ব্রণ এবং ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পেতে ১০ টি ঘরোয়া প্রতিকার!
ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়!
ব্রণ ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য নষ্ট করে। যখন আমাদের ত্বকের সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত হয়, তখন তারা বড় হয় এবং ভিতরে পুঁজ জমা হয়, যা ধীরে ধীরে ব্রণে পরিণত হয়। কিশোরী মেয়েরা সাধারণত ব্রণ এবং ব্রণের দাগের জন্য বেশি প্রবণ হয়। ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় নিচে দেওয়া হল। বাজারের দামী প্রসাধনীর পরিবর্তে আপনি কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন যা আপনাকে সহজেই ব্রণ কমাতে সাহায্য করবে। এবং ঘরে তৈরি, প্রাকৃতিক এবং জৈব পণ্যগুলি সেরা এবং নিরাপদ। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই।
ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার সহজ ও ঘরোয়া উপায়সমূহ
⭕ মুলতানি মাটি
রাজকোন্না মুলতানি মাটি
ত্বকে অতিরিক্ত তেলের কারণে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে টুম্বানি মাটির পেস্ট পানি দিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। মুলতানি মিটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে।
⭕ শসার রস
চর্বি দূর করতে শসার রস খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন শসার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। অথবা আপনি আইস কিউব ব্যবহার করতে পারেন, এটি খোলা ছিদ্রের সমস্যা সমাধান করবে।
⭕ শসার রস, চালের গুঁড়া এবং মধু।
মুখের ব্রণ দূর করতে শসার রস খুবই কার্যকরী। এ ছাড়া স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে চালের গুঁড়া মেশাতে হবে। যাদের মধুতে অ্যালার্জি নেই তারা এই মিশ্রণে একটু মধু যোগ করতে পারেন। সপ্তাহে দুইবার এই প্যাকটি ব্যবহার করলে আপনার ত্বক ফর্সা হবে। ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর হয়ে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে ব্রণ থাকলে ঘষা যাবে না।
⭕ কাঁচা হলুদ এবং চন্দন গুঁড়ো
কাঁচা হলুদ এবং চন্দন গুঁড়ো ব্রণর জন্য দুটি অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। সমপরিমাণ কাঁচা হলুদ গুঁড়ো এবং চন্দন গুঁড়ো মিশিয়ে পানিতে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর মিশ্রণটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি শুধু ব্রণ দূর করতেই কাজ করে না ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
⭕ আপেল এবং মধুর মিশ্রণ
আপেল এবং মধুর মিশ্রণ ব্রণের দাগের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকারগুলির মধ্যে একটি। প্রথমে আপেলের পেস্ট তৈরি করুন এবং 4 থেকে 6 ফোঁটা মধু মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন এবং তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে মসৃণ রাখে এবং বর্ণ উজ্জ্বল করে। এটি সপ্তাহে 5-6 বার ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি কয়েক দিনের মধ্যে পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন।
⭕ তুলসী পাতার রস
ব্রণের জন্য তুলসী পাতার রস খুবই উপকারী। কারণ তুলসী পাতায় রয়েছে আয়ুর্বেদিক গুণ। ব্রণ আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার রস লাগান এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এর পর গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
⭕ চন্দন গুঁড়ো, গোলাপ জল এবং লেবুর রস।
প্রথমে গোলাপ জলের সাথে চন্দন গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। গোলাপ জল অনেকের ত্বকের সাথে মানায় না। সেক্ষেত্রে গোলাপ জলের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণটি আপনাকে ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
⭕ দারুচিনি গুঁড়া এবং গোলাপ জল
গোলাপজল নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ কমে যায়। গোলাপ জলের সাথে দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ব্রণে লাগান এবং 20 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সংক্রমণ, চুলকানি ও ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
⭕ ডিমের সাদা অংশ
রাতে ঘুমানোর আগে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে ডিমের সাদা অংশ ম্যাসাজ করে সারারাত রেখে দিতে পারেন। আপনার ত্বকের রুক্ষতা দূর করুন। লেবুর রস যোগ করলে ভালো হয়। আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।
⭕পেঁপে এবং চালের গুঁড়া
ব্রণের অন্যতম কারণ হল অপবিত্র ত্বক। সেজন্য ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত স্ক্রাবিং ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এক কাপ পাকা পেঁপে খান। এক টেবিল চামচ লেবুর রস এবং চালের গুঁড়ো প্রয়োজনমতো মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখসহ সারা শরীরে লাগান। 20-25 মিনিট ম্যাসাজ করুন এবং স্নান করুন। পেঁপে ছাড়াও অ্যালোভেরার জুস ব্যবহার করতে পারেন।
⭕ মুলতানি মাটি ও নিম পাতা।
চার থেকে পাঁচটি নিম পাতা ধুয়ে পিষে নিন। এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি এবং কিছু গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাকেট তৈরি করুন। প্যাকেট কালো হয়ে গেলে গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এটি আপনার মুখে লাগান এবং কিছুক্ষণ বসতে দিন। প্যাকটি মুখে শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
⭕ পুদিনা পাতা
অতিরিক্ত গরমের কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি ও ব্রণ দূর করতেও পুদিনা পাতা উপকারী। তাজা পুদিনা পাতা 20 মিনিটের জন্য ব্রণে লাগান এবং তারপরে ধুয়ে ফেলুন।
⭕ বিশেষ প্যাকেজ
রক্ত চন্দনের গুঁড়া এবং ডালিমের খোসার গুঁড়া মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণে দুই টেবিল চামচ দুধ বা দই দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি নিয়মিত মুখে লাগান। ত্বকের এলাকা বৃদ্ধি পাবে। ব্রণের দাগও দূর হয়ে যাবে।
ব্রণ এবং ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু টিপস
- 1) দিনে 9 থেকে 10 গ্লাস জল পান করুন।
- 2) প্রতিদিন রাতের খাবারের পর যেকোনো ধরনের মৌসুমি ফল খান। এটি আপনার ত্বককে সতেজ রাখবে। যতটা সম্ভব চর্বিযুক্ত বা ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন।
- 3) বাইরে থেকে আসার পর সবসময় ফেসিয়াল ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। গরম ভাপও নিতে পারেন। এতে ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি পরিষ্কার হবে।
- 4) আমাদের অনেকেরই নখ দিয়ে পিম্পল তোলার বদ অভ্যাস রয়েছে, আমাদের বুঝতে হবে এটি কোনও সমাধান নয়। বিপরীতে, এটি ব্রণের অবস্থাকে আরও খারাপ করবে। এতে দানাগুলো লাল হয়ে যাবে। এমনকি এটি ফেটে যাবে এবং আপনার মুখে দাগ সৃষ্টি করবে। ব্রণ অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত মেকআপ ব্যবহার করা উচিত নয়। তেল-মুক্ত ক্লিনজার দিয়ে দিনে অন্তত দুবার মুখ ধুয়ে নিন।
যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্রণ ও ব্রণের দাগের সমস্যায় ভুগছেন এবং কোনো কাজ হচ্ছে না তাদের দেরি না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত। তবে প্রথমে আপনি ব্রণ এবং ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পেতে উপরে উল্লিখিত টিপস এবং ঘরোয়া প্রতিকারগুলি পরীক্ষা করতে পারেন।
সুন্দর হয়েছে