছে তাড়াতাড়ি এসে পড়বি। কাল সব মেহমানরা আসবে হাতে হাতে কাজ টা না করে দিলে সামলাতে পারবো না। 
সমস্যা নেই আমি করে দিবো। 
হুম 
খাবার গুলো সব টেবিলের উপর একে একে এনে রাখছে। সবাই চেয়ার টেনে বসে পড়লো। কুহু খাবার গুলো সবার প্লেটে সার্ভ করে দিচ্ছে। স্মৃতি কুহুকে বললো,, আপুমনি এসো আমাদের সাথে বসে খাবার খাও। কুহু স্মৃতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো আমি পরে খাবো খালামনির সাথে তুমি খেয়ে নেও। 
রোহান খাবার টেবিলে বসে চেঁচিয়ে তার মা কে ডাকতে লাগলো,,,মা ওমা তাড়াতাড়ি এসো। 
রোহানের ডাকে তার মা ছুটে এসে বললো কি হয়েছে বাবা আমায় বল? 
তুমি আর কুহু এখনি আমার সাথে বসে খাবার খাবে রাইট নাও। আমি কোন এক্সকোয়েজ শুনবো না। 
ওর কথাতে বাধ্য হয়ে ওদের সাথে বসে খাবার টা খেয়ে নিলো। খাবার শেষে সব কিছু গুঁছিয়ে রুমে যেতে রাত ১ টা বেজে গেলো। 
কুহু না ঘুমিয়ে রাত ২ টা পর্যন্ত এসাইনমেন্ট করে তারপর ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু রোহানের মা না ঘুমিয়ে রোহানের রুমে গিয়ে দেখলো তার ছেলে বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। বাবা কি করছিস? 
এইতো মেইল চ্যাক করিছ কিছু বলবে? 
না এমনি দেখতে এলাম কি করছিস? 
মা বসো। 
তিনি বসলেন। রোহান মা এর কোলে মাথা টা রাখতেই রোহানে মা চুল গুলো টেনে দিচ্ছে। 
মা,,
হুম,, 
আমার আমানত ভালো নেই তোমরা তার খেয়াল রাখতে পারছোস না। এইটা তো কথা ছিলো না। 
ওনার চোখ ছলছল করে উঠলো। ওনি বললো,, আমি,,স্মৃতি,,রওনক ওকে কখনো আলাদা করি নি। 
কিন্তু রক্ষা করতেও পারোনি। ও এই বাড়িতে কাজের মেয়ের মতো আছে মা। 
তুই তো এসে গেছিস সব ঠিক করে নে। এইবার সবাইকে সবটা জানিয়ে দে। 
সময় হোক তারপর। 
তিনি বললেন অনেক রাত হলো ঘুমিয়ে পড়। 
তুমি ও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। 
তিনি আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন। রোহানও ল্যাপটপ রেখে লাইট টা অফ করে ঘুমিয়ে গেলো। 
.....
পরের দিন সকালে খুব দ্রুত ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কিচেন রুমে চলে গেলো তারপর সকালে ব্রেকফাস্ট বানানোর জন্য সব কিছু গুছিয়ে নিলো। কাল রাতে সবাই দেরিতে ঘুমাতে এখন পর্যন্ত কেউ উঠে নি। কি আর করার অগ্যত কুহুকেই একা হাতে সব নাস্তা বানাতে হচ্ছে। সবার জন্য রুটি বানিয়ে নিলো তারপর স্মৃতির জন্য আলাদা নাস্তা বানালো। রোহান সকালে কি খায় তা তো কুহু জানানেই তাই রুটিই বানিয়ে নিলো। রুটি গুলো তাড়াতাড়ি তাওয়াতে দিয়ে ছ্যাকে নিচ্ছে। সব গলো রুটি ছ্যাকা হয়ে গেলে ডিম ভাজি করে নিলো। ফ্রিজ থেকে কিছু ফল বের করে সেইগুলো কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলো। ডিম ভাজি করে এইগুলো সব ডাকা দিয়ে রেখে দিলো। তারপর স্মৃতির জন্য লুডুলস এর স্যুপ টা বসিয়ে দিয়ে সে তার রুমে গিয়ে কলেজের ব্যাগ পত্র গুঁছিয়ে নিয়ে। কলেজের ড্রেস টা আইরোন করে বিছানার উপর রেখে দিলো। তারপর আবার নিচে এসে কিচেন রুমে ঢুকে তারাতাড়ি স্যুপ টা রেডি করে একটা হটপটে ঢেলে টেবিলের উপর রেখে দিলো। ফল গুলো ধুয়ে ফলের ঝুড়িতে রেখে দিয়ে। সে তার জন্য বরাদ্দ করে রাখা খাবার খাতে গেলো। একটা প্লেটে পান্তা ভাত পিঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ নিয়ে খেতে শুরু করলো ওর খাওয়া হয়ে গেলে সে তারাতাড়ি রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো কলেজের উদ্দেশ্য। কিন্তু একজোড়া চোখ তার দিকে ছিলো সেইটা যদি কুহু জানতো। 
হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো রোহান। আর বিরবির করে বলতে লাগলো সব কিছুর ফল পাবেন। আপনার জন্য আমার কলিজা যতটা না কষ্ট পাচ্ছে তার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট আমি দিবো। আপনার শাস্তির পালা শুরু হচ্ছে। এক এক করে সব কিছুর হিসাব আমি রোহান আহম্মেদ আপনার থেকে নিয়ে ই ছাড়বো। কেউ রেহাই পাবে না। 
কুহু বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর ই সবাই ঘুম থেকে উঠলো। খাবার টেবিলে এসে সবাই অবাক। খাবার টেবিলে গরম-গরম খাবার রাখা। 
মিসেস সালমা আহাম্মেদ বললো,, কুহুর কাজ অবাক হওযার কিছু নেই। নাস্তা বানিয়ে কলেজে গেছে। 
রাকিব আহম্মেদ বলে উঠলো পরের মেয়ে আর কতদিন রাখবে আমাদের কাছে বড় হয়েছে তো বিয়ে দিয়ে দেও। 
রোহান এসে চেয়ার টেনে বসে বললো,,, পরের মেয়েকে নিয়ে না ভেবে তোমার মেয়ের কথা ও তো ভাবতে পারো চাচ্চু। তা চাচির আর তোমার মেয়ের কি বেড়ানোর শেষ হয়নি এইবার আসতে বলো চারদিন পর বিয়ে আজ থেকে তো সব আত্মীয় স্বজনরা আসতে থাকবে সব কাজের চাপ মা আর কুহুর উপর যাবে কুহু তো ছোট তাও তো কত বুঝদার। তোমাদের জন্য কত করে তাও তোমরা ওর জন্য সকালের খাবার টা কি রেখেছো পান্তা ভাত পিঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ। মেয়েটার মা বাবা নেই মানে এই মেয়েটার উপর তোমরা অত্যাচার করবে। মনে রেখো সবকিছুর ই কিন্তু শেষ আছে। 
রোহানের মুখে পান্তা ভাতের কথা টা শুনে ওরা সবাই থতমত খেয়ে গেলো। স্মৃতি রওনক আর সালমা আহাম্মেদ বেশ খুশি হলো। ওরা এতো তর্ক করে এই কাজ গুলো করতে পারেনি কিন্তু আজ সেই কাজ গুলো রোহান করে দেখাবে এইবার হয়তো কুহুর জীবনে সুখ পাবে। কমতো আর কষ্ট করেনি। 

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ৩ ম পর্ব

কুহু কলেজ থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে কোমরে ওড়না গুঁজে কাজে লেগে পড়লো। ডেকোরেশন এর লোকেরা বাড়ির বাহিরে কাজ করছে। এতো মানুষের রান্না তো আর বাড়িতে করা সম্ভব না তাই ওরা বাবুচি ঠিক করেছে। রোহান তার বন্ধুদের বলে তিনটে কাজের লোক আনিয়েছে। তবে রোহানের অর্ডার কুহু যেনো রোহানের ঘরটা সুন্দর করে ঝাড়পোঁছ করে দেয় অন্য কেউ যেনো না করে। কুহু বাধ্য মেয়ের মতো রোহানের রুম টা পরিষ্কার করে দিচ্ছে। রোহানদের বাড়ি টা বেশ বড়। ডুপ্লেক্স বাড়ি। আউট সাইডে ও সুন্দর একতালা দিয়ে বাড়ি বানানো আছে। বাড়ির পিছন সাইডে বিশাল বড়ো একটা সুইমিং পুল। 
রোহান বেডের উপর বসে বসে কুহুর সব কাজ মনযোগ দিয়ে দেখছে। কুহুর কাজ শেষ হতে কুহু বলে উঠলো,,, ভাইয়া আমার কাজ শেষ। 
এই মেয়ে আমি তোমার কোন জন্মের ভাই? 
আপনি আমার খালাতো ভাই। 
থাপ্পড়িয়ে সব কয়টা দাঁত ফেলে দিবো আমি কে হই এইটা জানার পর তোর মাথা টা ঘুরে যাবে। যা ঘরে যা আর বেশি এইদিক সে দিক যেনো না যেতে দেখি বাড়িতে অনেক বাহিরে মানুষ আসবে। নিজের রুমে গিয়ে বসে থাক। বাড়ি তে তিন তিন টে কাজের লোক আছে। তোর এতো গিন্নিপানা করতে হবে না। 
কুহু মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভাবছে সে কখন গিন্নিপানা করলো। কিন্তু মুখে কথা টা বলার সাহস নেই। সাহস হবে ও না কারন কুহু যে প্রচন্ড ভয় পায় রোহান কে। কিন্তু কেন ভয় পায় তা জানা নেয়। ওর তো মনে ও নেই কবে দেখেছিলো রোহান কে। 
রোহন চোখ পাকিয়ে বললো কি রে কথা শুনতে পাচ্ছিস না যা এখান থেকে সোজা রুমে। 
কুহু মাথা নাড়িয়ে রুমে থেকে বের হয়ে গেলো যতদূর দেখা যায় ততদূর পর্যন্ত তাকিয়ে আছে রোহান৷ যখন ও চোখের অড়াল হলো তখন রোহান চোখ টা সড়িয়ে বিছানায় গা টা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো সেই দিনের কথা যেই সময়টাতে কুহু তার মামার বাড়ি থাকতো। কুহুর প্রতি মাত্রাধিক আসক্ত হয়ে পড়ে রোহান। প্রায়ই ছুটি পেলে ছুটে যেতো রোহান তার মামার বাড়ি কারন একটাই কুহু। যখন ওকে বিদেশে পাঠাবে বলে সবাই জড়াজড়ি করছিলো ঠিক সেই সময় সে আবদার করে বসে কুহুর সাথে বিয়ে দিলেই সে বিদেশে যাবে নয়তো যাবে না। কিন্তু কুহুর বাবা মানতে নারাজ। কিন্তু রোহানের কুহুকেই লাগবে। সবশেষে ওর মা আর ভাই মিলে লুকিয়ে চুপিসারে মসজিদের এক হুজুর কে দিয়ে ধর্মিয় মতে বিয়ে দেন। কুহু তখনো ছুটো। পুতুল বিয়ে নাম করে বিয়ে দেওয়া হয়। ওদের বিয়ের ব্যপার টা শুধু রওনক,, স্মৃতি আর ও মা জানেন। স্মৃতি কে সবটা জানানো হয়েছে আর স্মৃতি থেকে সব খবর নিতো। তীব্র রিংটোন এর শব্দে ভাবনা থেকে বের হলো রোহান ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে ওর বন্ধু সোহেল এর ফোন রোহান ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতে ই সোহেল বলে উঠলো যার খুঁজ করছিলি তাকে পেয়ে গেছি কি করবো?? 
রোহান বাঁকা হেসে বললো,, চোখে চোখে রাখ। আর এ টু জেড আমাকে জানাবি। 
ওকে। 
ফোনটা কেটে দিলো রোহান। টেবিলের উপর সিগারেট এর প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে বারান্দায় গিয়ে সেই সিগারেট টা জ্বালিয়ে মুখে পুরে নিলো। সে যে জীবনে কত চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। সে খুব চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। তার জীবনের অনেক কিছুই তার পরিবারের কাছে অজানা সে চাওনা এখন কেউ জানুক সময় হলে সব টা জানাবে। এখন শুধু কিস্তিমাত করার জন্য গুটি সাজাছে। হঠাৎ গাড়ির শব্দ পেতে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো গাড়ি থেকে নামছে সুলতানা সিকদার চোখে মুখে আভিজাত্য ছোঁয়া। রোহান ভেবে পায়না এইটুকু ছোট একটা মেয়ে রেখে কিভাবে তিনি বিয়ের পীড়িতে বসতে পাড়লেন একবার ও কি মায়া হলো না তার ছোট মেয়েটির কথা। রোহান বুকে হাত দিয়ে বলে উঠলো ইশ্ কতই না কষ্ট হয়েছে আমার ছোট পাখিটার। আচ্ছা আজ যখন কুহু তার মার সম্মুখে হবে তখন কতটা নাই কষ্ট পাবে। আচ্ছা কুহু কি কাঁদবে?? ইয়া রব কুহু কী কাঁদবে? কুহু কাঁদবে কথা টা মনে হলেই রোহানের বুকের ভিতর টা কেঁপে উঠলো। ইশ্ সে তো তার ছোট পাখিটার চোখের কান্না সহ্য করতে পারবে না। সমস্যা নেই কুহু আমি ঠিক সামলে নিবো তুই কষ্ট পাস না। আমি রোহান আহাম্মেদ থাকতে তোকে কষ্ট স্পর্শ করতে দিবো না। সব কষ্ট আমি বুক পেতে নিয়ে নিবো। ভয় পাস আমি আছি। 
রোহান রুম থেকে বের হয়ে কুহুর রুমের কাছে গিয়ে দেখলো কুহু রুমেই আছে তার মানে এখন আপাত্ত সেই মহিলার মুখোমুখি হতে হবে না। আপাত্ত নিশ্চিন্ত সে। 
নিচে নেমে দেখে কুহুর মা আর ওনার হাসবেন্ড সোফাতে বসে আছে আর তার মা এর সাথে কথা বলছে। রোহান কিছু না বলে চুপচাপ তার মতো করে সোফার এক সাইডে বসে পড়ে। রোহান কে দেখে কুহুর মা সুলতানা সিকদার বলে উঠলো কেমন আছিস তুই?? 
আলহামদুলিল্লাহ আপনি? 
আমি ও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। 
হুম ভালো থাকা টা কি স্বাভাবিক না ভালো থাকার জন্য ই তো নিজের একটা অংশ ফেলে রেখে আরেকটা সংসার পেতেছেন। আপনার সেই অংশটার প্রতি কোন দায়িত্ব নেই কিছু নেই। একটি বার খুঁজ ও নেননি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কেমন মা আপনি? আপনাকে আমার খালামনি বলতেই ঘৃনা লাগে। সন্তান জন্ম দিলেই মা হওয়ার যায় না মা হওয়ার জন্য যোগ্য তা লাগে যেইটা আপনার নেই। 
রোহান ভুলে যেওনা আমি তোমার খালামনি। 
আমি ভুলিনি। 
তুমি কিছু জানোনা। 
আমি সব জানি। কোন কিছু ই আমার অজানা নয় শুধু রেডি থাকুন সব ফল পাবেন আপনারা। আপনাদের খারাপ সময় শুরু হয়ে গেছে। 
রোহানের মা বললো,, রোহান এইটা কি ধরনের বেয়াদবি? সরি বলো। 
আমি ভুল করি নি সো সরি বলার প্রশ্নই ওঠে না। আমি উঠছি বলে চলে গেলো। এইদিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে সুলতানা সিকদার আর শাহিন সিকদার। 
মিসেস সালমা আহাম্মেদ কি আর করবেন,, তিনি একটু মেকি হেঁসে বললেন,, অনেক দূর থেকে এসেছিস যা তো ফ্রেশ হয়ে নে আর বাকি সবাই কোথায়? 
ওরা আসবে একটু পরে। 
ওহ্ আচ্ছা এতোটা পথ জার্নি করে এসে নিশ্চয় ক্লান্ত হয়ে গেছিস যা রুমে যা। উপরের ডান সাইডের তিন নাম্বার রুম টা তোদের যা। 
ওনারা ব্যাগ হাতে নিয়ে রুমে চলে গেলো। 
ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাঃস ফেললো সালমা আহাম্মেদ। 
একে একে সকল মানুষ আসতে শুরু করলো। রওনক এর ফ্রেন্ড সার্কেল আসলো তারপর রোহানের চাচি আর তার মেয়ে মৌ ও মামা বাড়ি থেকে এসে পড়লো। রোহানের ফুফু ও তার দুই ছেলে এক মেয়ে একজনের নাম সজীব,, রাজীব আর মেয়ের নাম মুনা। সজীব এইবার অর্নাসের শেষ বর্ষের স্টুডেন্ট আর রাজীব সে তার বাবার সাথে ব্যবসা দেখে। বাড়ি টা জমজমাট পরিবেশ। এতো মানুষ দেখে রোহান বিরক্ত কারন তার মনে একটাই ভয় তার পরীটার উপর না কারও নজর পড়ে যায়। এতো ছেলে মানুষের আসার কি আছে মনে মনে ভাবতে লাগলো। এই দিকে স্মৃতির তো আনন্দের শেষ নেই। কখনো এই খানে তো কখনো ওখানে ঘুরে বেড়াছে। এরই মধ্যে রোহানের চাচি শায়েলা আহম্মেদ বলতে লাগলো,,, সালমা বু কুহু কোথায় গো ওকে তো দেখছি না ওকে বলোতো সবার জন্য কিছু নাস্তা বানিয়ে আনতে। এই কথাটাই যথেষ্ট ছিলো রোহান কে রাগিয়ে তুলার জন্য। 
রোহান ক্ষিপ্ত মেজাজ এ বললো,, কেনো চাচি কুহু কে কি দরকার তোমার? নিজের হাত নেই নিজে বানিয়ে খেতে পারো না। এই কয়দিন তো দিব্যি বাপের বাড়িতে ঘুরে এসেছো এইবার একটু গতর টা খাটাও। বাচ্চা মেয়ে এতো জনের নাস্তা কি বানাতে পারবে না কি? বাড়িতে তিন তিন টা কাজের লোক কি এমনি এমনি নিয়ে আসছি কাজ করানোর জন্য মায়ের উপর এবং কুহুর উপর কোন কিছুর জন্য তোমরা কেউ কোন প্রকার জোড় খাটাবে না। এম আই ক্লিয়ার। 
রোহানের ফুফু রাজিয়া হাওলাদার বলে উঠলো,, বাড়িতে থাকে একটু কাজ করলে ক্ষতি কি? 
লাইক সিরিয়াসলি ফুফু এইটা কেমন কথা তোমার ভাইয়ের অঢেল টাকা এই টাকা নিয়ে কি তিনি ক"ব"রে যাবেন। তার থেকে ভালো একটা সওয়াবের কাজ করুক এই এতিম মেয়েটার পিছনে খরচ করুক তাতে যদি ওনার পাপ টা কমে। 
রোওহান তুই কুহুকে এতিম বলছিস তাও ওর মায়ের সামনে। 
তাই না কি ফুফু মনি কেমন মা? যে মা নাকি ওকে অবহেলায় অনাদরে ফেলে রেখেছিলো সেই মা। এই মা থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। একটা পা"গ"ল"নী"ও নিজের সন্তান কে নিজের থেকে আলাদা করতে চায় না আর ওনি কি সুন্দর অবলীলায় ওনি মেয়ে টা কে ছেড়ে দিলো। পাষণ্ড মহিলা। আমি ঘৃণা করি। আমি কুহুকে কখনোই ওনার সংস্পর্শে আসতে দিবো না। 
তুই না দেওয়ার কে? 
সেই কৈফিয়ত তোমাদের দিতে বাধ্য নই আমি। 
কুহু রুমে শুয়ে আছে। শুয়ে আছে বললে ভুল হবে ঘুমিয়ে আছে। প্রচন্ড জ্বর এসেছে হঠাৎ। মনে হয় কালকে অবেলায় শাওয়ার নেওয়াতে ওর জ্বর এলো। কম্বল মুড়িয়ে ঘাপটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। স্মৃতি কে আলাদা ডেকে স্মৃতির কাছ থেকে কুহুর রুমের এক্সটা চাবি নিয়ে এসেছে রোহান। রোহান চাবিটা দিয়ে লকটা খুলে নব টা ঘুরিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখলো দিনের বেলাতেও অন্ধকার করে রেখে শুয়ে আছে। কুহুর পাশে আস্তে করে বশে পড়লো। তারপর কুহুর অগোছালো লম্বা কেশে হাতে নিয়ে বললো আমার কেশবতী কন্যা। তারপর আস্তে করে হাতটা কুহুর কপালে ছোঁয়াতেই রোহান চমকে উঠে হাত টা সড়িয়ে নিলো প্রচন্ড জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে মেয়ে টা। ইশ্ এখন কতই না কষ্ট পেতে হচ্ছে। রোহান আবার নিচে গেলো সবার অগোচরে সে কিচেন থেকে খাবার এনে কুহু কে উঠিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো। কুহুপাখি একটু খেয়ে নে চিকেন স্যুপ এনেছি একটু না খেলে ওষুধ খাওয়াতে পারবো না। অচেতন কুহু কি আদোও শুনতে পেলো রোহানের এই ছটফটানির কণ্ঠ স্বর। শুয়া অবস্থাই কুহুকে কয়েক চামচ স্যুপ খাইয়ে দিয়ে ড্রয়ার খুলে জ্বরের মেডিসিন টা নিয়ে কুহু কে খাইয়ে দিয়ে তারপর ওয়াশরুম থেকে মগ টা নিয়ে সেইটাতে তার রুমাল টা ভিজিয়ে কুহুর কপাল তে রাখলো। 
অন্ধকার রুম। শুধু ড্রিম লাইট জ্বলছে। স্মৃতি রওনক আর রোহান বসে আছে কুহুর রুমে। কুহুর জ্বর টা এখন কমলো কিছুটা তবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। সালমা আহাম্মেদ মাঝে মাঝে এসে দেখে যাচ্ছে কুহুকে। সন্ধ্যা হয়ে হলো চারোদিকে মাগরিব এর আজানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। রোহান রওনক কে বললো তুমি যাও আমি আর স্মৃতি আছি। 
স্মৃতি যাবে না আমার সাথে? 
না যাওয়ার দরকার নেই ওখানে সব ছেলে মানুষ থাকবে ওদের মাঝে গিয়ে লাভ নেই বরং ও আমার কাছে ই থাক। 
সেই কি ভাই এর ব্যাচেলার পর্টিতে বোন দুটো থাকবে না। 
না থাকবে না। কুহু সুস্থ থাকলে ও আমি ওকে এতোগুল ছেলের মাঝে যেতে দিতাম না। যাও তুমি রেডি হয়ে ক্লাবে চলে যাও। 
তুই ও যাবি না? ওখানে তো তোর হবু ভাবী আসবে। 
ভাই তোমার কি বুদ্ধি সুদ্ধী লোপ পেয়েছে কি বলছো তুমি আমার অসুস্থ বউ টা কে রেখে আমি এখন তোমার সাথে ক্লাবে গিয়ে ধেই ধেই করে নেচে বেড়াবো। 
ওর কথার ধরন শুনে স্মৃতি হেঁসে দিলো। রওনক তার মাথায় হাত দিয়ে বললো,,, তুই এমন কেনো? 
জানিনা যা তো। 
রওনক উঠে চলে গেলো। কুহু ঘুমের ঘরে পানি পানি করে উঠলো। 
রোহান স্মৃতি কে বললো,, এই স্মৃতি যা তো ফ্ল্যাক্স থেকে গরম পানি মিশেয়ে এই বাটিতে পানি নিয়ে আয়। রোহানের কথা মতো স্মৃতি এই বাটিতে গরম পানি আর ঠান্ডা পানি মিক্স করে এনে দেয় তারপর রোহান একটা চামচের সাহায্য একটু একটু করে পানিটা মুখে দেয়। ঘুমের ঘোরে পানি টা খেয়ে নেয়। রোহান স্মৃতি কে বললো,, এই স্মৃতি ওর শরীর টা একটু মুছে দে আমি বাহিরে ওয়েট করছি। আর শুন ড্রেস চেঞ্জ করে তার উপর শীতের জামা পড়িয়ে দিবি বুঝলি।
 স্মৃতি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে দিতেই রোহান বাহিরে চলে গেলো। আর স্মৃতি একটা বড়ো গামছা টা ভিজিয়ে এনে আস্তে করে কুহু কে টেনে বসিয়ে দিয়ে তারপর শরীর টা সুন্দর করে মুছিয়ে দিয়ে জামা-কাপড় পড়িয়ে দিয়ে তারউপর সুন্দর একটা জ্যাকেট পড়িয়ে দিলো। স্মৃতির ডাকে রোহান রুমে ঢুকে। তাদের দুই ভাই বোনের প্ল্যান আজ সারা রাত কুহুর কাজেই থাকবে। ওর পাশে এখন কাউকে দরকার। কাল মেহেদীর অনুষ্ঠান তার আগে কুহুকে সুস্থ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে এই দুই ভাই বোন। 
রোহান স্মৃতি কে বললো,, কাল তো মেহেদীর অনুষ্ঠান কুহুর জন্য কিছু কিনা হয়েছে। 
হয়েছে তবে দামি না কমদামি। আর রং টা ও ভালো না আমার পছন্দ হয়নি। মা বোধহয় আলাদা করে কিছু কিনে রেখেছে। 
ওহ্ আচ্ছা নে আমার ফোন টা দেখে তোদের দুজনের জন্য ভালো দেখে কিছু ড্রেস এর অর্ডার দে। ওদের দেওয়া কোন কিছু ই কুহুকে পড়তে হবে না। 
রোহানের কথা মতো স্মৃতি বেশ কিছু ড্রেস আর কসমেটিক আর দুইজনের জন্য গোল্ড এর চ্যাইন,, কানের ঝুমকো আর আংটি অর্ডার দিলো। তারপর আবার মনে হলো তার আপুমনির কোন ভালো জুতা নেই সে ওর আপুমনির জন্য বেশ কয়েকটা জুতা অর্ডার দিলো। 
রোহানের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিতে রোহান সবকিছুর লিস্ট টা দেখে নিয়ে বললো,, বাহ্ ভালোই তো টাকা খরচ করার শিখে গেছিস। 
তুই তোর আপুমনি কে কেনো শিখাস না? 
আপুমনিকে মা আর ভাইয়া ই শুধু হাত খরচ দেয় আর কেউ দেয় না আর আপুমনি তিন চারটা টিউশনি করে। 
রোহান শুধু শ্বাঃস ফেললো। 
রোহান ফোনটা হাতে নিয়ে বললো দে খাবার অর্ডার দে। কুহুর জন্য স্যুপ আর তোর আর আমার জন্য যা ইচ্ছে অর্ডার কর। 
স্মৃতি তাই করলো,, কুহুর জন্য,, স্যুপ আর ওদের জন্য বাঙালি কিছু খাবার অর্ডার করলো। 
২ ঘন্টার পর সব অর্ডার গুলো আসলো। কলিং বেল বাজাতে মিসেস সালমা আহাম্মেদ দরজা টা খুলে দেখলো দুটো লোক। একজনের হাতে কিছু শপিং ব্যাগ আরেক জনের হাতে খাবারের প্যাকেট। 
রোহান ধীরে পায়ে সামনে এসে বললো মা আমি অর্ডার করেছিলাম বলে সবার কাছ থেকে সব কিছু নিয়ে নিলো আর বললো প্লেমেন্ট টা চ্যাক করে নিবেন অনলাইনে দিয়ে দিছি বলে দুহাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো রুমে। সবাই ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। 
রোহান রুমে এসে সব কিছু বিছানার উপর রেখে খাবারের বক্স খুলতে খুলতে বললো দুটো প্লেট নিয়ে আয় তো। 
এই রুমেই প্লেট আছে দুটো। অনেক সময় আমি আর আপুমনি এক সাথে মুভি দেখতে দেখতে খাই। 
ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে রোহান বললো,, ফোন কোথায় পেলি তোরা?? 
ওমা আপুমনি টাকা জমিয়ে ফোন কিনেছে। 
ওহ্.. কোথায় সেই ফোন? 
জানিনা আপুমনি বলতে পারবে। 
স্মৃতি ড্রয়ার খুলে দুটো প্লেট নিয়ে ওয়াশরুম এর ভেতর এ গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিলো। তারপর খাবার গুলো সার্ভ করে খাওয়া শুরু করলো। ওরা খাওয়া শেষ করে সবকিছু গুঁছিয়ে রেখে রোহান স্যুপের বাটি টা তে স্যুপ নিয়ে ঘুমানোর অবস্থায় কুহুকে খাইয়ে দিলো। তারপর অল্প একটু পানিতে জ্বরের মেডিসিন টা গুলিয়ে কুহু খাইয়ে দিয়ে লাইটগুলো বন্ধ করে শুধু টেবিল ল্যম্প টা জ্বালিয়ে রেখে স্মৃতি কে বললো কুহুর পাশে শুয়ে পড়তে। 
তুমি কোথায় শুবে ভাইয়া? 
আমি এই সোফাটাতে আছি সমস্যা নেই। 
তোমার কষ্ট হবে না। 
না হবে না অভ্যাস আছে নে ঘুমা। 
------------- 
চারোদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলো। মধ্যরাতে কুহুর জ্বর টা কমে গেছে। গোটা একটা দিন কুহু শুধু ঘুমিয়ে পাড় করলো ভাবা যায়। কি ভয়ংকর একটা কাহিনী। আড়মোড়া দিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসতেই সোফার মধ্যে রোহান কে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় কুহু তারপর পাশে তাকিয়ে দেখে স্মৃতি ও তার রুমে। বিছানার কাছে ধীরে পায়ে নেমে রোহান কে ডাকতে নিলেই রোহান আচমকা চোখটা খুলে ফেললো। কুহু থতমত খেয়ে গেলো। এই প্রথম এতো কাছ থেকে রোহান কে দেখছে কুহু। রোহানের চোখ দুটো স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে সদ্য ঘুম থেকে উঠা তার মায়াবিনীর দিকে। এলোমেলো চুল। মুখে এখনো ঘুম ঘুম ভাব। বেশ লাগছে তাকে। হঠাৎ ই রোহান কুহুর কোমর জড়িয়ে ধরে রোহানের কাছে নিয়ে এসে বললো,,, যাক জ্বর কমেছে তাহলে আপনার। এইদিকে আমি তো মহা টেনশনে পরে গেছিলাম সেইটা যদি কেউ জানত তাহলে তো হতো ই। 
কুহু এখন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে কি করবে কুহু জীবনের প্রথম কোন এক নর এর স্পর্শে তার শরীরে লোম কূপ দাঁড়িয়ে গেলো। হৃদপিণ্ড টা ও কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভয়ে নেত্রজোড়া টা বন্ধ করে নিলো। কুহুর এই রকম অবস্থা দেখে রোহান ঠোঁট কামড়িয়ে হেঁসে দিয়ে  কুহুকে ছেড়ে দিলো। কুহু ছাড়া পেতে নেত্রজোড়া গুলো খুলে ফেললো। 
রোহান পরিস্থিতি টা স্বাভাবিক করার জন্য বললো,,, ভালো করে ফ্রেশ হয়ে নে। কাল গোটা একটা দিন তুই ঘুমিয়ে কাটিয়েছিস। আজ তো ভাই এর মেহেদী। মেহেদী সন্ধ্যাতে সুন্দর করে সেজেগুজে আসবি। ওই যে দেখ টেবিল ভর্তি শপিং ব্যাগ সেই গুলোতে তোর জন্য বাড়িতে পড়া ভালো কিছু ড্রেস আর ভাইয়ার বিয়েতে পড়ার জন্য কিছু ড্রেস আছে তোর পছন্দের মতো পড়ে নিস আর শুন এখন তুই দুর্বল রুম থেকে বের হওয়ার দরকার নেই। রুমে ই খাবার নিয়ে আসবো। রুমেই খাবি। 
কিন্তু..? 
হুঁশশ..! কোন কিন্তু নয় কেউ কিছু বলবে না কেউ কিছু বললে আমি আছি তো। 
কুহু আর কথা বাড়ালো না আলমারি থেকে এক সেট জামা নিয়ে ওয়াশরুম এ গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসেই দেখে রোহান খাবার নিয়ে হাজির। কুহু কে চোখের ইশারায় খেতে বললো,,, কুহু কোন কথা না বলে চুপচাপ খাবার টা নিয়ে খাওয়া শুরু করে। 
কুহুর খাওয়া হয়ে গেলে রোহান প্লেট গুলো নিয়ে নিচে রেখে এসে তারপর কুহুকে বলে সে তার রুমে চলে যায়। আজ সারাটা বেলা কুহুর খুব বিরক্ত লেগেছে কারন রোহান,, স্মৃতি আর রওনক কেউ তাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। 
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো একটু পরে মেহেদী অনুষ্ঠান শুরু হবে। কুহু একটা কলাপাতা রঙ এর শাড়ি লেহেঙ্গা পড়ে নেয়। তারপর খুব সিম্পল ভাবে সেজে নেয়। চোখে কাজল,,, চোখে হাল্কা আইসেডো আর আইলেনার দিলো,, ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক দেওয়া আর হাত ভর্তি চুড়ি ব্যাস এইটুকু তে যথেষ্ট লাগছে। মেহেদীর অনুষ্ঠান টা ছাঁদের উপর করা হয়েছে। কুহু ছাঁদের উপর যেতে একজোড়া তৃপ্তি নয়নে তাকিয়ে আছে তার পানে। চোখ জোড়ে কেবলই মুগ্ধতা বিরাজ করছে। কিন্তু ছাঁদে এসেই মনে খারাপ হয় কুহু আঁখি পল্লবে ভিড় করে মেঘ যেইকোন মূহুর্তে টুপ করে গড়িয়ে পড়বে। সব মুরুব্বিদের সাথে বসে গল্প করছে তার মা। তাকে দেখেও না দেখার ভান করে আছে। খুব কষ্ট হচ্ছে কুহুর। রোহান কুহুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,, পৃথিবীর সবাই আপন হয় না। পৃথিবীতে কিছু মা নিষ্ঠুর ও হয় জেনে রাখো তুমি। 
❝ যদি কখনো একা একা পথ চলতে গিয়ে 
ক্লান্ত হয়ে পড়ো তাহলে ছুটে এসো আমার পানে 
আমার বাহুডোরে বেঁধে নিবো তোমাকে❞ 
এই কথা টা কি এমন আছে জানানেই কুহুর। তবে এই কথাটা অনেক ভরসা খুঁজে পেয়েছে। রোহান কুহুকে বললো,, আয় ওখানে স্মৃতি আছে ওখানে গিয়ে বসবি। 
কুহু রোহানের কথা মতো ওখানে গিয়ে বসলো। অনেক কে চিনে আবার অনেক কে চিনে না। যাদের কে চিনে তাদের সাথে বেশিরভাগ সম্পর্ক ই ভালো না।  রওনক কুহুকে দেখে হেঁসে বললো,, কি রে বুড়ি এতো দেরি করে এলি কেনো? 
একটু দেরি হয়ে গেছে সরি। 
স্মৃতি বলে উঠলো কোন ব্যাপার না। পর্লারের এক মহিলা কে বললো কুহুকে মেহেদী পড়িয়ে দিতে। কুহু পার্লারের মহিলাকে বললো,, একদম সিম্পল একটা ডিজাইন দিবেন। কুহুর কথা মতো ই পার্লারের মহিলা তাই করলো। 
কিছুক্ষণ পর রোহান আর তার দুইজন ফ্রেন্ড এসে বসলো তাদের পাশে। রোহান কে কুহুর পাশে বসে থাকতে দেখে মুন প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে তাকাছে। মেহেদীর পর্ব শেষ রোহান কে সবাই ধরলো গান গাওয়ার জন্য। 
রোহান গিটার টা হাতে নিয়ে বলে উঠলো এই গান টা আমি আমার সব থেকে প্রিয় মানুষ কে ডেডিকেট করছি,, 
❝অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
যেন ভুলে যেয়ো না
#একই_বন্ধনে_বাঁধা_দু'জনে
এ বাঁধন খুলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
যত সুর ছিল প্রাণে
সবই দিয়েছি তোমায়
বিনিময়ে তোমারে শুধু
চিরদিন যেন কাছে পাই
যত সুর ছিল প্রাণে
সবই দিয়েছি তোমায়
বিনিময়ে তোমারে শুধু
চিরদিন যেন কাছে পাই
মালা চন্দনে রাঙা এইখানে
কখনো ফেলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
যেন ভুলে যেয়ো না
#একই_বন্ধনে_বাঁধা_দু'জনে
এ বাঁধন খুলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
ওই ফুলবনে পাখি
আজ মন জুড়ে যেন গায়
এই হাত জড়ানো হাতে
চিরদিন যেন ওগো রয়
ওই ফুলবনে পাখি
আজ মন জুড়ে যেন গায়
এই হাত জড়ানো হাতে
চিরদিন যেন ওগো রয়
মধু কুমকুমে, নব মৌসুমে
কখনো দলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
যেন ভুলে যেয়ো না
#একই_বন্ধনে_বাঁধা_দু'জনে
এ বাঁধন খুলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
যেন ভুলে যেয়ো না
#একই_বন্ধনে_বাঁধা_দু'জনে
এ বাঁধন খুলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান 
গান শেষ হতে হাত দিলো সবাই। কুহুর এতো হৈচৈ ভালো লাগছে না ই তাই কুহু সবাই কে বলে ছাঁদ থেকে নেমে যেতে নিলো কিন্তু ছাঁদ থেকে নেমে যেতে নিতেই বাঁধলো এক বিপত্তি হুট করে কে যেনো কুহুকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দেয়। বিকট একটা চিৎকার দিয়ে উঠে কুহু। কুহুর গলা শুনে রোহানের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো সব ফেলে দৌড়ে সিঁড়ি কাছে গিয়ে থমকে গেলো। রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে কুহু। এই অবস্থায় কুহুকে দেখে রোহানের দুনিয়াতে ঘুরে গেলো। মনে হচ্ছে দামি কোন জিনিস হারিয়ে ফেলছে। রোহান দৌড়ে কুহুর কাছে গিয়ে কুহুকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললো চিন্তা করিস না আমি আছি আমি তোকে এখনি হসপিটালে নিয়ে যাবো তোর কিছু হবে না। কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে সে খুব সাবধানে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গাড়িতে উঠে রওনা দিলো হসপিটালের দিকে। বাড়ির থেকে শুধু স্মৃতি রওনক আর সালামা আহাম্মেদ এসেছেন আর কেউ আসেন নেই। মাথায় খুব বাজে ভাবে ইনজুরি হয়েছে। রোহানের সাদা পাঞ্জাবি টা তে তরতাজা রক্তের দাগ স্পষ্ট। পাগলের মতো করছে রোহান মনে প্রাণে শুধু রবকে স্মরণ করে যাচ্ছে। ও.টি. র সামনে বসে আছে। ও.টি. র লাইটটা অফ হতে সবাই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর ডাক্তার কে ঘিরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,, কুহু কেমন আছে? 
ডক্টর হোসেন জবাবে বললেন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন। তবে খুব বেশি আঘাত পেয়েছে মাথায় আমরা স্টেইচ করে দিয়েছে। একটু পরে কেবিনে দেওয়া হবে। কুহুকে বেডে সিফট করে দিলো। ডক্টর বলে গেছে ঘন্টা খানিক এর পর জ্ঞান ফিরবে। বারবার ঘড়িতে টাইম দেখেই চলেছে। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে জ্ঞান ফিরলো কুহুর। কুহুর জ্ঞান ফিরতে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলো। রোহান কুহুর পাশে বসে বললো,, খুব ব্যাথা করছে। কুহু একবার চোখ বন্ধ করছে তো আবার খুলছে তারপর বললো ভাইয়া লাইট টা অফ কেনো জ্বালিয়ে দিন। 
লাইট জ্বালিয়ে দিবো কি লাইট তো জ্বলছে মুহূর্তে আতঙ্কিত হয়ে উঠলো কুহু তারপর বিচলিত হয়ে বললো আমি কিছু দেখতে পারছি না। 
আচ্ছা রিল্যাক্স। আমি আছি তো। আস্তেধীরে চোখ বন্ধ করো আবার চোখ খুলো।
 কুহু তাই করলো কিন্তু ফলাফল জিরো। কুহু কেঁদে উঠলো। কুহুকে দু বাহুতে আগলে নিয়ে বললো ঠিক হয়ে যাবে সমস্যা নেই। আচ্ছা এখন বলো তো কুহুপাখি তুমি পড়ে গেলে কি করে? 
আমি যখন সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নামছিলাম তখন কেউ মনে হয় ধাক্কা দিয়েছে আচ্ছা আমি আছি তো। ভাইয়া ডাক্তার ডাক তারাতাড়ি। 
ডাক্তার এলো কেবিনে। কুহু পরিক্ষা করে বললো,, ওর চোখে মনিতে আঘাত পেয়েছে। সমস্যা নেই চোখের অপারেশন করতে হবে। অপারেশন করলে ঠিক হয়ে যাবে। 
কুহুকে হসপিটাল এ রেখে রোহান বাসার দিকে রওনা দিলো। কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে যাওয়াতে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লো। রোহান নিজের রুমে এসে ল্যাপটপ অন করে ছাঁদের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ টা দেখছে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত ফুটেজ টা পেলো। ফুটেজ টা দেখে রোহানের রক্ত টগবগ করে উঠলো। রোহান আলমারি থেকে চাবুক টা বের করে রুম থেকে থেকে বের হয়ে নিচে এসে সবার সামনে থেকে মুনা কে টেনে নিয়ে সুইমিংপুল এর কাছে নিয়ে এসে এক ধাক্কায় ওকে পানিতে ফেলে দিয়ে তারপর তাকে চাবুক দিয়ে মারতে থাকে বাড়ির সকলে তাকে থামতে চাইলেও পারে না। একের পর এক চাবুক মেরেই চলেছে। তারপর চাবুক ফেলে দিয়ে সেও পানিতে নেমে মুনের মাথাটা পানিতে চেপে ধরে বলতে লাগলো,, কোন সাহসে তুই কুহুকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলি। আজ তোর জন্য আমার পরাণ পাখি টা চোখে দেখতে পারছে না আজ তোর জন্য ও হসপিটালের বেডে শুয়ে ব্যাথায় ছটফট করছে। তুই কোন সাহসে আমার কলিজাতে আঘত করলি আজ তোর কলিজাটা আমি ছিঁড়ে ফেলবো। বাড়ির সবাই পানি তে নেমে রোহান কে টেনে দূরে সড়ায়। মুনের অবস্থা টা ভালো। রোহান এক ভয়ংকর হাসি দিয়ে বললো,,, তুই আমার কলিজাকে হসপিটালে পাঠিয়েছিলি না আজ একই দিনে তোরে ও আমি পাঠালাম৷ 
রোহান সবাকে রেখে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার হসপিটাল এ রওনা দিলো। পিছনে ফেলো গেলো কিছু মানুষের দৃষ্টি। 

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ৪ নাং পর্ব

ডাক্তার এর চেম্বার এ বসে আছে রোহান। রোহানের বিপরীতে বসে আছে ডাক্তার মুখ টা গম্ভীর। নীরবতা ছেড়ে ডাক্তার বললো,, আপনার চোখের খুঁজ নিন আমরা ও নিচ্ছি। 
প্রয়োজন পড়লে আমার টা নিন আমি আমার চোখ দুটো দিয়ে দিতে চাই। আমার কুহুর চোখে আলো নাই আমার চোখে আলো দিয়ে কি করবো। 
মিস্টার আহাম্মেদ পাগলামি করবেন না আপনি চারোদিকে খুঁজ করুন আমরাও করছি। 
ডাক্তার এর সাথে কথা বলা শেষ করে তার চেম্বার থেকে বের হয়ে সে কুহুর কেবিন গেলো গিয়ে দেখে মেয়ে টা হাঁটুতে মাথাটা ঠেকিয়ে কাঁদছে। ওর কাঁদার ফলে শরীর টা প্রতি খনে খনে কেঁপে উঠছে। রোহান গিয়ে ওর পাশে বসে কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। 
কুহু বললো,, কে রোহান ভাই? 
রোহান হাসলো খানিকটা। তারপর বললো,,, কি ভাবে বুঝলি?
আপনার পারফিউম এর গন্ধ আর আমার মন বলেছে ওটা আপনি আপনি ছাড়া কেউ হতে পারে না। এই আদুরী স্পর্শ টা আপনার। 
এই তিন দিনে এতো চিনেছিস। এতোটা চিনেছিস কি করে? 
জানিনা তো। 
আচ্ছা জানতে হবে না। 
কাল ভাই এর গা এ হলুদ। বাড়ির চারোদিকে কত শত লাইট থাকবে আমার চোখ থাকবে অন্ধকার।
 কথা টা শুনার মাত্র রোহানের বুক চিঁড়ে হৃদপিণ্ড টা বের হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। কুহুকে কি ভাবে বুঝাবে কুহুর থেকে ও ওর বেশি কষ্ট হচ্ছে। বৃদ্ধার আঙুলের সাহায্যে কুহুর চোখের পানি টা মুছে দিয়ে বললো রোহান প্রমিস করছে কুহুকে দুই-তিন ঘন্টার মধ্যে আমি তোর চোখের আলো ফুটিয়ে তুলবো। কাল তুই চোখের আলোয় সব দেখতে পারবি। আমি এখন বের হচ্ছি বাহিরে মা ভাই আর স্মৃতি আছে। একটু পর কেবিনে আসবে আমি তোর জন্য আলো ব্যবস্থা করে আসছি। আমি খালি হাতে ফিরবো না। কিন্তু আমি না ফিরা পর্যন্ত কথা দে তুই কাঁদবি না। 
কুহু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। 
রোহান রুম থেকে বের হয়ে গেলো তারপর বাহিরে সকল কে কেবিনে যেতো বললো আর এও বলে দিয়েছে কুহুর সামনে যাতে কেউ আর না কাঁদে আর কুহুর চুল টা বেঁধে দিতে এই কথাগুলো বলে রোহান বের হয়ে গেলো। 
রোহানের কথা মতো ওরা ও তাই করলো। কেবিনে ঢুকে হাসি হাসি মুখ করে কহুর সাথে কথা বলছে। আর অন্য দিকে রোহানের মা কুহুর চুল সুন্দর করে বেঁধে দিয়ে। কুহু কে ঘুম পাড়াছে। এক পর্যায়ে কুহু ঘুমিয়ে গেলো। চিন্তিত মনে বসে রইলো তিনটি মানুষ। 
রোহান করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ দেখতে পেলো বাড়ির মানুষ গুলো। বাড়ির মানুষ গুলো কে দেখে রোহানের শরীরের রক্ত আগ্নেয়গিরি মতো টগবগিয়ে ফুটতে লাগলো। দিক শূন্য হয়ে রোহান সেইদিকে চলে গেলো। রোহানকে দেখে ওরা সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে গেলো রোহান বাবা বললো,, দেখো রোহান একদম কোন সিনক্রিয়েট করবে না। সিনক্রিয়েট করলে মে"রে তোমার পিঠের ছাল-চামড়া তুলে নিবো। 
মিস্টার আহাম্মেদ আমি আপনার সাথে কথা বলছি না আর না আমি ইন্টারেস্ট আমি এসেছি অন্য কাজে সবাই কে ঠেলে আইসিইউ ভিতরে ঢুকে ডাক্তার দের কে হম্বিতম্বি করে বললো যতক্ষণ আমার কুহুর জন্য চোখ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ ওর সকল প্রকার ট্রিটমেন্ট বন্ধ। শুধু অক্সিজেন চলবে আর কিছুনা। 
রোহানের ফুফু বললো,, দেখ রোহান আমার মেয়ে টা ম"রে যাবে দোহাই তোর তুই এমন করিস না। 
রোহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,, ম"রে তো আমার কুহুপাখি ও যেতে পারতো। কিন্তু আল্লাহ্ লাখ লাখ শুকরিয়া ও বেঁচে আছে। রোহান মুনের দিকে তাকিয়ে বললো,, ও ম"র"বে না অক্সিজেন মাস্ক চলছে। শুধু ট্রিটমেন্ট বন্ধ থাকলো ততক্ষণ যতক্ষণ না আমি চোখ নিয়ে আসি কথা টা বলে সবাই কে উপেক্ষা করে চলে যাচ্ছিলো এমন সময় কুহুর মা বলে উঠলো,,, এইটা তোমার কেমন শিক্ষা বাবার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না? 
রোহান তাচ্ছিল্য হেঁসে পকেটে হাত গুঁজে বললো আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই। আপনার সাথে কথা বলতেও রুচিতে বাঁধে ঘৃণা হয় আমার বমি বমি পায় কথাটা বলে সে চলে গেলো। 
গাড়ি তে বসে কল বসালো সোহেল কে। রিং হওয়ার সাথে সাথে বললো মামা তুই কই তোরে আমার দরকার। 
খালি কইয়া দেখ নিজের জীবন টা পর্যন্ত হাজির করমু। 
জীবন লাগবো না চোখ লাগবো। তারপর কুহুর ঘটনা গুলো খুলে বললো। তোর বাড়ির আশেপাশে যতগুলো হসপিটাল আছে খুঁজ নে যদি না পাড়িস তাহলে প্রয়োজন পড়লে জ্যান্ত মানুষের চোখ তুলে নিবো। তবুও আজকের মধ্যে চোখ লাগবে মানে লাগবেই। 
আরে চিন্তা করিস না আমি দেখছি। আল্লাহ্ ভরসা। 
হুম রব ই ভরসা কথা টা বলে ফোনটা রেখে গাড়ি টা স্টার্ট দিলো। বেশ অনেক দূর একটা হসপিটাল এ যায় রোহান হসপিটাল তারপর হসপিটালের ম্যানেজার সাথে কথা বলে চোখ পেয়ে যায় তাও একটা মেয়ের চোখ। ওই বাড়ির মেয়ে টার সাথে কথা বললে তারা রাজি হয়। মৃ"ত্যু ব্যক্তির চোখ রেখে কি আর বা করবে। শেষে চোখ নিয়ে ফিরে যায়। তবে যথেষ্ট টাকা দিয়ে আসে। দেখেই বুঝা যায় ওই ফ্যামেলি টা সচ্ছল নয়। হাবিজাবি চিন্তা বাঁদ দিয়ে সোহেল কে কল করে বললো আমি হসপিটালে যাচ্ছি তুই ও আয় হসপিটাল এর চোখ পেয়ে গেছি। 
আলহামদুলিল্লাহ্। 
হুম রবের শুকরিয়া কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। খুব স্প্রিডে গাড়ি চালাছে। 
অবেশেষে সে পৌঁছায় হসপিটাল এ সবার আগে ডাক্তার এর চেম্বার এর যায় গিয়ে দেখে ডাক্তার নেই ঠান্ডা মেজাজ টা তরতর করে গরম হতে শুরু করলো। নেই মানে কি একটা পেশেন্ট রেখে ওনি বাড়িতে গিয়ে নিশ্চিন্তে কি ভাবে ঘুমাতে পারেন। 
খুব জোড় জবরদস্তি করে একটা নার্সের থেকে ডাক্তার এর বাড়ির ঠিকানা টা নিয়ে নেয়। তারপর সে ওটি রেডি করতে বলে চলে যায় ডাক্তার কে আনার উদ্দেশ্যে। 
ওইদিকে ডাক্তার কে বলে ও মুনের ট্রিটমেন্ট চালু করা যাচ্ছে না। ডাক্তার রোহানের কথায় ভয় পেয়ে আছে। 
মুনের মা বাবা ভাই আর রোহানের বাড়ির সবাই আহাজারি করছে। রোহান শুনেও না শুনার বান করে ওদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। ওদের আহাজারি ওদের আর্তনাত রোহানের মনে পৈশাচিক আনন্দ দিচ্ছে। রোহান বাকা হেঁসে গাড়ি তে উঠতে নিলে রোহানের বন্ধু সোহেল সেই মূহুর্তে চলে আসে। রোহানের সামনে বাইক টা দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,, কই যাচ্ছিস? 
ডাক্তার কে তুলে আনতে ডাক্তার হসপিটালে নেই বাড়ি গেছে আমি ও যাচ্ছি। তোর বাইক টা দে তোর বাইকে করে যাবো। 
ঠিক আছে চল দুইজনেই সাথে যাই। 
রোহান বাইক চালাছে আর সোহেল পিছনে বসে আছে। রোহান হাই স্প্রিডে বাইক চালাছে। নার্সের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ওরা পৌঁছে গেলে ডাক্তার এর বাসায়। 
কলিং বেল বাজিয়ে এই যাচ্ছে দরজা খোলার নাম নেই। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রোহানের। একাধারে কলিং বেল বাজাতে বাজাতে তারপর ডাক্তার হোসেন দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলা পেতে রোহান রুমে ভিতরে ঢুকে ডাক্তার হোসেন এর গেঞ্জির কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, সাহস কি করে হয় তোর পেশেন্ট ফেলে রেখে বাড়ি তে এসে নিশ্চিন্তে ঘুমাছি। 
থতমত খেয়ে গেলো ডাক্তার। তারপর আমতা আমতা করে বললো আপনারা তো আর চোখের ব্যবস্থা করতে পারেন নি তাই আমি আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো সেই জন্য আমি চলে এসেছি। ডাক্তার এর কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু পর পর দু গালে চড় পড়তে দেরি হলো না। রোহান আর কথা না বাড়িয়ে সোহেল কে বললো ডাক্তার এর ঘাড় টা ধরে নিয়ে যেতে। 
সোহেল ও তাই করলো ডাক্তার এর ঘাড় টা ধরে বাহিরে বের করলো তারপর বাইকে উঠালো। সোহেলও তার পিছনে বসলো আর রোহান এসে সামনে বসে বাইক স্টাট দিলো। রোহান পা"গ"লের মতো বাইক চালাছে। 
ডাক্তার ভয় পেয়ে বললো ভাই একটু আস্তে চালান। 
রোহান বাইক চালাতে চালাতে বললো,,, আমার কাছে এই মূহুর্তে প্রতিটা সেকেন্ড ই মহা মূল্যবান। রাত হলেও রাস্তা যানযট ছিলো তবে অল্প-বিস্তর তাই রোহান রা দ্রুত হসপিটাল এ পৌঁছে গেলো। সোহেল কে বললো,, তুই ডাক্তার কে নিয়ে কেবিন এ আয় আমি আসছি। ৫ নাম্বার কেবিন টা তে যাবি। সোহেল ডাক্তার কে নিয়ে দ্রুত গতিতে হসপিটাল এর ভিতরে ঢুকে লিফটে উঠে বাটন প্রেস করে। খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলো কুহুর কেবিনে। কুহুর কেবিনে ডাক্তার এসে দেখলো কুহু ঘুমাছে। কুহুর পাশে রাখা সুইচ এর চাপ দিতেই একটা নার্স আসলো। ডাক্তার নার্সটিকে বললো চ্যাকআপ এর জিনিস পত্র নিয়ে আসতে। ডাক্তার এর কথা মতো নার্সটি চলে গেলো চ্যাক আপ এর জিনিস আনতে। 
রোহান যখন বাইক টা পার্কিং করে আসছিলো করিডর দিয়ে ঠিক সেই সময় দেখতে পেলো তার বাড়ির লোক গুলো দাঁড়িয়ে আছে। রোহানে কে দেখে রোহানের বাবা এগিয়ে এসে বললো,, ওর ট্রিটমেন্ট চালু করতে বল। 
অসম্ভব যতক্ষণ না কুহু তার চোখ দিয়ে সব দেখবে ততক্ষণ ওর ট্রিটমেন্ট বন্ধ। কুহু যদি আলো দেখতে না পারে তাহলে মুন ও আর আলো দেখবে না। 
এতো পাষণ্ড হলি কবে থেকে? 
তোমার ই তো বীজ তোমার মতোই হবো সিম্পল কথাটা বলে সবাই কে তোয়াক্কা না করে সে চলে গেলো কুহুর কেবিনে গিয়ে দেখে কুহুর চ্যাকআপ চলছে। ডাক্তার নার্সটির দিকে তাকিয়ে বললো ওকে রেডি করুন ওকে ও. টি তে নিয়ে যাবো আর ও. টি রেডি করুন। 
ও.টি রেডি ই আছে মিস্টার আহাম্মেদ যাওর আগে বলে গিয়েছিলো। একটা নার্স এসে ও. টির ড্রেস দিয়ে গেলো। রোহান কুহুর পাশে বসে বললো,, একদম ভয় পাবি না আমি তোর সাথে থাকবো। 
এই কথাটা শুনে উপস্থিত সকলের চোখ বড় বড় হয়ে যায় আর ডাক্তার কিছু বলতে নিলে রোহান চোখের ইশারায় থামিয়ে দেয়। তারপর তার মাকে বলে ওকে রেডি করে আনতে। ওকে নিয়ে ওর মা ওয়াশরুম এ যায়। 
ডাক্তার রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,, ও. টির ভিতরে কেবল ডাক্তার,, নার্স আর পেশেন্ট ই থাকতে পারে আপনি তো তিনটা থেকে কোন টাই নন। 
রোহান ডাক্তার এর কথা শুনে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে বললো,, সব উল্ট-পাল্ট করে ফেলবো তাও আমি রোহান আহাম্মেদ ওর সাথে ও. টি তে যাবো এম আই ক্লিয়ার। 
ডাক্তার ভয়ে কিছু বললো না। ডাক্তার আরেকটা ও. টির ড্রেস এনে দিতো বললো নার্সটিকে। নার্স তাই করলো। ২ মিনিট এর মধ্যে একটা ও. টির ড্রেস এনে দিলো। রোহান কোন বাক্য ছাড়া ই পড়ে নিলো এর মধ্যে কুহুকে রেডি করে নিয়ে আসলো ওর মা। রোহান কুহুর গাল দুটো টেনে দিয়ে বললো চলল দুইজন ও. টি তে যাই ভয় পাচ্ছিস। 
কুহু মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো রোহান সবার সামনে কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে ও. টির দিকে রওনা দিলো। সবাই অবাক হয়ে রইলো। স্মৃতি ঠোঁট টিপে হাসলো এই সময়ে হাসি টা বেমানান তবুও তার ভাই এর পা"গ"লা"মি দেখে হাসি পেলো। 
বাড়ির সব লোক দেখতে পেলো কুহুকে কোলে নিয়ে ও. টির দিকে যাচ্ছে রোহান। 
রোহানের পিছন পিছন সোহেল,, রওনক,, স্মৃতি ডাক্তার,, নার্স আর রোহানের মা আসছিলো বাড়ির সবাই কে হসপিটালে দেখে খানিকটা অবাক হলেও পরে আর ওই দিকে মাথা না ঘামিয়ে ও. টির রুমের দিকে গেলো ও. টি র বাহিরে চেয়ার ছিলো ওখানে বসে সবাই অপেক্ষা করছিলো। 
-------- 
ও. টির শেষে কুহুকে বেডে সিফট করা হলো। কুহুর চোখে এখনো ব্যান্ডেজ লাগানো। একটু পরেই ওর ব্যান্ডেজ টা খুলা হবে। ভয় বিরাজ করছে সকলের মনে। রোহান তো মনে মনে রবের নাম নিয়ে যাচ্ছে। ঘন্টাক্ষানিক পর ডাক্তার আসলো কুহুর চোখের ব্যান্ডেজ খুলা হলো তারপর কুহু কে বললো আস্তে আস্তে করে চোখ খুলতে যাতে চোখের উপর কোন প্রেশার না পরে। কুহু তাই করলো আস্তে আস্তে করে চোখ খুললো প্রথমে সবকিছু ঝাপসা দেখছিলো তারপর আবার চোখ বন্ধ করে তারপর আবার খোলল এইবার সবটা ক্লিয়ার দেখতে পাচ্ছে। সবার চোখে মুখে টেনশনের ছাপ দেখা যাচ্ছে। কুহু একটু হেঁসে বললো,, আল্লাহ্ রহমতে আমি সবাইকে দেখতে পারছি। 
ও দেখতে পারছে শুনে সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। রোহান কুহুকে বললো আমি আমার প্রমিস রেখেছি কুহুপাখি। এইবার তুমি রেস্ট করো আমি একটু আসছি বলে সে চলে গেলো। রোহান তার বাড়ির সামনে এসে বললো,, আপনাদের ভাগ্য ভালো কুহু দেখতে পারছে। সো আপনাদের মেয়ের ও ট্রিটমেন্ট শুরু হবে। ডাক্তার এর সাথে কথা বলে ট্রিটমেন্ট চালু করতে বলো। একপলক ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো শরীরে বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট হয়ে আছে। রোহান একটা তৃপ্তি কর হাসি দিলো। 
রোহান আবার কুহুর কেবিনে আসলো তারপর বললো তোমরা এখন চলে যাও। ভাই এর গা এর হলুদ এর প্রিপারেশন নেও। গা এর হলুদ ও হবে বিয়ে ও হবে। 
কিন্তু কুহু? 
কুহুকে রিলিজ নিয়ে আমি নিয়ে আসবো। যাও তোমরা। রোহান রওনক এর সামনে গিয়ে বললো যাও একটু ঘুমিয়ে নেও। তারপর আর পারবে না পরে তো আবার রিচুয়েল শুরু হবে। যাও। 
রোহানের কথা মতো ওরা চলে গেলো। স্মৃতি থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু ওকে থাকতে দেয়নি রোহান পাঠিয়ে দিলো ওদের সাথে। 
রোহান এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার ঘুমন্ত পরীর দিকে। রোহান কুহুর হাত টা ধরে বললো,, 
❝ যত দেখি তোর এই মুখ 
মনে যাকে প্রশান্তি 
কেটে যায় ক্লান্তি ❞ 
বুঝলি তো কুহুরানী তুই আর আমি সেই ছোট বেলা থেকে একই বন্ধনে বাঁধা পড়ে গেছি। সময় হলে তোকে জানাবো। ঘুমন্ত অবস্থায় কুহুর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। ঘুমের মধ্যে ই কুহু খানিকটা কেঁপে উঠলো। রোহান ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উঠলো। আমার কুহু। 
বেলায় দশটায় হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে কুহুকে নিয়ে বের হলো বাড়ি যাওয়ার জন্য। রোহান আস্তে ধীরে গাড়ি চালাছে যাতে কুহুর কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। 
রাস্তায় যামে আটকালো ১ ঘন্টার মতো। তারপর আবার ঘাড়ি স্টার্ট দিলো। রোহান দেখলো কুহু ঘুমে মগ্ন তাই কুহু কে আর ডাকলো না। ডাক্তার অনেক নিয়ম দিয়েছে এক মাসের মতো। সেই নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে কুহু কে। রোহানের গাড়ি টা এসে থামলো বাড়ির বাগানে। রোহান গাড়ি থেকে নেমে তারপর কুহুকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে গেলো। রোহান তার মাকে বললো,, ও তো ঘুমিয়ে গেছে ওকে আমার রুমে নিয়ে যাই। 
রোহানে মা মাথা টা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো রোহান খুব সাবধানে সিঁড়ি পেড়িয়ে ওর রুমে ঢুকে কুহুকে শুইয়ে দিয়ে ওর উপর কম্বল মুড়ি দিয়ে দিলো। তারপর রোহান ও গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে কুহুর পাশে শুয়ে পড়লো। মাথা টা ব্যাথায় টনটন করছে এখন না ঘুমালেই নয় তাই ঘুমিয়ে গেলো। 

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ৫ পর্ব

কুহু ঘুম থেকে উঠে নিজেকে রোহানের ঘরে দেখে বেশ অবাক হলো। রোহান তখন সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। 
রোহান কুহুর দিকে না তাকিয়ে বললো,,, উঠেছিস তুই? 
হুম। কিন্তু আমি এই রুমে কেনো? 
তুই এতো বোকা কেনো আমি তোকে নিয়ে এসেছি। 
কখন আসলাম? 
তিন ঘন্টা হলো। নে এইবার উঠ ফ্রেশ হয়ে নে। আর শুন বাথরুমে গ্লিজার আছে অন করে নিবি। 
আমি আমার রুমে যাবো। 
তুই তোর রুমে ই আছিস আর একটা বেশি কথা বললে চড়িয়ে সিঁধে করে দিবো। বেডের এক পাশে যত্ন করে রাখা আছে এক সেট কাপড়। নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। আমি স্মৃতি কে বলছি খাবার দিয়ে যেতে। 
কুহু জামা নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো। 
রোহান দুই তিন বার স্মৃতি বলে ডাকতে ই স্মৃতি এসে বললো,, কি হয়েছে? 
তোর আপুমনি উঠেছে ফ্রেশ হতে গেছে চট-জলদি খাবার নিয়ে আসবি। দুটো করে মাছ আনবি। তরকারি বেশি আনবি আর ভাত টা বেশি দিবি। গরু মাংস দিবি না মুরগী দিবি গরুতে এলার্জি আছে গো ফার্স্ট। 
স্মৃতি নিচে গেলো খাবার আনতে। 
যতক্ষণ না কুহু বের হচ্ছে ততক্ষণ রোহানের মন টা উসখুস করছে। রোহানের অপেক্ষা অবসান ঘটিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো কুহু। ভিজা চুল গুলো থেকে পানি ঝড়ছে। রোহানের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা। নারীর রূপ সত্যি ই ভয়ংকর। রোহান আজ সেইটা টের পাচ্ছে। রোহান বিরবির করে বলতে লাগলো,,, এই মেয়ে টা তো আমাকে শান্তি তে ও থাকতে দিবে না দেখছি কি মুসিবত রে। উফ্ফ এই যে আমার যে এখন জামাই জামাই ফিল হচ্ছে। এখন কি হবে। এই মেয়েটা আমাকে শুধু জ্বালাছে। সব ঠিক হোক তারপর আমাকে জ্বালানোর দিগুণ শাস্তি যদি আমি তোমাকে না দিয়েছি কুহুরানী তাহলে আমি রোহান আহাম্মেদ ই না। 
রোহানের ফিলিং এর মধ্যে একটা বালতি পানি ঢেলে দিলো তার ছোট বোন টা এসে। কি জ্বালা। 
রোহান কুহুকে ডাক দিয়ে বললো,, কুহু বেলকনি থেকে ভিতর আয় স্মৃতি খাবার এনেছে। 
টেবিলের উপর খাবার টা রেখে স্মৃতি চলে গেলো। 
কুহু বেলকনি থেকে এসে চেয়ার টেনে বসে খাবারের উপর থেকে ঢাকনাটা খুলতেই ৪৪০ ভোল্টেজ এর ঝটকা খেলো খাবারের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। 
ওর তাকানো দেখে রোহানের হাসি পাচ্ছে কিন্তু রোহান না হেঁসে গম্ভীর কন্ঠে বললো,,, খাবার আনিয়েছি খাওয়ার জন্য দেখার জন্য না। দয়া করে খাবারের প্রতি নজর না দিয়ে খাবার টা গিলে আমারে উদ্ধার করেন মহারানী। 
কুহু রোহানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,, এতো খেতে পারবো না। 
সমস্যা নেই গরুর খুঞা দিয়ে গুঁতিয়ে তোর মুখে খাবার দিবো। 
চোখ বড় বড় করে রোহানের দিকে তাকাতেই রোহান বললো তোর তো খুব সাহস বেড়ে যাচ্ছে। আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাস চোখ খুলে হাত ধরিয়ে দিবো। 
ইশ্ সবে মাত্র নতুন চোখ পেলাম আর আপনি তুলে নিবেন এইটা ভারি অন্যায়। 
তুই ন্যায় - অন্যায় বুঝিছ। যদি বুঝতি তোর সাথে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতিস চুপ করে মুখ বুঁজে থাকতিস না। নে এইবার খেয়ে নে। সব টা খাবি একটা যোনো বাদ না যায় আমি এইখানেই বসে আছি। 
এতো খেতে পারবো না। 
শরীরে এক ফোঁটা ও শক্তি নেই শরীরে রক্ত শূন্য তা আর সে কিনা খেতে পারবে না চুপচাপ খেয়ে নে আমি কোন কথা শুনতে চাই না। নো মোর ওর্য়াডস। 
কুহু মুখ ভোঁতা করে চুপচাপ খেয়ে নিছি। খেতে পারছে না তবুও রোহানের ভয়ে খেয়ে নিচ্ছে। খাওয়া শেষ হতে রোহান তাকে ওষুধ খাইয়ে চোখে ড্রপ দিয়ে দিলো। 
কুহু ঘর থেকে বের হতে নিলে রোহান বললো,, কই যাস?  
আমার রুমে। 
আমি যেতে বলেছি। চুপচাপ আমার বেডে গিয়ে শুয়ে পড়। নাইলে ঢেং ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিছানায় পুতুল এর মতো বসিয়ে রাখবো। 
কুহুর শরীরে ওতো এনার্জি নেই এই লোকটার সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হবে তাই সে কম্বল গা দিয়ে শুয়ে পড়লো। 
কুহুর কৃতি দেখে রোহান ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠলো। আপসোস কুহু দেখতে পেলো না। নয়তো বলতো ছেলেরাও এতো সুন্দর করে হাসতে পারে আমার জানা ছিলো না। রোহান এঁটো প্লেট গুলো নিয়ে নিচে নেমে গেলো। তারপর সেইগুলো কিচেন এ রেখে দিয়ে  তার মা এর পাশে বসে পড়লো। 
কি হয়েছে কি ভাবছো? 
তুই যে মুন কে মা"র"লি এর যে কি প্রভাব ফেলবে সেইটা ই ভাবছি। 
আরে এতো ভাবছো কেনো? আমি আছি তো সব সামলে নিবো। 
হুম আসছে আমাদের নায়ক। 
পাশ থেকে স্মৃতি বলে উঠলো মা ভুল বলছো আপুমনির নায়ক হবে। তাই না রে ভাইয়া। 
মা তোমার মেয়ে টা দিন পেকে যাচ্ছে। ওকে শাসন করো। নয়তো আমাদে ঝামেলা হবে। 
স্মৃতি মুখ ভেংচি দিলো। 
মা ভাইয়া কোথায়? 
কোথায় আর ঘুমাচ্ছে কেনো রে দরকার? 
না দরকার না এসেছি পর থেকে দেখলাম না তাই জিজ্ঞেস করছি। 
ওহ্। 
কুহু কোথায় রে কি করছে? 
কি আর করবে ঘুমাচ্ছে। আমার রুমে ই থাকতে বলেছি। 
ভালো করেছিস। ওদের কোন খবর জানিস? 
না আমার এতো তেল নাই ওদের পিছনে খরচ করার। ওরা যেইখানে খুশি সেইখানে যাক আমার চিন্তা করার বিষয় ও না আমার ভাবার বিষয় ও না। আমার চিন্তা কুহু কে নিয়ে। ও ঠিক তো আমার জগৎ ঠিক। 
মা আমি একটু বের হবো। কুহুকে দেখে রেখো। আমি চলে আসবো। খুব দরকার তাই যাচ্ছি। 
আচ্ছা যা সাবধানে যাবি। আর তাড়াতাড়ি আসবি। 
অবশ্যই রোহান চলে গেলো তার রুমে। রেডি হয়ে কুহুর উপর ভালো করে কম্বল টা টেনে দিয়ে কপালের সাথে কপাল টা ঠেকিয়ে নাকের সাথে নাক ঘষে তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বের হওয়ার সময় মনে হচ্ছিল সে তার আত্মা টা ফেলে যাচ্ছে। তবুও যেতে হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়তো সে কখনোই যেতো না। 
সে চলে গেলো। 
------ 
বিলাসবহুল রেস্তোরাঁর কেবিনে বসে মিটিং করছে রোহান। দেখেই মনে হচ্ছে কোন গোপন মিটিং। রোহান ফাইল টা মনযোগ সহকারে দেখছে। ফাইল টা দেখে শেষ করে রোহান টেবিলের একটা কোনে ফাইল টা রেখে ওদের দিকে সরাসরি চোখে চোখ রেখে বলতে লাগলো,,ওয়েল মিস্টার সেন এইটা যেহেতু এপার আর ওপার বাংলা সমস্যা তাহলে আমাদের কে মিলেমিশে কাজ করতে হবে বুঝতে পেরেছেন। 
জ্বী মিস্টার আহাম্মেদ। আমি আমার লোকদের সব বলে দিবো সমস্যা নেই। 
আচ্ছা তাহলে আমার কাজ শেষ আমার দিক থেকে ও আপনি ফুল সার্পোট পাবেন আপনাকে হতাশ করবো না। আমি চার দিন পর থেকে কাজে লেগে পড়বো। 
অকে আমার কোন সমস্যা নেই। 
তাহলে আমি এখন উঠছি বলে চলে যেতে নিলে মিস্টার সেন বলে উঠলো আরে মিস্টার আহাম্মেদ লাঞ্চ টা করে যান। 
উঁহুম সম্ভব না ঘরে আমার বিবিজান অপেক্ষা করছে। আর ও আমার সবার আগে। 
খুব ভালোবাসেন বুঝি? 
অসম্ভব ভালোবাসি। 
আসছি বলে ফাইল টা নিয়ে চলে গেলো। গাড়ি তে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বেশ কিছুদূর গিয়ে একটা ফুলের দোকানে গাড়ি টা থামালো। তারপর ফুলের মালার দুটো সেট নিলো। তারপর আবার গাড়ি টা সার্স্টা দিলো গাড়ি টা একটা সামনের গ্রেসারির শপের সামনে দাঁড় করিয়ে বেশ কিছু চিপস,, জুস,, চকলেট,, বিস্কুট,, নুডলস কিনে নিয়ে গেলো। গাড়ি টা স্টার্ট দিলো। 
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। যত দ্রুত বাড়ি যাওয়া যায়। কুহু কে দেখার জন্য মন টা অস্থির হয়ে আছে। ইশ্ এখনো কি ঘুমাছে ও মনে হয় তো। নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন করছে আবার নিজেই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। 
----- 
নিজের রুমে এসে দেখে কুহু এখনো ঘুমাচ্ছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাক পা"গ"লি"টা তবে এখনো ঘুমাচ্ছে। দুপুর তো হয়ে গেছে এখনো ঘুমানোর কারন কি? আচ্ছা ঘুমাগ আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নেই তারপর ওকে উঠাবো। স্মৃতি এই স্মৃতি এই দিকে আয় তো একটু শুনে যা। ভাই এর ডাক শুনে স্মৃতি রুমে আসলো,,, বলো ভাইয়া ডাকছিলে। 
হুম ডাকছিলাম। এই প্যাকেট চিপস,, জুস,, আর বিস্কুট আছে তোর রুমে বৈয়াম এর ভিতর রেখে দিবি আর এইটা তোর আপুমনির জন্য এইটা সুন্দর করে একটুগুছিয়ে রেখে দিস। আর এইখানে একটা ফুলের সেট আছে এইটা তোর জন্য ভাই এর হলুদে পড়বি। 
কিন্তু ভাইয়া আদোও কি হলুদ হবে। বাড়ির কেউ তো বাড়িতে নেই। 
যারা নেই তো নেই তাদের নিয়ে ভেবে লাভ নেই। আর বিয়ে টা একটা মেয়ের স্বপ্ন এখন যদি এই স্বপ্ন টা অন্য কারও দোষে ভেঙ্গে যায় কষ্ট হবে না। 
কিন্তু বাবা না কি ফোনে করে বলে দিয়েছে বিয়ে টা পিছাতে। 
না আমি ফোন করে বলে দিবো ঘরোয়া ভাবে হবে। ভাই এর গা এ হলুদে আমার ফ্রেন্ড আর ভাই এর ফ্রেন্ড থাকবে আমি,, তুই,, কুহু আর মা ব্যাস আর কি চায়? কারা থাকবে না এটা নিয়ে ভাববি না। আর শুন এইটা তে এক প্যাকেট নুডলস আছে এইটা ও কুহুর ঘরে রেখে দিবি তোরা যখন রাখে মুভির প্ল্যান করবি তখন বানিয়ে খেতে পারবি। আমি ইন্ড্রেকশন কুকার এনে দিবো পরে। 
স্মৃতি খুশি তে তার ভাই কে জড়িয়ে ধরে বললো,, থ্যাংকস ভাইয়া। 
হয়েছে এইবার ছাড় আমি ফ্রেশ হয়ে নেই। 
স্মৃতি তার ভাইকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো হাতে শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে। 
রোহান আলমারি থেকে ড্রেস টা নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে কুহুকে ডেকে তুলে তারপর ফ্রেশ হতে পাঠালো। কুহু আসতেই কুহুকে নিয়ে নিচে নামলো। কুহু তার খালামনির পাশে বসলো। রওনক কুহুর মাথায় হাত রেখে বললো,, কি রে বুড়ি কেমন আছিস?? 
আলহামদুলিল্লাহ। 
রোহান তার মা কে বললো মা এই দিকে আসো একটু। রোহানের ডাকে তিনি বসা থেকে উঠে টেবিলের কোনায় গিয়ে দাঁড়ালে রোহান তার মা কে বললো,,, মা পাত্রীর বাড়িতে ফোন করে বললো বিয়ে টা যথা সময়ে হবে। আর আজ হলুদ সন্ধ্যা টা ও হবে। 
একজনের ভুলের দশজনের সাফার করার কোন মানে হয় না। 
রোহান আর একটা কথা শুন?  
কি কথা? 
তোর মামার আজ আসবেন সন্ধ্যায়। 
তো..! 
কুহুকে দূরে দূরে রাখিস। মামী তো আর ভালো না ওই বাড়িতে থাকাকালীন মেয়েটার উপর অনেক টর্চার করেছে তাই তো ওকে নিয়ে আসা। 
ঠিক আছে চিন্তা করো না সামলে নিবো। এখন আমাদের খাবার দেও ক্ষিধে পেয়েছে। 
ঠিক আছে আয় বস তোরা। 
রোহান চেয়ার টেনে বসে সবাইকে ডাক দিলো তারপর সবাই বসে পড়লো খাওয়া জন্য। 
------- 
হসপিটালে বসে সবাই অপেক্ষা করছে কখন মুন ঠিক হবে। এমনিতে জ্ঞান ফিরলেও শরীরে ব্যাথা আছে। ব্যাথা থাকার ও কথা শরীরে যে ঠান্ডা পানিতে চাবুক টা দিয়ে মে"রেছ। 
রোহানের ফুফু আর ফুফুর দুই ছেলে বসে বসে রাগে ফুঁসছে। যেইভাবেই হোক রোহানের ক্ষতি ওরা করে ই ছাড়বে। রোহানের জন্য আজ ওর বোন টা হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। এই সুদ তো তুলবে ই। সুলতানা সিকদার রোহানের বাবা আর চাচার সামনে এসে বললো,,, এইভাবে চলতে থাকলে রোহান আমাদের জন্য একটা থ্রে"ট হয়ে দাঁড়াবে আপনি বুঝতে পারছেন তো ভাইয়া। 
হুম খু্ব বুঝতে পারছি। 
তাহলে আমাদের উচিৎ ওর লাগাম টা শক্ত হাতে টেনে ধরা। 
আগে মুন সুস্থ হোক তারপর দেখি কি করা যায়। 
মেয়েটা কে কিভাবে মা"র"লো ভাবলে ই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। 
যতই হোক বংশ তো কথা বলবেই তাই না। জমিদার বংশের রক্ত বলে কথা গরম তো থাকবে ই। 
তাহলে তুমি কি ভুলে যাচ্ছো ভাইয়া সেই একই জমিদার বংশের মেয়ে আমিও তোমার ছেলে কে এর মূল্য দিতে হবে কঠিন মূল্য দিতে হবে। সাপের লেজে পা দিয়েছে তখন ছোঁবল টা তো খেতে হবে ই কথাটা বলে রাগে ফুঁস ফুঁস করছে রোহানের ফুফু। 
----- 
কুহু এখন তার নিজের রুমে অনেক কষ্টে সে তার রুমে এসেছে যেনো যুদ্ধ জয় করে আছে। ড্রয়ার টা খুলে ফোনটা হাতে নিলো ফোনটা হাতে নিয়ে হতাশ হলো অবহেলায় ফোনটা চার্জেহীন অবস্থায় পরে আছে। ড্রয়ার থেকে চার্জার টা নিয়ে ফোনটা চার্জে দিলো। তারপর সে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। বাহির টা অনেক সুন্দর সাজানো হয়েছে। কুহু হঠাৎ করে গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বাবা বাবা বলে ডাকছে। আর লোকটি ও মেয়েটি কে পরম আদরে যত্নে নিজের কাছে নিলো। আজ যদি কুহুর বাবা ও বেঁচে থাকতো তাহলে কুহুকে ও তো আদর করতো। ওর মাথার উপর ভরসার একটা হাত থাকতো। ছায়া থাকতো। আজ তার বাবা নেই বলে সে অবহেলার পাত্রী আর মা সে তো থেকে ও নেই। সে তার নতুন জীবন টা নিয়ে খুব হ্যাপি আছে। মাঝখানে খড়কুটোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে কুহু। যদি কুহু জানতো কেউ একজন আছে তাকে পাগলের মতো করে ভালোবাসে তাহলে কুহু এইটা ভাবতে ও পারতো না। 
এক জোড়া দৃষ্টি যে তাকে প্রতিনিয়ত নজরে রাখছে সেইটা তো আর জানে না। 
কুহু ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বারান্দা থেকে রুমে এসে রুমের সব দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে একদম অন্ধকার করে দিয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। ও ঘুমিয়ে পড়তেই রোহান কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,, তুই একা নস কুহুপাখি আমি আছি তো তোর পাশে অন্ধকারে আলো আর আলো তে তোর ছায়া হয়ে। আমার দু বাহু টা মেলে দিয়ে তোকে জড়িয়ে নিবো। তোর পিছু আমি ছাড়বো না কথা টা বলে কুহুর কপালে চুম্বন করে চলে যায়। সামনে ওর অনেক কাজ আছে। 
--- 
যথারীতিতে শুরু হলো গা এর হলুদ এর অনুষ্ঠান। কুহু খু্ব সুন্দর করে হলুদ শাড়ী পড়েছে কোন সাজ গুজ নেই শুধু ফুলের গহনা আর ঠোঁট এ লিপস্টিক। কপালে এখনো ব্যান্ডেজ। রোহান কুহুর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সবার আগে সে কুহু কে দেখবে এবং সাথে করে নিয়ে যাবে। কুহু রেডি হয়ে দরজা টা খুলে রোহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে গেলো। কুহু রোহানের দিকে তাকিয়ে আছে রোহানের চোখে চোখ রাখলো এই প্রথমবার রোহানের চোখে ছিলো অন্য কিছু। সেই নেশাক্ত চোখ দুটো যেনো কুহু কে কিছু বলছে। এই চোখে তাকিয়ে থাকার সাধ্য কুহুর নেই। কুহু সর্বাঙ্গে যেনো কাঁটা দিয়ে উঠলো। কুহুর বুক টা ও কেমন করে উঠলো এক মূহুর্তে মনে হতে লাগলো সে হার্টের রুগী। দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো। 
রোহান বলে উঠলো মাশা-আল্লাহ। পকেট এ হাত দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা বের করে কুহুর হাতে দিয়ে বললো,, আমি মুগ্ধ হয়ে আমি খুশি হয়ে তোকে দিলাম। 
কুহু হাত সড়িয়ে নিতে নিলে। রোহান চোখ পাকিয়ে তাকায়। রোহান কে চোখ পাকিয়ে তাকাতে দেখে আর কিছু বললো না। রোহান কুহুর নরম তুলতুলে হাত টা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো চল একসাথে যাই। 
আমি একা হাটতে পারবো। 
তুই বেশি কথা বলিস তোর ঠোঁঠ দুটো আমি সিলাই করে দিবো বুঝলি। নে চল সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। 
ওরা চলে এলো বাগানের মধ্যে। বাগানের একটা পাশে সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে। কুহু দেখতে পেলো তার মামা মামী আর মামাতো ভাই এসেছে। মামীকে দেখে কেমন যেনো গুটিয়ে গেলো কুহু। রোহান কুহুকে এমন গুটিয়ে দেখতে বললো,, ভয় পাওয়ার কি আছে বাঘ না ভাল্লুক যে তোকে গিলে খাবে। যা গিয়ে ভাই এর পাশে বস আমি আসছি কথাটা বলে রোহান গেটের দিকে গেলো কুহু গিয়ে তার ভাই এর পাশে বসলো। 
রওনক বিনিময়ে হাসলো।
 স্মৃতি কুহুকে বললো,, আপুমনি তোমাকে অনেক সুন্দর দেখা যাচ্ছে। 
কি যে বলো,, আমি তো সাজি নি তাহলে সুন্দর কি করে লাগবে? 
তুমি নেচারাল সুন্দর। তাই তোমাকে কোন কিছু ইউজ করতে হয় না। 
কুহু মিষ্টি একটা হাসি দিলো। 
রোহানের গেটের সামনে আসার কারন সে দেখতে পেয়েছে তার বাপ,, চাচা,,চাচি,,চাচাতো বোন,, খালা,, সৎ খালু হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরছে তাই গেটের সামনে এসে দাঁড়ানো কাঁটা গা এ নুনেরছিটে দেওয়ার জন্য। 
রোহানের বাবা রোহানকে দেখে বললো,,, গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? 
কেনো আবার আপনাদের ওয়েলকাম করতে। তা অটোতে আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো। 
বেয়াদব ছেলে এইসব তোর কাছ। 
আরে কুল কুল মিস্টার আহাম্মেদ এতো হাইপার হওয়ার কি আছে। বেশি হাইপার হলে আপনার প্রেশার টা না আবার বেড়ে যাবে। 
ওর সাথে আর কথা না বাড়িয়ে ওরা গেট টা পেরিয়ে বাড়ির ভিতরে গেলো ফ্রেশ হওয়া দরকার। 
রোহান ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। ও ফোন করে সোহেল কে বলেছিলো কিছু লোক পাঠাতে আর ওদের বাড়ির গাড়ির সকল চাক্কা যেনো খুলে নেয়। ব্যাস খুলে নিলো তার কথা মতো। এই আর কি। 
রোহান গেট থেকে স্টেজ এসে দাঁড়িয়ে তার মাকে বললো হলুদ অনুষ্ঠান শুরু করতে। রোহানের মা ও তাই করলো রওনকের গালে হলুদ ছোঁয়ালো। 
তারপর ছোঁয়ালো ওদের মামা আর মামী। তারপর ছোঁয়া স্মৃতি তারপর কুহু তারপর রোহান। এখন আসবে রওনকের বন্ধুরা। 
রোহান কুহুর পাশে বসে বাটি থেকে হলুদ টা নিয়ে প্রথম সে তার গালে ছোঁয়ালো তারপর সেইখান থেকে অল্প একটু হলুদ নিয়ে কুহুর কোমরের সাইড থেকে একটু শাড়িটা সড়িয়ে সে কুহুর কোমরে লেপে দিলো হঠাৎ রোহানের এই স্পর্শে কুহুর শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে পুরো শরীরটা কেঁপে উঠলো মৃগী রোগীদের মতো। কুহু সরে যেতে নিলো রোহান বললো,, একদম মেরে ফেলবো আমার থেকে দূরে সড়বি না এইখানেই থাক। 
কুহুর গালে নিজের গালটা ঘষা দিয়ে ওর গাল থেকে কুহুর গালে হলুদ দিলো। স্মৃতি এই মোমেন্ট টা মিস করতে চায় না তাই সবার অলোকে ফোনে ক্যাপচার করে নিলো। 
এখন সবাই রওনকের বন্ধুরা আর রোহানের বন্ধুরা সবাই রোহান কে আবার চেপে ধরে বললো গান শুনাতে। রোহান কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,, কি রে গাইবো? 
সবার সামনে এইরকম কান্ডে কুহু লজ্জায় মাথায় নিচু করে রেখেছে। রোহান উচ্চস্বরে গা কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। কুহুর ও কিন্তু গানের কন্ঠ বেশ ভালো আমি চাই ওও আমার সাথে গাক। 
সবার জড়াজড়িতে কুহুও বাধ্য হলো গান গাইতে। 
রোহান গিটার হাতে নিয়ে টুংটাং করে বাজাছে,, 
মাইক এর সামনে চেয়ার দুটো চেয়ারে বসে আছে কুহু আর রোহান। 
তুমি হৃদয়ের আয়না 
তুমি চাঁদের জোছনা নও
তুমি ফুলের উপমা নও
তুমি চাঁদের জোছনা নও
ফুলের উপমা নও
নও কোন পাহাড়ি ঝর্ণা
আয়না.......
তুমি হৃদয়ের আয়না
তুমি সাগর নীলিমা নও
তুমি মেঘের বরষা নও
তুমি সাগর নীলিমা নও
মেঘের বরষা নও
তুমি শুধু আমারই গয়না
আয়না.......
আমি হৃদয়ের আয়না
কবির লেখা যত কবিতা
শিল্পীর আঁকা যত ছবি
তোমার তুমির কাছে
হার মেনে যায় যেন সবই
সাঁঝের বেলা রাঙ্গানো তুলি
বর্ষাকালের ভরা নদী
তোমার রূপের কাছে
হার মেনে যায় যেন সবই
তুমি সাগর নীলিমা নও
তুমি মেঘের বরষা নও
তুমি সাগর নীলিমা নও
মেঘের বরষা নও
তুমি শুধু আমারই গয়না
আয়না..... 
আমি হৃদয়ের আয়না
বাবুই পাখির সাজানো বাসা
ময়না পাখির কথাগুলো
তোমার গুণের কাছে
সবকিছু হার মেনে গেলো
ভালবাসার রূপালী তারা
সূর্যের মাঝে যত আলো
তোমার প্রেমের কাছে
সবকিছু হার মেনে গেলো
তুমি চাঁদের জোছনা নও
তুমি ফুলের উপমা নও
তুমি চাঁদের জোছনা নও
ফুলের উপমা নও
নও কোন পাহাড়ি ঝর্ণা
আয়না.......
তুমি হৃদয়ের আয়না
আমি হৃদয়ের আয়না
তুমি হৃদয়ের আয়না
আমি হৃদয়ের আয়না.. 
দূর থেকে ওদের খুশিটা দেখে কেউ জ্বলে উঠছে। মনে হচ্ছে এখনি কুহুকে মে"রে পেললে শান্তি পাবে। 

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ৬ পর্ব

আজ শুক্রবার পবিত্র জুম্মার দিন। জুম্মার নামাজ এর শেষে বিয়ে হবে রওনক আর শ্রাবনীর। খুব ধুমধামে বিয়ে টা হবে না। হবে শুধু ঘরোয়া ভাবে। কুহু খুব সুন্দর করে সেজে ঘর থেকে বের হতে মৌ এর সাথে দেখা হলো। মৌ কোন কিছু বললো না উল্টো দেখে ও না দেখার ভান করে চলে গেলো। 
কুহু ভাবছে ওর হলো টা কী? কুহু দাঁড়িয়ে থাকতে স্মৃতি কুহুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,, আপুমনি আমার ওড়নাতে পিন আপ করে দিবে আমি পারছি না। 
কুহু ক্ষানিকটা হেঁসে বললো,,, তুমি শুধু হাতে পা এই বড়ো হয়েছে এখনো বাচ্চা টি ই আছো। 
পিছন থেকে রোহান বলে উঠলো বুঝলি স্মৃতি আমাদের কুহু অনেক বড়ো হয়ে গেছে ও একটা বাচ্চা মা। 
কুহু বুঝে পায় না এই ছেলেটার সমস্যা কি সবসময় কুহুর দোষ ধরে। 
তা কুহু ম্যাডাম আপনার বয়স কত? 
১৮ 
বাহ্ খুব ভালো এই ১৮ বয়সে আপনার মনে হয় আপনি অনেক বড় হয়ে গেছেন। আমার তো মনে হয় নাক টিপ দিলে এখন দুধ বের হবে। 
ওদের কথার মাঝে রওনক উপস্থিত হয়ে পড়লো। রওনক বললো,, প্লিজ রোহান দয়া করে ওর পিছন লাগিস না। ওকে ওর মতো থাকতে দে। 
সমস্যা কি ভাই তোমার? আজ কিন্তু তোমার বাসর রাত। মনে রেখে আমি যদি একবার তোমার প্রতি রেগে যাই তাহলে তোমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুখ টা আর দেখা হবে না। 
থতমত খেলো রওনক। 
রোহানের মুখে এইরকম কথা শুনে লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো। আর স্মৃতি ওতো মাথা নিচু করে ঠোঁট টিপে আসছে। 
ছোট বোনদের সামনে এহেন কথায় চরম অস্তিত্বে বললো তাড়াতাড়ি আয় নামাজ পড়ে যেতে হবে ও বাড়িতে। 
রোহান বললো,,, ইশ্ ভাইয়া তোমার তো আর তড় সইছে না। 
বেশরম। এক মাঘে শীত যায় না আমার দিন আসবে রেডি থাকিস। 
রোহান বললো,, সে দেখা যাবে। 
বাড়ির সব পুরুষ গুলো মিলে নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে রোহানের। রোহান সিঁড়ি দিয়ে নামতেই রোহানের বাবা বললো আসছে আমাদের রাজপুত্র। 
নিঃসন্দেহে আমি রাজপুত্র ই। তা নামাজে যাচ্ছেন পবিত্র মন নিয়ে যান আর আল্লাহ্ কে বলুন আপনার সকল পাপের জন্য আপনাকে যেনো ক্ষমা করে দেয়। আচ্ছা এমন কলুষিত হৃদয় নিয়ে আল্লাহ্ দরবারে কিভাবে যাবেন আপনার হৃদয় কাঁপবে হৃদয়ে ভয় জড়ো হবে না। আপনার এই অপবিত্র হাত দিয়ে আল্লাহ্ জিনিস ছুঁইবেন আপনার এই পাপিষ্ঠ হাত টা কেঁপে উঠবে না। 
তুমি এইবার বেশি বেশি করছো ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার পিতা হই। 
ওখানেই আমার কষ্ট আপনাকে নিজের পিতা বলে পরিচয় দিতে আমার ঘৃনা লাগে পারলে তো পাপীর রক্ত মুছে দিতাম। কিন্তু সমস্যা নেই পাপের রক্ত ই পাপ কে বিনাশ করবে আপনি তৈরি হন বিনাশের সুর বাজছে বৈকি। 
আহ্ রোহান কি শুরু করলি ভাই চল তো নামাজে যাই কথা টা বলে রওনক রোহান কে টেনে নিয়ে গেলো। 
ওরা মসজিদ এ আসলো। মসজিদের হুজুরে পিছনে হাজারো মানুষের সাথে দাঁড়ালো নামাজ আদায় করতে। একমাত্র এই একটা জায়গায় কোন ভেদাভেদ নেই। সকল শ্রেনীর মানুষ সমান। দুনিয়া টা তে মাত্র দুই দিনের আজ আছে কাল নেই তাও মানুষের মনে খোদা ভীতি তৈরি হয় না। মানুষ শয়তানের প্রবচলায় জড়িয়ে পরে হাজারও পাপে। আল্লাহ্ সকলকে হেদায়েত দান করুক এইটাই আমাদের চাওয়া এইটাই চাওয়া। 
প্রশান্তি মনে বের হলো রোহান। দুই ভাই হেঁসে হেঁসে কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে মসজিদ বেশি দূর নয় মাত্র ১০ মিনিট এর রাস্তা। 
অবশেষে বাড়ি এসে গম্ভীর পরিবেশ দেখতে পেলো। রোহানের চাচির সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে কুহু। রোহানের চাচি কুহুর দিকে আঙুল তাক করে চোখ পাকিয়ে বললো,,, কাক কখনো ময়ূর হয়না কাক কাকই থাকে। 
রোহান বেশ গম্ভীর কন্ঠে বললো তাই না কি চাচি কুহু কাক হলে আপনি কি? কুহু তো রূপে গুনে গুণবতী কিন্তু আপনি? আপনার না আছে গুণ আর না আছে রূপ। বুঝলাম না চাচা আপনাকে কি দেখে পছন্দ করেছে? 
রোহান তুমি কার সাথে কাকে মিলাছো বলো তো? কোথায় ও আর কোথায় আমি? 
ওর জুতার যোগ্য ও না। 
এক ঘর ভর্তি মানুষের সামনে এমন কথা টা শুনে অপমানে গা টা রিরি করে উঠলো। তিনি আর কিছু না বলে যেতে নিলে রোহান খুব সর্তক পূর্ণ সাথে তার ডান পা টা একটু এগিয়ে দিতে তিনি হোঁচট খেয়ে পরে গেলো আর পরলো তো পরলো তাও কুহুর পা এর সামনে। 
কুহু ওনাকে ধরে তুলতে নিলে রোহান চোখ গরম করে বললো খবর দার কুহু ভুলে ও এই দজ্জাল মহিলা কে তুই ছুঁবি না। যার যার কর্ম ফল সে সে ভোগ করবে। ওনি একাই উঠে যাবে। যা রেডি হওয়ার কিছু বাকি থাকলে হয়ে নেয় আমরা এখনি বের হবো। 
কুহু আর কিছু না বলে রোহান কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে রোহান স্লো ভয়েস এ বললো,, শাড়ি পড়েছিস ভালো কথা বাট শাড়ির ব্যাধ করে যেনো শরীরের একটা পার্ট ও দেখা না যায়। যদি দেখা যায় তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আর আর একটা কথা তোকে যেনো কোন ছেলের আশে-পাশে বা ছেলেদের সাথে কথা বলতে না দেখি। ১০০ হাত দূরে থাকবি যদি দেখি তাহলে কিন্তু তোকে আমার ক্রোধের আগুনে পুড়িয়ে মা"র"বো। কথা টা তো মাথায় ঢুকিয়ে নিস বলেই চলে গেলো। 
কুহু চোখ বড় বড় তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,, ও আল্লাহ্ গো কি তেজ। কিভাবে শীতল গলায় থ্রে"ট দিয়ে গেলো। 
------------------- 
সোফায় বসে আছে সবাই আবার কিছু সংখ্যক লোক চেয়ারে বসে আছে। আনাচে কানাচে মানুষের ছিটাছিটি। তবে এ-ই বাড়িতে মেয়ের থেকে ছেলের সংখ্যা বেশি। রোহানের বেশ রাগ লাগছে কারন এইখানে প্রতিটা ছেলেই সুর্দশন যুবক। কুহু না আনলে ও পাড়তো। এখন যদি কোন পুরুষের নজর তার নাদান বউ এর উপর তাহলে তো হলো ও। রোহান একবার কুহুর দিকে তাকিয়ে দেখলো কুহু হাসছে। এ্যাঁ দাঁত ভেটকাছে দেখো কই আমার সামনে থাকলে তো কখনো হাসতে দেখি না। ওর ওদের সামনে হাসছে দেখো সমস্যা নেই বাসায় যেয়ে নেই তারপর তোকে ধরবো। 
কাজি এসে উপস্থিত হতে পরিবেশ টা বেশ পাল্টে গেলে। হাসি খুশি পরিবেশ টা জানান দিচ্ছে বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে। 
কাজি নিয়মানুসারে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। আজ রোহানের ও স্মৃতির পেক্ষাপট ভেসে উঠছে সেই স্মৃতি। সেই স্মৃতিতে ছোট গুলুমুলু কুহু টা লাল একটা জামা পড়া আর লাল ওড়না মাথায় দেওয়া। আঙুল টা ধরে আছে রোহানের। তারপর তারা মসজিদে গিয়ে বিয়ে টা পড়ে নেয়। সাক্ষী হিসেবে ছিলো ওর মা আর ভাই। এখন হয়তো কুহুর মনে নেই। তাতে কি কিন্তু রোহানের তো সব মনে আছে। ছোট কুহুটাকে একনজর দেখার জন্য তার কত-শত ছটফটানি দম বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি কেই বা জানতো তার এই কুহুটা এখন যৌবনে পা দিয়েছে। হাসলে কি সুন্দর টোল পড়ে। মনে হয় সেই সময় গাল টা টেনে দেই। রোহান তার ভাবনায় ব্যস্থ এই দিকে খেয়াল ও নে যে সে তার ভাই এর বিয়ে বাড়িতে এসেছে। সে খেয়ালে ডুবে আছে তার প্রেয়সীর। যখন সবাই মিলে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো তখন রোহান মাশা-আল্লাহ বলে উঠলো। রওনক রোহানের কানে কানে বললো ভাই আমার তুই তো পুরো দেওয়ানা হয়ে গেছিস। এখন তো আমার বিয়ে কমপ্লিট হয়ে গেলো। 
রোহান বাম ব্রুঁ টা কুঁচকে ফেলে বললো হয়ে গেছে। 
রওনক পাড়ে না কপাল চাপড়াতে। 
অবশেষে নতুন বউ নিয়ে রওনা দিলো তারা। নতুন বউ এর সাথে তার বাপের বাড়ি থেকে একজন এসেছে নাম স্বপ্নীল শেখ। রোহানের মোটেও পছন্দ হলো না কিন্তু ভাই এর শ্বশুর বাড়ি বলে কথা সিনক্রিয়েট করতে চায়নি তাই চুপচাপ হজম করে নিয়েছে কিন্তু কুহুকে সবার অগোচরে ঠিকই সাবধান করে দিয়েছে ওর আশেপাশেও যেনো না থাকে। কুহু গাড়ির এক সাইডে বসে আছে জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাহিরে টা দেখছে। 
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। হঠাৎ কুহুর ফোন টুং করে একটা মেসেজ আসলো কুহু ফোনটা বের করে মেসেজ টা দেখলো তার ফ্রেন্ড সার্কেলের গ্রুপ থেকে। মেসেজ টা দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। রোহানের কপালে চিন্তা ভাঁজ পড়লো। কার এমন মেসেজ যার জন্য সুন্দর একটা মুচকি হাসি দিলো। তার মনে কোনে উঁকি দিলো,, বউ টা আমার পরকীয়াতে জড়ালো না। হায় আল্লাহ্ এখন তার কি হবে,,, না স্বামী হিসেবে তার একটা দায়িত্ব আছে না বউ কে সামলে চলা। 
--- 
বউ নিয়ে বাড়ি আসতে আসতে রাত ৮ বেজে গেছে। নতুন বউ কে তারা অন্য একটা রুমে বসিয়ে রোহানরা লেগে পড়লো বাসর সাজাতে। সিম্পল এর মধ্যে সাজাবে যাতে তাড়াতাড়ি হয়। কুহু আসতে নিলো রোহান বাঁধা দিয়ে বলে খবদার এইখানে আসবি না। এইটা বড়দের জায়গা বাচ্চাদের নয়। 
আমি মোটেও বাচ্চা নই। 
না তুমি কেনো বাচ্চা হবে তুমি তো বাচ্চার মা। 
আপনি কি জানেন আপনি একটু বেশি কথা বললেন। 
হুম জন্ম থেকেই অভ্যাস করে নে। তোকেই সামলাতে হবে। 
আমি কেনো সামলাবো আপনার বউ সামলাবে। 
রোহান খুব সুন্দর করে আস্তে করে বলে উঠলো তুই ই তো আমার বউ। 
কুহু আর কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলো। রাজীব আর সজীবের সামনে পড়লো। রাজীব ইচ্ছে করে কুহুকে ধাক্কা দিলো। কুহু পরে যেতে নিলে সজীব ধরে নিলো। তারপর আস্তে করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো সরি। 
বিনিময়ে কুহু মাথা নেড়ে চলে গেলো। 
ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো ওরা দুই ভাই। যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। 
বাসর সাজানো শেষ হলে ডিনার করছে সবাই। রোহানের পাশে বসে আছে কুহু। কুহুর যেই না মাংসে কামড় টা দিলো ঠিক সেই সময় পাখির মতো ছুঁ মেরে নিয়ে ওর খাওয়া মাংসের টুকারা টুকো রোহান নিয়ে টুপ করে মুখের ভিতর দিয়ে চোখ বন্ধ করে চিবিয়ে খাচ্ছে। 
এই ঘটনায় কার কি প্রভাব পড়লো কুহুর জানা নেই কিন্তু কিহুর উপর মারাত্মক প্রভাব পড়লো। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রোহানের দিকে। রোহান কুহুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো কি হয়েছে তাকিয়ে আছিস কেনো? মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবি। চোখ দিয়ে আমায় গিলে না খেয়ে খাবার টা গিল। 
আমার এঁটো করা মাংসের টুকরো টুকু আপনি নিলেন কেনো? 
লেখা ছিলো তোর ও আমি জানতাম না মাত্রই চিবিয়েছি এখন আছে মুখে চিবুচ্ছি তোকে বের করে দিবো মুখ থেকে তুই খাবি। 
ছিহ্ ওর্য়াক। আপনি ই খান আমি অন্য টা খাচ্ছি। 
রোহানের এমন ব্যবহার ঠিক হজম হচ্ছে না কুহুর। কুহু কোন রকম খেয়ে চলে গেলো তার রুমে। শরীল টা বড্ড ক্লান্ত লাগছে শরীল টা জানান দিচ্ছে তার এখন শুয়ার দরকার। কুহু লাইট টা অফ করে ড্রিম লাইটটা জ্বালিয়ে তারপর শুয়ে পড়লো। 
গভীর রাত সবাই শুয়ে আছে। রোহান চুপিসারে কুহুর ঘরে গেলো। কুহুর নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনা যাচ্ছে। 
কুহুকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রোহানের গরম নিঃশ্বাস আঁচড়ে পড়ছে কুহুর মুখে ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে। 
রোহান বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলতে লাগলো,, আমি তো তোমায় কিছু করি নাই এখনো তাহলে কাঁপছো কেনো? এই মায়াবতী। কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছো তুমি। অন্যের ঘুম টা কেড়ে নিয়ে। কুহুর উপর আধশোয়া হয়ে কুহুর ঠোঁটের উপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললো,,, 
❝ আমার প্রিয়তমা স্ত্রী,, 
ঘুমাও তুমি নিশ্চিন্তে আমি আছি তো 
সারাক্ষণ তোমার সঙ্গে ❞ 
কথাটা বলে গভীর চুম্বন করে ওর উপর থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। 
নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লো রোহান। 
সকালে কুহু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো। পড়াটা কমপ্লিট করে ব্যাগ এ বই গুঁছিয়ে বের হয়ে গেলো নাস্তা করতে। রোহানের পাশের চেয়ারে ই বসতে হবে কুহুকে এইটাই আদেশ রোহানের। বাড়িতে তিন টা কাজের লোক থাকাতে বেশ সুবিধা হয়েছে। রোহানের মার আর কুহুর রান্না ঘরে যেতে হয় না। 
নতুন বউ শ্রাবনী তেমন ভাবে কাউকে চিনে না। আর নতুন বলে একটু লজ্জা লজ্জা ভাব আছে। কুহুর সাথে চোখাচোখি হলো শ্রাবনীর। কুহু বিনিময়ে একটু মিষ্টি করে হাসি দিলো। শ্রাবনী ও হাসলো। 
স্বপ্নীল কুহুকে দেখে বললো,, আরে বিয়ান যে তা কোথায় যাচ্ছেন? 
কলেজ ড্রেস পড়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আর কোথায় যেতে পারে ওর ড্রেস আপ দেখে বুঝা উচিৎ। ভাবীমা তুমার এখানে কোন অসুবিধা হচ্ছে নাতো। 
শ্রাবনী বললো,, না ভাই হচ্ছে না। 
আচ্ছা হলে আমাকে জানিয়ো। আর প্রয়োজন পড়লে ভাই এর নামে ও বিচার দিতো পারো সমস্যা নেই আমি শাসন এ ওস্তাদ। 
স্মৃতি ফিক করে হেঁসে দিলো। 
রোহানের চাচি খাবার টা মুখে দিতে ই বললো,,, এ মা খাবার টা একটু ও মজা হয়নি বলে প্লেট টা ছুড়ে মারলো। 
রোহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো চাচি উঠেন। 
কিন্তু বসেই রইলো রোহান টেবিলে জোড়ে হাত দিয়ে বারি দিয়ে বললো,, ইস্ট্যান্ডে আপ। 
রোহানের চাচি উঠে দাঁড়ালো। 
তারপর রোহান বললো যেই খাবার টা ফেলেছো সেই খাবারের জন্য মানুষ কত টা যুদ্ধ করে তোমার কোন ধারণা আছে। অনেকে খালি পেটে রাত্রি যাপন করে তার কোন আইডিয়া আছে। মুখের সামনে সব পাও তো তাই সব হুঁশ হারিয়ে ফেলো। এই ফেলে দেওয়া খাবার টা ই তুমি খাবে কোন কথা শুনতে চাই না। আর সবাই শুনে রাখো তিন দিন আগামী তিন দিন আমাদের অর্কমা ঢেঁকি অশ্রেদ্ধেয় চাচি আম্মা কোন প্রকার খাবার পাবে না। আমি আবার দয়াবান ব্যক্তি তো তাই পানি খাওয়া টা না করতে পারি না শুধু পানি খেয়ে থাকবেন আসি এই কুহু তোর দেরি হচ্ছে না আয় তোকে পৌঁছে দেই। আর গাইসে ক্যারি অন। আর স্মৃতি তুই খেয়াল রাখবি যাতে এই খাবারের পর পানি ছাড়া আর কোন খাবার চাচি না পায় কথা টা বলে কুহু কে নিয়ে চলে গেলো। 
সবার চোখ জোড়া রোহানের প্রতি। রোহান যেতেই সবাই একটা বড় করে শ্বাঃস নিলো। এতোক্ষণ সবার মনে হচ্ছিলো কোন ঝড়ের সম্মুখে পড়েছিলো। এখন সেই ঝড় টা কেটে গেছে। 

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ৭ পর্ব

কুহুর কলেজের আশপাশ দেখেই বিরক্তি তে "চ" উচ্চারণ করলো। কলেজের পাশে টং এ দোকান মানুষ আড্ডা দিচ্ছে তার পাশে একটা ছাউনি সেইখানে ছেলেরা ক্যারাম খেলছে। 
কুহু তুই কি আদোও ভালো করি পড়িস। নাকি পড়াতে ফাঁকি দিস। 
হঠাৎ এমন প্রশ্নে কুহু তব্দা খেয়ে গেলো। সে রোহানের  দিকে তাকালো এই নিয়ে দ্বিতীয় বার এর মতো কুহু তাকালো রোহানের চোখে। ধাড়ালো সূঁচ এর মতো তার চোখ গুলো। এই চোখের দিকে তাকাতে কুহুর কলিজাতে গিয়ে লাগে। ফের আবার চোখ নামিয়ে বললো,, আমি কোন ফাঁকি দেই না। A+ পেয়ে পাস করেছিলাম। 
A+ পেয়েও কি তোর ভাগ্যে ভালো কোন কলেজে জুটে নাই। এমন বাজে কলেজে চান্স পেলি। 
জুটেছে বাড়ির সামনে এইটা তাই এইটাতেই ভর্তি হয়েছি। 
আচ্ছা যা। এই শুন? 
হুম..!  
তোর কলেজ কখন ছুটি হবে ৪ টায়। 
কিন্তু আজ তো বাড়িতে অনুষ্ঠান তাড়াতাড়ি ফিরবি না। 
নাহ্ আজ ক্লাস গুলো করতেই হবে। সামনে পরীক্ষা। আসছি আমি বলে চলে যেতে নিলে রোহান কুহুর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তারপর পকেট থেকে মানিব্যাগ টা বের করে সেইখান থেকে কিছু টাকা বের করে কুহুর হাতে ধরিয়ে দিলো। 
আরে কি করছেন লাগবে না তো টাকা। 
তো লাগবে কি লাগবে না আমি জিগাইছি। আমার মন চাইছে আমি দিছি এখন এইটা লাগানো না লাগানো তোর ব্যাপার। 
রোহান কে ভাষায় কথা বলতে দেখে কুহুর চোখ কপালে উঠার মতো হলো। 
কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা।
কুহু পিছন ফিরে সামনের দিকে হাঁটা দিলো। কুহুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে রোহান। যতক্ষণ না চোখের অদৃশ্য হচ্ছে ততক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। কুহু অদৃশ্য হতে ই রোহান বলে উঠলো,,
❝ তুই আড়াল হলে আমার অন্তর প্রতিনিয়ত দগ্ধ হয়❞ কুহুরানী তোর কোন দিন ও মনে পড়বে না তোর আর আমাদের বিয়ের কথা। সমস্যা নেই তুই ভুলে গেলেও আমি মনে করিয়ে দিবো তোকে। তোর ফেলে আসার একটা অতীতের অংশ আমি। রোহান তার গাড়ি উঠে বসে গাড়িটা র্স্টাট দিলো। এক জায়গায় যেতে হবে তার। দুপুরের আগে শেষ করে তারপর বাড়ি যেতে হবে। আর মনে মনে ভাবছে এই কলেজ নিরাপদ না কুহুর জন্য এইখানে কোন সেফটি নেই। যতসব বখাটে ভরা। রোহান এক সাইডে গাড়ি টা থামিয়ে দিয়ে সোহেল কে মেসেজ করে বললো কুহুর কলেজের আশেপাশে লোক লাগিয়ে রাখতে যাতে কুহুর সব খবর নিতে পারে। মেসেজ টা করে ফোনটা পাশের সিটে রেখে আবার গাড়ি স্টার্ট করলো। 
--- 
অচেনা একটা জায়গায় রোহানের গাড়ি টা থামলো। রোহানের পিছনে আর দুজন লোক এসেছে বাইকে করে। এলাকা টা তে ভালো করে নজর দিচ্ছে রোহান। খুব একটা সুবিধার না। মত্ত-মাতালের অস্থানা। রোহান একটা ছবি নিয়ে আর সাথে রি"ভে"ল"বার টা সাথে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। তবে রোহানের দক্ষ মন টা বলছে একটা দাঙ্গা হবে। তাই রোহান তার সাথে আসার লোক দুটো কে আগে থেকে ই সচেতন করে দিলো। আর বললো ওর সাথে প্রতিনিয়ত কারনেট থাকতে আর লোকেশন টা অন করে রাখতে যাতে একে অপরের ঢাল হয়ে থাকতে পারে। সামনে এক দোকান দেখে রোহান সেই দিকে গেলো তারপর একটা ছবি বের করে বললো,, চিনেন? 
লোকটে একবার ছবির দিকে তো একবার রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,,, আপনার কি দরকার? 
আমার কি দরকার সেইটা জানার তোর কাজ না তোকে যা জিজ্ঞেস করেছি তুই সেইটা বললো। রোহান বুঝলো লোকটি চিনে কিন্তু বলবে না তাই সে পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে সেই লোকটার হাতে নিয়ে বললো,,, এইবার বলে দে। ভালো ভালো বলে দিলে ভালো নয়তো আমি মানুষ টা বেশি সুবিধার নার। তোর জন্য ক্ষতিকর হবে। রোহানের শান্ত কন্ঠে হুমকি বার্তা টা শুনে বুঝে গেলো লোকটা বললো সামনে একটা ক্লাব ঘর আছে ওখানেই পাবেন। মদ খেয়ে হয়তো বেহুশ হয়ে পরে আছে। 
রোহান একটু ক্রুর হেঁসে বললো ভেরি গুড। তারপর তার সাথের দুজন লোকটি কে জানান দিয়ে সে সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। কিন্তু ওর মন বলছে আনাচে-কানাচেতে উৎপেতে আছে বিপদ যার আবাস সে পাচ্ছে। 
যত সামনের দিকে আগাচ্ছে তত ওর মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফল করছে তাই সে তৎক্ষনাৎ পিছন ফিরে তাকালো তাকিয়ে দেখলো তিন টা চ্যাংলা পোলা। রোহান কোমরে হাত দিয়ে ওদের দিকে ভ্রুঁ কুচকে তাকায় তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হইছে? 
কি হইছি তুই এসে কইবি? আমাগো বসেরে খুঁজতাছোত কেরে? 
ওদের কথার ধরন শুনে ওর হাসি পেলো। রোহান ঠোঁট কামড়িয়ে ক্ষানিকটা হেঁসে বললো,,, তোদের বস কে নিয়ে যেতে এসেছি কি করবি তোরা? 
আয় তো দেখি কত শক্তি পারোস কি না? 
এই টুকু ছেলে রা তাকে যুদ্ধে আহ্বান করছে তার বেশ মানে লাগলো। সেও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। প্রথমে একটা ছেলে এগিয়ে এসে হ"কি"স্টি"ক দিয়ে মা"র"তে নিলে সে সড়ে গিয়ে ওর হাতটা মুচড়ে দিয়ে ভেঙে দিলো। হার টা মর্মর শব্দ করে উঠলো। ভ্রুঁ জোড়া নাচিয়ে বাকি দুই জন কে জিজ্ঞেস করলো,, কি রে লাগবি আমার সাথে তোদের হাড্ডি-গুড্ডি ও কিন্তু ভেঙে ফেলবো। কি রে আসবি না কি? 
বাকি দুইজনের হাওয়া ফুঁস হয়ে গেলো। মুখটা ভয়ে চুপসে গেলো। ওরা আর এইখানে দাঁড়ালো না দৌড়ে চলে গেলো। রোহানের হাসি পেলো। রোহানের সাথে বাকি দুইজন এসে বললো কি হয়েছে স্যার? 
কিছুনা হাল্কা পাতলা ঝামেলা চলো সামনে যেই ক্লাব আছে সেই যেতে হবে সেই খানে গেলে দেখা মিলবে তার। তিন জন মিলে ক্লাবে গেলো। কত কম বয়সী ছেলে রা এই ক্লাবে নে"শা"গ্র"স্ত হয়ে পরে আছে। ওরা তিনজন ক্লাবের এদিক সেদিক দেখতে লাগলো দূরে একটা টেবিলের উপর নজর পরতে রোহান বললো ওই তো মা"ল খেয়ে টাল হয়ে গেছে চলো তুলতে হবে বলে এগিয়ে গেলো সেই টেবিলের কাছে। লোক দুজন বললো স্যার ওর তো কো হুঁশ নেই কিভাবে নিয়ে যাবো যদি কেউ দেখে নেয় তাহলে তো ঝামেলা হবে। 
হবে না। রোহান তার কাঁধে ব্যাগ টা খুলে একটা বোরকা বের করে দিয়ে বলো এইটা পড়িয়ে সুন্দর করে মুখটা বেঁধে দেও নিকাব এর সাহায্যে তাহলেই হলো। লোক দুটো রোহানের কথা মতো তাই করলো। তারপর খুব সচেতনের সাথে লোকটা নিয়ে বের হয়ে গাড়িতে উঠিয়ে বসে পড়লো। দ্রুত সম্ভব গাড়িটা নিয়ে বের হয়ে যেতে হবে। রোহান গাড়ি টা স্টার্ট দিলো আর ওর সাথে লোক দুটো বাইক করে যাচ্ছে। 
--- 
রোহান তার কাজ গুলো শেষ করে বাড়ি ফিরলো। বাড়ি ফিরতেই দেখলো রোহানের ফুফু বসে আছে সোফায়। রোহান দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু সেইটা হয়তো রোহানের ফুফুর সহ্য হলো না তাই স্বইচ্ছে বিপদ নিজের ঘাড়ে ডাকলো। রোহান যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় তার ফুফু বলে উঠলো,, তুই কি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস? তুই তোর চাচি কে না খেয়ে থাকতে বলেছিস? 
বলেছি তো চাচি কে তোমার শরীরে লাগছে কেনো? নাকি চাচির ভাগের শাস্তি তুমি নিতে চাইছো সমস্যা নেই আমি দিয়ে দিবো কি নিবে না কি চাচির ভাগের শাস্তি? 
তুই কিন্তু বড্ড ভার বেড়েছি। 
তোমরা কি? তোমাদের অন্যয় ক্রমশ প্রকাশ্য তোমাদের ভদ্র মুখোশের আড়ালে কুৎসিত মুখ টা সবার সামনে প্রকাশ পাবে। সত্য কখনো চাপা থাকে না। সব সত্যি প্রকাশ পাবে তোমরা তিন ভাই বোন মিলে যেইটা করেছো সেইটা আর একজন তো আছেই মা নামে কলঙ্ক। মনে রেখো তোমাদের রাতের আধারে নোংরা কুৎসিত খেলা শেষ হবে। তোমাদের এমন অবস্থা করবো যাতে সমাজের প্রতিটা মানুষ তোমাদের দেখলে ঘৃণায় থু থু ফেলে তোমাদের মুখে। তোমরা নামেই মানুষ ই কিন্তু কাজে কর্মে পুরো অমানুষ। জমিদারের বংশরা বুঝি অমানুষ তৈরি হয়। উঁহুম সবাই না তাহলে আমি ও অমানুষ তৈরি হতাম। আমার রক্তের সাথে মায়ের পবিত্র রক্ত লেগে আছে তাই আমি মানুষের পরিণত হয়েছি। সবার প্রতি হয়ে যাওয়ার অবিচারের সুবিচার করবো। শুধু আগে থেকে প্রিপারেশন নেও মাই ডিয়ার শ"য়"তা"নি ফুফুমনি আসি টাটা বলে চলে গেলো উপরে। 
রোহানের কথা গুলো শুনে ওর ফুফু খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো কতটা জানে কি জানে। ভাবতে ভাবতে তিনি চলে গেলেন মেয়ের রুমে। দরজা টা একটু ফাঁক করে দেখলো ঘুমিয়ে আছে। ফর্সা শরীরে ক্ষ"ত গুলো কালচে রং ধারন করেছে। তিনি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো। 
আস্তে আস্তে মেয়ের বাড়ি থেকে লোক আসা শুরু করলো। ঘরোয়া ভাবে বৌ-ভাত টা হচ্ছে। বাড়ির মানুষগুলো ছাড়া আর কেউ না। 
সবাই একসাথে খেতে বসেছে। শ্রাবনী এই দিক সেই দিক তাকাচ্ছে বার বার রোহান সেইটা লক্ষ করে বললো,, ভাবীমা তুমি কাকে খুঁজছো। তোমার বর তো তোমার পাশে। 
শ্রাবনী একটু হেঁসে বললো,, কুহু কে খুঁজছি। 
ওর আসতে আসতে বিকাল হবে আমাকে বলেছে। সামনে নাকি পরীক্ষা। তাই সব গুলো ক্লাস করতে ই হবে। 
শ্রাবনী ভাতের লোকমা মুখে দিতে দিতে বললো,, ওহ্। 
স্মৃতি বললো কি আর করবে,, আপুমনি তো আর প্রাইভেইট পড়ে না। শুধু কোচিং করে আর লাইব্রেরি থেকে বই কালেক্ট করে নোট করে সেইটা পড়ে। আমি দেখেছি একবার হাত পুড়ে গেছিলো সেই পুড়া হাত টা নিয়ে আপুমনি সারারাত নোট করে তারপরের দিন সকালে কলেজে জমা দিয়ে এসেছিলো বই টা। 
রোহান জানেনা কেনো এইটা। ওকে কেনো বলে নাই এইটা। রোহান ক্ষিপ্ত নজরে তার ভাই এর দিকে তাকালো তার ভাই শুধু একটা কেবলা ক্রান্ত হাসি দিলো। 
রওনক আর শ্রাবনী নিয়ম রক্ষার্থে ওদের সাথে রওনা দিলো। কুহুর মা আর সৎ বাবা চলে যাওয়া সময় রোহানের দিকে একবার চোখা-চোখি হলো। ওরা কিছু বলে নি বিধায় রোহান ও কিছু বলে নি। রোহান মনে মনে বললো,, আপদ বিদায় হচ্ছে। এখন শুধু ফুফুর যাওয়ার পালা। 
--- 
কুহু হাতে বই নিয়ে ব্যস্ত পায়ে হেঁট যাচ্ছে। রাস্তার মোড়ে এসে রোহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু থতমত খেলো। কুহু কে দেখে রোহান বললো,, এই সমস্যা কি এতো লেট করেছিস কেনো? আর তুই পা এ হেঁটে কেনো বাসায় ফিরছিস তোকে আমি টাকা দিয়ে এসেছি রিকশা দিয়ে চলে আসতি। 
এতো গুলো প্রশ্ন এক সাথে শুনে কুহু একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো তারপর একটা ফাঁকা ঢোঁক গিলে গিলে বললো,, এইতো বাড়ির কাছে ই তো কলেজে তাই আর রিকশা নেই নি। তাছাড়া আজ প্রাইভেট পড়ানো ছিলো প্রাইভেট পড়াতে গেছিলাম। 
তোর প্রাইভেট কেনো পড়াতে হবে আমি তো আছি ই যখন যা লাগবে আমাকে বলবি আমি দিবো। 
কেনো আপনার টাকা কেনো নিবো? 
খু্ব সিম্পল আমার টাকা মানে তোর টাকা। 
কুহু আর কিছু বললো না এমনিতেও ওর কথা বলার এনার্জি নেই। রোহান এই টা সেইটা বলছে আর কুহু চুপচাপ শুনছে। অবশেষে ওরা বাড়িতে এসে পৌঁছালো। বাড়িতে পৌঁছাতেই যেনো কুহু হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কুহু ক্লান্ত পা নিয়ে রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিয়ে তারপর পড়ার টেবিলে বসলো বই নিয়ে। অনেক পড়তে হবে কিছু চ্যাপ্টা টা শেষ করা হয়নি এখন সেই গুলো পড়ে শেষ করতে হবে। 
পড়া যখন অর্ধেক তখন চারোদিকে মাগরিবের আজান এর ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। কুহু বই টা বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসতে ই ঘুমিয়ে পড়লো। ল্যাপটপের স্কিনে কুহুর ক্লান্তি মাখা ঘুমন্ত মুখ টা দেখে একটা শ্বাঃস ফেরলো রোহান তারপর সে তার রুম থেকে বের হয়ে কুহুর রুমে এসে কুহু কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে কম্বল টা টেনে দিলো। এক গুচ্ছ চুল এসে পড়লো কুহুর মুখে রোহান খুব সুন্দর করে সেই চুল গুলো সড়িয়ে দিয়ে কপালে গাঢ় চুম্বন দিলো। তারপর চেয়ার টা টেনে বসে পড়লো কুহুর নিকটে তারপর কুহুর হাত টা টেনে ধরে বুকের বাম পাশে রেখে বললো,,, জানিস কুহু কাল আমাকে কাজের সূত্রে ইন্ডিয়াতে যেতে হবে। কিন্তু এই শত্রুপুরিতে তোকে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু চিন্তা করিস না তোকে আমি দূর থেকে ই আগলে রাখবো। 
❝ জানিস কুহু 
তোর থেকে দূরে যাবো কথা টা ভাবতেই আমার শ্বাঃস কষ্ট শুরু হয় মনে হয় আমি কোন এজমা আক্রান্ত রোগী অক্সিজেনের অভাবে মা"রা যাবো। মনতো বলছে থেকে যেতে কিন্তু বাহির টা বলছে তোকে যেতে হবে তুই তোর দায়িত্ব নিয়ে অবহেলা করেতে পারিস না❞ ঘুমা তুই আমি আছি তো তোর পাশে। চিন্তা কিসের আমি থাকতে তোর শরীরে একটা কাঁটাে
টোকা ও পড়তে দিবো না। আমার কুহুরানী তোকে অনেক ভালোবাসি। 
❝জানিনা কি আছে তোর মাঝে তবে যত দেখি 
তোর ই মুখ হারিয়ে যায় আমার সব দুঃখ ❞ আমি পৃথিবীর সব থেকে সুখি ব্যক্তি যাকে সেই কৈশোর কাল থেকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবেসেছি আজ তাকে ই পেয়েছি। আমি খুব ভাগ্যবান রে কুহু। তোর জন্য গোটা দুনিয়ায় সাথে লড়াই করতে পারবো। তুই শুধু ই একান্ত আমার। আমার মায়াবতী,, আমার হৃদয়হরনী,, আমার প্রিয়তমা স্ত্রী তোকে অনেক ভালোবাসিরে। তোর নামে দলিল করে দিলাম নিজেকে। আর তোর সবকিছু আমি দলিল করে নিলাম আমার নামে। 

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে -  ৮ পর্ব

আজ সাত টা দিন হলো রোহান বাড়িতে নেই। কুহুর খুব ভয় লাগতে শুরু করলো। রোহান বাড়িতে থাকলে কুহু অবশ্য নিজেকে নিরাপদ ফিল করে। কিন্তু আজ সাতটা দিন ধরে কুহু নিজেকে অনিরাপদ ফিল করছে। ওর মনে হচ্ছে আশে পাশে ওর জন্য বিপদ ওতপেতে রয়েছে। ওর মনে হচ্ছে একদল হা"য়"নারা এসে বুঝি ওর উপর আক্রমন করবে এর কারন আছে অবশ্য রাজীব আর সজীব ওর দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকায়। দুই একবার শরীরে হাত দেওয়ার ও চেষ্টা করেছে। রোহান কবে আসবে ইন্ডিয়া থেকে এইটা কেউ জানেনা। কিন্তু কুহুর জানা নেই দূর থেকে ওর বিষন্ন মন টা দেখে একজনের যে হৃদয় পুড়ছে। রোহান দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে কল দিলো স্মৃতি কে অসময়ে তার ভাই কল করেছে এইটা ভেবেই সে তাড়াতাড়ি ফোন টা রিসিভ করলো,, হ্যালো বলার আগে রোহান স্মৃতি কে বললো,, কতবার বলেছি না কুহুকে একা রাখবি না কোন সাহসে কুহুকে একা রাখলি। আর গিয়ে জিজ্ঞেস কর কুহুর মন খারাপ কেনো? আজ রাতে আর তোকে এই রুমে থাকতে হবে না কুহুর রুমে থাকবি। বুঝতে পেরেছিস কথা টা বলে ফোনটা কেটে দিলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে এখন ফ্রেশ হওয়া দরকার তাই রোহান আলমারি টা খুলে এক সেট কাপড় টা নিয়ে গেলো ফ্রেশ হতে। 
রোহানের কথা মতো স্মৃতি কুহুর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দরজা টা কড়া নাড়লো। কুহু ভীতসন্ত্রস্ত  কন্ঠে বললো,,, কে? 
আপুমনি আমি স্মৃতি দরজা টা খুলো। 
স্মৃতির কণ্ঠস্বর শুনে মনে মনে স্বস্তি পেলো কুহু। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো দরজার কাছে। তারপর খট করে দরজা টা খুলে দিলো। স্মৃতি রুমে ঢুকতে দরজা টা লাগিয়ে দিলো। কুহু স্মৃতির মাথায় গাট্টা মে"রে বললো,, ওই মেয়ে কাল যে তোমার স্কুল আছে ভুলে গেছো পড়া-লেখা কি চান্দের দেশে তুইলা দিছ।
ঘুম আসছিলো না তাই এলাম চলো না আমরা মুভি দেখি। 
এই মেয়ে রাত এক টা বাজে এখন কিসের মুভি আসো ঘুমিয়ে পড়ি কাল সকালে তোমার স্কুল আছে আমার কলেজ। তিন দিন পর থেকে আমার পরীক্ষা। আসো ঘুমিয়ে পড়ি বলে দুইজন বিছানায় শুয়ে পড়লো। 
রোহান ফ্রেশ হয়ে এসে ল্যাপটপে স্কিন দেখো কুহুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু কুহুর হঠাৎ বিষন্ন টা নিয়ে রোহান কে ভাবাছে। ওর তো মনে হচ্ছে ও ছুটে যাক কুহুর পানে কিন্তু সেইটা তো আদোও সম্ভব না। সে যে তার কর্তব্য টানে ছুটে এসেছে ইন্ডিয়াতে। রোহান কোনরকম ডিনার টা করে ঘুমিয়ে পড়লো। 
--- 
এখন আর সকালে কাজ করতে হয় না কুহুর। ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসে। কুহু পড়ছিলো তখনও স্মৃতি কুহুর ঘরে গভীর ঘুমে আছন্ন। কুহু ঘড়িতে টাইম টা দেখে নিলো ৮ টা বাজে কুহু স্মৃতি কে ডেকে তুলে বললো ফ্রেশ হয়ে নিতে। স্মৃতি আড়মোড়া দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কুহু পড়া টেবিল ছেড়ে উঠে ব্যাগ টা গুছিয়ে নিলো। তারপর একেবারে রেডি হয়ে নিয়ে কাঁধে ব্যাগ টা নিয়ে নিচে নামলো। শ্রাবনী তখন রওনক কে ব্রেকফার্স্ট দিচ্ছিলো। কুহুকে দেখে শ্রাবনী  বললো,, কুহু তুমি এখন নাস্তা করবে তো আসো খেয়ে নেও। 
কুহু চেয়ার টেনে বসতেই রোহানের চাচি বলে উঠলো আসছে আমাদের মহারানী ওকে আপায়ণ করো। 
শ্রাবনী যেহেতু নতুন তাই তেমন কিছু বলেনা তবে কিছু কিছু কথার উত্তর দেয় রোহান যাওয়ার আগে কুহুর দায়িত্ব যে ওর উপর দিয়ে গিয়েছে। শ্রাবনী হেসে বললো,, অবশ্যই মহারানী ই তো দেখেন না দেখতে শুনতে মাশা-আল্লাহ। আল্লাহ্ খুব যত্ন করে ওরে বানিয়েছেন। তা চাচি আম্মা আপনি শুধু কুহুর দোষ টা ধরেন কেনো? আপনার মেয়ে টা ধরতে পারেন না। লেখা পড়া তো সব বিসর্জন দিচ্ছে সারাক্ষণ শুধু ফোন আর ফোন। কি আছে এতো ফোনে। ওর সমবয়সী তো স্মৃতিও কই স্মৃতি কে তো এইরকম কিছু দেখি না। 
কুহু না খেয়ে চলে যেতে নিলো শ্রাবনী কুহু টেনে বসিয়ে দিলো রওনক তার প্লেট থেকে খাবার টা কুহুর মুখের সামনে তুলে ধরলো কুহু খাইয়ে দিচ্ছে। কুহুর চোখ থেকে টপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। 
এর মাঝে স্মৃতি এসে কুহুর পাশে বসলো। কুহুর দিকে তাকিয়ে দেখলো কুহুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। স্মৃতি কুহুর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,, খাওয়ার সময় চোখের পানি ফেলতে নেই। আর সবার কথায় ধরতে নেই। খাও। স্মৃতি তার চাচির দিকে তাকিয়ে বললো,, তা চাচি আর কত কূ"ট"না"মি করবেন বয়স হচ্ছে তো ধর্ম-কর্মে মন দিন এক ঠ্যাং তো কবরে তাও এতো কূটনামি আসে কোথা থেকে? 
শ্রাবনীর হাসি পেলো। শ্রাবনী মিটমিট করে হাসছে রওনক স্মৃতির চুল টেনে দিয়ে বললো,, তুই একদম রোহানের মতো হয়েছিস। 
কুহু খাওয়া শেষ করে উঠতে নিলো রওনক ওকে কিছু টাকা দিলো বললো,, সামনে তো পরীক্ষা জরুরি কিছু কিনে নিস আর সাবধানে যাস। 
কুহু মাথা নাড়িয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো কলেজের জন্য। 
--- 
পরিত্যক্ত একটা ভাঙ্গা বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে এক মাঝ বয়স্ক লোক কে। হাত পা বাধা অবস্থায় পরে আছে। রোহান বন্ধ দরজা টা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। লোকটির কাছে যায় লোকটির বাঁধন খুলে দেয়, তখন লোকটির চোখে ভয় এবং দুঃখের মিশ্রণ ছিল। রোহান তাকে সাহায্য করে, কিন্তু সে মনে মনে জানে, এখানে কেবলমাত্র একজন নিরীহ ব্যক্তি আটকে নেই। এই চক্রটি আসলে নারীদের পাচারের সাথে জড়িত, আর এই জায়গাটি তাদের কুৎসিত ব্যবসার একটি অংশ। লোকটি যখন একটু সুস্থ হয়, তখন রোহান দ্রুত জানতে চায়:
"তুমি কি জানো, এখানে কিসের একটা অপরাধ চলছে?"
লোকটি কষ্টে বললো, “তারা... তারা না"রী পা"চা"র করছে। আমার ওপর চাপ দিয়ে এখানে আটকে রেখেছিল। যতক্ষণ না আমি তাদের ব্যবসার জন্য কাজ করি, তারা আমাকে ছেড়ে দেবে না। আর অনেক মেয়ে এখান থেকে চলে গেছে।”
রোহান এক পা এগিয়ে গেলো, তার মুখে কঠোরতা বেড়ে গেলো। "তোমার কাছ থেকে আর কিছু জানাতে হবে।"
লোকটি চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ, তারপর সে এক অস্বস্তিকর গলায় বললো, "আমি জানি না। কিন্তু এক নারী এসেছে, আর সে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা তাকে নিয়ে গেছে..."
রোহান বুঝতে পারলো, এই অপরাধী চক্রের কাছে অনেক কিছু লুকানো রয়েছে। এখন সে শুধু একটি নিরীহ ব্যক্তি নয়, এই চক্রের শিকারদের জীবনও রক্ষা করতে হবে। সেই মহিলার বিষয়ে তাকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, কিন্তু এক্ষেত্রে তার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রোহান দ্রুত ফোনে কল করে তার সহকর্মীকে জানালো, "এই জায়গায় নারী পা"চা"রে"র বড় চক্র কাজ করছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা না নেব, ততই আরও জীবন বিপদে পড়বে।"
লোকটির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোহান জানতো, এই অপরাধী চক্রের নেটওয়ার্ক আরও ব্যাপক। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয়, আরো গভীরভাবে তদন্ত করে এবং এই চক্রের শিকড় বের করতে হবে। তবে এটা সহজ হবে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রোহান মনে মনে ভাবলো এখন আমার সাথে লোক নেই যদি এইখানে থাকি তাহলে বিপদে পড়তে পারি তাই এখন আপাতত আমি চলে যাই তারপর লোক নিয়ে আসবো। সেই লোকটা কে নিয়ে সে চলে গেলো।  
---- 
কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছে কুহু। ক্লাস করতে মন চায়ছে না তাই সে লাইব্রেরি থেকে কিছু বই নিয়ে বাসায় দিকে রওনা দিলো। আজ কাল বাসায় ভালো লাগে না রোহান ইন্ডিয়া চলে যাওয়ার পর থেকে ওই বাসাটা তার জন্য দোযখ এর পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়। রোহানের ফুফু আর ওনার মেয়ে মুন চলে গেলো ও রাজীব আর সজীব থেকে যায়। সুযোগ পেলেই কুহুর সাথে অ"স"ভ্য"তা"মি করে। নোংরা ভাবে হাসে এইসব দেখে কুহুর ঘা গিন গিন করে উঠে।    আজ আর হেটে যেতে ভালো লাগছে না তাই সে একটা অটো নিয়ে বাড়ির দিকে গেলো। বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বিছানার উপর বই গুলো নিয়ে বসলো। 
কুহু একদিকে ভাবতে লাগলো, রোহান ইন্ডিয়া চলে যাওয়ার পর তার পৃথিবী যেন অন্ধকারে ঢেকে গেছে। কিছুতেই আগের মতো হাসতে পারে না। বাসায় এসে সে হালকা মেজাজে বইয়ের ভেতর চোখ রেখেছিল, কিন্তু মন অন্য কোথাও হারিয়ে গেছে। রাজীব আর সজীবের গা ঘিনঘিনে আচরণগুলো তার স্নায়ুতে চাপ তৈরি করছিল।
কুহু দাঁড়িয়ে গিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। আকাশের গাঢ় নীল রঙ তাকে এক অদ্ভুত শান্তি দিয়েছিল, মনে হলো সেখানেই রোহান ভাইয়ের জন্য একটি জায়গা অপেক্ষা করছে, যেন সে ফিরে আসবে, আর সব কিছু আগের মতো হয়ে যাবে।
"রোহান ভাই, আপনি কবে দেশে আসবেন?" কুহু মুচকি হেসে আকাশের দিকে বলল। তার মনে ছিল শুধু একটাই প্রশ্ন—তখন কি আর কোনো কিছু বদলাবে? 
কুহুর চোখে এক টুকরো আশা সঞ্চারিত হয়েছিল, কিন্তু তার হৃদয়ে তীব্র শূন্যতা। সে জানত, রোহান ভাই ফিরে এলেও সব কিছু আগের মতো হবে না। তার সব স্মৃতি এখন সেদিনগুলোর মতো মধুর নয়, বরং সেই দিনগুলোর মতো ভারী।
তার মন ভারাক্রান্ত ছিল, তবে সে জানত, রোহান ভাই যখনই ফিরবে, তাকে কিছু কথা বলার সুযোগ পাবে। সে আবার তাকালো আকাশের দিকে, ভেবে দেখলো, হয়তো কিছুটা সময় লাগে, কিন্তু সমস্ত কিছু ঠিক হয়ে যাবে, একদিন।
কুহু আবার বইয়ের পাতা উল্টাতে শুরু করলো, তবে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছিল না। রাজীব আর সজীবের কথা মনে পড়তেই তার ভেতর এক ধরনের অসহ্য অনুভূতি উঠল। এই মুহূর্তে তার কাছে কোনো কিছুই ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, যতটা প্রয়োজন ছিল নিজের শ্বাশত শান্তি ফিরে পাওয়া।
তার মনে হয়ে, রোহান ভাইয়ের ফিরে আসা শুধু তার একান্ত ইচ্ছাই নয়, বরং তার একমাত্র আশ্রয়, তার একমাত্র পরিত্রাণ। "আপনি ফিরলে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে," কুহু নিজের মনে বললো, যেন এক অদৃশ্য শক্তি তাকে আশ্বস্ত করতে চায়।
--- 
এইদিকে রোহান এবং অগ্নি চৌধুরী একসাথে তদন্তে যোগ দেয়, তবে তারা জানতো যে, চক্রের শিকড় খুঁজে বের করতে গেলে আরও কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। প্রথমে, তারা সেই পুরানো ভাঙ্গা বাড়িটি আবার পরিদর্শন করে, যেখানে আগের দিন রোহান কিছু তথ্য পেয়েছিল।
অগ্নি খুবই সজাগ ও চিন্তাশীল ছিল। সে জানতো, এক্সপোজ করার আগে যথেষ্ট প্রমাণ থাকা দরকার। বাড়ির প্রতিটি কোণ খুঁটিয়ে দেখার পর, তারা কয়েকটি গোপন কাগজপত্র খুঁজে পায়, যেগুলো চক্রের গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনের ইঙ্গিত দেয়।
এখন, তাদের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে চক্রের আরো সদস্যদের খুঁজে বের করা এবং তাদের মধ্যে যে কেউ গোপনে এই কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে, তাকে ধরা।
রোহান, অগ্নি এবং তাদের টিম জানতো, প্রতিটি পদক্ষেপ তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে, একসাথে তারা দৃঢ় মনোভাবে এগোচ্ছিল, এবং তাদের সম্পর্কেও কিছু অজানা দিক উন্মোচিত হতে লাগলো। তারা একটা হাভেলির ঠিকানা পেলো সেই মতো তারা সিদ্ধান্ত নিলো তারা সেই খানে ঘাপটি মেরে থাকবে যখন নারী পা"চা"রের জন্য গাড়ি তে উঠাবে তারা তখন তাদের হাতে নাতে ধরবে তাই তারা আপাতত এইখান থেকে চলে গেলো। 
--- 
চারোদিকে আঁধার নেমে এসে গেছে এক ঝাঁক পাখি রা উড়ে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। কুহুর দরজার নক করার শব্দে কুহুর ঘুম টা ছুটে গেলো। দুপুরে বই গুলো দেখতে দেখতে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলো বুঝতে পারেনি। কুহু বিছানা থেকে নেমে অগোছালো চুল গুলো সুন্দর করে আধখোঁপা করে নিয়ে দরজাটা খুললো। খুলে দেখলো শ্রাবনী দাঁড়িয়ে আছে। কুহু হেসে বললো আরে ভাবীমা তুমি এসো ভিতরে এসো। 
না গো ভিতরে আসবো না তুমি রেডি হও সিনেমা হলে যাবো সিনেমা দেখবো। 
ভাবীমা বিশ্বাস করো শরীর টা বলো নেই আর তিন দিন পর পরীক্ষা আমি একটু পরে পড়তে বসবো। 
ওহ্ আচ্ছা তাহলে আমি স্মৃতি,, রওনক আর বাড়ির সবাই যাচ্ছি। কোন প্রয়োজন হলে ফোল করো আমরা চলে আসবো বলে চলে গেলো। কুহু দরজা টা বন্ধ করে দিলো নিস্তব্ধতা যেনো ঘিরে ধরেছে কুহু এইসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পড়াতে মন দিলো। রাত তখন ৮ বাজে রাজীব আর সজীব তাড়াতাড়ি আসে। হঠাৎ বাড়ির কলিং বেল বাজাতে কিছুটা চমকে যায় কুহু কিন্তু পরে আবার ভাবে হয়তো বা বাড়ির লোক এসেছে। পড়াতে মন দেয় কিন্তু ওর দরজাতে আচমকা নক পড়াতে বেশ ঘাবড়ে যায় তারপর ভাবলো হয়তো বা স্মৃতি এসেছে ভেবে পড়া টা রেখে দরজাটা খুলে দিলো দরজা টা খুলে সামনে রাজীব আর সজীব কে দেখে বিচলিত হয়ে দরজা টা বন্ধ করতে নিলে কিন্তু ওরা বাঁধা দেয়। ওদের শক্তি সাথে কুহু পেরে উঠে না। রাজীব আর সজীব কুহুকে নোংরা চোখে দেখতে লাগলো। এই মুহূর্তে কুহুর পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হয়ে ওঠে, এবং তার ভেতরে আতঙ্ক ও আত্মরক্ষার প্রবৃত্তি কাজ করতে থাকে। কুহু খুব দ্রুত চিন্তা করে এবং তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে প্রস্তুত রাখে। তার মধ্যে এক ধরনের প্রতিরোধের শক্তি জেগে ওঠে, কারণ সে জানে, এই মুহূর্তে তার জীবনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কুহু পিছিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু রাজীব আর সজীব তাকে এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়ে না। তারা ক্রমাগত কাছে আসতে থাকে। একসময়, কুহু ব্যাকফুটে চলে যায় এবং রাজীব তাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। কুহুর শ্বাস কষ্ট হয়ে আসে, কিন্তু সে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত নিজের শক্তি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।
রাজীব যখন কুহুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যায়, কুহু একটুও চিন্তা না করে, শক্তির সাথে সরে গিয়ে তার পেছনে থাকা একটি স্ট্যান্ডিং ল্যাম্প বা অন্য কোনো শক্ত বস্তু দিয়ে রাজীবকে আঘাত করে দেয়।
কুহু (কাঁপা গলায়) "তুমি কিছু করতে পারবে না!"
এই মুহূর্তে কুহু যেন তার ভয় আর আতঙ্ককে পিছনে ফেলে দিয়ে নিজের নিরাপত্তার জন্য লড়াই শুরু করে। তার ভিতরের শক্তি তাকে চালিত করছে, যেন সে কোনো পরিস্থিতিতে হারবে না।
কুহুর এই সাহসিকতার পর, রাজীব এবং সজীব কিছুটা চমকে যায়। তাদের জন্য কুহুর এই প্রত্যাঘাত এক ধাক্কা হয়ে আসে। 
কুহু যখন ল্যাম্পটি নিয়ে রাজীব এবং সজীবের পায়ে আঘাত করে, তাদের কিছু সময়ের জন্য শারীরিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। রাজীব এবং সজীব ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে, এবং কুহু সেই মুহূর্তে কিছুটা সময় পায় পালানোর জন্য। সে কোনো সময় নষ্ট না করে দ্রুত স্মৃতির ঘরের দিকে দৌড়ায়। তার হাতের জোর টেনে দরজাটা বন্ধ করে লক করে দেয়।
স্মৃতির ঘরের ভিতরে কুহু ধস্তাধস্তি করে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, কিন্তু তার কোনো ক্ষতি না হয়ে সে একরকম প্রলম্বিত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। ভয়ে তার হাত-পা কাঁপতে থাকে, হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়। কুহু জানে যে এখন পরিস্থিতি একেবারেই সংকটপূর্ণ। তার শরীরের অস্থিরতা বাড়ছে, তবে সে নিজেকে কিছুটা সান্ত্বনা দেয় যে এখন নিরাপদে রয়েছে।
এদিকে, তার হাত কেটে কিছু র"ক্ত ফ্লোরে পড়ে যায়, এবং সে শ্বাস নিতে সমস্যা অনুভব করতে থাকে। রক্তের দাগ কুহুর দুর্বলতার আরও প্রমাণ, কিন্তু সে জানে যে তার এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এখন মনোযোগ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
কুহু ধীরে ধীরে রুমের এক কোণে বসে থাকে, পুরো শরীর কাঁপছে, কিন্তু তার মন ভেঙে যায় না। তার একমাত্র চিন্তা—কিভাবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যাবে। 
---- 
হঠাৎ ই রোহানের মনটা আনচান আনচান করতে থাকে কুহুকে এক নজর দেখার জন্য। কুহুকে দেখার জন্য ওর ঘরে গোপন ক্যামেরা লাগিয়েছিলো রোহান ল্যাপটপ টা অনে করেতে কুহু কি করেছে না করেছে তার একটা একটা ফুটেজ দেখতে থাকতে হঠাৎ চোখ পরে ১২ মিনিট আগের ঘন্টা যা দেখে রাগে কপালের   রগ গুলো ফুলে উঠে। তারপর ফোন নিয়ে দ্রুত রওনক কে ফোন করে বলে শীঘ্রয় বাড়ি যেতে। 
এইদিকে রোহানে বের হতে হবে। রোহান আর অগ্নি বের হলো সেই নারী পা"চা"র"কা"রী দের ধরতে। কিন্তু মনে জেগে উঠছে প্রতিশোধের আগুন। ড্রাইভার গাড়ি চালাছে তারা প্ল্যান করছে কিভাবে কি করবে কোথায় কোথায় লুকিয়ে থাকবে। রোহানের এইসবের মন নেই রোহানে মন টা পড়ে আছে বাংলাদেশে তার কুহুরানীর উপরে। 
--- 
রওনকা চলে এসেছে। সবার আগে কুহুর রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো মেঝেতে বই পত্র ছিটিয়ে আছে। রাজীব আর সজীব পা ধরে আর্তনাত করছে। ওদের দেখে শ্রাবনীর ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে গেলো। ওরা যখন গিয়েছিলো তখন ওরা তো ছিলো না ওদের কে জিজ্ঞেস করা হলে ওরা বলেছি আজ নাকি ওদের কাজ আসবে না। তাহলে ওরা এলো কেনো। মূহুর্তে দুই এ দুই এ চার করে ফেলো। শ্রাবনী আর স্মৃতি মাথায় হাত দিয়ে বললো,, ইয়া রব! 
স্মৃতি চলো কুহু কে খুঁজে বের করতে হবে বলে ওরা রুম থেকে বের হলো কিন্তু রুম থেকে বের হতে দেখে ঘরে কোনে কোনে র"ক্তে"র কনা শেষ কনা টা স্মৃতির রুমের সামনে ওরা বুঝলো কুহু স্মৃতির রুমে। শ্রাবনী দরজা টা নক করে বললো কুহু দরজা খুলো আমি তোমার ভাবীমা। 
কুহু দুর্বল শরীর টা নিয়ে দরজা খুলে আঁচড়ে পড়লো শ্রাবনীর বুকে অল্প সময় কাঁদতে কাঁদতে নিস্তেজ হয়ে গেলো রওনক ওকে কোলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো। দ্রুত ফার্স্টেড বক্স টা নিয়ে এসে হাত টা ভালো করে পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। 
তারপর রোহান কে একটা টেক্সট করে দিলো তো। রোহান মেসেজ টা পেয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। 
---- 
রাত তখন ১২ রোহান আর অগ্নি হাভেলির ঠিকানা অনুযায়ী এক অন্ধকার রাতে সেখানে পৌঁছায়। জায়গাটা শহর থেকে অনেকটা দূরে, চারদিকে সুনসান পরিবেশ। অগ্নি চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,
"এখানে কোনো মুভমেন্ট নেই। সব ঠিকঠাক মনে হচ্ছে না। চক্রের লোকেরা এত সহজে ধরা পড়ার মতো বোকা হবে না।"
রোহান শান্ত গলায় বলল,
"তারা ঠিক কীভাবে কাজ করে সেটা বোঝার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। ছায়ার মতো চুপ করে থাকো।"
তারা দু’জন হাবেলির পিছনের একটা পরিত্যক্ত কক্ষের জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে নজর রাখছিল। আধঘণ্টা পর, কিছু গাড়ি এসে থামল। গাড়ি থেকে কিছু লোক নামল এবং একে একে কয়েকজন নারীকেও নামিয়ে হাবেলির ভিতরে নিয়ে গেল।
রোহান আর অগ্নি দেখল, নারীদের চোখে কালো কাপড় বাঁধা। লোকগুলো তাদের কথা বলতে দিচ্ছে না।
অগ্নি ফিসফিস করে বলল,
"এখনো সময় আসেনি। আমরা যদি এখন আক্রমণ করি, তাহলে প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাবে। অপেক্ষা কর।"
কিছুক্ষণ পর, গাড়িগুলো আবার আসতে শুরু করল। এবার সেই লোকগুলো নারীদের গাড়িতে উঠাতে শুরু করল। রোহান ইশারায় অগ্নিকে বলল,
"এটাই সময়।"
তারা হঠাৎ পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে সোজা গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। রোহান গর্জে উঠল,
"থামো! CID!"
চক্রের লোকেরা প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেল, তারপর তারা পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু অগ্নি তাদের পথ আটকে বলল,
"একজনও পালানোর চেষ্টা করলে ভালো কিছু হবে না। আমরা সব জানি।"
 এতে রোহান আর অগ্নি বুঝবে, পুরো প্ল্যান আরো বড়। তুই কি এমন কিছু মোড় চাস?গাড়ির দিকে এগিয়ে যাওয়ার পর, চক্রের লোকেরা পালানোর চেষ্টা করলে রোহান আর অগ্নি তাদের আটকাতে থাকেন। কিন্তু একটি কনভার্সেশন হতেই পারে, যেখানে চক্রের একজন মহিলা সদস্য, যারা নারীদের নিয়ে এসেছিল, হঠাৎ নিজের মুখোশ খুলে ফেলে।
মহিলা এক টুকরো কাগজ দিয়ে অগ্নির হাতে ফিসফিস করে বলল, “তোমরা জানো না, কী খেলা চলছে এখানে। এটা শুধু শহরের বাইরে একটা গোপন আস্তানা নয়… একদিন তোমরা বুঝবে।”
অগ্নি কাগজটা তুলে দেখে, তাতে একটি অজানা নাম এবং ঠিকানার তালিকা ছিল। রোহান তৎক্ষণাৎ তাকে বলল, “এটা কী দেখাচ্ছ?” তবে অগ্নি কাগজটা রোহানের হাতে দিয়ে বলল, “এই মুহূর্তে আমাদের শুধু ধরা পড়া চক্রের লোকদের নিয়ে যেতে হবে। তবে এই নামগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ।”
তারা নারীদের উদ্ধার করে থানার দিকে ফিরতে শুরু করে। কিন্তু ঠিক তখনই হাবেলির মধ্যে থেকে হঠাৎ একটা বিকট শব্দ শুনতে পেল তারা। রোহান আর অগ্নি চোখে চোখ রেখে সিদ্ধান্ত নিল, "এটা আমাদের শুধু শিকার নয়, আরও কিছু বড় রহস্য অপেক্ষা করছে।"
তারা দ্রুত হাবেলির দিকে ফিরে গেল, সেই শব্দের উৎস খুঁজতে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে, তারা দেখতে পেল অনেক পুরনো বই এবং কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, আর এক কোণে ধোঁয়ার মতো কিছু রঙিন চিহ্ন।
একটি পুরনো পোকা খাওয়া আলমারি খুলতেই তাদের সামনে চলে এল একটি অদ্ভুত পুঁথি। পুঁথির পাতাগুলিতে এক অবিশ্বাস্য চিত্রের বর্ণনা ছিল, যা পরবর্তী ঘটনা গুলোর দিকে আরো একধাপ নিয়ে যাবে। 
এরা দুই দেশের অপরাধী চক্রের সদস্য , তখন তাদের নিয়ে গিয়ে তদন্তের পর দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে একটি বড় অপারেশন শুরু করতে হবে এইসব ভেবে দ্বীর্ঘ শ্বাঃস ফেললো রোহান। 
রোহান আর অগ্নি, চক্রের সদস্যদের আটকানোর পর, দ্রুত তাদের থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা প্রথমে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। চক্রের সদস্যরা শুরুতে কিছুই বলছিল না, কিন্তু পরবর্তীতে একজন, যিনি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, চুপচাপ অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি জানো না, কী হতে চলেছে। দুই দেশের শক্তিশালী শক্তির মধ্যে আমরা কেবল পাওঁ(শিকারী বুঝায়)”
অগ্নি তাকে থামিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে, “কী পাওঁ? তোমরা কি মা"দ"ক পাচারের সঙ্গে যুক্ত? না কি কিছু অন্য ব্যাপার?”
তবে মহিলা সদস্যটি কিছু জানাল না, কেবল বলল, “যতই চেষ্টা করো, সময় তোমাদের হাতে থাকবে না। এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ… দু'টি দেশের মধ্যে রয়েছে।"
এখন অগ্নি এবং রোহান জানতে পারে, চক্রটি শুধু মাদক বা অস্ত্র পাচার নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক স"ন্ত্রা"সী কর্মকাণ্ডের অংশ। তাদের কাছে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মতে, তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাচার করছিল। আর সেই পরিকল্পনা দুই দেশের সীমান্তের মাঝে চলছে।
এরপর দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়। একদিকে, ভারতীয় ও বাংলাদেশী পুলিশদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হয়, অন্যদিকে এই আন্তর্জাতিক অপারেশনকে সফল করতে এবং চক্রটির মূল হোতাদের ধরতে একযোগে অভিযান চালানো।
অগ্নি এবং রোহান জানতে পারে, তাদের হাতে থাকা চক্রের সদস্যদের তথ্যের মাধ্যমে, দুই দেশের গোয়েন্দারা গভীরভাবে তদন্ত শুরু করে এবং পর্যায়ক্রমে বড় বড় চক্রের মূল পরিকল্পনা ধরা পড়ে।
তাদের এই অভিযান শুধু সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এক বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ৯ পর্ব

অগ্নি এবং রোহান যখন দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগে আসে, তারা বুঝতে পারে যে, চক্রটি অনেক বড় এবং এর মধ্যে অনেক স্তর জড়িত। তথ্য অনুসারে, চক্রের সদস্যরা শুধুমাত্র পাচারের জন্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে মানুষই নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। এই প্রক্রিয়ায় তারা অনেক উচ্চমানের ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদদেরও গোপনে ম্যানিপুলেট করছে।
এরপর গোয়েন্দা সংস্থা একত্রিত হয়ে, একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে। চক্রটির শিকড় ধরে তাদের সন্ত্রাসী কাজগুলো রোধ করতে, সায়েন্স ফিকশনের মতো একটি মিশন তৈরী করা হয়— দুই দেশের সীমান্তে এক অভিনব অপারেশন চলবে।
অগ্নি এবং রোহান একত্রে মাঠে নামেন, যেখানে তারা চক্রের নতুন সদস্যদের নজরদারি করে, যারা এখনও শিকার করতে চায়। ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মেলে।
এদিকে, চক্রের পুরনো সদস্যরা খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, কারণ তারা জানে, এইবার তাদের পক্ষে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাদের লক্ষ্য তখন হয়ে ওঠে, অপরাধী চক্রের মূল পরিকল্পনা সামনে আনা এবং তার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া।
শেষমেশ, একটি চমকপ্রদ ফাঁদ পাতা হবে। তবে এখন এইখান কার কাজ শেষ। রোহান দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু তার মনে কুহুর কথা একটানা ঘুরপাক খাচ্ছিল। কুহু, যে তাকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল, "তুমি ফিরে যাও, কিন্তু তুমি জানো না, তোমার জীবনে কী অপেক্ষা করছে।" অগ্নি, যিনি এই অভিযানে পুরোপুরি মগ্ন, তখনও রোহানের মনোভাব বোঝে এবং তাকে শান্ত থাকতে বলে, "তুমি সবকিছু ঠিকঠাক করছো, রোহান। এইখান কার কাজ শেষ তুমি দেশে যাও বাকি আমি সামলে নিবো আমি সব সামলে দেশে গিয়ে তোমার সাথে দেখা করবো। 
রোহান ঠিকই জানে, তার সামনে আরো অনেক কঠিন সময় আসবে। তবে, কুহুর কথা তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে, কারণ কুহু তার জীবনে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে,
তাদের তদন্ত যখন আরো গভীর হয়, তখন চক্রের সদস্যদের মধ্যে কেউ এক সময় এমন কিছু বলে যা তাদের সব কিছু উন্মোচন করে দিতে পারে। চক্রের নেতৃত্বের একটি বড় পরিকল্পনা ধরা পড়ে, যার মধ্যে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল দুই দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সেই নিরাপত্তা ভেদ করে, তারা নিজেদের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে রোহান এবং অগ্নি একে একে চক্রের অনেক সদস্যকে আটক করে এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রক্ষা করতে এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযান শুরু করে। তবে, রোহান ও অগ্নি জানেন যে, শেষ সফলতা শুধু চক্রের মূল হোতাদের ধরলে হবে না, বরং তাদের পিছনে যে অন্ধকারে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে, তা গোপন রাখা উচিত।
এই সবের মাঝে, রোহানের মধ্যে কুহুর জন্য একটা অস্থিরতা তৈরি হয়—একটা অনুভূতি, যা তাকে এগিয়ে যেতে আরও কঠিন করে তোলে। 
রোহানের ভাগ্য ভালো সে একটা ইমার্জেন্সি টিকেট পায়। কোর্য়াটারে গিয়ে তার ব্যাগ টা নিয়ে বের হয়ে যায়। 
রোহান জানে, কুহু অসুস্থ, আর এটাই তাকে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আরও বেশি অস্থির করে তুলছে। বাড়িতে একমাত্র স্মৃতি আর রওনক ছাড়া কেউ জানে না রোহান একজন CID অফিসার এবং তার জীবনের প্রতিদিনের ঝুঁকি কতটা বড়। তারও বিশেষ কারন আছে। 
তবে, এই মুহূর্তে কুহুর অসুস্থতা এবং তার প্রতি রোহানের গভীর ভালোবাসা তাকে দ্রুত দেশে ফেরার জন্য বাধ্য করছে।
বিমানে বসে সে কুহুর কথা ভাবছিল। তার স্মৃতিতে ভেসে উঠল সেই সময়গুলো, যেই সময় টা রাজীব আর সজীব তার উপর আক্রমান চালায় রোহানের ভেবেই কষ্ট পাচ্ছে তার পাখি টা কত ই না জানি অসহায় মনে করেছে। 
রোহান মনে মনে বলল,
"কুহু, তুমি জানো না আমি কী করি, কেন দূরে থাকি। কিন্তু আমি আজ তোমার কাছে ফিরব। তোমার পাশে থেকে সবকিছু ঠিক করব।"
রোহান জানত, রাজীব আর সজীব তাদের নোংরা উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কতটা নিচে নামতে পারে। তারা বাড়ি ফাঁকা পেয়ে কুহুর সঙ্গে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছিল। সেই ভয়ে কুহু ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তার শরীর এমনিতেই দুর্বল ছিল, আর এই মানসিক ধাক্কায় তার জ্বর বেড়ে যায়।
রোহান যখন বাড়ি ফিরল, সোজা কুহুর ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। ঘরে ঢুকে দেখল, কুহু বিছানায় শুয়ে আছে। তার চোখ বন্ধ, মুখে অসুস্থতার ছাপ। পাশে বসে আছে স্মৃতি, রওনক আর ভাবীমা। সবার মুখ চিন্তায় ভরা।
রোহান দ্রুত কুহুর পাশে গিয়ে তার হাত ধরল। কুহুর হাতটা ঠাণ্ডা বরফের মতো। রোহান ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “কুহুর কী হয়েছে? ও এত অসুস্থ কেন?”
ভাবীমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “ওর শরীর এমনিতেই দুর্বল ছিল। তার ওপর রাজীব আর সজীব… ওদের নোংরা ইচ্ছা দেখে কুহু ভয় পেয়ে যায়। তখন থেকেই ওর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। মানসিক ধাক্কা সহ্য করতে পারেনি।”
রওনক গলা নিচু করে বলল, “ভাই, তুই জানিস না, রাজীব আর সজীব কতটা নিচে নেমে গেছে। তারা বাড়ি ফাঁকা পেয়ে কুহুর সঙ্গে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছিল। কুহু তখন পালিয়ে বাঁচে, কিন্তু সেই ভয় ওকে ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছে।”
স্মৃতি কাঁপা গলায় বলল, “ভাইয়া, আমরা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও কিছুতেই শান্ত হতে পারেনি। ভয়টা এমনভাবে ওকে গ্রাস করেছে যে জ্বর বেড়ে গেছে। তুই ফিরে এসেছিস, এখন তুই ওর পাশে থাক। ওকে সাহস দে।”
রোহানের চোখে যেন আগুন জ্বলতে লাগল। সে কঠিন গলায় বলল, “ওরা এটা করার সাহস পেল কীভাবে? কুহুর সঙ্গে এমন কিছু করার চেষ্টা… তাদের এর শাস্তি আমি দেব। ওদের ছাড়া হবে না।”
রওনক বললো,, ভাই ওদের আটকে রাখেছি কুহুর ঘরে। 
এই কথা শুনে রোহান একটা ক্রুর হাসি দেয়। সে কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “কুহু, আমি এখানে আছি। তুমি আর ভয় পেও না। ওরা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এবার আমি তাদের এমন শিক্ষা দেব, যাতে ভবিষ্যতে এমন কিছু করার সাহস আর কখনো না পায়।”
স্মৃতি আর রওনক চুপচাপ বাইরে চলে গেল। ভাবীমাও তাদের সঙ্গে গেলেন। রোহান কুহুর পাশে বসে রইল।
সেই রাতে রোহান আর ঘুমাল না। কুহুর পাশে বসে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ওঠা-নামা দেখছিল। তার মনে একটাই প্রতিজ্ঞা ঘুরপাক খাচ্ছিল—
"রাজীব আর সজীবের নোংরা উদ্দেশ্য আমি ধ্বংস করে দেব। তারা কুহুর সঙ্গে যা করেছে, তার পরিণাম তাদের পেতেই হবে।"
রওনক,, স্মৃতি,, শ্রাবনী,, রোহান,, রোহানের মা বসে আছে। মনে মনে আফসোস করছে কেনো যে কুহু একা ফেলে গেলো। 
রোহান রওনক কে দিয়ে তার ফুফুকে কল করিয়ে এই বাড়িতে আসতে বলেছে। আর তার বাপ,,চাচার,,চাচির,,মৌ এর ফোন গুলো কেড়ে নিয়েছে। কাল সকালে আহম্মেদ বাড়িতে তান্ডব চলবে। 
রোহান এক পলক তাকলো কুহুর পানে ইশ্ মেয়েটা দেখেই বুকটা কেমন করে উঠছে। রোহান দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে কাল সকাল হওয়ার অপেক্ষাতে। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রোহান তার মাকে ঘুমাতে পাঠালো,, স্মৃতিকে ও তাই করলো শুধু বাড়ির তিনটি মানুষ সজাগ আছে। ঘুমের মধ্যে ও কুহু কেমন ভয়ে কেঁপে উঠছে। রোহান কুহুকে জাপ্টে ধরে বললো,, কুহু পাখি ভয় পাস না আমি চলে এসেছি। তুই নিরাপদ আছিস। বুক দিয়ে আগলে রাখবো। আমার কলিজা টা আমার। কুহুর কপালে চুম্বন করতে গিয়ে রোহানের চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো কুহুর কপালে। কুহুর বন্ধ চোখেও কেমন জল গড়িয়ে পড়লো খুব যত্ন কুহুর চোখের পানি টা মুছে দিয়ে বললো,,, 
❝শুধু তুই ছিলি, আর আমি ছিলাম তোর পাশে,
তোর ভয়, তোর কষ্ট—আমার বুকের মাঝে।
তুই যখন কেঁপে উঠলি, আমি ছিলাম সেখানে,
বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলাম, তুই একা না ফিরে।
বিষাদ ছিল, রাতের অন্ধকার, পাখির মতো তোর আতঙ্ক,
তবে আমার হাত ছিল তোর পাশে, যতটুকু পথ—ততটুকু অন্ধকার।
কুহু, তুই জানিস কি, তোর চোখে যখন জল গড়ালো,
আমার বুকটা কেমন ছিঁড়ে গেলো, এ সবই তো আমার ভালোবাসা।
তুই আর আমি এক হলাম, অন্ধকারে, শান্তিতে,
যতটুকু ভয়, ততটুকু ভালোবাসা, আমি ছিলাম তোর কাছে।
তোর কপালে আমি চুম্বন দিলাম, দুঃখের স্রোতে,
কুহু, তুই জানিস—আমি আছি, তুই নিরাপদ, এই প্রতিজ্ঞায়।❞ 
ভোর পাঁচ টা বাজে সেই সময়ে কুহুর জ্বর টা কমে এলো। বাহিরে থেকে এসে একবারের জন্য ফ্রেশ হয়নি এখন ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে কুহুর পাশে শুয়ে পড়লো। ভাবীমা আর ভাইয়া কে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে। 
কুহুকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো,, 
❝তুমি যখন হাসো, আমি হারিয়ে যাই তোমার শূন্যতায়,
তোমার স্পর্শে মিলিয়ে যায় সব দুঃখের ছায়া,
একা আমি কিছুই নয়, তুমি ছাড়া পৃথিবী অচেনা,
তোমার প্রতি এই ভালোবাসা এক জীবনের চেয়ে অনেক বড়।❞ 
শরীরের ক্লান্তি তে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়লো রোহান টের পায়নি। 
---- 
সকাল ১০ রোহানের ফুফু আগমন হয় আহম্মেদ বাড়িতে। নিচের চেচামেচি শুনে রোহান আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে কুহুর কাছে গিয়ে কুহুর কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে কি না না জ্বর টা নেই। রোহান কুহুকে ডাকছে,, এই কুহুপাখি উঠ সকাল হয়ে গেছে। বেশ কয়েক বার এ ডাকে কুহু পিট পিট করে চোখটা খুলে দেখলো রোহান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রোহান দেখে কে অবাক এর চোখে তাকিয়ে আছে। রোহান কুহুর গালে হাত দিয়ে বললো,, কি হয়েছে কোন সমস্যা?
কুহু রোহান কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। রোহানও বাচ্চাদের মতো করে কুহুকে আগলে নিলো তার বাহুডোরে। হুঁশ কুহুপাখি কাঁদে না তো। এইতো আমি। 
❝ ভয় কি তোমার, বলতে পারো তুমি কী ভাবো,
আমার কাছে থাকলে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
তবে বেশ তোমায় নিলাম আমার বাহুডোরে ❞ যাও ফ্রেশ হয়ে নেও নিচে আসো আমি নিচে আসছি। রোহান একটা ব্লাক কালারে লং ব্লেজার পড়ে হাতে ঘড়ি টা পড়ে শরীরে একটু পারফিউম মেখে পকেটে হাত দিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে নামছে। ওর নামা দেখে মনে হচ্ছে কোন দেশের নবাব নামছে। এমন পরিস্থিতে ওর চুপ থাকাটা ভয়ঙ্কর পূর্বভাস দিচ্ছে। রওনক শ্রবানী স্মৃতি বেশ মুডে আছে। 
রোহান এসে পা এর উপর পা তুলে সবার সামনে বসলো। 
রোহান হাতের ইশারায় সবাই কে বসতে বলছে। রোহানের আচরনে বিরক্ত ওরা৷ 
স্মৃতি তো তার ভাই রওনকের কানে কানে বললো,,, ভাইয়া মেজো ভাই যা দিচ্ছেন একদম ফাটিয়ে দিচ্ছে। পুরো সিনামার হিরো। কিন্তু আপুমনি কেনো আসছে না। 
এসে যাবে চুপ থাক বুইন। 
রোহানের কথা মতো ওর বাবা,, চাচা,, চাচি,, মৌ,, মুন সবাই বসলো। 
রোহান বসে আছে দেখে বিরক্ত নিয়ে রোহানের বাবা বললো,,, চুপ করে আছো কেনো? কিছু বলো। 
ওয়েট মিস্টার আহাম্মেদ আগে আমার কুইন আসুক তারপর তো বলবো। ওদের কথা মাঝে কুহুও চলে আসলো কাকতালীয় ভাবে কুহুর সাথে রোহানের ড্রেস টা মিলে যায়। রোহান ঠোঁট কামড়ে হাসলো কিঞ্চিৎ পরিমান। 
রোহান বসা থেকে উঠে কুহুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কুহু যখন অর্ধেক সিঁড়িতে আসলো তখন রোহান পকেটে একটা হাত দিয়ে আরেকটা হাত কুহুর পানে এগিয়ে দিলো। কুহু ভীতসন্ত্রস্ত চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছে রোহান সল্প হেসে চোখের পাতা ফেলে কুহুকে ভরসা দিলো। কুহু দ্বিধা মনে রোহানের হাতের উপর হাত রাখলো। 
রোহান হাসি মুখে বলে উঠলো গুড গার্ল। 
কুহুকে ধরে নিয়ে এসে ওর পাশে বসিয়ে দিয়ে নিজেও আগের স্টাইলে বসলো। তারপর সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,,, তো এইবার মূল কথা আসা যাক। 
মিসেস হাওলাদার আপনি কি জানেন আপনার চরিত্রহীন ল"ম্প"ট ছেলে এখন কোথায়?
মূহুর্তে তিনি গর্জে উঠে বললেন,, খবরদার রোহান আজেবাজে কথা বলবি? আমার ছেলেরা ভালো৷ 
ওহ্ রিয়েলি কতটা ভালো? ফাঁকা বাড়ি পেয়ে একটা মেয়ের সর্বনাশ করতে আসা টা কি ভালো? 
তিনি আবার তেতে উঠে বললে,, বাড়ি ফাঁকা পেয়ে এই মেয়ে টা আমার ছেলে দুটো কে উস্কিয়েছে। 
রোহানের ঠোঁটে তখন ভয়ংকর ক্রুর হাসি। 
এই পরিস্থিতি টা না কুহু যতটা ভয় পাচ্ছে তার থেকে বেশি রোহানের হাসি টা কে ভয় পাচ্ছে ভয়ে একদম সিঁটিয়ে আছে। 
তিনি বললেন মা যেমনে মেয়ে ওতো তেমনি হবে আজ এই মেয়েকে আমি মে"রে"ই ফেলবো ওর জন্য আমার ছেলেদের বদনাম হচ্ছে কথাটা বলেই তিনি কুহুকে মা"রা"র জন্য উদ্যোক্ত হয়ে হাত তুলতে নিলে রোহান আচমকা ওনার হাত টা মুচড়ে ধরে বললো,, সাহস হয় কি করে ওর গা এ হাত তুলার? আমি কিন্তু ছেড়ে দেই না আন্ডারস্ট্যান্ড। আমার সামনে ওর গা হাত তুলার চেষ্টা করলে হাত ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে একটা সেকেন্ড ও লাগবে না। চুপচাপ ওখানে গিয়ে বসুন। রোহানের হাত থেকে ছাড়া পেতেই তিনি চুপচাপ বসে পড়ে ভাইদের দিকে তাকালেন ওনারা ও চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলতে। 
রোহান রওনক কে ইশারা করতে রওনক উপরে চলে গেলো। কুহুর রুম টা খুলে বাঁধা অবস্থায় রাজীব আর সজীব কে টানতে টানতে নিয়ে এসে কুহুর পা এর নিচে ফেলে ওদের দেখার মাত্র কুহু রোহানের বাহুটা শক্ত করে ধরে কাঁদতে নিলে রোহান বলে খবরদার চোখে যেনো এক ফোঁটাও পানি না দেখি চোখে পানি দেখলেই খবর আছে। রোহান রাজীবের হাতের উপর পা দিয়ে পিষতে পিষতে বলল,, এই হাত দিয়ে ই না ওকে ছুঁতে ছেয়েছিলি একদলা থুথু বের করে ওদের মুখের উপর ছুঁড়ে মে"রে তার ফুফুদের উপর র"ক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বলল,, মিসেস হাওলাদার আপনি না বলেছিলেন মা যেমন হবে তার মেয়ে ও তো তেমন হবে তাহলে আপনার ছেলে এমন কেনো আপনারও কি চরিত্রের কোন সমস্যা ছিলো। 
রোহান ভুলে যেওনা আমি তোমার ফুফু হই। আমার সাথে ভদ্র ব্যবহার করো। 
আপনি ভুলে যাবেন না মিসেস হাওলাদার আপনি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। আপনার ছেলেদের হাত কাঁপলো না আমার কুহুর দিকে নোংরা হাত বাড়ায়। আজ ওদের শাস্তি কঠিন শাস্তি। রোহান রওনক ইশারা করতে রওনক তিন টা চাবুক একত্রিত করে ওদের মুখ টা বেঁধে তারপর দুই ভাই এর পিটের উপর আঘাত করতে নিলে রোহানের বাবা বাঁধা দিতে আসলো রোহান দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললো,, খবরদার মিস্টার আহাম্মেদরা আপনারা কেই আজ আমাকে বাঁধা দিবেন না। সবাই এক ঘাটের মাঝি। আপনাদের তিনি ভাই বোনের সব কু-কর্ম আমার জানা তাই চুপচাপ থাকুন সময় হলে আপনারা ও আপনাদের কর্মের ফল পাবেন। আর কথা না বলে দুই ভাইকে একসাথে আঘাত করলো মুখ বাঁধা থাকা অবস্থায় তারা চিৎকার করতে পারছেনা। রোহান আঘাত করতে করতে বললো,, "How dare you touch her?" আজ তোদের ছাল চামড়া তুলেই ফেলবে যেই হাত দিয়ে কুহুকে টর্চ করেছিস সেই হাত দুটো কে"টে টুকরো টুকুরো করে রাস্তার কু"কু"র"কে খাওয়াবো। রোহান আরো একটা ইশারা করলো রওনক কে রওনক ইশারা পেতে ই দুটো হেড ফোন নিয়ে এসে কুহুর আর স্মৃতির কানে দিয়ে দিলো যাতে ওরা কিছু শুনতে না পায়। কুহু ভয় পেয়ে আছে ওর হাত পা কাঁপছে। শ্রাবনী এসে কুহুকে জড়িয়ে ধরলো। স্মৃতি ও এসে কুহুকে জড়িয়ে ধরলো। 
রোহানের থামার কোন নাম গন্ধনেই রোহান পা এ বোর্ড জুতার সাহায্য রাজীব হাত টা ইচ্ছে মতো পিষ্টছে। রওনক এসে সজীবের টা পিষ্টছে। রোহান আর রওনক যেনো আজ ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। রোহান এক একটা আঘাত করছে আর বলছে,, খুব পি"নি"ক তোদের খুব উত্তেজনা তোদের মেয়ে দেখে জিভে পানি আসে। সালা বা"ই"ন"চো"দ তোদের ভাই বোনের চরিত্রে এতো সমস্যা। একজন তো ছেলে দেখে ঘেঁষাঘেঁষি শুরু করে দেয়। ওদের অবস্থা খারাপ দেখে রওনক ছেড়ে দেয় সজীব কে তারপর রোহান কে টেনে নিয়ে এসে বললো,, ভাই ছেড়ে দে আর না ম"রে যাবে।
 ম"র"লে মরুক। ওদের এতো কুড় কুড়ানি আজ আমি শেষ করবো। 
রোহান ভুলে যাস না তুই কে। তোর লেভের এইটা না। ওদের কে ছেড়ে দিয়ে হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্থা কর। 
রোহানের পা এর কাছে এসে ওর ফুফু বললো,, আর মাড়িস না আমার ছেলে দুটো ম"রে যাবে ওরা আর কোন দিন তোর বাড়ির ত্রিসীমানায় আসবে না। 
রোহান ছেড়ে দিলো তাদের কে। রোহান একনজর কুহুর দিকে তাকালো কুহু ভয়ে একদম বিড়াল ছানার মতো চুপসে গেছে। 
ভাইয়া তুমি সামলাও বাকিটা আমি কুহুকে নিয়ে যাচ্ছি বলে কুহুর কাছে গিয়ে সামনে পিছে না তাকিয়ে কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে গেলো। রুমে নিয়ে এসে রোহান কুহুর কান থেকে হেডফোন টা খুলে দিলো কুহু তখন ভয়ে জুবুথুবু হয়ে আছে। রোহান বুঝলো ওর ঘুমের দরকার এতো কিছু চিন্তা না করে রোহান কুহুকে ঘুমের মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। 
রোহানে কুহুর ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ মিলিয়ে দিয়ে গভীর এক চুম্বন করে ছেড়ে দিয়ে ঘুমে আছন্ন কুহুর হাতে উল্টো পিটে চুম্বন এঁকে দিয়ে বললো,,, 
❝ কুহু আমার প্রাণ প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি,, 
তুমি একা নও আমি আছি তো সর্বদা তোমার সাথে,, 
আমার আত্মায় মিশে থাকা একটা অংশ তুমি,, 
আত্মা ছাড়া যেমন মানুষ মৃ"ত তেমনই 
তুমি ছাড়া আমি মৃ"ত ❞
 ❝ আত্মা কখনো মরে না, সে শুধু বদলায় রূপ,
শরীরের সীমানা পেরিয়ে, ছুঁয়ে যায় অদৃশ্যরূপ।
শূন্যতার মাঝে লুকায় সুখের স্মৃতি,
যেখানে দুঃখের ছায়া হয়ে যায় অমলিন জ্যোতি 
আত্মার পথ চলা চিরকাল, অমৃতের সংগীত
তাই শোনো তার গান, গভীর মনের গভীরে,
আত্মা বলে দেয় গল্প, যা লিখে আছে সৃষ্টির সীমানা ❞ 
--- 
ঘুম থেকে উঠে কুহু এলোমেলো পায়ে নিচে নামতে নিলে রোহান কুহুকে ধরে বলে পরে গিয়ে হাত পা ভাঙ্গার শখ জেগেছে না কি তোর। আস্তে ধীরে আয়। ওরা নিচে নেমে দেখলো শুধু মাত্র,, রওনক,, শ্রাবনী,,স্মৃতি আর ওদের মা টেবিলে বসে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। বাকি কেই আসে নি। মূহুর্তে কুহু নিজেকে অপরাধী ভাবতে নিলে। রোহান তার দৃঢ় গলায় বলে,, একদম না কুহু তুই নিজেকে অপরাধী ভেবে কষ্ট অনুভব করবি না। তুই অপরাধী না ওরা অপরাধী সো কুল। আয় খেতে বস। ওরা খেতে বসলো। খাওয়া শেষ করে যে যে যার যার রুমে চলে গেলো। 
কুহু বই নিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে বই এর পৃষ্ঠা গুলো শুধু উল্টিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তার কোন মন নেই পড়াতে। 
কুহু মনে মনে ভাবছে, "রোহান না থাকলে কেন যেন কিছুটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এমনটা কি শুধুমাত্র তার সাহায্য এবং সহানুভূতির কারণে, না কি এর পিছনে অন্য কোনো অনুভূতি বা কারণ রয়েছে?"
কুহু নিজে জানে না, কিন্তু তার মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতি জন্ম নিয়েছে। রোহান যখন পাশে থাকে, তখন তার একধরনের শান্তি অনুভব হয়, মনে হয় যেন পৃথিবীটা স্থির হয়ে গেছে, সব কিছু ঠিক আছে। কিন্তু যখন রোহান নেই, সে কিছুটা অস্থির হয়ে পড়ে, তার দম নিতে কষ্ট হয়, যেন কিছুটা অস্বস্তি হয়ে থাকে।
সে বুঝতে পারে না, এই অনুভূতি কি আসলে তার আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে, নাকি রোহানের উপস্থিতি তার জীবনে একটা বিশেষ স্থানের জন্ম দিয়েছে, যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি। কুহু জানে না কেন, কিন্তু তার মনে একটি প্রশ্ন তৈরি হয়: "এটা কি সত্যিই শুধু সাহায্যের জন্য, নাকি কিছু গভীর সম্পর্কের জন্য?"
এই ভাবনায় কুহু একসময় নিজেকে হারিয়ে ফেলে, এবং রোহান সম্পর্কে তার অনুভূতির সত্যতা বুঝতে চেষ্টা করতে থাকে। 
কুহু এইসব ভাবা বাদ দিয়ে পড়াতে মন দিলো কিন্তু কোথায় ও যেনো খচখচানিটা রয়ে গেলো। 

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ১০ পর্ব

মিসসে সালমা আহাম্মেদ তার ছেলের রুমে এসে দেখলেন তার ছেলে কাজ করছে। মিসেস সালমা আহাম্মেদ বললেন,, তুই কি ব্যস্ত?
না ব্যস্ত না এমনি টুকটাক কাজ করছিলাম। এসো বসো। 
সালমা আহাম্মেদ বসলেন। 
কিছু বলবে? 
হুম..!  
কি বলবে বলো আমি শুনছি। 
তুই আয় তো আমার সামনে বস। 
রোহান বিনা বাক্যে তার মা এর সামনে বসলেন। 
রোহানের মা মিসেস সালমা আহাম্মেদ বললেন,, বাবারে এইভাবে কুহুকে নিরাপত্তা দিতে পারবি না। ওর নিরাপত্তার জন্য একটা শক্তপোক্ত পরিচয় দরকার। আমি বলি কি তোর আর কুহুর বিয়ের কথা টা বলে দেই। 
মা তুমি বুঝতে পারছো না। এই বাঘ বন্দী খেলাতে আমি কুহুকে আনতে পারি না। ওরা মানুষ রূপী জা"নো"য়া"র। আমার শত্রুর শেষ নেই। সেই শত্রুতার টানে যদি কেউ কুহুর কোন প্রকার ক্ষতি করে দেয়। তাহলে আমি জীবিত অবস্থায় মৃ"ত হয়ে যাবো। আগে আমি এই বাঘ বন্দী খেলা টা শেষ করবো তারপর আমি সবাইকে জানাবো। ভুলে যেওনা মা আমাদের ঘরের ভিতরেই কিন্তু শত্রু। বাহিরে মানুষদের সাথে লড়াই করা যায় কিন্তু নিজের প্রিয়জনদের সাথে কি করা যায়। তবুও তো আমি করছি প্রতিনিয়ত। 
রোহানের কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাঃস ফেললেন মিসেস সালমা আহাম্মেদ। তারপর বললেন রোহান শুন এতো রেগে যাস না। ওদের কে অন্য ভাবে ও তো শাস্তি দিতে পারতি? 
না মা পারতাম না। ওঁদের নোংরা হাত তো আমার দিকে এগিয়ে গেছিলো আমার তো উচিৎ ছিলো ওদের হাত টা কে"টে টুকরো টুকরো করে দিতে। 
যদি হিতে বিপরীত হয়ে যেতো তখন কি করতি?
মা তুমি তো জানো আমি এই রকম ই আমার মুখটা চলে কম হাত টা চলে বেশি। আর যার কারনে আমি মারি পয়েন্টে পয়েন্টে আর ওদের ব্যাথা লাগে জয়েন্টে জয়েন্টে। 
আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পড়িস আমি যাচ্ছি তোর বাপ চাচারা কেউ ফিরেনি। 
ওরা ফিরবেও না। 
তিনি চলে গেলেন। তিনি চলে যেতে রোহান কল করলো অগ্নিকে। 
হ্যালো অগ্নি। 
হুম বলো। 
বলছি যে ওদিকের সব ঠিক আছে তো। 
হ্যাঁ এমনিতে সব ঠিক ই আছে তবে আরো কিছু ক্লু  পেয়েছি। 
কেমন সেইটা? 
এইদের কারবার অনেক বড় এইটা বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে চায়নাতেও আছে। কাল আমরা কেবল এক সাইড থেকে ওদের বাঁচাতে পাড়লেও অন্য সাইড পারিনি। আমার একটা মিশন সাকসেসফুলি করতে পারলেও আরেক টা পাড়ি নি। আর পাড়া কথা ও না কারন আমাদের চোখের সামনে কিছু জিনিস হাইড করা হয়েছিলো। কাল আরো এক সাইডে নারী পা"চা"র সহ কিছু মা"দ"ক দ্র"ব্য আর কিছু অ"স্ত্র ও পাচার হয়েছিলো চায়নাতে। আপনি দেশে আসার পর আমি অনেক দেরিতে জানতে পারি জানতে পেরে ছুটে যাই কিন্তু অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। 
বিশ্বাস করো অগ্নি ওদের যদি পাই না সোজা ই"ন"কা"উ"ন্টা"র করে দিবো। 
এখন কি করবে? 
আমি এখন চায়নার CID এর সাথে যোগাযোগ করবো। 
তুমি চিনো? 
হুম আমি চায়নাতে স্পেশ্যাল ট্রেনিং এর জন্য গিয়েছিলাম। 
ওহ্ আচ্ছা। 
এখন রাখি বলে রোহান ফোন টা কেটে চায়না CID- হেডকোর্য়াটারে একটি গোপন যোগাযোগ করে। 
রোহানঃ "নীহাও, উও শি লাইজি মেংজালা গুও C.I.D দে লুওহান আইহামাইদ। উও শিয়াও জেনি মেন দে ফু ঝের তানহুয়া। ঝে শি জিনজি ছিংকুয়াং।"
বাংলা: "হ্যালো, আমি বাংলাদেশের C.I.D থেকে রোহান আহাম্মেদ। আমি আপনার ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলতে চাই। এটা জরুরি।"
 অফিসারঃ "ছিং তিগং নিন দে শেনফেন ঝেংমিং, ইবিয়ান উমেন হেশি নিন দে শেনফেন।"
বাংলা: "আপনার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য দয়া করে আপনার আইডি বিস্তারিত তথ্য দিন।" 
রোহান তার আইডির ডিটেইল দেয়। 
লি ঝাওঃ"লুওহান শিয়ানশেং, নিন লিয়ানশি উও দে ইয়ুয়িন শি শেনমা?"
বাংলা: "রোহান সাহেব, আপনি আমাকে কেন যোগাযোগ করেছেন?"
রোহানঃ "উওমেন দেদাও দে শিনশি শিস, ইগে ফানঝুই জুজি ঝেংজাই ছং মেংজালা গুও থুও ইন্দু শিয়াং ঝোংগুও ফানমাই রেনকৌ, দুপিন হে উকি। শিংতং জিও ডিংজাই মিংওয়ান।"
বাংলা: "আমাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একটি অপরাধী সংগঠন বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে চীন পর্যন্ত মানব পা"চা"র, মা"দ"ক এবং অ"স্ত্র পা"চা"র করছে।"
 লি ঝাওঃ "হাও দে, উও হুয়ে আনপাই শিংতং, দান শুইয়াও নিন দে সিয়েচু।"
বাংলা: "ঠিক আছে, আমি অভিযান শুরু করব, তবে আপনার সাহায্য প্রয়োজন হবে।"
রোহানঃ "তাংরান, উওমেন দে মুবিয়াও ঝিঊইগে, জিও শি চেদি শাওমি ঝেগে ফানঝুই ওয়াংলুও।"
বাংলা: "অবশ্যই, আমাদের লক্ষ্য একটাই—এই অপরাধ চক্রের পুরোপুরি ধ্বংস করা।"
লি ঝাও:ডুই, নিন শুয়াদে ডুই। উওমেন বু জিনগি ইয়াও চুইহুই ঝেগে ফানঝুই জুডুয়াং, হাইও শুইয়াও কুয়েবাও তা বু জাই ফুসেং।"
বাংলা: "হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলেছো। আমাদের শুধু এই অপরাধী গোষ্ঠী ধ্বংস করতে হবে না, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে তারা আর কখনও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।" 
রোহানঃ "শিয়ে-শিয়ে" (ধন্যবাদ) 
রোহান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো বাট তার আরেক টা চিন্তা কারা করা এই চক্রের সাথে জড়িতো আর কারাই বা মূল মাথা। 
রোহানের প্রচুর মাথা ব্যাথা করচ্ছে। তাই রোহান নিচে গেলো কফি বানানোর জন্য। হঠাৎ রান্না ঘর থেকে টুংটাং শব্দ পাচ্ছে। রোহান লম্বা লম্বা পা ফেলে কিচেন রুমে এগিয়ে গেলো গিয়ে দেখলো কুহু রান্না করে। 
রোহান তার গম্ভীর কন্ঠে বললো,, এতো রাতে রান্না ঘরে কি করিস? 
কফি করছি। 
আমার জন্য ও কর। 
কুহু সম্মতির মাথা নাড়ালো। 
রোহান সোফায় গিয়ে বসে। মিউট করে টিভি ছাড়লো। 
কুহু কফি বানিয়ে কফির একটা মগ রোহান কে দিয়ে আরেক টা মগ সে নিজে নিলো। হঠাৎ চোখ যায় টিভিতে। টিভির একটা জায়গায় চোখ টা আঁটকে যায়। রোহান যেই না চ্যানাল টা চ্যাক করতে যাবে ওমনি কুহু বলে উঠলো এক মিনিট এখন চেঞ্জ করবেন না। 
কুহু মনোযোগ দিয়ে দেখছে সেইটা বুঝার জন্য সেও তার মতো টিভিতে মনোযোগ দিলো কিন্তু কাজের কাজ কিছু হলো। 
রোহান কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,, কি এতো দেখছিস আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। 
সাদা কালারের পাঞ্জাবি পড়া ছেলে টা কে দেখেছেন আমার সাথে পড়তো। ক্লাস ১০ পর্যন্ত পড়েছে পরে আর পড়েনি। এখন আবার মডেল হলো কিভাবে কি ফিটনেস । আমাকে পপ্রোজ করছিলো আমি রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম আর এখন..
রোহান ভ্রুঁ কুঁচকে কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,, এখন কি বল? এখন কি তোর আফসোস হচ্ছে। কুহু তোর তো নজর ভালো না। তুই ছেলেদের ফিটনেস দেখিস। এমনেতে এমন ভাবে থাকিস যেনো ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে পাড়িস না আর তলে তলে এইসব। তুই তো দেখে মিনমিনা শ"য়"তা"ন। যদি ওই চোখ দিয়ে কোন ছেলেদের দিকে তাকিয়েছি তো চোখ খুলে মার্বেল খেলবো। যা কফি টা খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়। আমার ফুরফুরে মেজাজ টা বিগড়ে দিলো। 
কফির মগ টা নিয়ে চলে গেলো রোহান। আর রোহানের যাওয়ার পানে থতমত চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে কুহু। 
--- 
সকালে কুহু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে শীতের জামা পড়ে পড়া টেবিলে বসে পড়ছে আজ থেকে তার এক্সাম। এই তিনটা কুহুর জীবনে কত কিছু ঘটে গেছে। জীবনটা ছোট কিন্তু জীবনে ঘটে যায় ঘটনাগুলো এক একটা সাহিত্য উপন্যাস এর কাছেও হেরে যাবে। 
কুহু পড়ছিলো ঠিক সেইসময় শ্রাবনী এসে বললো,, কুহু নাস্তা নিয়ে এসে খেয়ে নেও। পরীক্ষা যাওয়া সময় আবার খেয়ে যাবে। 
কি? 
বেশি খেলে তো মোটা হয়ে যাবো। 
কিছু করা নেই রোহান বলে দিয়েছে। তোমার শরীর নাকি দুর্বল বেশি বেশি খেতে। 
না আমি খাবো না। 
রোহান বুকে হাত গুঁজে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বললো,, কেনো খাবি না? 
আকস্মিক রোহানের গলা পেয়ে হকচকিয়ে গেলো পরে আবার নিজেকে ঠিক সামলে নিয়ে বললো মোটা হয়ে যাবো বেশি খেলে। 
চড়িয়ে সিঁধে করে দিবো। তুই কি কোন মডেলিং বা সিনামাতে নাম লিখেয়েছিস না কি? চুপচাপ খাবি। নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বুঝেছিস ননসেন্স একটা বলে কুহুর রুমে ঢুকে কুহুর বিছানাতে  আয়েশ করে বসে বললো নে খা আমি বসে আছি যতক্ষণ না খাবি ততক্ষণ আমি রোহান এইখান থেকে নড়বো না। 
অসহায় কুহু হাল্কা কিছু খেয়ে নিতেই স্মৃতি দুধে গ্লাস নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে বললো,, আপুমনি দুধটুকু ফিনিশ করো। 
ইর্য়াক আমি খেতে পাড়ি না গন্ধ লাগে। 
ভালো জিনিস তো ভালো লাগবেই না। বুঝলি স্মৃতি বুঝলে ভাবীমা ওকে পান্তা ভাত আর পেঁয়াজ মরিচ দেও ওটা খাবে। 
তো ওটা তো খাবার জিনিস ই। 
কুহু সিরিয়াসলি তুই আমার মুখের উপর তর্ক করছিস। 
অসহায় কুহু ওদের সাথে পেরে উঠবে না। তাই নাকে টিপ দয়ে হলেও দুধ টুকু ফিনিশ করে বললো হ্যাপি তোমরা খুশি এইবার পড়তে দেও। 
আর স্মৃতি যাও গিয়ে পড়তে বসো। 
ওরা সবাই চলে গেলো কিন্তু রোহান যায়নি সে তো কুহুর রুমে বসে আছে। 
রোহান বসে আছে বলে কুহু কিছু বলতে নিলে রোহান বললো খবরদার কুহু আমাকে রুম থেকে যেতে বলবি না। আমার যখন ইচ্ছে তখন যাবো। আমি এসেছিও নিজের ইচ্ছে যাবো ও নিজের ইচ্ছে চুপচাপ পড়। 
পড়া শেষ করতে করতে ৯ টা বেজে গেলো। রোহান ওর ফাইল টা সুন্দর করে গুঁছিয়ে দিয়ে আর কিছু টাকা দিয়ে বললো,, খবরদার পরীক্ষার শেষে কিন্তু হেটে একদম বাড়ি ফিরবি না। রিকশা নিয়ে তবে বাড়ি ফিরবি। আর শুন কোন দরকার হলে আমাকে কল দিস। 
এক্সাম এ ফোন এলাও না। 
ঠিক আছে আয় তোকে পৌঁছে দিয়ে আসি। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্মৃতি আর কুহুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো। 
কুহুর কলেজে বেশি দূরে না। আধাঘন্টার মতো লাগে কুহুকে তার কলেজে পৌঁছে দিয়ে স্মৃতি কে নিয়ে রওনা দিলো তার স্কুলে স্মৃতির স্কুল টা একটু দূরে। 
স্মৃতি স্কুলে নামিয়ে দিয়ে রোহান সোহেল কে কল করলো। 
রিং হওয়ার সাথে সাথে সোহেল রিসভ করলো। 
সোহেল রিসিভ করতে রোহান বললো,, আমি লোকেশন টা অন করছি তুই আয় আমার সাথে সাথে তারপর ফোন টা কেটে দিয়ে আবার গাড়িটা স্টার্ট দিলো। 
--- 
একটা পুরনো বাড়িতে এসেছে রোহান আর সোহেল। সেইদিন ক্লাবে থেকে ধরে আনা লোকটি কে এই বাড়িতে আটকে রেখেছে। দুই ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেনি। আজ এলো। না"রী পা"চা"র চক্রের সাথে এও জড়িয়ে আছে। রোহান চেয়ার টেনে বসলো। সোহেল কে চোখের ইশারা দিলো লোকটির চোখের আর মুখের বাঁধন টা খুলে দিতে। রোহানের কথা মতো সোহেল সেইটাই করলো। রোহান পানির বোতল নিয়ে লোকটির চোখে মুখে দিতেই লোকটি চোখ মেলে তাকালো। লোকটি আশেপাশ দেখতে নিলে রোহান গমগম কন্ঠে বলে উঠলো,, আশপাশ পরে ও দেখতে পারবি। এখন সামনে তাকা। 
লোকটি সামনে তাকিয়ে দেখলো এক লম্বা চওড়া যুবক তার সামনে দাঁড়িয়ে বসে আছে চোখ মুখ শক্ত করে। আর চোখ যেনো চোখ নয় কোন ফুটন্ত  আগ্নেয়গিরির লাভা। 
লোকটি একটা ঢোঁক গিললো। 
রোহান লোকটির মুখের সামনে পানিটা নিয়ে গাল টা চেপে ধরে হা করিয়ে পানি খাইয়ে দিয়ে বললো,, তোর কাহিনী শেষ এখন আমার কয়টা প্রশ্নের উত্তর ঠিক ঠিক দে নয়তো তোকে গু"লি করে মে"রে ফেলতেও দুই সেকেন্ড ভাববো না। 
লোকটি ভিতরের ভয় টা চেপে রেখে মনে সাহজ রেখে বলে উঠলো,, কে তুই?  তোকে ভয় পাই না। 
রোহান লোকটির দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো আমি কে সেইটা শুনার পর তো তুই প্যান্ট নষ্ট করে ফেলবি। 
CID অফিসার রোহান আহাম্মেদ নামটা তো শুনেছিস ই। এখন বল নারী পা"চা"রে"র সাথে কে কে জড়িত। 
জানিনা আর জানলে ও বলবো না। 
তোর বলতে হবে না আমি নিজেই বের করে নিবো তোর মুখ থেকে। আমি খারাপ হতে চাইনি বাধ্য করলি। 
রোহান সোহেলকে বললো সব রেডি করে নিয়ে আয়। সোহেল পাশের রুমে গেলো গিয়ে সবকিছু নিয়ে এলো। 
গরম দু'টো রড এনে সোহেল রোহানের হাতে দিলো। রোহান ক্রু হাসি দিয়ে বললো বলবি কি না? 
না বলবো না। 
অকে তোর চয়েস আমাকে কিছু বলতে পারবি না বলে গরম রড দু'টো ওর দুই উরুতে ধরলো। 
মূহুর্তে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠলো লোকটি। 
রোহান কোমরে গুঁজে রাখা পি"স্ত"ল টা বের করে। লোকটির কপাল বরাবর ধরে বললো শুট করে দেই। আমি এক থেকে তিন বলবো এর মধ্যে তুই সত্যি টা বলবি। সোহেল গুনতো। 
সোহেল কাউন্ট করা শুরু করলো। চোখের পলকে তিন গুনা শেষ। যেই না রোহান ট্রিগার টা চাপ দিতে যাবে ঠিক সেই সময় বলে উঠলো না না আমাকে মা"র"বে"ন না আমি বলছি। আমাকে অর্ডার করা হতো আমি সেই মতো ই কাজ করতাম। এইখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতাম আর নারীদের সাথে প্রত্যারনা করে ওদের নিয়ে এসে ঢাকায় বিক্রি করতাম শুধু এইটাই আমার কাছ আর কিছুনা। 
কার কাছে বিক্রি করতে। 
"ফয়সালের" কাছে। রাস্তার বড় পাশে যে বস্তি টা আছে না ওই বস্তিতে থাকে ও সব জানে। আমাকে ছেড়ে দিন আমাকে মারবেন না। 
তোর মতো নোংরা আর্বজনা পরিষ্কার করতে হয় নয়তো সমাজ নষ্ট হবে বলে পর পর কয়েকটা গু"লি করলো। লোকটি র"ক্তা"ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লো প্রানহীন হয়ে। 
সোহেল শুন তুই ফয়সালের বিষয়ে খুঁজ নে কালকের ভিতরে জানাবি। 
আয় এখন আমার লোক এসে একে নিয়ে গিয়ে গুম করে দিবে। 
সোহেল আর রোহান ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। 
রোহান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে অগ্নির সাথে যোগাযোগ করলো। অগ্নি বলেছে কাল বা পরশুর মধ্যে সে দেশে আসবে। রোহান নিচে নেমে সোফায় বসে টিভি দেখছিলো। আর ঘড়ি দেখছে ঘড়িতে যখন একটা বাজে তখন রোহান বাসা থেকে বের হলো কুহুকে আনতে। 
---- 
পরীক্ষা হল থেকে বের হয়ে কুহু আর কুহুর দুটো ফ্রেন্ড সিয়াম আর লিমার সাথে দাঁড়িয়ে চটপটি খাচ্ছিলো। চটপটি খাওয়া শেষ করে নিজেদের বিল ভাগাভাগি করে দিয়ে তারপর হাটা ধরলো। হঠাৎ পিছন থেকে একটা ছেলে ডেকে উঠলো,, কুহু। 
কুহু পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ওদের কলেজের সিনিয়র ভাই। 
কলেজের সিনিয়র ভাই। দৌড়ে এসে কুহুর সামনে এসে থেমে বললো,,, কুহু কেমন আছো? তোমার তো দেখাই নাই। 
কুহু একটু হেসে বললো,, আলহামদুলিল্লাহ আপনি? 
আলহামদুলিল্লাহ। 
বলো দেখা শুনা নেই কেনো?
আসলে লেখা পড়া নিয়ি বিজি ছিলাম তাই। 
ওহ্ আচ্ছা একটা খাম বের করে দিয়ে বললো এই নেও। 
কি এইটা?
 আরে নিয়েই দেখো তো। 
কুহু যখনই খাম টা নিতে যাবে ঠিক সেই সময় রোহান বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে ছেলেটির হাত থেকে খামটা নিয়ে গেলো। 
রোহান কে এই মূহুর্তে এইখানে দেখে ভীষণ চমকে গিয়ে বললো আপনি এইখানে? 
রোহান দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বললো,, তোকে নিতে এসেছি চল তুই আমার সাথে। 
তারপর সামনের ছেলেটিকে বলে ওর ধারে কাছেও যেনো তোমায় না দেখি। তোমার খাম তোমার কাছেই রাখো ওর কাছে যেনো সেইটা না যায় যদি যায়। তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। আসি বলে কুহুর হাতটা ধরে বাইক এর সামনে দাঁড়ালো তারপর কুহুর কোমর ধরে কুহুকে তুলে বাইকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে বাইক স্টার্ট দিলো। সবকিছু এতো দ্রুত হলো যে কুহু প্রতিক্রিয়া করতে ভুলে গেলো। বাড়ি এসে কুহুর হাত টেনে রোহান তার রুমে এনে দরজাটা ধরাম করে বন্ধ করে দিয়ে ওকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো,, খুব সাহস তোর তাই না? 
ওই ছেলের সাথে কিসের এতো কথা কুহু। 
আমি জানতাম না হৃদয় ভাইয়া আমাকে খাম দিবে আমি চলে আসছিলাম সেই সময় ডাক দিয়েছিলো তখন দিয়েছে। 
আর পাশের জন কে আমারই ফ্রোন্ড সিয়াম। 
রোহানের প্রচুর রাগ উঠছে রোহান কুহুর গালের তিলেতে ঠোঁট চেপে ধরে গভীর চুম্বন এঁকে দিলো। তারপর কুহুর কপালে নিজের কপাল টা ঠেকিয়ে বললো,,  
" তোকে কারনে - অকারণে ভালোবাসি 
তোকে ছুঁয়ে দিতে কোন অনুমতি লাগবে না,, 
কারন জন্ম-জন্মান্তে তুই আমার,, 
তুই আমার এমন একজন যাকে হারানোর 
ভয়ে বুক কেঁপে উঠে সারাক্ষণ 
তুই শুধু আমার " 
রোহানের মুখে এইসব কথা শুনে সে তব্দা খেয়ে গেলো। তার শরীর শিহরিত হচ্ছে। তার হৃদপিণ্ড বরাবার কেঁপে কেঁপে উঠছে মনে হচ্ছে ওর কোন হার্ডের রোগী। শ্বাঃস টা যেনো আটকে আসছে। কানে শুধু বেজে উঠছে বার বার ভালোবাসি।  

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ১১ পর্ব

কুহু, সেই যে রুমে এসে দরজার সামনে বসে আছে, আর বের হয়নি। তার চোখে লজ্জার ছায়া, যেন একটি কালো মেঘের মতো মনের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিছানার ওপর হালকা দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে, এবং সে অজান্তেই তার মুখমণ্ডলটি হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছে। তার ভিতরের অস্থিরতা, অস্বস্তি, এবং চরম লজ্জা যেন একে অপরকে ধারণ করে, আর বাইরে থেকে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে, সে চুপচাপ বসে থাকে। মুখের কোণে হালকা রক্তিম ভাব, সারা শরীরের মধ্যে এক ধরনের অদ্ভুত শূন্যতা। সে জানে না, কিভাবে এই মুহূর্তটি পার করবে। ওর কানে বার বার বেজে উঠছে রোহানের একটি কথা ভালোবাসি। রোহানের চুম্বন টা না যতটা এফেক্ট করেছে তার থেকে বেশি রোহানের ভালোবাসি কথাটা এফেক্ট করেছে। 
রোহান ল্যাপটপের স্কিনে বসে কুহুর প্রতিটা কার্যকলাপ দেখে মুচকি হেসে বলছে পা"গ"লি একটা। 
ঠিক সেই সময় কল আসে রোহানের। বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ইন্ডিয়ার CID থেকে কল এসেছে। 
রোহান ফোন টা রিসিভ করে বললো,, হ্যালো রোহান আহাম্মেদ স্পিকিং,, 
সিআইডি অফিসার রণবীর সিং:হেলো, রোহান। মই সিআইডি অফিসার রণবীর সিং। সবসে পেহলে, মই আপকো অউর আপকি টিম কো বধাই দেনা চাহতা হুঁ। মহিলা তস্করি, হাতিয়ার অউর মাদক পদার্থোঁ কে ইস বড়ে র‍্যাকেট কো খতম করনে কে লিয়ে আপনে অউর অগ্নি নে জো কাম কিয়া হ্যায়, ওহ সরাহনীয় হ্যায়। ভারত অউর বাংলাদেশ কি এজেন্সিয়োঁ নে মিলকর এক শানদার অপারেশন কিয়া। 
( "হ্যালো, রোহান। আমি সিআইডি অফিসার রণবীর সিং। প্রথমেই, আমি আপনাকে এবং আপনার টিমকে অভিনন্দন জানাতে চাই। নারী পাচার, অস্ত্র এবং মাদকের এই বড় চক্র ধ্বংস করার জন্য আপনি এবং অগ্নি যে কাজ করেছেন, তা প্রশংসনীয়। ভারত এবং বাংলাদেশের সংস্থাগুলি একসঙ্গে চমৎকার একটি অপারেশন করেছে।") 
রোহানঃ ধন্যবাদ, স্যার। লেকিন অভি কহনা জলদবাজি হোগি কি হাম পুরি তরহ সফল হো গয়ে হ্যায়। ইয়ে নেটওয়ার্ক সির্ফ ভারত অউর বাংলাদেশ তক সীমিত নেহি হ্যায়। ইয়ে চক্র চায়না তক ফেলা হুয়া হ্যায়। কল রাত মেরি চায়না কে সিআইডি অফিসার সে বাত হুই। উনহোনে কহা হ্যায় কি বে জলদ হি ইস পার কার্যাবাহি করেঙ্গে।  
( "ধন্যবাদ, স্যার। তবে এখনই বলা খুব তাড়াতাড়ি হবে না যে আমরা পুরোপুরি সফল হয়েছি। এই নেটওয়ার্ক শুধু ভারত ও বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। এই চক্র চীন পর্যন্ত বিস্তৃত। গত রাতে আমার চীনের সিআইডি অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন যে খুব শিগগিরই এই বিষয়ে তারা অভিযান চালাবেন।)  
সিআইডি অফিসার রণবীর সিংঃ ইয়ে তো অউর ভি বড়ি বাত হ্যায়। আগর ইয়ে নেটওয়ার্ক চায়না তক ফেলা হুয়া হ্যায়, তো হমে উনকি কার্যাবাহি কা ইন্তেজার করনা হোগা। হমে জো ভি মদদ চাহিয়ে, হাম তুরন্ত দেঙ্গে। লেকিন তব তক হমে ইহাঁ কি নিগরানি জারি রাখনি হোগি। 
("এটা তো আরও বড় ব্যাপার। যদি এই নেটওয়ার্ক চীন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, তবে আমাদের তাদের অভিযানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে যা যা সাহায্য প্রয়োজন, আমরা সঙ্গে সঙ্গে দেব। তবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এখানকার নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে।") 
রোহানঃ বিলকুল সহি, স্যার। হাম হর কদম পর সতার্ক রহেঙ্গে। জব তক ইস চক্র কা আখরি ব্যক্তি পকড়া নেহি যাতা, তব তক ইয়ে মিশন অধূরা হ্যায়।
("একদম ঠিক, স্যার। আমরা প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্ক থাকব। যতক্ষণ পর্যন্ত এই চক্রের শেষ ব্যক্তি ধরা না পড়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই মিশন অসম্পূর্ণ।")
সিআইডি অফিসার রণবীর সিংঃ ঠিক হ্যায়, রোহান। হামেঁ ভরোসা হ্যায় কি আপ অউর আপকি টিম ইসে পুরি তরহ খতম কর দেঙ্গে। আগর কিসি ভি মদদ কি জরুরত হো, তো হমে তুরন্ত বাতায়েং। 
("ঠিক আছে, রোহান। আমাদের বিশ্বাস যে আপনি এবং আপনার টিম এটি পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবেন। যদি কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তবে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে জানান।") 
রোহানঃ "ঠিক হ্যায় স্যার বলে ফোনটা কেটে দিলো রোহান। 
প্রায় সন্ধ্যা এখন কুহু কি করছে দেখা দরকার। তাই আবাও ল্যাপটপ টা অন করে দেখতে পেলো কুহু পড়তে বসেছে। রোহান একটু হাসলো। 
রোহান রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে নিচে নেমে দেখলো তার মা আর ভাবীমা কথা বলছে। রোহান পাশে গিয়ে বসেই ওর ভাবীমা বললো,, কি গো দেবরজী,, আজ কালকি আমার ননদ কে কাছ ছাড়া করছোনা ব্যাপার কি?,
রোহান চোখ বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে বললো কি করবো বললো,, ফুলটা তো আমার আমার ফুলে যাতে অন্য কোন ভ্রমর বসতে না পারে তার ব্যবস্থা করছি। যদি আমি কাছে কাছে থাকি তাহলে তো আর কোন ভ্রমর আসতে পারবে না। তা তোমরা কি নিয়ে কথা বলছিলে? 
কি নিয়ে আবার তোর বাপ চাচারা আসছেন একটু পরে তাই নিয়েই। না জানি কোন অশান্তি বাঁধে সেইটা নিয়ে ই টেনশন করছি। 
উঁহুম টেনশন করো না। আমি আছি তো সবটা সামলে নিবো শুধু কুহুকে রুমের বাহিরে আসতে দিয় না। কাল ওর পরীক্ষা যদি পরীক্ষায় খারাপ করে এইসব ঝামেলায় তার থেকে ভালো ও ঘরে থাক। 
রুমে থাকলে তো শুনবেই। 
মা তুমি ভুলে যাচ্ছো আমার রুমটা সাউন্ড প্রুব সো কোন চিন্তায় নাই। দরজাটা লক করে দিলে ই হবে। 
বাহ্ আমার দেবরজী তো খুব চালাক। তোমার রক্তে শিরায় শিরায় ব্রিটিশ। 
কি করবো বলো তোমার চাচা শ্বশুর,, তোমার বাবা  শ্বশুড়,, ফুফু শ্বাশুড়ির শরীরের রন্ধনে রন্ধনে ব্রিটিশ। সো তাদের কে ঠিক করতে তো আমাকে মহাব্রিটিশ হতে হবে। 
ওর কথা শুনে ওর মা আর ভাবীমা হেসে উঠলো। 
রোহানের মা আস্তে করে রোহানের বাহুতো চাপর দিয়ে বললো,, ফা"জি"ল একটা। 
রোহানের মা আর রোহানের ভাবীমা রান্নাঘরে গেলো কাজের লোকদের সব দেখিয়ে দিতে। 
রোহান বসা থেকে উঠে কুহুর রুমে গেলো দুই একবার দরজাতে নক করতেই দরজাটা হুট করে খুলে গেলো।   দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখলো কুহু কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুহুকে দেখে রোহান ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে বললো,, কি রে তোর লজ্জা কি এখনো কাটেনি? না কাটলে পরে কাটাবি এখন আয় আমার রুমে পড়তে বসবি। 
আমি এইখানেই পড়বো। 
কোন কথা হবে না। 
আমিও যাবো না। 
কুহুরানী তুই আমাকে জীদ দেখাচ্ছিস তোর এই জেদ আমার সামনে তোর জেদ খাটবে বলে কুহুর কোমড়ে ধরে কাঁধে তুলি নিয়ে আরেক হাতে কুহুর বইটা নিয়ে রোহান চললো তার রুমে বেচারি কুহু ঝুলে আছে রোহানের কাঁধে। রোহানের সামনে কুহু তো ছোট এতটুকু পাখির বাচ্চা ওকি আর পাড়বে ওর সাথে। চুপচাপ রইলো। বাহিরে যে কেউ ছিলো না কারও সামনে যে ও পড়েনাই এইটাই ওর ঢের ভাগ্য। রোহান রুমে এসে কুহুকে কাঁধ থেকে নামিয়ে বিছনায় বসিয়ে দিলো। 
কুহু বিরবির করে বললো,, হাতি একটা। 
রোহান কুহুর কথা শুনে কুহুর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বললো,, ওয়াট ইউ স্যা কুহু?
নাথিং। 
স্যা এগেইন কুহু। 
কুহু একটু চুপ থেকে বললো হাতি। 
রোহান বুকে হাত গুঁজে আলমারির সাথে হেলান দিয়ে  বললো,, কাকে হাতি বলেছো? 
কুহু ওড়নার একটা অংশ টা আঙ্গুলে পেঁচাতে পেঁচাতে বললো আপনাকে। 
সিরিয়াসলি কুহু। রোহান বড় বড় কদম ফেলে কুহুর সামনে এসে কুহুর গা থেকে ওড়না টা টেনে নিয়ে বললো এইটা তো শাস্তি। চুপচাপ পড়। আর একটা কথা বললে তোকে ভয়ংকর শাস্তি দিবো কুহু কথা না বাড়িয়ে পড়ছে। রোহান দরজাটা টেনে দিয়ে রুম থেকে বের হলো। বের হয়ে নিচে এসে সোফায় বসে টিভি ছাড়লো। ঠিক সেই সময় প্রবেশ করলো,, ওর বাবা,, চাচা,, চাচি আর ওর একমাত্র চাচাতো বোন। 
ওদের দেখে তীর্যক হাসলো রোহান। রোহানের হাসিটা যেনো ওদের কাটা ঘা এ নুনের ছিটা দেওয়ার মতো। 
রোহানের বাবা তেড়ে এসে বললো,, র্নিলজ্জ বেহাইয়া ছেলে ওই দিকে ছেলে দুটো ম"র"তে বসেছে আর তুমি কি করছো হাসছো? ওরা তোমার কাজিন হয়। 
রোহান তার বাবার হাত টা কলার থেকে সড়িয়ে জ্যাকেট টা ভালো করে ঝেড়ে নিয়ে বললো,, এমন কাজিন মোর লাগবো না। এহন আপনার কথাখানা শেষ হইলে আপনে যাইবার পারেন। মোর আবার এতো কথা কহনের টাইম নাই। মোর আবার মেলা কাম। 
রান্না ঘরের দরজাটাতে দাঁড়ি ভাবীমা আর মা সবটা শুনছে। ভাবীমা মুখ টিপে হেসে বললো,, মা আপনার ছেলে তো ভারি দুষ্টু। কিভাবে কথা বলছে। 
ছোট থেকেই ঘাড় ত্যাড়া। 
ওনারা কিছু না বলে চলে গেলো। ওনারা চলে যেতেই রোহান ও হেসে দিলো। রান্না ঘর থেকে এসে ওর মা ওর কান টা টেনে দিয়ে বললো অ"স"ভ্য ছেলে একটা। 
রোহান আর কথা না বাড়িয়ে সে রুমে গেলো রুমে গিয়ে দেখে কুহু ঘুমিয়ে পড়েছে। রোহান বুঝে পায় না না খেয়ে একটা মানুষের ঘুম কিভাবে আসে। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে দেখে মায়া লাগলো তাই সুন্দর করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। রাতে চুপচাপ সবাই খেয়ে রুমে চলে এলো রোহান ও রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে কুহুকে টেনে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো। 
--- 
সকালে কুহুর আগে ঘুম থেকে উঠলো রোহান। ঘুম থেকে উঠে দেখলো কুহু তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। রোহান কে আর পায় কে ইশ এই রকম একটা মূহুর্তের জন্য কতগুলো দিন কতগুলো মাস কতগুলো বছর অপেক্ষা করে ছিলো। আজ সে সার্থক। মানুষ না কি শরীর ছুঁয়েও তৃপ্তি পায় না অথচ আমি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর এইভাবেই থাকতে পারবো। শুধু ভালোবাসি ভালোবাসি বলে হয় না ভালোবাসলে সেই মানুষটাকে আগলে রাখতে হয়,, সবসময় পাশে থাকতে হয়,, ভালোবাসা একটা দায়িত্ব একটা কর্তব্য যা পালন করতে হয়,, রয়াল থাকতে হয়,, ভালোবাসার মানুষটিকে সম্মান দিতে হয় শ্রদ্ধা করতে হয় তবে ই না ভালোবাসার সার্থকতা। আর আমি আজীবন এইসব পালন করে যাবো বুঝলে তো কুহুরানী। কুহুর মাথাটা বুকের সাথে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,, "ইউআর মাই এভরি-থিং" তারপর কুহুর চুলে মুখ ডুবালো। বেশ কিছুক্ষণ সময় এইভাবে থাকার পর রোহান এক লম্বা শ্বাঃস নিয়ে বললো,, "আই অ্যাম ইয়োর ডেসটিনি " বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে থাকার পর রোহান উঠে ফ্রেশ হতে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর কুহু ঘুম থেকে উঠে বসে আড়মোড়া দিতে এক বড়সড় ঝটকা খায় কারন সে যখন দেখলো সে রোহানের ঘরে তখন তার চোখ গুলো বড় হয় যায়। রোহান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে কুহু এইভাবে বসে আছে। রোহান আলমারি থেকে জ্যাকেট টা পড়তে পড়তে বললো,, এতো ভাবার কিছু নেই কাল পড়তে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলি আলমারির এক সাইড থেকে একটা  পেপার বের করতে করতে "জাস্ট ফর্গিভ ইট" তারপর কুহুর সামনে এগিয়ে গিয়ে একটা পেইন আর পেপার টা এগিয়ে বললো "সাইন হিয়ার"। 
কুহু ভ্রুঁ কুঁচকে রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,, কিসের পেপার? 
ওই আর কি তোর নামে ব্যাংকে কিছু টাকা রেখেছি তার জন্য তোর সাইন লাগবে ঝটপট করে ফেলতো। 
কুহু কিছু বলতে নিলে,, রোহান কুহুর ঠোঁটের আঙুল দিয়ে বললো হুঁশ "নো মোর কোশ্চেনস, 'ডু অ্যাজ আই সে "। "ডু ইউ ট্রাস্ট মি?" 
কুহু উপর নিচ মাথা নাড়ালো অর্থ সে করে। 
ভেরি গুড তাহলে "সাইন দ্যা পেপার "। 
কুহু রোহানের হাত থেকে পেইন টা নিয়ে পেপার টাতে সাইন করে দেয়। 
রোহান বললো যা ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা করে নিবি আজ একটু দেরিতে উঠেছিস পড়তে হবে না রেডি হয়ে বের হবো। নয় টা প্রাই বাজতে চললো। 
কুহু বের হয়ে গেলো রোহান এর রুম থেকে। রোহান এর রুম থেকে কুহুকে বের হতে দেখলো রোহান এর বাবা,, চাচা,,চাচি ওরা নিজে বসে ছিলো। কুহু তার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো নামার সময় দেখলো রোহান ও এসে বসে আছে নাস্তার টেবিলে। কুহু দ্রুত পায়ে নেমে রোহানের পাশের চেয়ার টাতে বসে পড়লো। রোহান কুহুর প্লেট খাবার দিলো। কুহু মাত্রই রুটি ছিঁড়ে ভাজি টা নিয়ে মুখে দিয়ে চিবুতে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় ওদের বাড়িতে প্রবেশ করলো কুহুর মা। তিনি এসে বললো,, এইখানে যেহেতু সবাই উপস্থিত তাহলে আমি একটা কথা বলতে চাই। 
সালমা আহাম্মেদ বললো,, কি কথা? 
আমি কুহু নিয়ে যেতে এসেছি। আমি তো ওর মা ওর উপর আমারও কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে তাই ওকে বিয়ে দিতে চাই। 
এই কথা টা শুনে রোহান হাত তালি দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। 
শ্রাবনী রওনকের কানে কানে বললো,, রোহান এইভাবে হাসছে কেনো? 
খুব সিম্পল ওর মাথায় অন্য কিছু চলছে। 
ওকে এইভাবে সবাই হাসতে দেখে বাকিরা তো সবাই অবাক। কুহুর মা বললো,, রোহান "ওয়াই আর ইউ লাফিং লাইক দিস?" 
"বিকজ দিস ওয়াজ দ্যা বেস্ট ফান অফ 2025 "। যেই মেয়েটাকে দিনের পর দিন তুমি ফেলে রেখেছিলে তার মামার বাড়ি মেয়েটা বেঁচে আছে কি না ম"রে গেছে তার কোন খবর রাখো নেই। মামার বাড়িতে লাঠি-ঝেটা খেয়ে বড় হয়ে আমাদের বাড়িতে এসে সেইম অবস্থা। শুধু আমরা কয়েক জন আছি যে মেয়েটাকে আগলে রেখেছি আজ তার চিন্তায় আপনার ঘুম আসছেনা মিসেস সিকদার। আজ এসে তার বিয়ের কথা বলছেন। "ফর ইউ কাইন্ড ইনফরমেশন শী ইজ ম্যারিড "। 
কুহু ম্যারিড শুনাতে যেনো ওরা চমকে গেলো। শুধু মাত্র রোহানের মা,, ভাই-ভাবী,,আর বোন বাদে কারন ওরা তো সবটা জানে। তবে জানে কুহু তাই কুহু অবাক হয়েছে। কুহু কিছু বলতে নিলে রোহান হাত তুলে বাঁধা দিয়ে বললো তোর প্রশ্নের উত্তর পরে পাবি। 
কুহুর মা বললো,, কার সাথে বিয়ে হয়েছে আর ওর কে সে?  
"শী হ্যাজ মেরিড মী" আর প্রমান মা ওর সাথে যে আমার ধর্মে মতে বিয়ে হয়েছে সেইটা তো তুমি আর ভাইয়া জানো আর স্বাক্ষী ও ছিলে আজ সকালে আমাদের রেজিস্ট্রাি ম্যারেজ হয়েছে তার প্রমান আছে ফোন বের করে সেই পেপারে ছবি দিয়ে বললো দেখে নি। 
ওনি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বললো আমি মানিনা। 
প্লিজ সাত-সকালে আর হাসিয়েন না তো "ইট ডাজেন্ট ম্যাটার ওয়েদার ইউ এগ্রি অর নট" আন্ডারস্ট্যান্ড। 
আমি কুহুর সাথে কথা বলবো। 
কোন লাভ নেই আপনার মতো নোংরা মহিলার ছায়াও ওর উপর পড়তে দিবো না। স্টে আওয়ে ফ্রম হার। নয়তো আমার থেকে খারাপ কেই হবে না। রোহান কুহুকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজেও খাচ্ছে কুহুকেও খাইয়ে দিচ্ছে খাওয়া শেষ করে কুহুর হাত টা ধরে ওর মার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,, এই যে দেখতে পারছেন হাত টা ধরেছি কেয়ামতের আগে ও ছাড়বো না। হাশরের ময়দানের আল্লাহ্ কাছে ওকে চেয়েনিবো হোক সেইটা জান্নাত বা জাহান্নাম। তবুও ওকেই আমার চাই। আল্লাহ্ হাফেজ শ্বাশুড়ি মা দোআ কইরেন বলে কুহুকে নিয়ে রওনা দিলো কলেজের উদ্দেশ্যে। সবাই ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। গাড়ি চালাতে চালাতে রোহান বললো,, 
"শুন কুহু একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে,, 
আর এই বাঁধন তুই বা আমি কেই ছিন্ন করতে পারবো না যদি কেউ করতে ও চায় তাকে আমি রোহান আহাম্মেদ কে"টে টুকরো টুকরো করে দিবো "
 আই লাভ ইউ লাইক ক্রেইজি। তারপর কুহুর কপালে চুম্বন করে তাকে কলেজের গেইট অব্দি পৌঁছে দিয়ে সে তার কাজে গেলো। সবকিছু নিয়ে কুহু একটু ঘেঁটে গেলো। ওর মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়লো ও রিয়েক্ট করা ও ভুলে গেলো। 
--- 
বিলাসবহুল এক হোটেল রুমে বসে আছে রোহান,, অগ্নি,, আরো একজন CIDঅফিসার নাম পূজা সেন। 
অগ্নি একটা ফাইল দিলো রোহানকে রোহান সেই ফাইল টা নিলো। তারপর ফাইল টা খুললো ফাইলটা খুলে কিছুর নামের দিকে চোখ টা আটকে গেলো ও যা ভেবিছিলো ওটাই ঠিক। রোহান ফাইল টা সোহেল কে দিলো সোহেল ও ফাইলে জড়িত থাকা ব্যক্তির নাম গুলো দেখে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো এও কি সম্ভব। রোহানের পূজার নামে মেয়েটিকে একদম ভালো লাগেনি কেমন যেনো গা এ পড়া টাইপের রোহান এসেছে পর থেকে কেমন ঘেঁষাঘেঁষি শুরু করে দিলো। কেমন করে তাকিয়ে থাকে জাস্ট ডিসকাসটিং লাগছে রোহানের কাছে। রোহান ফাইল টা হাতে নিয়ে অগ্নির সাথে হ্যান্ডশেক করে তারপর বের হয়ে গেলো। রোহান সোহেল কে বললো সোহেল শুন আজ রাতের ভিতর ফয়সাল কে ধরে নিয়ে আসবি আমার সামনে। 
এখন কোথায় যাবি?
ডিপার্মেন্ট এ যাই শিহাব স্যার জরুলি তলব করেছেন। 
আচ্ছা যা সাবধানে। 
হুম তোকে যেই দায়িত্ব দিয়েছি সেইটা ফল কর প্লিজ। 
অকে করবো। 
রোহান তার গাড়িটা নিয়ে চলে গেলো। 
সোহেল ও তার গাড়ি টা নিয়ে চলে গেলো। 
ঘন্টা-দুয়েক পর রোহান পৌঁছালো ডির্পামেন্ট এ। রোহান সোজা স্যার এর রুমে এসে দরজাটা নক করলো। দরজাটা নক করতে ভিতর থেকে শিহাব চৌধুরী বলে উঠলো,, ইয়েস কামিং। 
রোহান দরজা টা ঠেলে ভিতরে ঢুকে গিয়ে স্যার এর সামন গিয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বললো কেমন আছেন স্যার?
আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো? 
 আলহামদুলিল্লাহ্। কোন দরকারে আমাকে ডেকেছেন? 
হুম ক্যাস টা কত দূর এগোলো? 
প্রায় শেষের প্রথে। 
ভেরি গুড। আমি জানতাম একমাত্র তুমি ই পারবে এই ক্যাস টা সমাধান করতে। ডির্পামেন্ট তোমার জন্য গর্বিত মাই চাইল্ড। 
আরে স্যার এইটা আমার ডিউটি। সবার আগে আমার দেশ মাতা। তারপর অন্য কিছু। স্যার আমি আসি। 
হুম আসতে পারো। 
রোহান বের হয়ে এসে গাড়িতে বসে ডির্পামেন্ট এর থেকে বেশ দূরে এসে গাড়িটা থামিয়ে মাক্স টা খুলে ফেললো। 
--- 
কুহু পরীক্ষা শেষে ক্লাস থেকে বের হলো। আজ পরীক্ষা টা তার বেশি ভালো হলো না। তাই সে মনমরা হয়ে হাটছে। ঠিক সেই সময় রোহান তার গাড়িটা কুহুর সামনে এনে দাঁড় করায় এতে কুহু বেশ কিছুটা হকচকিয়ে যায় তারপর যখন দেখলো রোহান তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে তখন শান্ত হলো রোহান কুহুর কাছে এসে ওর কোমল হাত দুটো ধরে বললো কি নিয়ে চিন্তা করছিলে সেই কখন থেকে হর্ণ বাজাছি শুনতে পাও নি তাই তো এইভাবে এসে দাঁড়ালাম। কি এতো ভাবছো? কিছু কি হয়েছে কেউ কিছু বলেছে? আমায় বলো আমি তার শি"র"শ্ছে"দ করে নিয়ে আসবো তোমার সামনে। 
কুহু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলো রোহানে পানে তারপর বিরক্তির সুর নিয়ে বললো,, আপনি সবসময় এতো হাইপার থাকেন কেনো? 
তেমন কিছুনা একটু মন খারাপ ছিলো পরীক্ষা ভালো হয়নি+ সকালের বিষয় টা নিয়ে। 
দূর বোকা মেয়ে এতো ভাবার কি আছে? তোমায় এতো ভাবতে হবে না তোমার ভাবনা গুলো আমায় দিয়ে দেও। আর তুমি রিলাক্স এ থাকতো। "আই অ্যাম হিয়ার, রাইট?" সো "ডোন্ট ওরি, বি হ্যাপি"। ট্রাস মি আই উইল হ্যান্ডল এভরিথিং। 
কুহু অবাক হয়ে দেখলো। কুহুকে যে কখনো এতোটা ভালোবাসবে কুহু কখন বুঝতে পারেনি। বুঝতে পারেনি বললে ভুল হবে বুঝতে চায়নি। কিন্তু এখন সে চায়। কুহু একটা "অপ্রত্যাশিত" ঘটনা ঘটালো কুহু হুট করে রোহান কে জড়িয়ে ধরলো। আকস্মিক এমন কিছুর জন্য রোহান মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে তো "থ" মেরে রইলো। তারপর তার মস্তিষ্কে টনক নড়ে উঠলো। তাকে আর পায় কে সে তো মহাখুশি তার মন বলছে কুহুর মনে রোহানের জন্য ভালোবাসার নামক একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। একটু পর রোহান বললো,, কুহুপাখি আমার ছাড়ো এইটা রাস্তা আমাদের বেডরুম না সবাই দেখছে এসো গাড়িতে এসে বসো। ওরা গাড়িটাতে উঠতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো। 
গাড়ি টা এসে থামলো পাড়ার গলির মোড়ে একটা পর্লারে। কুহু জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে রোহানের দিকে তাকাতে রোহান বললো নাক ফুটো করতে হবে তো এইযে দেখো তোমার জন্য নোসপিন নিয়ে এসেছি। ভিতরে ছেলেদের এলাও না যাও তুমি "আই অ্যাম ওয়েটিং ফর ইউ" বলে কুহু কপালে চুম্বন এঁকে দিলো। কুহু নোসপিন টা নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে ঢুকে গেলো,, ১০ মিনিটের ভিতরে কুহু চলে আসলো। এইবার কুহুকে কেমন যেনো বউ বউ লাগছে সাদা পাথরে নাকফুলটা সূর্যের রশ্মিতে চিক চিক করে উঠছে অপলক দৃষ্টিতে রোহান তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ তারপর কুহুকে নিয়ে রওনা দিলো বাড়ির জন্য। 
বাড়ি ফিরতেই কুহুরা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়ে সে তার রুমে চলে গেলো রেস্ট নিতে প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। 
--- 
সন্ধ্যায় কুহু ঘুম থেকে উঠে তার খালামনি,, স্মৃতি আর ভাবীমার সাথে বসে গল্প করছিলো। কাজের একজন মহিলা এসে কুহুদের নাস্তা দিয়ে গেলো। কুহু ছিলো বলে রোহানের চাচি আর সেইদিকে যায়নি। কুহুর সাথে রোহানের বিয়ে টা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি চেয়েছিলেন ওনার ভাই এর মেয়েকে রোহানের সাথে বিয়ে দিতে কিন্তু হলো কি রোহান কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে নিলো কুহুকে। 
সন্ধ্যার নাস্তা খেয়ে কুহু পড়ছিলো। সেই মূহুর্তে রোহান হুড়োহুড়ি করে কুহুর রুমে ঢুকলো কুহু একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,,আপনি এখানে কি চায় আপনার? 
এ আবার কেমন কথা কি চায় মানে? বারে আমার বাবুর আম্মু এইখানে আমি আসবো না। এই নে তোর জন্য নিয়ে এসেছি ডিনারের পর সুন্দর করে সেজে রুমে আসবি যদি না এসেছিস তাহলে খবর আছে বলে চলে গেলো। 
কুহু হাতের থাকা প্যাকেট টা খুলে নিয়ে দেখলো একটা লাল জামদানী শাড়ি তাতে "এম্ব্রয়ডারি" কাজ করা অনেক সুন্দর চুলের জন্য ফুলের গাজরা নিয়ে এসেছে। কুহুর খুব পছন্দ হয়েছে। কুহু এইসব সুন্দর করে গুঁছিয়ে রেখে পড়তে বসলো। পড়তে পড়তে ডিনার টাইম হয়ে গেলো। কুহুরা সবাই ডিনার করে নিলো। কুহু ডিনার করে রুমে এসে আলমারি খুলে শাড়ীর সাথে সব প্রয়োজনী জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো তারপর সুন্দর করে শাড়ি পড়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাল্কা সেজে নিয়ে কোমড় ছাড়া লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে সুন্দর করে গাঁজরা টা দিয়ে তারপর রোহানের ঘরের দিকে গেলো,,, কুহু লজ্জা মিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে এগিয়ে চললো রোহানের রুমে দিকে দরজা টা খুলা ছিলো খুলা দরজায় দিকে তাকিয়ে আছে রোহান লাল পরিহিত এক অষ্টাদশী  কন্যার পানে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটি তার বিবাহিত স্ত্রী ভাবতেই অন্তরে এক শীতল অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। উফফ কি সুন্দর এক অনুভূতি। রোহান এগিয়ে গেলো কুহুর পানে তারপর হাত টা ধরে ঘরের ভিতর নিয়ে এসে দরজা টা লক করে দিয়ে কুহুকে পাঁজা কোলে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দিলো। তারপর আলমারি থেকে দুটো বক্স নিয়ে কুহুর সামনে হাটু মোড়ে বক্স টা খুলে দিয়ে বললো,, তোমার হাত জোড়া খালি এই চুড়ি জোড়া তোমার জন্য বানিয়ে নিয়ে এসেছি একদম "কম্ফ্-টার-বিল" রোহান যত্ন সহকারে পড়িয়ে দিয়ে তারপর আংটির বক্স টা খুলে বললো,, 
" প্রাণের চেয়েও প্রিয় স্ত্রী,, 
আপনি আমার হৃদয়ের এক বিশেষ অংশ 
আপনার জন্য আমার হৃদয়ে বানিয়েছি
 ভালোবাসার মহল আর সেই মহলে 
নিত্যদিন খেলে যায় তুমি নামক 
এক পবিত্র অনুভূতি "
তুমি আমার হবে শুধু আমার একান্ত আমার। ক্যান উই বিইকম ক্লোজ? 
কুহু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,,
আমি আপনাকে ভালোবাসি রোহান তবে কখন কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি জানিনা যখন আপনি ইন্ডিয়াতে ছিলেন তখন কেমন যেনো শূন্যতা অনুভব করতাম। কোন কাছে মন বসাতে পারিনি। কাল আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনার পর আমার অনুভূতি গুলো আরো এক ধাপ এগিয়ে যাই তারপর বুঝতে পারলাম আমি আপনাকে ভালোবাসি ছেড়ে যাবেন না তো কখনো? 
রোহান কুহুর অনামিকাতে আংটি পড়িয়ে দিয়ে তার হাতের পিঠে চুম্বন করে বললো,, প্রশ্ন ই উঠে না। তুমি আমার আত্মা আত্মা ছাড়া কি কেউ কখনো বাঁচে। 
"তুমি আমি অবিচ্ছেদ্য, এক মন এক প্রাণ,
যতদিন এই পৃথিবী, ততদিন থাকবে ছায়া যেমন আকাশে হেমন্ত বাণ।
প্রেমের নদী বয়ে চলুক, দু'টি হৃদয় এক সুরে,
জীবন হোক সঙ্গী, যাত্রা হয়ে উঠুক পূর্ণ,
বহে যেন ভালোবাসার বায়ু, হাওয়া যেন সুগন্ধে মিষ্টি।
তুমি আমি অবিচ্ছেদ্য, চিরকাল, চিরদিনের মতো,
অগাধ সাগরে ডুবতে, কিন্তু কখনো হারানো নয় "। 
রোহান উঠে কুহুকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও কুহুর উপর শুয়ে কুহুর অধর জোড়া ছুঁয়ে দিচ্ছে তার অধর দিয়ে। রোহান আজ তার ভালোবাসার পিপাসা তৃষ্ণণা মিটাচ্ছে। ঢুবে যাচ্ছে তারা ভালোবাসার সাগরে। দুই দেহ দুই মন আজ মিলেমিশে একাকার হচ্ছে। পূর্ণতার তৃপ্তি পাচ্ছে ভালোবাসা। 

একই বন্ধনে বাঁধা দুইজনে - ১2 পর্ব

সকালে কুহু সবার আগের ঘুম থেকে উঠেছে। রোহান তখনো ঘুমে আছন্ন হয়ে আছে। ঘুমন্ত রোহানকে কুহু ভালো ভাবে পর্যবক্ষণ করছে। ঘুমন্ত রোহানের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁটটা আলতো করে ছুঁয়ে দিলো। তারপর যেইনা কুহু উঠতে যাবে সেই মূহুর্তে কুহুর কোমর টা জড়িয়ে ধরে টেনে তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে কুহুর ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে বললো,, চুমু দেওয়ার যখন এতো ই শখ তখন জেগে থাকার অবস্থায়ই দিতে পারিস তখন ফিল হয় কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় দিলে কি আর ফিল হয় তুই বল। 
ছিহ্ আপনি অ"স"ভ্য হয়ে যাচ্ছেন। 
আমি সভ্যই বা কবে ছিলাম তোর ব্যাপারে আমি বরাবরই বেপরোয়া ছিলাম। 
এতো ভালোবাসেন কেনো? 
কারন তুই আমার মায়াবতী তাই। 
যদি হারিয়ে যাই তখন কি করবেন? 
হুঁশ এই কথা মুখেও আনিস না তাহলে সেইদিনই আমি লা"শে"র পরিণত হবো। 
"কুহু এই বুকে কান পেতে শুন না 
আমার হৃদপিণ্ড টা কেমন ধুকপুক করছে 
এই টা কখন হয় জানিস যখন তুই আমার সাথে থাকিস তখন তোর আর আমার হৃদপিণ্ড টা এক হয়ে যায়। 
যত দিন বেঁচে থাকবো,,, 
ইভেন আখিরাতেও 
হাশরের ময়দানে ও আল্লহ্ কাছে 
তোকে চেয়ে নিবো। 
তুই আমার একান্ত আমার। #একই_বন্ধনে_বাঁধা_দুজনে পড়েছি সেই বাঁধান টা আজীবন থাকবে। নে উঠ ফ্রেশ হয়ে নে তোর তো আবার পরীক্ষা। 
আমার লজ্জা করছে। 
ওমা কাল না তোর লজ্জা ভেঙ্গে দিয়েছি তাহলে আবার কেন লজ্জা পাস। না-কি আবার ভাঙ্গাতে হবে। ভাঙ্গতে হলে বলে দে। আমার কোন আপত্তি নেই। 
কুহু রাগী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে রোহানের দিকে। 
রোহান কুহুর নাক টা টেনে দিয়ে বললো আমার কুহুপাখির আবার রাগ ও আছে। 
উফ্ আপনি না যাতা আমি যাচ্ছি ফ্রেশ হতে। আলগোছে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে দরজার কাছে গিয়ে লক টা খুলতে নিলে রোহান বললো কোথায় যাচ্ছিস? 
বারে ফ্রেশ হবো না ড্রেস তো আনিনি। 
তুই কি ব"ল"দ আমি আলমারিতে তোর জন্য কিছু ড্রেস এনে রেখেছি ওখান থেকে একটা নিয়ে নে। 
কুহু সল্প হেসে আলমারি কাছে গিয়ে এক সেট জামা আর টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশরুম এ গেলো। 
রোহান বসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো চায়না CID থেকে একটা মেইল এসেছে। মেইলে লেখা হয়েছে ওদের কে ধরা হয়েছে আর ওরা অনেক কিছু স্বীকার করেছে আমি সেই সেই ভিডিও গুলো আপনাকে পাঠাছি। আর কিছুর জন্য সাহায্য লাগলে জানাবেন। 
রোহান কানে ব্লুটুথ টা লাগিয়ে কাজে ফোনে ভিডিও গুলো অন করে দেখছে। সব ভিডিও এক এক করে শুনার পর রোহানের ঠোঁটে বাঁকা হাসি খেলা করছে। ওয়াশরুমের দরজার লক খুলার শব্দে রোহান হাসিটা মিলিয়ে গেলো। কুহু ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো টাওয়ালের সাহায্যে মুছছে। এই দৃশ্যাটা দেখে রোহান কি আর ঠিক থাকে। রোহান বিছানা থেকে নেমে কুহুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে স্নেহ আর আকাঙ্ক্ষার মিশ্রণে, তার নিঃশ্বাস কুহুর গা স্পর্শ করল। দুই দেহ একে অপরকে শ্বাসে শ্বাসে জড়িয়ে নিলো। যেনো পৃথিবী আর কিছুই নেই, শুধু এই মুহূর্তে তারা দুজনেই একে অপরের মধ্যে হারিয়ে গেছে। 
"ভেজা চুলে ভেসে আসে, রোদে ভেজানো স্বপ্নের রাশি,
চুলের ফাঁকে সপথের মৃদু ছোঁয়া, ঘুরে আসে আবেগের বাশি।
মুছতে মুছতে চুপিসারে, দিনটা যেনো হয়ে যায় রাত,
তার চোখের জ্যোতি আঁকা থাকে, চুলে হালকা বাতাসের সঙ্গীভাবে কাট" 
এমন করে বলবেন লজ্জা লাগে। 
ওরে আমার লজ্জাবতীরে। তুই বসে চুল শুকা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর নিজে গিয়ে নাস্তা খাবো।
 কুহু বিছানায় বসে চুলগুলো ভালোভাবে মুছে নিচ্ছে। তারপর সে টাওয়েল টা নিয়ে বেলকনিতে মেলে দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ফাইলটা হাতে নিয়ে আবার রোহানের রুমে আসলো। বসে বসে রোহানের জন্য অপেক্ষা করছে। 
রোহান ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে কুহুকে নিয়ে নিচে গেলো নাস্তা করতে। ওদের দুইজন কে একসাথে নামতে দেখে ওর বাবা,, চাচা,,চাচির যেনো জ্বলে উঠছে। রোহান ওদের কে ইগনোর করে সোজা টেবিলে গিয়ে বসলো। রওনক রোহান কে খোঁচা মেরে বললো কিরে এই শীতে সাত-সকালে গোসল ব্যাপার কি? 
ওমা ব্যাপার আবার কী তুমি বুঝোনা ভাইয়া নতুন দাম্পত্য রা কেনো সকাল সকাল গোসল করে। ওটা যেই সেই গোসল না ফরজ গোসল। 
রওনক রোহানের কথা শুনে একদম নিস্তব্ধত হয়ে গেলো। তুই আসলেই একটা কান কা"টা র্নি"ল"জ্জ একটা।
পুরুষ মানুষ র্নি"ল"জ্জ না হলে চলে না। 
কুহু খাচ্ছে কোন কথা কানে নিচ্ছে না। ওর ভাবটা এমন যে ওর সামনে খাওয়া ছাড়া কিছু নেই। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রোহান কুহুকে নিয়ে বের হয়ে গেলো। কুহুকে কলেজ এ নামিয়ে দিয়ে রোহান চললো তার কাজে। 
--- 
রোহান, অগ্নি, সোহেল আর পূজা একটি মিশনে রয়েছে। তাদের টার্গেট হলো চারজন শীর্ষ অপরাধী, যাদের ধরলেই এই বিপজ্জনক খেলা শেষ হবে।
অগ্নি, ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে রোহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
"কি ভাবছো? কী করবে এখন?"
রোহান ঠান্ডা গলায় বলল,
"হুম... ধরবই। তবে সহজে নয়। ওরা হচ্ছে দ্রুতশেয়াল—চতুর আর ক্ষিপ্ত। এদের ধরতে হলে একটু খেলাতে হবে। আর তোমরা তো আছোই পাশে, তাই না?"
অগ্নি মুচকি হেসে বলল,
"ঠিক বলেছো। কিন্তু আমাদের চাল যে নিখুঁত হতে হবে। একটা ভুলেই ওরা ফসকে যেতে পারে।"
পূজা, যিনি এতক্ষণ নীরবে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত বললেন,
"এইবার ভুল করা যাবে না। আমাদের চারদিক থেকে চেপে ধরতে হবে। সোহেল, তুমি কি ওদের গতিবিধি সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছ?"
সোহেল তখন আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বলল,
"আমি ওদের ফলো করছি। ওরা কখন কোথায় যাচ্ছে, সব খবর আমার কাছে আছে। সামনে বড় একটা চালান দিতে যাচ্ছে। সেটাই ওদের জন্য শেষ ভুল হবে। তখন আমরা ওদের হাতে-নাতে ধরব।"
অগ্নি একটু উত্তেজিত হয়ে বলল,
"চালান দিতে গেলে ওরা অনেকটা সময় এক জায়গায় থাকবে। এটাই আমাদের সুযোগ। কিন্তু সঠিক জায়গাটা জানতে পারলে খেলাটা জমবে।"
রোহান মাথা নাড়িয়ে বলল,
"ঠিক আছে, সোহেল, তুমি ওদের গতিবিধি নজরে রাখো। পূজা, তুমি তোমার সিস্টেম থেকে কিছু বের করতে পারো? বিশেষ করে যদি কোনো গোপন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকে।"
পূজা সঙ্গে সঙ্গেই ল্যাপটপ খুলে কাজ শুরু করল।
"দেখি। আমি ওদের যোগাযোগের ফিড স্ক্যান করছি। যদি কিছু মেলে, তাহলে জানাব।"
অগ্নি হাসি দিয়ে বলল,
"তাহলে এবার শুরু করা যাক। দ্রুতশেয়ালদের ফাঁদে ফেলব, কিন্তু ওদের নিজেদের চালকে আমাদের জন্য অস্ত্র বানাতে হবে।"
রোহান দৃঢ় গলায় বলল,
"ঠিক বলেছো। এইবার বাঘ-বন্দি খেলা শেষ করতে হবে।"
সবার মধ্যে একটা নতুন উদ্যম দেখা গেল। পূজা তথ্য জোগাড় করতে ব্যস্ত, সোহেল তার নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে, আর রোহান ও অগ্নি ফাঁদ পাতার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে শুরু করল।
কিন্তু ওরা কি সময়মতো তাদের এই বিপজ্জনক টার্গেটগুলোকে ধরতে পারবে? নাকি এই চারজন দ্রুতশেয়াল তাদের জন্য নতুন চমক অপেক্ষা করছে?
রোহান ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। তার মুখে দৃঢ়তার ছাপ স্পষ্ট। গাড়ির দরজা খুলে বসে ইঞ্জিন চালু করল। তার সামনে এখন একটাই কাজ—শিহাব স্যারকে প্ল্যান এবং অপরাধীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানো।
গাড়ি ছুটছে শহরের রাস্তা ধরে। রাস্তাগুলো যেন নিস্তব্ধ, কিন্তু রোহানের মাথায় চিন্তার ঢেউ বইছে। সবার কথা, পরিকল্পনার প্রতিটি খুঁটিনাটি বারবার তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার সামনে থাকা একটি ফাইলের দিকে বারবার চোখ যাচ্ছে। ওই ফাইলের ভিতর রয়েছে অপরাধীদের গতিবিধি, চালানের সময়, এবং তাদের অবস্থানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
“শিহাব স্যারকে এটা জানানো ভীষণ দরকার। আমরা যদি ওদের হাতেনাতে ধরতে পারি, তাহলে এই মিশন সফল হবে। কিন্তু ছোট্ট একটা ভুল হলেই সব শেষ।” রোহান নিজেকে এভাবে মনেই মনে বলল।
গাড়ির স্পিডমিটার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। হঠাৎ ফোনে পূজার নাম ভেসে উঠল। রোহান ব্লুটুথ হেডসেটে কল রিসিভ করল।
"হ্যাঁ পূজা, বলো।"
পূজার গলা অন্যপ্রান্ত থেকে ভেসে এল,
"রোহান, সাবধান থেকো। আমি সিসিটিভি ফিড হ্যাক করে দেখেছি, দ্রুতশেয়ালদের মধ্যে একজন যেন আমাদের গতিবিধি নিয়ে সন্দেহ করছে।"
রোহানের চোখ সংকুচিত হয়ে গেল। সে বলল,
"এটা ভালো খবর নয়। তবে চিন্তা করো না, আমি স্যারকে সব জানাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি আরও শক্ত করতে হবে। তুমি নজর রেখো, যেকোনো আপডেট সঙ্গে সঙ্গে দিও।"
ফোন কেটে রোহান গ্যাস প্যাডেলে চাপ বাড়িয়ে দিল। CID অফিস এখন খুব কাছেই।
"সব ঠিকঠাক মতো হতে হবে। শিহাব স্যারকে জানানো মানে পরিকল্পনাকে আরও সুসংগঠিত করা। আমাদের আর সময় নেই।"
গাড়ি CID অফিসের গেটের সামনে এসে থামল। রোহান এক দমে অফিসে ঢুকে শিহাব স্যারের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল। তার হাতে ধরা ফাইলটা যেন এই মিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।
কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে এক মুহূর্ত থেমে শ্বাস নিল। তারপর কড়া নাড়ল। ভিতর থেকে শিহাব স্যারের গম্ভীর গলা ভেসে এল,
"ভেতরে আসো।"
রোহান দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বলল,
"স্যার, আমাদের পরিকল্পনার জন্য আপনার অনুমতি প্রয়োজন। এবং এই ফাইলটায় এমন কিছু তথ্য আছে যা আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে।"
শিহাব স্যার তার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"বল, কী প্ল্যান করেছো?"
এবার রোহান ফাইল খুলে ধাপে ধাপে পুরো পরিকল্পনা শিহাব স্যারের সামনে তুলে ধরতে শুরু করল। 
"গুড জব, মা'ই চাইল্ড। আই’ম ইমপ্রেসড। 
রোহান উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট দিল।
"অলরাইট, স্যার। তবে অপারেশনটা আজ নয়, কাল করব। আমরা ওদের ওপর নজর রাখব, আর সবদিক থেকে প্রস্তুতি নিশ্চিত করব।"
শিহাব স্যার মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন,
"ভালো সিদ্ধান্ত। ওদের ওপর নজরদারি চালিয়ে যাও। কাল অপারেশনের সময় যেন কোনো ফাঁক না থাকে। আমি ব্যাকআপ টিম প্রস্তুত রাখব।"
রোহান বলল,
"জি স্যার। আমরা পুরোপুরি তৈরি থাকব।"
CID অফিস থেকে বেরিয়ে রোহান দ্রুত গাড়িতে উঠল। ইঞ্জিন চালু করার পর সে টিমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করল।
"পূজা, সোহেল, অগ্নি—সবাই শুনছো? শিহাব স্যার প্ল্যানটা অনুমোদন করেছেন। তবে অপারেশন কাল করা হবে। আজ রাত পর্যন্ত আমরা ওদের গতিবিধি নজরদারি করব। পূজা, তুমি সিসিটিভি ফিডের ওপর নজর রাখো।"
পূজার গলা ভেসে এল,
"ফিডের ওপর পুরো নজর আছে। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখো—ওরা সিগন্যাল জ্যাম করার চেষ্টা করছে। আমি সেটার প্রতিরোধে কাজ করছি।"
রোহান বলল,
"ভালো। কিন্তু নিশ্চিত হও, কোনো গ্যাপ যেন না থাকে। সোহেল, তোমার আপডেট কী?"
সোহেল বলল,
"আমি ওদের ফলো করছি। ওরা এখনো ফ্যাক্টরিতে আছে। তবে তাদের চালানের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কাল ভোরের দিকে তারা ট্রাকগুলো বের করবে। জায়গাটা আমি ভালো করে চেক করেছি। কাল দুই দিক থেকেই ব্লক করলে ওরা পালাতে পারবে না।"
অগ্নি তখন তার পজিশন চূড়ান্ত করে বলল,
"আমার জায়গা ঠিক আছে। পেছনের পথও আমি ব্লক করে রাখব। যদি ওরা পালানোর চেষ্টা করে, প্রথম আঘাত আমি করব।"
রোহান মাথা ঝুঁকিয়ে বলল,
"ঠিক আছে। আজ রাতের জন্য সবাই প্রস্তুত থাকো। পূজা, তুমি ওদের যোগাযোগ সিস্টেম মনিটর করবে। সোহেল, ওদের গতিবিধি আপডেট দাও। আর অগ্নি, কাল ভোরের আগে আমরা পজিশন চেক করব।"
পূজা শেষবার বলল,
"রোহান, চালান কাল ভোরে ঠিক কয়টায় শুরু হবে, সেটা ট্র্যাক করছি। আরেকটু সময় দাও, আমি ফাইনাল সময় জানাব।"
রোহান দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
"সবাই সতর্ক থাকো। কাল ভোরে এই খেলা শেষ হবে। আর আমাদের কোনো ভুল করার সুযোগ নেই।"
পূজা বললো,, 
"রোহান, ফাইনাল সময় রাত তিনটায়। চালান তখনই শুরু হবে। আমি সিস্টেম ট্র্যাক করছি, সবকিছু নিশ্চিত করছি।"
রোহান মাথা ঝুঁকিয়ে বলল,
"ঠিক আছে, পূজা। রাত তিনটায় অপারেশন শুরু হবে। সবাই প্রস্তুত থাকবে।"
সোহেল, আরেকটি আপডেট দিয়ে বলল,
"ওরা খুবই সাবধান। ফ্যাক্টরি থেকে বের হওয়ার জন্য একাধিক গাড়ি ব্যবহার করবে, বিভ্রান্তি তৈরি করতে। তবে আমি তাদের গাড়িগুলো নজরে রেখেছি, এবং তাদের গতিবিধি ঠিকমতো ট্র্যাক করছি।"
অগ্নি, ঠাণ্ডা মাথায় বলল,
"এরা যতই সাবধান হোক, আমার পজিশন পুরোপুরি সুরক্ষিত। পেছন থেকে চুপিসারে এগোচ্ছি। পালানোর কোনো সুযোগ ওদের থাকবে না।"
রোহান দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
"তাহলে সবাই প্রস্তুত থাকো। পূজা, তুমি ফিড মনিটর করো। সোহেল, তাদের গাড়ির গতিবিধি নজর রাখ। আর অগ্নি, পেছন থেকে আক্রমণ করো। আমি সামনে থাকব। একযোগে কাজ করতে হবে, কোনো ভুল করার সুযোগ নেই।"
পূজা দ্রুত জানাল,
"রোহান, রাত তিনটায় ওরা বের হবে। সিকিউরিটি সিস্টেমের কিছু দুর্বলতা আমি খুঁজে পেয়েছি। আমি সেটার ওপর কাজ করছি।"
রোহান নিশ্চিন্ত হয়ে বলল,
"ঠিক আছে, পূজা। সিস্টেমে আমাদের ঘাঁটানোটা একটা বড় সুযোগ হতে পারে। সবাই প্রস্তুত থাকো। কাল রাত তিনটায় আমাদের অপারেশন শুরু হবে।"
টিম একযোগে কাজ শুরু করল। রোহান গাড়ি চালিয়ে প্রস্তুত অবস্থায় ছিল। সবাই জানত, এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ। শিহাব স্যারের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী, অপারেশন কাল রাত তিনটায় শুরু হবে।
"সবকিছু ঠিক থাকলে, কাল রাত তিনটায় এই অপারেশন শেষ হবে," রোহান নিজেকে মনে মনে বলল। 
ঘড়িতে টাইম দেখলো রোহান সময় ১২ঃ৩০ টা রোহানকে দ্রুত যেতে হবে কলেজ থেকে কুহুকে নিয়ে আসতে হবে এতোক্ষণে ওর এক্সাম হয়তো শেষ হয়ে যাবে ও যেতে যেতে। 
----- 
এক্সাম শেষে কুহু বের হয়ে গেটের সামনে এসে তার বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো ঠিক সেই সময় রোহান আসে ঝড়ের গতিতে গাড়িটা ওদের সামনে দাঁড় করিয়ে হুড়মুড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে বললো,, এই তুই ঠিক আছিস?? 
কুহু ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে রোহানের দিকে। 
রোহান বললো,, তোর চোখ দুটো কে রসগোল্লা করে তাকিয়ে থাকতে বলি নাই উত্তর দে আমার প্রশ্নের? 
কুহু নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,, আমি ঠিক আছি কি হইছে আপনার? 
কিছুনা চলো বাসায় চলো। 
ঝালমুড়ি খাচ্ছি তো গাড়িতে যেতে যেতে খাবে আসো। কুহুর হাত টা ধরে যেইনা গাড়িতে উঠবি ঠিক সেই সময় বাইকে করে এসে কেউ একজান কুহুকে শুট করে চলে যায়। সবকিছু এতো দ্রুত হলো যে সে প্রতিক্রিয়া করতেই ভুলে গেছে আচমকা কুহু তীব্র চিৎকার শুনে রোহানের মস্তিষ্কে টনক নড়ে রোহান পাশ ফিরে চাইতেই দেখে কুহু মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যন্ত্রণা ছটফট করছে। কুহুর সাদা কামিজ টা রঞ্জিত লাল রাঙ্গা রক্তে। কুহুকে এই অবস্থায় দেখে রোহানের গোটা দুনিয়া যেনো নড়ে গেলো। রোহান এগিয়ে এসে কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসে চললো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। কুহুর চোখ তখন নিভু নিভু। রোহান কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,, কুহুপাখি প্লিজ চোট বন্ধ করিস না চোখটা খুলা রাখ। তোর কিছু হবে না। এইতো আমি তোকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। কুহুর চোখের পলকও যেনো আর পড়ছিলো না। রোহান তখন সারা শরীরে উত্তেজনা আর ভয় নিয়ে গাড়ির গতি আরও বাড়িয়ে দিলো। হাসপাতালে পৌঁছাতে সবে মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি, কিন্তু মনে হচ্ছিলো সময় থমকে গেছে। কুহু একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেছে। রোহান চিন্তিত হয়ে কুহুর হাতটা ধরে বললো, "তুমি আমার জীবন, কুহু, তুমি কিছু হবে না, আমি তোকে বাঁচাবো।"
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর রোহান দ্রুত কুহুকে নেমে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলো। ডাক্তাররা অপেক্ষা করছিলো, তারা দ্রুত কুহুকে জরুরি চিকিৎসা দিতে শুরু করলো। রোহান বাইরের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলো, তার চোখে এক অদ্ভুত দুঃখ আর অসহায়ত্ব ছিলো। মনে হচ্ছিলো পৃথিবীটা এখন তার জন্য অন্ধকার হয়ে গেছে।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর রোহান দ্রুত কুহুকে গ্যাঙওয়ে ধরে নেমে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি ইউনিটে ছুটলো। ডাক্তাররা প্রস্তুত ছিলো, তাদের চোখে তৎপরতা আর চিন্তা। তারা তাড়াতাড়ি কুহুকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অ.টি. (অপারেশন থিয়েটার) দিকে নিয়ে গেলো। রোহান চোখে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে শুধু দেখলো। তার মাথার ভিতর শব্দ মিশে যাচ্ছিলো, পৃথিবী যেন থেমে গিয়েছিলো।
ডাক্তারদের মধ্যে একজন দ্রুত রোহানকে পাশ থেকে ডেকে বললো, "আমাদের সময় খুব কম, আপনি এইখানে যেতে পারেন না। আমাদের কাজ করতে দিন।" রোহান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো, তার হৃদয় ফেটে পড়ছিলো, কুহু তার জীবনের অমূল্য রত্ন। কুহুর অবস্থা তার জন্য এক বিভীষিকা, তবে তাকে রক্ষা করার জন্য ডাক্তাররা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে—এটাই ছিলো তার একমাত্র আশার আলো।
রোহান হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে এক মুহূর্তের জন্য মনে করলো, "কুহু, তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না, তুমি ফিরেই আসবে।"
'"ধূসর রঙে মোড়া এক নিঃসঙ্গ ভোর,
মেঘলা আকাশে জমে রয়েছে ম্লান এক ঘোর।
আলো-ছায়ার খেলা, সব যেন থেমে,
ধূসর পৃথিবী ডাকছে আপনেমনে।
নীরব পথের ধারে ঝরে পড়া পাতা,
ধূসর ছায়ায় মিশে জীবন যেন মলিন কথা।
তবুও এ রঙে লুকিয়ে আশার গান,
ধূসর শেষে আসে রঙিন নতুন ভোরের" 
"জানি তুমি ফিরবে
কোন এক গোধূলিমাখা সন্ধ্যে,
আমি দাঁড়িয়ে থাকবো,
অপেক্ষার দৃষ্টিতে, ফুল হাতে,,
আকাশে লাল-সোনালি ছটা,
পাখিরা ফিরে যাচ্ছে নীড়ে,
আমার বুকের ভেতর এক অভিমান—
কিছু বলবে কি সেদিন ফিরে?
তুমি আসবে কি আলোর মতো,
নাকি নিঃশব্দে ছুঁয়ে যাবে মন?
আমি অপেক্ষায় থাকি,
তোমার ছোঁয়ার অপেক্ষায়, প্রতিটি ক্ষণ"
ঠিক বিকাল ৪ টা অগ্নি,, সোহেল,,পূজা,, রওনক,,স্মৃতি,, শ্রাবনী আর ওর মা বসে আছে কেবিনে। কিছুক্ষণ আগে কুহু কে কেবিনে শিফট করে গেছে। 
ডাক্তার কুহুর কেবিনে ঢুকে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"ভাগ্য ভালো, গু"লি"টা তেমন গভীরে ঢোকেনি। তবে কুহু অনেক র"ক্ত হারিয়েছে, তাই সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে। আপনারা দয়া করে তাকে এখন বেশি প্রশ্ন করবেন না।"
সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। রোহান পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল, চুপচাপ। তার মনের মধ্যে তোলপাড় চলছিল। সে ধীরে ধীরে কুহুর কাছে এগিয়ে গেল। কুহু চোখ খুলে দেখলো, রোহান তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি, কিন্তু চোখের কোণে লুকানো কান্নার ছাপ।
কুহু মৃদু স্বরে বললো,
"আপনার এই অস্থিরতার কারণ কী, মিস্টার রোহান?"
রোহান হেসে বললো,
"তোর জন্য পাগল না হয়ে উপায় আছে? তুই তো আমার জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস। আর যদি কিছু হয়ে যেত, আমি কী করতাম?"
কুহু মৃদু হাসলো, তারপর বললো,
"আপনার চিন্তা করার কিছু নেই, আমি ঠিক আছি। তবে একটা কথা বলতে পারি?"
রোহান কিছুটা অপ্রস্তুতভাবে বললো,
"হ্যাঁ, বল।"
কুহু হেসে বললো,
"আপনি এত বড় নাটক করতে পারেন, আগে বুঝতে পারিনি। এই যে ছুটে এসে হুংকার দিয়ে আমাকে গাড়িতে তুলে নিতে চান, তার মানে কী?"
রোহান হতবাক হয়ে বললো,
"তুই এই অবস্থায় হাসতে পারছিস? আমি তো ভয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম! তুই জানিস, আমি কতটা দুশ্চিন্তা করছিলাম?"
কুহু এবার চোখ বন্ধ করে বিছানায় হেলান দিলো। তার কণ্ঠ মৃদু হলো।
"আপনার দুশ্চিন্তা দেখে মনে হলো, যেন পুরো পৃথিবীটাই থেমে গেছে। রোহান, আপনি কেন আমার জন্য এত চিন্তা করেন?"
রোহান কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তারপর গভীর দৃষ্টিতে কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,
"তুই জানিস না, কুহু? আমি তোর জন্যই বাঁচি। তুই যদি কিছু হয়ে যেত, আমি কী করতাম?"
কুহু অবাক হয়ে রোহানের দিকে তাকালো। তার চোখে একধরনের বিস্ময় আর মায়া একসঙ্গে জ্বলজ্বল করছিল। 
নার্সের কথা শুনে রোহান অনিচ্ছাসত্ত্বেও উঠে দাঁড়াল। দরজার সামনে এসে একবার কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
"তুই ভালো করে বিশ্রাম নে। আমি বাইরে আছি, কিছু দরকার হলে ডাকিস।"
কুহু শুধু মাথা নাড়ল। রোহান বাইরে বেরিয়ে গেল, কিন্তু তার চোখে-মুখে এক অজানা উদ্বেগ ফুটে ছিল।
কুহু ধীরে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। তার মনে অদ্ভুত এক উষ্ণতা কাজ করছিল। রোহানের ওই কথাগুলো—"তুই যদি কিছু হয়ে যেত আমি কী করতাম?"—তার হৃদয়ের গভীরে বাজছিল।
ঠিক সেই সময় কেবিনের দরজায় টোকা পড়লো। একজন নার্স ঢুকে বললো,
"ভিজিটিং আওয়ার শেষ। এখন রোগীকে বিশ্রাম করতে দিন।" 
অগ্নি রোহানের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,, তুমার কি মনে হয় এইটা কি ইচ্ছাকৃত? 
অবশ্যই ইচ্ছা কৃত কাল আমাদের অপরাশেন আজ কুহুর উপর এ্যাটাক এর অর্থ কেউ ফলো করে আমার দুর্বলতাতে আঘাত করতে চেয়েছিলো যাতে ভয় পেয়ে পিছিয়ে। আরে আমি হচ্ছি রেসের পাগলা ঘোড়া এতো সহজে কি আটকানো যায়। রোহান কিছুটা চিন্তিত হয়ে সোহেলের দিকে তাকিয়ে বললো, “তুই একটু কুহুর কলেজের আশপাশের সিসি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ চেক কর। কিছু তো ঘটেছিলো, কেউ এই সব কিছু জানতো, আর এখন আমাদের দুর্বলতায় আঘাত করতে চেয়েছে। কোনোভাবেই যেন পালিয়ে না যায়।” সোহেল দ্রুত মাথা নেড়ে বললো, “বুঝেছি। তাড়াতাড়ি জানাবো।“ সে দ্রুত উঠল এবং রোহানকে একটি আশ্বস্ত দৃষ্টিতে দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলো।
সোহেল এবার তার প্রিয় গ্যাজেটটি বের করলো, ফোনের স্ক্রীনে সিসি ক্যামেরার লিঙ্ক খোলার জন্য কিছু ডেটা ইনপুট করলো। তার চোখে চিন্তার রেখা স্পষ্ট। যতটুকু সম্ভব দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে ফুটেজের মধ্যে খুঁজে বের করা তার লক্ষ্য ছিলো। সোহেল জানতো, এটা তার পক্ষে কোনো সাধারণ কাজ নয়। যারা আক্রমণ করেছে, তারা খুবই পাকা পরিকল্পনা করেই এসেছে।
তার মস্তিষ্কে ঘুরছিলো একের পর এক সম্ভাব্য পরিকল্পনা, কিন্তু কোনো কিছুই পুরোপুরি পরিষ্কার হচ্ছিলো না। তার হাতে ছিলো একমাত্র সুযোগ, ফুটেজের সঠিক তথ্য। 
--- 
সোহেল যায় কুহুর কলেজের আশেপাশে সিসি ক্যামেরা চ্যাক করতে একটা জায়গায় চোখ আটকে যায়। যা দেখে সোহেল অবাক। সোহেল রোহানকে ফোনে বললো, "রোহান, আমি কিছু পেয়েছি। বাইক আরোহী যে দ্রুত পালিয়ে গেছে, তার থেকে ফুটেজে কিছু অদ্ভুত তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে স্পষ্টভাবে দেখে মনে হচ্ছে, সে কোনো পরিচিত লোক।"
রোহান এক পা এগিয়ে গিয়ে হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে বললো, "বিস্তারিত বল, সোহেল।"
"ছবিটা পাঠাচ্ছি, দেখো," সোহেল দ্রুত ফোনের স্ক্রীনে ফুটেজের স্ক্রীনশট পাঠালো। সোহেল জানালো, বাইক আরোহীর পরনে বিশেষ ধরনের একটি জ্যাকেট ছিল, যা রোহান আগে দেখেছিলো।
রোহান তার মুখে এক চিন্তিত ভাব নিয়ে ফুটেজটি দেখলো। "এটা তো আশ্চর্যজনক... সোহেল, ওই জ্যাকেটটা যে পরেছে, সে আমার পরিচিত কেউ।"
"মানে?" সোহেল অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
"এটা এক ধরনের জ্যাকেট, আমি জানি, গত মাসে এক লোককে সেটা পরতে দেখেছিলাম। কে হতে পারে সে?" রোহান ভাবতে লাগলো, আর তার চোখে উদ্বেগ স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
"ঠিক আছে, আমি তদন্ত করবো," সোহেল বললো এবং তৎক্ষণাৎ কাজ শুরু করে দিলো।
এদিকে রোহান হাসপাতালের লবি থেকে বেরিয়ে গিয়ে দ্রুত কুহুর কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল। তার মনে উদ্ভূত সমস্ত চিন্তা একে একে সারি সারি চলে আসছিলো। কুহু, তার জীবন, তার ভালোবাসা—এখন তাকে রক্ষা করতে হবে, কিন্তু কে তাকে শিকার করতে চাইছে, এই প্রশ্ন আরও বেশি জটিল হয়ে উঠলো। 
কেবিনে একটু উঁকি দিয়ে দেখলো কুহু ঘুমাছে। বাহিরে বসে আছে ওর মা ভাই,, বোন,, আর ভাবীমা। 
ও সবার কাছে গিয়ে বললো তোমরা বসো আমার দরকারি কল আছে সেড়েই আসছি বলে 
রোহান হাসপাতালের কেবিনের বাইরের করিডোরে দাঁড়িয়ে রিভারস ফোন বের করলো। তার মন একেবারে অস্থির ছিল, কুহু এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছিলো। সে সিদ্ধান্ত নিল, কোনোভাবেই এই মুহূর্তে কুহু আর তার পরিবারকে একা ছেড়ে দেয়া যাবে না।
ফোনে ডায়াল করলো CID-এর এক সিনিয়র অফিসার, রাহুল শর্মাকে। ফোনটা রিসিভ করতেই রোহান বললো, "রাহুল ভাই, জরুরি একটা ব্যাপার ছিলো। কুহু, তার মা, ভাই, বোন, ভাবীকে হাসপাতালে থাকতে হবে, কিন্তু এখন তারা নিরাপদ নয়। কিছু একটা চলতে পারে, তাই আমি চাইছি আপনারা সিভিল পোশাকে কিছু অফিসার পাঠান, যেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।"
রাহুল শর্মা কণ্ঠে চিন্তা এবং সমঝোতার ছাপ রেখে বললো, "আমি বুঝতে পারছি, রোহান। তুমি চিন্তা করো না, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। একদল অফিসার পাঠাচ্ছি, তারা সিভিল পোশাকে থাকবে, যাতে কেউ কিছু সন্দেহ না করতে পারে।"
"ধন্যবাদ, রাহুল। আমি জানি তুমি সবসময় পাশে আছো। আমি কুহুর কাছে যাচ্ছি, তুমি তাদের নিরাপত্তা নিয়ে খেয়াল রাখো।" রোহান উত্তর দিলো।
ফোন রেখে রোহান হাসপাতালের পেছনে এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে ভাবলো। তার চোখে একটিই চিন্তা—কুহু আর তার পরিবার যেন নিরাপদ থাকে, আর এই অশুভ পরিস্থিতি থেকে তাদের রক্ষা করতে হবে।
কিছু সময় পরেই, হাসপাতালের গেটের কাছে সিভিল পোশাকে কয়েকজন CID অফিসার এসে উপস্থিত হলো। তাদের মধ্যে একজন, যিনি কিছুটা বড় অফিসার ছিলেন, দ্রুত রোহানকে দেখে বললেন, "সব ঠিক আছে, স্যার। আমরা লোক পাঠিয়ে দিয়েছি, সবাই নিরাপদ থাকবে।"
রোহান কিছুটা শান্ত হলো, তবে তার মন এখনও উৎকণ্ঠিত ছিল। "তোমরা যতটা পারো, খেয়াল রেখো। 
"চিন্তা করবেন না, স্যার। আমরা সব কিছু দেখছি।" অফিসারটি আশ্বস্ত করে বললো।
রোহান হাসপাতালে ফিরে গেলো, তার মাথায় কেবল একটাই চিন্তা—কুহু, তার জীবন, তার ভবিষ্যত—এসবকে রক্ষা করার জন্য তাকে যতটা সম্ভব শক্তিশালী হতে হবে। কিন্তু কুহুর এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের আমি এক সেকেন্ড ও ছাড়বো না আই প্রমিস। 
এদিকে, সোহেল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে নতুন কিছু তথ্য পেয়েছে, কিন্তু সে বুঝতে পারছিলো, এই পরিস্থিতি শুধু আরেকটি সাধারণ আক্রমণ নয়, বরং এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। সোহেল রোহানকে আবার ফোন দিয়ে বললো, "রোহান, আমি কিছু পেয়েছি। ওই বাইক আরোহী যে ব্যক্তিটি, সে আমাদের কোনো পরিচিতের কাছাকাছি হতে পারে। তবে এখনো কিছু নিশ্চিত করতে পারছি না।"
রোহান এক মুহূর্তের জন্য চুপ ছিল। তারপর সে উত্তর দিলো, "জানি, সোহেল। সব কিছু ঠিক মতো করো। কোনো ঝুঁকি নিও না। আমি কুহুকে সুস্থ করতে হলে এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে আগে। তারপর আমি পুরোপুরি তদন্ত করবো, আর কোনোভাবেই ছাড় দেবো না।"
এই অবস্থায়, রোহান হাসপাতালের বাইরে কিছু CID অফিসারের সাথে দেখা করতে বেরিয়ে যায়। তার মনে একটাই চিন্তা ছিল—কুহুর জন্য প্রতিশোধ, এবং যারা এই আক্রমণ ঘটিয়েছে তাদের কাউকে বাঁচতে দিবে না। 
---
রোহান হাসপাতাল থেকে বের হয়ে CID অফিসারদের সাথে গোপন বৈঠক করলো। সে পুরো ঘটনা তাদের জানালো এবং এই বিপদগ্রস্ত পরিস্থিতির পেছনে যে কোনও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে, তাও বুঝতে পারছিলো। রোহান জানতো, কুহুর শারীরিক অবস্থা সঠিক হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।
"তুমি চিন্তা করো না, স্যার," অফিসার রাহুল শর্মা বললেন, "আমরা সবকিছু ট্র্যাক করছি। সোহেলের দেওয়া তথ্য অনুসারে আমরা আরও নজরদারি চালাচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব দোষীদের খুঁজে বের করা হবে।"
রোহান তার বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত কষ্ট অনুভব করছিলো। একদিকে কুহুর শরীরের অবস্থা, অন্যদিকে তার পরিবারকে নিরাপদ রাখতে হবে। কিন্তু তার মনে একটাই প্রতিজ্ঞা ছিল—এই পরিস্থিতি থেকে সবার মুক্তি পাওয়ার পর, যারা কুহুকে আঘাত করেছে, তাদের একে একে শাস্তি দিতে হবে।
হাসপাতালের কেবিনে ফিরে গিয়ে, রোহান কুহুর পাশে বসলো। কুহুর চোখ কিছুটা খুলে, তাকে দেখে মৃদু হাসলো। কিন্তু রোহানের চোখে তখনও সেই দুঃখ, অসহায়ত্ব আর প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিল।
"কুহু, তোর জন্য আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত," রোহান বললো, তার গলায় এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল।
কুহু এক ফোঁটা হাসি দিয়ে বললো, "রোহান, আমি ভালো আছি। আপনি চিন্তা করবেন না। 
রোহান কিছুটা শান্ত হল, কিন্তু তার মনে সিদ্ধান্ত ছিল—এই ঘটনাটা শুধু কুহুর নয়, তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। সে কাউকে ছাড়বে না, যতদিন না সঠিকভাবে প্রতিটি সত্য বের হয়ে আসে।
এদিকে সোহেল আর CID দলের অন্যান্য সদস্যরা আরো গভীর তদন্ত শুরু করলো, কিছু নতুন তথ্য হাতে পেল। সোহেল জানালো, "রোহান, আমাদের কাছে কিছু নতুন ক্লু এসেছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব কিছু শেষ করবো।" 
কুহুর হাতটি রোহান আলতো করে নিজের হাতে নিলো,
"শরীরের তীব্র উত্তেজনা যেন হাওয়ায় মিশে গেলো।
তারপর ধীরে ধীরে, কুহুর শীতল কপালে,
রোহান রেখেছে এক নরম চুম্বন, যে চুম্বনে পাথরও গলে যায়।
“এই অমূল্য রত্ন, তুমি কি জানো?”
বললো রোহান, মনের গহীনে গভীর প্ত্রের ঝঙ্কার।
"তুমি আমার অস্তিত্বের প্রাণ,
তোমায় হারালে পৃথিবী হারাবে তার স্নেহধারা।"
কুহু অবাক চোখে তাকিয়ে, হৃদয় স্পর্শিত,
অবিশ্বাসের সঙ্গে, ভালোবাসার সুরে মগ্ন।
"আপনি কি জানেন, রোহান, আপনি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সুর,
যে সুর বেজে ওঠে পৃথিবীর প্রতিটি কোণে, আমার হৃদয়ের নিকুঞ্জে?"  
--- 
গভীর রাত, অনুমানিক ২টা বাজে। হাসপাতালটি সুনসান, ভেতরে শুধু কিছু ডাক্তার-নার্সের পদচারণা এবং মাঝে মাঝে গ্যারেজের নিচু আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। কুহু ঘুমাচ্ছিল, তবে রোহান ছিল সজাগ। সে হাসপাতালের করিডোরে হাঁটছিল, চিন্তাগ্রস্ত মন নিয়ে।
হঠাৎ, একটুখানি আওয়াজ শুনতে পেল। কোথাও কেউ অস্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে, এবং তার সুরক্ষিত কেবিনের আশপাশে কিছু সন্দেহজনক ঘটনা ঘটছে।
রোহান সোজা কুহুর কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল, দরজায় মৃদু নক করল। কিন্তু কোনো উত্তর আসলো না। তার হাতের তালু ঘামে ভিজে গেছে, মনে হচ্ছিল কিছু অস্বাভাবিক ঘটতে যাচ্ছে।
সে দ্রুত কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো, কিন্তু কুহু তখনও গভীর ঘুমে ছিল। তবে তার মনে কিছু একটা সংকেত ঘটেছিল—তবে সে কিছু জানল না।
তখনই, হাসপাতালের ভিতরে কিছু দৌড়ানোর আওয়াজ শোনা গেল। একদম অন্ধকারে, করিডোরে এক অদ্ভুত উপস্থিতি অনুভূত হচ্ছিল। সিকিউরিটি গার্ডরা তাদের নিয়মিত কাজ করছিল, তবে কিছু অদ্ভুত ব্যক্তি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হয়েছে, যেন তারা খুব সুশৃঙ্খল এবং দ্রুত।
রোহান তৎক্ষণাৎ তার ফোনে সিকিউরিটি সিস্টেমের সাথে যোগাযোগ করল, বলল,
"তাড়াতাড়ি সমস্ত প্রবেশপথ লক করুন, এবং সকল সিকিউরিটি গার্ডদের কাছে সাবধানতা বাড়ান। কিছু অস্বাভাবিক হচ্ছে।"
এরপর, রোহান কুহুকে একটু shake করে জাগিয়ে দেয়,
"কুহু, উঠো। কিছু সমস্যা হতে পারে, তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হও।"
কুহু কিছুটা ঘোরানো চোখে উঠে বসে।
"রোহান, আবার কী ঘটলো?"
রোহান তার দিকে তাকিয়ে বললো,
"এখন বাইরে একটা কিছু ঘটছে, যেটা আমি ঝুঁকি হিসেবে নিতে চাই না। তুই নিরাপদে থাক।"
সিকিউরিটি গার্ডরা এবং হাসপাতালের নিরাপত্তা দল একত্রে গেট এবং ভেতরের প্রবেশপথ চেক করতে লাগল। তবে এক পলকেই, কোনো একটি গোপন সিগন্যালের মাধ্যমে, তাদের বুঝতে পারলো—অসাধারণ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। শত্রু তাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, কৌশলে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে এড়িয়ে গেছে।
রোহান তখন দ্রুত একটি নিরাপদ কেবিনের দিকে নিয়ে কুহুকে নিয়ে চলতে লাগল। তবে বাইরে থেকে আসা গাড়ির আওয়াজ আরো কাছে চলে আসছিল। কে জানে, শত্রুর পরিকল্পনা কী হতে পারে!
মুহূর্তে রোহান কুহুকে একটি সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু শত্রু তাদের একদম কাছে চলে এসেছিল—এমন সময় এক অজানা গু"লি"র আওয়াজ শুনতে পেলো। 

এখনো  চলবে ...। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমার বাংলা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
amarbangla
Our Telegram Group / Channel Join Now
Our Facebook Page Follow Now
amarbangla
daraz