মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প - পর্ব ০৪

 

মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প

🏵️মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প 🏵️

🏵️লেখক - আমিনুর রহমান 🏵️

🏵️ফেছবুক থেকে সংগ্রহীত 🏵️

মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প - পর্ব ০৪ 

আমার বিশ্বাসটাই সত্য হলো,কয়েকদিন পরেই একটা মেয়ের ফোন পেলাম আমি। তাঁর সাথে দেখা করার পর অনেক বেশি সকড্ খেলাম। কারণ আমি যেমনটা ভেবছিলাম মেয়েটা তেমন না। আমি কখনো ভাবিনি এতো কম বয়সী একটা মেয়ে এরকম একটা দায়িত্ব নিতে চাইবে। মেয়েটার বয়স কতোই বা হবে? বিশ কিংবা বাইশ। দেখতে শুনতেও অনেক ভালো। তবে আমার জন্য ভালোই হয়েছে তাই আমি কোনো কিছু বিবেচনা না করেই এই মেয়েটাকে আমার ছেলের দেখাশোনার জন্য রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। মেয়েটাকে যখন বাসায় নিয়ে গেলাম তখন মা যেনো কিভাবে আমার দিকে তাকালো,আমি কিছুটা ভয়ও পেলাম। আসলে এমন একটা মেয়েকে কোনো সম্পর্ক ছাড়াই নিজের বাড়িতে রাখলে মানুষ কি ভাববে এটা নিয়ে মা অনেক চিন্তিত। তবে আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। কারণ দুবেলা না খেয়ে না থাকলে এই সমাজের মানুষরা আমাকে খাবার দিবে না, আজ যদি বিপদে পড়ি কেউ এগিয়ে আসবে না। তাই আমি মানুষ কি ভাবলো কিংবা কি ভাববে এটা নিয়ে কখনো ভাবিনি আর ভবিষ্যতেও ভাববো না।
কিছু মানুষের মাঝে অলৌকিক কিছু থাকে। এই মেয়েটার মাঝেও এমন কিছু আছে আমার বিশ্বাস। বাচ্চারা কিছু মানুষকে দেখলে নিজের অজান্তেই কান্না করে দেয় ওই মানুষটার কোলে উঠার জন্য। আবার তাঁর কোলে গেলেও কান্না থেমে যায়। মেয়েটাও ঠিক এরকম। অয়ন তাকে আগে কখনো দেখেনি,আজকেই প্রথম দেখলো অথচ তাকে যখন দেখলো তখন তাঁর কাঁছে যাওয়ার জন্য কান্না করতে লাগলো, যখন তাঁর কাছে গেলো তখন তাঁর কান্নাটাও বিলিন হয়ে গেলো। এটাই তো চেয়েছিলাম আমি। আমার চাওয়াটা সত্যিই হয়েছে। অয়নকে নিয়ে আমার চিন্তা কিছুটা হলেও কমছে এই মেয়েটা আমার অয়নের দায়িত্ব নেওয়াতে।
বাবা কিছু না বললেও মা আমার এরকম কাজকর্মে খুশি হতে পারেনি সেটা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। তিনি হয়তো চেয়েছিলেন একজন পুত্রবধূ কিন্তু আমি সেটা তাকে দিতে ব্যর্থ হয়েছি। মেয়েটাকে তাঁর রুম দেখিয়ে দিলাম,সবকিছু বুঝিয়ে দিলাম। সত্যি বলতে এপর্যন্ত এই মেয়ের নামটাও জানা হয়নি,জিগ্যেস করার সময়ও হয়নি। তাই যখন মেয়েটার নাম জানতে চাইলাম তখন মেয়েটা বলল,তাঁর নাম অর্পিতা। সে দেখতে আহামরি কোনো সুন্দরি না হলেও তাঁর কথাবার্তা অন্য যেকোনো মেয়ের থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। আমার ইচ্ছে করছিলো মেয়েটার সম্পর্কে জানতে,তাঁর পরিবার সম্পর্কে জানতে,তাঁর সম্পর্কে জানতে। সে কি বিয়ে করেছে?  আবার মনে হলো,না এগুলো জানাটা বোধয় কোনো ভদ্রতা হতে পারে না। এগুলো জানার মতো সময় এখনও হয়নি। আর মেয়েটা বিবাহিত হলে হয়তো এমন একটা দায়িত্ব নিতে চাইতো না। মেয়েটাকে জিগ্যেস করলাম আপনাকে কতো টাকা দিতে হবে মাসে?
তখন মেয়ে যেই কথাটা বলল তখন আমার অনেক লজ্জা লাগলো,নিজেকে অনেক ছোট মনে হলো মেয়েটার কাছে। আমার কথার প্রতি উত্তরে অর্পিতা বলল,
"আসলে দেখুন জীবনে সবকিছু টাকা দিয়ে বিবেচনা করা যায় না। মানুষের জীবনে কিছু কিছু ভালো লাগার অধ্যায় থাকে যেখানে টাকার কোনো স্থান নেই। আমার টাকার অনেক দরকার সেজন্য আমার একটা চাকরি দরকার ছিলো। তবে আমি চাইলে কিন্তু অন্য একটা চাকরিও করতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি কারণ অন্য সব চাকরিতে আমি নিজেকে কখনোই ভালো রাখতে পারতাম না। তবে আমার বিশ্বাস এই কাজটাতে আমি নিজেকে সুখী রাখতে পারবো। তাই টাকার কথাটা না হয় নাইবা বলি। দুবেলা দুমুঠা খাবার আর থাকার জন্য একটা জায়গা হলেই আমার হয়ে যাবে এর বেশি কিছু আমার দরকার হবে না। যদি হয় তাহলে আপনাকে বলবো।"
অর্পিতার কথাগুলো কেনো জানি আমার ভিতরের সত্তাটাকে আঘাত করলো। আমার জীবনে কখনো কাউকে এতোটা কষ্ট আর অসহায়ত্ব নিয়ে কথা বলতে দেখিনি। আমি তাঁর কথাগুলোর জবাবে কিছু বলতে পারলাম না। তবে এতোটুকু বুঝলাম এই মেয়েটাকে টাকা দিয়ে খুশি করা যাবে না। এই মেয়েটা ভালোবাসার পাগল,তাঁর কথা শুনে অন্তত এটা বুঝেছি সে কাউকে খুব করে ভালোবেসেছিলো কিন্তু সেটা সে পায়নি। জীবনে এমন কিছু হারিয়েছে যার জন্য সে এমন হয়ে গিয়েছে। তবে কি হারিয়েছে সেটা আমার অজানা। আগে অয়নের সাথে সবসময় থাকতে হতো,এমনও দিন গিয়েছে যেদিন আমি অয়নকে অফিসে নিয়ে যেতাম। অফিসের সবাই যখন অয়নকে এভাবে দেখতো তখন সবাই অয়নের মায়ের কথা বলতো। একজন মা কিভাবে এতো ছোট্ট একটা শিশুকে রেখে চলে যেতে পারে? আমি তাদের কথার কোনো জবাব দিতে পারতাম না। শুধু বলতাম মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ এই পৃথিবীতে নেই। সবচেয়ে প্রশংসনীয় কাজটাও করতে পারে আবার সবচাইতে জঘন্য নিন্দনীয় কাজটাও করতে পারে। আর অয়ন এখন অনেকটা বড় হয়ে গেছে। মানুষ একসময় তাদের প্রিয়জনকে ছেড়ে বাঁচতে শিখে যায়। বাচ্চারাও তেমন বড় হওয়ার সাথে সাথে বাবা মায়ের ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে শিখে যায়। অয়নও হয়তো শিখে যাবে। অয়নকে আমি অর্পিতার কাছেই রাখলাম রাতটুকু। এর আগে রাতে ঘুমানোর আগে অয়ন অনেক কান্না করতো। তবে আজ তাঁর কান্নার শব্দটা আমার কানে বাজলো না।
সকালে যখন ঘুম থেকে উঠলাম তখন অয়নকে আমার পাশে না দেখে চমকে গেলাম। কারণ সবসময় অয়নকে সাথে নিয়েই ঘুমিয়েছি আমি। কিন্তু আজ সে আমার সাথে নেই। পরে মনে হলো অয়ন অর্পিতার সাথে ঘুমিয়েছে। আমি অর্পিতার রুমে উকি দিতেই দেখলাম সে অয়নকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছে। এই দৃৃশ্যটা দেখে আমার আত্মাটা জুড়িয়ে গেলো। মনে হলো অয়ন তাঁর মায়ের বুকেই ঘুমিয়ে আছে। আমি মাঝে মাঝেই অয়নকে দেখার জন্য হঠাৎ করেই অনুমতি না নিয়ে অর্পিতার রুমে ঢুকে যেতাম। তখন দেখতাম অর্পিতার মন খারাপ থাকে কোনো কারণে। কি কারণে খারাপ থাকে সেটা আমি অনেক জানার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। সবসময় সে অন্য মনস্ক থাকে,একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। তাকে দেখলে মনে হয় অতীতে তাঁর সাথে অনেক ভয়ানক কিছু ঘটেছে যেটার রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সে। তাই সবসময় এমন মনমরা হয়ে থাকে সে। দেখতে দেখতে একটা মাস পাড় হয়ে গেলো। এই একটা মাস হয়তো অয়ন তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভালো সময় কাটিয়েছে। সে পেয়েছে মায়ের আদর। এখন সে আমার থেকে অর্পিতার কাছে থাকতেই বেশি ভালোবাসে। মাস শেষে অর্পিতাকে কতো টাকা দিবো এটা মিলাতে পারছি না। সে তো আমাকে বলেছে টাকা দিয়ে সবকিছু বিবেচনা করা উচিত না। কিন্তু সে যা করেছে আমার ছেলের জন্য আমি তো এর প্রতিদান তাকে দিতে চাই। টাকা ছাড়া আর কি দেওয়ার অাছে আমার?
আমি যখন অর্পিতা মেয়েটার হাতে হাজার বিশেক টাকা দিয়ে বললাম,
"এগুলো কোনো বেতন না এগুলো আমার ছেলের ভালোবাসা। আমি দেখেছি আমার অয়নকে আপনি কতোটা আদর দিয়েছেন, কতোটা মমতায় আগলে রেখেছেন। আমি জানি ভালোবাসা কখনো টাকা দিয়ে কেনা যায় না। কিন্তু আপনি আমার ছেলের জন্য যা করেছেন এটার কাছে এই কাগজ গুলো কিছুই না।"
অর্পিতা আমার টাকা নিলো না,আমার হাতে দিয়ে বলল,
"দেখুন আমি কিন্তু আগেই বলেছি আমি টাকার জন্য এই কাজটা করছি না। সত্যি বলতে বেঁচে থাকার জন্য করছি। আমি বুঝি সন্তান কি জিনিস। যে হারিয়েছে সেই কেবল বুঝবে সন্তান হারানোর কি বেদনা। আমার বেঁচে থাকার জন্য কাউকে দরকার ছিলো,আমি আপনার ছেলে অয়নকেই বেছে নিয়েছি। আপনি আমাকে টাকা দিতে চাইলেও আমি নিতে পারবো না। কারণ টাকার বিনিময়ে আমি কাউকে মায়ের আদর দিতে পারবে না। আমি অয়নের মা হওয়ার চেষ্টা করছি,জানি না কতোটা পেরেছি।"
আমি কিছু বললাম না,অর্পিতার দিকে শুধু অবাক চোখে চেয়ে রইলাম। তাকে যতো দেখছি ততোই মুগ্ধ হচ্ছি। তাকে দেখে কখনো মনে হয়নি তাঁর মাঝে এমন কিছু অাছে কিংবা থাকতে পারে যেটা মানুষকে বারবার মুগ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আমি না চাইতেও তাঁর প্রতি বারবার মুগ্ধ হচ্ছি,তাঁর কাছে নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে। তাঁর চিন্তাধারা কতো উঁচুতে,আর আমি এখনো সেই আগের চিন্তাধারা নিয়েই বেঁচে আছি। সবাই তো আর অনিমা হয় না,সব মেয়েই তো আর টাকার পাগল হয় না। কিছু মেয়ে ভালোবাসার পাগলও হয় সেটা অর্পিতাকে দেখলেই বুঝা যায়।
অর্পিতার রুম থেকে এসে শুধু একটা জিনিস ভাবতে লাগলাম,যে মানুষটা আমার জীবনটা এভাবে সুখে শান্তিতে ভরে দিচ্ছে,আমার ছেলেকে মায়ের আদর ভালোবাসা দিচ্ছে আমি তাকে কি দিতে পেরেছি? কিছুই তো দিতে পারলাম না। আমারও তাকে কিছু দিতে হবে,যেটাতে সে হাসবে,খুশি হবে। আমি এমন কিছু তাকে দিতে চাই যেটা পেয়ে সে তাঁর অতীতের সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যাবে। কিন্তু কি এমন আছে যা মেয়েটাকে ভালো রাখতে পারে,তাঁর সমস্ত বেদনাময় দিনগুলো ভুলিয়ে দিতে পারে? আমি কি তাঁর অতীতটাকে ফিরিয়ে দিতে পারি না? অবশ্যই পারি। এর জন্য আমাকে জানতে হবে অতীতে তাঁর সাথে কি হয়েছিলো। যে মানুষ গুলো তাকে ধোঁকা দিয়েছিলো,কষ্ট দিয়েছিলো। যে মানুষ গুলোকে সে প্রচণ্ড ভালোবাসতো এখনো ভুলতে পারেনি সেই মানুষ গুলোকে আমি আবার তাঁর জীবনে ফিরিয়ে দিতে চাই। জানি কাজটা অনেক কঠিন তবুও আমি তাঁর জন্য এইটুকু করতে চাই। সে যেমন আমাকে ভালো রেখেছে,আমিও তাকে ভালো রাখতে চাই। কিন্তু ভয় একটাই,সে যদি তাঁর অতীতের মানুষ গুলো ফিরে পেয়ে অয়নকে ভুলে যায় তখন কি হবে? সে কি অয়নকে ছেড়ে যাবে? সেও তো এতো কম সময়ের মধ্যে অয়নকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। সে কি চাইলেই অয়নকে ছেড়ে যেতে পারবে? অর্পিতার অতীতটাকে নাড়া দিতে কেনো জানি ভয় হতে লাগলো আমার। থাকুক না তাঁর অতীত গুলো যেমন আছে তেমনি,নাড়া দেওয়ার কি দরকার? আমি না হয় একটু স্বার্থপর হলামই। নিজেকে ভালো রাখার জন্য তো একটু স্বার্থপর হওয়াই যায়? তাই না?
চলবে..........

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমার বাংলা নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
amarbangla
Our Telegram Group / Channel Join Now
Our Facebook Page Follow Now
amarbangla
daraz